আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় ‘ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক’ – এর কিছু ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 1 নবম শ্রেণী- ইতিহাস- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক – ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/11/%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%AE-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%A3%E0%A7%80-%E0%A6%87%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A6%BF-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E2%80%93-%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%95-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A7%8B%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0-1024x576.webp)
ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ আলোচনা করো
ফরাসি বিপ্লবের কারণ
সামাজিক কারণ – ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ফরাসি সমাজে বৈষম্য ও শোষণ। শ্রেণিবিভক্ত ফরাসি সমাজব্যবস্থা মধ্যযুগীয় সামন্ততন্ত্রের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। ফরাসি সমাজে এই সময় প্রধান তিনটি শ্রেণি (এস্টেট) বর্তমান ছিল; যথা- প্রথম শ্রেণি (যাজকগণ), দ্বিতীয় শ্রেণি (অভিজাতবর্গ) এবং তৃতীয় শ্রেণি (ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক প্রভৃতি)। এই তিন শ্রেণির মধ্যে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিল বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি ও তৃতীয় সম্প্রদায় ছিল অধিকারহীন শ্রেণি।
- প্রথম শ্রেণি (First Estate) – ফরাসি সমাজব্যবস্থায় যাজকরা ছিল প্রথম শ্রেণিভুক্ত। বিপ্লবের পূর্বে এরা ছিলেন সুবিধাভোগী এবং ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার 1%-এরও কম। এদের মোট সংখ্যা ছিল 1 লক্ষ 20 হাজার। অথচ এদের দখলে ছিল ফ্রান্সের মোট জমির 10%। এই জমির জন্য এরা রাজাকে কোনো প্রকার করও দিতেন না। যাজকরা ভূমিকর, ধর্মকর, মৃত্যুকর ইত্যাদি আদায় করলেও সরকারকে স্বেচ্ছাকর ছাড়া অন্য কোনো কর দিতে রাজি ছিলেন না। অথচ রাষ্ট্রের সবরকম সুযোগসুবিধা এরা ভোগ করতেন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেন।
- দ্বিতীয় শ্রেণি (Second Estate) – ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত। এরা ছিলেন ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার প্রায় 0.5% অর্থাৎ প্রায় 3 লক্ষ 50 হাজার। অথচ ফ্রান্সের মোট জমির 20% ছিল এদের দখলে। এরা জমির জন্য সরকারকে কোনো প্রত্যক্ষ কর দিতেন না। আবার সরকারের সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদগুলিতে এদের একচেটিয়া অধিকার ছিল।
- তৃতীয় শ্রেণি (Third Estate) – ফরাসি সমাজের ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী, সর্বহারা সকলেই ছিলেন তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত। এদের মোট জনসংখ্যা ছিল ফ্রান্সের মোট জনসংখ্যার 97%-এর বেশি। সমাজে এদের বংশকৌলীন্য ছিল না। ফ্রান্সের করের বোঝার বেশির ভাগটাই এদের বহন করতে হত। ফ্রান্সে সবক্ষেত্রে এরা ছিলেন অসাম্যের শিকার। তাই তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত মানুষেরা তাদের প্রতি সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষের শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়নের প্রতিবাদে বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন।
অর্থনৈতিক কারণ – অর্থনৈতিক দূরবস্থাও ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেছিল।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 2 নবম শ্রেণী- ইতিহাস- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%85%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%93-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A5%A4-3.webp)
- বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা – ফ্রান্সের প্রথম শ্রেণিভুক্ত ধর্মযাজক ও দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত অভিজাতরা বেশির ভাগ ভূসম্পত্তি ভোগ করলেও তাদের কর দিতে হত না। অপরপক্ষে সরকারের মোট রাজস্বের 96% দিতে হত তৃতীয় সম্প্রদায়কে। বিভিন্ন ধরনের কর প্রদানের পর তাদের হাতে আয়ের মাত্র 20% থাকত। এই অত্যধিক করের বোঝা তৃতীয় সম্প্রদায়কে বিদ্রোহী করে তুলেছিল।
- দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি – ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রায় 65% বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু জনগণের আয় সেই হারে বাড়েনি। ফলে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
- রাজপরিবারের অতিরিক্ত ব্যয় – ফ্রান্সে বুরবো রাজপরিবারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভাঙন দেখা দেয়। এর ফলে ফরাসি রাজকোষ শূন্য হয়ে যায়।
- রাজার কর আরোপের চেষ্টা – রাজপরিবারের বিলাসিতা, যুদ্ধে প্রচুর অর্থব্যয়, রাজকোষের অর্থশূন্যতা প্রভৃতি কারণে ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই অর্থ সংগ্রহ করার জন্য সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি দরিদ্র তৃতীয় শ্রেণির উপর নতুন নতুন কর আরোপ করতে থাকেন, যার ব্যয়ভার বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব ছিল। ফলে মানুষ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
- ব্যয়বহুল যুদ্ধ – চতুর্দশ ও পঞ্চদশ লুই বিভিন্ন ব্যয়বহুল যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিপুল অর্থব্যয় করেন। এরপর ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতার যুদ্ধে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে আবারও বিপুল অর্থব্যয় হয়। এর ফলে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
রাজনৈতিক কারণ – ফরাসি বিপ্লব ছিল প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে বুরবো রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে বুরবো বংশের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রে রাজা ছিলেন দেশের সর্বোচ্চ শাসক। শাসনব্যবস্থায় জনগণের কোনো স্থান ছিল না।
- রাজাদের দুর্বল শাসন – ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই ছিলেন চরম স্বৈরাচারী। তিনি বলতেন, “আমিই রাষ্ট্র”। এর পরবর্তী রাজা পঞ্চদশ লুই শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর উপপত্নী দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর প্রশাসনিক কাঠামোও দুর্নীতিমুক্ত ছিল না। এরপর অযোগ্য রাজা ষোড়শ লুই-এর আমলে ফরাসি রাজতন্ত্র জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। ফলে ফ্রান্সের রাজাদের দুর্বল শাসনব্যবস্থা ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল বলা যায়।
- অভিজাতদের ক্ষমতা বৃদ্ধি – দুর্বল শাসকদের প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে প্রাক্-বিপ্লব পর্যায়ে ফ্রান্সে অভিজাত সম্প্রদায়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রশাসনে অভিজাত সম্প্রদায়ের আধিপত্য শাসনব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। ইনটেনডেন্ট নামক এক শ্রেণির কর্মচারীরা দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি রাজপুরুষরা লেতর দ্য ক্যাশে নামক গ্রেফতারি পরোয়ানার দ্বারা যে-কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করে রাখার অধিকার পায়।
- ত্রুটিপূর্ণ আইন – অষ্টাদশ শতকে ফরাসি আইন ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ, জটিল ও দুর্বোধ্য। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের আইন ও দণ্ডবিধি প্রচলিত ছিল। আইনগুলি ছিল অত্যন্ত নির্মম। সাধারণ অপরাধের জন্যও অনেক সময় মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হত।
- দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা – ফরাসি রাজতন্ত্রে বিচারের নামে প্রহসন ছিল সাধারণ ঘটনা। বিচারকের পদ ছিল বংশানুক্রমিক। বিচারককে বেতন দেওয়া হত না, তিনি জরিমানার অর্থ ভোগ করতেন। আবার রাজা ইচ্ছামতো বিচারের রায় পরিবর্তন করতে পারতেন। এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা মানুষের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছিল।
- রাজাদের ভ্রান্ত বিদেশনীতি – ফ্রান্সের রাজা পঞ্চদশ লুই অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার-সংক্রান্ত যুদ্ধ ও সপ্তবর্ষের যুদ্ধে পরাজিত হন। এর ফলে ভারত ও আমেরিকায় ফরাসি উপনিবেশ তাঁর হাতছাড়া হয়। রাজা ষোড়শ লুই আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিলে ফ্রান্সের অর্থনীতি শোচনীয় হয়ে পড়ে। অপরদিকে বিদেশনীতির ব্যর্থতায় ফরাসি রাজতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। ফলে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
- ষোড়শ লুই এর ভূমিকা – দেশের অর্থনৈতিক সংকট যখন তীব্র, তখন রাজা ষোড়শ লুই-এর উচিত ছিল যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ অধিকার খর্ব করে এবং তাদের উপর করের বোঝা চাপিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেওয়া। কিন্তু তিনি একাজে জোরালো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনগণ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। এই ফরাসি বিপ্লবের জন্য রাজতন্ত্রের দায়িত্বকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তাই ঐতিহাসিক ফিশার বিপ্লবের জন্য ফরাসি রাজতন্ত্রকেই দায়ী করেছেন।
উপসংহার – উপরোক্ত কারণগুলি ফরাসি জনগণকে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তবে নেপোলিয়নের ভাষায়- অহমিকাই বিপ্লবের মূল কারণ, স্বাধীনতা ছিল অজুহাত মাত্র।
ফ্রান্সের করব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই করব্যবস্থা ফরাসি সমাজের তৃতীয় সম্প্রদায়কে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বুরবোঁ (Bourbon) রাজবংশের রাজারা রাজত্ব করতেন। রাজাদের আয়ের প্রধান উৎস ছিল প্রজাদের কাছ থেকে আদায় করা বিভিন্ন ধরনের কর।
ফ্রান্সের করব্যবস্থা – ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে প্রচলিত করগুলিকে দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়:
- প্রত্যক্ষ কর
- পরোক্ষ কর
প্রত্যক্ষ কর – ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর প্রচলিত ছিল:
- টেইলি (Taille) বা সম্পত্তিকর
- ক্যাপিটেশন (Capitation) বা মস্তক কর
- ভিংটিয়েমে (Vingtieme) বা আয়কর
যাজক ও অভিজাতরা যথাক্রমে ফ্রান্সের 1/10 অংশ এবং 1/15 অংশ ভূসম্পত্তির মালিক হয়েও তারা রাষ্ট্রকে টেইলি দিতেন না। যাজকেরা রাষ্ট্রকে একপ্রকার স্বেচ্ছাকর প্রদান করতেন। যাজক এবং অভিজাত সম্প্রদায় রাষ্ট্রকে কোনো প্রকার মস্তক কর এবং আয়কর প্রদান করতেন না। রাষ্ট্রের তিনটি প্রত্যক্ষ করই তৃতীয় সম্প্রদায় বহন করত। কর আদায়ের জন্য ইন্টেনডেন্ট (Intendent) নামক কর্মচারীরা সাধারণ মানুষের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাত।
পরোক্ষ কর – প্রত্যক্ষ করের পাশাপাশি ফ্রান্সে বহু পরোক্ষ করও প্রচলিত ছিল। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- টাইথ (Tithe) বা ধর্মকর
- গ্যাবেলা (Gabelle) বা লবণ কর
- এইদস (Aides) বা ভোগ্যপণ্যের উপর কর
- তেরাজ বা পথকর
- করভি (Corvee) বা শ্রমকর
- ব্যানালাইট (Banalites) বা শস্যদানা ভানার কর প্রভৃতি
পরোক্ষ করগুলিও সরকার, গির্জা ও সামন্তপ্রভুকে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষেরা দিতে বাধ্য থাকত। যাজক ও অভিজাতরা রাষ্ট্রকে কোনো প্রকার পরোক্ষ কর দিতেন না।
করব্যবস্থা ও তৃতীয় সম্প্রদায় – 1789 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে বিভিন্ন প্রকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর প্রচলিত ছিল। তবে এই সকল কর ফরাসি সমাজের সকল সম্প্রদায় বহন করত না। ফরাসি সমাজব্যবস্থা তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম সম্প্রদায়ভুক্ত যাজক এবং দ্বিতীয় সম্প্রদায়ের অভিজাতরা সকল প্রকার কর প্রদানের দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন। এই দুই শ্রেণি ব্যতীত অবশিষ্ট যারা ছিলেন তারা তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় 98% মানুষ ছিলেন তৃতীয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ। এরা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও রাষ্ট্রপ্রদত্ত সমস্ত প্রকার কর প্রদান করতে বাধ্য হতেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করের বোঝা বহন করে জীবনধারণ করা কষ্টকর হয়ে উঠলে তারা বিপ্লবমুখী হয়ে ওঠেন।
ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের প্রভাব আলোচনা করো।
ভূমিকা – 1789 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বুদ্ধিজীবী বা দার্শনিকদের ভূমিকা ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অষ্টাদশ শতাব্দীর ফ্রান্স ছিল জ্ঞানদীপ্তির যুগ। অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সে বুরবন রাজাদের স্বৈরাচারী শাসনের ফলে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অসন্তোষ তৈরি হয়, তা কাজে লাগিয়ে ফরাসি দার্শনিকরা জনসাধারণের মনোজগতে পরিবর্তন বা বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। ভলতেয়ার, মন্তেস্কু, রুশো, দিদেরো প্রমুখ দার্শনিকরা তাঁদের রচনার দ্বারা ফরাসি জনসাধারণকে নিজের অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করে তোলেন। এর ফলে যে বৈপ্লবিক ভাবতরঙ্গের সৃষ্টি হয়, তা 1789 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবকে সম্ভব করে তুলেছিল।
দার্শনিকদের ভূমিকা –
- মন্তেস্কু (Montesquieu) – অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেন মন্তেস্কু। পেশায় আইনজীবী মন্তেস্কু ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক এবং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের নীতির প্রবক্তা। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ দ্য স্পিরিট অফ লজ (The Spirit of Laws)-এ রাজার দেবস্বত্ব নীতির সমালোচনা করে ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য আইন, শাসন ও বিচারবিভাগের পৃথকীকরণের কথা বলেন। মন্তেস্কুর আর একটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল দ্য পার্সিয়ান লেটারস (The Persian Letters)। এই গ্রন্থে তিনি বিপ্লব-পূর্ব ফরাসি সমাজব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করেন।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 3 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%81-Montesquieu.webp)
- ভলতেয়ার (Voltaire) – অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফ্রান্স তথা ইউরোপের প্রখ্যাত দার্শনিক ভলতেয়ার একাধারে ছিলেন যুক্তিবাদী, কবি ও নাট্যকার। তাঁর আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য ছিল চার্চ ও রাষ্ট্র। তিনি চার্চের দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার সম্পর্কে উল্লেখ করে ফরাসি স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি ক্যাথলিক গির্জাকে বিশেষ অধিকারপ্রাপ্ত উৎপাত বলে অভিহিত করেন। ভলতেয়ারের দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল কাঁদিদ (Candide) ও লেত্র ফিলজফিক (Lettres Philosophiques)। এই গ্রন্থ দুটিতে তিনি ধর্মীয় রীতিনীতি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 4 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AD%E0%A6%B2%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0-Voltaire.webp)
- রুশো (Rousseau) – অষ্টাদশ শতাব্দীর দার্শনিকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৈপ্লবিক ছিলেন রুশো। তাঁকে ফরাসি বিপ্লবের জনক বলা হয়। রুশো ছিলেন নতুন সমাজ গঠনের পথপ্রদর্শক। তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থ হল সামাজিক চুক্তি (Social Contract) এবং অসাম্যের সূত্রপাত (Origin of Inequality)। সামাজিক চুক্তি গ্রন্থে রুশো বলেন যে, মানুষের মুক্তি ও নিরাপত্তার জন্য সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন করবে। তাঁর মতে, জনগণই হল রাষ্ট্রীয় শক্তির উৎস এবং তারাই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী চুক্তির মাধ্যমে রাজা শাসনক্ষমতা লাভ করেন। অসাম্যের সূত্রপাত গ্রন্থে তিনি বলেন, মানুষ স্বাধীন হয়ে এবং সমান অধিকার নিয়ে জন্মায়। কিন্তু বৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা তাকে দরিদ্র ও পরাধীন করে। এক কথায়, স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিরোধিতা করে রুশো সকল জনগণের সাম্য ও স্বাধীনতার কথা বলেছেন।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 5 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B6%E0%A7%8B-Rousseat.webp)
- দিদেরো ও এলেমবার্ট (Diderot & Alembert) – ফরাসি দার্শনিক দেনিস দিদেরো (Denis Diderot) ও দ্য এলেমবার্ট (D’ Alembert) 35 খণ্ডের একটি বিশ্বকোষ সংকলন করেন (1751 – 1780 খ্রি.)। দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য প্রভৃতিতে সমৃদ্ধ এই বিশ্বকোষ পাঠ করে ফরাসিদের চিন্তাধারায় ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। দিদেরো বলেছেন, মানুষ তার চারপাশের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিবর্তন করতে পারে বলেই সে জীবজগতে শ্রেষ্ঠ। তাঁর কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ফরাসি জাতি নিজ ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে তৎপর হয়ে ওঠে।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 6 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%8B-%E0%A6%93-%E0%A6%8F%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F-Diderot-Alembert.webp)
- ফিজিওক্র্যাটস (Physiocrats) – ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফিজিওক্র্যাটস নামে একদল অর্থনীতিবিদের আবির্ভাব হয়। এঁরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অবাধ বাণিজ্য ও শিল্প বেসরকারিকরণের পক্ষপাতী ছিলেন। এই গোষ্ঠীর অন্যতম নেতা ছিলেন কুয়েসনে (Quesnay)।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 7 ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের (Philosophers) ভূমিকা আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-Philosophers-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B.webp)
দার্শনিকদের ভূমিকার মূল্যায়ন – ফরাসি বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে দার্শনিকদের ভূমিকা কতটা ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। ঐতিহাসিকেরা দার্শনিকদের ভূমিকার পক্ষে ও বিপক্ষে নানান যুক্তি দিয়েছেন।
পক্ষে যুক্তি – রাইকার (Riker), তেইন (Taine) প্রমুখ ঐতিহাসিক মনে করেন, ফরাসি দার্শনিকদের ধারণা নেতৃস্থানীয় শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাঁদের আলোচনা ও বক্তৃতার মাধ্যমে সর্বসাধারণের মধ্যে দার্শনিক চেতনার প্রসার ঘটেছিল। প্রকৃতপক্ষে দার্শনিকরাই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফরাসি জাতির মানসিক ক্ষেত্র প্রস্তুতির কাজ সম্পূর্ণ করেছিলেন।
বিপক্ষে যুক্তি – কিন্তু ডেভিড থমসন (David Thomson)-সহ বেশ কিছু ঐতিহাসিকের মতে, ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের বিশেষ ভূমিকা ছিল না, কারণ দার্শনিকদের বক্তব্য বোঝার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের ছিল না। তাই তাদের আদর্শ সাধারণ মানুষকে তেমনভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি।
মন্তব্য সুতরাং, এ কথা বলা যায় যে, ফরাসি বিপ্লবের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পটভূমি দার্শনিকদের দ্বারা সৃষ্ট না হলেও শিক্ষিত বুর্জোয়া শ্রেণির উপর দার্শনিকদের রচনার বিশেষ প্রভাব ছিল, যা প্রচলিত ব্যবস্থার সমালোচনা করে ফরাসি বিপ্লব ঘটাতে পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছিল।
ফরাসি স্বৈরাচার ও অর্থনীতি বিষয়ে দার্শনিকদের মতামত লেখো।
অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতোই ফ্রান্সে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রনীতি ও অর্থনীতি প্রচলিত ছিল। তবে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যা ছিল না, ফ্রান্সে তার উপস্থিতি লক্ষণীয়। একমাত্র ফ্রান্সেই দার্শনিকদের প্রভাবে জনগণ ফরাসি প্রশাসনের স্বৈরাচার ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, যা শেষ পর্যন্ত ফরাসি বিপ্লবে রূপান্তরিত হয়েছিল।
ফরাসি স্বৈরাচার বিষয়ে দার্শনিকদের মতামত
ফ্রান্সের তৎকালীন স্বৈরাচার সম্পর্কে যেসকল দার্শনিক তাঁদের লেখনীর মাধ্যমে ফরাসি জনগণকে আকৃষ্ট করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন — রুশো, মন্তেস্কু, ভলতেয়ার, দেনিস দিদেরো প্রমুখ। রুশো তাঁর বিখ্যাত “সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট” (Social Contract) গ্রন্থে আধুনিক গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রবাদের ভিত্তি স্থাপন করেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বোঝান, রাজার দৈবস্বত্ব-এর ধারণা ভ্রান্ত। তিনি ফরাসি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের প্রয়োজনেই রাজার সৃষ্টি, তাই রাজা যদি মানুষের সেই প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হন তাহলে জনগণের উচিত রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। তিনি আরও বলেন, ‘জন্মের সময় মানুষ স্বাধীন, কিন্তু সর্বত্র সে শৃঙ্খলিত’ (Man is born free, but everywhere he is in chains)।
দার্শনিক মন্তেস্কু তাঁর “দ্য পার্সিয়ান লেটারস” (The Persian Letters) গ্রন্থে ফ্রান্সের তৎকালীন সামাজিক অসাম্য, রাজা ও অভিজাততন্ত্রের স্বৈরাচারী নীতির স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার তাঁর “লেত্র ফিলজফিক” (Lettres Philosophiques) গ্রন্থে চার্চের কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও অত্যাচারের সমালোচনা করেছেন। দেনিস দিদেরো এবং দ্য এলেমবার্ট প্রমুখ তাঁদের রচনার মাধ্যমে ফ্রান্সের প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থা, চার্চের অন্যায়, ক্রীতদাস প্রথা, বৈষম্যমূলক করব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। এঁরা “এনসাইক্লোপিডিয়া” (Encyclopedia) নামক একটি গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তৎকালীন ফ্রান্সের ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তিগ্রাহ্য আলোচনা প্রকাশ করেন।
ফরাসি অর্থনীতি সম্পর্কে দার্শনিকদের মতামত
প্রাক-বিপ্লব পর্বে ফরাসি সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্বরূপ সম্পর্কে দার্শনিকদের মতামত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দার্শনিকরা তাঁদের সমালোচনামূলক লেখনীর মাধ্যমে ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার চেষ্টা করেন। দার্শনিক ল্যাংগুয়ে (Linguet) সম্পত্তিতে বংশগত অধিকার ও ব্যক্তিগত মালিকানার অবসানের কথা বলেন। তিনি মনে করেন, সম্পত্তিবান লোকেরাই শক্তিশালী, যারা অন্য শ্রেণিকে শোষণ করে। মরেলি (Morelly)-ও সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত মালিকানাকে সামাজিক অসাম্য ও শোষণের জন্য দায়ী করেছেন। অর্থনীতি সম্পর্কে ফিজিওক্র্যাটদের (Physiocrats) চিন্তাভাবনাও গুরুত্বপূর্ণ। এঁরা অর্থনীতি বিষয়ে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেন। এঁরা মনে করতেন, স্বাধীন ও অবাধ বাণিজ্যের দ্বারাই ফ্রান্সের উন্নতি সম্ভব। ফিজিওক্র্যাটদের বক্তব্য শিক্ষিত সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
এইভাবে ফরাসি দার্শনিকগণ তাঁদের চিন্তাধারা এবং যুক্তিপূর্ণ লেখনীর মাধ্যমে ফ্রান্সের প্রাক-বিপ্লব পর্বের ফরাসি রাজতন্ত্রের স্বৈরাচার ও অর্থনীতি সম্পর্কে দেশবাসীকে অবহিত করেছিলেন।
বিপ্লব পূর্ববর্তী কালে ফরাসি অভিজাতরা (Second Estate) কেন রাজার বিরোধিতা করেছিল?
অথবা, রাজা ষোড়শ লুইয়ের বিরুদ্ধে অভিজাত বিদ্রোহ সম্পর্কে লেখো।
ভূমিকা: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে অভিজাতরা (Second Estate) রাজা ষোড়শ লুইয়ের (Louis XVI) বিরোধিতা করেছিল। ষোড়শ লুই ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের রাজা হওয়ার পর লক্ষ করেন যে, ফ্রান্সের রাজকোষ একেবারে শূন্য হয়ে পড়েছে। তিনি এই আর্থিক সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করলে অভিজাতরা তাঁর বিরোধিতা করেন।
ফ্রান্সের আর্থিক সংকটের কারণ: ফ্রান্সের আর্থিক সংকটের কারণগুলি হল:
- সরকারের ভ্রান্ত রাজস্বনীতি,
- অমিতব্যয়িতা,
- রাজপরিবারের বিলাসব্যসন,
- যুদ্ধ সংক্রান্ত ব্যয়,
- ঋণগ্রহণ ও তার সুদ পরিশোধ ইত্যাদি।
অভিজাতদের বিরোধিতার কারণ: ফরাসি সমাজে অভিজাতরা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্ত (Second Estate) ও তারা ছিল সুবিধাভোগী গোষ্ঠী (Privileged class)। তারা ফ্রান্সের কৃষিজমির ২০% এর মালিক হলেও এর জন্য রাজাকে কোনো ভূমি কর দিতেন না; বরং তারা প্রজাদের কাছ থেকে নানারকম কর আদায় করতেন। রাজা বিভিন্নভাবে অভিজাতদের কাছ থেকে কর আদায়ে সচেষ্ট হলে অভিজাতরা রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
ষোড়শ লুইয়ের অর্থমন্ত্রীদের সংস্কার প্রচেষ্টা ও অভিজাতদের এর বিরোধিতা:
তুর্গো (Turgot)-র সংস্কার (১৭৭৪-১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দ): রাজা ষোড়শ লুই অর্থসংকট মোচনের জন্য তুর্গোকে অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। তুর্গো রাজপরিবারের অমিতব্যয়িতা, সরকারি ব্যয়সংকোচ, অবাধ বাণিজ্যনীতি প্রচলন, কর ধার্য করার ব্যাপারে প্রাদেশিক সভাগুলির ক্ষমতা বাতিল করা এবং যাজক ও অভিজাতদের উপর ভূমিকর আরোপের প্রস্তাব দেন। অভিজাতরা এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং তাদের চাপে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে তুর্গো পদচ্যুত হন।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 8 তুর্গো](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%B7%E0%A7%8B%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%B6-%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%8B-1.webp)
নেকার (Necker)-এর সংস্কার (1776-1781 খ্রিস্টাব্দ): তুর্গোর পরে নেকার রাজা ষোড়শ লুইয়ের অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। এই সময় ফ্রান্স আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তিনি 8-10% সুদে 530 মিলিয়ন লিভর ঋণ সংগ্রহ করে কিছুদিন সরকারি ব্যয় ও যুদ্ধ পরিচালনা করেন। কিন্তু যখন বার্ষিক সুদের পরিমাণই 300 মিলিয়ন লিভর হয়ে গেল এবং বাজার থেকেও আর ঋণ পাওয়া গেল না তখন তিনি:
- রাজপরিবারের ব্যয় কমানো এবং
- অভিজাতদের উপর কর ধার্য করার প্রস্তাব দেন। এর ফলে অভিজাতদের চাপে তিনিও পদচ্যুত হন।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 9 বিপ্লব পূর্ববর্তী কালে ফরাসি অভিজাতরা (Second Estate) কেন রাজার বিরোধিতা করেছিল ?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC-%E0%A6%AA%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%80-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%BE-Second-Estate-%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2.webp)
ক্যালোন (Calonne)-এর সংস্কার (১৭৮৬-১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দ): পরবর্তী অর্থমন্ত্রী ক্যালোনও সরকারের আয় বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করেন। ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলি পেশ করেন:
- সব শ্রেণির উপর ভূমিকর আরোপ,
- গ্যাবেলা বা লবণকর আরোপ,
- সরকারি দলিলে বাড়তি স্ট্যাম্প কর আরোপ,
- অবাধ বাণিজ্য নীতি প্রবর্তন এবং
- করভি (Corvée) বা বাধ্যতামূলক শ্রমের বিলোপ।
এই প্রস্তাবগুলি প্যারিসের পার্লামেন্টে পেশ করার পূর্বে তিনি গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিষদ (কাউন্সিল অফ নোটেবলস্, Council of Notables) ডেকে তা পাস করাতে সচেষ্ট হন। এই সভার সদস্যরা রাজার মনোনীত সদস্য হলেও তারাও এর বিরোধিতা করেন। তাদের চাপে রাজা ক্যালোনকে পদচ্যুত করেন।
ব্রিয়া (Brienne)-এর সংস্কার (১৭৮৭-১৭৮৮ খ্রিস্টাব্দ): ক্যালোনের পর নতুন অর্থমন্ত্রী হন ব্রিয়া। অভিজাতরা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিষদের বিরোধিতা করলে রাজা ষোড়শ লুই ক্ষুব্ধ হয়ে তা ভেঙে দেন। ব্রিয়া তার কর প্রস্তাব নিয়ম অনুযায়ী প্যারিস পার্লামেন্টে পেশ করেন। কিন্তু অভিজাতরা এর তীব্র বিরোধিতা করে বলেন যে, কর বসানোর অধিকার একমাত্র স্টেটস্ জেনারেলের (States General) আছে। যদিও স্টেটস্ জেনারেলের অস্তিত্ব ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দের পর আর ছিল না।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 10 বিপ্লব পূর্ববর্তী কালে ফরাসি অভিজাতরা (Second Estate) কেন রাজার বিরোধিতা করেছিল ?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%B7%E0%A7%8B%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%B6-%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B9-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%8B.webp)
রাজার কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ: অবশেষে রাজা ষোড়শ লুই ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন:
- তিনি বিশেষ ক্ষমতা (লিট-দ্য-জাস্টিস / Lit de Justice) প্রয়োগ করে কর প্রস্তাব মঞ্জুর করেন। প্যারিস পার্লামেন্টের সদস্যরা রাজার এই উদ্যোগকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক বলে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
- পার্লামেন্টের সদস্যদের আচরণে বিরক্ত হয়ে রাজা দুজন সদস্যকে গ্রেফতার করেন।
অভিজাত বিদ্রোহ: রাজার কঠোর আচরণের প্রতিবাদে ফ্রান্সের তুলু, দিজোঁ, বোর্দো প্রভৃতি শহরে বিদ্রোহ দেখা দেয়। অভিজাতরা সংঘবদ্ধ হন। তাদের সঙ্গে যাজক ও বুর্জোয়ারা যোগদান করলে এই বিদ্রোহ গণবিদ্রোহের আকার ধারণ করে। এই বিদ্রোহকে অভিজাত বিদ্রোহ বলা হয়।
রাজার নতিস্বীকার: অভিজাত ও অন্যেরা সমবেতভাবে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন ডাকার দাবি জানান। রাজা ষোড়শ লুই তাদের চাপে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হন এবং ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১ মে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন ডাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
স্টেটস্ জেনারেল (States General) অধিবেশন কীভাবে ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিল?
ভূমিকা – ফ্রান্সের জাতীয় সভার নাম ছিল স্টেটস্ জেনারেল (States General)। ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ফ্রান্সের আর্থিক সমস্যার সমাধানের জন্য স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য হন। অভিজাতরা স্টেটস্ জেনারেলের গঠন ও ভোটদান পদ্ধতি আগের মতো রাখতে চেয়েছিলেন। তারা চেয়েছিলেন 1614 খ্রিস্টাব্দে যেখানে স্টেটস্ জেনারেল স্থগিত হয়েছিল, 1789 খ্রিস্টাব্দে সেখান থেকেই পুনরায় গঠিত হোক।
স্টেটস্ জেনারেল – পুরোনো নিয়মে যাজক, অভিজাত ও সাধারণ মানুষ পৃথক পৃথকভাবে তিন সভায় ভোট দিত। অর্থাৎ তিনটি শ্রেণির তিনটি ভোট ধরা হত; সদস্য অনুসারে মাথাপিছু ভোটাধিকার ছিল না। 1789 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে স্টেটস্ জেনারেলের নির্বাচন হয়। এতে নির্বাচিত মোট 1200 জন সদস্যের মধ্যে –
- প্রথম বা যাজক শ্রেণির 308 জন,
- দ্বিতীয় বা অভিজাত শ্রেণির 285 জন এবং
- তৃতীয় বা সাধারণ শ্রেণির 607 জন সদস্য নির্বাচিত হন।
এখানে তৃতীয় শ্রেণির নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যা ছিল বেশি। তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্যাট্রিয়টিক পার্টি (Patriotic Party) বা ন্যাশনাল পার্টি (National Party) নামে একটি দল গঠন করে। প্যাট্রিয়টিক পার্টি দাবি করে যে, তিন শ্রেণির প্রতিনিধিরা একই সভায় বসবে এবং মাথাপিছু ভোটের ভিত্তিতে স্টেটস্ জেনারেলের কাজ পরিচালিত হবে।
1789 খ্রিস্টাব্দের 5 মে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন বসার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধের সূত্রপাত হয়। তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিরা দাবি করে যে –
- তিনটি সম্প্রদায়ের যৌথ অধিবেশন করতে হবে,
- প্রতি সদস্যকে ভোটাধিকার দিতে হবে।
যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় এই দাবির বিরোধিতা করে। রাজা ষোড়শ লুই তৃতীয় সম্প্রদায়ের দাবি অগ্রাহ্য করে প্রচলিত ব্যবস্থা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন। রাজার সিদ্ধান্তে তৃতীয় শ্রেণির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে এক সভায় মিলিত হয় এবং তারা নিজেদের সভাকেই জাতীয় সভা (National Assembly) বলে ঘোষণা করে। তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিদের তরফ থেকে জানানো হয় যে, তারাই হল সমগ্র ফরাসি জাতির প্রতিনিধি, তাই কর ধার্য করার অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে (17 জুন, 1789 খ্রি.)। ঐতিহাসিক গ্রান্ট (Grant) ও টেম্পারলি (Temperley)-এর মতে, এই ঘটনাটি হল ফরাসি বিপ্লবের ক্ষুদ্র প্রতীক (It was the French Revolution in miniature)।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 11 স্টেটস্ জেনারেল (Statee General) অধিবেশন কীভাবে ফরাসি বিপ্লবের সূচনা করেছিল ?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%B8%E0%A7%8D-%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B2-Statee-General-%E0%A6%85%E0%A6%A7%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2.webp)
উপসংহার – রাজা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন। 20 জুন তৃতীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা টেনিস কোর্টের মাঠে একত্রিত হলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে এবং তা ধীরে ধীরে ফরাসি বিপ্লবের পথে এগিয়ে যায়।
বিপ্লবের যুগে ফরাসি সংবিধান সভার (Constituent Assembly) কার্যাবলি আলোচনা করো
ভূমিকা: ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই 1789 খ্রিস্টাব্দে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেন। এই অধিবেশনে সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিদের মাথাপিছু ভোটদানের দাবি না মানলে তারা নিজেদের সভাকে জাতীয় সভা (National Assembly) বলে ঘোষণা করে এবং টেনিস কোর্টের শপথ (20 জুন, 1789 খ্রি.) নিয়ে নতুন সংবিধান রচনার অঙ্গীকার করে। এই অবস্থায় সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির দাবি মেনে নিয়ে তিন শ্রেণির যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে জাতীয় সভা সংবিধান সভা (Constituent Assembly)-য় রূপান্তরিত হয়।
সংবিধান রচনা: বিপ্লবের যুগে ফরাসি সংবিধান সভা দুই বছরের (1789-1791 খ্রি.) চেষ্টায় একটি সংবিধান রচনা করে। এই সংবিধান রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লাফায়েৎ, মিরাবো, ট্যালির্যান্ট, রোবসপিয়ের প্রমুখ প্রথম সারির নেতারা। তাদের রচিত সংবিধানই ছিল ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 12 বিপ্লবের যুগে ফরাসি সংবিধান সভার (Constituent Assembly) কার্যাবলি আলোচনা করো।](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0-Constituent-Assembly-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%BF-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A5%A4.webp)
সংবিধান সভার কার্যাবলি: সংবিধান সভা মূল সংবিধান রচনার আগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল:
- সামন্তপ্রথার বিলোপ: সংবিধান সভা 1789 খ্রিস্টাব্দের 4 আগস্ট এক ঘোষণার দ্বারা ফ্রান্সের সামন্তপ্রথা, সামন্ত কর, বেগার শ্রম প্রভৃতি বিলোপ করে।
- ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা: সংবিধান সভা 1789 খ্রিস্টাব্দের 26 আগস্ট ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, স্বাধীনভাবে বাঁচা মানুষের জন্মগত অধিকার, আইনের চোখে সবাই সমান প্রভৃতি। ঐতিহাসিক ওলার্ড (Aulard)-এর মতে, এই ঘোষণাপত্রটি ছিল পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা (The Declaration was a death certificate of the Old Regime)।
সংবিধান সভার সংস্কারকার্য: 1791 খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভা কর্তৃক সংবিধান রচনার কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল – শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচারবিভাগীয় সংস্কার ও ধর্মীয় সংস্কার।
- শাসনতান্ত্রিক সংস্কার: শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সংবিধান সভার সংস্কারমূলক কাজগুলি হল –
- ফ্রান্সের রাজার ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করা হয়।
- শাসন, আইন ও বিচারবিভাগকে পৃথক করা হয়।
- সমগ্র ফ্রান্সকে 83টি প্রদেশে (ডিপার্টমেন্ট) বিভক্ত করা হয়।
- প্রতিটি প্রদেশকে আবার জেলা, ক্যান্টন ও কমিউনে ভাগ করা হয়।
- অর্থনৈতিক সংস্কার: অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি হল –
- ফ্রান্সের গির্জার সকল ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
- অ্যাসাইনেট (Assignat) নামে একপ্রকার কাগজের নোট প্রচলন করা হয়।
- সারাদেশে একই ধরনের ওজন, মাপ ও শুল্কব্যবস্থা চালু করা হয়।
- বিচারবিভাগীয় সংস্কার: বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ হল –
- আইনের চোখে সকলেই সমান — এই নীতি চালু করা হয়।
- নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের অধিকার স্বীকৃত হয়।
- নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ ও তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
- ধর্মীয় সংস্কার: ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংবিধান সভার উল্লেখযোগ্য কাজগুলি হল –
- ফ্রান্সের গির্জা গ্যালিকান গির্জা (Gallican Church) নামে পরিচিত হয় এবং আইনের মাধ্যমে গির্জাকে রাষ্ট্রের অধীনে আনা হয়।
- যাজক ও বিশপদের নির্বাচন করার অধিকার জনগণকে দেওয়া হয়।
- বিশপ ও যাজকদের সরকারি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মন্তব্য: সংবিধান সভার কার্যাবলি ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সংবিধান সভা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সের জনগণের হাতে ক্ষমতা প্রদান করেছিল।
সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় ফরাসি সংবিধানের ভূমিকা লেখো। এই সংবিধান ফরাসিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটা সফল হয়েছিল?
ভূমিকা: ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ ছিল স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী। বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সে স্বাধীনতা বলে কিছু ছিল না। বুরবোঁ রাজতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল যাজক ও অভিজাত শ্রেণি রাষ্ট্রকে কোনো কর দিত না, অথচ রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত সমস্ত প্রকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা একান্তভাবে ভোগ করত। অপরদিকে, দেশের 98% মানুষ যারা রাষ্ট্রকে সমস্ত প্রকার কর প্রদান করত, তারা ছিল সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত। বিপ্লবের ফলে পুরাতন শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটে এবং নতুন সংবিধান রচিত হয়।
সংবিধান সভার ভূমিকা: ফরাসি সংবিধান সভা 1789 খ্রিস্টাব্দের 26 আগস্ট ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করে স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভোটাধিকার, সভাসমিতির অধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের ফলে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। যাজক ও অভিজাতদের বিশেষ সুবিধা বিলুপ্ত হলে সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আইনের চোখে সকলের সমমর্যাদা স্বীকৃতি পায়। রাজার ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং অভিজাত ও যাজকদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এ ছাড়া রাজার পরিবর্তে জাতির সার্বভৌমত্ব মান্যতা পায়। বিলুপ্ত হয় মধ্যযুগীয় সামন্তপ্রথাও।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 13 সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় ফরাসি সংবিধানের ভূমিকা লেখো। এই সংবিধান ফরাসিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে কতটা সফল হয়েছিল?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AF-%E0%A6%AE%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%8B%E0%A5%A4.webp)
এইভাবে ফরাসি সংবিধানের মধ্যে ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
সীমাবদ্ধতা: তবে এই সংবিধান ফরাসিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে সম্পূর্ণরূপে সফল হয়নি। কারণ —
প্রথমত – নতুন সংবিধানে স্বাধীনতা ও সাম্যের কথা বলা হলেও নাগরিকদের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় দুই ভাগে ভাগ করে প্রায় 30 লক্ষ নাগরিককে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত – প্রাদেশিক শাসক, বিচারক, জুরি ও প্রশাসনের সর্বস্তরে নির্বাচন প্রথা চালু করার ফলে প্রকৃত যোগ্য লোক সঠিক পদমর্যাদা লাভে বঞ্চিত হয়। তৃতীয়ত – নতুন সংবিধান দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর এবং শ্রমজীবী মানুষেরও কোনো উন্নতি করতে পারেনি।
মূল্যায়ন: ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, নতুন সংবিধান পুরাতনতন্ত্রের ভিতকে শিথিল করার কাজে অনেকটাই সফল হয়েছিল। সমাজের সব শ্রেণির জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হলেও সাধারণ মানুষকে অসম করভার থেকে রেহাই দিতে সক্ষম হয়েছিল।
1791 খ্রিস্টাব্দের নতুন সংবিধানের সময় থেকে কীভাবে রাজার ক্ষমতা লোপ পায় ও রাজার মৃত্যুদণ্ড হয়?
1791 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে যে নতুন সংবিধান রচিত হয়েছিল, তাতে রাজার ক্ষমতা খর্ব করা হলে রাজা ষোড়শ লুই (Louis XVI) নিরুপায় হয়ে ওই সংবিধানে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
রাজার অস্ট্রিয়া পালানোর চেষ্টা – রাজা ষোড়শ লুই বাধ্য হয়ে সংবিধান মেনে নিলেও বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে পুনরায় ফ্রান্সে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে উদ্যোগী হন। এই উদ্দেশ্যে 1791 খ্রিস্টাব্দের 20 জুন তিনি সপরিবারে দেশত্যাগ করে অস্ট্রিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেননা:
- রাজা ষোড়শ লুই-এর স্ত্রী রানি মেরি আঁতোয়ানেৎ (Marie Antoinette) অস্ট্রিয়ার রাজকুমারী ছিলেন।
- স্পেনের রাজারাও ছিলেন বুরবোঁ বংশীয়।
- অস্ট্রিয়ার সম্রাট লিওপোল্ড (Leopold) ছিলেন ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুই-এর শ্যালক।
রাজার ধরা পড়া ও লাঞ্ছনা – পরের দিন অর্থাৎ 21 জুন সীমান্তের কাছে ভেরেন্নে (Varennes) নামক স্থানে রাজা সপরিবারে ধরা পড়েন। চরম লাঞ্ছনার মধ্যে তাঁদের প্যারিসে ফিরিয়ে আনা হয় (25 জুন, 1791 খ্রি.)। রাজা নতুন সংবিধান মেনে দেশশাসন করতে সম্মত হন।
আইনসভার সঙ্গে রাজার বিরোধ – 1791 খ্রিস্টাব্দের 1 অক্টোবর আইনসভার অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে দুটি সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে:
- অনেক যাজক নতুন সংবিধান মেনে চলতে অস্বীকার করেন।
- অনেক দেশত্যাগী ফরাসি অভিজাত বিদেশে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে।
এই সমস্যা দুটির সমাধানকল্পে আইনসভা দুটি প্রস্তাব আনে। যথা—
যাজক সমস্যার সমাধান প্রস্তাব – যাজকদের সম্পর্কে আইনসভার প্রস্তাব ছিল যে, যেসব যাজক Civil Constitution মেনে চলতে অস্বীকার করবে — তাদের ভাতা, বেতন, পেনশন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাতিল করা হবে এবং তাদের দেশদ্রোহী বলে ঘোষণা করা হবে।
দেশত্যাগী অভিজাত সমস্যার সমাধান প্রস্তাব – এই প্রস্তাবে বলা হয় যে, দু-মাসের মধ্যে দেশত্যাগী অভিজাতদের দেশে (ফ্রান্সে) ফিরে আসতে হবে। এই নির্দেশ অমান্য করলে তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং তাদের দেশদ্রোহী বলে ঘোষণা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ধরা পড়লে তাদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে।
রাজার বিরোধিতা – যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছিলেন রাজার সমর্থক। তাই রাজা তাঁদের বিরুদ্ধে গৃহীত ব্যবস্থার বিরোধী ছিলেন। তিনি ভেটো প্রয়োগ করে আইন দুটিকে স্থগিত রাখেন।
জনগণের রাজপ্রাসাদ আক্রমণ ও ভেটো প্রত্যাহার – রাজার ভেটো প্রয়োগের ফলে প্যারিসের ক্ষিপ্ত জনতা রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে এবং রাজাকে ভেটো প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ব্রান্সউইক ঘোষণা (Brunswick Manifesto) – অস্ট্রিয়া ফ্রান্সের রাজার স্বার্থ রক্ষার জন্য অত্যন্ত সচেষ্ট ছিল। ফ্রান্সের আইনসভা 1792 খ্রিস্টাব্দের 20 এপ্রিল ষোড়শ লুইকে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য করে।
প্রাশিয়া ও অস্ট্রিয়ার যৌথ সেনাবাহিনীর অধিনায়ক ব্রান্সউইক (Brunswick) 1792 খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে ঘোষণা করেন যে, ফ্রান্সের টুইলারিস (Tuileries) রাজপ্রাসাদ যদি কেউ আক্রমণ করে তবে তিনি আক্রমণকারী ফরাসিদের চরম শাস্তি দেবেন।
ব্রান্সউইক ঘোষণার প্রতিক্রিয়া – এই ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফরাসি জনগণ 10 আগস্ট 1792 খ্রিস্টাব্দে জেকোবিনদের নেতৃত্বে টুইলারিস রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে। প্রাণভয়ে রাজপরিবারের সদস্যরা আইনসভা কক্ষে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
রাজার ক্ষমতা লোপ – জনতার চাপে আইনসভা রাজাকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়। ফলে:
- ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটে।
- রাজতন্ত্রের অবসানে 1791 খ্রিস্টাব্দের সংবিধান বাতিল হয়ে যায়।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 14 ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের নতুন সংবিধানের সময় থেকে কীভাবে রাজার ক্ষমতা লোপ পায় ও রাজার মৃত্যুদণ্ড হয়?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A7%A7%E0%A7%AD%E0%A7%AF%E0%A7%A7-%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%A5%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%AA-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-1.webp)
ন্যাশনাল কনভেনশনের (National Convention) অধিবেশন – রাজতন্ত্র ও 1791 খ্রিস্টাব্দের সংবিধান বাতিল হওয়ার পর ফ্রান্সের শাসন পরিচালনা ও নতুন সংবিধান রচনার জন্য সর্বজনীন ভোটে ন্যাশনাল কনভেনশন আহ্বান করা হয়।
প্রজাতন্ত্র ঘোষণা – 1792 খ্রিস্টাব্দের 20 সেপ্টেম্বর নবনির্বাচিত ন্যাশনাল কনভেনশনের অধিবেশন শুরু হয়। ওই দিনেই ভ্যালমির যুদ্ধে ব্রান্সউইকের বাহিনী পরাজিত হয়। এই জয়ের উদ্দীপনায় ন্যাশনাল কনভেনশন ফ্রান্স থেকে রাজতন্ত্রকে উচ্ছেদ করে এবং ফ্রান্সকে প্রজাতন্ত্ররূপে ঘোষণা করে।
রাজার মৃত্যুদণ্ড – নতুন সরকার রাজার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে সে সম্পর্কে মতবিরোধ দেখা দেয়। রোবসপিয়র (Robespierre) বলেন, ‘দেশকে বাঁচাতে হলে রাজাকে মরতে হবে।’ (The King must die that the state may live)। শেষ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাজার প্রাণদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। 1793 খ্রিস্টাব্দের 21 জানুয়ারি রাজা ও রাজপরিবারের সবাইকে গিলোটিনে বধ করা হয়।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 15 ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের নতুন সংবিধানের সময় থেকে কীভাবে রাজার ক্ষমতা লোপ পায় ও রাজার মৃত্যুদণ্ড হয়?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A6%E0%A6%A3%E0%A7%8D%E0%A6%A1-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%BC.webp)
ফ্রান্সে কীভাবে জেকোবিন (Jacobin) শাসনের সূচনা হয়? ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের (Reign of Terror) উত্থান ও পতন কীভাবে হয়েছিল?
ন্যাশনাল কনভেনশনের শাসনের সূচনায় জিরন্ডিন (Girondin) দলের নেতৃত্বে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছিল। রাজার মৃত্যুদণ্ডের প্রশ্নে জিরন্ডিন ও জেকোবিন দলের মধ্যে তীব্র মতবিরোধ হয়।
জিরন্ডিনরা ছিল রাজার বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী, কিন্তু জেকোবিনরা ছিল রাজার বিচার ও মৃত্যুদণ্ডের সমর্থক। শেষ পর্যন্ত 1 ভোটের ব্যবধানে (361 – 360) জেকোবিনরা জয়লাভ করে এবং রাজা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
জেকোবিন দলের উত্থানের পটভূমি:
জেকোবিন দলের উত্থানের পিছনে বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান ছিল:
- ছদ্মবেশী রাজতন্ত্রী: জিরন্ডিনরা রাজাকে মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। জনগণের কাছে তারা হেয় হয় এবং ছদ্মবেশী রাজতন্ত্রী রূপে চিহ্নিত হয়।
- দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: জিরন্ডিনরা জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। ফলে জনগণ জিরন্ডিন শাসনে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছিল।
- সেনাপতি দুমারিজের বিশ্বাসঘাতকতা: জিরন্ডিন শাসনের আমলে সেনাপতি দুমারিজ যুদ্ধের সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে শত্রুপক্ষে যোগদান করে।
- জিরন্ডিনদের পতন: 1 জুন, 1793 খ্রিস্টাব্দে জেকোবিন নেতা রোবসপিয়রের নেতৃত্বে প্যারিসের জনগণ টুইলারিস রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে। এখানেই ন্যাশনাল কনভেনশনের সভা চলছিল। কনভেনশনের নেতারা জেকোবিনদের চাপে 2 জন জিরন্ডিন মন্ত্রী ও 29 জন সদস্যকে গ্রেফতারের আদেশ দেয়। এর ফলে জিরন্ডিনদের পতন ও জেকোবিনদের উত্থান ঘটে।
ফ্রান্সে জেকোবিন শাসন বা সন্ত্রাসের শাসন: জেকোবিনরা এক অভূতপূর্ব সংকটজনক মুহূর্তে ফ্রান্সের ক্ষমতা লাভ করেছিল। কেননা এই সময়:
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 16 ফ্রান্সে কীভাবে জেকোবিন ( Jacobin) শাসনের সূচনা হয়? ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের (Reign of Terror) উত্থান ও পতন কীভাবে হয়েছিল ?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8-Jacobin-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%BC-1.webp)
- ফ্রান্সে বিরোধী শক্তিজোট: ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া, স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশ ফ্রান্সের বিরুদ্ধে শক্তিজোট গঠন করেছিল।
- কৃষক বিদ্রোহ: লাভেন্দি প্রদেশে কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। রাজতন্ত্রের সমর্থক যাজক ও অভিজাতরাও এই সুযোগ গ্রহণ করে। ফলে অন্যান্য প্রদেশগুলিতেও বিদ্রোহ শুরু হয়।
- সন্ত্রাসের নীতি গ্রহণ: এই অবস্থায় জেকোবিন দল বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধানের জন্য কঠোর দমননীতি অনুসরণ করে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে। জেকোবিন দলের এই কঠোর শাসনকেই সন্ত্রাসের শাসন (Reign of Terror) বলা হয়।
স্থায়িত্ব: সন্ত্রাসের শাসন চলেছিল প্রায় 13 মাস — 1793 খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে 1794 খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ে ফ্রান্সের 30/35 হাজার মানুষকে গিলোটিনে বা অন্যভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
নেতা: সন্ত্রাসের শাসনের প্রধান পরিচালক ছিলেন জেকোবিন নেতা রোবসপিয়র (Robespierre)।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 17 ফ্রান্সে কীভাবে জেকোবিন ( Jacobin) শাসনের সূচনা হয়? ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের (Reign of Terror) উত্থান ও পতন কীভাবে হয়েছিল ?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8B%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A8-Jacobin-%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A6%AF%E0%A6%BC-2.webp)
হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া ও সন্ত্রাসের শাসনের অবসান: অনেক বিপ্লবী নেতা এবং জেকোবিন দলের অন্যতম প্রধান নেতা হিবার্ট (Hebert) ও দাঁতো (Danton) এই হত্যালীলার বিরোধী ছিলেন। তাঁরা রোবসপিয়রের নীতির বিরোধিতা করলে তাঁদেরও হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ফলে ফ্রান্সে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। জেকোবিন সনের আতঙ্কিত সদস্যরা 1794 খ্রিস্টাব্দের 27 জুলাই রোবসপিয়র ও তাঁর অনুগামীদের বন্দি করে। পরের দিন 28 জুলাই রোবসপিয়রকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। রোবসপিয়রের মৃত্যুদণ্ডের ফলে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসনের অবসান ঘটে।
সন্ত্রাসের শাসনের (Reign of Terror) সুফল ও কুফলগুলি লেখো
অথবা, সন্ত্রাসের শাসনের ফলাফলগুলি লেখো।
ভূমিকা: ফ্রান্সে 1793 খ্রিস্টাব্দের জুন থেকে 1794 খ্রিস্টাব্দের জুলাই পর্যন্ত জ্যাকোবিনরা (Jacobin) যে ধরনের শাসনকাঠামো গড়ে তুলেছিল, তা ফ্রান্স তথা বিশ্ব ইতিহাসে সন্ত্রাসের শাসন (Reign of Terror) নামে খ্যাত। ফ্রান্সের ইতিহাসে এই শাসনের বেশ কিছু সুফল ও কুফল দেখা গিয়েছিল।
সুফল: ফ্রান্সের ইতিহাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল একটি আপৎকালীন স্বৈরতন্ত্র (Dictatorship in Distress)। সন্ত্রাসের শাসনের সুফলগুলি নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে লক্ষণীয়:
- ফ্রান্সের নিরাপত্তা: বৈদেশিক আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ফ্রান্সে যে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিল সন্ত্রাসের শাসন প্রাথমিকভাবে সেই অরাজকতার অবসান ঘটিয়ে ফরাসি জনগণকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছিল।
- সুগঠিত সেনাবাহিনী: বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরোধ এবং অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের জন্য সন্ত্রাসের সংগঠকেরা একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেছিল। এর ফলে ফ্রান্সের সৈন্যসংখ্যা অল্প সময়ের মধ্যেই 10 লক্ষ অতিক্রম করে। সন্ত্রাসের কঠোর শাসন এই সেনাবাহিনীর মধ্যে গভীর জাতীয়তাবোধ ও কঠোর শৃঙ্খলা সঞ্চারিত করেছিল।
- অর্থনৈতিক সংস্কার: লেফেভর (Lefebvre), মাতিয়ে (Mathiez) প্রমুখ ঐতিহাসিকরা মনে করেন অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য সন্ত্রাসের শাসনের প্রয়োজন ছিল। এঁরা মনে করেন সন্ত্রাসের শাসনের জন্যই ফ্রান্সে কালোবাজারি দমন, সর্বোচ্চ মূল্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ন্যায্য হারে কর আদায় ইত্যাদি সম্ভব হয়েছিল।
- কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি: সন্ত্রাসের সংগঠকেরা দেশত্যাগী অভিজাতদের জমিগুলি দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বণ্টন করেন এবং সামন্ততন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে কৃষিক্ষেত্রে গতিশীলতা এনেছিলেন।
- বিপ্লবকে রক্ষা: সন্ত্রাসের সংগঠকেরা সন্দেহের আইন (Law of Suspect) ও নির্মম অত্যাচারের মাধ্যমে ভয়াবহ ধ্বংসের হাত থেকে বিপ্লবকে রক্ষা করেছিল। এজন্যই ঐতিহাসিক টেলর (Taylor) বলেছেন, ‘সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেছিল’ (The Terror saved the Revolution)।
কুফল: সন্ত্রাসের শাসনের নানা কুফলও ছিল বলে কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন। ঐতিহাসিক তেইন (Taine) মনে করেন, সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল মূলত ক্ষমতালোভী, সুবিধাভোগী ও দুর্বিনীত এক শ্রেণির মানুষের ক্রিয়াকলাপ। তাঁর মতে, সন্ত্রাসের শাসনে নিরাপত্তা বলে কিছু ছিল না, কারণ কেবল সন্দেহের বশেই বিনা বিচারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। বলা হয়, সন্ত্রাস দিয়ে বিপ্লব তার নিজের সন্তানদের গিলে ফেলে (The Revolution devoured its own children)। ডেভিড থমসনের (David Thomson) মতে, সন্ত্রাসের শাসনে নিহত মানুষের 70%-ই ছিল কৃষক ও মেহনতি মানুষ। জনৈক ঐতিহাসিকের মতে, সন্ত্রাসের রাজত্বকালে ফ্রান্সে চলেছিল কসাইবৃত্তির ঘৃণা মহামারি। এই সময়কালে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জীবনের নিরাপত্তা ছিল না। রোবসপিয়র (Robespierre) গির্জাকে যুক্তির মন্দির (Temple of Reason) বলে তুলে ধরেন। তাদের কার্যকলাপ ক্রমশ ফ্রান্সের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তাই লুই ব্ল্যাঙ্ক (Louis Blanc)-এর মতে – সন্ত্রাস বিপ্লবকে রক্ষা করেনি, সন্ত্রাস বিপ্লবকে পঙ্গু করে দেয়।
মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায়, ফ্রান্সের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য ফ্রান্সে সন্ত্রাসের মতো কঠোর শাসনের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু মহাসন্ত্রাস ছিল অপ্রয়োজনীয়। যুদ্ধের অবসানে যখন সন্ত্রাসের কঠোরতা হ্রাসের প্রয়োজন ছিল তখন রোবসপিয়র লাল সন্ত্রাস (Red Terror) চালু করে দেশে নতুন করে অরাজকতার সৃষ্টি করেছিলেন। তাই বলা যায়, সন্ত্রাসের শাসন ছিল ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলের সমষ্টি।
ফরাসি বিপ্লবে তৃতীয় এস্টেটের ভূমিকা কী ছিল? ফরাসি নারীসমাজ এই বিপ্লবে কী ভূমিকা পালন করেছিল?
বিপ্লব পূর্ববর্তী ফরাসি সমাজ – 1789 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের পূর্বে ফ্রান্সের সমাজ তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। প্রথম স্তরে ছিল যাজক সম্প্রদায়, দ্বিতীয় স্তরে ছিল অভিজাত সম্প্রদায় এবং তৃতীয় স্তরে ছিল দেশের অবশিষ্ট 98% মানুষ। ফরাসি বিপ্লবে এই তৃতীয় সম্প্রদায়ের (Third Estate) মানুষেরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল।
ফরাসি বিপ্লব ও তৃতীয় সম্প্রদায় – তৃতীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যেমন ছিল বিত্তবান বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ, তেমনি ছিল দীনদরিদ্র, শ্রমিক, কৃষক, দোকানদার, কারিগর ইত্যাদি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। মোট জনসংখ্যার 98 শতাংশ মানুষ সকল প্রকার সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে বিপ্লবমুখী হয়। স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতনও ঘটে তাদের হাতে। সাধারণ মানুষই সর্বত্র বিপ্লবের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে রাখে। বিপ্লবে শামিল হয় গ্রামীণ কৃষকরাও। ফ্রান্সের আবালবৃদ্ধবনিতা বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে 1789 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবে তৃতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ একই পতাকাতলে সমবেত হলেও এদের লক্ষ্য এক ছিল না। উচ্চ বুর্জোয়ারা লড়াই করেছিল সামাজিক মর্যাদার জন্য। অন্যদিকে শ্রমজীবী ও অন্যান্য মানুষের লক্ষ্য ছিল আর্থিক শোষণ থেকে মুক্তিলাভ করা। অর্থাৎ উচ্চ বুর্জোয়াদের সামাজিক মর্যাদা লাভের আকাঙ্ক্ষা, বুদ্ধিজীবীদের আদর্শবাদ ও সাধারণ মানুষের শোষণ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা সমন্বিত হয়ে 1789 খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবের পথ প্রশস্ত করেছিল।
ফরাসি বিপ্লব ও নারীসমাজ – ফরাসি বিপ্লবে নারীরাও সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। 1789 খ্রিস্টাব্দের 5 অক্টোবর কয়েক সহস্র প্যারিসের মহিলা “রুটি চাই” ধ্বনি দিতে দিতে ভার্সাই নগরীর দিকে যাত্রা করে। তাদের সঙ্গে 20 হাজার জাতীয় রক্ষীবাহিনী লাফায়েতের নেতৃত্বে ভার্সাইতে যায়। এই বিক্ষোভের মুখে পড়ে রাজা ষোড়শ লুই জাতীয় সভার আইনগুলিতে সম্মতি দেন। এই নারীবাহিনী রাজা, রানি ও তাঁদের পুত্রকে তাদের সঙ্গে প্যারিসে আসতে বাধ্য করে। রাজা ও তাঁর পরিবারকে একটি সাধারণ ছ্যাকরা ঘোড়ার গাড়িতে বসিয়ে প্যারিসে আনার সময় এই বিদ্রোহিনীরা ধ্বনি দেয়, “আমরা রুটিওয়ালা, রুটিওয়ালার স্ত্রী ও তাদের বালক পুত্রকে পেয়েছি” (We have the baker and the baker’s wife and the little cookboy)। ঐতিহাসিক রাইকার (Riker)-এর মতে, এই ঘটনা ছিল ফরাসি রাজতন্ত্রের শবযাত্রার প্রতীক (Funeral March of the Monarchy)। রাজাকে প্যারিসে আনার পর তাঁকে বিপ্লবী নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। জাতীয় পরিষদও প্যারিসের জনতার দ্বারা প্রভাবিত হয়। এভাবে নারীবাহিনীর দ্বারা ফ্রান্সে বিপ্লবের প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 18 ফরাসি বিপ্লব ও নারীসমাজ](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%A4%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%8F%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A7%8B%E0%A5%A4-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C-%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%95%E0%A7%80-%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%87.webp)
ফরাসি সমাজের নীচুতলার মানুষের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের সংযোগ কীরকম ছিল?
অথবা, ফরাসি বিপ্লবে শহরে ও গ্রামে দরিদ্র জনতার অংশগ্রহণ সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকা: ফরাসি সমাজের নীচুতলার মানুষ বলতে বোঝায় তৃতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত দরিদ্র কৃষক, শ্রমিক, সাঁকুলোৎ প্রভৃতি জনগোষ্ঠীকে। ফরাসি বিপ্লবে সমাজের এই নীচুতলার মানুষের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
অনেকের মতে, রাজাকে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন ডাকতে বাধ্য করেছিলেন অভিজাতরা। বুর্জোয়ারা (Bourgeoisie) রাজাকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য করেছিল। আর সমাজের নীচুতলার মানুষ বাস্তিল দুর্গের পতনের মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিপ্লবকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল।
নীচুতলার মানুষের ক্ষোভের কারণ: বিপ্লবের প্রাক্কালে কৃষক ও সাঁকুলোৎদের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে যে ক্ষোভ জমা হয়েছিল, ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 19 ফরাসি সমাজের নীচুতলার মানুষের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের সংযোগ কীরকম ছিল?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87-%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%93-%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%82%E0%A6%B6%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%A3-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A5%A4.webp)
কৃষক শোষণ: ফ্রান্সের কৃষকরা ছিলেন সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ও অত্যাচারের শিকার। সমাজের অধিকাংশ কৃষক ও ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকদের অবস্থা ছিল শোচনীয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: কৃষক ও সাঁকুলোৎদের একটি বড়ো সমস্যা ছিল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি শহরের গরিব মানুষদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল। দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ত কিন্তু তাদের মজুরি বাড়ত না। এজন্য তারা মাঝেমধ্যেই দাঙ্গা-হাঙ্গামাও করত।
নীচুতলার মানুষের বিপ্লবে অংশগ্রহণ:
শহরে: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণের সময় থেকে ফরাসি সমাজের নীচুতলার মানুষের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের সংযোগ ঘটে। শহরের দরিদ্র জনগণ বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ করেছিল। অনেক মানুষ রক্ষীদের গুলিতে প্রাণ হারায়।
![নবম শ্রেণী ইতিহাস - ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক - ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর 20 ফরাসি সমাজের নীচুতলার মানুষের সঙ্গে ফরাসি বিপ্লবের সংযোগ কীরকম ছিল?](http://solutionwbbse.com/wp-content/uploads/2023/05/%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%97-%E0%A6%95%E0%A7%80%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A6%AE-%E0%A6%9B%E0%A6%BF%E0%A6%B2.webp)
বাস্তিল দুর্গের পতনের সূত্র ধরে নীচুতলার মানুষরা প্যারিস শহরে লুঠপাট শুরু করে। এই সময় উচ্ছৃঙ্খল জনতা ফ্রান্সের রাজা ও রানিকে ভার্সাই থেকে প্যারিসে নিয়ে আসে।
গ্রামে: বাস্তিল দুর্গ অভিযান গ্রামের কৃষকদের উৎসাহিত করেছিল। তারা অত্যাচারী সামন্তপ্রভুদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করেছিল, দলিলপত্র পুড়িয়ে ব্যাপক আন্দোলন সংগঠিত করেছিল।
এই আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছিল মহা আতঙ্ক (Great Fear)। অনেকে প্রাণের ভয়ে শহরে পালিয়ে যায়। এইভাবে গ্রামাঞ্চলে কৃষক বিদ্রোহ সফল হয়েছিল।
জেকোবিনদের উত্থানে ও পতনে নীচুতলার মানুষের ভূমিকা: সমাজের নীচুতলার মানুষ জেকোবিন দলের সমর্থক ছিলেন। তাদের সাহায্যে জিরন্ডিনদের হটিয়ে জেকোবিনরা ক্ষমতা দখল করেন। জেকোবিন সরকার সমাজের নীচুতলার মানুষদের ভোটাধিকার দিয়েছিল। তাদের সুবিধার জন্য আইন অনুসারে জিনিসপত্রের দাম বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। জেকোবিন নেতা রোবসপিয়র সাঁকুলোৎ নেতাদের হত্যা করেন। এর জন্য রোবসপিয়রকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ফলে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন বা লাল সন্ত্রাসের অবসান ঘটে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ফরাসি বিপ্লবে সমাজের নীচুতলার মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও তারা খুব একটা লাভবান হয়নি। সমাজের নীচুতলার মানুষের কাছে ফরাসি বিপ্লব ছিল মরুভূমির মরীচিকার মতো, যার পিছনে তারা ছুটেছিল কিন্তু তার অনেকটাই থেকে গিয়েছিল অধরা। আর এটাই ছিল ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে বড়ো ট্র্যাজেডি।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো
ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল 1789 খ্রিস্টাব্দে স্বৈরাচারী বুরবোঁ (Bourbon) রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে। এই বিপ্লব ফ্রান্সের পাশাপাশি সমগ্র ইউরোপেও গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব
পুরাতন ব্যবস্থার অবসান – ফরাসি বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, রাজনীতি এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। 1789 খ্রিস্টাব্দের 4 আগস্টের পর তিনটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। চার্চের নিজস্ব আদালত, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও বিপুল সম্পত্তির পাশাপাশি অভিজাত সম্প্রদায়ের জন্মসূত্রে প্রাপ্ত সমস্ত সুযোগ-সুবিধার বিলোপ ঘটে। প্রতিষ্ঠিত হয় সাম্যের অধিকার।
পুরাতন রাজতন্ত্রের অবসান – ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে স্বৈরাচারী ও দৈবানুগ্রহীত রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং ইংল্যান্ডের অনুকরণে প্রতিষ্ঠিত হয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র।
জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা – ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন অংশে যে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রবণতা ছিল, বিপ্লবের ফলে তার অবসান ঘটে। আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান এবং দেশের সর্বত্র একই শাসন প্রবর্তিত হওয়ার ফলে জাতীয় ঐক্যের পথ প্রশস্ত হয়।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন – ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্সের শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। জাতীয় শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে সাহিত্য ও সাংবাদিকতাতেও লক্ষিত হয় নতুন ধারা। সংগীতের ক্ষেত্রে উৎসবের গান-এর সূচনা হয়েছিল। তবে পুরাতনতন্ত্রের ধারা তখনও সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়নি।
ইউরোপে প্রভাব – ফ্রান্সের মতো ইউরোপের অন্যান্য দেশেও ফরাসি বিপ্লবের গভীর প্রভাব পড়েছিল। নেপোলিয়ন ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল জয় করার ফলে ওইসব অঞ্চলে ফরাসি বিপ্লবের মহান আদর্শগুলি (সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা) ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে ইউরোপবাসী এক নতুন জীবনদর্শনের সন্ধান পায়।
সমগ্র বিশ্বে প্রভাব – ফরাসি বিপ্লব বিশ্ববাসীকে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার মহান আদর্শে দীক্ষিত করে। সর্বোপরি ফরাসি বিপ্লবে ফরাসি জনগণের সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুক্তি আন্দোলনের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ইতিহাসের প্রথম অধ্যায় ‘ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক’ – এর কিছু ব্যাখ্যামূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনি আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।