এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ইতিহাস – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর’ অধ্যায়ের কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও সহায়ক। কারণ মাধ্যমিক এবং চাকরির পরীক্ষায় এই ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই আসতে দেখা যায়।

Table of Contents

নবম শ্রেণী - ইতিহাস - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর - সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন
নবম শ্রেণী – ইতিহাস – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

ফ্যাসিবাদী আদর্শ বলতে কী বোঝো?

ফ্যাসিবাদী আদর্শ বলতে বোঝায় উগ্র জাতীয়তাবাদ, জাতিবিদ্বেষ, আগ্রাসী এবং সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একদলীয়, একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা এবং সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী মতবাদ।

ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দলের লক্ষ্য কী ছিল?

মুসোলিনির নেতৃত্বে ইতালিতে ফ্যাসিস্ট দল ক্ষমতায় আসে। একনায়কতান্ত্রিক এই দলের লক্ষ্য ছিল —

  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
  • রাষ্ট্রকে সর্বময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
  • কমিউনিস্ট প্রভাব থেকে ইতালিকে রক্ষা করা।

মুসোলিনির বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

মুসোলিনির বিদেশনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল —

  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধবিগ্রহ এবং সামরিক নীতি গ্রহণ করে ফ্যাসিস্ট শাসনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
  • যুদ্ধবিগ্রহ চালু রেখে বেকার যুবকদের সামরিক কাজে নিযুক্ত করা, যাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়।
  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইতালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা।

মুসোলিনি তাঁর সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য কোন কোন সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন?

মুসোলিনি তাঁর সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য নিম্নলিখিত সামরিক অভিযানগুলো চালিয়েছিলেন —

  • আবিসিনিয়া (ইথিওপিয়া) আক্রমণ।
  • আলবেনিয়া আক্রমণ।

ইতালি কেন আবিসিনিয়া দখল করে?

পূর্ব আফ্রিকার আবিসিনিয়ার উপর দীর্ঘদিন থেকেই ইতালির নজর ছিল। কারণ আবিসিনিয়া দখল করতে পারলে —

  • উদ্বৃত্ত জনসংখ্যার স্থান সংকুলান করা যেত।
  • ইতালির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের উৎস এবং নতুন বাজার তৈরি হত।
  • 1896 সালে অ্যাডোয়া যুদ্ধে আবিসিনিয়ার কাছে ইতালির পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়া সম্ভব হত।

এ কারণেই ইতালি আবিসিনিয়া আক্রমণ ও দখল করে।

ওয়াল ওয়াল ঘটনা কী?

ওয়াল ওয়াল হলো আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। তার পাশে ছিল সোমালিল্যান্ড, যা তখন ইতালির অধিকারে ছিল। 1934 খ্রিস্টাব্দের 5 ডিসেম্বর সোমালিল্যান্ড ও আবিসিনিয়ার সীমান্তে অবস্থিত ওয়াল ওয়াল গ্রামে দু’পক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি খণ্ডযুদ্ধ হয়। এই ঘটনাকে ‘ওয়াল ওয়াল ঘটনা’ বলা হয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুসোলিনি (হিটলার নয়) আবিসিনিয়ার সম্রাট হেইলে সেলাসিকে একটি চরমপত্র দেন এবং 1936 খ্রিস্টাব্দে ইতালি আবিসিনিয়া দখল করে নেয়।

ইতালি কেন জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল?

1935 খ্রিস্টাব্দে মুসোলিনি যখন আবিসিনিয়া আক্রমণ করেন, তখন আবিসিনিয়ার সম্রাট জাতিপুঞ্জের (League of Nations) কাছে আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানান। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জাতিপুঞ্জ ইতালির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এর ফলে, ইতালি জাতিপুঞ্জের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

ল্যাটেরান চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে ও কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

1929 খ্রিস্টাব্দে ল্যাটেরান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিটি ইতালির তৎকালীন শাসক মুসোলিনি এবং পোপের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়।

ল্যাটেরান চুক্তির শর্ত কী ছিল?

মুসোলিনি ও পোপের মধ্যে স্বাক্ষরিত ল্যাটেরান চুক্তির শর্তগুলো ছিল –

  • রোমান ক্যাথলিক ধর্ম ইতালির রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হবে।
  • রোমের ভ্যাটিকান নগরী একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবে।
  • পোপকে স্বাধীন রাজার মতো ‘পবিত্র’ এবং ‘আইন বহির্ভূত’ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, এবং তিনি যাজক নিয়োগের পূর্ণ অধিকার পাবেন।

হোর-লাভাল চুক্তি কাদের মধ্যে এবং কত সালে স্বাক্ষরিত হয়?

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যামুয়েল হোর এবং ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ের লাভাল ইটালির সঙ্গে এক গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এই চুক্তি ‘হোর-লাভাল চুক্তি’ নামে পরিচিত।

1935 সালের 8 ডিসেম্বর হোর-লাভাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

হোর-লাভাল গোপন চুক্তির (1935) শর্ত কী ছিল?

হোর-লাভাল চুক্তির শর্ত ছিল –

  • ইটালি আবিসিনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড লাভ করবে।
  • আবিসিনিয়ার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় থাকবে।
  • আবিসিনিয়াকে সমুদ্রের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইরিত্রিয়ার কিছু অংশ দেওয়া হবে।

ইটালি কেন স্পেনের গৃহযুদ্ধে সাহায্য প্রদান করেছিল?

1936 সালে স্পেনে পপুলার ফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল ফ্রাঙ্কো বিদ্রোহ ঘোষণা করলে মুসোলিনি ফ্রাঙ্কোর সমর্থনে প্রায় কয়েক লক্ষ সেনা প্রেরণ করেন। স্পেনে ইটালির মর্যাদা ও প্রভাব বৃদ্ধি, ফ্রান্সকে ঘিরে রাখা, এবং সর্বোপরি স্পেনে সাম্যবাদের গতিরোধ করার জন্য ইটালি স্পেনীয় গৃহযুদ্ধে সাহায্য প্রদান করেছিল।

মুসোলিনি কীভাবে গ্রিসের কারফু দ্বীপ দখল করেছিলেন?

মুসোলিনি লন্ডনের চুক্তি (1915) অনুযায়ী রোডস ও দোদেকেনিজ দ্বীপগুলি গ্রিসের কাছ থেকে ফিরে পেতে তৎপর হন। 1920 সালে লোসান চুক্তির মাধ্যমে মুসোলিনি এই অঞ্চলগুলি লাভ করেন। 1923 সালে গ্রিস-আলবেনিয়া সীমান্ত নির্ধারক কমিশনে কার্যরত একজন ইতালীয় প্রতিনিধির হত্যার অজুহাতে মুসোলিনি গ্রিসের কারফু দ্বীপ দখল করেন।

জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

জার্মানির একনায়কতন্ত্রী শাসক অ্যাডলফ হিটলার মনে করতেন, জার্মান জাতি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আর্য জাতি। জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা, ভার্সাই ও সেন্ট জার্মেইন চুক্তি বাতিল করে জার্মানিকে অপমানের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া, এবং বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রে বসবাসকারী জার্মান ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে এক বৃহত্তর জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করা ছিল হিটলারের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যে হিটলার ‘হেরেনভোল্ক’ তত্ত্ব প্রচার করেন, যা জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দেয়।

হিটলারের বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হিটলারের বিদেশনীতির লক্ষ্য ছিল –

  • ভার্সাই সন্ধি বাতিল করা এবং এর অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া।
  • যুদ্ধনীতির মাধ্যমে জার্মানির ভৌগোলিক সম্প্রসারণ করা।
  • জার্মানিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
  • সাম্যবাদ ধ্বংস করা।

আনশলুস কী?

হিটলারের বিদেশনীতির অন্যতম নীতি ছিল ‘আনশলুস’ নীতি। ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী জার্মানদের জাতীয়তাবাদের স্বার্থে একত্রিত করার জন্য হিটলারের গৃহীত নীতি ‘আনশলুস’ নামে পরিচিত। 1938 সালে, হিটলার জার্মান জাতির ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়াকে জার্মানির সাথে যুক্ত করার জন্য আনশলুস নীতি গ্রহণ করেছিলেন।

হিটলার কেন নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ত্যাগ করেছিলেন?

1933 সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে জেনেভায় নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অন্যান্য দেশগুলো জার্মানির উপর অস্ত্র কমানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করে। হিটলার মনে করেছিলেন, সম্মেলনে জার্মানির প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে। এই মতবিরোধের কারণে, হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ত্যাগ করেন।

জার্মানি কেন জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল?

1933 সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বিশ্ব নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে জার্মানির প্রস্তাব ছিল যে হয় তাদের ফ্রান্সের সমান সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়া হোক, অথবা ফ্রান্সের সামরিক শক্তি কমিয়ে জার্মানির সমান করা হোক। যখন এই প্রস্তাব নাকচ করা হয়, তখন জার্মানির প্রতিনিধিরা সম্মেলন ত্যাগ করেন। এর কয়েকদিন পর, 14 অক্টোবর 1933 সালে জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কত সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল? এই চুক্তির মেয়াদ কত বছর ছিল?

1934 সালে পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি 10 বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির গুরুত্ব কী ছিল?

1934 সালে পোল্যান্ডের সাথে জার্মানির যে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে –

  • পোল্যান্ড জার্মান আক্রমণের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
  • ফ্রান্সের উপর পোল্যান্ডের নির্ভরতা কমে গিয়েছিল, কারণ তারা জার্মানির কাছ থেকে অনাক্রমণের প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল।
  • পোল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছিল।

স্ট্রেসা সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

1935 সালে, জার্মানি যখন ভার্সাই চুক্তির সামরিক শর্ত অমান্য করে, তখন ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর ইটালির স্ট্রেসাতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী পিয়ের-এতিয়েন ফ্লানদিন এবং ইটালির নেতা বেনিটো মুসোলিনি অংশগ্রহণ করেন। তারা জার্মানির সামরিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা করেন এবং ঐক্যমত্য প্রকাশ করেন যে, জার্মানি পুনরায় চুক্তিভঙ্গ করলে তা সহ্য করা হবে না। এটি ছিল মিত্রশক্তির মধ্যে সংহতি বজায় রাখার শেষ প্রচেষ্টা।

ইঙ্গ-জার্মান নৌ-চুক্তির গুরুত্ব কী ছিল?

1935 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির নৌ-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির গুরুত্ব ছিল –

  • এর ফলে জার্মানি ব্রিটেনের সহানুভূতি অর্জন করে।
  • জার্মানি ব্রিটিশ নৌ-শক্তির 35% পর্যন্ত নৌ-শক্তি বৃদ্ধি করার স্বীকৃতি লাভ করে।
  • জার্মানি ইউরোপে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে চাপে রাখার কৌশলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।

কবে, কাদের মধ্যে এবং কেন অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

1936 খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জাপান ও জার্মানির মধ্যে অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

1937 খ্রিস্টাব্দে ইতালিও এই চুক্তিতে যোগদান করে।
এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল সাম্যবাদ বা কমিউনিজমের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে কোনো সন্ধিতে আবদ্ধ না হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করা।

রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে এবং কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

1936 খ্রিস্টাব্দে রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল হিটলার ও মুসোলিনির মধ্যে।

রোম-বার্লিন-টোকিও শক্তিজোট কত খ্রিস্টাব্দে সৃষ্টি হয়েছিল? কত খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির সংযুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছিল?

1937 খ্রিস্টাব্দে রোম-বার্লিন-টোকিও শক্তিজোট সৃষ্টি হয়েছিল।
1938 খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির সংযুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছিল।

মিউনিখ চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়েছিল? মিউনিখ চুক্তির ফলে হিটলার কোন অঞ্চল লাভ করেছিলেন?

1938 খ্রিস্টাব্দে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মিউনিখ চুক্তির ফলে হিটলার চেকোস্লোভাকিয়ার সুদেতেন অঞ্চল লাভ করেন।

মিউনিখ চুক্তি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল –

  • ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন,
  • ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের,
  • ইতালির মুসোলিনি,
  • জার্মানির হিটলারের মধ্যে।

এই চুক্তি মুসোলিনির উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

মিউনিখ চুক্তির (1938 খ্রি.) তাৎপর্য উল্লেখ করো।

মিউনিখ চুক্তি ছিল জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতির চূড়ান্ত উদাহরণ। এর ফলে –

  • জার্মান তোষণ আরও বৃদ্ধি পায়।
  • এতে শঙ্কিত হয়ে রাশিয়া জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
  • হিটলারের বিশ্বগ্রাসের খিদে আরও বেড়ে যায়।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে এবং কত বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

1939 খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তি 10 বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (1939) স্বাক্ষরিত হয় কী উদ্দেশ্যে?

  • রাশিয়ার উদ্দেশ্য – রাশিয়ার ধারণা ছিল যে, জার্মানি একসময় রাশিয়াকে আক্রমণ করবে। তাই রাশিয়া এই চুক্তি স্বাক্ষর করে নিজেকে প্রস্তুত করতে চেয়েছিল।
  • জার্মানির উদ্দেশ্য – জার্মানি আসন্ন পোল্যান্ড আক্রমণের সময় নিশ্চিত হতে চেয়েছিল যে, রাশিয়া তাদের আক্রমণ করবে না।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্ত কী ছিল?

১৯৩৯ সালের ২৩ আগস্ট রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপের মধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্তগুলো ছিল –

  • আগামী 10 বছর জার্মানি ও রাশিয়া কেউ কাউকে আক্রমণ করবে না।
  • জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে কেউ কোনো তৃতীয় পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা কেউ তৃতীয় পক্ষকে সাহায্য করবে না।
  • উভয় রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে নেবে।

ইস্পাতের চুক্তি (Steel Pact) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৩৯ সালে হিটলার জার্মানির কূটনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে অগ্রসর হন। তিনি উপলব্ধি করেন পোল্যান্ডের সঙ্গে ইঙ্গ-ফরাসি সম্পর্ক স্থবির অবস্থায় রয়েছে। চাপ সৃষ্টি করে পোল্যান্ডকে নিয়ে নতুন বোঝাপড়া অসম্ভব। তাই জার্মানি ও ইটালির মধ্যে ১৯৩৯ সালের মে মাসে ‘ইস্পাতের চুক্তি’ (Steel Pact) স্বাক্ষরিত হয়।

আশ্চর্যজনক নিষ্কৃতি (A Miracle of Deliverance) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন 1940 সালের মাঝামাঝি হিটলারের আক্রমণের চাপে প্রায় ৩ লাখ ইঙ্গ-ফরাসি সেনা ফ্রান্সের ডানকার্ক বন্দরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মিত্রপক্ষের এক বিশাল নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রহরায় এই অবরুদ্ধ সেনাদলকে নিরাপদে ইংলিশ চ্যানেল পার করে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনা হয়। এই ঘটনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ‘আশ্চর্যজনক নিষ্কৃতি’ বলে অভিহিত করেন।

অপারেশন বারবারোসা কী?

হিটলারের রাশিয়া অভিযানের (1941 খ্রি.) সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন বারবারোসা’। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনী বিশাল সেনাবাহিনী এবং শক্তিশালী স্থল ও বিমানবাহিনীর সাহায্যে এই রাশিয়া অভিযান তথা ‘অপারেশন বারবারোসা’ শুরু করে।

হিটলার কেন পোল্যান্ড আক্রমণ করেন?

মিউনিখ চুক্তি (1938 খ্রি.) স্বাক্ষরের পর হিটলার ডানজিগ বন্দর ব্যবহার এবং সেখানে পৌঁছানোর জন্য পোল্যান্ডের কাছে একটি করিডর (পোলিশ করিডর) দাবি করেন। পোল্যান্ড সেই দাবি পূরণে অসম্মত হয় বলে হিটলার 1939 সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।

শ্বেত অভিযান কী?

হিটলার ডানজিগ বন্দরে পৌঁছানোর জন্য পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে একটি সংযোগকারী পথ (পোলিশ করিডর) দাবি করেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে পোল্যান্ড হিটলারের দাবি মানতে অস্বীকার করে। এর ফলে ক্ষুব্ধ হিটলার পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে অভিযান করেছিলেন সেটাই শ্বেত অভিযান (Operation White) নামে পরিচিত।

ভুতুড়ে যুদ্ধ বা Phony War বা টেলিফোনে যুদ্ধ কী?

1939 সালের সেপ্টেম্বরে জার্মান কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের সময় থেকে ফ্রান্স আক্রমণ পর্যন্ত সময়ে (মে, 1940 খ্রি.) ইঙ্গ-ফরাসি মিত্রশক্তি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। এই কারণে এই সময়কালের যুদ্ধকে উইনস্টন চার্চিল ‘ভুতুড়ে যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

তোষণনীতি বলতে কী বোঝো?

জার্মানির একনায়কতন্ত্রী নেতা হিটলারের নানাবিধ শান্তি বিঘ্নকারী কাজকর্মে বাধা প্রদান না করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাঁকে সন্তুষ্ট করার যে নীতি গ্রহণ করেছিল, তা তোষণনীতি নামে পরিচিত। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কাছে নাৎসিবাদ অপেক্ষা সমাজতন্ত্রবাদই বেশি বিপজ্জনক বলে প্রতিপন্ন হয়েছিল। হিটলার ছিলেন সাম্যবাদের প্রধান শত্রু। তাই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের মাধ্যমে সাম্যবাদকে রোধ করতে চেয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে হিটলারের সাহস বৃদ্ধি পায় ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ইটালি ও জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি গ্রহণের কারণ কী?

ব্রিটেন ও ফ্রান্স মনে করত যে, ভার্সাই সন্ধিতে ইটালি ও জার্মানির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তাই বিশ্বশান্তি রক্ষার তাগিদে ইটালি ও জার্মানির দাবি কিছুটা মেনে নিলে অন্যায় হবে না। তা ছাড়া জার্মানি ধীরে ধীরে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। তাতে ইউরোপে শান্তি বজায় থাকবে। এই আশার বশবর্তী হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তোষণনীতি গ্রহণ করেছিল।

জাপানে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

হিটলার ও মুসোলিনির নেতৃত্বে জার্মানি ও ইটালিতে যখন একনায়কতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সময় এশিয়ায় নতুন শক্তি হিসেবে জাপানের ক্রমশ আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সময় জাপানের সামরিক বাহিনী জাপানি রাজনীতিতে ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে। জাপানের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী তানাকা জাপানের সম্রাটের কাছে ঘোষণা করেন যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধনীতি গ্রহণ অপরিহার্য। এইভাবে জাপানি রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও জঙ্গি কার্যকলাপের উত্থান লক্ষ করা যায়।

তানাকা মেমোরিয়াল কী?

জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। 1927 সালে এক স্মারকপত্রে তিনি জাপান সম্রাটকে পরামর্শ দেন যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য জাপানের যুদ্ধনীতি গ্রহণ অপরিহার্য এবং মাঞ্চুরিয়া ও মঙ্গোলিয়া দখল করা প্রয়োজন। এইভাবে জাপানিদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটানোর জন্য তানাকার এই প্রচেষ্টাই ‘তানাকা মেমোরিয়াল’ নামে পরিচিত।

জাপান কবে ও কেন মাঞ্চুরিয়া দখল করে?

জাপান 1931 সালের 18 সেপ্টেম্বর চীনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলে আক্রমণ করে এবং এই অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এই পদক্ষেপের পেছনে জাপানের ছিল মূলত তিনটি কারণ –

  • বাড়তি জনসংখ্যার জন্য নতুন বাসস্থান খোঁজা।
  • শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহের প্রয়োজন।
  • নতুন বাজারের খোঁজে।

জাপান কেন লিগ অফ নেশনস পরিত্যাগ করে?

জাপান 1931 সালে মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে, যা লিগ অফ নেশনসের চার্টারের বিরুদ্ধে ছিল। লিগ অফ নেশনসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপানকে ‘আক্রমণকারী দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এর পর, ক্ষুব্ধ হয়ে জাপান 1933 সালের 27 মার্চ লিগ অফ নেশনসের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

জাতিসংঘের পতনের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

  • কাঠামোগত ত্রুটি – অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র জাতিসংঘের সদস্য ছিল না এবং কিছু দেশ সদস্যপদ ত্যাগ করেছে।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ – 1939 সালে শুরু হওয়া যুদ্ধের কারণে জাতিসংঘের কার্যক্রমে বাধা পড়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান দুটি কারণ হল –

  • ভার্সাই সন্ধির গ্লানি – প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির বিরুদ্ধে আরোপিত শর্তাবলী ও শাস্তির প্রতি ক্ষোভ।
  • হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ – 1939 সালের 1 সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্ব কীভাবে অনেকগুলি আদর্শগত শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্ব বিভিন্ন আদর্শগত শিবিরে বিভক্ত ছিল –

  • সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া, যা সম্পত্তির অধিকার এবং মালিকের মুনাফা সম্পর্কে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রাখে।
  • পশ্চিমী গণতান্ত্রিক দেশগুলি, যা পুঁজিবাদী ছিল এবং সোভিয়েত রাশিয়ার আদর্শের বিরোধী।
  • ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি আদর্শের দেশগুলো, যেমন জার্মানি ও ইতালি, যা একনায়কতন্ত্রের সমর্থক ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ। 1939 সালের 1 সেপ্টেম্বর, পোল্যান্ডের ডানজিগ বন্দর এবং পোলিশ করিডরের দাবিতে পোল্যান্ড আক্রমণ করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরস্পরবিরোধী দুটি শক্তিজোটের নাম কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান শক্তিজোট ছিল –

  • অক্ষশক্তি – ইতালি, জার্মানি ও জাপান।
  • মিত্রশক্তি – ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির নাম লেখো।

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলো হল – ইতালি, জার্মানি ও জাপান। এই জোট ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি’ নামে পরিচিত ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কোন্ কোন্ দেশ নিয়ে মিত্রশক্তি গঠিত হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে মিত্রশক্তি গঠিত হয়েছিল প্রধানত – ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলির মধ্যে সংঘটিত সম্মেলন ও বৈঠকগুলি কেন অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলির মধ্যে বৈঠক ও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল –

  • নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করার জন্য।
  • পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য।
  • যুদ্ধের পর বিশ্ব পুনর্গঠন সম্পর্কে পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে –

  • ইউরোপ
  • উত্তর আফ্রিকা
  • দূরপ্রাচ্য
  • প্রশান্ত মহাসাগর
  • আটলান্টিক মহাসাগর
  • ভূমধ্যসাগর

হিটলার কেন রাশিয়া আক্রমণ করেন?

হিটলার 1941 সালের 22 জুন Operation Barbarossa নামে পরিচিত অভিযান শুরু করে রাশিয়াকে আক্রমণ করেন। এর কারণ ছিল –

  • পূর্বদিকে জার্মানির বিস্তারনীতির অংশ হিসেবে রাশিয়াকে আক্রমণ।
  • ইউক্রেনের কৃষি ক্ষেত্র এবং বাকুর তেল ক্ষেত্রগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন।
  • দার্দানেলিস প্রণালীর উপর রুশ নৌ-আধিপত্য রোধ করার প্রচেষ্টা।

স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধ কেন বিখ্যাত?

হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে রাশিয়া আক্রমণ করে এবং লেনিনগ্রাদ অবরোধ করলেও, রাশিয়ার লাল ফৌজের “পোড়ামাটি নীতি”র কারণে হিটলার তথা জার্মান বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। প্রচণ্ড শীত এবং লাল ফৌজের গেরিলা আক্রমণের কারণে 1942 সালে লেনিনগ্রাদ মুক্ত হয় এবং স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে 1943 সালের জানুয়ারিতে হিটলার ও তার জার্মান বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে। স্ট্যালিনগ্রাদের যুদ্ধ ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়।

ভিচি সরকার কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন, 1940 সালের শেষদিকে জার্মানি ফ্রান্স দখল করে। এরপর জার্মানি ফ্রান্সের ভিচি শহরে একটি তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করে, যেটি “ভিচি সরকার” নামে পরিচিত। এই সরকারটি মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর নেতৃত্বে গঠিত হয় এবং এটি জার্মানির সমর্থনে পরিচালিত হয়েছিল।

ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি নীতি কী?

1939 সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করার নীতি গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিকে “ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি” নীতি বলা হয়, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হয়েও মিত্রশক্তিকে সহায়তা করছিল।

লেন্ড লিজ আইন কী?

1941 সালের মার্চ মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ‘লেন্ড লিজ আইন’ নামে একটি আইন পাস করেন। এই আইনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তিবর্গকে যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করতে শুরু করে। এটি মিত্রশক্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হয়ে দাঁড়ায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় সাহায্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ ছিল।

হপকিনস্ দৌত্য বলতে কী বোঝায়?

মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট আশঙ্কা করেছিলেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি জার্মানির কাছে পরাজিত হয়, তাহলে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা সংকটাপন্ন হবে। এই কারণে রুজভেল্টের ব্যক্তিগত দূত হ্যারি হপকিনস্ মস্কোতে যান এবং সোভিয়েত নেতা স্ট্যালিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে যুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। এই মিশনটি “হপকিনস্ দৌত্য” নামে পরিচিত।

কেন্নান নোট কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ কেন্নান সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক নীতি গ্রহণের প্রস্তাব করে একটি দীর্ঘ টেলিগ্রাম পাঠান। এই টেলিগ্রামটি “কেন্নান নোট” নামে পরিচিত এবং এটি সোভিয়েত বিরোধী নীতির সূচনা হিসেবে দেখা হয়।

বেষ্টনী নীতি (Policy of Containment) কী?

বেষ্টনী নীতির প্রবক্তা ছিলেন মার্কিন কূটনীতিবিদ জর্জ এফ কেন্নান। 1947 সালে তিনি Mr. X ছদ্মনামে “Foreign Affairs” পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লেখেন, যেখানে তিনি সাম্যবাদের অগ্রগতি প্রতিহত করতে সোভিয়েত রাশিয়াকে তার দখলকৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেন। এই নীতিটি “বেষ্টনী নীতি” বা “Policy of Containment” নামে পরিচিত।

পার্ল হারবার ঘটনা কী?

1941 সালের 7 ডিসেম্বর জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে অবস্থিত মার্কিন নৌঘাঁটিতে আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মার্কিন নৌবাহিনীর বড় ধরনের ক্ষতি হয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে প্রবেশ করে। এই ঘটনাটি “পার্ল হারবার ঘটনা” নামে পরিচিত।

জাপান কেন পার্ল হারবার আক্রমণ করেছিল?

জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছিল। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের এই আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা করেছিল। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করে, যা জাপানের জন্য আর্থিক ও কৌশলগতভাবে ক্ষতিকর ছিল। এই কারণে, প্রতিশোধ হিসেবে, জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে।

আমেরিকা কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়?

অথবা, কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রাচ্য ভূখণ্ডে সম্প্রসারিত হয়?

1941 সালে জাপান আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে, আমেরিকা চিন ও ইন্দোচিন থেকে জাপানি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। জাপান এই প্রস্তাবে সম্মতি না দিলে আলোচনা শুরু হয়। 1941 সালের 7 ডিসেম্বর, জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মার্কিন নৌ-ঘাঁটি পার্ল হারবার আক্রমণ করে। এর ফলশ্রুতিতে 8 ডিসেম্বর আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়। এভাবেই প্রাচ্য ভূখণ্ডে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়।

ডি ডে (D Day) বলতে কী বোঝায়?

1940 সালে জার্মানির কাছে ফ্রান্স পরাজিত হলে, 1944 সালের 6 জুন মিত্রপক্ষের সৈন্যবাহিনী ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডিতে অবতরণ করে। এই অভিযানের মাধ্যমে ফ্রান্সে জার্মানদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটি ‘ডি ডে’ (D Day) বা মুক্তি দিবস নামে খ্যাত।

ভি ই ডে (V E Day) বা বিজয় দিবস বলতে কী বোঝায়?

1945 সালের 30 এপ্রিল হিটলারের মৃত্যুর পর, 7 মে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর পরদিন, 8 মে ইউরোপে ‘বিজয় দিবস’ বা ভি ই ডে (Victory in Europe Day) পালিত হয়, যা ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি নির্দেশ করে।

পোটসডাম সম্মেলন কবে, কাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়?

1945 সালের জুলাই মাসে জার্মানির আত্মসমর্পণের পর বার্লিনের পোটসডাম শহরে মিত্রশক্তির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা ‘পোটসডাম সম্মেলন’ নামে পরিচিত। এই সম্মেলনে রাশিয়ার নেতা স্ট্যালিন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান এবং ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি উপস্থিত ছিলেন।

পোটসডাম সম্মেলনে কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?

পোটসডাম সম্মেলনে গৃহীত প্রধান সিদ্ধান্তগুলি ছিল –

  • জার্মানির থেকে নাৎসি প্রভাব সম্পূর্ণরূপে দূর করা।
  • আন্তর্জাতিক আদালতে জার্মান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা।
  • জার্মানিকে সামরিকভাবে নিরস্ত্র করা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের পতন কীভাবে হয়?

1943 সালে মিত্রশক্তি রোম দখল করলে ইটালির পতন ঘটে। 1945 সালে রাশিয়ার লাল ফৌজ বার্লিন দখল করলে জার্মানির পতন হয়। একই বছর, আমেরিকা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করলে জাপানের পতন ঘটে।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান কীভাবে হয়?

1945 সালের এপ্রিল মাসে রাশিয়ার লাল ফৌজ বার্লিন দখল করার পর 7 মে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর মধ্য দিয়ে ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে। এর ফলে জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এভাবেই 1945 সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (1939-1945) দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল –

  • দ্বি-মেরু বিশ্বের উদ্ভব যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়।
  • বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি কৌশলগত পরিবর্তন লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে –

  • পারমাণবিক বোমা প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল।
  • রেডিও এবং পুস্তিকার মাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি যুদ্ধাস্ত্রের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি প্রধান যুদ্ধাস্ত্র ছিল – ট্যাংক, বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ট্যাংক ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র, এবং মারণ গ্যাস। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত সবচেয়ে প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র ছিল পারমাণবিক বোমা।

ব্লিৎজ ক্রিগ (Blitzkrieg) বলতে কী বোঝো?

1939 সালে জার্মানির প্রচুর সৈন্য থাকলেও, অস্ত্রশস্ত্রের পরিমাণ তুলনামূলক কম ছিল। তাই হিটলার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিবর্তে দ্রুতগতির ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। এই দ্রুতগতির যুদ্ধকৌশলকে ‘ব্লিৎজ ক্রিগ’ (Blitzkrieg) বলা হয়, যা 1941 সালের জুন মাস পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে প্রয়োগ করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শক্তি ও মর্যাদার পরিবর্তন কীভাবে ঘটে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইতালির শক্তি ও গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়, এবং সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি, মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের দুটি কারণ লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের উল্লেখযোগ্য দুটি কারণ হল –

  • অক্ষশক্তির কাছে পর্যাপ্ত যুদ্ধ সরঞ্জাম ও রসদের অভাব ছিল।
  • অক্ষশক্তি জনমত ও বিশ্ববাসীর সহানুভূতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ তারা আগ্রাসী ও দমনমূলক ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন কোন দেশ উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রবাদের সমর্থক ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবাদের সমর্থক দেশগুলি ছিল ইতালি, জার্মানি ও জাপান। অন্যদিকে, গণতন্ত্রবাদের সমর্থক দেশগুলি ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয়ী শক্তির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির বিজয় সত্ত্বেও, তাদের অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। যুদ্ধের পর মানবসম্পদ, শিল্প-বাণিজ্য এবং জাতীয় সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো বিজয়ী শক্তির অর্থনৈতিক কাঠামো প্রায় ভেঙে পড়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি রাজনৈতিক প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাব হল –

  • গণতান্ত্রিক আদর্শ বিশ্বের অনেক দেশে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
  • সোভিয়েত রাশিয়ায় সাম্যবাদের প্রসার ঘটে এবং এর ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি অর্থনৈতিক প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাব হল –

  • যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেক দেশে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন শুরু হয়।

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?

জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি চেতনা, যেখানে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী মানুষেরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা ও সংস্কৃতি নির্বিশেষে বৃহত্তর স্বার্থে এবং জাতীয় লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়। একাত্মবোধ এবং সমন্বয়ের এই চেতনা-ই জাতীয়তাবাদ হিসেবে পরিচিত।

উগ্র জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?

যে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার পরিবর্তে জাতিবিদ্বেষ, সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের মতো শোষণমূলক ধারণা প্রচার করে, তাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবাদের মূলে কোন কোন তত্ত্ব সক্রিয় ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, ইতালি ও জাপানের উগ্র জাতীয়তাবাদ সক্রিয় ছিল। জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদের মূলে ছিল হেরেনভলক তত্ত্ব, ইতালির উগ্র জাতীয়তাবাদ মুসোলিনির ফ্যাসিবাদ দ্বারা প্রভাবিত ছিল, এবং জাপানের উগ্র জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ছিল সামরিক সম্প্রসারণ নীতি।

আন্তর্জাতিকতাবাদ কী?

আন্তর্জাতিকতাবাদ হলো এমন একটি আদর্শ, যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জাতি নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ ও গণ্ডি অতিক্রম করে বৃহত্তর বিশ্বমানবতার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে। এটি বিশ্ব সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি চেতনা।

ঠান্ডা লড়াই কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্বের প্রধান রাষ্ট্রসমূহ পরস্পরবিরোধী দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট এবং অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট। এই দুই জোটের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ না হলেও, সবসময় যুদ্ধের মতো উত্তেজনা বিরাজ করত। এই আদর্শগত সংঘাতকে ঠান্ডা লড়াই (Cold War) বলা হয়।

দ্বি-মেরুকরণ (Bi-polarism) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, বিশ্ব রাজনীতি দুটি প্রধান শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোট এবং অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী রাষ্ট্রজোট। এই দুই মেরুতে বিভক্ত বিশ্বব্যবস্থাকে দ্বি-মেরুকরণ বলা হয়।

ট্রুম্যান নীতি কী?

1947 সালের 12 মার্চ মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে ঘোষণা করেন যে, যেসব জাতি কমিউনিস্ট আক্রমণ অথবা বিদেশি আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে, তাদের আমেরিকা সমর্থন ও সাহায্য করবে। এই নীতিই ট্রুম্যান নীতি (Truman Doctrine) নামে পরিচিত।

মার্শাল পরিকল্পনা কী?

1947 সালের 5 জুন, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জর্জ সি. মার্শাল পশ্চিম ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে ইউরোপে সাম্যবাদের প্রসার রোধ করা হবে। এই পরিকল্পনাটি মার্শাল পরিকল্পনা (Marshall Plan) নামে পরিচিত।

আনরা (UNRRA) বা জাতিপুঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন কী?

ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে 1943 সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত হয় ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (UNRRA)। এটি 1944 সালে কার্যক্রম শুরু করে এবং 1948 সালের সেপ্টেম্বরে এর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।

ফুলটন বক্তৃতা বা লৌহ যবনিকা তত্ত্ব কী?

1946 সালে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরির ফুলটন শহরে ওয়েস্ট মিনিস্টার কলেজে প্রদত্ত বক্তৃতায় সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করেন। তিনি ইউরোপে রুশ প্রভাব প্রতিরোধে আমেরিকা ও ব্রিটেনের মধ্যে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এই বক্তৃতাটি লৌহ যবনিকা তত্ত্ব (Iron Curtain Theory) নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি জোটের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জোট ছিল –

  • 1949 সালে স্বাক্ষরিত ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ন্যাটো (NATO),
  • 1954 সালে স্বাক্ষরিত ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ বা সিয়াটো (SEATO),
  • 1955 সালে স্বাক্ষরিত ‘মধ্যপ্রাচ্য চুক্তি সংস্থা’ বা সেন্টো (CENTO)।

ন্যাটো (NATO) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী রাশিয়ার বিস্তার ঠেকাতে আমেরিকার নেতৃত্বে তার মিত্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে 1949 সালের এপ্রিল মাসে গঠিত হয় ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ন্যাটো (NATO)। এই জোটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম ইউরোপকে সোভিয়েত প্রভাব থেকে রক্ষা করা। সদস্য দেশগুলির মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা প্রভৃতি।

SEATO কবে, কাদের মধ্যে এবং কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়?

1954 সালে আমেরিকার নেতৃত্বে ম্যানিলায় South East Asia Treaty Organisation (SEATO) গঠিত হয়।

কমিউনিস্ট চীনকে প্রতিহত করা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমিউনিস্ট বিস্তার রোধের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনসহ মোট ৮টি দেশ এই জোটে অংশগ্রহণ করে। মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিকে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল SEATO-র মূল লক্ষ্য।

CENTO কী?

মধ্যপ্রাচ্যে সোভিয়েত প্রভাব ঠেকানোর জন্য 1955 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইরাক, ইরান, তুরস্ক এবং পাকিস্তানের সমন্বয়ে ‘মধ্যপ্রাচ্য চুক্তি সংস্থা’ বা ‘সেন্টো’ (CENTO) গঠিত হয়। ইরাকের বাগদাদে এটির সদর দপ্তর ছিল। 1958 সালে ইরাক এই জোট থেকে বেরিয়ে গেলে এর নাম বদলে ‘সেন্টো’ করা হয় এবং সদর দপ্তর আঙ্কারায় স্থানান্তরিত করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি জোটের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জোট ছিল –

  • ওয়ারশ চুক্তি,
  • কমেকন,
  • কমিনফর্ম।

ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলির নাম লেখো।

ন্যাটোর পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে 1955 সালে রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের সাম্যবাদী দেশগুলিকে নিয়ে একটি সামরিক জোট গঠন করে, যার নাম ‘ওয়ারশ চুক্তি’ (Warsaw Pact)। এই জোটের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া এবং চেকোস্লোভাকিয়া।

কমেকন (COMECON) কী?

মার্শাল পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে নিয়ে 1949 সালের জানুয়ারিতে Council for Mutual Economic Assistance (COMECON) গঠন করে। এই সংস্থা পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পুনর্গঠনের জন্য তৈরি হয়েছিল। এর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ছিল সোভিয়েত রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোস্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া এবং পূর্ব জার্মানি।

কমিনফর্ম (COMINFORM) কী?

ইউরোপে আমেরিকার নেতৃত্বে কমিউনিস্ট বিরোধী প্রচেষ্টার জবাবে সোভিয়েত রাশিয়া তার অনুগামী কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে 1947 সালের সেপ্টেম্বরে Communist Information Bureau বা ‘কমিনফর্ম’ (Cominform) গঠন করে। পূর্ব ইউরোপের সাম্যবাদী ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোই ছিল এর প্রধান উদ্দেশ্য। এর সদর দপ্তর ছিল বেলগ্রেডে।

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?

স্বাধীনতা লাভের পর ভারত আমেরিকা ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন কোনো জোটশক্তিতে যোগ না দিয়ে উভয় গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কথা ঘোষণা করে। এই নীতি ‘জোট নিরপেক্ষ নীতি’ নামে পরিচিত। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এই নীতির প্রধান প্রবক্তা এবং রূপকার ছিলেন।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ইতিহাসের ষষ্ঠ অধ্যায়, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর’ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির পরীক্ষার প্রস্তুতি বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এগুলো প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তবে টেলিগ্রামে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন