এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – পরিমাপ – পরিমাপ ও একক – প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায় “পরিমাপ” এর “পরিমাপ ও একক” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - পরিমাপ - পরিমাপ ও একক - প্রশ্ন ও উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

Contents Show

ভৌতরাশি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

ভৌতরাশি (Physical quantity) – পরিমাপযোগ্য যে-কোনো প্রাকৃতিক বিষয়কেই সাধারণভাবে ভৌতরাশি বা প্রাকৃতিক রাশি বা সংক্ষেপে রাশি বলা হয়।

উদাহরণ – একটি পাত্রে রাখা কিছু পরিমাণ জলের ভর, আয়তন, ঘনত্ব, উষ্ণতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যগুলিকে উপযুক্ত পরিমাপক ব্যবস্থার সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব। সুতরাং, এগুলির প্রত্যেকটিই ভৌতরাশি।

উদাহরণসহ প্রত্যেক ভৌতরাশির সংজ্ঞা দাও।

মান ও অভিমুখের ধারণার ওপর নির্ভর করে ভৌতরাশিকে দুটি মূল শ্রেণিতে ভাগ করা হয় – স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশি।

স্কেলার রাশি (Scalar quantity) – শুধুমাত্র মানের উল্লেখ বা নির্দেশের সাহায্যে যেসব রাশিকে বর্ণনা করা যায়, কোনো অভিমুখের ধারণার প্রয়োজন হয় না, তাদেরই স্কেলার রাশি বলে।

উদাহরণ – ভর, চাপ, আয়তন, তাপ, তড়িদাধান, তড়িৎপ্রবাহমাত্রা ইত্যাদি।

ভেক্টর রাশি (Vector quantity) – মান ও দিক – এই দুটি বৈশিষ্ট্যের সাহায্যেই যে-সকল ভৌতরাশিকে সঠিকভাবে বর্ণনা করা যায় এবং যে-সকল রাশির যোগ বা বিয়োগ সাধারণ বীজগাণিতিক পদ্ধতিতে করা যায় না, নির্দিষ্ট কতকগুলি জ্যামিতিক নিয়ম (সংযোজন সূত্র) অনুসারেই কেবলমাত্র করা সম্ভব হয়, তাদের ভেক্টর রাশি বলে।

উদাহরণ – সরণ, বেগ, ত্বরণ, বল, তড়িৎক্ষেত্রপ্রাবল্য, চৌম্বক আবেশ ইত্যাদি।

স্কেলার রাশিগুলি থেকে ভেক্টরকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে কী ব্যবহার করা হয়?

স্কেলার রাশিগুলি থেকে ভেক্টরকে আলাদা করে চিহ্নিত করতে চলরাশিগুলিতে তিরচিহ্নযুক্ত রেখা ব্যবহার করে (\(\overrightarrow a,\;\overrightarrow b\;…..\) ইত্যাদি) প্রকাশ করা হয়।

সময় একটি প্রবহমান রাশি হলে প্রবাহের অভিমুখ কী?

সময় একটি প্রবহমান রাশি, যার প্রবাহের অভিমুখ হল অতীত → বর্তমান → ভবিষ্যৎ। তা সত্ত্বেও সময়কে স্কেলার হিসেবেই গণ্য করা হয়, কারণ – সেটি ভেক্টর যোগ বা গুণের নিয়ম মেনে চলে না। একই কারণে নির্দিষ্ট অভিমুখ থাকলেও তড়িৎপ্রবাহমাত্রা স্কেলার রাশি।

কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখে চাপ কোন সবদিকে ক্রিয়া করে?

কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখে চাপ সবদিকে সমানভাবে ক্রিয়া করে। অর্থাৎ, চাপের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই। তাছাড়া, চাপের যোগ, বিয়োগ বা গুণ ভেক্টর বীজগণিতের নিয়ম অনুসারে হয় না। তাই চাপ স্কেলার রাশি।

ক্ষেত্রফলকে স্কেলার রাশি মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটি কী রাশি?

আপাত অর্থে, ক্ষেত্রফলকে স্কেলার রাশি মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি ভেক্টর রাশি। ক্ষেত্রফলের নির্দিষ্ট অভিমুখ বর্তমান, যা সংশ্লিষ্ট সামতলিক ক্ষেত্র বা তলের সঙ্গে লম্ব হয়। \(\overrightarrow S\) হল OABC সামান্তরিক আকৃতিযুক্ত তলের ক্ষেত্রফল ভেক্টর, যা তলের সঙ্গে লম্ব। লক্ষ করো \(\overrightarrow{S’}\) ও OABC তলের সঙ্গে লম্ব। তবে এক্ষেত্রে \(\overrightarrow S\) ধনাত্মক হলে \(\overrightarrow{S’}\) হবে ঋণাত্মক।

ক্ষেত্রফলকে স্কেলার রাশি মনে করা হলেও প্রকৃতপক্ষে সেটি কী রাশি?

ভৌতরাশির একক কাকে বলে? এককের প্রয়োজনীয়তা কী?

একক (Unit) – কোনো ভৌতরাশির যে নির্দিষ্ট ও সুবিধাজনক পরিমাণকে প্রমাণ (Standard or reference) বিবেচনা করে তার সাপেক্ষে সমজাতীয় অন্যান্য রাশিগুলির পরিমাপ করা হয়, তাকে একক বলে।
প্রদত্ত রাশিটির পরিমাণ ওই প্রমাণ মানের কত গুণ বা অংশ তা নির্ণয়ের মাধ্যমেই সংখ্যা ও একক সহযোগে পরিমাপের ফলাফলকে প্রকাশ করা হয়।

এককের প্রয়োজনীয়তা –

  • এককবিহীন পরিমাপ অসম্পূর্ণ, অর্থহীন ও ক্ষেত্রবিশেষে ত্রুটিযুক্ত হয়। যেমন – ‘দুটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ 2 ও 5’ – এই বক্তব্য থেকে বৃত্ত দুটির মধ্যে কোনটি বড়ো তা সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে r = 5mm ও R = 2cm হলে সাংখ্যমান ছোটো হলেও দ্বিতীয়টির ব্যাসার্ধ বেশি। আবার r = 5mm ও R = 2mm হলে প্রথমটি বড়ো। তাই সাংখ্যমান ও উপযুক্ত একক এই দুটি বৈশিষ্ট্যের সাহায্যেই ভৌতরাশির অর্থপূর্ণ প্রকাশ সম্ভব।
  • বিভিন্ন ভৌতরাশির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এককের ব্যবহার আবশ্যক।
ভৌতরাশির একক কাকে বলে? এককের প্রয়োজনীয়তা কী?

বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে একক দুই প্রকার। যথা –

  1. প্রাথমিক একক বা মূল একক,
  2. লব্ধ একক।
  • প্রাথমিক বা মূল একক (Fundamental unit) – যে ভৌত রাশিগুলির একক পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল নয় এবং যাদের একক থেকে অন্যান্য সমস্ত ভৌতরাশির একক গঠন করা যায়, তাদের প্রাথমিক বা মূল একক বলে। যেমন – দৈর্ঘ্য, ভর, সময় এই তিনটি ভৌতরাশির একক হল মূল একক। এক্ষেত্রে এই রাশিগুলিকে বলা হয় প্রাথমিক বা মূল রাশি।
  • লব্ধ একক (Derived unit) – সমজাতীয় বা ভিন্নজাতীয় এক বা একাধিক মূল এককের সাহায্যে যে-সমস্ত ভৌতরাশির একক গঠন করা হয়, সেই এককগুলিকে লব্ধ একক বলে। যেমন – ক্ষেত্রফলের একক দুটি দৈর্ঘ্যের একক দ্বারা গঠিত, তাই ক্ষেত্রফলের একক হল লব্ধ একক। এক্ষেত্রে এই রাশিগুলিকে বলা হয় লব্ধ রাশি।

কয়েকটি লব্ধ এককের নাম ও তারা কী কী মূল একক দ্বারা গঠিত তা লেখো।

নীচে কয়েকটি লব্ধ এককের নাম ও তারা কী কী মূল একক দ্বারা গঠিত তা দেখানো হল –

বেগ –

বেগ = সরণসময়

বা, বেগ = দৈর্ঘ্যের এককসময়ের একক

ক্ষেত্রফল

ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ

বা, ক্ষেত্রফল = দৈর্ঘ্যের একক × দৈর্ঘ্যের একক

∴ ক্ষেত্রফল = (দৈর্ঘ্যের একক)2

আয়তন

আয়তন = দৈর্ঘ্য × প্রস্থ × উচ্চতা

বা, আয়তন = দৈর্ঘ্যের একক × দৈর্ঘ্যের একক × দৈর্ঘ্যের একক

∴ আয়তন = (দৈর্ঘ্যের একক)3

ঘনত্ব

ঘনত্ব = ভরআয়তন

বা, ঘনত্ব = ভরের একক(দৈর্ঘ্যের একক)3

ত্বরণ 

ত্বরণ = বেগের পরিবর্তনসময়

বা, ত্বরণ=দৈর্ঘ্যের এককসময়ের একক×সময়ের একক

ত্বরণ=দৈর্ঘ্যের একক(দৈর্ঘ্যের একক)2

বল

বল = ভর×ত্বরণ=ভরের একক×দৈর্ঘ্যের একক(সময়ের একক)2

চাপ

চাপ = বল ÷ ক্ষেত্রফল

বা, চাপ=ভরের একক×দৈর্ঘ্যের একক(সময়ের একক)2÷(দৈর্ঘ্যের একক)2

চাপ =ভরের এককদৈর্ঘ্যের একক×(সময়ের একক)2

কার্য

কার্য = বল × সরণ

বা, কার্য=ভরের একক×দৈর্ঘ্যের একক(সময়ের একক)2×দৈর্ঘ্যের একক

কার্য=(ভরের একক)×(দৈর্ঘ্যের একক)2(সময়ের একক)2

ক্ষমতা –

ক্ষমতা = কার্যসময়

বা, ক্ষমতা=ভরের একক×(দৈর্ঘ্যের একক)2(সময়ের একক)2×1(সময়ের একক)

ক্ষমতা=ভরের একক×(দৈর্ঘ্যের একক)2(সময়ের একক)3

ভরবেগ

ভরবেগ = ভর × বেগ

ভরবেগ=ভরের একক×দৈর্ঘ্যের এককসময়ের একক

পরিমাপ কাকে বলে?

পরিমাপ (Measurement) – পূর্বনির্দিষ্ট বা স্বীকৃত নিয়মের ভিত্তিতে কোনো প্রাকৃতিক বিষয়ের প্রতি সংখ্যা আরোপ করার পদ্ধতিকেই পরিমাপ বলা হয়।

একটি বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে কীভাবে আমরা পরিমাপের ধারণাকে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি তা ব্যাখ্যা করো।

দৈনন্দিন জীবনে পরিমাপের ধারণা ব্যবহারের ব্যাখ্যা –

ধরা যাক, একটি রুলার বা স্কেলের সাহায্যে একটি পেনসিলের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করে পাওয়া গেল 10 সেমি। এক্ষেত্রে, রুলারের ওপর নির্দিষ্ট ব্যবধানে অঙ্কিত (অংশাঙ্কিত) একটি পূর্বনির্দিষ্ট ও সুবিধাজনক দৈর্ঘ্যের পরিমাণকে একটি প্রমাণ দৈর্ঘ্য (1 সেমি) বলে বিবেচনা করা হয়েছে, যার মানের 10 গুণই হল পেনসিলটির দৈর্ঘ্যের সমান। অর্থাৎ, ‘দৈর্ঘ্য’ – এই প্রাকৃতিক বিষয়টির প্রতি 10 সংখ্যাটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের (প্রমাণ দৈর্ঘ্য হিসাবে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বকে 1 সেমি বলে নির্বাচন) প্রেক্ষিতে আরোপ করা সম্ভব হয়েছে। এখানে 10 সংখ্যাটিকে বলা হয় পরিমাপের সাংখ্যমান এবং সেমি হল দৈর্ঘ্যের একটি একক

পরিমাপের ফলাফল কীভাবে প্রকাশ করা হয়?

নির্দিষ্ট ও স্বীকৃত একক মানের প্রাকৃতিক বিষয় বা বৈশিষ্ট্যের (ভৌতরাশির) সঙ্গে একই জাতীয় একটি অজানা ভৌতরাশির মানের তুলনা করার পদ্ধতিই হল পরিমাপ। সুতরাং,

পরিমাপের ফলাফল = বিষয় বা বৈশিষ্ট্যের সাংখ্যমান × একক।

একক পদ্ধতি কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী?

একক পদ্ধতি (System of units) – বিভিন্ন রাশিগুলির পরিমাণ যেহেতু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মূল রাশিগুলির ওপরই নির্ভরশীল, তাই নির্বাচিত কিছু মূল বা প্রাথমিক একক সহযোগে ভৌতরাশি পরিমাপের যে ব্যবস্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, তাকেই বলা হয় একক পদ্ধতি

একক পদ্ধতির প্রকারভেদ

এটি মূলত চার প্রকার যথা –

  • CGS পদ্ধতি
  • FPS বা ব্রিটিশ পদ্ধতি
  • MKS পদ্ধতি
  • SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি।

বিভিন্ন পদ্ধতিতে মৌলিক এককগুলির নাম ও চিহ্ন লেখো।

এককের বিভিন্ন পদ্ধতিতে মৌলিক বা মূল এককগুলির নাম ও চিহ্ন প্রদত্ত ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –

পদ্ধতিরাশিএককচিহ্ন
CGSদৈর্ঘ্য
ভর
সময়
সেন্টিমিটার (centimetre)
গ্রাম (gram)
সেকেন্ড (second)
cm
g
s
FPSদৈর্ঘ্য
ভর
সময়
ফুট (foot)
পাউন্ড (pound)
সেকেন্ড (second)
ft
Ib
s
MKSদৈর্ঘ্য
ভর
সময়
মিটার (metre)
কিলোগ্রাম (kilogram)
সেকেন্ড (second)
m
kg
s
SIদৈর্ঘ্য
ভর
সময়
তড়িৎপ্রবাহমাত্রা
উষ্ণতা
দীপন প্রাবল্য
পদার্থের পরিমাণ
মিটার (metre)
কিলোগ্রাম (kilogram)
সেকেন্ড (second)
অ্যামপিয়ার (ampere)
কেলভিন (kelvin)
ক্যান্ডেলা (candela)
মোল (mole)
m
kg
s
A
K
cd
mol

বর্তমানে SI -তে আরও দুটি রাশির একক নির্দিষ্ট করা হয়েছে। সেগুলি হল –

রাশিএককচিহ্ন
কোণরেডিয়ান (radian)rad
ঘনকোণস্টেরেডিয়ান (steradian)strd

SI ও MKS পদ্ধতির মূল পার্থক্যটি লেখো।

SI হল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিমাপ পদ্ধতি, যার মূল এককের সংখ্যা হল সাত। SI -তে দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় ছাড়াও অপর চারটি ভৌতরাশি হল – তাপমাত্রা, তড়িৎপ্রবাহ, দীপনপ্রাবল্য ও পদার্থের পরিমাণ। অন্যদিকে, MKS হল দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়ের একক দ্বারা গঠিত।

এককবিহীন রাশি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

এককবিহীন রাশি (Unitless quantity) – যেসব ভৌতরাশি দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত, সেইসব ভৌতরাশির কোনো একক না থাকায়, সেইসব ভৌতরাশিকে বলা হয় এককবিহীন রাশি। যেমন – পারমাণবিক গুরুত্ব, আপেক্ষিক গুরুত্ব।

CGS পদ্ধতি কী?

CGS পদ্ধতি – 1874 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতির প্রচলন হয়। এর উদ্ভাবক BAAS (British Association of Advanced Science)। এটি গসীয় পদ্ধতি (Gaussian system) নামেও পরিচিত। মূল এককগুলির মান অপেক্ষাকৃত ছোটো হলে বর্তমানে যথেষ্টই এই পদ্ধতির ব্যবহার আছে।

FPS পদ্ধতি কী?

FPS পদ্ধতি – এটি ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং পরিমাপক ব্যবস্থা। বর্তমানে গ্রেট ব্রিটেন, স্কটল্যান্ড এবং আয়ারল্যান্ডের কিছু বিশেষ অঞ্চলেই এই পদ্ধতির ব্যবহার সীমাবদ্ধ। একই এককের ছোটো, বড়ো বিভিন্ন উপএককগুলির মধ্যে সরল গাণিতিক সম্পর্ক না থাকায় এর ব্যবহার যথেষ্টই অসুবিধাজনক এবং সেই কারণেই সারা বিশ্বে এটি আজ প্রায় বর্জিত হয়েছে। তবে দৈনন্দিন জীবনে এই পদ্ধতির বিশেষ কিছু একক, যেমন – দৈর্ঘ্যের ক্ষেত্রে – ফুট, ইঞ্চি, কোয়ার্টার, আয়তনের ক্ষেত্রে – ব্যারেল, গ্যালন; ভরের ক্ষেত্রে – পাউন্ড, আউন্স ইত্যাদির ব্যবহার দেখা যায়।

MKS পদ্ধতি কী?

MKS পদ্ধতি – এটি মেট্রিক পদ্ধতি নামেও পরিচিত। দৈর্ঘ্য, ভর ও সময় এই তিন রাশির একক সহযোগে এই পদ্ধতি গঠিত হলেও পরবর্তীকালে তড়িৎপ্রবাহমাত্রার একক ‘অ্যামপিয়ার’ অন্যতম মূল একক হিসেবে এই পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয় এবং পদ্ধতিটির সংশোধিত রূপটিকে বলা হয় MKSA পদ্ধতি।

SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি কী?

অথবা, SI -তে সহায়ক একক কটি? তাদের নাম লেখো। এগুলি কোথায় ব্যবহৃত হত?

SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি – উপরোক্ত তিনটি পরিমাপ পদ্ধতিরই নিজস্ব সীমাবদ্ধতা এবং সুসংহতির অভাব লক্ষ করে বিজ্ঞানীরা একটি সর্বজনস্বীকৃত, সুসংগঠিত পরিমাপক ব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরিমাপ পদ্ধতিকে নির্ভুল ও সরলীকৃত করার উদ্দেশ্যে মূল বা প্রাথমিক এককের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব আসে। অবশেষে 1960 খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পরিমাপের আধুনিকতম ও পরিমার্জিত ব্যবস্থা হিসেবে সাতটি মূল একক সমন্বিত সংশোধিত MKS বা RMKS (Rationalised MKS System) পদ্ধতি হিসেবে এটি প্রস্তাবিত হয়, যা Le Systeme International d units বা System International (SI) নামে পরিচিত। 1974 খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত ওজন পরিমাপক বিষয়ক চতুর্দশ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে।

SI একক লেখার নিয়মগুলি লেখো।

SI একক ব্যবহারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম –

  • এককগুলি সর্বদা রোমান হরফে লিখতে হবে।
  • বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা বিজ্ঞানীর নামে নামাঙ্কিত এককগুলির প্রথম অক্ষরটি বড়ো হরফে লিখতে হবে। যেমন – নিউটনের জন্য N, হাজের জন্য Hz, জুলের জন্য J ইত্যাদি। এককের পুরো নাম কিন্তু ছোটো হরফে লিখতে হবে। যেমন – newton, hertz ইত্যাদি।
  • (নিউটন × মিটার) বা এজাতীয় যৌগিক এককগুলি লেখার সময় দুটি এককের মাঝখানে ফাঁক (space) রেখে লিখতে হবে। যেমন – N⋅m।
  • ভরবেগ, ত্বরণ ইত্যাদি যৌগিক বা লব্ধ রাশির একক ডট ইনভার্স (dot inverse) বা ঋণাত্মক ঘাতের চেহারায় প্রকাশ করতে হবে অর্থাৎ kg⋅m/s বা kg⋅m⋅s-1 (ভরবেগের ক্ষেত্রে) অথবা m/s2 বা m⋅s– 2 (ত্বরণের ক্ষেত্রে)।
  • বিজ্ঞানীদের নামে চিহ্নিত নয় এমন এককগুলি সর্বদা ছোটো হরফে লেখা হবে। যেমন – মিটারের জন্য m, কিলোগ্রামের জন্য kg ইত্যাদি।
  • এককের প্রতীকের শেষে ফুলস্টপ দেওয়া যাবে না, যেমন – cm কিন্তু cm. নয়।
  • ছোটো করে লেখার প্রয়োজনে এককগুলি সর্বদা একবচনে ব্যবহার হবে, কখনোই বহুবচনে নয়। যেমন – Hz কিন্তু Hzs কখনোই নয়।
  • কেলভিন এককে প্রকাশিত উষ্ণতায় কখনোই ডিগ্রি চিহ্ন ব্যবহৃত হবে না, যেমন – 273K কিন্তু 273°K নয়।

SI ও CGS পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধাগুলি কী কী?

SI ও CGS পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল –

  • SI ও CGS পদ্ধতি ব্যবহারের সুবিধা – এই দুটি পদ্ধতিতে কোনো রাশির এক একক থেকে অন্য বড়ো বা ছোটো এককে যেতে হলে শুধুমাত্র দশমিক বিন্দু সরালেই চলে। কোনো গুণ বা ভাগ করার দরকার হয় না। তাই SI বা CGS পদ্ধতিকে একত্রে মেট্রিক পদ্ধতি বলা হয়।
  • দুটি পদ্ধতিতে উপযুক্ত পূর্বসূচক বা উপসর্গ (যেমন – মেগা, গিগা, পেটা ইত্যাদি অথবা মাইক্রো, পিকো, ফেমটো ইত্যাদি) ব্যবহার করে বড়ো বা ছোটো বিভিন্ন একক তৈরি করা যায়।

ভগ্নাংশের ক্ষেত্রে –

উপসর্গ বা পূর্বসূচকচিহ্নঅর্থ (দশের ঘাত)
ডেসি (deci)d10-1 অংশ
সেন্টি (centi)c10-2 অংশ
মিলি (milli)m10-3 অংশ
মাইক্রো (micro)μ10-6 অংশ
ন্যানো (nano)n10-9 অংশ
পিকো (pico)P10-12 অংশ
ফেমটো (femto)f10-15 অংশ
অট্রো (atto)a10-18 অংশ
জেপটো (zepto)z10-21 অংশ
ইয়ক্টো (yocto)y10-24 অংশ

গুণিতাংশের ক্ষেত্রে –

উপসর্গ বা পূর্বসূচকচিহ্ন অর্থ (দশের ঘাত)
ডেকা (deca)da10 গুণ
হেক্টো (hecto)h102 গুণ
কিলো (kilo)k103 গুণ
মেগা (mega)M106 গুণ
গিগা (giga)G109 গুণ
টেরা (tera)T1012 গুণ
পেটা (peta)P1015 গুণ
একসা (exa)E1018 গুণ
জেট্টা (zetta)Z1021 গুণ
ইয়ট্টা (yotta)Y1024 গুণ

এই পূর্বসূচক বা উপসর্গগুলির সঙ্গে গ্রাম যোগ করলে CGS পদ্ধতিতে ভরের এককের ভগ্নাংশ ও গুণিতাংশ প্রকাশ পায় এবং মিটার যোগ করলে SI -তে দৈর্ঘ্যের এককের ভগ্নাংশ ও গুণিতাংশ প্রকাশ পায়।

এই পদ্ধতিতে ভর ও আয়তনের মধ্যে একটি সহজ সম্পর্ক আছে। যেমন – 1 লিটার জলের ভর এক কিলোগ্রাম।

CGS পদ্ধতি এবং SI -তে নিম্নলিখিত রাশির এককগুলির নাম লেখো। এগুলি মৌলিক না লব্ধ একক? তোমার উত্তরের কারণ ব্যাখ্যা করো। রাশি – ক্ষেত্রফল, আয়তন, ঘনত্ব, বল, ক্ষমতা, চাপ, বেগ ও ত্বরণ।

রাশিCGS পদ্ধতিতে এককSI – তে একক
ক্ষেত্রফলবর্গসেন্টিমিটার (cm2)বর্গমিটার (m2)
আয়তনঘনসেন্টিমিটার (cm3)ঘনমিটার (m3)
ঘনত্বগ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার (g/cm3)কিলোগ্রাম/ঘনমিটার (kg/m3)
বলডাইন (dyn)নিউটন (N)
ক্ষমতাআর্গ/সেকেন্ড (erg/s)জুল/সেকেন্ড (J/s) অথবা, ওয়াট (W)
চাপডাইন/সেন্টিমিটার2 (dyn/cm2)নিউটন/মিটার2 (N/m2) অথবা, পাস্কাল (Pa)
বেগসেন্টিমিটার/সেকেন্ড (cm/s)মিটার/সেকেন্ড (m/s)
ত্বরণসেন্টিমিটার/সেকেন্ড2 (cm/s2)মিটার/সেকেন্ড2 (m/s2)

উপরোক্ত এককগুলির প্রতিটিই লব্ধ একক। কারণ – প্রতিটি এককই একাধিক মৌলিক এককের সমন্বয়ে গঠিত।

SI এককে আরও কিছু লব্ধ এককের নাম ও চিহ্ন লেখো।

রাশিএককচিহ্ন
কার্য ও শক্তিজুলJ
তড়িদাধানকুলম্বC
বিভবপার্থক্যভোল্টV
রোধওহমΩ বা ohm
চৌম্বকক্ষেত্রটেসলাT
কম্পাঙ্কহার্জHz

তিনটি মৌলিক একক দিয়ে গঠিত স্কেলার রাশি ও ভেক্টর রাশির উদাহরণ দাও।

তিনটি মৌলিক একক (দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়ের একক) দিয়ে গঠিত এমন লব্ধ এককবিশিষ্ট স্কেলার রাশি হল – কার্য, চাপ, আপেক্ষিক তাপ। ভেক্টর রাশি – বল, ভরবেগ, টর্ক।

চারটি ভৌতরাশির নাম করো যাদের একক পৃথক পৃথক মূল একক দ্বারা গঠিত।

একক পৃথক পৃথক মূল একক দ্বারা গঠিত এমন চারটি ভৌতরাশির নাম হল –

ভৌতরাশিSI -তে একক
ভরবেগকিলোগ্রাম⋅মিটার⋅সেকেন্ড-1
বলকিলোগ্রাম⋅মিটার⋅সেকেন্ড-2 বা নিউটন
কার্যকিলোগ্রাম⋅মিটার2⋅সেকেন্ড-2 বা জুল
চাপকিলোগ্রাম⋅মিটার-1⋅সেকেন্ড-2 বা পাস্কাল

শুধুমাত্র একটি মৌলিক এককের সাহায্যে গঠিত এমন তিনটি লব্ধ এককের উদাহরণ দাও।

শুধুমাত্র একটি মৌলিক এককের সাহায্যে গঠিত এমন তিনটি একক হল –

  • লেন্সের ক্ষমতার একক ডায়াপ্টর (m-1)
  • কম্পাঙ্কের একক হার্ৎজ (s-1)
  • অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক (mol-1)

দৈর্ঘ্য ও সময় এই দুই মূল রাশির ওপর নির্ভরশীল এমন একটি করে স্কেলার ও ভেক্টর রাশির উদাহরণ দাও।

দৈর্ঘ্য ও সময় এই দুই মূল রাশির ওপর নির্ভরশীল এমন একটি স্কেলার রাশি হল – দ্রুতি (দূরত্ব/সময়)। সেইরকমই একটি ভেক্টর রাশি হল – বেগ (সরণ/সময়)।

দুটি ভেক্টর রাশি সহযোগে গঠিত স্কেলার রাশি হতে পারে কি?

দুটি ভেক্টর রাশি সহযোগে গঠিত স্কেলের রাশি হল –

কার্য = বল × সরণ। এখানে বল ও সরণ ভেক্টর রাশি হলেও কার্য একটি স্কেলার রাশি।

যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা -এর একক কী?

আমরা জানি,

যন্ত্রের যান্ত্রিক সুবিধা =যন্ত্রের দ্বারা অপসারিত বাধাযন্ত্রে প্রযুক্ত বল;

বাধা ও বল উভয়েরই একক একই হওয়ায় যান্ত্রিক সুবিধা একটি সংখ্যামাত্র। এর কোনো একক নেই।

প্রমাণ দৈর্ঘ্য ও প্রমাণ সময় কাকে বলে?

প্রমাণ দৈর্ঘ্য (Standard length) – আলো শূন্যস্থানে (1299792458) সেকেন্ড সময়ে যে দূরত্ব অতিক্রম করে, সেই দৈর্ঘ্যকে বলা হয় 1 মিটার বা প্রমাণ দৈর্ঘ্য [1983 খ্রিস্টাব্দের সংজ্ঞা অনুযায়ী]।

প্রমাণ সময় (Standard time) – পৃথিবীর কোনো স্থানের ভৌগোলিক মধ্যরেখাকে একবার অতিক্রম করে আবার সেইস্থানে ফিরে আসতে সূর্যের যে সময় লাগে, তাকে 1 সৌরদিন বলা হয়। 1 বছরের সকল সৌরদিনের গড় অর্থাৎ, গড় সৌরদিনের 186400 অংশকে প্রমাণ সময় অর্থাৎ, 1 সেকেন্ড বলে অভিহিত করা হয়।

SI -তে প্রমাণ মিটার ও প্রমাণ কিলোগ্রাম কাকে বলে?

প্রমাণ মিটার – 86 ভরসংখ্যাসম্পন্ন ক্রিপ্টন (86Kr) গ্যাসের উদ্দীপ্ত অবস্থায় কমলা বর্ণের যে আলো বিকীর্ণ হয়, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের 1650763.75 গুণ দৈর্ঘ্যকে 1 মিটার বলে।

প্রমাণ কিলোগ্রাম – প্যারিসের কাছে সেভার্স (Severes) নামক স্থানে আন্তর্জাতিক ওজন ও পরিমাপ দপ্তরে (International Bureau of Weights and Measures) রাখা প্ল্যাটিনাম-ইরিডিয়াম (Pt-Ir) সংকর ধাতুনির্মিত 3.9 সেমি ব্যাস ও 3.9 সেমি উচ্চতাবিশিষ্ট একটি নিরেট চোঙের ভরকে 1 কিলোগ্রাম বলে বিবেচনা করা হয়।

বর্তমানে 277K (4°C) উষ্ণতায় 1 লিটার বিশুদ্ধ জলের ভরকে SI -তে 1 কিলোগ্রাম বলে।

প্রমাণ সময়ের আধুনিক ধারণাটি বিবৃত করো।

প্রমাণ সময়ের আধুনিকতম ধারণা – প্রমাণ চৌম্বকক্ষেত্রে সিজিয়াম – 133 (133Cs) পরমাণুর 9,192,631,770 সংখ্যক কম্পনের জন্য প্রয়োজনীয় সময়কে আধুনিকতম ধারণায় 1 সেকেন্ড বলে বিবেচনা করা হয়।

আয়তন কাকে বলে? এর SI ও CGS পদ্ধতিতে এককগুলি লেখো। আয়তনের অন্যান্য পরিচিত এককগুলি কী?

আয়তন (Volume) – যে-কোনো পদার্থ বা বস্তু ত্রিমাত্রিক স্থান বা দেশে (Three dimensional space) যতখানি জায়গা অধিকার করে থাকে, তাকে ওই বস্তুর আয়তন বলে।

SI -তে আয়তনের একক হল ঘনমিটার (m3) এবং CGS পদ্ধতিতে আয়তনের একক হল ঘনসেন্টিমিটার (cm3)।

এ ছাড়া আয়তনের অন্যান্য এককগুলি হল লিটার (L), মিলিলিটার (mL), ঘনডেসিমিটার (dm3) ইত্যাদি।

লিটারের সংজ্ঞা দাও।

লিটার – 4°C বা 277K উষ্ণতায় 1 কিলোগ্রাম বিশুদ্ধ জলের আয়তনকে 1 লিটার বলে।

ঘনত্ব কাকে বলে? ঘনত্বের সঙ্গে বস্তুর ভরের সম্পর্ক কী?

অথবা, V আয়তনবিশিষ্ট একটি নিরেট বলের উপাদানের ঘনত্ব D হলে, তার ভর কত?

ঘনত্ব (Density) – কোনো পদার্থের একক আয়তনের ভরকে ওই পদার্থের ঘনত্ব বলা হয়। পদার্থের ভর M এবং আয়তন V হলে সংজ্ঞানুসারে, তার ঘনত্ব D=MV

ঘনত্ব ও ভরের সম্পর্ক – পদার্থের ভর (M) = পদার্থের আয়তন (V) × ঘনত্ব (D)।

CGS পদ্ধতি ও SI -তে ঘনত্বের এককগুলি কী কী? এই দুই পদ্ধতিতে ঘনত্বের এককের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

CGS পদ্ধতি ও SI -তে ঘনত্বের এককগুলি হল –

রাশিCGS এককSI একক
ঘনত্বগ্রাম/সেমি3কিগ্রা/মি3

দুই পদ্ধতিতে ঘনত্বের একাকর মাধ্য সম্পর্ক –

CGS পদ্ধতিতে পদার্থের উপাদানের ঘনত্বের একক হল গ্রাম/সেমি3

1 গ্রাম/সেমি3=1 গ্রাম1 সেমি3

বা, 1 গ্রাম/সেমি3=1 কিগ্রা1000×1(100)3মি3

বা, 1 গ্রাম/সেমি3=(100)31000কিগ্রা/মি3

বা, 1 গ্রাম/সেমি 3 = 1000 কিগ্রা/মি 3

∴ SI -তে কোনো পদার্থের ঘনত্ব CGS পদ্ধতিতে তার ঘনত্বের সাংখ্যমান × 1000।

যেমন – লোহার উপাদানের ঘনত্ব = 7.8 গ্রাম/সেমি 3

= (7.8 × 1000) কিগ্রা/মি 3

= 7800 কিগ্রা/মি 3

∴ লোহার উপাদানের ঘনত্ব 7800 কিগ্রা/মি 3

ঘনত্বের ধারণার ব্যাবহারিক গুরুত্ব কী?

ঘনত্বের ধারণার ব্যাবহারিক গুরুত্ব – ঘনত্ব পদার্থের উপাদানের বৈশিষ্ট্য। এর সাহায্যে সম আয়তনযুক্ত দুটি বস্তুর মধ্যে কোনটি ভারী অথবা তরলে প্রবেশ করানো কোনো বস্তুর ওই তরলে ভেসে থাকা বা ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা এবং ভেসে থাকলে তার আয়তনের কত অংশ তরলের ভিতরে অবস্থান করে ইত্যাদি তথ্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়। যেমন – লোহার ঘনত্ব (7.8 গ্রাম/সেমি3) জল অপেক্ষা (1 গ্রাম/সেমি3) বেশি, কিন্তু পারদ (13.6 গ্রাম/সেমি3) অপেক্ষা কম। তাই লোহা জলে ডুবে যায়, কিন্তু পারদে ভাসে।

বায়বীয় পদার্থের ঘনত্ব কোন এককে প্রকাশ করা যায়?

বায়ু বা অন্যান্য গ্যাসীয় পদার্থ হালকা হওয়ায় গ্যাস বা বায়বীয় পদার্থের ঘনত্ব সাধারণত গ্রাম/লিটার এককে প্রকাশ করা হয়। দ্রবণের গাঢ়ত্ব প্রকাশ করতেও একই এককের সাহায্য নেওয়া হয়।

প্রাথমিক মানক বলতে কী বোঝায়?

প্রাথমিক মানক (Primary standard) – নির্দিষ্ট ভৌতরাশির কোনো এককের নির্ভুলতা নিশ্চিত করতে এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে স্বীকৃত প্রথা অনুযায়ী রাশিটির একটি প্রামাণ্য নমুনা প্রস্তুত করা হয়, যাতে তার মান শর্ত নিরপেক্ষভাবে অপরিবর্তনীয় থাকে। এই স্বীকৃত মানটিকেই প্রাথমিক মানক বলা হয়ে থাকে। পরিস্থিতিভেদে এই নমুনার গুণিতক বা গুণিতাংশকেও একক হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

পরিমাপের জন্য নির্ধারিত প্রমাণ এককের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত?

প্রমাণ এককের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি থাকা বাঞ্ছনীয় –

  • এককটি সুসংজ্ঞাত (well defined) হওয়া উচিত।
  • এর মান এমন হওয়া আবশ্যক, যাতে বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে এর ব্যবহার সুবিধাজনক হয়।
  • অবস্থান ও সময় পরিবর্তনের নিরিখে এর মান যেন অপরিবর্তনীয় থাকে।
  • এককটি যেন উষ্ণতা, চাপ, পারিপার্শ্বিক মাধ্যম ইত্যাদি ভৌত শর্ত ও অবস্থা নিরপেক্ষ হয়।

FPS পদ্ধতি অনুযায়ী ভরের আন্তর্জাতিক মানকটি কী?

FPS পদ্ধতি অনুযায়ী ভরের আন্তর্জাতিক মানকটি হল পাউন্ড। লন্ডন শহরে বোর্ড অব ট্রেড (Board of Trade) -এর দপ্তরে সংরক্ষিত 1.35 ইঞ্চি উচ্চতা এবং 1.15 ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট একখণ্ড নিরেট প্ল্যাটিনাম চোঙের ভরকে এক পাউন্ড বলা হয়।

পরিমাপের ফ্রেঞ্চ পদ্ধতি কাকে বলে?

CGS পদ্ধতিরই অপর নাম ফ্রেঞ্চ পদ্ধতি। 1874 খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতি চালু হওয়ায় এই পদ্ধতিটিকে ‘পরিমাপের ফ্রেঞ্চ পদ্ধতি‘ বলে।

পরিমাপের পরম বা চরম একক কাকে বলে?

পরম একক – যে-কোনো পরিমাপ পদ্ধতিতে মূল রাশি সমূহের একক ও সেগুলি থেকে সরাসরি উদ্ভূত লব্ধ এককগুলিকে পরম বা চরম একক বলা হয়।

এজাতীয় এককগুলির সাহায্যে নির্ণীত কোনো ভৌতরাশির মান মহাবিশ্বের সর্বত্র অবস্থান ও শর্ত নিরপেক্ষভাবে ধ্রুবক থাকে।

উদাহরণ – ডাইন, নিউটন, ওয়াট, জুল ইত্যাদি।

ব্যাবহারিক একক বলতে কী বোঝায়? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

ব্যাবহারিক একক – ভৌতরাশির সাংখ্যমান ও তার পরিমাপে ব্যবহৃত এককের মধ্যে ব্যস্ত সম্পর্ক থাকে। তাই ক্ষেত্রবিশেষে কোনো নির্দিষ্ট এককের পরিবর্তে তার কোনো উপযোগী ভগ্নাংশ বা গুণিতক আর সেটি সুবিধাজনক হওয়ায়, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে এটিকে একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এইভাবে নির্বাচিত একককে বলা হয় ব্যাবহারিক একক

উদাহরণ – ক্ষেত্রফলের CGS ও SI একক যথাক্রমে বর্গসেমি ও বর্গমিটার হলেও বড়ো কৃষিজমির ক্ষেত্রফল প্রকাশের কাজে বর্গ কিলোমিটারকে ক্ষেত্রফলের ব্যাবহারিক একক হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

জল, বায়ু, পারদ – এদের ভৌতরাশি বলা যায় কি?

জল, বায়ু, পারদ ইত্যাদি আদৌ কোনো পরিমেয় বৈশিষ্ট্য বা বিষয় নয়। এদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য; যেমন – ভর, ওজন, ঘনত্ব, আয়তন ইত্যাদিরই কেবল পরিমাপ সম্ভব।

কোনো বস্তুর বর্ণ, গন্ধ, কাঠিন্য, স্বাদ ইত্যাদিকে কি ভৌতরাশি বলা যায়?

কোনো বস্তুর বর্ণ, গন্ধ, কাঠিন্য, স্বাদ ইত্যাদিকে ভৌতরাশি বলা যায় না। কারণ – এগুলিকে পরিমাপ করে এদের মান নির্ণয় করা যায় না।

SI -তে মূল একক হিসেবে কেবলমাত্র সাতটি ভৌতরাশির একককেই নেওয়া হয় কেন?

প্রকৃতিতে অসংখ্য ভৌতরাশি আছে। প্রতিটি ভৌতরাশিকে পরিমাপ পদ্ধতির সরলীকরণের উদ্দেশ্যেই চরিত্রগতভাবে প্রকৃতই মৌলিক না হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিসূচক আরও চারটি একক অ্যামপিয়ার, উষ্ণতা, দীপন প্রাবল্য ও মোলকে MKS পদ্ধতিতে সংযুক্ত করে ওই পদ্ধতির পরিমার্জন ঘটানো হয়। এখন এই সাতটি এককের যথাযথ ব্যবহারের দ্বারা অন্যান্য ভৌতরাশির একক তৈরি করা যায়। এই কারণেই SI -তে প্রাথমিক এককের স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

অ্যামপিয়ার, উষ্ণতা, দীপন প্রাবল্য ও মোল এককগুলি দৈর্ঘ্য, ভর বা সময়ের এককের মতো মৌলিক নয় কেন?

অ্যামপিয়ার, উষ্ণতা, দীপন প্রাবল্য ও মোল এককগুলি দৈর্ঘ্য, ভর বা সময়ের এককের মতো মৌলিক নয়, কারণ – গঠনগত দিক থেকে এগুলিও কোনো না কোনোভাবে মিটার, কিগ্রা, সেকেন্ড ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল। পরিমাপ পদ্ধতিকে বহুল ব্যবহারযোগ্য ও গাণিতিক জটিলতার হাত থেকে মুক্ত রাখার স্বার্থে এদের মৌলিক এককের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

SI ও CGS পদ্ধতিকে দশমিক পদ্ধতি বলে কেন?

অথবা, মেট্রিক পদ্ধতিকে দশমিক পদ্ধতি বলে কেন?

SI এবং CGS পদ্ধতিতে বা মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো একক তার ঠিক পরের ছোটো এককের 10 গুণ এবং তার ঠিক আগের বড়ো এককের \(\frac1{10}\) গুণ। অর্থাৎ, কোনো রাশির এক একক থেকে অন্য বড়ো বা ছোটো এককে যেতে হলে শুধুমাত্র দশমিক বিন্দু সরালেই চলে, কোনো গুণ বা ভাগ করার দরকার হয় না। তাই SI বা CGS পদ্ধতিকে বা মেট্রিক পদ্ধতিকে দশমিক পদ্ধতি বলে। যেমন – 1.152 কিমি = 115.2 ডেকামি= 1152.0 মিটার।

FPS পদ্ধতির তুলনায় পরিমাপের ক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা সুবিধাজনক কেন?

FPS পদ্ধতির তুলনায় পরিমাপের ক্ষেত্রে মেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা সুবিধাজনক, কারণ –

  • মেট্রিক পদ্ধতিতে কোনো রাশির এক একক থেকে অন্য বড়ো বা ছোটো এককে যেতে হলে শুধুমাত্র দশমিক বিন্দু সরালেই চলে। কোনো গুণ বা ভাগ করার দরকার হয় না। অন্যদিকে, FPS পদ্ধতিতে একক পরিবর্তন করতে গেলে বিভিন্ন সংখ্যা, যেমন – 3, 12, 16, 28, 1760 দ্বারা গুণ বা ভাগ করতে হয়, যা খুবই অসুবিধাজনক। যেমন – 16 গ্রাম = 1 আউন্স (oz) 16 oz = 1 পাউন্ড (Ib), 28 Ib = 1 কোয়ার্টার ইত্যাদি।
  • মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য ও ভরের এককের সঙ্গে বিভিন্ন উপসর্গ যোগ করলে বড়ো বা ছোটো এককগুলি লেখা যায়। অন্যদিকে, FPS পদ্ধতিতে এইরকম কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না।
  • মেট্রিক পদ্ধতিতে ভর ও আয়তনের মধ্যে একটি সরল ও সুবিধাজনক সম্পর্ক আছে। যেমন – 4°C উষ্ণতায় 1 ঘনসেমি জলের ভর 1 g বা 4°C উষ্ণতায় 1 লিটার জলের ভর 1 কিলোগ্রাম। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে জলের আয়তন যত লিটার, সেই পরিমাণ জলের ভর তত কিলোগ্রাম। অপরপক্ষে, FPS পদ্ধতিতে ভর ও আয়তনের মধ্যে এরকম কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন – 4°C উষ্ণতায় 1 ঘনফুট বিশুদ্ধ জলের ভর 62.5 পাউন্ড।

বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রাথমিক এককগুলিকে মৌলিক একক বলার কারণ কী?

মৌলিক একক বলার কারণ – দৈর্ঘ্য, ভর ও সময়ের একক (CGS ও MKS) এবং SI -তে অতিরিক্ত চারটি অর্থাৎ, উষ্ণতা, প্রবাহমাত্রা, দীপনপ্রাবল্য ও পদার্থের পরিমাণ – এই রাশিগুলির একককে মূল বা প্রাথমিক একক বলার কারণ –

  • এই রাশিগুলির একক পরস্পর নিরপেক্ষ অর্থাৎ, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল নয়।
  • এই রাশিগুলিকে অন্য কোনো সরলতর রাশির গুণফল বা ভাগফল হিসাবে প্রকাশ করা যায় না।
  • এই সাতটি এককের এক বা একাধিকের সাহায্যে অন্য যে-কোনো ভৌতরাশির একক গঠন করা সম্ভব।

কোনো ভৌতরাশির মান ও অভিমুখ থাকলেই কি তাকে ভেক্টর রাশি বলা যায়? উদাহরণ দিয়ে বোঝাও

কোনো রাশির যদি নির্দিষ্ট মান ও অভিমুখ থাকে এবং ওই রাশির যোগ বা বিয়োগ নির্দিষ্ট সংযোজন উপপাদ্য (সামান্তরিক সূত্র, ত্রিভুজ সূত্র ইত্যাদি) অনুসারে সম্পাদিত হয়, তবেই তাকে ভেক্টর রাশি বলা যায়।

তাই কোনো ভৌতরাশি প্রথম শর্তটি পূরণ করলেও দ্বিতীয়টি যদি মান্য না করে, তবে তাকে ভেক্টর বলা যায় না। যেমন – তড়িৎ প্রবাহমাত্রার নির্দিষ্ট মান ও অভিমুখ থাকলেও এটি স্কেলার রাশি, কারণ দুই বা ততোধিক প্রবাহমাত্রার যোগফল সাধারণ বীজগণিতের নিয়মে সাংখ্যমানের যোগের দ্বারাই সম্পন্ন হয়, সংযোজন সূত্র ব্যবহার করে নয়।

সব ভৌতরাশির একক হয় না – কারণ ব্যাখ্যা করো।

কোনো ভৌতরাশির একক নাও থাকতে পারে। কোনো প্রাকৃতিক রাশি দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত হিসাবে প্রকাশযোগ্য হলে তার কোনো একক থাকে না। আনুপাতিক চেহারায় দুটি অভিন্ন রাশির ভাগফল হিসাবে প্রকাশযোগ্য হওয়ায় অনুপাতটি এক্ষেত্রে বিশুদ্ধ সংখ্যা হয়। তাই এধরনের রাশিগুলি এককবিহীন বা এককবর্জিত হয়ে থাকে।

যেমন – কোনো যৌগের আণবিক ভর = যৌগের 1টি অণুর ভর1টি C12 পরমাণুর ভরের 112 অংশ

একই কারণে পারমাণবিক ভর, দ্রাব্যতা, আপেক্ষিক গুরুত্ব, প্রতিসরাঙ্ক ইত্যাদি রাশির একক নেই।

1 কেজি আলুর দাম 20 টাকা – এই বাক্যে আলু ও আলুর পরিমাণের মধ্যে কোনটি ভৌতরাশি ও কেন?

এক্ষেত্রে আলুর ভর = 1 kg, যা পরিমাপযোগ্য ভৌতরাশি। তাই আলুর পরিমাণটি (ভর) ভৌতরাশি। এ ছাড়া আলুর পরিমাণ বা ভরকে তুলাযন্ত্র বা ওই জাতীয় যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করা সম্ভব হলেও আলু একটি পদার্থ, যা পরিমাপ করা যায় না। তাই আলু ভৌতরাশি নয়।

SI -তে প্রমাণ মিটারের সংজ্ঞায় নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও উপাদানের উল্লেখ করা প্রয়োজন কেন?

SI -তে প্রমাণ মিটারের সংজ্ঞায় নির্দিষ্ট উপাদানের উল্লেখ করা প্রয়োজন, কারণ – উপাদানভেদে একই উষ্ণতার পরিবর্তনে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি দণ্ডের একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের মানের পরিবর্তনও ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার উপাদান পালটে দিলে বা ক্রিপ্টন গ্যাসের পরিবর্তে অন্য গ্যাস ব্যবহার করলে 1 মিটারের মানটি পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই এককের প্রামাণ্যতা বজায় রাখার স্বার্থে প্রমাণ মিটারের সংজ্ঞায় দণ্ডের উপাদান (প্ল্যাটিনাম ও ইরিডিয়ামের সংকর ধাতু) ও উষ্ণতার উল্লেখ করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া প্ল্যাটিনাম ও ইরিডিয়ামের সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি দণ্ডটি সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। ফলে ওই ধাতু দণ্ডের উপর দুটি নির্দিষ্ট দাগের মধ্যবর্তী দূরত্ব বা এক প্রমাণ মিটারের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম হয়।

লিটারের সংজ্ঞায় 4°C উষ্ণতার উল্লেখ থাকে কেন?

লিটারের সংজ্ঞায় সাধারণত 4°C উষ্ণতার উল্লেখ থাকে। কারণ – 4°C -এ জলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি ও আয়তন সবচেয়ে কম। জলের উষ্ণতা 4°C -এর বেশি বা কম হলে জলের ঘনত্ব কমে ও আয়তন বেড়ে যায়। ফলে 1 কিলোগ্রাম জলের আয়তন 1 লিটার অপেক্ষা বেশি হয়। তাই জলের নির্দিষ্ট আয়তন বোঝাতে লিটারের সংজ্ঞায় 4°C উষ্ণতার জলের কথা উল্লেখ করা হয়।

1 লিটার = কত ঘনসেন্টিমিটার ও ঘনডেসিমিটার?

1 লিটার = 10-3 ঘনমিটার = 103 ঘনসেন্টিমিটার।

1 লিটার = 103 মিলিলিটার = 1 ঘনডেসিমিটার।

জলের আয়তন পরিমাপের ক্ষেত্রে 4°C উষ্ণতা উল্লেখের প্রয়োজনীয়তা কী?

জলের আয়তন 4°C উষ্ণতা উল্লেখের কারণ – সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, উষ্ণতা বাড়ালে পদার্থের আয়তন বাড়ে এবং ঘনত্ব কমে। কিন্তু জলের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়। 0°C উষ্ণতায় রাখা কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ জলের উষ্ণতা বাড়াতে থাকলে জলের আয়তন না বেড়ে ক্রমশ কমতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে 4°C -এ জলের আয়তন সবচেয়ে কম এবং ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি হয়। 4°C -এর পর আরও উষ্ণতা বাড়াতে থাকলে জলের আয়তন সাধারণ নিয়ম অনুযায়ীই বাড়তে থাকে এবং ঘনত্ব কমতে থাকে। 0°C থেকে 4°C উষ্ণতা পর্যন্ত জলের এই নিয়মবিরুদ্ধ প্রসারণকে জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ বলে। এই জন্যই জলের আয়তন পরিমাপের ক্ষেত্রে 4°C উষ্ণতা উল্লেখের প্রয়োজন।

পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর

স্কেলার রাশি (Scalar quantity) ও ভেক্টর রাশি (Vector quantity) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

স্কেলার রাশি (Scalar quantity) ও ভেক্টর রাশি (Vector quantity) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়স্কেলার রাশি (Scalar quantity)ভেক্টর রাশি (Vector quantity)
সংজ্ঞাশুধুমাত্র মান আছে, কিন্তু অভিমুখ নেই এমন রাশিকে স্কেলার রাশি বলে। উদাহরণ – ভর, সময়, চাপ, উষ্ণতা ইত্যাদি।মান ও অভিমুখ দুই-ই বর্তমান এবং যাদের যোগ বা বিয়োগ বিশেষ সংযোজন সূত্র মেনে করতে হয় এমন রাশিগুলিই ভেক্টর রাশি হিসেবে পরিচিত। উদাহরণ – ক্ষেত্রফল, বল, ভরবেগ, সরণ ইত্যাদি।
রাশির পরিবর্তনমানের পরিবর্তনে এই রাশির পরিবর্তন ঘটে।মান বা অভিমুখ বা উভয়েরই পরিবর্তনে এই রাশির পরিবর্তন ঘটে।
যোগ বা বিয়োগের কৌশলশুধুমাত্র সাংখ্যমানের যোগ বা বিয়োগ দ্বারাই এই রাশির যোগ বা বিয়োগ সম্ভব।মানের সঙ্গে অভিমুখও বিবেচনা করতে হয় বলে ভেক্টর রাশির যোগ শুধুমাত্র সাংখ্যমানের যোগ বা বিয়োগ দ্বারা নয়, নির্দিষ্ট নিয়ম (ভেক্টর বীজগণিত) মেনে করতে হয়।
গুণফলদুটি স্কেলার রাশির গুণফল সর্বদাই প্রকৃতিগত ভাবে স্কেলার রাশি হয়।দুটি ভেক্টর রাশির গুণফল একটি স্কেলার অথবা একটি ভেক্টর রাশি হয়ে থাকে। যেমন – কৃতকার্য = বল × সরণ (স্কেলার গুণন); কৌণিক ভরবেগ = ব্যাসার্ধ ভেক্টর × ভরবেগ (ভেক্টর গুণন)।

CGS পদ্ধতি ও SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

CGS পদ্ধতি ও SI বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়CGS পদ্ধতি (CGS system)SI পদ্ধতি (SI system)
সংজ্ঞাদৈর্ঘ্য, ভর ও সময় – এই তিনটি প্রাথমিক বা মৌলিক রাশির একক দ্বারা গঠিত পরিমাপ পদ্ধতি।দৈর্ঘ্য, ভর, সময়, পদার্থের পরিমাণ, উষ্ণতা, প্রবাহমাত্রা ও দীপনপ্রাবল্য – এই রাশিগুলির একককে মৌলিক একক বিবেচনা করে গঠিত পরিমাপ পদ্ধতি।
প্রাথমিক এককের সংখ্যাতিনটি – মিটার, কিলোগ্রাম ও সেকেন্ড।প্রাথমিক একক সংখ্যায় সাতটি – মিটার, কিলোগ্রাম, সেকেন্ড, মোল, কেলভিন, অ্যামপিয়ার ও ক্যান্ডেলা।
পরিমার্জনএই পরিমাপ পদ্ধতির কোনো সংশোধন বা পরিমার্জন আজ পর্যন্ত হয়নি।এটি MKS পদ্ধতির সংশোধিত ও পরিমার্জিত রূপ।
উপযোগিতাএটি পরিমাপের পরিচিত ও বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতির অন্যতম।এটি হল আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিমাপ পদ্ধতি।

গাণিতিক প্রশ্নাবলি

আলোকবর্ষের প্রয়োজনীয় সূত্রটি লিখ?

আলোকবর্ষের প্রয়োজনীয় সূত্রটি হল –

1 মিটার = \(\frac1{9.46\times10^{15}}\) আলোকবর্ষ

আলোকবর্ষ এককে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত? (দেওয়া আছে, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে 8 min 20 sec সময় লাগে)

8 min 20 sec = {(8 × 60) + 20) second = 500 sec

আলো 1 sec -এ যায় 3 × 108 m

∴ 500 sec -এ যায় (3 × 108 × 500) m = 1500 × 108 m

এখন, 9.46 × 1015 m = 1 light years

∴ 1 m = \(\frac1{9.46\times10^{15}}\) light years

∴ 1500 × \(10^8\) m = \(\frac1{9.46\times10^{15}}\) light years

বা, 1500 × \(10^8\) m = 158.56 × 10-7 light years

বা, 1500 × \(10^8\) m = 1.58 × 10-5 light years

∴ আলোকবর্ষ এককে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 1.58 × 10-5 light years

সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছোতে প্রায় 500 sec সময় লাগে। পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব ‘আলোক মিনিট’ এককে কত হবে?

1 মিনিট সময়ে 3 × 108 m/sec বেগে আলো যে দূরত্ব অতিক্রম করে, তাকে আলোক মিনিট (Light minute) বলে।

পৃথিবী থেকে সূর্যে আলো পৌঁছোতে সময় নেয় (t) = 500 second = \(\frac{500}{60}\) minute = 8.33 আলোক মিনিট।

∴ পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব = (8.33 × 1) আলোক মিনিট।


আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায় “পরিমাপ” এর “পরিমাপ ও একক” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Share via:

মন্তব্য করুন