সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, অনুবাদক, সাংবাদিক ও চিত্র সমালোচক। তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব। তার রচিত প্রবন্ধগুলি ভাষা ও সমাজ সংস্কৃতি নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করে। তার লেখা নব নব সৃষ্টি প্রবন্ধটিতে তিনি ভাষার সৃজনশীল ক্ষমতার কথা বলেছেন।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে কোন্ কোন্ ভাষাকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন আত্মনির্ভরশীল?
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে লেখক প্রাচীন যুগের হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা, সংস্কৃত এবং আরবি ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল বলেছেন।
কোনো নতুন চিন্তা বা অনুভূতি বোঝানোর জন্য নবীন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা কী করে?
নতুন চিন্তা বা অনুভূতি বোঝাতে সংস্কৃত তার নিজের ভাণ্ডারেই কোনো ধাতু বা শব্দের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।
সংস্কৃতকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলতে লেখকের আপত্তি নেই কেন?
সংস্কৃত ভাষা অন্য ভাষার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের ভাণ্ডারে খোঁজ করার মাধ্যমে নতুন শব্দ তৈরির চেষ্টা করে।
প্রাচীন যুগের সব ভাষাই তাই। — প্রাচীন যুগের কোন্ কোন্ ভাষার কথা লেখক উল্লেখ করেছেন?
লেখক প্রাচীন যুগের সংস্কৃত, হিব্রু, গ্রিক, আবেস্তা এবং কিছুটা পরবর্তী যুগের আরবি ভাষার কথা বলেছেন।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের কোন্ কোন্ ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বর্তমান যুগের ইংরেজি এবং বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয়।
পাঠান-মোগল যুগে আরবি ও ফারসি থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়েছিল কেন?
পাঠান-মোগল যুগে আইন – আদালত, খাজনা খারিজ নতুন করে দেখা দেওয়ায় আরবি-ফারসি ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করতে হয়।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী কোন্ প্রশ্নকে অবান্তর বলেছেন?
ভাষায় বিদেশি শব্দগ্রহণ ভালো না মন্দ—এই প্রশ্নকে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী অবান্তর বলেছেন।
সে সম্বন্ধেও কারও কোনো সন্দেহ নেই। — কোন্ বিষয়ে সন্দেহ নেই?
শিক্ষার মাধ্যমরূপে ইংরেজির বদলে বাংলা গ্রহণ করলে প্রচুর পরিমাণে ইউরোপীয় শব্দ বাংলায় প্রবেশ করবে। এ বিষয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে লেখক রান্নাঘর থেকে কী কী তাড়ানো মুশকিল বলেছেন?
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে রান্নাঘর থেকে আলু-কপি এ জাতীয় বিদেশি সবজি তাড়ানো মুশকিল বলেছেন লেখক।
হিন্দি উপস্থিত সেই চেষ্টাটা করছে – হিন্দি কোন্ চেষ্টা করছে?
হিন্দি থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথা এখানে বলা হয়েছে।
নূতন আমদানিও বন্ধ করা যাবে না। — কী আমদানি বন্ধ করা যাবে না?
লেখক বলেছেন বিদেশি দ্রব্যের ব্যবহারের মতো বিদেশি ভাষাও মাতৃভাষায় থাকবে এবং তাদের আসা বন্ধ করা যাবে না।
বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন – লেখক কোন্ ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন?
লেখক হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকদের কথা বলেছেন।
বহু সাহিত্যিক উঠে পড়ে লেগেছেন — বহু সাহিত্যিক কোন্ কাজে তৎপর হয়েছেন?
হিন্দি ভাষার সাহিত্যিকরা হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি শব্দ দূর করার জন্য তৎপর হয়েছেন।
চেষ্টাটার ফল আমি হয়তো দেখে যেতে পারব না – কোন্ চেষ্টার কথা বোঝানো হয়েছে?
হিন্দি ভাষা থেকে আরবি, ফারসি বা ইংরেজির মতো ভাষা দূর করার চেষ্টার কথা বোঝানো হয়েছে।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে কয়েকজন বাঙালি সাহিত্যিক ও পণ্ডিতব্যক্তির নাম এসেছে। তাঁরা কারা?
আলোচ্য রচনাংশে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিদ্যাসাগর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্কিমচন্দ্র, আলাল (প্যারীচাঁদ) ও হুতোম (কালীপ্রসন্ন) – এর নাম পাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ স্বচ্ছন্দে লিখেছেন — রবীন্দ্রনাথের কী লেখার কথা বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?
বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দ খুব স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, আব্রু দিয়ে, ইজ্জৎ দিয়ে প্রভৃতি।
নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষায় আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার কী কী উদাহরণ দিয়েছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?
নজরুল ইসলাম ইনকিলাব এবং শহিদ প্রভৃতি আরবি-ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যবহার করেছেন।
বিদ্যাসাগর আরবি-ফারসি শব্দ কোথায় ব্যবহার করতেন?
বিদ্যাসাগর তাঁর ছদ্মনামে লেখা রচনায় প্রচুর আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করতেন ।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে ব্যবহৃত আলাল ও হুতোম কাদের লেখা, কী কী গ্রন্থ?
অথবা, আলাল ও হুতোম – এর ভাষা — আলাল ও হুতোম কী?
আলাল হল আলালের ঘরের দুলাল, লেখক প্যারীচাঁদ মিত্র। হুতোম হল হুতোম প্যাঁচার নক্শা, লেখক কালীপ্রসন্ন সিংহ।
হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম কাকে বলা হয়?
হিন্দি ভাষাসাহিত্যের বঙ্কিম বলা হয় বিখ্যাত সাহিত্যিক মুন্সী প্রেমচাঁদকে।
এস্থলে আর একটি কথা বলে রাখা ভালো। — কী কথা বলেছেন লেখক?
রচনার ভাষা তার বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে, এ কথা বলেছেন লেখক।
শংকরদর্শন আলোচনায় কোন্ ভাষার ব্যবহার স্বাভাবিক হবে?
শংকরদর্শন আলোচনায় সংস্কৃত ভাষার আধিক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।
কোন্ পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে বলেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী?
অথবা, বসুমতী – র সম্পাদকীয় রচনার ভাষা কেমন ছিল?
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, বসুমতী পত্রিকার সম্পাদকীয় রচনার ভাষায় গাম্ভীর্য আছে।
বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ ঢুকেছে তার মধ্যে কোন্ কোন্ ভাষা প্রধান বলেছেন লেখক?
বাংলায় যেসব বিদেশি শব্দ প্রবেশ করেছে তার মধ্যে আরবি, ফারসি এবং ইংরেজি অন্যতম।
সেগুলো নিয়ে অত্যধিক দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। — কোন্ বিষয়ে দুশ্চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন?
পোর্তুগিজ, ফরাসি, স্প্যানিশ ইত্যাদি শব্দ বাংলা ভাষায় এত কম এসেছে যে তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই বলে লেখক মনে করেছেন।
সে ভাষার শব্দ বাংলাতে ঢুকবেই। — কোন্ ভাষার?
বাংলা ছাড়া অন্য যে-কোনো ভাষার চর্চা আমরা করি না কেন সে ভাষার শব্দ বাংলাতে ঢুকবেই।
লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশের কারণ কী বলেছেন?
প্রাচীন যুগ থেকেই বাংলাদেশে সংস্কৃত ভাষার চর্চা ছিল। ফলে বিস্তর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় প্রবেশ করেছে।
যতদিন থাকবে ততদিন আরও ঢুকবে বলে আশা করতে পারি। — যতদিন কী থাকার কথা বলেছেন লেখক?
বাংলাদেশে যতদিন সংস্কৃত ভাষার চর্চা চলবে ততদিন বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দের প্রবেশও চলতে থাকবে।
স্কুল-কলেজ থেকে যে আমরা সংস্কৃতচর্চা উঠিয়ে দিতে চাই না তার অন্যতম প্রধান কারণ কী বলেছেন লেখক?
বাংলা অনেকাংশেই সংস্কৃত ভাষার ওপর নির্ভরশীল, তাই শিক্ষাক্ষেত্রেও সংস্কৃত ভাষার চর্চা বন্ধ করা হয়নি।
কোন্ বিশেষ বিশেষ বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন?
দর্শন, নন্দনশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যার মতো বিদ্যাচর্চায় ইংরেজি অবশ্যই প্রয়োজন বলে লেখক মনে করেন।
এই দুই ভাষা থেকে ব্যাপকভাবে আর নূতন শব্দ বাংলাতে ঢুকবে না। — কোন্ দুই ভাষার কথা এখানে বলা হয়েছে?
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে সৈয়দ মুজতবা আলী দুই ভাষা বলতে আরবি এবং ফারসি ভাষার কথা বলেছেন।
একমাত্র আরবি-ফার্সি শব্দের বেলা অনায়াসে বলা যেতে পারে যে — লেখক কী বলেছেন?
আরবি এবং ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে প্রবেশ করবে না — এই কথা অনায়াসে বলেছেন লেখক।
কোন্ কারণে অচলিত আরবি-ফারসি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে বলেছেন লেখক?
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ভাষার প্রাচীনকালের বই পড়ার ফলেই আরবি-ফারসি শব্দ নতুন মেয়াদ পাবে।
হিন্দি গদ্যের ওপর কোন্ ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক?
হিন্দি গদ্যের ওপর ফারসি ভাষার প্রভাব পড়ার কথা বলেছেন লেখক।
ভারতীয় আর্যরা কোন্ ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল?
ভারতীয় আর্যরা ফারসি ভাষার সৌন্দর্যে বেশি অভিভূত হয়েছিল।
উর্দু সাহিত্যের মূলসুর কোন্ ভাষার সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক?
উর্দু সাহিত্যের মূলসুর ফারসির সঙ্গে বাঁধা বলেছেন লেখক।
ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল কীভাবে?
আর্য-ইরানি ভাষা এবং সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ইরানে নবীন ফারসি ভাষার উদ্ভব ঘটেছিল।
ইরানে আর্য-ইরানি ভাষা ও সেমিতি-আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে কী হয়েছিল?
ইরানে আর্য -ইরানি ভাষা ও সেমিতি আরবি ভাষার সংঘর্ষে ভারতবর্ষে সিন্ধি, উর্দু ও কাশ্মীরি সাহিত্যের সৃষ্টি হয়।
ভারতবর্ষীয় এ তিন ভাষা ফার্সির মতো নব নব সৃষ্টি দিয়ে ঐশ্বর্যশালী সাহিত্যসৃষ্টি করতে পারল না। — ভারতবর্ষের এ তিন ভাষা কী কী?
ভারতবর্ষীয় এ তিন ভাষা বলতে সিন্ধি, উর্দু এবং কাশ্মীরি ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে লেখক কোন্ উর্দু কবির কথা উল্লেখ করেছেন?
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে লেখক উর্দু কবি ইকবালের কথা উল্লেখ করেছেন।
কে, উর্দুকে ফারসির অনুকরণ থেকে নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন?
উর্দু ভাষার কবি ইকবাল উর্দু ভাষাকে ফারসির অনুকরণ থেকে কিঞ্চিৎ নিষ্কৃতি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি কোনটি?
সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন যে, বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যসৃষ্টি হল পদাবলি কীর্তন।
এ সাহিত্যের প্রাণ এবং দেহ উভয়ই খাঁটি বাঙালি। — কোন্ সাহিত্যকে বোঝানো হয়েছে?
নব নব সৃষ্টি রচনাংশে পদাবলি কীর্তন সম্পর্কে আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ধর্ম বদলালেই জাতির চরিত্র বদলায় না। — লেখক কেন এরকম বলেছেন?
বাঙালি হিন্দুরা সত্য-শিব-সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় যারা বাধা দেয় তাদের বিরোধী। বাঙালি মুসলমানরাও একই কাজ করে। তাই লেখক আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন ।
প্রবন্ধে লেখক ভাষার সৃজনশীল ক্ষমতার গুরুত্বের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ভাষার এই ক্ষমতা মানুষের চিন্তা ও সৃজনশীলতার জন্য অপরিহার্য। ভাষার মাধ্যমে মানুষ নতুন নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন করতে পারে। তাই ভাষার সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশের জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।