এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভূগোল – আবহবিকার – সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর

আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ‘আবহবিকার’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই অধ্যায় থেকে প্রায়শই মূল ধারণাভিত্তিক প্রশ্ন আসে।

নবম শ্রেণী - ভূগোল - আবহবিকার - সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর
নবম শ্রেণী – ভূগোল – আবহবিকার – সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর
Contents Show

আবহবিকার কাকে বলে?

আবহবিকার – ‘আবহবিকার’ (Weathering) শব্দটি ‘আবহাওয়া’ (Weather) থেকে সৃষ্ট। আবহবিকার শব্দটির সরল অর্থ হল আবহাওয়ার দ্বারা ভূপৃষ্ঠের বিকার বা পরিবর্তন। আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের (উষ্ণতা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি) প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের শিলাসমূহের উপরিভাগের যে বিচূর্ণীভবন ও বিয়োজন হয়, তাকে আবহবিকার বলে। এর ফলে, শিলাসমূহের উপরিভাগ চূর্ণবিচূর্ণ অবস্থায় মূল শিলাস্তর থেকে বিয়োজিত হয়ে ওই স্থানেই অবস্থান করে।

উদাহরণ – লোহাতে মরচে পড়া, পুরানো বাড়ির ঢালাই ফেটে যাওয়া এগুলি সবই আবহবিকারের ক্ষুদ্র সংস্করণ। এ ছাড়া, শীতল পার্বত্য অঞ্চল, উষ্ণ মরু অঞ্চলে আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমিরূপ দেখা যায়।

শ্রেণিবিভাগ – আবহবিকার প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। যথা – যান্ত্রিক আবহবিকার, রাসায়নিক আবহবিকার এবং জৈব আবহবিকার। তবে, জৈব আবহবিকার যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘটে থাকে।

যান্ত্রিক আবহবিকার কোন্ ধরনের জলবায়ুতে বেশি ঘটে, কারণসহ উল্লেখ করো।

উষ্ণ-শুষ্ক জলবায়ুতে সৃষ্ট আবহবিকার – উষ্ণ-শুষ্ক জলবায়ুতে তাপমাত্রার প্রসর যথেষ্ট বেশি এবং সেখানে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। এর ফলে, শিলায় সংকোচন ও প্রসারণজনিত টান সবচেয়ে বেশি ঘটে, তাই যান্ত্রিকভাবে এখানকার শিলা ক্ষুদ্রকণা বিসরণ, শল্কমোচন, লবণ কেলাস গঠন প্রভৃতি প্রক্রিয়ায় আবহবিকারগ্রস্ত হয়।

উদাহরণ – অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকায় এই ধরনের আবহবিকার দেখা যায়।

নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে সৃষ্ট আবহবিকার – পৃথিবীর মধ্যভাগে থাকা নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতে মাঝারি তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ভিদের ক্রিয়া অণুখাদ্যঘটিত কারণে যথেষ্ট প্রাধান্যলাভ করে।

উদাহরণ – রাশিয়ার সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে এই প্রক্রিয়া দেখা যায়।

উচ্চ-অক্ষাংশীয় ও হিমশীতল মেরু জলবায়ু – পৃথিবীর কোনো উচ্চ-অক্ষাংশীয় ও হিমশীতল মেরু জলবায়ুতে বরফ কিংবা তুষারের ক্রিয়ার ফলে যান্ত্রিকভাবে ভূপৃষ্ঠস্থ শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আবহবিকারগ্রস্ত হয় এবং কোণ বিশিষ্ট শিলা অবয়ব ট্যালাস বা স্ক্ৰি সৃষ্টি করে।

উদাহরণ – হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল কিংবা তুন্দ্রা জলবায়ুতে এটি পরিলক্ষিত হয়।

রাসায়নিক আবহবিকার কোন্ ধরনের জলবায়ু অঞ্চলে অধিক মাত্রায় কার্যকরী হয়?

অথবা, বৃষ্টিবহুল ক্রান্তীয় অঞ্চলে কোন্ ধরনের আবহবিকার দেখা যায়?

ভূপৃষ্ঠে যান্ত্রিক আবহবিকারের তুলনায় রাসায়নিক আবহবিকারের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, পৃথিবীর সর্বত্র রাসায়নিক আবহবিকার বেশি মাত্রায় সংঘটিত হয়। রাসায়নিক আবহবিকার প্রধানত দু’ধরনের জলবায়ুতে দেখা যায়। যথা –

  • নিরক্ষীয় জলবায়ু – সারাবছর বৃষ্টিপাত হওয়ায় এখানে জলের প্রভাবে আর্দ্রবিশ্লেষণ, অঙ্গারযোজন, জারণ, দ্রবণ সকল রাসায়নিক আবহবিকার প্রক্রিয়াগুলি কার্যকরী হয়। আবার, এই অঞ্চলে যে ঘন চিরহরিৎ অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে তার ডাল, পাতা, ফল, ফুল প্রভৃতি মাটিতে পড়ে পচে হিউমিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয় এবং এর প্রভাবে শিলার রাসায়নিক আবহবিকার ঘটে।
  • মৌসুমি জলবায়ু – মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে একটানা আর্দ্র ও শুষ্ক ঋতু চলার ফলে পর্যায়ক্রমে ধৌত ও কৈশিক প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিক ও রাসায়নিক উভয় প্রকার আবহবিকার অধিক পরিমাণে সংঘটিত হয়ে থাকে।
  • এছাড়া আর্দ্র নাতিশীতোয় অঞ্চলেও রাসায়নিক আবহবিকারের প্রভাব বেশি।

পুঞ্জিতক্ষয়ের (Mass Wasting) সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

অথবা, পুঞ্জিতক্ষয় বলতে কী বোঝো?

সংজ্ঞা – মূলত, অভিকর্ষজ বলের প্রভাবে ভূমির ঢাল বেয়ে আবহবিকার প্রাপ্ত চূর্ণবিচূর্ণ শিলারাশি ও মৃত্তিকার উপর থেকে নীচের দিকে স্থানান্তরিত হওয়াকে পুঞ্জিতক্ষয় (Mass Wasting) বলে।

পুঞ্জিতক্ষয়
পুঞ্জিতক্ষয়

বৈশিষ্ট্য –

  • জলের উপস্থিতি পুঞ্জিতক্ষয়কে সাহায্য করলেও জল পরিবহণের মাধ্যম হয় না।
  • পুঞ্জিতক্ষয় ধীর ও দ্রুত উভয়ভাবেই সংঘটিত হয়।
  • পার্বত্য অঞ্চলে এর প্রক্রিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
  • ভূমির ঢালের উপর পুস্থিতক্ষয়ের তীব্রতা নির্ভর করে।

কারণ –

  • আবহবিকার ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি (নদী, হিমবাহ) দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থের সঞ্চয় পুঞ্জিত ক্ষয় ঘটায়।
  • ভূমির খাড়া ঢাল পুঞ্জিতক্ষয় সৃষ্টির প্রধান শর্ত।
  • বসতি স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রভৃতি কাজের ফলে পার্বত্য ঢালে যে চাপের সৃষ্টি হয় তা পুঞ্চিতক্ষয় ঘটায়।
  • জল দ্বারা সিক্ত হয়ে শিলার সহনশীলতা হ্রাস পেলে পুঞ্জিতক্ষয় ঘটে।

শ্রণিবিভাগ – পুঞ্জিতক্ষয়কে সাধারণত প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা – প্রবাহ বা Flow (ধীর ও দ্রুত প্রবাহ), অবপাত (Fall), ধস (Slide), বিসর্পণ (Creep)।

ফলাফল –

  • পুঞ্জিতক্ষয়ের ফলে পর্বতের পাদদেশে ট্যালাস বা স্ক্ৰি গড়ে ওঠে।
  • ধস বা হিমানী সম্প্রপাতের ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।
  • কর্দমপ্রবাহে দীর্ঘ খাতের সৃষ্টি হয়।
  • পুঞ্জিতক্ষয়ের ফলে ভূমিঢালের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

শিলায় মরচে পড়ে কেন?

সাধারণত যে-সমস্ত শিলায় লৌহ খনিজের পরিমাণ বেশি সেই সমস্ত শিলায় মরচে ধরার প্রবণতা বেশি। এই সমস্ত শিলার খনিজের সঙ্গে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় অতিরিক্ত অক্সিজেন (O₂) যুক্ত হলে জারণ বা অক্সিডেশন ঘটে। প্রথমে, শিলার মধ্যে অবস্থিত লোহা (Fe) অক্সিজেন (O₂) দ্বারা জারিত হয়ে ফেরাস অক্সাইডে (FeO) পরিণত হয় (2Fe + O₂ → 2FeO)। শিলার মধ্যে কঠিনরূপে অবস্থিত এই ফেরাস অক্সাইড জলের উপস্থিতিতে O₂, দ্বারা জারিত হয়ে ফেরিক অক্সাইডে (Fe₂O₃) পরিণত হয়। এই ফেরিক অক্সাইড হল মরচে। এর ফলে, ওই শিলার উপরে লাল, হলুদ অথবা বাদামি রঙের ছোপ সৃষ্টি হয় এবং শিলাটি ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।

4FeO + 3H2O + O₂ → 2Fe2O3, 3H₂O
ফেরাস অক্সাইড + জল + অক্সিজেন → লিমোনাইট (মরচে)

শল্কমোচন (Exfoliation) কাকে বলে?

অথবা, শিলায় শল্কমোচন কীভাবে ঘটে?

শল্কমোচন (Exfoliation) –

সংজ্ঞা – ‘শল্ক’ শব্দের অর্থ ‘পেঁয়াজের খোসা’, এবং ‘মোচন’ -এর অর্থ ‘ত্যাগ’। উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধির কারণে যখন কোনো শিলার উপরের স্তরটি পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে যায়, তখন তাকে শল্কমোচন বলে।

প্রক্রিয়া – একই জাতীয় খনিজ দ্বারা গঠিত সমসত্ত্ব শিলার স্তরগুলি যদি সমকেন্দ্রিক হয় তাহলে দিনেরবেলা সূর্যতাপে উপরের স্তরটি ভিতরের স্তরগুলির তুলনায় অধিক উষ্ণ ও প্রসারিত হয় এবং রাতে অধিক শীতল ও সংকুচিত হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এভাবে সংকোচন ও প্রসারণের ফলে উপরের স্তরটি পেঁয়াজের খোসার মতো খুলে যায়। এর ফলে, শিলার আকৃতি গোলাকার বা উপগোলাকার হয় বলে শল্কমোচনকে গোলাকার বা উপগোলাকার (Spheroidal) আবহবিকার বলে।

উদাহরণ – গ্রানাইট শিলায় এই আবহবিকার অধিক দেখা যায়। তামিলনাড়ুর মহাবলীপুরমের ‘কৃষ্ণ ভেন্নাই পান্ধ’ নামক বিখ্যাত গ্রানাইট গম্বুজটি এভাবে সৃষ্ট।

শল্কমোচন (Exfoliation)
শল্কমোচন (Exfoliation)

মাটি বা মৃত্তিকা (Soil) কাকে বলে? মাটি সৃষ্টির নিয়ন্ত্রকগুলি লেখো।

মাটি বা মৃত্তিকা – বহির্জাত প্রাকৃতিক শক্তির (সূর্যতাপ, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, নদী, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ, সমুদ্রস্রোত, অগ্ন্যুৎপাত প্রভৃতি) প্রভাবে পৃথিবীপৃষ্ঠের আদিশিলা প্রতিনিয়ত চূর্ণবিচূর্ণ হচ্ছে। এইসব শিলাচূর্ণ ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে যে নরম ও শিথিল স্তর বা আবরণ সৃষ্টি করে, তাকে মাটি বা মৃত্তিকা (Soil) বলে।

মাটি সৃষ্টির নিয়ন্ত্রক –

  • শিলা – মাটি সৃষ্টির নিয়ন্ত্রকগুলির মধ্যে শিলা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শিলার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে মাটির সৃষ্টি। অর্থাৎ, শিলার প্রকৃতি কঠিন হলে মাটি গঠন দ্রুত হবে না। অন্যদিকে, শিলার প্রকৃতি কোমল হলে মাটি গঠন দ্রুত হবে।
  • জলবায়ু – মাটি সৃষ্টিতে জলবায়ু বিশেষ ভূমিকা নেয়। শীতল ও শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চল অপেক্ষা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে মাটি গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। তাই উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে মাটির গভীরতা বেশি হয়।
  • ভূপ্রকৃতি – ভূপ্রকৃতিও মাটি সৃষ্টিকে প্রভাবিত করে। ভূমির ঢাল খাড়া হলে মাটি সৃষ্টির সুযোগ কম থাকে। আবার, ভূমির ঢাল কম হলে সেখানে ধীরে ধীরে মাটির স্তর তৈরি হয়। তাই পার্বত্য অঞ্চল অপেক্ষা সমতলভূমিতে মাটি গঠনের কাজ দ্রুত হয়।
  • জীবজগৎ – বিভিন্ন প্রাণী (ইঁদুর, উই, কেঁচো, পিঁপড়ে, সাপ প্রভৃতি) মাটিতে গর্ত করে বাস করে। ফলে, মাটিতে জল ও বাতাস প্রবেশ করে, আবার উদ্ভিদের মূল শিলায় চাপ সৃষ্টি করে ফাটল ধরায়, যা মাটি গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া, প্রাণী ও উদ্ভিদের মৃতদেহ মাটিতে হিউমাস সৃষ্টি করে যা মাটি তৈরির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
  • সময় – মাটি গঠনে সময় যত দীর্ঘ হয় মাটি তত সুগঠিত হয়।

মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করো।

মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ – মৃত্তিকা গঠনকারী উপাদানগুলির ভিন্নতার কারণে এত বৈচিত্র্যপূর্ণ মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়, যার শ্রেণিবিন্যাস বেশ জটিল। সাধারণভাবে মৃত্তিকাকে তিনটি সুস্পষ্ট ভাগে ভাগ করা যায় – আঞ্চলিক (Zonal), আন্তঃ-আঞ্চলিক (Intra-zonal), অ-আঞ্চলিক (A-zonal)।

  • আঞ্চলিক (Zonal)– মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়া মূলত জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে ভিন্ন জলবায়ু অঞ্চলে মৃত্তিকাও ভিন্ন দেখা যায়। আদি শিলা বা জনক শিলার প্রভাব ব্যতীত জলবায়ুর প্রভাবে সৃষ্ট মৃত্তিকাকে আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে। যেমন – পডসল, ল্যাটেরাইট, চারনোজেম, তুন্দ্রা প্রভৃতি। 
  • আন্তঃ-আঞ্চলিক (Intra-zonal) – প্রতিটি আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলয়ে স্থানীয় জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও আদি শিলার উপাদানের তারতম্যের কারণে যে মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়, তাকে আন্তঃ-আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে। যেমন – পিট বা বগ মাটি, বেনজিল প্রভৃতি।
  • অ-আঞ্চলিক (A-zonal) – বায়ু, জলপ্রবাহ, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ দ্বারা এক স্থান থেকে অপর স্থানে বাহিত হয়ে যে মৃত্তিকা গঠিত হয়, তাকে অ-আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলে। যেমন – পলি মাটি, লোয়েস প্রভৃতি। 

আবহবিকার কীভাবে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে?

মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে আবহবিকারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যথা –

  • আবহবিকারের ফলে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ভূপৃষ্ঠের ওপর যে আলগা আবরণ গড়ে ওঠে তাকে রেগোলিথ বলে। এই রেগোলিথ থেকে মাটি সৃষ্টির সময় খনিজগুলি মাটিতে যুক্ত হয় এবং মাটিকে উর্বর করে।
  • জৈব যান্ত্রিক আবহবিকারে কেঁচো, পিঁপড়ে, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণী মাটির গভীরে বায়ু চলাচলের সুযোগ করে দিয়ে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
  • জৈব রাসায়নিক আবহবিকারে গাছের পাতা, ফুল, ডালপালা, শিকড়, প্রাণীর দেহাবশেষ প্রভৃতি পচে গিয়ে মাটির সঙ্গে মিশে হিউমাসে পরিণত হয়। এই হিউমাস বিয়োজিত হয়ে মাটিতে বিভিন্ন খনিজের মিশ্রণ ঘটায়, যার ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
  • এছাড়াও মৃত্তিকার প্রধান পুষ্টিমৌল যেমন – পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস ইত্যাদি মূল শিলার গঠনকারী খনিজ, যেগুলি আবহবিকারের দ্বারা সৃষ্ট রেগোলিথের মাধ্যমেই মাটিতে মেশে।

‘উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে তুষারের কার্যের ফলে শিলা আবহবিকারগ্রস্ত হয়’ – চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

কেলাসন প্রক্রিয়া –

কেলাসন প্রক্রিয়া দুভাবে সংঘটিত হয় – তুষার কেলাস গঠন এবং লবণ কেলাস গঠন।

তুষার কেলাস গঠন বা তুষার কার্য –

  • তুহিন খণ্ডীকরণ বা তুষার কীলক গঠন – পার্বত্য অঞ্চলে বৃষ্টির জল শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে ঢুকে গিয়ে শৈত্যের প্রভাবে তা বরফে পরিণত হয়। জল জমে বরফে পরিণত হলে তা আয়তনে শতকরা দশভাগ বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, শিলাস্তরে প্রবিষ্ট তীক্ষ্ণমুখী বরফের ফলাকে তুষার কীলক বলে। এর ফলে ফাটলের দুপাশের শিলাস্তরে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি করে। এই চাপের প্রভাবে ফাটল ক্রমশ বৃদ্ধি পায় এবং শেষে শিলাস্তর ফেটে গিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোণযুক্ত শিলাখণ্ডের সৃষ্টি হয়। ওই প্রস্তরখণ্ডগুলি পর্বতের পাদদেশ বরাবর সমান্তরালভাবে জমা হলে, তাকে ফেলসেনমার বা ব্লকস্পেড (Felsenmer or Blockspade) বলা হয়। আবার, ওই প্রস্তরখণ্ডগুলি পর্বতের গা বরাবর উপর-নীচে অর্থাৎ, উল্লম্বভাবে সঞ্চিত হলে, তাকে স্ক্রি বা ট্যালাস (Scree or Tallus) বলে।
  • হিমায়িত স্ফীতি – নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টির জল সচ্ছিদ্র মৃত্তিকার মধ্যে ঢুকলে শীতকালে তা শৈত্যের প্রভাবে বরফে পরিণত হয়। এর ফলে, স্ফীত বরফের চাপে মাটি ফেটে যে আবহবিকার সংঘটিত হয়, তাকে হিমায়িত স্ফীতি বলে। এরকম ঘটনা ঘটলে চাষ আবাদের পক্ষে বিশেষ সুবিধা হয়।
তুষার কেলাস গঠন বা তুষার কার্য
তুষার কেলাস গঠন বা তুষার কার্য

আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় ‘আবহবিকার’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন