নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

Souvick

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘স্বর্ণপণী’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে।

স্বর্ণপণী-ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরনবম শ্রেণী-বাংলা
Contents Show

“ওর বয়স হলো চব্বিশ।” – কার বয়সের কথা বলা হয়েছে? তার এত বয়স হওয়ার কারণ কী?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর পোষ্য বিড়াল নিউটনের চব্বিশ বছর বয়সের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এত বয়স হওয়ার কারণ – প্রফেসার শঙ্কু তাঁর ডায়রিতে লিখেছেন – এমনিতে বিড়াল চোদ্দা-পনেরো বছর, বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ বছরও বাঁচে। তবে নিউটনের এত বছর বেঁচে থাকার প্রধান কারণ শঙ্কুর আবিষ্কৃত ওষুধ ‘মার্জারিন’। নিউটনকে ছাড়া তিনি একা হয়ে পড়বেন বলে অনেক গবেষণার পর তিনি এই ওষুধটি তৈরি করেছিলেন। যার জোরেই নিউটন এত বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিল।

“আমার ইনভেনশনের একটা তালিকা মনে মনে তৈরি করছিলাম।” – তালিকাটি উল্লেখ করো।

তালিকাটির বিবরণ – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর ইনভেনশনের তালিকায় প্রথমেই আছে ‘মিরাকিউরল’ বা সর্বরোগনাশক বড়ি। অন্যগুলি হল – আত্মরক্ষার অস্ত্র ‘অ্যানাইহিলিন পিস্তল’, শরীরকে শীতকালে গরম ও গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা রাখার ‘এয়ারকন্ডিশনং পিল’, লুপ্তস্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য ‘রিমেমব্রেন’, ঘুমের অব্যর্থ বড়ি ‘সমনোলিন’, সস্তায় উজ্জ্বল আলো দেওয়া ‘লুমিনিম্যাক্স’, অচেনাভাষা ইংরাজিতে অনুবাদ করার জন্য ‘লিঙ্গুয়াগ্রাফ’, পাখিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য ‘অর্নিথন’ যন্ত্র-ইত্যাদি।

প্রফেসার শঙ্কুর বাবার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

শঙ্কুর বাবার পরিচয় – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে জানা যায়, প্রফেসার শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিকিৎসক ছিলেন। আয়ুর্বেদিক মতে চিকিৎসা করতেন বলে লোকে তাঁকে বলত ধন্বন্তরি। পেশাদারি প্র্যাকটিস ছাড়াও তিনি বিনা পয়সায় বহু দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করতেন। তিনি বাহুল্য পছন্দ করতেন না। তিনি ছিলেন আদর্শবান পুরুষ। সৎচিন্তা-সৎকর্ম-সৎজ্ঞান-সৎপরামর্শ ছিল তাঁর জীবনের ব্রত। লোকহিতকর কাজেই তিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

“বাবার এই কথাগুলো আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল।” – কথাগুলি উল্লেখ করো।

শঙ্কুর বাবার কথা – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে জানা যায় প্রফেসার শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু পেশাদারি প্র্যাকটিস ছাড়াও সারাজীবন বিনা পয়সায় দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসা করতেন। অঢেল উপার্জন করার সুযোগ থাকলেও তিনি তার বিপক্ষে ছিলেন। তিনি প্রফেসার শঙ্কুকে বলতেন – জীবনে অর্থের প্রয়োজন থাকলেও কেবল অর্থ উপার্জন করে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় না। যারা দরিদ্র, যারা দৈবদুর্বিপাকে উপার্জনে অক্ষম-তাদের দুঃখ কিছুটা লাঘব করতে পারলে তবেই প্রকৃত সুখের সন্ধান পাওয়া সম্ভব। জীবন সার্থকতা লাভ করে লোকহিতকর কাজে। ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর এই পরামর্শই ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসারের মনে গভীর রেখাপাত করেছিল।

ছাত্র হিসেবে প্রফেসার শঙ্কু কেমন ছিলেন?

ছাত্র শঙ্কুর পরিচয় – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে বলা হয়েছে ছাত্র হিসেবে প্রফেসার শঙ্কু ছিলেন ব্রিলিয়ান্ট। জীবনে কোনোদিন তিনি প্রথম ভিন্ন দ্বিতীয় হননি। অত্যন্ত কম বয়সে অধিক বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন তিনি। বারো বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাশ করেন, চোদ্দোয় আই এস-সি, আর ষোলোয় ফিজিক্স কেমিস্ট্রিতে ভালো অনার্স নিয়ে বিএসসি। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে তিনি কলকাতার স্কটিশচার্চ কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।

‘পরীক্ষার পাট শেষ করে গিরিডিতে ফিরে এলে বাবা বলেন’ – বাবা কী বলেছিলেন?

শঙ্কুর বাবা যা বলেছিলেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রচলিত পড়াশোনার পাট শেষ করে প্রফেসর শঙ্কু গিরিডিতে ফিরে এলে তাঁর বাবা তাকে তখনই চাকরির কথা ভাবতে নিষেধ করেছিলেন। অনেকদিন বিজ্ঞান পড়েছেন শঙ্কু, তাই তাঁকে শিল্প-সাহিত্য-দর্শন-ইতিহাস ইত্যাদি নানান বিষয়ে পড়াশোনার পরামর্শ দিয়েছিলেন ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। তিনি বলেছিলেন, তাঁর রোজগারে শঙ্কুর অন্নের অভাব হবে না কোনোদিন, তাই যদি পুত্র শঙ্কু বাকি জীবনটা গবেষণা করে কাটিয়ে দেন তবে তিনি খুশি হবেন। তিনি লোকহিতকর কাজে নিযুক্ত হওয়ার কথা বলেছিলেন শঙ্কুকে।

‘এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখে মুহুর্তের জন্য আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেল’ – দৃশ্যটি কী? দৃশ্য দেখে কথকের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে উদ্ধৃত অংশটি গৃহীত। কলকাতার কলেজে চাকরি নেওয়ার ঠিক আড়াই বছর পর গ্রীষ্মের ছুটিতে গিরিডির বাড়িতে এসে চাকরের হাতে মাল তুলে দিয়ে প্রফেসার শঙ্কু বাবার ঘরে গিয়ে দেখলেন – বাবা তাঁর কাজের টেবিলের পাশে মেঝেতে চিত হয়ে পড়ে আছেন।

কথকের প্রতিক্রিয়া – এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখে শঙ্কুর মুহূর্তের জন্য নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিনি একলাফে এগিয়ে ঝুঁকে পড়ে নাড়ি টিপে বুঝেছিলেন তাঁর বাবা সংজ্ঞা হারিয়েছেন। তৎক্ষণাৎ তিনি বাবার চিকিৎসার জন্য ড. সর্বাধিকারীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তবে ডাক্তার আসার আগেই তাঁর বাবার জ্ঞান ফিরে এলে তিনি বাবাকে ধরে তক্তপোশে শুইয়ে দিয়েছিলেন।

‘বাবা আমাকে একটা আশ্চর্য ঘটনা বলেন’ – ঘটনাটি কী?

ঘটনাটির বিবরণ – সত্যজিৎ রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুকে তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু টিকড়ীবাবার সঙ্গে পরিচয় এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ ‘সোনেপত্তীর’ আশ্চর্য ঘটনার কথা বলেছেন। ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে জানা যায়, টিকড়ীবাবা কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যার সমাধানের জন্য এসেছিলেন ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে। ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু যখন তাঁর শিষ্যদের ওষুধ বলে দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎই টিকড়ীবাবা বলে ওঠেন – ‘তুই হামার চিকিৎসা করছিস, লেকিন তোর পীড়ার কী হবে?’ কিছু না বলা সত্ত্বেও টিকড়ীবাবা ত্রিপুরেশ্বরের রোগের কথা বুঝে নিয়েছেন দেখে আশ্চর্য হয়ে যান তিনি। টিকড়ীবাবা তাঁকে খুব জোর গলায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চরক সংহিতায় উল্লিখিত ‘সোনেপত্তী’ নামক ওষুধের সন্ধান দিয়েছেন।

টিকড়ীবাবা প্রফেসার শঙ্কুর বাবাকে সোনেপত্রীর সন্ধান পেতে কী করতে বলেছিলেন?

টিকড়ীবাবা যা বলেছিলেন – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুকে হার্টব্লকের সমস্যা সমাধানে আয়ুর্বেদিক গাছড়া সোনেপত্তীর সন্ধান দিয়েছিলেন টিকড়ীবাবা। তিনি বলেছিলেন একমাত্র কসৌলি গেলেই মিলবে সোনেপত্তীর হদিশ। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে একটা চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে একটি ঝরনা আছে। সেই ঝরনার পাশেই পাওয়া যায় ‘সোনেপত্তী’ অর্থাৎ ‘স্বর্ণপর্ণী’র গাছ।

‘আমার মনটা নেচে উঠল। – ‘কার মন কেন নেচে উঠেছিল?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে অল্পসময়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে প্রফেসার শঙ্কুর মন নেচে উঠেছিল।

কারণ – বাবার মুখে হার্টব্লকের উপশমে অব্যর্থ গাছড়া স্বর্ণপর্ণীর নাম শুনে শঙ্কু তখনই ঠিক করেছিলেন কসৌলি যাবেন। কিন্তু বাবার আপত্তিতে আর যাওয়া হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা গেলে তিনি দ্রুত পৌঁছে গিয়েছিলেন গন্তব্যে। একটা সস্তা হোটেলে উঠে ম্যানেজার নন্দকিশোরের কাছে জেনে নিয়েছিলেন টিকড়ীবাবার বলা সেই চামুণ্ডার মন্দিরের কথা। তারপরই ঘোড়ায় চড়ে ঘোড়ার মালিক ছোটেলালের সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিলেন গভীর অরণ্যে ঝরনার কাছে। এই ঝরনার পাশেই তিনি খুঁজে পান ‘স্বর্ণপর্ণী’ গাছড়াটি। এই সাফল্যে তাঁর মন নেচে উঠেছিল।

স্বর্ণপর্ণীর গাছ আবিষ্কারের পর শঙ্কু কী করেছেন?

আবিষ্কারের পর যা করেছেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে স্বর্ণপর্ণীর গাছড়া আবিষ্কারের পর এই অভাবনীয় সাফল্যে প্রফেসার শঙ্কুর মন নেচে উঠেছিল। তবে অনেক খুঁজেও স্বর্ণপর্ণীর দ্বিতীয় কোনো চারা গাছের সন্ধান পাননি শঙ্কু। ফলে এই গাছটিকেই ছোটেলালের সহায়তায় কোদাল দিয়ে গোড়াশুদ্ধ উপড়ে নিয়ে তিনদিন পর গিরিডির বাড়িতে ফিরেছিলেন শঙ্কু। এরপর মালি হরকিষণের সাহায্যে সেটিকে বাগানে বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। গাছটির পরিচর্যায় নিযুক্ত মালি হরকিষণ যখন বলেন কলম করে গাছড়াটির আরও চারা তৈরি সম্ভব শঙ্কু তখন তাকে উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন।

‘উৎকণ্ঠায় রাত্রে ভাল ঘুম হলো না’ – উৎকণ্ঠায় রাত্রি কাটানোর পরদিন সকালে প্রফেসার শঙ্কুর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

শঙ্কুর অভিজ্ঞতা – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে শঙ্কুর বাবার পেশেন্ট গিরিডিবাসী উকিল জয়গোপাল মিত্রের উদরি তথা অ্যাসাইটিস রোগ উপশমের জন্য শঙ্কু গুঁড়ো করা দুটো স্বর্ণপর্ণীর পাতা আধকাপ দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাকে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলাফল কী হয় ভেবে উৎকণ্ঠায় সেদিন রাতে ভালো ঘুমোতে পারেননি তিনি। পরদিন সকালে বৈঠকখানায় বসে যখন চা পান করতে যাবেন সেই সময়ই টেলিফোন বেজে ওঠে। ব্যস্ত হয়ে ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই মিত্রমশাই -এর স্ত্রী জয়ন্তী মাসিমা আবেগভরা কণ্ঠে ‘তিলু’ বলে চিৎকার করে উঠে বলেছেন – ‘তিলু, বাবা তিলু! এসে দেখে যাও – যমের দোর থেকে ফিরে এসেছেন তোমার মেসো!’

‘উত্তরে প্রতিবারই আমি একই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি।’ – কথক কী মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছেন?

যে মিথ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন – সত্যজিৎ রায় রচিত আলোচ্য ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর পাতার সাহায্যে বহু দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করে সুফল পেয়েছিলেন। ফলে এমন আশ্চর্য ওষুধ কোথায় পেলেন এই প্রশ্নের মুখোমুখি তাকে বহুবার হতে হয়েছিল। তিনি স্বর্ণপর্ণীর কথা কারো কাছে প্রকাশ করতে চাননি। তাই প্রতিবারই বলেছেন – “বাবা মারা যাবার আগে এ ওষুধ আমাকে দিয়ে যান; কোথায় পাওয়া, কী নাম, তা জানি না।” এই মিথ্যের আশ্রয়েই তিনি বহু মানুষের প্রশ্ন প্রতিহত করেছিলেন।

‘একটা ব্যাপারে আমার একটু খুঁতখুঁতেমি ছিল।’ – কী ব্যাপারে কথকের খুঁতখুঁতেমি ছিল? তার জন্য তিনি কী করেছিলেন?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে স্বর্ণপর্ণীর শুকনো পাতা গুঁড়িয়ে দুধে মিশিয়ে রোগীকে খাওয়ানোর প্রাচীন পন্থাটা নিয়ে প্রফেসার শঙ্কুর মনে একটা খুঁতখুঁতেমি ছিল।

বক্তা যা করেছিলেন – শঙ্কুর এই খুঁতখুঁতেমি থেকে তিনি ঠিক করেছিলেন স্বর্ণপর্ণীর বড়ি তৈরি করবেন। তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবে পরিণত হয়েছিল একমাসের মধ্যেই। শঙ্কুর পঁচিশ বছরের জন্মদিনে তিনি বাড়িতে বসে যান্ত্রিক সহায়তায় স্বর্ণপর্ণী থেকে বড়ি তৈরি করেছিলেন – প্রফেসার শঙ্কু তাঁর আবিষ্কৃত এই বড়ির নাম দিয়েছিলেন – ‘মিরাকিউরল! মিরাকল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস। সর্বরোগনাশক বড়ি।’

জেরেমি সন্ডার্স প্রফেসার শত্রুকে প্রথম চিঠিতে কী উত্তর দিয়েছিলেন?

জেরেমি সন্ডার্সের উত্তর – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুর এয়ারমেল পেয়ে লন্ডনবাসী জীববিজ্ঞানী জেরেমি সন্ডার্স যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে প্রথমেই তিনি লিখেছেন শঙ্কুর চিঠিতে এক বিরল বিদগ্ধ বৈজ্ঞানিক মনের পরিচয় পেয়েছেন তিনি। ভারতবর্ষের পুণায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন সন্ডার্স। ভারতবর্ষের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়ে তিনি লিখেছেন তার ঠাকুরদাদা বত্রিশ বছর ইন্ডিয়ান আর্মিতে ছিলেন। তিনি সাত বছর বয়সে বাবা মার সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে আসেন কিন্তু সেই সাত বছরের স্মৃতি, আর ভারতবর্ষ ও ভারতবাসীর উপর টান তার আজও অম্লান রয়েছে।

‘… এই ভনিতার পরেই বজ্রাঘাত’ – কোন্ ভনিতার পরে কী বজ্রাঘাতের কথা বলা হয়েছে?

বজ্রাঘাতের পরিচয় – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে পত্রবন্ধু জেরেমি সন্ডার্সের অনেকদিন কোনো চিঠি না পেয়ে যখন প্রফেসার শঙ্কু উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত, তখন হঠাৎই হাতে পেয়েছেন সন্ডার্সের স্ত্রী ডরথির চিঠি। ডরথি লিখেছিলেন শঙ্কুকে খবরটা জানাত তার খারাপ লাগছে, কিন্তু শঙ্কু জেরির বন্ধু বলেই তাকে খবর দেওয়াটা তার কর্তব্য। এই ভণিতার পরে ডরথি লিখেছেন – ‘জেরির যকৃতে ক্যানসার ধরা পড়েছে। ডাক্তারের মতে তার মেয়াদ আর মাত্র দু-মাস।’ বন্ধু সন্ডার্সের দুরারোগ্য ক্যানসারের খবর পেয়ে মর্মাহত হয়েছিলেন শঙ্কু।

“তার জন্য তুমি কী করতে বলো আমাকে?” – কে কাকে কী করতে বলেছেন?

যে, যাকে, যা করতে বলেছেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে জেরেমি সন্ডার্স প্রফেসার শঙ্কুকে সর্বরোগনাশক বড়ি মিরাকিউরল নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার কথা বলেছেন। সন্ডার্সের মুখে ‘মিরাকল কিওরের’ কথা শুনে শুধু ডাক্তারি মহলে নয়, বৈজ্ঞানিকদের মধ্যেও তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়। তারা পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছেন কোন্ বৈজ্ঞানিক উপাদানের জন্যে মিরাকিউরলের রোগজাবীণুনাশক শক্তি এত বেশি। তারা চেয়েছেন এই অত্যাশ্চর্য ওষুধের অ্যানালিসিসের মাধ্যমে তার উপাদানগুলি জেনে কৃত্রিম উপায়ে ল্যাবরেটরিতে এই ওষুধ তৈরি করতে। যার কারণে ভবিষ্যতে অনেক মানুষের উপকার হতে পারবে। তাই সন্ডার্স এই মিরাকিউরল ওষুধকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে এবং শঙ্কুকে বৈজ্ঞানিক হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি জানাতে তাকে লন্ডনে আসতে বলেছেন।

কীভাবে প্রফেসার শঙ্কু সন্ডার্সের বাড়ি গিয়ে পৌঁছেছিলেন?

যেভাবে সন্ডার্সের বাড়ি পৌঁছেছিলেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে পুজোর ছুটি শেষে কলকাতায় ফিরে সাত দিনের মধ্যে শঙ্কুর ইংল্যান্ড যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। 25 অক্টোবর 1937 এ তারা বোম্বাই থেকে পি অ্যান্ড ও কোম্পানির জাহাজ ‘এস্ এস্ এথিনা’-তে চড়ে ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলেন। 16 নভেম্বর পোর্টসমাউথ বন্দরে জাহাজ থেকে নেমে ট্রেনে করে পৌঁছোন লন্ডনের ভিক্টোরিয়া স্টেশনে। সেখান থেকে টিউব অর্থাৎ পাতাল রেলে চড়ে হ্যাম্পস্টেড এবং তারপর হ্যাম্পস্টেডের উইলোবি রোডে সন্ডার্সের বাড়িতে পৌঁছেছিলেন তারা।

‘সাড়ে আটটায় ডিনার টেবিলে সন্ডার্স তার প্ল্যান বলল’ – সন্ডার্সের প্ল্যানটি কী ছিল?

সন্ডার্সের প্ল্যান – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রফেসার শঙ্কুকে বৈজ্ঞানিক হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার প্ল্যান করেছিলেন সন্ডার্স। লন্ডনের বাড়িতে পৌঁছোনোর পরদিনই সকালে তিনি মিরাকিউরল -এর কেমিক্যাল অ্যানালিসিসের ব্যবস্থা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। তারপর শঙ্কুর বক্তৃতার জন্য একটা জায়গা ঠিক করে খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে জানানোর কথা ভেবেছিলেন। তবে তার কয়েকজন চেনা ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিককে তিনি আলাদা করে টেলিফোন করে খবরটা জানিয়ে দেওয়ার প্ল্যান করেছিলেন।

‘সন্ডার্স ধমকের সুরে বলল’ – সন্ডার্স কী এবং কেন ধমকের সুরে বলেছিল?

সন্ডার্স যা বলেছিল – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে সন্ডার্স লন্ডনে শঙ্কুকে পরিচিত করাতে চাইছিলেন বৈজ্ঞানিক এবং সর্বরোগনাশক বড়ি মিরাকিউরলের আবিষ্কর্তা হিসেবে। কিন্তু প্রফেসার শঙ্কু কোনোভাবেই মিরাকিউরলের আবিষ্কর্তার স্বীকৃতি নিতে চাননি। তাই সন্ডার্স ধমকের সুরে বলেছেন – যে গাছের উল্লেখ শুধু প্রাচীন সংস্কৃত চিকিৎসাশাস্ত্রে পাওয়া যায়, কাশীর এক সাধু ছাড়া যে গাছ কেউ কোনোদিন চোখে দেখেনি, ঘোড়ার পিঠে চড়ে সাড়ে ছ-হাজার ফুট উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে গভীর জঙ্গলে নিজের জীবন বিপন্ন করে সেইগাছ খুঁজে আনার কারণে আবিষ্কারকের স্বীকৃতি তাঁরই পাওয়া উচিত।

ডরথির মুখে প্রফেসার শঙ্কু ইউরোপের কোন্ সামাজিক পরিস্থিতির কথা শুনেছিলেন?

ইউরোপের সমকালীন পরিস্থিতি – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে ভারতবর্ষে বসে খবরের কাগজ পড়ার দৌলতে ইউরোপে কী ঘটছে না ঘটছে সে সম্বন্ধে একটা অস্পষ্ট ধারণা প্রফেসার শঙ্কুর ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে জার্মানিতে হিটলারের অভ্যুত্থান ও নাৎসি পার্টির সংগঠনের জোর যে ভয়ংকর চেহারা নিয়েছে তা তিনি ডরথির মুখে শুনেছিলেন। হিটলারের আত্মম্ভরিতা ও তার শাসনতন্ত্রের যথেচ্ছাচার আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছিল। হিটলার ক্ষমতার মোহে উন্মত্ত হয়ে পড়েছিল। ডরথি শঙ্কুকে বলেন – হিটলার সমস্ত ইউরোপকে গ্রাস করে একটা বিশাল জার্মান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখছে। তার এই স্বপ্নে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন – গোয়রিং, গোয়বেলস, হিমলার, রিবেনট্রপ প্রমুখ।

মিরাকিউরল -এর কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করে কী পাওয়া গিয়েছিল?

কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট – সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে সন্ডার্স মিরাকিউরলের অ্যানালিসিস রিপোর্ট শঙ্কুর হাতে দিলে তিনি দেখেন সবরকম ভিটামিন ছাড়াও পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন রয়েছে এই স্বর্ণপর্ণীর বড়িতে। রসুনের উপাদানের সঙ্গে মিরাকিউরলের উপাদানগুলির অনেকটাই মিল পাওয়া যায়। মিরাকিউরলের মধ্যে অ্যালিল সালফাইড থাকায় অনেক রোগের জীবাণুকে তা পরাস্ত করতে পারে। তবে শঙ্কু দেখেছিলেন এই বড়িতে এমন একটি উপাদান রয়েছে যার কোনো রাসায়নিক পরিচিতি নেই।

“এবং সেই কারণেই ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম উপায়ে এই ওষুধ তৈরি করা যাবে না।” – কথক কেন এমন কথা বলেছেন?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোধৃত উক্তিটির বস্তা জেরেমি সন্ডার্স; প্রফেসার শঙ্কুর লন্ডনবাসী পত্রবন্ধু।

মন্তব্যের কারণ – মিরাকিউরলের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস রিপোর্ট দেখে সন্ডার্স শঙ্কুর উদ্দেশে কথাগুলি বলেছিলেন। রিপোর্টে দেখা গেছে বড়িটির মধ্যে সবরকম ভিটামিনই রয়েছে। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, আয়োডিন, অ্যালিল সালফাইড ইত্যাদি। তবে মিরাকিউরলের মধ্যে এমন একটি উপাদান রয়েছে যার কোনো রাসায়নিক পরিচিত নেই। তাই ল্যাবরেটরিতে এই ওষুধ কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা যাবে না। সুতরাং সন্ডার্স মনে করেছে পৃথিবীতে একমাত্র শঙ্কুই ওই ওষুধের ‘সোল প্রোপাইটার’।

লন্ডনে শঙ্কু মিরাকিউরল সম্বন্ধে বক্তৃতা দেওয়ার পর কী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল?

প্রতিক্রিয়া – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে সন্ডার্সের উদ্যোগে লন্ডনে যে বক্তৃতার আয়োজন করা হয়েছিল, সেখানে বহু জনসমাগম শঙ্কুকে বিস্মিত করেছিল। বিশ বছর থেকে ছাত্র পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকায় খুব সহজভাবেই শঙ্কু ভারতের আয়ুর্বেদ চর্চার কথা, চরক-সুশ্রুতের সংহিতার কথা, তাঁর বাবার কথা, টিকড়ীবাবার কথা, স্বর্ণপর্ণী উদ্ধারের কথা বক্তৃতার মধ্যে বলেছিলেন। যতক্ষণ বলেছিলেন হলে কেউ টুঁ শব্দটি করেনি। বলা শেষ হলে হাততালির বহর দেখে তিনি বুঝেছিলেন বক্তৃতা ভালো হয়েছে। বক্তৃতার পর প্রশ্নোত্তর পরে প্রশ্নের উত্তরও শঙ্কু দিয়েছিলেন খুব সহজভাবে। বহু লোক তাঁর সঙ্গে করমর্দন করেছিল এবং ‘কনগ্র্যাচুলেশনস’ বলেছিল। পরদিন শুধু লন্ডনের খবরের কাগজেই নয়, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইটালিয়ান, সুইডিশ ইত্যাদি সব ইউরোপীয় ভাষার কাগজেই তাঁর ছবিসহ বক্তৃতার খবর প্রকাশ পেয়েছিল।

‘গেস্টাপো’ কী?

পরিচয় – সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি’র অন্তর্গত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে বার্লিনবাসী নরবার্ট স্টাইনার সন্ডার্স ও শঙ্কুকে ‘গেস্টাপো’ – কী তা জানে কি না জিজ্ঞাসা করেছে। জার্মানির গুপ্ত পুলিশ হল গেস্টাপো। নাৎসি পার্টিতে হিটলারের পরেই এদের স্থান। হিটলারের সঙ্গী হেরমান গোয়রিং হল এই গেস্টাপোর স্রষ্টা। এই পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি লোক মূর্তিমান শয়তান। যে-কোনো কুকার্যেই এরা সিদ্ধহস্ত।

বার্লিন থেকে নরবার্ট কেন লন্ডনে সন্ডার্সের বাড়িতে এসেছিল?

কারণ – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে বার্লিনের খবরের কাগজে মিরাকিউরল এবং শঙ্কুর খবর পড়ে নরবার্ট তার বাবার আরোগ্যের জন্য সন্ডার্সের বাড়িতে এসেছিল। গেস্টাপোর সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর হাতে তার বাবা হাইনরিখ স্টাইনার গুরুতরভাবে জখম হয়েছিলেন। গেস্টাপোর পুলিশ হাইনরিখকে আঘাত করায় তার সর্বাঙ্গ রক্তাক্ত হয় এবং মাথা ফেটে যায়। বার্লিনের হাসপাতালে ইহুদিদের ঢুকতে না দেওয়ায় এবং তাদের বাড়ির ডাক্তার ইহুদি বলে বাড়ি থেকে বেরোতে না পারায় নরবার্ট ও তার বোন বাবাকে প্রাথমিক পরিচর্যা করে। হাইনরিখ প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন। তাই অসহায় নরবার্ট শঙ্কুকে নিয়ে যেতে এসেছিল মিরাকিউরলের সাহায্যে বাবাকে সুস্থ করে তুলবে বলে।

‘তোমার কী মত, শঙ্কু?’ – বক্তা কে? শঙ্কু কী মত দিয়েছিলেন?

সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘প্রোফেসর শঙ্কুর ডায়রি’-র অন্তর্গত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা নরবার্ট স্টেইনার।

শঙ্কু যে মত দিয়েছিলেন – নরবার্ট বার্লিন থেকে লন্ডনে এসেছিল গেস্টাপোর হাতে গুরুতরভাবে জখম হওয়া বাবাকে শঙ্কুর চিকিৎসার দ্বারা সুস্থ করে তুলবে বলে। কিন্তু বার্লিনে ইহুদিদের ওপর নাৎসিরা যেভাবে অত্যাচার চালাচ্ছিল তাতে শঙ্কুকে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় নরবার্ট শঙ্কুর মতামত চায়। শঙ্কু বলেছিলেন-অত বড়ো একজন ভারততাত্ত্বিককে মৃত্যুর কবল থেকে উদ্ধার করতে পারলে তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।

বার্লিন পৌঁছে শঙ্কু হাইনরিখ স্টাইনারকে কেমন দেখেছিলেন?

হাইনরিখ স্টাইনারকে যেমন দেখেছিলেন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে সতেরো নম্বর ফ্রিডরিখস্ট্রাসে নরবার্টদের বাড়িতে পৌঁছে একটা বইয়ে ঠাসা ঘরের ভিতর দিয়ে শোবার ঘরে ঢুকে শঙ্কু দেখেন হাইনরিখ স্টাইনার একটা খাটের একপাশে লেপের তলায় আধবোজা চোখে শুয়ে আছেন। তাঁর হাঁ করা মুখ দিয়ে দমকে দমকে নিশ্বাস বেরোচ্ছে। তাঁর কালো চুলে অল্প পাকা চুলের মিশেল দেখে তাঁর বয়স পঞ্চান্ন বছর মতো আন্দাজ করা যায়। তার মাথায় আর ডান কুনইয়ে অপটু হাতের ব্যান্ডেজ বাঁধা। শঙ্কু তাঁর নাড়ি দেখে বোঝেন তাতে স্পন্দন প্রায় নেই, এবং মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন অধ্যাপক হাইনরিখ স্টাইনার।

মিসেস ফিৎসনারের সঙ্গে শঙ্কুর কোথায় দেখা হয়েছিল? শঙ্কু তাকে কীভাবে সাহায্য করেছিলেন?

সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে বার্লিনের বিখ্যাত রাস্তা কুরফ্যুরস্টেনডামের একটা পোশাকের দোকানে যখন প্রফেসার শঙ্কু কোট-প্যান্ট-শার্ট-পুলোভার দেখছিলেন, তখনই এগিয়ে এসে আলাপ করে মিসেস ফিৎসনার।

শঙ্কু যেভাবে সাহায্য করেছিলেন – মিসেস ফিৎসনার শঙ্কুর হাত দুটো ধরে তাকে সাহায্য করতে অনুরোধ করে। তিরিশ বছর থেকে তার সর্দির ধাত আর সেই সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা। শঙ্কুর মিরাকিউরল বড়ি খেয়ে সে সুস্থ হয়ে উঠতে চেয়েছে। পরোপকারী, সেবাপরায়ণ, সহানুভূতিশীল শঙ্কু পকেট থেকে দুটো বড়ি মহিলাকে দিয়ে সাহায্য করেন।

মিরাকিউরল খাওয়ার পরের দিন হাইনরিখ স্টাইনারের কী পরিবর্তন লক্ষ করেছিলেন শঙ্কু?

পরিবর্তন – সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে বার্লিনে হাইনরিখ স্টাইনারকে মিরাকিউরল খাওয়ানোর পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শঙ্কু শুনেছেন কেউ উদাত্ত; সুরেলা কণ্ঠে মন্ত্রোচ্চারণ করছেন; – ‘বেদাহমেতং পুরুষংমহান্তমাদিত্যবর্ণং তমসঃ…’। কণ্ঠস্বর লক্ষ করে দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে শঙ্কু দেখেছেন – প্রফেসার স্টাইনার ব্যালকনির এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভোরের আকাশের দিয়ে তাকিয়ে উপনিষদ আবৃত্তি করছেন।

মিরাকিউরল খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠে প্রফেসার হাইনরিখ শত্রুকে কী বলেছেন?

হাইনরিখ যা বলেছেন – সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে মিরাকিউরল খেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেই ভোরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উপনিষদের স্তোত্র উচ্চারণ করছিলেন প্রফেসার হাইনরিখ। শঙ্কুকে দেখে প্রথমেই অবাক হয়ে প্রশ্ন করেছেন – ‘কস্তম্’ অর্থাৎ সংস্কৃতে ‘তুমি কে’। শঙ্কুর ‘ত্রিলোকেশ্বর’ নামটি নিয়ে তিনি বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞানগর্ভ রসিকতা করেছেন। তারপর শঙ্কুর ওষুধেই তিনি সুস্থ হয়েছেন বুঝে নাৎসিদের অত্যাচারে হতাশ হয়ে বলেছেন – ‘আমি তো মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলাম; কারণ, বেঁচে থেকে তো আমার কোনো লাভ নেই!’ আবার শঙ্কু তাঁকে আশাবাদের কথা শোনালে তিনি জানান, তিনি ভারততাত্ত্বিক বন্ধু আঁদ্রে ভেসোয়ার কাছে প্যারিসে যাওয়ার কথা ভেবেছেন। তবে তার কথায় সর্বদাই নাৎসিপার্টি সম্পর্কে ঘৃণার সুর ঝরে পড়েছে।

“আমায় ক্ষমা করো, প্রোফেসর।” – কথকের এমন বক্তব্যের কারণ কী?

সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন বার্লিনবাসী নরবার্ট।

কারণ – নাৎসি পুলিশ বাহিনীর হাতে আক্রান্ত পিতা হাইনরিখ স্টাইনারকে সুস্থ করে তুলতে নরবার্ট লন্ডনে সন্ডার্সের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে বার্লিনে নিয়ে এসেছিল। বার্লিনে নাৎসি আক্রমণের ভয়ে ভীত সন্ডার্স শঙ্কুর নিরাপত্তার যাবতীয় দায়িত্ব দিয়েছিল নরবার্টকে। বিপরীতে নরবার্টও শঙ্কুর সমূহ নিরাপত্তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ব্ল্যাক্‌শার্ট পুলিশের কাছে নরবার্ট ছিল খুবই অসহায়। ব্ল‍্যাক্‌শার্ট পুলিশ শঙ্কুকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেতে এলে সে শঙ্কুর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছে।

ব্ল‍্যাকশার্ট পুলিশ এরিখ ফ্রোম শত্রুকে কোথায় নিয়ে গিয়েছিল? সেটি আসলে কী?

সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে এরিখ ফ্রোম নরবার্টের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ‘কারিনহল’-এ।

পরিচয় – কারিনহল হল একটি প্রাসাদের মতো বাড়ি। এটি জার্মানির নাৎসি পার্টির অন্যতম প্রধান, হিটলারের সঙ্গী, গেস্টাপো পুলিশ বাহিনীর অধিকর্তা হের গোয়রিং -এর আবাসস্থল। কারিনহল গোয়রিং -এর প্রথম স্ত্রীর নাম। 1931 -এ তার মৃত্যু হয়। পূর্বে বাড়িটি ছিল একটা হান্টিং লজ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার স্মৃতিরক্ষার্থে গোয়রিং হান্টিং লজটি কিনে নিয়ে প্রাসাদে পরিণত করেন। তখন থেকে কারিনহল গোয়রিং -এর প্রথম স্ত্রীর স্মৃতিসৌধ এবং কান্ট্রি হাউস। তিনি বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে এই কারিনহল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৌধে পরিণত হবে।

কী উদ্দেশ্যে গোয়রিং নরবার্টদের বাড়ি থেকে শঙ্কুকে তুলে আনেন নিজের বাড়িতে?

উদ্দেশ্য – ‘সত্যজিৎ রায়ের’ ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে শঙ্কুকে নরবার্টদের বাড়ি থেকে তুলে এনেছেন গোয়রিং মূলত দুটি উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। প্রথমত, তিনি কোনো ভারতীয়কে তাঁর কারিন হল – কান্ট্রিহাউসটা দেখাতে চেয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, অনেক চিকিৎসার পরেও ভোজনরসিক বিশালবপু গোয়রিং -এর ‘ড্রুসে’ অর্থাৎ গ্ল্যান্ডের গোলমাল সারছিল না। খেতে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসেন, ঘণ্টায় ঘণ্টায় স্যান্ডউইচ, সসেজ, বিয়ার ইত্যাদি খান। অতিরিক্ত চর্বির কারণে গোয়রিং অসম্ভব ঘামেন। তার এইসব শারীরিক সমস্যা মেটানোর জন্য তিনি প্রফেসার শঙ্কুকে তুলে আনেন। মিরাকিউরল খেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠার আশায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গোয়রিং।

গোয়রিং কেন কৃত্রিম উপায়ে মিরাকিউরল তৈরি করতে চেয়েছে?

কারণ – সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে সাধারণ জার্মানবাসী বা বিশ্ববাসীর উপকার উদ্দেশ্যে গোয়রিং কৃত্রিম উপায়ে মিরাকিউরল তৈরি করার কথা ভাবেননি। শুধু নাৎসি পার্টির লোকেরা মিরাকিউরল খেয়ে সুস্থ হবে এই চিন্তাই করেছেন গোয়রিং। হিটলারের রক্তচাপ কমাতে, গোয়বেলসের প্যারালিসিস ভালো করে তাকে ভালোভাবে চলতে সাহায্য করতে, হিমলারের হিস্টিরিয়ার উপশমের জন্য তিনি মিরাকিউরল বানাতে চেয়েছেন কৃত্রিম উপায়ে। অর্থাৎ তাঁদের পার্টির নেতাদের উপকার হবে ভেবেইমিরাকিউরলের কেমিক্যাল অ্যানালিসিস করতে চেয়েছেন তিনি।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর বাংলা বিষয়ের, ‘স্বর্ণপণী’ -এর কিছু ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ নবম শ্রেণীর বাংলা পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন নিয়মিত আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

স্বর্ণপণী-রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

স্বর্ণপণী-অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

স্বর্ণপণী-লেখক পরিচিতি-নবম শ্রেণী-বাংলা

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – বিষয়সংক্ষেপ

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – বাংলা – স্বর্ণপণী – বিষয়সংক্ষেপ

নবম শ্রেণী – বাংলা – কর্ভাস – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর