নবম শ্রেণী – ইতিহাস – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও তারপর – সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন

Diptesh Khamaru

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৪৫ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধে বিশ্বের প্রায় সব দেশ জড়িত ছিল। যুদ্ধের ফলে প্রায় ৬ কোটি মানুষ প্রাণ হারায় এবং বিশ্বের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে।

Table of Contents

নবম-শ্রেণী-ইতিহাস-দ্বিতীয়-বিশ্বযুদ্ধ-ও-তারপর 1

ফ্যাসিবাদী আদর্শ বলতে কী বোঝো?

ফ্যাসিবাদী আদর্শ বলতে বোঝায় এক ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী, জাতিবিদ্বেষী, আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত একদলীয়, একনায়কতন্ত্রী শাসনব্যবস্থা এবং এক সর্বনিয়ন্ত্রণবাদী মতবাদকে।

ইটালিতে ফ্যাসিস্ট দলের লক্ষ্য কী ছিল?

মুসোলিনির নেতৃত্বে ইটালিতে ফ্যাসিস্ট দল ক্ষমতা লাভ করে। একনায়কতন্ত্রী এই দলের লক্ষ্য ছিল-

  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইটালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
  • রাষ্ট্রকে সর্বময় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা।
  • কমিউনিস্ট প্রভাব থেকে ইটালিকে রক্ষা করা প্রভৃতি।

মুসোলিনির বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

ইটালির ফ্যাসিস্ট শাসক মুসোলিনির বিদেশনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল –

  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধবিগ্রহ ও জঙ্গিনীতি গ্রহণ করে ফ্যাসিস্ট শাসনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।
  • যুদ্ধবিগ্রহ চালু রেখে বেকার যুবকদের বিভিন্ন সামরিক কাজে নিযুক্তির দ্বারা কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা।
  • আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইটালির মর্যাদা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।

মুসোলিনি তাঁর সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য কী কী সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন?

মুসোলিনি তাঁর সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য যে সব সামরিক অভিযান চালিয়েছিলেন, সেগুলি হল- 1. আবিসিনিয়া আক্রমণ এবং 2. আলবেনিয়া আক্রমণ।

ইটালি কেন আবিসিনিয়া দখল করে?

পূর্ব আফ্রিকার আবিসিনিয়ার উপর দীর্ঘকাল থেকেই ইটালির নজর ছিল। কারণ আবিসিনিয়া দখল করতে পারলে- 1. উদবৃত্ত জনসংখ্যার স্থান সংকুলান, 2. ইটালির প্রয়োজনীয় কাঁচামালের উৎস ও পণ্যের বাজার তৈরি, 3. ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে অ্যাডোয়ার যুদ্ধে আবিসিনিয়ার কাছে পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ ইত্যাদি আরও অনেক উদ্দেশ্য সাধিত হত। তাই ইটালি আবিসিনিয়া আক্রমণ ও দখল করে।

ওয়াল ওয়াল ঘটনা কী?

ওয়াল ওয়াল হল আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত আবিসিনিয়ার সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম। তার পাশে সোমালিল্যান্ড ইটালির অধিকারে ছিল। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর সোমালিল্যান্ড ও আবিসিনিয়ার সীমান্তে অবস্থিত ওয়াল ওয়াল গ্রামে দুপক্ষের সেনাবাহিনীর মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ হয়। এই ঘটনাকে ‘ওয়াল ওয়াল ঘটনা’ বলা হয়। এই ঘটনার অজুহাতে হিটলার আবিসিনিয়ার সম্রাট হেইলে সেলাসিকে চরমপত্র দেন এবং ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ইটালি আবিসিনিয়া দখল করে নেয়।

ইটালি কেন জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল?

মুসোলিনি আবিসিনিয়া আক্রমণ করলে (১৯৩৪ খ্রি.) আবিসিনিয়ার সম্রাট জাতিসংঘের কাছে প্রতিবাদ জানায়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘ ইটালির বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করলে ইটালি জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

ল্যাটেরান চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে ও কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ল্যাটেরান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

মুসোলিনি ও পোপের মধ্যে ল্যাটেরান চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

ল্যাটেরান চুক্তির শর্ত কী ছিল?

মুসোলিনি ও পোপের মধ্যে স্বাক্ষরিত ল্যাটেরান চুক্তির শর্ত ছিল –

  • রোমান ক্যাথলিক ধর্ম ইটালির রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হবে।
  • রোমের ভ্যাটিকান নগরী সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবে। পোপ স্বাধীন রাজার মতো ‘পবিত্র’ ও ‘আইন বহির্ভূত’ বলে স্বীকৃত হবেন এবং তিনি যাজক নিয়োগের অধিকার পান।

হোর-লাভাল চুক্তি কাদের মধ্যে ও কত খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়?

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্যামুয়েল হোর ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিয়ের লাভাল ইটালির সঙ্গে এক গোপন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এই চুক্তি’ ‘হোর-লাভাল চুক্তি’ নামে পরিচিত।

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর হোর-লাভাল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

হোর-লাভাল গোপন চুক্তির (১৯৩৫ খ্রি.) শর্ত কী ছিল?

হোর-লাভাল চুক্তির শর্ত ছিল –

  • ইটালি আবিসিনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড লাভ করবে।
  • আবিসিনিয়ার স্বাধীন অস্তিত্ব বজায় থাকবে।
  • আবিসিনিয়াকে সমুদ্রে যোগাযোগের জন্য ইরিত্রিয়ার কিছু অংশ দেওয়া হবে।

ইটালি কেন স্পেনের গৃহযুদ্ধতে সাহায্যদান করেছিল?

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে পপুলার ফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে জেনারেল ফ্রাঙ্কো বিদ্রোহ ঘোষণা করলে মুসোলিনি ফ্রাঙ্কোর সমর্থনে প্রায় কয়েক লক্ষ সেনা প্রেরণ করেন। স্পেনে ইটালির মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি, ফ্রান্সকে ঘিরে রাখা এবং সর্বোপরি স্পেনে সাম্যবাদের গতিরোধ করার জন্য ইটালি স্পেনীয় গৃহযুদ্ধে সাহায্য দান করেছিল।

মুসোলিনি কীভাবে গ্রিসের কারফু দ্বীপ দখল করেছিলেন?

মুসোলিনি লন্ডনের চুক্তি (১৯১৫ খ্রি.) অনুযায়ী রোডস ও দেদাকেনিজ দ্বীপগুলি গ্রিসের কাছ থেকে ফিরে পেতে তৎপর হন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ল্যাসেনের চুক্তিতে মুসোলিনি এই অঞ্চলগুলি লাভ করেন। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে গ্রিস-আলবেনিয়া সীমান্ত নির্ধারক কমিশনে কার্যরত ইতালীয় প্রতিনিধির হত্যার অজুহাতে মুসোলিনি গ্রিসের কারফু দ্বীপ দখল করেন।

জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

জার্মানির একনায়কতন্ত্রী শাসক অ্যাডলফ হিটলার মনে করতেন, জার্মান জাতি বিশ্বের একমাত্র আর্য জাতি। জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা; ভার্সাই ও সেন্ট জার্মেইন-এর চুক্তি বাতিল করে জার্মানিকে অপমানের হাত থেকে মুক্তি দেওয়া এবং সর্বোপরি বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রে বসবাসকারী জার্মান ভাষাভাষী মানুষদের নিয়ে এক বৃহত্তর জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করা- এই ছিল হিটলারের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্যে হিটলার হেরেনভক তত্ত্ব প্রচার করেন, যা জার্মানিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছিল।

হিটলারের বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে হিটলারের বিদেশনীতির লক্ষ্য ছিল –

  • ভার্সাই সন্ধি বাতিল করা এবং ভার্সাই সন্ধির অপমানের প্রতিশোধ নেওয়া।
  • যুদ্ধনীতির মাধ্যমে জার্মানির ভৌগোলিক সম্প্রসারণ ঘটানো।
  • জার্মানিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
  • সাম্যবাদের ধ্বংস করা প্রভৃতি।

আনব্লুজ কী?

হিটলারের বিদেশনীতির অন্যতম নীতি ছিল আনমুজ নীতি। ইউরোপে বিভিন্ন জায়গায় বসবাসকারী জার্মানদের জাতীয়তাবাদের স্বার্থে একত্রিত করার ক্ষেত্রে হিটলারের গৃহীত নীতি ‘আনব্লুজ’ নামে পরিচিত। হিটলার জার্মান জাতির ঐক্যস্থাপনের উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়াকে জার্মানির সাথে যুক্ত করার জন্য আনমুজ নীতি গ্রহণ করেছিলেন (১৯৩৮ খ্রি.)।

হিটলার কেন নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ত্যাগ করেছিলেন?

জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে জেনেভাতে নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্র জার্মানিকে অস্ত্র কমানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। বৈঠকে মতবিরোধ হওয়ায় হিটলার নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন ত্যাগ করেন।

জার্মানি কেন জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল?

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে বিশ্ব নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল। এই সম্মেলনে জার্মানির প্রস্তাব ছিল হয় জার্মানিকে ফ্রান্সের সমান সামরিক শক্তি বৃদ্ধির অনুমতি দেওয়া হোক নয়তো ফ্রান্সের সামরিক শক্তি জার্মানির সমান করা হোক। কিন্তু জার্মানির এই প্রস্তাব নাকচ হলে জার্মানির প্রতিনিধিরা সম্মেলন ত্যাগ করে। এর কয়েকদিন পর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর জার্মানি জাতিসংঘের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তির মেয়াদ কত বছর ধার্য হয়েছিল?

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি ১০ বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির গুরুত্ব কী ছিল?

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তা ‘পোল-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি’ নামে পরিচিত। এই চুক্তির গুরুত্ব হল, এর ফলে –

  • পোল্যান্ড সম্ভাব্য জার্মান আক্রমণের আশঙ্কা থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
  • পোল্যান্ড জার্মানির কাছ থেকে অনাক্রমণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ফ্রান্সের উপর নির্ভরশীলতা ত্যাগ করেছিল।
  • পোল্যান্ড রাশিয়ার বিরুদ্ধে সুদৃঢ় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করেছিল।

স্ট্রেসা সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জার্মানি ভার্সাই চুক্তির সামরিক শর্ত অগ্রাহ্য করার ফলে ইউরোপের কুটনৈতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল ভার্সাই চুক্তির করলে উত্তর ইটালির স্ট্রেসাতে ম্যাকডোনাল্ড, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ফ্লানদিন ও ইটালির মুসোলিনি একত্রে মিলিত হয়ে ইউরোপের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে নিজ নিজ অভিমত ব্যক্ত করেন। তারা মিলিতভাবে জার্মানির আচরণের নিন্দা। করেন এবং জার্মানি সন্ধির শর্ত ভাঙলে তা সহ্য না করার সংকল্প নেন। এটি ছিল মিত্রশক্তির সংহতি বজায় রাখার শেষ প্রয়াস।

ইঙ্গ-জার্মান নৌ-চুক্তির গুরুত্ব কী ছিল?

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের সঙ্গে জার্মানির নৌ-চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির গুরুত্ব হল –

  • এর ফলে জার্মানি ব্রিটেনের সহানুভূতি অর্জন করে।
  • জার্মানি ব্রিটিশ নৌশক্তির ৩৫% পর্যন্ত নৌশক্তি বৃদ্ধি করার স্বীকৃতি লাভ করে।
  • জার্মানি ইউরোপে ফ্রান্সকে মিত্রহীন করে চাপে রাখার কৌশলে আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।

কবে, কাদের মধ্যে কেন অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে জাপান ও জার্মানির মধ্যে অ্যান্টি-কমিন্টার্ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইটালিও এই চুক্তিতে যোগদান করে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল- সাম্যবাদ বা কমিউনিজমের বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি এবং রাশিয়ার সঙ্গে কোনোরকম সন্ধিতে আবদ্ধ না হবার সংকল্প গ্রহণ করা।

রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে এবং কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। হিটলার ও মুসোলিনির মধ্যে রোম-বার্লিন অক্ষচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

রোম-বার্লিন-টোকিও শক্তিজোট কত খ্রিস্টাব্দে সৃষ্টি হয়েছিল? কত খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির সংযুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছিল?

১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘রোম-বার্লিন-টোকিও শক্তিজোট’ সৃষ্টি হয়েছিল।

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির সংযুক্তি সম্পূর্ণ হয়েছিল।

মিউনিখ চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত হয়েছিল? মিউনিখ। চুক্তির ফলে হিটলার কোন অঞ্চল লাভ করেছিলেন?

১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মিউনিখ চুক্তির ফলে হিটলার চেকোশ্লোভাকিয়ার সুদেতান অঞ্চল লাভ করেছিলেন।

মিউনিখ চুক্তি কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

মিউনিখ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেন, ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী দালাদিয়ের, ইটালির মুসোলিনি এবং জার্মানির হিটলারের মধ্যে। এই চুক্তি মুসোলিনির উদ্যোগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

মিউনিখ চুক্তির (১৯৩৮ খ্রি.) তাৎপর্য উল্লেখ করো।

মিউনিখ চুক্তি ছিল জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতির চূড়ান্ত উদাহরণ। এর ফলে-

  • জার্মান তোষণ আরও বেড়ে যায়।
  • এতে শঙ্কিত হয়ে রাশিয়া জার্মানির সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে।
  • হিটলারের বিশ্বগ্রাসের খিদে আরও বেড়ে যায়।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি কত খ্রিস্টাব্দে এবং কত বছরের জন্য স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
১০ বছরের জন্য রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (১৯৩৯) স্বাক্ষরিত হয় কী উদ্দেশ্য নিয়ে?

রাশিয়ার উদ্দেশ্য- রাশিয়া সরকারের ধারণা ছিল যে, জার্মানি রাশিয়া আক্রমণ করবেই। এই চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়া নিজেকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিল।

জার্মানির উদ্দেশ্য- আসন্ন পোল্যান্ড আক্রমণের সময় রাশিয়া যাতে জার্মানিকে আক্রমণ না করে সে সম্পর্কে জার্মানি নিশ্চিত হতে চেয়েছিল।

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তির শর্ত কী ছিল?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ আগস্ট রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ ও জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেট্রপের মধ্যে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির শর্ত ছিল –

  • আগামী ১০ বছর জার্মানি ও রাশিয়া কেউ কাউকে আক্রমণ করবে না।
  • জার্মানি ও রাশিয়ার মধ্যে কেউ কোনো তৃতীয় পক্ষ দ্বারা আক্রান্ত হলে তারা কেউ তৃতীয় পক্ষকে সাহায্য করবে না।
  • উভয় রাষ্ট্র শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের বিবাদ মিটিয়ে নেবে।

ইস্পাতের চুক্তি (Steel Pact) কবে, কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার জার্মানির কূটনৈতিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে অগ্রসর হন। তিনি উপলব্ধি করেন পোল্যান্ডের সঙ্গে ইঙ্গ-ফরাসি সম্পর্ক স্থির বিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছে। চাপ সৃষ্টি করে পোল্যান্ডকে নিয়ে নতুন বোঝাপড়া অসম্ভব। তাই জার্মানি ও ইটালির মধ্যে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ‘ইস্পাতের চুক্তি’ (Steel Pact) স্বাক্ষরিত হয়।

আশ্চর্যজনক নিষ্কৃতি (a miracle of deliverance) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি হিটলারের আক্রমণের চাপে প্রায় ৩ লক্ষ ইঙ্গ-ফরাসি সেনা ফ্রান্সের ডানকার্ক বন্দরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মিত্রপক্ষের এক বিশাল নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর প্রহরায় এই অবরুদ্ধ সেনাদলকে নিরাপদে ইংলিশ চ্যানেল পার করে ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনা হয়। এই ঘটনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ‘আশ্চর্যজনক নিষ্কৃতি’ বলে অভিহিত করেছেন।

অপারেশন বারবারোসা কী?

হিটলারের রাশিয়া অভিযানের (১৯৪১ খ্রি.) সাংকেতিক নাম ছিল ‘অপারেশন বারবারোসা’। হিটলারের নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনী বিশাল সেনাবাহিনী এবং শক্তিশালী স্থল ও বিমানবাহিনীর সাহায্যে এই রাশিয়া অভিযান তথা ‘অপারেশন বারবারোসা’ শুরু করেন।

হিটলার কেন পোল্যান্ড আক্রমণ করেন?

মিউনিখ চুক্তি (১৯৩৮ খ্রি.) স্বাক্ষরের পর হিটলার ডানজিগ বন্দর ব্যবহার এবং সেখানে পৌঁছোনোর জন্য পোল্যান্ডের কাছে একটি করিডর (পোলিশ করিডর) দাবি করেন। পোল্যান্ড সেই দাবি পূরণে অসম্মত হয় বলে হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করেন।

শ্বেত অভিযান কী?

হিটলার ডানজিগ বন্দরে পৌঁছোনোর জন্য পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে একটি সংযোগকারী পথ (পোলিশ করিডর) দাবি করেন। কিন্তু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে পোল্যান্ড হিটলারের দাবি মানতে অস্বীকার করে। এর ফলে ক্ষুব্ধ হিটলার পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে যে অভিযান করেছিলেন সেটাই শ্বেত অভিযান (Operation White) নামে পরিচিত।

ভুতুড়ে যুদ্ধ বা Phony War বা টেলিফোনে যুদ্ধ কী?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে জার্মান কর্তৃক পোল্যান্ড আক্রমণের সময় থেকে ফ্রান্স আক্রমণ পর্যন্ত সময়ে (মে, ১৯৪০ খ্রি.) ইঙ্গ-ফরাসি মিত্রশক্তি জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি। এই কারণে এই সময়কালের যুদ্ধকে উইনস্টন চার্চিল ‘ভুতুড়ে যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন।

তোষণনীতি বলতে কী বোঝো?

জার্মানির একনায়কতন্ত্রী নেতা হিটলারের নানাবিধ শান্তি বিঘ্নকারী কাজকর্মে বাধা প্রদান না করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তাঁকে সন্তুষ্ট করার যে নীতি গ্রহণ করেছিল, তা তোষণনীতি নামে পরিচিত। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কাছে নাৎসিবাদ অপেক্ষা সমাজতন্ত্রবাদই বেশি বিপজ্জনক বলে প্রতিপন্ন হয়েছিল। হিটলার ছিলেন সাম্যবাদের প্রধান শত্রু। তাই ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স হিটলারের মাধ্যমে সাম্যবাদকে রোধ করতে চেয়েছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে হিটলারের সাহস বৃদ্ধি পায় ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

ইটালি ও জার্মানির প্রতি ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের তোষণনীতি গ্রহণের কারণ কী?

ব্রিটেন ও ফ্রান্স মনে করত যে, ভার্সাই সন্ধিতে ইটালি ও জার্মানির প্রতি অবিচার করা হয়েছে। তাই বিশ্বশান্তি রক্ষার তাগিদে ইটালি ও জার্মানির দাবি কিছুটা মেনে নিলে অন্যায় হবে না। তা ছাড়া জার্মানি ধীরে ধীরে পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। তাতে ইউরোপে শান্তি বজায় থাকবে। এই আশার বশবর্তী হয়ে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স তোষণনীতি গ্রহণ করেছিল।

জাপানে উগ্র জাতীয়তাবাদের উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

হিটলার ও মুসোলিনির নেতৃত্বে জার্মানি ও ইটালিতে যখন একনায়কতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সময় এশিয়ায় নতুন শক্তি হিসেবে জাপানের ক্রমশ আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই সময় জাপানের সামরিক বাহিনী জাপানি রাজনীতিতে ক্ষমতা বিস্তার করতে থাকে। জাপানের উগ্র সাম্রাজ্যবাদী প্রধানমন্ত্রী তানাকা জাপানের সম্রাটের কাছে ঘোষণা করেন যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধনীতি গ্রহণ অপরিহার্য। এইভাবে জাপানি রাজনীতিতে উগ্র জাতীয়তাবাদ ও জঙ্গি কার্যকলাপের উত্থান লক্ষ করা যায়।

তানাকা মেমোরিয়াল কী?

জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা ছিলেন ঘোর সাম্রাজ্যবাদী। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে এক স্মারকপত্রে তিনি জাপান সম্রাটকে পরামর্শ দেন যে, পূর্ব এশিয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য জাপানের যুদ্ধনীতি গ্রহণ অপরিহার্য এবং মাঞ্চুরিয়া ও মঙ্গোলিয়া দখল করা প্রয়োজন। এইভাবে জাপানিদের মধ্যে উগ্র জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটানোর জন্য তানাকার এই প্রচেষ্টাই ‘তানাকা মেমোরিয়াল’ নামে পরিচিত।

জাপান কবে ও কেন মাঞ্চুরিয়া দখল করে?

জাপানের বাড়তি জনসংখ্যার জন্য বাসস্থান ও শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ ও বাজার দখলের জন্য জাপান ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চুরিয়া অঞ্চল দখল করে।

জাপান কেন লিগ অফ নেশনস পরিত্যাগ করে?

জাপান তার সাম্রাজ্যবাদী উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে চিনের মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করে। এই আক্রমণের বিরুদ্ধে চিন লিগের কাছে প্রতিবাদ জানায় ও এর প্রতিকার দাবি করে। লিগ নিযুক্ত অনুসন্ধান কমিটি জাপানকে ‘আক্রমণকারী দেশ’ বলে অভিহিত করলে ক্ষুব্ধ হয়ে জাপান ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে লিগের সদস্যপদ ত্যাগ করে।

জাতিসংঘের পতনের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

জাতিসংঘের পতনের দুটি কারণ হল –

  • কাঠামোগত ত্রুটি- জাতিসংঘ একটি বিশ্ব সংগঠন হলেও বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্র এর সদস্যপদ গ্রহণ করেনি, আবার অনেকে সদস্যপদ ত্যাগ করেছিল।
  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ- ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাতিসংঘের পতন ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি কারণ উল্লেখ করো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি কারণ হল-

  • ভার্সাই সন্ধি- জার্মানি ভার্সাই সন্ধির গ্লানি মুছে ফেলার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।
  • হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ- হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বিশ্ব কীভাবে অনেকগুলি আদর্শগত শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সোভিয়েত রাশিয়া ছিল সমাজতান্ত্রিক দেশ। সম্পত্তির অধিকার ও মালিকের মুনাফার উপর তাদের বিশ্বাস ছিল না। পশ্চিমি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি ছিল পুঁজিবাদে বিশ্বাসী। তাই তারা সোভিয়েত রাশিয়াকে পছন্দ করত না। আবার ফ্যাসিস্ট ও নাৎসি আদর্শ অনুযায়ী একনায়কতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ। তাই জার্মানি ও ইটালি ছিল সমাজতন্ত্রবাদ ও গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী। এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইউরোপ অনেকগুলি আদর্শগত শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণ। হিটলার ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডের ডানজিগ বন্দর ও পোলিশ করিডরের দাবিতে পোল্যান্ড আক্রমণ করেছিলেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরস্পরবিরোধী দুটি শক্তিজোটের নাম কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) হয়েছিল অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে। অক্ষশক্তির পক্ষে ছিল- ইটালি, জার্মানি ও জাপান এবং মিত্রশক্তির পক্ষে ছিল- ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত রাশিয়া এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।

অক্ষশক্তিভুক্ত দেশগুলির নাম লেখো।

অক্ষশক্তিভূক্ত দেশগুলির নাম হল- ইটালি, জার্মানি ও জাপান। এই জোট ‘রোম-বার্লিন-টোকিও অক্ষশক্তি জোট’ নামেও পরিচিত ছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কোন্ কোন্ দেশ নিয়ে মিত্রশক্তি গঠিত হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, সোভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকাকে নিয়ে ‘মিত্রশক্তি’ গঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষই জয়লাভ করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলির মধ্যে সংঘটিত সম্মেলন ও বৈঠকগুলি কেন আহত হয়েছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মিত্রপক্ষীয় শক্তিগুলি বেশ কয়েকটি সম্মেলনে ও বৈঠকে মিলিত হয়েছিল নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য দূর করে সংহতি রক্ষা, পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং যুদ্ধের অবসানে বিশ্বের রাষ্ট্রিক পুনর্গঠন সম্পর্কে পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্রের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জল, স্থল, অন্তরিক্ষ সর্বত্রই তীব্রভাবে চলেছিল। ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং দূরপ্রাচ্যের বিভিন্ন রণাঙ্গনে যুদ্ধ হয়েছিল। এ ছাড়া সমুদ্রের বুকে অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগর, আটল্যান্টিক মহাসাগর ও ভূমধ্যসাগরেও বহু যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল।

হিটলার কেন রাশিয়া আক্রমণ করেন?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে হিটলার রাশিয়ার সঙ্গে অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করলেও ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রাশিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। রাশিয়া আক্রমণ হিটলারের পূর্বদিকে বিস্তারনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এ ছাড়াও রাশিয়া কর্তৃক জার্মানির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা, ইউক্রেনের গমের খেত ও বাকুর পেট্রোলিয়াম খনিগুলি হস্তগত করার চেষ্টা, দার্দানেলিস প্রণালীর উপর রুশ নৌ-আধিপত্য রোধের প্রচেষ্টা ইত্যাদি নানান কারণে হিটলার রাশিয়া আক্রমণ করেন।

স্ট্যালিনগ্রাডের যুদ্ধ কেন বিখ্যাত?

হিটলার অনাক্রমণ চুক্তি লঙ্ঘন করে রাশিয়া আক্রমণ করে লেনিনগ্রাড অবরোধ করলেও রাশিয়ার লাল ফৌজের পোড়ামাটি নীতির কারণে হিটলার তথা জার্মানবাহিনী পিছু হটতে থাকে। প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ ও লাল ফৌজের গেরিলা আক্রমণে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে লেনিনগ্রাড মুক্ত হয় এবং স্ট্যালিনগ্রাডের যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে রুশ সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে হিটলার ও তাঁর জার্মান বাহিনীকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে (১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি)।

ভিচি সরকার কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে জার্মানি কর্তৃক ফ্রান্স দখল করার পর ফ্রান্সের ভিচি শহরে জার্মানি তাদের একটি তাঁবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা করে। মার্শাল ফিলিপ পেতাঁর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই তাঁবেদার ফরাসি সরকারই পরিচিত ছিল ‘ভিচি সরকার’ নামে।

ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি নীতি কী?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে অর্থের বিনিময়ে যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি করার নীতি গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিকে ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ নীতি বলা হয়।

লেন্ড লিজ আইন কী?

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট মার্কিন সিনেট-এ এক আইন পাস করেন। এতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তিবর্গকে যুদ্ধবিমান ও যুদ্ধজাহাজসহ বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই আইন ‘লেন্ড লিজ আইন’ নামে পরিচিত।

হপকিনস্ দৌত্য (Hopkin’s Mission) বলতে কী বোঝো?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি রুজভেল্টের মনে আশঙ্কা জন্মায় যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন যদি জার্মানির কাছে পরাজিত হয় তবে ব্রিটেন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা হবে সংকটজনক। এই কারণে রুজভেল্টের ব্যক্তিগত দূত হ্যারি হপকিনস্ মস্কোতে গিয়ে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ‘হপকিনস্ দৌত্য’ নামে পরিচিত।

কেন্নান নোট কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ কেন্নান সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক নীতি গ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরে এক দীর্ঘ টেলিগ্রাম প্রেরণ করেছিলেন। এই টেলিগ্রাম ‘কেন্নান নোট’ নামে পরিচিত।

বেষ্টনী নীতি (Policy of Containment) কী?

বেষ্টনী নীতির প্রবক্তা ছিলেন মার্কিন কূটনীতিবিদ জর্জ এফ কেন্নান। তিনি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে Mr. X ছদ্মনামে ‘Foreign Affairs’ পত্রিকায় ‘সোভিয়েত কার্যকলাপের উৎস’ নামে এক প্রবন্ধে সাম্যবাদের অগ্রগতি প্রতিহত করবার জন্য সোভিয়েত রাশিয়াকে তার দখলিকৃত অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেন, এই নীতি পলিসি অফ কনটেইনমেন্ট বা ‘বেষ্টনী নীতি’ নামে পরিচিত।

পার্ল হারবার ঘটনা কী?

প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-ঘাঁটি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। এই – ঘটনা ‘পার্ল হারবার’ ঘটনা নামে পরিচিত।

জাপান কেন পার্ল হারবার আক্রমণ করেছিল?

জাপান প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সাম্রাজ্য বিস্তার করে। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের এই আগ্রাসী বিদেশনীতির বিরোধী ছিল। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি বাতিল করে দেয়। এর ফলে ক্ষুব্ধ জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে।

আমেরিকা কেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেয়?

অথবা, কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রাচ্য ভূখণ্ডে সম্প্রসারিত হয়?

১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে জাপান আমেরিকার সঙ্গে চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করলে আমেরিকা চিন ও ইন্দোচিন থেকে জাপানি সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানায়। জাপান এই প্রস্তাবে সম্মতি না দিলে আলাপ-আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে দুপক্ষের বৈঠক শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের মার্কিন নৌ-ঘাঁটি পার্ল হারবার আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। ফলশ্রুতিতে ৮ ডিসেম্বর আমেরিকা জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করে। এইভাবে প্রাচ্য ভূখণ্ডেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্প্রসারিত হয়।

ডি ডে (D Day) বলতে কী বোঝায়?

১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে জার্মানির কাছে ফ্রান্স পরাজিত হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন মিত্রপক্ষের সৈন্যবাহিনী ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডিতে অবতরণ করে। ফলে ফ্রান্সের ভূখণ্ডে জার্মানবিরোধী অভিযান শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাসে এই দিনটি ডি ডে (Deliverance Day) বা ‘মুক্তি দিবস’ নামে খ্যাত।

ভি ই ডে (V E Day) বা বিজয় দিবস বলতে কী বোঝায়?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল হিটলারের মৃত্যুর পর ৭ মে জার্মানি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। মিত্রপক্ষের কাছে জার্মানির আত্মসমর্পণের পরদিন ৮ মে ইউরোপে ‘বিজয় দিবস’ বা ভি ই ডে (Victory in Europe Day) পালন করা হয়।

পোটস্ডাম সম্মেলন কবে, কাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে জার্মানির আত্মসমর্পণের পর বার্লিনের পোটস্লাম শহরে মিত্রপক্ষের এক সম্মেলন বসে, এই সম্মেলন পোটস্ডাম সম্মেলন নামে পরিচিত। রাশিয়ার স্ট্যালিন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

পোটস্ডাম সম্মেলনে কী কী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?

পোটস্ডাম সম্মেলনের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি হল –

  • জার্মানি থেকে নাৎসি প্রভাব দূর করা।
  • আন্তর্জাতিক আদালতে জার্মান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা।
  • জার্মানিকে সামরিক দিক থেকে নিরস্ত্র করা প্রভৃতি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইটালি, জার্মানি ও জাপানের পতন কীভাবে হয়?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে মিত্রশক্তি রোম অধিকার করলে ইটালির, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার লাল ফৌজ বার্লিন দখল করলে জার্মানির এবং আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে বোমা নিক্ষেপ করলে জাপানের পতন হয়।

ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান কীভাবে হয়?

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাশিয়ার লাল ফৌজ বার্লিন দখল করার পর ৭ মে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে এবং ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান হয়।

কীভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে?

অক্ষশক্তির মধ্যে অন্যতম জাপানকে আক্রমণ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলে। এর ফলে জাপান আত্মসমর্পণ করে। এইভাবে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) ফলে- 1 দ্বি-মেরু বিশ্বের আবির্ভাব হয় এবং 2 বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি কৌশলগত পরিবর্তন লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে- 1.পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করা হয়েছিল এবং 2. রেডিয়ো, পুস্তিকা প্রভৃতিতে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি যুদ্ধাস্ত্রের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত কয়েকটি যুদ্ধাস্ত্রের নাম হল- ট্যাংক, বোমারু বিমান, সাবমেরিন, ট্যাংক ধ্বংসকারী মারণাস্ত্র, মারণ গ্যাস ইত্যাদি। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত সবথেকে প্রাণঘাতী মারণাস্ত্র ছিল পরমাণু বোমা।

ব্লিৎজ ক্রিগ (Blitz Krieg) বলতে কী বোঝো?

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির প্রচুর সৈন্য থাকলেও বেশি অস্ত্রশস্ত্র মজুত ছিল না। তাই হিটলার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের পরিবর্তে ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধের পক্ষপাতী ছিলেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত জার্মানি বিদ্যুৎগতিসম্পন্ন ক্ষণস্থায়ী যুদ্ধের রণকৌশল অনুসরণ করেছিল। এই রণকৌশল ‘ব্লিৎজ ক্রিগ’ নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শক্তি ও মর্যাদার পরিবর্তন কীভাবে ঘটে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইটালির শক্তি ও গুরুত্ব হ্রাস পায় এবং সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি, মর্যাদা ও গুরুত্ব বাড়ে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের দুটি কারণ লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তির পরাজয়ের বিভিন্ন কারণ ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  • অক্ষশক্তির যুদ্ধ চালানোর মতো পর্যাপ্ত রসদ ছিল না।
  • অক্ষশক্তি যুদ্ধকে সমর্থন করায় বিশ্ববাসীর সহানুভূতি অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন্ কোন্ দেশ উগ্র জাতীয়তাবাদ এবং গণতন্ত্রবাদের সমর্থক ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবাদের সমর্থক ছিল ইটালি, জার্মানি ও জাপান এবং গণতন্ত্রবাদের সমর্থক ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিজয়ী শক্তির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তি জয়লাভ করলেও তাদের অবস্থা ভালো ছিল না। জনবল, জাতীয় সম্পদ, শিল্প-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কায় ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো বিজয়ী শক্তিগুলির অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়েছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি রাজনৈতিক প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি রাজনৈতিক প্রভাব হল –

  • বিশ্বের অনেক দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শ জনপ্রিয়তা লাভ করে।
  • সোভিয়েত রাশিয়ায় সাম্যবাদের প্রসার ঘটে। একইসঙ্গে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি অর্থনৈতিক প্রভাব লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দুটি অর্থনৈতিক প্রভাব হল –

  • বিশ্ব অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
  • বেশ কিছু দেশে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছিল।

জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?

কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যে বসবাসকারী মানুষজনের মধ্যে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সংস্কৃতি নির্বিশেষে যখন আপাত বিরোধগুলি ব্যতিরেকে বৃহত্তর স্বার্থে ও সার্বিক লক্ষ্যে এক গভীর ঐক্যবোধ ও একাত্মবোধ গড়ে ওঠে, তখন তাদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার যে চেতনা জাগ্রত হয়, সেটাই হল ‘জাতীয়তাবাদ’ (Nationalism) |

উগ্র জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?

যে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক ধ্বংস করে জাতিবিদ্বেষ প্রচার করে এবং সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ প্রভৃতি শোষণমূলক ধারণাকে সমর্থন করে, তাকে ‘উগ্র জাতীয়তাবাদ’ বলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে উগ্র জাতীয়তাবাদের মূলে কোন্ কোন্ তত্ত্ব সক্রিয় ছিল?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি, ইটালি ও জাপানের উগ্র জাতীয়তাবাদ সক্রিয় ছিল। জার্মানির উগ্র জাতীয়তাবাদের মূলে ছিল হেরেনভক তত্ত্ব। ইটালির উগ্র জাতীয়তাবাদের মূলে সক্রিয় ছিল- মুসোলিনির ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং জাপানের উগ্র জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ছিল জঙ্গি সমরনীতি।

আন্তর্জাতিকতাবাদ কী?

বৃহত্তর বিশ্বসমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এক মহান আদর্শের নাম হল ‘আন্তর্জাতিকতাবাদ’। যে মানসিকতার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন জাতি নিজেদের দেশ ও জাতির সংকীর্ণ গণ্ডি অতিক্রম করে বিশ্বমানবতার সঙ্গে একাত্ম হতে পারে, সেই মানসিকতাকে ‘আন্তর্জাতিকতাবাদ’ বলে।

আন্তর্জাতিকতাবাদের সকল বাস্তবায়ন সম্ভব বিশ্বরাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই।

ঠান্ডা লড়াই কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্বে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহ পরস্পরবিরোধী দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে যায়, যার একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী জোট এবং অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট। এই দুই শক্তিজোটের মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধ না হলেও উভয়ের মধ্যে সর্বদাই একটি যুদ্ধের পরিবেশ বজায় থাকে, যা ‘ঠান্ডা লড়াই’ (Cold War) নামে পরিচিত। আসলে ঠান্ডা লড়াই ছিল পুঁজিবাদী ও সাম্যবাদী জোটের আদর্শগত সংঘাত।

দ্বি-মেরুকরণ (Bi-polarism) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বের প্রধান প্রধান রাষ্ট্রগুলি দুটি শিবির বা মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি রাষ্ট্রজোট এবং অন্যদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গড়ে ওঠে। এই দুই শিবিরে বিভক্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে দ্বি-মেরুকরণ বা দ্বি-মেরুবাদ বলা হয়।

ট্রুম্যান নীতি কী?

সোভিয়েত রাশিয়ার সম্প্রসারণ প্রতিরোধের জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান ঘোষণা করেছিলেন – যেসব জাতি সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের (কমিউনিস্ট) আক্রমণ বা বিদেশি রাষ্ট্রের আক্রমণের প্রতিরোধে নিয়োজিত তাদের আমেরিকা সাহায্য ও সমর্থন করবে। এই নীতি ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত।

মার্শাল পরিকল্পনা কী?

অর্থনৈতিক দুরবস্থার সুযোগে যাতে পশ্চিম ইউরোপে সাম্যবাদের প্রভাব বিস্তৃত না হয়, সে কারণে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব জর্জ সি মার্শাল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন মার্কিন সাহায্যের এক পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাঁর এই প্রস্তাব ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত।

আনরা (UNRRA) বা জাতিপুঞ্জের ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন কী?

ব্রিটেন ও আমেরিকার উদ্যোগে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল যৌথ আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা আনরা (United Nations Relief and Rehabilitation Administration)। পরের বছর এই সংস্থা তার কাজ শুরু করেছিল। সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে, এই সংস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ফুলটন বক্তৃতা বা লৌহ যবনিকা তত্ত্ব কী?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার মিসোরি প্রদেশের ফুলটনে ওয়েস্ট মিনিস্টার কলেজে প্রদত্ত এক বক্তৃতায় ইউরোপে রুশ প্রভাব বিস্তারের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে আমেরিকাবাসীকে সচেতন করে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এটিই ‘লৌহ যবনিকা তত্ত্ব’ বা ‘ফুলটন বক্তৃতা’ নামে খ্যাত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি জোটের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জোট ছিল – 1 ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ‘উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তি সংস্থা’ বা ‘ন্যাটো (NATO), 2 ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ বা ‘সিয়াটো’ (SEATO), 3 ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত ‘মধ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ বা ‘সেনটো’ (CENTO) প্রভৃতি।

ন্যাটো (NATO) কী?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সাম্যবাদী রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য আমেরিকার নেতৃত্বে তার অনুগামী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এক সামরিক জোট গড়ে ওঠে, যা ‘উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তি সংস্থা’ (North Atlantic Treaty Organisation) বা ন্যাটো (NATO) নামে পরিচিত। এই সংগঠনভুক্ত দেশগুলি হল- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা প্রভৃতি।

SEATO কবে, কাদের মধ্যে ও কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়?

১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার নেতৃত্বে ম্যানিলাতে South East Asia Treaty Orgnisation বা SEATO গঠিত হয়।

কমিউনিস্ট চিনকে প্রতিরোধ এবং কমিউনিস্ট আক্রমণ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে মুক্ত রাখার উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিনস-সহ মোট ৮টি দেশকে নিয়ে এই চুক্তিব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। আসলে SEATO-র মাধ্যমে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই ছিল আমেরিকার উদ্দেশ্য।

CENTO কী?

মধ্য প্রাচ্যে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রভাব প্রতিহত করার জন্য ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইরাক, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তানকে নিয়ে গঠিত হয় ‘মেডো’ (Middle East Defence Organisations বা MEDO) বা ‘বাগদাদ চুক্তি’। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ইরাক এই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে এটির নাম বদল করে রাখা হয়। CENTO (Central Treaty Organisation)। এই সংস্থার সদর দপ্তর বাগদাদ থেকে আঙ্কারায় স্থানান্তরিত করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি জোটের নাম লেখো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য জোট ছিল- 1. ‘ওয়ারশ চুক্তি’, 2. ‘কমেকন’, 3. ‘কমিনফর্ম’ প্রভৃতি।

ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলি নাম লেখো।

উত্তর আটল্যান্টিক চুক্তিসংস্থা’ বা ন্যাটো (NATO) – র পাল্টা হিসেবে রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের সাম্যবাদী দেশগুলিকে নিয়ে অনুরূপ একটি জোট গড়ে তোলে, যার নাম ওয়ারশ চুক্তিজোট।
এই জোটের অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রগুলি হল- সোভিয়েত রাশিয়া, বুলগেরিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া প্রভৃতি।

কমেকন (COMECON) কী?

মার্শাল পরিকল্পনার জবাবে সোভিয়েত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে নিয়ে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে Council for Mutual Economic Assistance (COMECON) বা পারস্পরিক আর্থিক সহায়তা পরিষদ স্থাপন করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত পূর্ব ইউরোপের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং ওইসব রাষ্ট্রগুলির শিল্পোন্নয়ন ঘটানোই ছিল এই চুক্তির লক্ষ্য। এর সদস্য ছিল সোভিয়েত রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া ও পূর্ব জার্মানি।

কমিনফর্ম (COMINFORM) কী?

ইউরোপে কমিউনিস্ট বিরোধী মার্কিন প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে সোভিয়েত রাশিয়া তার অনুগামী কমিউনিস্ট দেশগুলিকে নিয়ে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে Communist Information Bureau বা COMINFORM গঠন করে। পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদী ব্যবস্থাকে সুনিয়ন্ত্রিত করা, ওইসব দেশের কমিউনিস্ট কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোই ছিল এর উদ্দেশ্য। এর সদর দপ্তর বেলগ্রেড-এ স্থাপিত হয়।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বলতে কী বোঝায়?

স্বাধীনতা লাভের পর ভারত আমেরিকা ও রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন কোনো জোটশক্তিতে যোগ না দিয়ে উভয় গোষ্ঠীর সঙ্গে বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে তার বিদেশনীতি পরিচালনার কথা ঘোষণা করে, যা ‘জোটনিরপেক্ষ নীতি’ নামে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ছিলেন এই নীতির প্রধান প্রবক্তা ও রূপকার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানব ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই যুদ্ধের ফলে বিশ্বের মানচিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। যুদ্ধের পর বিশ্বে অনেক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলি বিশ্বকে নতুন এক পর্যায়ে নিয়ে যায়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Tom Loses a Tooth

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

The North Ship

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer