নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘স্বর্ণপণী’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

স্বর্ণপণী-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা
Contents Show

সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

ভূমিকা – সাহিত্যের নামকরণ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামহীন সৃষ্টি অনেকটা মস্তিষ্কহীন মানবদেহের মতো। তাই প্রত্যেক সাহিত্যিক নামকরণ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন থাকেন। যদিও নামকরণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রীতি প্রচলিত নেই তবে আলংকারিকেরা নামকরণের ত্রিবিধ সূত্রের কথা বলেছেন – চরিত্রকেন্দ্রিক বা নামকেন্দ্রিক, ঘটনাকেন্দ্রিক বা বিষয়কেন্দ্রিক এবং ব্যঞ্জনাধর্মী বা গূঢ়ার্থমূলক। সত্যজিৎ রায় -এর ‘স্বর্ণপর্ণী’ অবশ্যই বিষয়ধর্মী একটি নামকরণ। সাহিত্যের দিক থেকে তা কতটা সার্থক, তা আমরা বিষয়বস্তু আলোচনা করে বুঝব।

গল্পের মূলবিষয় – ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পটি রহস্য-রোমাঞ্চ ও অ্যাডভেঞ্চারে পরিপূর্ণ। স্বর্ণপর্ণী-ই গল্পটির কেন্দ্রবিন্দু। পিতার মৃত্যুর পর শঙ্কু টিকড়ীবাবার নির্দেশমতো কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ পার্বত্যপথে গিয়ে ঝরনার পাশ থেকে স্বর্ণপর্ণী নিয়ে এসে ওষুধ তৈরি করেন। তার নাম দেন ‘মিরাকিউরল’। এই ওষুধে সম্পূর্ণ সুস্থ হন উকিল জয়গোপাল মিত্র। শঙ্কুর বিদেশি বন্ধু, সন্ডার্সও সুস্থ হন এই ওষুধে। সুস্থ সন্ডার্স লন্ডন থেকে এসে শঙ্কুকে নিয়ে যান। লন্ডনে শঙ্কু পরিচিত হন টি. শঙ্কু নামে। একদিন ঘটনাক্রমে সন্ডার্স -এর বাড়ি আসে নরবার্ট স্টাইনার। পিতা হাইনরিখ স্টাইনারকে সুস্থ করতে শঙ্কুকে নিয়ে যায় নরবার্ট। সেখানে শঙ্কু গিয়ে হাইনরিখকে সম্পূর্ণ সুস্থ করেন এবং নাৎসিদের খপ্পরে পড়েন। নাৎসিরা শঙ্কুকে বার্লিন নিয়ে যান। সেখানে জোর করে মিরাকিউরল কেড়ে নিতে চায় হের্ গোয়রিং। একটি শর্তে শঙ্কু তাদের ওষুধ দেয়, যা আসলে ছিল ঘুমের ওষুধ। পরে আশ্চর্য বুদ্ধির সাহায্যে বন্দুক দেখিয়ে শঙ্কু তাদের হাত থেকে উদ্ধার পান।

সার্থক নামকরণ – সুতরাং দেখা যাচ্ছে প্রথম থেকে শেষপর্যন্ত পুরো গল্প আবর্তিত হয়েছে স্বর্ণপর্ণীকে কেন্দ্র করে। স্বর্ণপর্ণীই এই গল্পের কেন্দ্রবিন্দু। তাই বিষয়ধর্মী নামকরণ ‘স্বর্ণপর্ণী’ শিল্পসার্থক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়েছে।

সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প অবলম্বনে প্রফেসার শঙ্কুর পরিচয় দাও।

ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পের প্রধান ও আকর্ষণীয় চরিত্র বিখ্যাত বাঙালি বিজ্ঞানী, অধ্যাপকও আবিষ্কারক প্রফেসার শঙ্কু। এই গল্পে তাঁর চরিত্রের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক প্রত্যক্ষ করি।

মেধাবী – প্রফেসার শঙ্কু ছিলেন খুব মেধাবী। গিরিডি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি কলকাতা গিয়েছিলেন পড়তে। কোনোদিন কোনো ক্লাসে তিনি সেকেন্ড হননি। বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করেন। চোদ্দতে আইএসসি আর ষোলোতে ফিজিক্স-কেমেস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বিএসসি পাস করেন। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তিনি স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের পদে যোগ দেন।

গবেষক-আবিষ্কারক – শঙ্কু সারাজীবনে বহু জিনিসই আবিষ্কার করেছেন। তাঁর খ্যাতি মূলত আবিষ্কারক হিসেবে। তিনি নিজেই বলেছেন – “এ ব্যাপারে টমাস অ্যালভা এডিসনের পরেই যে আমার স্থান, সেটা পাঁচটি মহাদেশেই স্বীকৃত হয়েছে।” তাঁর আবিষ্কার করা বস্তুগুলি হল – মিরাকিউরল, অ্যানাইহিলিন পিস্তল, এয়ারকন্ডিশনিং পিল, রিমেমব্রেন, সমনোলিন, লুমিনিম্যাক্স, লিঙ্গুয়াগ্রাফ, অর্নির্থন ইত্যাদি।

সাহসী, সৎ, বিনয়ী – বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে প্রফেসার শঙ্কু টিকড়ীবাবার আশ্চর্য কাহিনি শুনে সাহস অবলম্বন করে টিকড়ীবাবার নির্দেশমতো স্বর্ণপর্ণীর সন্ধানে ঘোড়ার পিঠে চড়ে সাড়ে ছ-হাজার ফুট উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে গভীর জঙ্গলে যান। আবার তিনি অত্যন্ত বিনয়ী এবং সৎ ছিলেন বলে ‘মিরাকিউরল’ -এর আবিষ্কাররের কৃতিত্ব নিজে নিতে চান না।

সেবাপরায়ণ ও মানবপ্রেমিক – শঙ্কু মানবপ্রেমিক ও সেবাপরায়ণ ছিলেন। তাই তিনি তাঁর আবিষ্কৃত ওষুধ উকিল জয়গোপাল মিত্র, সন্ডার্স, মিসেস ফ্রিৎসনারকে দেন। আবার তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে জার্মান যান হাইনরিখ স্টাইনারকে সুস্থ করতে।

আদর্শ পুত্র – প্রফেসার শঙ্কু ছিলেন পিতা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর আদর্শ পুত্র। তাই তিনি পিতার কথা মতো ‘মিরাকিউরল’ দিয়ে বিনা পয়সায় অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করেছেন।

অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা – শঙ্কুর বুদ্ধি ছিল অসাধারণ। অসাধারণ বুদ্ধি হেতু তিনি হের্ গোয়রিং -এর হাত থেকে হাইনরিখ স্টাইনারকে প্যারিসে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং নিজে নাৎসিদের হাত থেকে মুক্তি পান।

বাবার চিন্তাভাবনা প্রফেসার শঙ্কুর জীবনধারাকে কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল?

অথবা, ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর জীবনদর্শনের পরিচয় দাও।
অথবা, “তুই আমার একমাত্র সন্তান।” – সন্তানের প্রতি পিতার পিতৃত্ব কীভাবে গল্পে ফুটে উঠেছে?

ভূমিকা – কথায় আছে – ‘পিতার পুণ্যে পুত্রের জয়।’ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুও ছিলেন তেমনই ‘পিতা’, যাঁর পুণ্যে পুত্র ত্রিলোকেশ্বর পরবর্তীকালে বিখ্যাত অধ্যাপক ও বিজ্ঞানীরূপে বিশ্বের দরবারে পরিচিত হতে পেরেছিলেন। তাঁর আশ্চর্য জীবনদর্শন আমরা শঙ্কুর কাহিনি থেকে পাই।

আদর্শ চিকিৎসক – ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ছিলেন গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। লোকে তাঁকে বলত ধন্বন্তরি। তিনি সারা জীবনব্যাপী অনেক রোজগার করলেও যতটা করতে পারতেন, ততটা করেননি। কারণ পেশাদারি প্র্যাকটিস ছাড়াও উনি সারাজীবন বিনা পয়সায় বহু দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা করেছেন।

মানবিকতা – তিনি প্রফেসার শঙ্কুকে বলতেন – “ক্ষমতা আছে বলেই যে অঢেল উপার্জন করতে হবে তার কোনো মানে নেই।” সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন ঠিকই, কিন্তু দরিদ্র মানুষের সেবা করাটাই জীবনের পরম সার্থকতা।

পুত্রস্নেহ – ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু চেয়েছিলেন পুত্র মানুষ হোক। পুত্রের প্রতি অত্যন্ত স্নেহ হেতু তাই তিনি ছেলেকে অন্যান্য বিষয় পাঠলাভেও উৎসাহী করে তোলেন। পুত্রকে তিনি বলেন – “তুই যদি চাকরি-বাকরি না করে বাকি জীবনটা শুধু রিসার্চেই কাটিয়ে দিতে চাস, তাতেও আমার আপত্তি নেই।”

আদর্শ পিতা – আদর্শ পিতা ছিলেন ত্রিপুরেশ্বর। সন্তানের স্বপ্নকে লালন করে তিনি কেবল পিতার কর্তব্য পালন করেননি, আদর্শ মানুষের ধারণা তৈরি করেছেন সন্তানের মনে। মৃত্যুর পর সঞ্চয়ের একটা বৃহৎ অংশ লোকহিতকর কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত তাঁর মহানুভবতার দৃষ্টান্ত। এইভাবে চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর জীবনদর্শন পাঠককে অভিভূত করে।

প্রফেসার শঙ্কুর ‘মিরাকিউরল’ ওষুধ আবিষ্কারের কাহিনি ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প অবলম্বনে লেখো।

বাংলা কিশোর সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে কল্পচরিত্র প্রফেসার শঙ্কুর সর্বরোগনাশক ‘মিরাকিউরল’ ওষুধ আবিষ্কারের আশ্চর্য সুন্দর বর্ণনা করেছেন।

টিকড়ীবাবার কাহিনি – প্রফেসার শঙ্কু পেশায় ছিলেন অধ্যাপক এবং তাঁর নেশা ছিল গবেষণা। বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি তাঁর কাছ থেকে টিকড়ীবাবার এক আশ্চর্য কাহিনি শোনেন। তাঁর বাবার কাছে টিকড়ীবাবা শ্বাসকষ্টের ওষুধ নিতে এসে তাঁর বাবার কঠিন অসুখের চিকিৎসার কথা জানাতে গিয়ে এক কাহিনি বলেন। তিনি যখন কাশীতে ছিলেন, তখন তাঁর কঠিন পান্ডুরোগ হয়। কিন্তু তাঁর গুরুদেব সোনেপত্তীর দুটো শুকনো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে রাতে তাঁকে খাইয়ে দিতে তিনি উপশম পান। এই পাতা পেতে হলে যেতে হবে কসৌলি। সেখান থেকে তিন ক্লোশ উত্তরে আছে এক চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনে জঙ্গলের পাশের এক ঝরনার ধারেই জন্মায় সোনেপত্তী।

স্বর্ণপর্ণীর অনুসন্ধান – বাবার মুখে এ কাহিনি শুনে সোনেপত্তী আনতে চাইলে মৃত্যু পথযাত্রী বাবা বারণ করেন। এর ঠিক দু-দিন পরেই তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তিনি কসৌলির উদ্দেশে রওনা দেন। আড়াই দিন লাগে গিরিডি থেকে কালকা পৌঁছোতে। সেখানে গিয়ে এক হোটেলের ম্যানেজার নন্দকিশোর রাওয়ালকে জিজ্ঞাসা করে শঙ্কু চামুণ্ডার মন্দিরের ঠিকানা নেন। নন্দকিশোরই তাঁকে ঘোড়ার ব্যবস্থা করে দেন। ঘোড়ার মালিক ছোটেলাল সঙ্গে থাকেন। দু-জন মিলে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেন এবং শঙ্কু স্বর্ণপর্ণী দেখতে পান। ছোটেলাল গাছড়াটিকে শিকড়সুদ্ধ তুলে শঙ্কুর হাতে দেন।

‘মিরাকিউরল’ আবিষ্কার – তিনদিন পরে বাড়ি ফিরে শঙ্কু মালি হরকিষণকে গাছটি পরিচর্যার দায়িত্ব দেন। তাঁর ওষুধটা প্রয়োগ করার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই আজন্ম গিরিডিবাসী উকিল জয়গোপাল মিত্রের গুরুতর অসুস্থতায় সেই ওষুধ প্রথম প্রয়োগ করেন। জয়গোপাল মিত্র পরের দিনই সুস্থ হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে বাগানের দক্ষিণদিকে আরও এগারোটি স্বর্ণপর্ণীর গাছ গজায়। শঙ্কু ঠিক করেন শুকনো পাতা গুঁড়িয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার চেয়ে বড়ি তৈরি করে নেওয়া শ্রেয়। সেই অনুযায়ী তিনি বড়ি তৈরি করেন, নাম দেন ‘মিরাকিউরল’ অর্থাৎ ‘মিরাকল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস’।

স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থানের পরিচয় দাও। স্বর্ণপর্ণীর দ্বারা কারা, কীভাবে উপকৃত হয়েছিল?

অথবা, ‘মিরাকিউরল’ নামকরণের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ‘মিরাকিউরল’ আবিষ্কারের ফল কী হয়েছিল?

‘মিরাকিউরল’ নামকরণের তাৎপর্য – প্রখ্যাত চলচ্চিত্রনির্মাতা ও ছোটোগল্পকার সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু একটি আশ্চর্য আয়ুর্বেদিক ওষুধ আবিষ্কার করেন, যার নাম ‘মিরাকিউরল’। শঙ্কু বলেছেন – “মিরাকিউরল আবিষ্কার হয় আমার যৌবনে।” প্রফেসার শঙ্কু, বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে স্বর্ণপর্ণীর গল্প শোনেন। টিকড়ীবাবা ছিলেন সে গল্পের বক্তা। টিকড়ীবাবার নির্দেশিত পথে শঙ্কু কসৌলির তিন ক্রোশ উত্তরে গিয়ে স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পেয়ে তা গিরিডিতে নিয়ে আসেন এবং মালি হরকিষণের পরিচর্যায় এগারোটি স্বর্ণপর্ণী গাছ তৈরি করতে সক্ষম হন। এই ওষুধ তিনি প্রথম প্রয়োগ করেন উকিল জয়গোপাল মিত্রের মারণব্যাধিতে। সাফল্য পান তিনি। এরপর পঁচিশ বছরের জন্মদিনে যান্ত্রিক সহায়তায় স্বর্ণপর্ণীর বড়ি তৈরি করতে করতে বিদ্যুৎঝলকের মতো এই ওষুধের একটি নাম তাঁর মাথায় আসে – ‘মিরাকিউরল’ অর্থাৎ ‘মিরাক্স কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস’-সর্বরোগনাশক বড়ি।

‘মিরাকিউরল’ আবিষ্কারের ফল – ‘মিরাকিউরল’ নামকরণ করার পর শঙ্কু প্রথম এই ওষুধ প্রয়োগ করেন ইংল্যান্ডের পত্রবন্ধু সন্ডার্সের ওপর। সন্ডার্সের যকৃতের ক্যানসার মিরাকিউরলের দ্বারাই ভালো হয়। সন্ডার্স সুস্থ হয়ে শঙ্কুর বাড়ি আসেন এবং শঙ্কুকে জোর করে লন্ডনে নিয়ে যান। শঙ্কু বিশ্বের বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহলে টি. শঙ্কু নামে পরিচিত হন। লন্ডন থেকে তিনি ভারততাত্ত্বিক হাইনরিখ স্টাইনারের শুশ্রূষা করতে বার্লিন যান, সেখানে নাৎসিদের মুখোমুখি বিপদে পড়েন। কিন্তু সন্ডার্সের চালাকি ও নিজবুদ্ধির দ্বারা শঙ্কু সেখান থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হন।

“স্বর্ণপর্ণী একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প।” – আলোচনা করো।

ভূমিকা – বিজ্ঞানের কোনো তত্ত্ব অথবা বৈজ্ঞানিক সত্য বা সম্ভাবনাকে আশ্রয় করে অনাগত ভবিষ্যতের পৃথিবী সম্পর্কে কল্পনানির্ভর গদ্য আখ্যানই ‘কল্পবিজ্ঞানের গল্প’ নামে পরিচিত। উদ্ভট খেয়ালি কল্পনা, রহস্য ও রোমাঞ্চ এই জাতীয় গল্পের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। কখনো-কখনো কল্পনাবিজ্ঞানের রূপকে লেখক সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ব্যঙ্গমূলক, তির্যক ভাষ্যও রচনা করে থাকেন।

সার্থকতা বিচার – বিখ্যাত ছোটোগল্পকার সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পের প্রধান চরিত্র প্রফেসার শঙ্কু একজন বিজ্ঞানী, অধ্যাপক এবং আবিষ্কারক। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ‘মিরাকিউরল’, যা কিনা ‘সর্বরোগনাশক বড়ি’ নামে পরিচিত। গল্পকার বলেছেন – “মিরাল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস”। যা বাস্তবে কখনোই সম্ভব হতে পারে না। সম্ভবত নামটি ‘মিরাকল্’ শব্দ থেকেই নেওয়া। আবার এই ওষুধে সবরকম ভিটামিন এবং পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন ইত্যাদি এবং অ্যালিল সালফাইড ও অজানা এক উপাদানের মিশ্রণ বর্তমান। এখানেই কাহিনিতে বিজ্ঞানাশ্রয়ী কল্পনার প্রকাশ, যা অসম্ভব হলেও ভবিষ্যতে সম্ভব হতে পারে। এ ছাড়া আছে ‘মার্জারিন’, যা ‘মার্জার’ বা ‘বেড়াল’ -এর নাম থেকে নেওয়া; লুমিনিম্যাক্স সম্ভবত ‘লুমিয়াস’ (উজ্জ্বল) ও ‘ম্যাক্সিমাম’ শব্দযোগে তৈরি। ‘অনিধন’ নামটি ‘অর্নিথোলজি’ (পক্ষীবিদ্যা) থেকে নেওয়া। ‘সমনোলিন’ কথাটি ল্যাটিন ‘Somnolentus’ থেকে গৃহীত, যার অর্থ Sleepiness’। এইভাবে দেখা যায় শঙ্কু আবিষ্কৃত প্রতিটি বস্তু বিজ্ঞানের পরিভাষার সঙ্গে যুক্ত হলেও, কোথায় যেন বিজ্ঞানকে ছাড়িয়ে কল্পনায় বিচরণ করে; যা বর্তমানে মেনে নিতে একটু অসুবিধা হলেও বেশ উপভোগ্য। মোটামুটিভাবে তাই বলা যায় সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প কল্পনাবিজ্ঞানের গল্প হিসেবে সার্থকতা লাভ করেছে।

“আমার খ্যাতি প্রধানত ইনভেন্টর বা আবিষ্কারক হিসাবে।” – আবিষ্কারগুলির নাম উল্লেখ করো। আবিষ্কারগুলির গুণাবলির পরিচয় দাও।

আবিষ্কারগুলির নাম – সত্যজিৎ রায়ের এক অবিস্মরণীয় সৃষ্ট চরিত্র প্রফেসার শঙ্কু। ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু তাঁর জন্মদিনের সাফল্যপূর্ণ জীবন নিয়ে খুব আনন্দিত। তিনি নিজেই বলেছেন – “কোনও ভারতীয় বিজ্ঞানী দেশেবিদেশে এত সম্মান পেয়েছে বলে তো মনে হয় না।” আবিষ্কারক হিসেবে টমাস অ্যালভা এডিসনের পরেই তাঁর স্থান। পাঁচটি মহাদেশই তা স্বীকার করে নিয়েছে। তাঁর আবিষ্কারের তালিকায় যা যা রয়েছে, তা হল – ‘মিরাকিউরল’, ‘অ্যানাইহিলিন পিস্তল’, ‘এয়ারকন্ডিশনিং পিল’, ‘রিমেমব্রেন’, ‘সমনোলিন’, ‘লুমিনিম্যাক্স’, ‘লিঙ্গুয়াগ্রাফ’, ‘অর্নির্থন’ ইত্যাদি।

আবিষ্কারগুলির গুণাগুন – প্রফেসার শঙ্কু জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী। তাঁর আবিষ্কৃত বস্তুগুলির গুণাগুণ অসাধারণ। প্রথমেই বলা যায় তাঁর শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার ‘মিরাকিউরল’ বা ‘সর্বরোগনাশক বড়ি’-র কথা, যা উদরি – ক্যানসার এবং সর্দিকাশি নির্মূল করে; মৃতপ্রায় মানুষকেও মাত্র চব্বিশ ঘণ্টায় সতেজ ও রোগমুক্ত করতে পারে। ‘অ্যানাইহিলিন পিস্তল’ শত্রুকে নিহত না করে নিশ্চিহ্ন করে। ‘এয়ারকন্ডিশনিং পিল’ জিভের তলায় রাখলে শরীর শীতকালে গরম আর গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা থাকে। ‘রিমেমব্রেন’ কারও লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে আর ঘুমের অব্যর্থ বড়ির নাম ‘সমনোলিন’। অতি সস্তায় উজ্জ্বল আলো প্রদানের জন্য তিনি আবিষ্কার করেন ‘লুমিনিম্যাক্স’। অচেনা ভাষা ইংরেজিতে অনুবাদ করার জন্য তিনি আবিষ্কার করেন ‘লিঙ্গুয়াগ্রাফ’। প্রফেসার শঙ্কু এই যন্ত্রের সাহায্যেই বিএসসি পাস করার পর চার বছরে ফরাসি ও জার্মানি শিখে নিয়েছিলেন। এ ছাড়া পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আবিষ্কার করেছিলেন ‘অর্নিথন’। এই কারণেই তিনি দেশবিদেশে এত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

টিকড়ীবাবা স্বর্ণপর্ণীর পরিচয় কীভাবে পান? স্বর্ণপর্ণী তাঁর জীবনে কীভাবে কাজে লেগেছিল? স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থানের পরিচয় দাও।

স্বর্ণপর্ণীর পরিচয় – আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে শঙ্কুর ডায়রি থেকে টিকড়ীবাবা নামক এক সন্ন্যাসীর পরিচয় পাওয়া যায়। প্রফেসার শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে এই টিকড়ীবাবা একদিন শ্বাসকষ্টের পীড়ায় চিকিৎসার জন্য আসেন। তাঁর মুখ থেকেই প্রথম শোনা যায় ‘সোনেপত্তী’ বা স্বর্ণপর্ণীর কথা। টিকড়ীবাবার জানা ছিল সোনেপত্তীর গাছ কোথায় আছে। যুবা বয়সে যখন তিনি কাশীতে ছিলেন, তখন তাঁর একবার খুব কঠিন পাণ্ডুরোগ হয়েছিল, আর তখন গুরুদেবের কাছ থেকে এই ‘সোনেপত্তী’র নাম প্রথম শোনেন টিকড়ীবাবা এবং তা সেবনে অসুখের উপশম ঘটে তাঁর।

টিকড়ীবাবার জীবনে স্বর্ণপর্ণী – টিকড়ীবাবা যোগী পুরুষ। উশ্রীর ওপারে একটা গ্রামে গাছতলায় বসে তিনি ধ্যান করেন। চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে এসে তিনি ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কঠিন পীড়া অনুভব করে ‘সোনেপত্তী’ বা স্বর্ণপর্ণী নামক এক গাছড়ার কথা বলেন। তিনি যখন যুবা বয়সে কাশীতে থাকতেন, তখন তাঁর একবার কঠিন পাণ্ডুরোগ হলে তাঁর গুরু সোনেপত্তীর দুটো শুকনো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাঁকে খাইয়ে দেন। টিকড়ীবাবার ভাষায় – “রাতমে সোনে কা পহলে গটগট পী লিয়া, আউর সুবহ – রোগ গায়ব! উপশম!” এইভাবে স্বর্ণপর্ণী টিকড়ীবাবার পুনর্জীবন লাভে সহায়তা করে।

স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থান – টিকড়ীবাবা স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থানের কথা জানিয়েছিল ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুকে। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে একটি চামুণ্ডার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনে জঙ্গলে আছে এক ঝরনা, সেই ঝরনার পাশে জন্মায় স্বর্ণপর্ণীর গাছ। পিতার মৃত্যুর পর প্রফেসার শঙ্কু এই গাছ সংগ্রহ করেন এবং তা থেকে সর্বরোগনাশক ‘মিরাকিউরল’ আবিষ্কার করেন।

“আমি টিকড়ীবাবার এই আশ্চর্য কাহিনি শুনেই মনস্থির করে ফেলেছিলাম।” – ‘আশ্চর্য কাহিনি’টি লেখো। কে, কী মনস্থির করে ফেলেছিল?

স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থান – টিকড়ীবাবা স্বর্ণপর্ণীর প্রাপ্তিস্থানের কথা জানিয়েছিল ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুকে। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে একটি চামুণ্ডার মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনে জঙ্গলে আছে এক ঝরনা, সেই ঝরনার পাশে জন্মায় স্বর্ণপর্ণীর গাছ। পিতার মৃত্যুর পর প্রফেসার শঙ্কু এই গাছ সংগ্রহ করেন এবং তা থেকে সর্বরোগনাশক ‘মিরাকিউরল’ আবিষ্কার করেন।

মনস্থির – স্বর্ণপর্ণীর অনুসন্ধান – বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর মুখে টিকড়ীবাবার বলা আশ্চর্য কাহিনি শুনে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু মনস্থির করে ফেলেন, বাবাকে সুস্থ করতে তিনি পরের দিনই কসৌলির উদ্দেশে রওনা দেবেন। কারণ বাবাজির কথা সত্য হতে পারে, আর তা ছাড়া বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু যখন ‘চরকসংহিতা’য় এর নাম পেয়েছেন, তখন আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকে না। তাই তিনি স্বর্ণপর্ণীর অনুসন্ধান করবেন বলে মনস্থির করেন।

প্রফেসার শঙ্কুর স্বর্ণপর্ণীর গাছ সংগ্রহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

অথবা, শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর খবর কার কাছে পেয়েছিলেন? স্বর্ণপর্ণী পেতে তাঁকে কে বা কারা কীভাবে সাহায্য করেছিলেন?

স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান – প্রখ্যাত চলচ্চিত্রশিল্পী ও ছোটোগল্পকার সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর খবর পেয়েছিলেন তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছ থেকে। যদিও ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু টিকড়ীবাবার কাছ থেকে স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পান।

পিতার মৃত্যুর পর প্রফেসার শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর উদ্দেশ্যে কসৌলি যাত্রা করেন। কিন্তু এই স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পেতে তিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যাদের সাহায্য পেয়েছিলেন, তাঁরা হলেন – টিকড়ীবাবা, নন্দকিশোর রাওয়াল ও ঘোড়ার মালিক ছোটেলাল।

টিকড়ীবাবা – স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পেতে শঙ্কুকে যিনি পরোক্ষভাবে সাহায্য করেন, তাঁদের মধ্যে টিকড়ীবাবাই সর্বপ্রথম। তিনি প্রফেসার শঙ্কুর বাবাকে স্বর্ণপর্ণীর কথা বলেন। যুবা বয়সে তিনি যখন কাশীতে থাকতেন, তখন তাঁর একবার কঠিন পান্ডুরোগ হলে তাঁর গুরু স্বর্ণপর্ণীর দুটো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাঁকে খাইয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলেন। টিকড়ীবাবা প্রফেসার শঙ্কুর বাবাকে স্বর্ণপর্ণীর গাছ কোথায় পাওয়া যাবে জানান। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে একটা চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনের জঙ্গলের পাশের ঝরনার পাশেই জন্মায় স্বর্ণপর্ণী। ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু পুত্র ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুকে সম্পূর্ণ ঘটনাটি জানান এবং আরও বলেন – “গাছ নয়, গাছড়া। চরকসংহিতায় নাম পেয়েছি, কিন্তু আধুনিক যুগে এই গাছড়ার হদিশ কেউ পায়নি।”

নন্দকিশোর রাওয়াল – স্বর্ণপর্ণীর সন্ধানে কালকার সস্তা হোটেলের এক ম্যানেজার নন্দকিশোর রাওয়াল শঙ্কুকে চামুণ্ডার মন্দির সম্পর্কে অবগত করায় এবং সেখানে যাওয়ার জন্য ঘোড়ার ব্যবস্থা করে দেয় আর গভীর জঙ্গল সম্বন্ধে সাবধান করে দেয়।

ছোটেলাল – ঘোড়ার মালিক ছোটেলালও শঙ্কুকে সাহায্য করে স্বর্ণপর্ণীর সন্ধানে। শঙ্কুকে সে বাঘের ভয় সম্পর্কে সচেতন করে। এ ছাড়া স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান পেয়ে প্রফেসার শঙ্কু যখন তাঁর অপটু হাতে কোদাল চালাচ্ছিলেন, তখন সে কোদালটা ছিনিয়ে নিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শিকড়সুদ্ধ গাছড়াটা শঙ্কুর হাতে তুলে দেয়।

‘এই সময় একটা ঘটনা ঘটল, যেটা বলা যেতে পারে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল’ – এখানে কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

অথবা, ‘স্বর্ণপর্ণী গল্পে কে, কাকে, কেন চিঠি লেখেন? চিঠির প্রসঙ্গটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?

বিখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী ও ছোটোগল্পকার সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু লন্ডনে জীবতত্ত্বের লেখক সন্ডার্সের উদ্দেশে চিঠি লেখেন।

চিঠি লেখার কারণ – শঙ্কু তখন কলকাতায়। প্রফেসারির কাজ নেওয়ার মাসখানেকের মধ্যেই তিনি ইংরেজি ভাষার বিজ্ঞান বিষয়ক সর্বশ্রেষ্ঠ পত্রিকা ‘নেচার’ -এর গ্রাহক হন। ওই পত্রিকায় জীবতত্ত্ব সম্বন্ধে একটা চমৎকার প্রবন্ধ পড়ে তিনি লেখক জেরেমি সন্ডার্সকে তাঁর বাসস্থান লন্ডনে চিঠি লেখেন। সন্ডার্স দু-বছর আগে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়োলজি পাশ করেছেন, সুতরাং শঙ্কুর সমবয়সি হবে ভেবেই আনন্দিত হয়ে তাঁকে চিঠি লেখেন।

গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ – চিঠির প্রসঙ্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ শঙ্কু নিজেই বলেছেন – “এই সময় একটা ঘটনা ঘটল, যেটা বলা যেতে পারে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল।” ঘটনাটি হল জেরেমি সন্ডার্সের সঙ্গে যোগাযোগ। এই যোগাযোগই তাঁকে বিশ্বের দরবারে ঠাঁই করে দেয়। প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু পরিচিত হন প্রফেসার টি. শঙ্কু রূপে। শঙ্কুর মিরাকিউরলে সন্ডার্স সুস্থ হয়ে শঙ্কুর বাড়িতে এসে শঙ্কুকে লন্ডন নিয়ে যান, সেখান থেকে তিনি ভারততাত্ত্বিক হাইনরিখ স্টাইনারকে মারণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে জার্মান যান। সারা বিশ্ব জেনে যায় তাঁর কথা। সন্ডার্সের সঙ্গে পত্রে যোগাযোগ না হলে এটা সম্ভব না। তাই পত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ।

“তার আগে আমি দুটো প্রশ্ন করতে চাই।” – উক্তিটি কার? সে কেন দুটি প্রশ্ন করতে চেয়েছে? প্রশ্ন দুটি কী ছিল? কোন্ প্রশ্নটি কেন সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত বলে মনে করার কারণ আছে?

ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের পুত্র নরবার্ট স্টাইনারের। সন্ডার্সের উদ্দেশে তিনি উক্ত কথা বলেন।

প্রশ্ন দুটি করার কারণ – নরবার্ট স্টাইনার ছিলেন জাতিতে ইহুদি। তিনি বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসার শঙ্কুর প্রতিভা ও মিরাকিউরল আবিষ্কারের কথা জেনে সন্ডার্সের বাড়িতে আসেন শঙ্কুর সাহায্যের প্রত্যাশায়। পিতা হাইনরিখ স্টাইনারের রোগমুক্তির জন্যই তাঁর আগমন। তিনি প্রথম প্রশ্নটি করেন সেসময় হিটলারের ইহুদি পীড়নের কথা জানিয়ে মানবিক আবেদনের জন্য আর দ্বিতীয় প্রশ্নটি করেন যেহেতু শঙ্কু ভারতীয় আর তাঁর পিতা ভারততত্ত্ববিদ, তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও একটা টান হেতু শঙ্কু তাঁকে সাহায্য করবেন। তাই তিনি তাঁর পিতার নাম সবার পরিচিত কি না জানতে চান।

দুটি প্রশ্ন – সন্ডার্সের উদ্দেশে নরবার্ট স্টাইনার যে দুটি প্রশ্ন করেছিলেন, তা হল – 1. “নাৎসিরা যে ইহুদিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে সেটা জান?” 2. “তোমরা হাইনরিখ স্টাইনারের নাম শুনেছ?”

সংস্কৃতি সমন্বয়ের কারণ – নরবার্ট স্টাইনারের দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। কারণ তাঁর বাবা হাইনরিখ স্টাইনার ছিলেন একজন ভারততাত্ত্বিক, সঙ্গে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতের অধ্যাপক। তিনি মনে করতেন সংস্কৃত ভাষার যে ঐশ্বর্য, তা আর বিশ্বের কোনো ভাষায় পাওয়া যাবে না। বেদ, উপনিষদকে তিনি নতুন করে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছেন। শঙ্কুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে তিনি জার্মানির মানুষ হয়েও সংস্কৃত ভাষায় কথা বলেছেন। তা ছাড়া ভারতীয় শিল্পসাহিত্যের প্রতি জার্মানদের শ্রদ্ধা বিগত দুশো বছর আগে থেকে ক্রিয়াশীল। তাই এসব কারণে নরবার্টের করা দ্বিতীয় প্রশ্নটি অবশ্যই ভারতীয় ও জার্মান সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

“বার্লিনের একটা বিখ্যাত রাস্তার নাম আমি শুনেছি-কুরফ্যুরস্টেনডাম।” – এই রাস্তাটির বিবরণ দাও। সেখানে কী ঘটনা ঘটেছিল?

রাস্তার বিবরণ – ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে ডায়ারি লেখক-বিজ্ঞানী শঙ্কু জার্মানিতে যাওয়ার এক ভয়ংকর সুন্দর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। নরবার্ট স্টাইনার তাঁর বাবা ভারত বিশেষজ্ঞ হাইনরিখ স্টাইনারের রোগমুক্তির জন্য প্রফেসার শঙ্কুকে বার্লিন নিয়ে যান। বার্লিনে গিয়ে শঙ্কু প্রফেসার স্টাইনারকে ‘মিরাকিউরল’ খাইয়ে বার্লিনের বিখ্যাত রাস্তা ‘কুরফ্যুরস্টেনডাম’ দেখার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন নরবার্ট স্টাইনারের কাছে। নরবার্টের সঙ্গে রাস্তায় বের হন শঙ্কু। পুলিশ শাসিত দেশ, কর্ণধার হলেন দুর্নীতির পরাকাষ্ঠা; অথচ বাইরে থেকে রাজধানীর চেহারা দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। মাঝে মাঝে পুলিশ চোখে পড়লেও সেইসঙ্গে রয়েছে নিরুদবিগ্ন জনস্রোত, ঝলমলে দোকানপাট, সিনেমা-থিয়েটারের বাইরে সুসজ্জিত নারী-পুরুষের ভিড়। এসব দেখে শঙ্কু নরবার্টকে কথাটা বলতে নরবার্ট জানান – “সেইজন্যই তো যারা অল্পদিনের জন্য এখানে আসে, তারা বাইরে থেকে হিটলারের শাসনতন্ত্র সম্বন্ধে যা শুনেছে সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ শুরু করে।”

আশ্চর্য ঘটনা – কুরফ্যুরস্টেনডামের একটা পোশাকের দোকানে কোট-প্যান্ট-শার্ট-পুলোভার দেখার সময় হঠাৎ শঙ্কু ডান হাতের কনুইয়ে একটা মৃদু চাপ অনুভব করে ঘুরে গিয়ে এক মাঝবয়সি মহিলাকে দেখতে পান। মহিলাটি শঙ্কুর পরিচয় পেয়ে এবং শঙ্কু জার্মান ভাষা জানে এটা জেনে খুব খুশি হয়ে যান। এরপর তিনি শঙ্কুকে বলেন, তাঁর ত্রিশ বছর ধরে সর্দির ধাত, যদি শঙ্কু তাঁকে ‘মিরাকিউরল’ দেন, তিনি খুবই উপকৃত হবেন। তাঁর নাম ফ্রয়লাই ফ্রিৎসনার। তিনি প্রতিজ্ঞা করেন এই ওষুধের কথা কাউকে বলবেন না এবং যথাসময়ে আরোগ্যপ্রাপ্তির কথা শঙ্কুকে ফোন করে জানাবেন। কথামতো পরদিন তাঁর আরোগ্যবার্তা জানান।

“কম মিট মীর-শ্লেল!” – কথাটির অর্থ কী? কে, কাকে এ কথা বলেছিল? তারপর তাকে কী করা হল? তার পরিণতি কী হয়েছিল?

কথাটির অর্থ – প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক ও গল্পকার সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে গৃহীত উদ্ধৃত অংশটি একটি জার্মান বাক্য। বাংলাভাষায় এর অর্থ “আমার সঙ্গে চলো, জলদি।”

বক্তা ও শ্রোতা – উদ্ধৃত বাক্যটির বক্তা হলেন জার্মানির কুখ্যাত ব্ল্যাকশার্ট বাহিনির এক অফিসার এরিখ ফ্রোম। সে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর উদ্দেশে এ কথা বলেছিল।

‘মিরাকিউরল’ -এর আবিষ্কর্তা প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বন্ধু সন্ডার্সের উদ্যোগে লন্ডন যান। সেখান থেকে নরবার্ট স্টাইনারের মুখে ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের মারণব্যাধির কথা শুনে তা প্রশমনের উদ্দেশ্যে হিটলার সন্ত্রস্ত জার্মানিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উপস্থিত হন। এ সংবাদ হিটলারের পার্শ্বচর গোয়রিং পেয়ে যান। যেহেতু তিনি গ্রন্থি সংক্রান্ত জটিল রোগে ভুগছিলেন, তাই শঙ্কুর সংস্পর্শ পেয়ে রোগ মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। আর তাই ব্ল্যাক্‌শার্টকে পাঠিয়ে হাইনরিখ স্টাইনারের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে গাড়িতে করে কারিনহল নিয়ে যাওয়া হয় এবং জানিয়ে দেওয়া হয় গোয়রিং -এর ব্যাধিমুক্তি না ঘটলে তাঁরও মুক্তি নেই।

পরিণতি – অসাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং অসীম সাহসের অধিকারী শঙ্কু কখনোই কোনো পরিস্থিতির কাছে মাথা নত করেন না। তাই গোয়রিং ‘মিরাকিউরল’ চাওয়ায় শঙ্কু আগে হাইনরিখ স্টাইনারের প্যারিস গমনের সুবন্দোবস্ত করেন। তারপর বন্ধু সন্ডার্সের কৌশলে ‘মিরাকিউরল’ এর বদলে অব্যর্থ ঘুমের ওষুধ ‘সেকোন্যালের’ বড়ি গোয়রিং ও তার পার্শ্বচর এরিখকে দেওয়ায় তারা ঘুমিয়ে পড়ে এবং ড্রাইভারকে বন্ধু সন্ডার্সের দেওয়া রিভলবার দেখিয়ে শঙ্কু মুক্তি পান।

“অদূর ভবিষ্যতে কারিনহল হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৌধের মধ্যে একটি।” – এই দম্ভটি কার? তার শরীরের বর্ণনা দাও। ভারতবাসীর সম্পর্কে তার ধারণা কী?

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও ছোটোগল্প লেখক সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে উক্ত দম্ভোক্তিটি যাঁর, তিনি হলেন গোয়রিং; হিটলারের পরেই যাঁর স্থান।

গোয়রিং -এর শরীরের বর্ণনা – অপহৃত প্রফেসার শঙ্কু কারিনহলের বিশাল প্রাসাদে মিনিট পাঁচেক বসার পর ‘ছাই রঙের ডাবল-ব্রেস্টেড সুট পরা বিশালবপু এক ব্যক্তি’কে দেখতে পান, যিনি ছিলেন হিটলারের অন্যতম সঙ্গী হের গোয়রিং। গোয়ারিং অত্যন্ত স্থূলকায়। অল্প সময়ে এত তাড়াতাড়ি ঘামেন যে, শঙ্কু তাঁকে দশ মিনিটের মধ্যে পাঁচ বার রুমাল বের করে মুখ মুছতে দেখেন। তিনি প্রতিদিন ঘামের জন্য আটবার শার্ট বদল করেন, তাঁর ওজন একশো সত্তর কিলো। গ্রন্থির নানা সমস্যার কারণে তাঁর এমন রোগ। কোনো চিকিৎসাই ফলপ্রসূ হয়নি। গোয়রিং জানান, তিনি খুব শারীরিক পরিশ্রম করেন, হাঁটেন, টেনিস খেলেন; যদিও যার সঙ্গে খেলেন তাকে তিনি বলে দেন বলকে তাঁর নাগালের মধ্যে রাখতে, কারণ তিনি দৌড়োতে পারেন না। এ ছাড়া তিনি নিয়মিত শিকারও করেন। কিন্তু খাওয়ার প্রতি এতটাই তাঁর লোভ, যে তিনি স্থূলকায় অবস্থা থেকে মুক্তিলাভ করতে পারেন না।

ভারতবাসী সম্পর্কে তাঁর ধারণা – হের্ গোয়রিং হিটলারের বন্ধু ছিলেন বলে তাঁর দম্ভের সীমা ছিল না। জাতি নিয়ে তিনি অত্যন্ত গর্ব করেন, তাই ভারতবর্ষ সম্পর্কে তাঁর নেতিবাচক মনোভাবের পরিচয় মেলে। যেহেতু ভারতবর্ষ দুশো বছর পরাধীন ছিল, তাই ভারতবর্ষের মানুষকে তিনি অত্যন্ত নীচু চোখে দেখেন। শঙ্কু ভারতীয় হয়ে তাঁকে স্পর্ধা দেখিয়েছেন বলে তিনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। তিনি বলেন – “দুশো বছর ধরে যে জাত পরাধীন হয়ে আছে, তাদেরই একজনের এত বড়ো আস্পর্ধা!”

“লোকটার প্রতি আমার অশ্রদ্ধা ক্রমেই বাড়ছিল।” – লোকটা কে? তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধার কারণগুলো কী কী? লোকটির শেষ কথার উত্তরে লেখক কী বলেছিলেন?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে সংকলিত প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে ‘লোকটি’ হল জার্মানির নাৎসি পার্টির অন্যতম প্রধান, হিটলারের মুখ্য সহচর, জার্মানির সামরিক শক্তির অধিকর্তা হের গোয়রিং।

অশ্রদ্ধার কারণ – জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি পার্টি সুদীর্ঘকাল যাবৎ ইহুদিদের উপর অমানুষিক অত্যাচার চালাচ্ছে-এ খবর ভারতে থাকতেই অবগত হয়েছিলেন প্রফেসার শঙ্কু। জার্মানিতে ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে অপহরণ করা হয় হিটলারের পার্শ্বচর হের গোয়রিং -এর নির্দেশেই। কারিনহলে গোয়রিং -এর সঙ্গে সাক্ষাতে তার জাত্যভিমান, ইহুদিবিদ্বেষ, প্রফেসার স্টাইনারের প্রতি, সর্বোপরি ইহুদিদের প্রতি হীনমন্তব্যে প্রফেসার শঙ্কু অত্যন্তক্রুদ্ধ হন এবং তার প্রতি তাঁর অশ্রদ্ধা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

লেখকের বক্তব্য – জাতিতে ইহুদি প্রফেসার স্টাইনারের বাড়িতে তাঁর রোগমুক্তির উদ্দেশে শঙ্কুর আগমনের কথা জেনে ক্ষুব্ধ গোয়রিং ইহুদিদের প্রতি তার ক্ষোভ উগরে দেন তাদের ‘অসভ্য, হীন, লোভী, ধূর্ত, বিবেকহীন, জাতি মন্তব্য করে। এই শেষ কথাগুলোতে মেজাজ হারিয়ে শঙ্কু প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন ‘আমি জাত মানি না। আমি বিজ্ঞানী। একজন ইহুদি বৈজ্ঞানিক আমার আরাধ্য দেবতা। তাঁর নাম অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।’ যা শঙ্কুর প্রতিবাদী মানসিকতাকে সুস্পষ্ট করে।

কে জানত, বার্লিনে এসে এদের খপ্পরে পড়তে হবে’ – কে, কাদের খপ্পড়ে পড়েছিল? সেই খপ্পর থেকে বক্তা কীভাবে। মুক্তি পেয়েছিল?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু স্বনামধন্য ভারততাত্ত্বিক হাইনরিখ স্টাইনারের রোগমুক্তির জন্য জার্মানি গিয়ে নাৎসিদের খপ্পরে পড়েছিলেন।

বক্তা ও শ্রোতা – উদ্ধৃত বাক্যটির বক্তা হলেন জার্মানির কুখ্যাত ব্ল্যাকশার্ট বাহিনির এক অফিসার এরিখ ফ্রোম। সে প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর উদ্দেশে এ কথা বলেছিল।

‘মিরাকিউরল’ -এর আবিষ্কর্তা প্রফেসার ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বন্ধু সন্ডার্সের উদ্যোগে লন্ডন যান। সেখান থেকে নরবার্ট স্টাইনারের মুখে ভারততত্ত্ববিদ হাইনরিখ স্টাইনারের মারণব্যাধির কথা শুনে তা প্রশমনের উদ্দেশ্যে হিটলার সন্ত্রস্ত জার্মানিতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উপস্থিত হন। এ সংবাদ হিটলারের পার্শ্বচর গোয়রিং পেয়ে যান। যেহেতু তিনি গ্রন্থি সংক্রান্ত জটিল রোগে ভুগছিলেন, তাই শঙ্কুর সংস্পর্শ পেয়ে রোগ মুক্তির স্বপ্ন দেখেন। আর তাই ব্ল্যাক্‌শার্টকে পাঠিয়ে হাইনরিখ স্টাইনারের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে অপহরণ করেন। এরপর তাঁকে গাড়িতে করে কারিনহল নিয়ে যাওয়া হয় এবং জানিয়ে দেওয়া হয় গোয়রিং -এর ব্যাধিমুক্তি না ঘটলে তাঁরও মুক্তি নেই।

পরিণতি – অসাধারণ বুদ্ধিসম্পন্ন এবং অসীম সাহসের অধিকারী শঙ্কু কখনোই কোনো পরিস্থিতির কাছে মাথা নত করেন না। তাই গোয়রিং ‘মিরাকিউরল’ চাওয়ায় শঙ্কু আগে হাইনরিখ স্টাইনারের প্যারিস গমনের সুবন্দোবস্ত করেন। তারপর বন্ধু সন্ডার্সের কৌশলে ‘মিরাকিউরল’ এর বদলে অব্যর্থ ঘুমের ওষুধ ‘সেকোন্যালের’ বড়ি গোয়রিং ও তার পার্শ্বচর এরিখকে দেওয়ায় তারা ঘুমিয়ে পড়ে এবং ড্রাইভারকে বন্ধু সন্ডার্সের দেওয়া রিভলবার দেখিয়ে শঙ্কু মুক্তি পান।

“আমার মন থেকে সব অন্ধকার দূর হয়ে গেল।” – বক্তার মনে অন্ধকার আসার কারণ কী ছিল? কীভাবে সে অন্ধকার

বক্তার মনে অন্ধকার আসার কারণ – ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী গল্পের একেবারে শেষ অংশে উক্ত উক্তির বক্তা স্বয়ং প্রফেসার শঙ্কু। শঙ্কু তাঁর যৌবনে আবিষ্কার করেন ‘মিরাকিউরল’ বা ‘সর্বরোগনাশক বড়ি’, যদিও এই কৃতিত্ব তিনি একা দাবি করেন না। মিরাকিউরল সংক্রান্ত গবেষণা তাঁকে ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু থেকে টি. শত্রুতে পরিণত করে। বিশ্বের দরবারে তাঁর নাম ছড়িয়ে যায়। ফলস্বরূপ বন্ধু সন্ডার্সের সঙ্গে লন্ডন গেলেও সেখান থেকে ভারততাত্ত্বিক ইহুদি হাইনরিখ স্টাইনারের রোগমুক্তির জন্য জার্মানি যেতে হয়। এ খবর পৌঁছে যায় হিটলারের পার্শ্বচর গোয়রিং -এর কাছে। গোয়রিং নিজের রোগমুক্তির জন্য শঙ্কুকে অপহরণ করেন। গোয়রিং হাইনরিখ স্টাইনারকে প্যারিস যেতে বাধা দেবে না – এই শর্তে প্রফেসার শঙ্কু চারটি মিরাকিউরল বড়ি গোয়রিং ও এরিখকে দেন। চারটে মিরাকিউরলের বড়ি খেয়ে তারা দু-জন ঘুমিয়ে পড়লে শঙ্কু পালাতে সমর্থ হন। তবে শঙ্কু নিজে মোটেও খুশি হননি, বরং তাঁর আবিষ্কৃত মিরাকিউরল খেয়ে দুই পাষণ্ডের রোগমুক্তি ঘটবে-এই ভেবে তাঁর মন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছিল।

অন্ধকার দূর – বন্ধু সন্ডার্সের বাড়িতে ফিরে শঙ্কু জানান নাৎসিদের খপ্পরে পড়ে তাঁর অবস্থার কথা। সেইসঙ্গে জানান গোয়রিং ও এরিখ মিরাকিউরল খেয়ে হয়তো রোগমুক্তি লাভ করেছে। এ কথা শুনে সন্ডার্সের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখা দেয়। কারণ শঙ্কুর তৈরি মহৌষধ বিশ্বের হীনতম প্রাণীর উপকারে আসবে, এটা সন্ডার্স চায়নি। ‘তাই শঙ্কুর বাক্স খুলে শিশি থেকে ‘মিরাকিউরল’ বার করে তার জায়গায় অব্যর্থ ঘুমের ওষুধ ‘সেকোন্যালের’ বড়ি ভরে দিয়েছিল সন্ডার্স। এতে যে নাৎসিদের কোনো উপকারই হয়নি তা জেনে শঙ্কুর মন থেকে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়। এই কারণে বন্ধু সন্ডার্সকে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘স্বর্ণপণী’ -এর কিছু রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

স্বর্ণপণী-ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরনবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

স্বর্ণপণী-অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

স্বর্ণপণী-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর