নবম শ্রেণি বাংলা – নিরুদ্দেশ – বিষয়সংক্ষেপ

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘নিরুদ্দেশ’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে লেখকের পরিচিতি, গল্পের উৎস, গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ, গল্পের সারসংক্ষেপ, গল্পের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘নিরুদ্দেশ’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দেবে এবং গল্পটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে লেখক ও গল্পের সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবম শ্রেণি - বাংলা - নিরুদ্দেশ - বিষয়সংক্ষেপ

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের লেখক পরিচিতি

প্রেমেন্দ্র মিত্রের জন্ম ও শিক্ষাজীবন –

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে প্রগাঢ় রবীন্দ্রপ্রভাব ও বিশ্বযুদ্ধের করাল। ছায়ায় প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের। 1904 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে কাশীতে তাঁর জন্ম হলেও তিনি হুগলির কোন্নগরের অভিজাত মিত্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন উচ্চশিক্ষিত এবং রেল বিভাগে কর্মরত। তাঁর মাতা সুহাসিনী দেবী। তৎকালীন পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্রের পিতামহ শ্রীনাথ মিত্রের বন্ধু। অল্পবয়সে মা-কে হারিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র মির্জাপুরে মাতামহ রাধারমণ ঘোষের তত্ত্বাবধানে থাকতেন। কিন্তু দাদামশাই -এর মৃত্যুর পর নলহাটিতে এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় তাঁকে। সেখানকার মাইনর স্কুলে তাঁর পড়াশোনা শুরু হয়। মেধাবী ছাত্র প্রেমেন্দ্র মিত্র নলহাটি ছেড়ে কলকাতার সাউথ সুবাবন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভরতি হন। এখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে ভরতি হন। শিক্ষা অসম্পূর্ণ রেখেই কৃষিবিদ্যা পড়ার আকর্ষণে তিনি শ্রীনিকেতনে চলে যান। সেখানেও মন স্থির না হলে ফিরে আসেন কলকাতায়। এরপর ঢাকার জগন্নাথ কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষার অভিপ্রায়ে ভরতি হন তিনি। অস্থির মানসিকতার কারণে তিনি ঢাকা থেকে পুনরায় কলকাতায় আসেন এবং জীবিকার অন্বেষণ করতে থাকেন। এইসময় ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশ পায় তাঁর দুটি গদ্য। এভাবেই সাহিত্যজগতে প্রবেশ ঘটে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রখ্যাত সাহিত্যিকের।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাহিত্য জীবন –

মূলত ‘কল্লোল’ ভাবধারার লেখক হলেও ‘প্রবাসী’ থেকে তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর ‘কালিকলম’ পত্রিকায় তিনি লেখক ও সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। একাধারে কবি, গল্পকার, চিত্রনাট্যকার, সংগীতকার ছিলেন তিনি। তাঁর একক সম্পাদনায় ‘কালিকলম’ ছাড়াও প্রকাশিত হয়েছিল ‘রঙ মশাল’, ‘নবশক্তি’, ‘পক্ষীরাজ এবং যুগ্মসম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘কবিতা’ ও ‘নিরুক্ত’ পত্রিকা। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় ‘বাংলা গল্প বিচিত্রা’য় তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন – “যে কালভূমিতে প্রেমেন্দ্র মিত্রের বিকাশ, তাঁর কবি-মানস ও জীবন-প্রতীতির অনিশ্চয়তা সেই ভূমিরই শস্য।” একদিকে দুই বিশ্বযুদ্ধ, অন্যদিকে রবীন্দ্রপ্রভাব এবং ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর আধুনিক সাহিত্য-বৈশিষ্ট্য প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছিল।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের রচনা সম্ভার –

