এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ

লেখক পরিচিতি

জন্ম এবং শৈশব – প্রেমেন্দ্র মিত্র রবীন্দ্র-পরবর্তী যুগের বিশিষ্ট কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও চলচ্চিত্রকার হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছেন।
জন্ম এবং শৈশব – ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কাশীতে তাঁর জন্ম হয়। হুগলি জেলার কোন্নগরে অভিজাত মিত্র বংশের সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর পিতার নাম জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র, মাতার নাম সুহাসিনী দেবী। তাঁর উচ্চশিক্ষিত পিতা রেলের অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে চাকরি করতেন। প্রেমেন্দ্রর বয়স যখন সাত-আট বছর, তখন তাঁর মা মারা যান।
ছাত্রজীবন – প্রেমেন্দ্রর দাদামশাই রাধারমণ ঘোষ ইস্ট ইন্ডিয়া রেলের মির্জাপুর ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত ডাক্তার ছিলেন। প্রেমেন্দ্র সেখানেই বড়ো হতে থাকেন। দাদামশাইয়ের মৃত্যুর পর প্রেমেন্দ্রকে আশ্রয় নিতে হয় নলহাটিতে এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখানে একটি স্কুলে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। পড়াশোনায় তিনি ভালো ছিলেন। এরপরে নলহাটি ছেড়ে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। সেখানে তিনি সাউথ সুবার্বন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করে স্কটিশচার্চ কলেজে ভরতি হন। কিছুদিন বাদে কলেজের পড়া ছেড়ে দিয়ে কৃষিবিদ্যা শিক্ষার জন্য তিনি শ্রীনিকেতনে যান। সেখান থেকে আবার তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। এরপর কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে তিনি জগন্নাথ কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভরতি হন। কিছুদিন পর আবার ঢাকা থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। কিন্তু এবার আর পড়াশোনা নয়, শুরু করেন জীবিকার সন্ধান। এইসময় প্রবাসী পত্রিকায় তাঁর দুটি গল্প প্রকাশিত হয় এবং এখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তিনি চেয়েছিলেন ডাক্তার হতে, কিন্তু শেষপর্যন্ত হয়ে গেলেন সাহিত্যিক।
সাহিত্যজীবন – বিচিত্র প্রতিভার অধিকারী প্রেমেন্দ্র মিত্র রংমশাল, কালিকলম, নবশক্তি, পক্ষীরাজ ইত্যাদি সাময়িকপত্র সম্পাদনা করেছেন। নিরুক্ত, কবিতা প্রভৃতি পত্রিকা যুগ্মভাবে সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ ছিল। তাঁর উপন্যাসের সংখ্যা পঞ্চাশটি, ছোটোগল্প তিরিশটি, শিশু ও কিশোরদের রচনা তিরিশটি, ছড়া আটটি, নাটক চারটি, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথা আটটি এবং অনুবাদ গ্রন্থ ছ-টি। তিনি সমারসেট মমের গল্প, লরেন্সের গল্প, বার্নার্ড শ-র নাটক এবং হুইটম্যানের শ্রেষ্ঠ কবিতা অনুবাদ করেছেন। তাঁর সৃষ্ট বিখ্যাত একটি চরিত্র ঘনাদা পরাশর গোয়েন্দাকে নিয়ে তিনি পনেরোটিরও বেশি গল্প লিখেছেন। সত্তরটি চলচ্চিত্রের কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। এ ছাড়া চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন তিরিশটি। তাঁর ছদ্মনাম ছিল কৃত্তিবাস ভদ্র। পাঁক, মিছিল, পা বাড়ালে রাস্তা, প্রতিধ্বনি ফেরে, স্বপ্নতনু, হৃদয় দিয়ে গড়া, আগামীকাল, বিসর্পিল প্রভৃতি প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিখ্যাত উপন্যাস। তাঁর গল্পগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বেনামী বন্দর, পুতুল ও প্রতিমা, মৃত্তিকা, অফুরন্ত, মহানগর, নিশীথ নগরী, কুড়িয়ে ছড়িয়ে, সামনে চড়াই এবং সপ্তপদী। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল প্রথমা, সম্রাট, ফেরারী ফৌজ, সাগর থেকে ফেরা, কখনো মেঘ, হরিণ চিতা চিল, অথবা কিন্নর, নদীর নিকটে এবং নতুন কবিতা।
সম্মান ও স্বীকৃতি – সাগর থেকে ফেরা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে অকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া পদ্মশ্রী ও দেশিকোত্তম উপাধিও লাভ করেছেন তিনি।
জীবনাবসান – ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে প্রেমেন্দ্র মিত্রের জীবনাবসান হয়।

নবম শ্রেণি – বাংলা – নিরুদ্দেশ

উৎস

প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা নিরুদ্দেশ ছোটোগল্পটি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত সামনে চড়াই (১৯৪৭) গল্প সংকলনে প্রথম প্রকাশিত হয়।

বিষয়সংক্ষেপ

খবরের কাগজে নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ির দিকে ইঙ্গিত করে গল্পকথক তাঁর বন্ধু সোমেশকে বোঝাতে চান যে, এইসব বিজ্ঞাপন অধিকাংশ সময়েই অর্থহীন হয় এবং নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তিটি ঠিকঠাকই ফিরে আসে। তখন সোমেশ এই ফিরে আসা সংক্রান্ত এক ভয়ানক ট্র্যাজেডির কাহিনি শোনান কথককে।
অনেক বছর আগে একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রে দিনের পর দিন একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হতে থাকে, যাতে শোভন নামের একটি নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ছেলের প্রতি ফিরে আসার কাতর আবেদন জানানো হয়। পরে কাতর আবেদনের বদলে শুধু তার বর্ণনা দিয়ে। বিজ্ঞাপন বেরোতে থাকে। তারপর আবার একদিন হঠাৎ সেই কাতর আবেদন কাগজে প্রকাশিত হয়। এভাবে চলতে চলতে একসময় এই বিজ্ঞাপন প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। তারপর প্রায় দু-বছর পর একদিন শোভন হঠাৎই বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু পুরোনো নায়েবমশাই তাকে চিনতে পারেন না। তাকে বাইরের বাড়িতে বসতে নিয়ে যান, ভিতরে ঢুকতে দেন না। এরপর ছবি মিলিয়ে সে আসল শোভন কিনা তার পরীক্ষা শুরু হয়। কিন্তু মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও শোভনকে ভিতরে যেতে দেওয়া হয় না, বরং চলে যেতে বলা হয়। শোভন উদ্‌ভ্রান্তের মতো তার বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তাকে বলা হয়, তাঁদের কাছে খবর আছে সাত দিন আগে শোভন মারা গেছে। এই কথাবার্তার মধ্যেই শোভনের বৃদ্ধ বাবা সেখান দিয়ে যান – শোভন ছুটে তাঁর কাছে গেলেও তিনি তাকে চিনতে পারেন না। নায়েবমশাই তাঁকে জানান যে তৃতীয়বার নিজেকে শোভন হিসেবে দাবি জানাতে লোক এসেছে। বৃদ্ধ বাবা কিছু না বলে শোভনকে চলে যেতে দিতে বলেন। শোভন স্তব্ধ হয়ে যায় এবং চেতনা হারায়। আচ্ছন্নতা কাটে কিছু পরে, যখন নায়েবমশাই কিছু টাকার নোট তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন যে গৃহকর্ত্রী মৃত্যুশয্যায়, ছেলের মৃত্যুসংবাদ তিনি পাননি। তিনি ছেলেকে দেখার আশা করে আছেন। তাই তাকেই সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলে হয়ে তাঁর কাছে উপস্থিত হতে হবে।
সোমেশের গল্প এখানেই শেষ হয়। গল্পকথক সোমেশের কানের কাছে শোভনের মতোই একটা জড়ুল রয়েছে এ কথা জানালে সোমেশ জানান এই সাদৃশ্যের জন্যই তাঁর পক্ষে গল্প বানানো সহজ হল। গল্পকথক অবশ্য তাঁর এই গল্প বানানোর কথাটি বিশ্বাস করতে পারেন না।

নামকরণ

প্রেমেন্দ্র মিত্রের নিরুদ্দেশ গল্পে বিষয়ভিত্তিক নামকরণের রীতিকে গ্রহণ করা হলেও তা শেষপর্যন্ত ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে উঠেছে। গল্পের প্রথম অংশে কথক কাগজে প্রকাশিত নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করে বোঝাতে চান যে, নিরুদ্দেশ আসলে ঘটে অভিমানের কারণে। অভিমান মিটলেই নিরুদ্দিষ্ট ঘরে ফিরে আসে। কিন্তু এই গল্পে সোমেশের সংসারের প্রতি আকর্ষণ ছিল না। তার জীবন দিয়ে সে নিরুদ্দিষ্টের ট্র্যাজেডি বুঝতে পেরেছে, যদিও সেই কাহিনি সে কোনো এক শোভনের বলে আপাতভাবে বিবৃত করেছে। জন্ম থেকে নির্লিপ্ত শোভন নিরুদ্দিষ্ট হওয়ার পরে কাগজে নানাভাবে অসংখ্য বিজ্ঞাপন বেরোয়। দু-বছর চলার পরে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়। তখনই কৌতূহলী শোভন বাড়ি ফেরে। কিন্তু ট্র্যাজেডি হল তখন কেউ তাকে চিনতে পারে না। শোভনের ট্র্যাজেডি ঘনীভূত হয়, যখন নায়েবমশাই শোভনকে টাকা দিয়ে বলেন যে মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের কাছে শোভনকেই শোভনের ভূমিকায় অভিনয় করতে হবে। মিথ্যা এভাবে সত্যের জায়গা দখল করে নেয়। প্রকৃত শোভন চিরকালের জন্য বর্তমানে থেকেও নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যায় পরিজনদের কাছে। নিরুদ্দিষ্টের এই ট্র্যাজিক পরিণতিতে গল্পের নামকরণ নিরুদ্দেশ অত্যন্ত সার্থক হয়ে উঠেছে।

নিরুদ্দেশ একটি বিখ্যাত বাংলা ছোটগল্প যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেছিলেন। গল্পটি একটি যুবকের গল্প, যিনি তার জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সংগ্রাম করছেন। তিনি বিভিন্ন পেশা চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনওটিতেই তিনি সন্তুষ্ট নন। অবশেষে, তিনি বুঝতে পারেন যে জীবনের কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই। জীবনকে উপভোগ করা এবং তাতে অর্থ খুঁজে পাওয়াই হল আসল উদ্দেশ্য।

গল্পটি জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই। আমরা আমাদের জীবনকে আমাদের মতো করে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের লক্ষ্যগুলি এবং মূল্যবোধগুলি আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য নির্ধারণ করবে।

গল্পটি যুবকদের জন্য বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। যুবকরা প্রায়শই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সংগ্রাম করে। তারা বিভিন্ন পেশা চেষ্টা করে এবং বিভিন্ন লক্ষ্য অনুসরণ করে। তবে, তারা প্রায়শই সন্তুষ্ট হয় না। নিরুদ্দেশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনের কোনও নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নেই। আমরা আমাদের জীবনকে আমাদের মতো করে গড়ে তুলতে পারি।

গল্পটি একটি শক্তিশালী এবং অনুপ্রেরণামূলক গল্প। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে জীবনকে উপভোগ করা এবং তাতে অর্থ খুঁজে পাওয়াই হল আসল উদ্দেশ্য।

Share via:

মন্তব্য করুন