এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ – বিশ্লেষণমূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণীর ইতিহাসের পঞ্চম অধ্যায়টি বিশ শতকে ইউরোপের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে। এই অধ্যায়টিতে বিশ শতকের ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলির একটি বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

নবম শ্রেণী – ইতিহাস – বিংশ শতকে ইউরোপ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
Contents Show

সাম্রাজ্যবাদ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য কতখানি দায়ী ছিল?

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই অস্ট্রিয়ার সার্বিয়া আক্রমণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য যেসব কারণ দায়ী ছিল তার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির সাম্রাজ্যবাদ। অনেক ঐতিহাসিক প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ সময়কালকে ‘সাম্রাজ্যবাদের যুগ’ (Age of Imperialism) বলে চিহ্নিত করেন।

  1. ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা – পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে ভৌগোলিক আবিষ্কারের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। শিল্পবিপ্লবের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিশেষত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানির শিল্পপতি শ্রেণি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ দেশের সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে ইউরোপের দেশগুলি এশিয়া, আফ্রিকায় উপনিবেশ দখলের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।
  2. ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি সাম্রাজ্যবিস্তারকে গর্বের প্রতীক বলে মনে করত। আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী মনোভাবের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্স অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব পোষণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।
  3. জার্মানির সাম্রাজ্যবাদী নীতিগ্রহণ – ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর চ্যান্সেলার বিসমার্ক বলেছিলেন, জার্মানি একটি ‘পরিতৃপ্ত দেশ’। কিন্তু কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম ঘোষণা করেন যে, ‘জার্মানি পরিতৃপ্ত দেশ নয়, তার সামনে অনন্ত সম্প্রসারণের সম্ভাবনা আছে। জার্মানির সাম্রাজ্যবিস্তারের প্রচেষ্টা ও ব্রিটেনের জার্মান ভীতি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল।
  4. সাম্রাজ্যবিস্তারের জন্য সামরিকশক্তি বৃদ্ধি – জার্মানি সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য সামরিকশক্তি বৃদ্ধি করে। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম নৌশক্তি বৃদ্ধি করেন। বিভিন্ন দেশে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও অস্ত্রনির্মাণের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ফলস্বরূপ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

এ ছাড়াও সশস্ত্র শান্তির যুগে বিভিন্ন মারণাস্ত্রের আবিষ্কার গড়ে ওঠা পরস্পরবিরোধী সামরিক জোট উত্তেজনার পারদ বাড়িয়ে দেয়। সেরাজেভোর ঘটনা তাতে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যোগ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করো।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দায়িত্ব কতখানি তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে। একদল বলেন, জার্মানিই দায়ী ছিল; অপরপক্ষ বলেন, জার্মানি একা দায়ী ছিল না।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির দায়িত্ব –

  1. কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মের বিদেশনীতি – কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম ছিলেন উগ্র সাম্রাজ্যবাদী শাসক। তিনি সাম্রাজ্যবিস্তার ও বিশ্ব রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের নীতি গ্রহণ করলে ইউরোপে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
  2. জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদ – জার্মানরা ছিল টিউটন জাতির বংশধর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে জার্মানিতে প্রচারিত হয়েছিল। যে, টিউটন জাতি হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মও বিশ্বে টিউটন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছিলেন।
  3. জার্মানির ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা – জার্মানিতে শিল্পবিপ্লব শুরু হয়েছিল অনেক দেরিতে। কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মের আমলে শিল্পের ক্ষেত্রে জার্মানির ব্যাপক অগ্রগতি ঘটেছিল। ফলে শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ ও উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রির বাজারের প্রয়োজনে জার্মানি উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করতে উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছিল। এই উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি রাষ্ট্রের সঙ্গে জার্মানি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে।
  4. জার্মানির সামরিক শক্তি বৃদ্ধি – জার্মানি ইউরোপে সামরিক প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ স্থলবাহিনী, দ্বিতীয় বৃহত্তম নৌবহর, শক্তিশালী বিমানবহর এবং আধুনিক মারণাস্ত্র জার্মানিকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। এই সামরিক প্রতিযোগিতা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।
  5. জার্মানির শক্তিজোট গঠন – জার্মানি নিজের শক্তিবৃদ্ধি এবং ইউরোপের রাজনীতিতে ফ্রান্সকে নিঃসঙ্গ করার জন্য শক্তিজোট গঠন করে। অস্ট্রিয়া ও ইটালিকে নিয়ে জার্মানি ত্রিশক্তি মৈত্রী বা ট্রিপল অ্যালায়েন্স গঠন করে (১৮৮২ খ্রি.)। রাশিয়ার সঙ্গেও জার্মানি রি-ইনসিওরেন্স চুক্তিতে (১৮৮৭ খ্রি.) আবদ্ধ হয়। জার্মানির এই শক্তিজোটের বিরুদ্ধে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ও রাশিয়া ত্রিশক্তি আঁতাত নামে শক্তিজোট গঠন করে। ফলে ইউরোপ দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তিশিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
  6. বিরুদ্ধ মত – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করা হলেও অন্যান্য দেশগুলির দায়িত্বও কম ছিল না। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং সেরাজেভো ঘটনার জন্য সার্বিয়া-অস্ট্রিয়ার বিরোধ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে দায়ী ছিল।

পরিশেষে বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানি দায়ী ছিল এ কথা অস্বীকার করা যায় না। তবে জার্মানি একাই দায়ী এ কথা বলাও যুক্তিযুক্ত নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করেছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা মিত্রপক্ষে যোগদান করলে যুদ্ধের গতিধারা বদলে যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদানের কারণ –

  1. গণতন্ত্রের প্রতি দুর্বলতা – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল। স্বাভাবিক কারণেই অন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতি তার দুর্বলতা ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গণতান্ত্রিক দেশ ইংল্যান্ড, ফ্রান্স বিপর্যস্ত হয়। মার্কিন জনমত তাই মিত্রদেশগুলির পক্ষে ছিল।
  2. অর্থনৈতিক কারণ – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকলেও ইউরোপীয় দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে আমেরিকা ইউরোপের যুদ্ধরত দুই শিবিরকে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করে। কিন্তু জার্মানির শক্তিজোট জয়লাভ করলে ভবিষ্যতে মার্কিন বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত বা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
  3. রাজনৈতিক কারণ – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনাপর্বে জার্মানির শক্তিজোটের সাফল্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আতঙ্কিত করে তোলে। রাশিয়ার পরাজয় ও সন্ধি স্বাক্ষর জার্মানিকে শক্তিশালী করেছিল। ফলে ফ্রান্সের পতন আসন্ন হয়ে ওঠে। ইউরোপের রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়।
  4. জার্মান নৌ-আক্রমণ – লুসিটানিয়া নামে একটি মার্কিন মালবাহী জাহাজকে জার্মান সাবমেরিন টর্পেডো আক্রমণ করে সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। জাহাজের নাবিক ও কর্মীরা সবাই মারা যায়। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

প্রেসিডেন্ট উইলসন এই যুদ্ধের লক্ষ্য হিসেবে বলেন, আমরা সেইসব জিনিসের জন্য যুদ্ধ করছি, যেগুলি আমরা হৃদয়ের নিকটবর্তী স্থানে বহন করি — গণতন্ত্র, আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের দাবি এবং মুক্ত মানুষের ও মুক্ত পৃথিবীর শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করা। এই সকল কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণগুলি কী ছিল?

বিপুল সৈন্যসংখ্যা, উন্নত যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও তার মিত্রশক্তিবর্গের পরাজয়ের পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান ছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ –

  1. তুলনামূলক দুর্বলতা – ইংল্যান্ড-ফ্রান্স ও রাশিয়ার জোটের তুলনায় জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও তুরস্কের জোট অপেক্ষাকৃত দুর্বল ছিল। পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইংল্যান্ড-ফ্রান্সের জোটে যোগ দিলে এই জোট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
  2. উপনিবেশ থেকে প্রাপ্ত সুবিধার পার্থক্য – ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের বিশ্বজোড়া উপনিবেশ ছিল। যুদ্ধের জন্য উপনিবেশ থেকে অর্থ ও সৈন্য সাহায্য আসে। পক্ষান্তরে জার্মানির উপনিবেশগুলি সেই রকম সমৃদ্ধ ছিল না।
  3. একক দায়িত্ব – জার্মানির মিত্র অস্ট্রিয়া ও বুলগেরিয়া পরাজিত হলে জার্মানিকে এককভাবেই দায়িত্ব নিতে হয়।
  4. স্বল্প আয়তন – জার্মানি আয়তনে ছোটো দেশ ছিল। রাশিয়ার মতো পশ্চাদপসরণ করে আত্মরক্ষা বা শত্রুকে বাধা দেওয়ার মতো উপযুক্ত স্থান তার ছিল না।
  5. কৌশলগত অসুবিধা – জার্মানিকে একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম — দুই রণাঙ্গনেই যুদ্ধ করতে হয়।
  6. U-বোট প্রতিরোধী ব্যবস্থা – জার্মানির আবিষ্কৃত ইউ – বোট বা ডুবোজাহাজ প্রথমদিকে কার্যকরী ছিল। জার্মানি এই ডুবোজাহাজ ব্যবহার করে শত্রুপক্ষের বহু জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। কিন্তু অল্পকালের মধ্যে ইংল্যান্ড এর প্রতিরোধ ব্যবস্থা আবিষ্কার করে। তখন ইউ-বোটের কার্যকারিতা কমে যায়।
  7. সামরিক শক্তি – জার্মানি শক্তিশালী হলেও নৌশক্তিতে ইংল্যান্ডের সমকক্ষ ছিল না। বিমানবাহিনীও ইঙ্গ-মার্কিনদের তুলনায় দুর্বল ছিল। স্থলযুদ্ধের কৌশলও ইঙ্গ-ফরাসি বাহিনীর মতো উন্নত ছিল না। ফ্রান্সের সোম-এর যুদ্ধ এবং মান নদীর তীরের যুদ্ধে জার্মানবাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।
  8. শ্রমিক ধর্মঘট – যুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির অস্ত্রনির্মাণ ও গোলাবারুদ কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট হয়। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং যুদ্ধক্ষেত্রে রসদের জোগান অনিয়মিত হয়ে পড়ে।

এই সমস্ত কারণ জার্মানির পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিল। এ ছাড়া জার্মান জনগণ দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ আর চাইছিল না। ফলে দেশের ভিতরেই নানা বিক্ষোভ-বিদ্রোহ ঘটতে থাকে এবং জার্মানির পরিস্থিতি বৈপ্লবিক হয়ে ওঠে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় দেশগুলি কী কী অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় দেশগুলি নানান অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে জার্মানি, ইটালি, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, ফ্রান্স, রাশিয়া প্রভৃতি দেশগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক সমস্যা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্ব অর্থনৈতিক মহামন্দার ফলে ইউরোপীয় দেশগুলি ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়।

  1. মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী দেশগুলির প্রচুর ব্যয় হওয়ায় তাদের জাতীয় ঋণের পরিমাণ বিপুল হারে বেড়ে যায়। এই কারণে তাদের মুদ্রা ছাপাতে হয়, ফলে স্বাভাবিকভাবে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। এই অবস্থায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষ দুর্দশার সম্মুখীন হন।
  2. বেকার সমস্যা বৃদ্ধি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য যে বাড়তি সৈন্য নেওয়া হয়েছিল যুদ্ধশেষে তারা বেকার হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সামগ্রী উৎপাদনের কারখানা এবং অন্যান্য কারখানা থেকে প্রচুর শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছিল।
  3. কৃষি ও শিল্পের ক্ষতি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। কৃষির সঙ্গে যুক্ত শিল্পেও সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। তা ছাড়া সরকার বেশি পরিমাণে কর আদায় করে আর্থিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করলে কৃষক ও শিল্পমালিকদের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
  4. ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষতি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধ উপকরণের প্রচুর চাহিদা ছিল। তাই সহায়ক শিল্প ও বাণিজ্যের তেজিভাব দেখা দিয়েছিল। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হলে অবস্থা বদলে যায়। চাহিদা না থাকায় ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। এর সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহামন্দার প্রভাব ইউরোপীয় দেশগুলির উপর পড়ে। ফলে ইউরোপের আর্থিক জীবনে অচলাবস্থা দেখা দেয়।
  5. খাদ্যসংকট – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছিল এবং তীব্র খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বের অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ইউরোপ যেহেতু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তাই এই মহাদেশেই এর প্রভাব ছিল সর্বাধিক। এই ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে অনেক সময় লাগে। পুজিবাদী অর্থব্যবস্থার সংকট প্রকটিত হয় এবং সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক তেজিভাবের কারণ কী ছিল?

১৯২০-র দশক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধির দশক হিসেবে পরিচিত। এই সময় (১৯২১-২০ খ্রি.) রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হার্ডিং, কলিজ ও হুভার-এর দৃঢ় অর্থনৈতিক নীতির ফলে শিল্প-বাণিজ্যে জোয়ার মাসে। জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং জীবনযাপনের মানোন্নয়ন ঘটে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নতির কারণ –

  1. সরকারি নীতি – রিপাবলিকান যুগে শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দেওয়া হয়। শিল্প সংরক্ষণ আইন পাস করা হয়। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে শুল্ক আইন পাস করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যদ্রব্যের উপর চড়া আমদানি শুল্ক আরোপের ব্যবস্থা করা হয়। প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতার নীতি গৃহীত হওয়ায় বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি সাহায্য লাভ করে। সরকার আয়কর ও কোম্পানি কর কমিয়ে দেয়। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  2. বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কার – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকায় নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত আবিষ্কার ঘটে। এর ফলে কলকারখানায় ব্যাপকভাবে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। ফলে আমেরিকা বিশ্বের প্রধান উৎপাদনকারী ও সরবরাহকারী দেশে পরিণত হয়।
  3. কাজের বাজার – রিপাবলিকান যুগে সরকারি নীতির ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিল্প-বাণিজ্যে প্রচুর বিনিয়োগ হয়। প্রচুর কলকারখানা গড়ে ওঠে। প্রচুর উৎপাদনের ফলে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। ফলে কাজের বাজার সম্প্রসারিত হয়। জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় ৩১% এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ে ২৬%। বেকারত্বের অবসান ঘটে।
  4. পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি – ১৯২০ – র দশকে আমেরিকায় যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি ঘটে। নতুন রাস্তা ও রেলপথ নির্মাণের ফলে পণ্য পরিবহণ সহজ হয় এবং শিল্পদ্রব্য সহজে মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসে।
  5. ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি – এই সময় আমেরিকায় বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য যেমন- মোটরগাড়ি, টেলিফোন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন প্রভৃতির উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। জনগণের মধ্যে ভোগ্যপণ্যের ব্যবহারের ফলে শিল্পেরও প্রসার ঘটে।
  6. বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি – এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়। বিদ্যুতের জোগানের প্রাচুর্য শিল্প উৎপাদনের সহায়ক হয়।

বিশ শতকে ইউরোপের ইতিহাস ছিল একটি গতিশীল ইতিহাস। এই শতাব্দীতে ইউরোপের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলি ছিল ব্যাপক। এই পরিবর্তনগুলি ইউরোপের ভবিষ্যতকে গড়ে দিয়েছে।

Share via:

মন্তব্য করুন