তাঁর সৃষ্ট প্রায় পঞ্চাশটি উপন্যাস, অজস্র ছোটোগল্প, কিশোর ও শিশুপাঠ্য, নব আঙ্গিকের রচনা, নাটক, ছড়া, প্রবন্ধ, অনুবাদ গ্রন্থ, চিত্রনাট্য প্রকৃতি বাংলা সাহিত্যে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। তিনি অনুবাদ করেছিলেন সমারসেট মম, লরেন্স, বার্নাড শ, হুইটম্যানের সাহিত্যসৃষ্টি। তাঁর সৃষ্ট উল্লেখযোগ্য তিনটি চরিত্র ‘ঘনাদা’, ‘পরাশর বর্মা’ ও ‘ভূত শিকারি মেজোকর্তা’। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য, সংগীত রচনাও করেছিলেন তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হল – ‘পাঁক’, ‘মিছিল’, ‘কুয়াশা’, ‘আগামীকাল’, ‘ছায়াতোরণ’, ‘প্রতিধ্বনি ফেরে’, ‘পথ ভুলে’, ‘দূর বসন্ত’, ‘ওরা থাকে

ও ধারে’, ‘বিসর্পিল’ ইত্যাদি। ছোটোগল্পকার হিসেবে তাঁর অবদান সর্বাধিক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য – ‘বেনামী বন্দর’ (1930 খ্রিস্টাব্দ), ‘পুতুল ও প্রতিমা’ (1931 খ্রিস্টাব্দ), ‘পঞ্চশর’ (1934 খ্রিস্টাব্দ), ‘মৃত্তিকা’ (1935 খ্রিস্টাব্দ), ‘মহানগর’ (1937 খ্রিস্টাব্দ), ‘ধূলিধূসর’ (1938 খ্রিস্টাব্দ), ‘সামনে চড়াই’ (1950 খ্রিস্টাব্দ), ‘জলপায়রা’ (1958 খ্রিস্টাব্দ), ‘সংসার সীমান্তে’, ‘অষ্টপ্রহর’ ইত্যাদি। কবি হিসেবে প্রেমেন্দ্র মিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর বিশিষ্ট কাব্যগ্রন্থগুলি হল – ‘প্রথমা’, ‘সম্রাট, ‘ফেরারী ফৌজ’, ‘সাগর থেকে ফেরা’, ‘হরিণ চিতা চিল’ ইত্যাদি।

প্রেমেন্দ্র মিত্রের পুরস্কার –

‘সাগর থেকে ফেরা’ কাব্যগ্রন্থটি তাঁকে 1957 খ্রিস্টাব্দে ‘আকাদেমি পুরস্কার’ এবং 1958 খ্রিস্টাব্দে ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ এনে দেয়। ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ এবং বিশ্বভারতীর ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি তিনি লাভ করেন। তাঁর ছদ্মনাম ছিল কৃত্তিবাস ভদ্র।

উপসংহার –

প্রেমেন্দ্র মিত্র ছিলেন বঞ্চিত, অসহায়, নগণ্য মানুষের সহমর্মী। তিনি ‘গল্প লেখার গল্প’-তে বলেছিলেন – “যাদের কথা কেউ লেখে না, যাদের জীবনে চোখ ধাঁধানোর ছড়াছড়ি নেই, তাদের কথা লিখবার একটা তাগিদ এ গল্পের অনেক আগেই আমার মনের মধ্যে কোথায় যেন ছিল।” বিশ্বযুদ্ধের এবং পরবর্তী সময়ের সামাজিক অবনতি, নিম্নবিত্ত জীবনের অক্ষমতা, মনুষ্যত্বহীনতা, জটিল ও জীর্ণ সমাজের নানা দিক তাঁর সাহিত্যে সহজরূপে প্রকাশ পেয়েছে। শিল্পী প্রেমেন্দ্র মিত্র অবশেষে 1988 খ্রিস্টাব্দের 3 মে প্রয়াত হন।

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের উৎস

সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পটি ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। পর্ষদ কর্তৃক সংকলিত গল্পটি লেখকের ‘সামনে চড়াই’ (1947 খ্রিস্টাব্দ) নামক গল্পসংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে।

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ

রবীন্দ্র-পরবর্তী কালের বাংলা কবিতা ও ছোটোগল্পের অন্যতম পুরোধা হলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘বাংলা গল্প বিচিত্রা’ গ্রন্থে বলেছেন – “সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র কবিতা ও ছোটোস্ক্রল্পের মধ্যে কোনটিকে বলবেন জীবনসঙ্গিনী আর কাকেই বা চিহ্নিত করবেন মর্মকাঙ্গিনী? কে তাঁর বৈধী কে তাঁর রাগানুগা?” সত্যিই তো প্রেমেন্দ্রের গল্পে যেভাবে কবিত্বের ছায়াপাত মাঝে মাঝে ঘটে, তাতে তাঁর গল্প এক আলাদা মাত্রা পায়। তবে তিনি মূলত বস্তুনিষ্ঠ শিল্পী। জীবনের ভাঙন ও অবক্ষয়ের স্বরূপ উন্মোচনে তাঁর লেখনী অকম্পিত, আবার জীবনের জটিলতার বিশ্লেষণের নিপুণ বিশ্লেষক তিনি। মানবজীবনের রহস্য উন্মোচনে মানুষের স্থূল ও আপাত কুৎসিত প্রবৃত্তির মধ্যে খোঁজ করেছেন জীবনের অর্থকে। মানুষের মনের অরণ্য রহস্য আসল অরণ্যের রহস্যকেও ছাড়িয়ে যায়-এ কথা বুঝেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। তাই ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে কবি ও গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্র সোমেশের মনের রহস্যময়তাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন।

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের বিষয়সংক্ষেপ

গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘সামনে চড়াই’ গল্পসংকলনের অন্তর্গত ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পটি বাংলা সাহিত্যজগতের এক অনবদ্য সৃষ্টি। সোমেশের জীবনের অশ্রুসজল ট্র্যাজিডিই এই গল্পের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

শীতের এক বাদলা দিনে বিষণ্ণ একাকী অলস দুপুরে কথকের বাড়িতে আসে বন্ধু সোমেশ। তবে সোমেশ যেন অন্যদিনের থেকে একটু আলাদা। কথক সংবাদপত্র ওলটাতে ওলটাতে লক্ষ করেন সেদিন একসঙ্গে সাত-সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এ খবরে সোমেশের কোনো কৌতূহলই নেই। সে উদাসীনভাবে শুধু সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে। স্তব্ধতা ভাঙার জন্য তখন কথক বলেন – ‘নিরুদ্দেশ’ -এর এই বিজ্ঞাপনগুলো দেখলে কিন্তু আমার হাসি পায়।’ এরপর তিনি নিরুদ্দেশ -এর সাধারণ একটি ঘটনা বলেন।

কথকের কাহিনি অনুযায়ী, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মায়ের আদরে আর আশকারায় উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে রাত করে থিয়েটার দেখে বাড়ি ফেরে। এটা তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। বাবা খেতে বসার সময় কয়েকদিন খোঁজও করেছেন, কিন্তু সেদিন হঠাৎ পুত্রের আগমন দেখে বাবা খুব বকুনি দেন। মা প্রতিরোধ করতে থাকলেও বাবা থামেন না। তিনি ছেলের উদ্দেশে ক্রোধবশত বলেন – ‘এমন ছেলের আমার দরকার নেই – বেরিয়ে যা।’ আর গুণধরপুত্র তৎক্ষণাৎ সেই আদেশটি পালন করতে গৃহত্যাগ করে। এদিকে পরের দিন ভয়ানক কাণ্ড ঘটে। মা পুত্রের চিন্তায় আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে শয্যা নেন। বাবা বাড়ি এলে কান্নাকাটি করেন। বাবা বাড়ির এই অবস্থা দেখে বিজ্ঞাপন অফিসের দ্বারস্থ হন। অনেক জটিলতা কাটিয়ে তিনি বিজ্ঞাপন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু অশ্রুসজল বিজ্ঞাপন বেরোনোর আগেই ছেলে এসে বাড়িতে হাজির হয়। তখন মা পুত্রের উপর ক্রোধান্বিতা হলেও বাবা কিন্তু পুত্রকে ক্ষমা করে দেন। কথকের ভাষায় – “অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাস এই।”

উদাসীন সোমেশের সিগারেটটা তখন শেষ হয়েছে। কথকের কথা শুনেছে বলে বোধ হয় না, একবার একটু নড়েচড়ে বসতেও তাকে দেখা যায়নি। কথক এতে একটু বিরক্ত হলে সোমেশ কোনো উত্তর দেয় না। শুধু পা গুটিয়ে নিয়ে অবশিষ্ট সিগারেটটা ফেলে দিয়ে বলল – “তুমি জানো না। এই বিজ্ঞাপনের পেছনে অনেক সত্যকার ট্র্যাজিডি থাকে।” এরপর সোমেশ শোভন নামক এক উদাসীন ছেলের নিরুদ্দেশের কথা বলে, যে প্রাচীন জমিদার বংশের উত্তরাধিকারী হয়েও খেয়ালবশত বাড়ি ছেড়েছিল। এদিকে চিন্তায় মা-বাবা বিজ্ঞাপনের পর বিজ্ঞাপন দিয়ে গেলেও নির্লিপ্তমনা শোভন তাতে কান দেয় না। প্রথমে বিজ্ঞাপনে মায়ের কাতরতা দেখা যায়, তারপর দেখা যায় বাবার আর্তনাদ। মা ক্রমশ শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকেন। এদিকে বিজ্ঞাপনে প্রকাশিত হয় শোভনের আকার-আকৃতি, ডান কানের কাছে জড়ুলের কথা। বেঁচে গেছে না মরে গেছে তাও যদি কেউ জানাতে পারে, তবে পুরস্কার পাওয়া যাবে। পুরস্কারের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে লাগল। মা শুধু শোভনের নাম করছেন – এমন একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে শেষে বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে যায়।

বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়ে গেলে উদাসীন শোভন বাড়ি ফেরার তাগিদ অনুভব করে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাকে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে, তা সে আশঙ্কা করেনি। তার বাড়ির সেরেস্তার নায়েব মশায়, খাজাঞ্চিমশায়, অন্যান্য কর্মচারী কেউই তাকে চিনতে পারে না। আসলে তাদের কাছে শোভনের মৃত্যুসংবাদ সাতদিন আগে পৌঁছে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকেও সে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া অগাধ সম্পত্তির লোভে এর আগে আরও দুজন শোভনের নাম করে এসেছিল, যাদের চেহারায় জড়ুলের পর্যন্ত মিল ছিল। যখন কেউই শোভনকে বিশ্বাস করতে চায় না, তখন শোভন শুধু তার বাবা-মাকে দেখেই চলে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তার বাবাও তাকে চিনতে পারে না। শেষপর্যন্ত নায়েবমশায় তার বাবার সঙ্গে কথা বলে তার হাতে নোট গুঁজে দেন তার মায়ের কাছে তাকে পুত্রের অভিনয় করতে হবে বলে।

এরপর সোমেশ চুপ করে যায়। হঠাৎ কথকের চোখে পড়ে যে সোমেশের ডান কানের কাছে একটা জড়ুল রয়েছে। কিন্তু সোমেশ তা সচেতনভাবে একটি রহস্যময় হাসি দিয়ে এড়িয়ে যায়, আর বলে – ‘সেই জন্যেই গল্প বানানো সহজ হলো।’ কিন্তু কথকের সেই হাসি বিশ্বাস করতে মন চায়নি।

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পের নামকরণ

ভূমিকা –

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘কাব্যের উপেক্ষিতা’ প্রবন্ধে বলেছিলেন, নামকে যাঁরা শুধুমাত্র নাম বলেই মনে করেন, তিনি তাঁদের দলে পড়েন না। কথাটি বুঝিয়ে দেয় সাহিত্যের ক্ষেত্রে নামকরণ কতটা জরুরি। তবে সাহিত্যের নামকরণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রীতি প্রচলিত নেই। আলংকারিকেরা নামকরণের ত্রিবিধ সূত্রের কথা বলেছেন – নামকেন্দ্রিক বা চরিত্রকেন্দ্রিক, বিষয়কেন্দ্রিক ও গূঢ়ার্থমূলক বা ব্যঞ্জনাধর্মী। কবি ও গল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পটির নামকরণে বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তবে নামকরণের দিক থেকে গল্পটি কতখানি সার্থক, তা আমরা বিচার করে দেখব।

নামকরণের বিষয়বস্তু –

‘নিরুদ্দেশ’ গল্পটির দুটি অংশ। দুটি অংশেই আছে নিরুদ্দেশের দুটি কাহিনি। প্রথমটি কমিক, দ্বিতীয়টি ট্র্যাজিক। প্রথম কাহিনিটি কথকের, দ্বিতীয়টি কথকের বন্ধু সোমেশের। প্রথমটিতে আছে মা-বাবার আদরে উচ্ছন্নে যাওয়া একটি ছেলের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ও পরবর্তীকালে বাড়িতে ফিরে আসার একটি হাস্যকর কাহিনি। দ্বিতীয়টিতে শোভন নামে এক উদাসীন ছেলের খেয়ালবশত গৃহত্যাগ, বাবা-মায়ের দেওয়া করুণ বিজ্ঞাপন, অবশেষে ফিরে এলে তাকে না চিনতে পারার এক অশ্রুসজল ট্র্যাজিক কাহিনির পরিচয় পাই।

নামকরণের সার্থকতা বিচার –

অতএব দেখা যাচ্ছে, গল্পটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে নিরুদ্দেশকে কেন্দ্র করে। সংবাদপত্রে দেওয়া বিজ্ঞাপন নিরুদ্দেশকেন্দ্রিক। প্রথম কাহিনিটি হাসির উদ্রেক ঘটালেও দ্বিতীয় কাহিনিটি বেদনাদায়ক। বিষয়কেন্দ্রিক এই গল্পের একটি সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা হল, শোভন তার মা-বাবা ও অন্যান্য আত্মীয় – পরিজনদের মন থেকে চিরদিনের জন্য নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। এই ভাবনা থেকে গল্পটির বিষয়ানুগ নামকরণ সার্থক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়ে উঠেছে।


এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের ষষ্ঠ পাঠের প্রথম অধ্যায়, ‘নিরুদ্দেশ’ -এর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করবো। এখানে লেখকের পরিচিতি, গল্পের উৎস, গল্পের পাঠপ্রসঙ্গ, গল্পের সারসংক্ষেপ, গল্পের নামকরণ এবং এর প্রধান বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এই আর্টিকেলটি আপনাদের ‘নিরুদ্দেশ’ সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়েছে এবং গল্পটি ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। এছাড়া, নবম শ্রেণীর পরীক্ষায় এই অধ্যায় থেকে লেখক পরিচিতি, গল্পের নামকরণ ও গল্পের সারসংক্ষেপ সম্পর্কিত প্রশ্ন আসতে পারে, তাই এই তথ্যগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Please Share This Article

Related Posts

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ভাস্বর বাতি, CFL বাতি ও LED বাতির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

নবম শ্রেণী ইতিহাস - প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – প্রাককথন: ইউরোপ ও আধুনিক যুগ

নবম শ্রেণী ইতিহাস - বিপ্লবী আদর্শ,নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ - বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী ইতিহাস – বিপ্লবী আদর্শ, নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik English Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রবন্ধ রচনা

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – প্রতিবেদন

Madhyamik Bengali Suggestion 2026 – সংলাপ