আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “শব্দের বৈশিষ্ট্য” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
সুর ও স্বর বলতে কী বোঝায়?
সুর (Tone) – একটিমাত্র নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কবিশিষ্ট অর্থাৎ একমাত্রিক শব্দকে সুর বলা হয়। উদাহরণ – সুরশলাকার কম্পনে উৎপন্ন শব্দ।
স্বর (Note) – একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সুরের সমন্বয়ে সৃষ্ট শব্দকে স্বর বলা হয়। উদাহরণ – যে-কোনো বাদ্যযন্ত্র যেমন – হারমোনিয়াম, সেতার, বাঁশি ইত্যাদি থেকে নির্গত শব্দ।
মূলসুর -এর সংজ্ঞা লেখো।
মূলসুর (Fundamental tone) – কোনো স্বরে উপস্থিত সুরগুলির মধ্যে যার কম্পাঙ্ক নিম্নতম, তাকেই মূলসুর বা প্রধান সুর বলা হয়।
উপসুর -এর সংজ্ঞা লেখো।
উপসুর (Overtone) – কোনো স্বরের মধ্যে মূলসুর ছাড়া অন্যান্য যে সুরগুলি উপস্থিত থাকে, তাদের সকলকেই উপসুর বলা হয়।
সমমেল -এর সংজ্ঞা লেখো।
সমমেল (Harmonics) – উপসুরগুলির মধ্যে যেগুলির কম্পাঙ্ক মূলসুরের সরল গুণিতক, তাদের সমমেল বলা হয়।
অষ্টক -এর সংজ্ঞা লেখো।
অষ্টক (Octave) – কোনো সুরের কম্পাঙ্ক অন্য একটি সুরের কম্পাঙ্কের দ্বিগুণ হলে, প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির অষ্টক বলা হয়।
একটি সেতার নিঃসৃত স্বরের মধ্যে নীচের কম্পাঙ্কগুলি উপস্থিত – 256, 360, 480, 512, 620, 700 ও 768 (সবগুলি হার্জ এককে প্রকাশিত) এদের মধ্যে থেকে মূলসুর, উপসুর, সমমেল ও অষ্টক চিহ্নিত করো।
মূলসুর, উপসুর, সমমেল ও অষ্টক চিহ্নিতকরণ –
বিষয় | কম্পাঙ্ক (হার্জ) | কারণ |
মূলসুর | 256 | নিম্নতম কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট সুর। |
উপসুর | 360, 480, 512, 620, 700, 768 | মূলসুর ব্যতীত অন্যান্য সুর। |
সমমেল | 512, 768 | মূলসুরের সরল গুণিতক, যেমন – 512 = 256 × 2 (দ্বিতীয় সমমেল)। 768 = 256 × 3 (তৃতীয় সমমেল)। |
অষ্টক | 256 ও 512 | দ্বিতীয়টির কম্পাঙ্ক প্রথমটির দ্বিগুণ। তাই 512 Hz হল 256 Hz -এর অষ্টক। |
স্বরগ্রাম কী?
স্বরগ্রাম (Musical scale) – স্বরগ্রাম হল এমন একটি কম্পাঙ্কক্রম, যার কম্পাঙ্কগুলি পরপর ধ্বনিত করলে শ্রুতিমধুর শব্দ শোনা যায়। সর্বনিম্ন কম্পাঙ্ককে সূচনাসুর (Keytone) বলা হয়। উচ্চতর কম্পাঙ্কগুলির মান সূচনাসুরের সঙ্গে নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে এবং সর্বোচ্চ কম্পাঙ্কটি সূচনাসুরের অষ্টক হয়।
সপ্তসুর স্বরগ্রামকে সংগীতে কেন গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয় এবং এটিকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সুরসমৃদ্ধ করতে সংগীতকাররা কীভাবে স্বর পরিবর্তন করেন? স্বরগ্রামের বিভিন্ন কম্পাঙ্ক ও তাদের পরিচিতির তালিকা লেখো।
সরলতম স্বরগ্রামের পরিচিত উদাহরণ হল সপ্তসুর স্বরগ্রাম (diatonic scale), এতে সূচনাসুর ও তার অষ্টকসহ আটটি কম্পাঙ্ক থাকে। সাধারণত সূচনাসুরের কম্পাঙ্ক 256 Hz ও সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ক 512 Hz হয়। বলা যায় যে, সুরগুলির নাম পৃথক হলেও একই স্বরগ্রাম ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সংগীতে (পরবর্তী তালিকা দ্যাখো) সমান সাবলীলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্বরগ্রামটিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ ও সুর সমৃদ্ধ করে তোলার প্রয়োজনে তালিকায় উল্লিখিত সাতটি শুদ্ধ সুরের সঙ্গে পাঁচটি কোমল ও কড়ি সুর (সা ও পা ব্যতীত) যুক্ত করে সংগীত শিল্পী ও সংগীত রচয়িতারা স্বরগ্রামকে আকর্ষণীয় ও ব্যবহার উপযোগী করে থাকেন।
স্বরগ্রামের বিভিন্ন কম্পাঙ্ক ও তাদের পরিচিতির তালিকা –
প্রতীক | ভারতীয় নাম | পাশ্চাত্য নাম | কম্পাঙ্ক (Hz) | কম্পাঙ্কের অনুপাত (সূচনা সুরের সাপেক্ষে) |
C | সা | Do | \(256\) | \(1\) |
D | রে | Re | \(288\) | \(\frac98\) |
E | গা | Mi | \(320\) | \(\frac54\) |
F | মা | Fa | \(341\frac13\) | \(\frac43\) |
G | পা | Sol | \(384\) | \(\frac32\) |
A | ধা | La | \(426\frac23\) | \(\frac53\) |
B | নি | Ti | \(480\) | \(\frac{15}8\) |
C | সা | Do | \(512\) | \(2\) |
সুরযুক্ত শব্দ এবং সুরবর্জিত শব্দ বলতে কী বোঝায়? প্রতিক্ষেত্রে উদাহরণ দাও। এদের তরঙ্গরূপ লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।
সুরযুক্ত শব্দ (Musical sound) –
শব্দের উৎসের কম্পন নিয়মিত, পর্যাবৃত্ত এবং ধারাবাহিক হলে, উৎপন্ন শব্দ আমাদের কানে এবং মনে এক মধুর অনুভূতির সৃষ্টি করে। একেই সুরযুক্ত শব্দ বলে। যেমন – সেতার, গিটার, পিয়ানো, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র থেকে নির্গত শব্দ।
সুরযুক্ত শব্দের লেখচিত্র নিম্নরূপ হয় –

সুরবর্জিত শব্দ (Noise) –
শব্দের উৎসের কম্পন অনিয়মিত, অপর্যাবৃত্ত এবং ক্ষণস্থায়ী হলে উৎপন্ন শব্দ আমাদের কানে এবং মনে এক বিরক্তিকর অনুভূতির সৃষ্টি করে। একে সুরবর্জিত শব্দ বলে। যেমন – কলকারখানার শব্দ, গাড়ি চলাচলের শব্দ, বাজির শব্দ, কোলাহলের শব্দ ইত্যাদি।
সুরবর্জিত শব্দের লেখচিত্র নিম্নরূপ হয় –

সুরযুক্ত শব্দের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? প্রতিটির সংজ্ঞা দাও। এগুলি কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?
সুরযুক্ত শব্দের তিনটি বৈশিষ্ট্য, যথা –
প্রাবল্য বা তীব্রতা (Loudness or Intensity) –
সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য একই তীক্ষ্ণতাযুক্ত জোরালো শব্দ এবং মৃদু শব্দের মধ্যে পার্থক্য উপলব্ধি করা যায়, তাকেই প্রাবল্য বা তীব্রতা বলে। এটি বোঝা যায় শোনার অনুভূতি থেকে।
সুরযুক্ত শব্দের প্রাবল্য বা তীব্রতা নীচের বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –
1. শব্দ উৎসের কম্পন বিস্তার – শব্দ উৎসের কম্পনের বিস্তার বেশি হলে শব্দের প্রাবল্য বেশি হয় এবং বিস্তার কম হলে প্রাবল্য কম হয়। যেমন – তবলায় আস্তে আঘাত করলে মৃদু শব্দ উৎপন্ন হয় কারণ – পর্দাটি কম বিস্তারে কম্পিত হয়, কিন্তু জোরে আঘাত করলে জোরালো শব্দ উৎপন্ন হয়, কারণ – পর্দাটি বেশি বিস্তারে কম্পিত হয়।

2. শব্দ উৎসের আকার – শব্দ উৎসের আকার যত বড়ো হয়, শব্দের প্রাবল্য তত বেশি হয়। যেমন – তবলার শব্দের চেয়ে ঢাকের আওয়াজ বেশি জোরালো হয়, কারণ ঢাকের আকার অনেক বড়ো।
3. শব্দ উৎস ও শ্রোতার মধ্যে দূরত্ব – প্রাবল্য, উৎস থেকে শ্রোতার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক । তাই শব্দ উৎস থেকে শ্রোতার দূরত্ব যত বাড়ে, শব্দের প্রাবল্য তত কমে। তাই স্টেশনের বাইরে থেকে ট্রেনের আওয়াজ খুব বেশি জোরে শোনা যায় না।
4. মাধ্যমের ঘনত্ব – শব্দ উৎসের প্রাবল্য মাধ্যমের ঘনত্বের সমানানুপাতিক। তাই, শব্দ যে মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যায় তার ঘনত্ব যত বাড়ে, শব্দের প্রাবল্যও তত বাড়তে থাকে। তাই বায়ু মাধ্যম অপেক্ষা কঠিন মাধ্যমে (যেমন – কাঠ) শব্দের প্রাবল্য বেশি হয়।
5. মাধ্যমের গতি – মাধ্যমের গতির অভিমুখে শব্দ সঞ্চালিত হলে শব্দের প্রাবল্য বেড়ে যায় এবং গতির অভিমুখ পরস্পর বিপরীত হলে তা হ্রাস পায়। এই কারণে বায়ুপ্রবাহের অভিমুখে শব্দ গতিশীল হলে তার প্রাবল্য বেশি হয়।
6. অনুনাদী বস্তুর উপস্থিতি – শব্দ উৎসের কাছে অন্য কোনো কম্পনশীল বস্তু বা অনুনাদী বস্তু উপস্থিত থাকলে শব্দের প্রাবল্য বাড়ে। যেমন – খোলা জায়গার তুলনায় বদ্ধ হলঘরে জোরে আওয়াজ শোনা যায়। এখানে ঘরের দেয়াল, ছাদ, মেঝে প্রভৃতি অনুনাদী বস্তু হিসেবে কাজ করে।
তীক্ষ্ণতা (Pitch) –
সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য একই প্রাবল্যযুক্ত চড়া সুর ও খাদের সুরের মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়, তাকে তীক্ষ্ণতা বলে। এটি বোঝা যায় শোনার অনুভূতি থেকে।
সুরযুক্ত শব্দের তীক্ষ্ণতা নীচের বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –
- কম্পাঙ্ক – তীক্ষ্ণতা কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, কম্পাঙ্ক যত বেশি হয়, তীক্ষ্ণতা তত বাড়ে। মহিলা ও শিশুদের গলার স্বরের কম্পাঙ্ক বেশি বলে, তাদের কথা বলার আওয়াজ বেশি তীক্ষ্ণ। কিন্তু পুরুষদের গলার স্বরের কম্পাঙ্ক কম বলে, তাদের কথা বলার আওয়াজ কম তীক্ষ্ণ।
- তরঙ্গদৈর্ঘ্য – শব্দতরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হলে তীক্ষ্ণতা বেশি হয় ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হলে তীক্ষ্ণতা কম হয়।
- শব্দের স্থায়িত্ব – একই কম্পাঙ্কযুক্ত ক্ষণস্থায়ী শব্দের তীক্ষ্ণতা কম হয় ও দীর্ঘস্থায়ী শব্দের তীক্ষ্ণতা বেশি হয়।
- উৎস ও শ্রোতার আপেক্ষিক গতি – উৎস ও শ্রোতা পরস্পরের কাছাকাছি এলে তীক্ষ্ণতা বাড়ে এবং পরস্পর থেকে দূরে চলে গেলে তীক্ষ্ণতা কমে।

গুণ বা জাতি (Quality or Timbre of sound) –
সুরযুক্ত শব্দের যে বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও একই তীক্ষ্ণতা বিশিষ্ট শব্দগুলির মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায়, তাকেই সুরযুক্ত শব্দের গুণ বা জাতি বলে। এটিও বোঝা যায় শোনার অনুভূতি থেকে।
সুরযুক্ত শব্দের গুণ বা জাতি নীচের বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –
- শব্দটিতে যতগুলি কম্পাঙ্কের শব্দ মিশে আছে তাদের সংখ্যা, কম্পাঙ্কের বিভিন্নতা, আপেক্ষিক প্রাবল্য ইত্যাদির ওপর শব্দটির গুণ বা জাতি নির্ভর করে।
- শব্দতরঙ্গটির আকৃতির ওপর শব্দটির গুণ বা জাতি নির্ভর করে। যেমন – বাঁশি ও ভায়োলিন থেকে নির্গত একই প্রাবল্য ও একই তীক্ষ্ণতাবিশিষ্ট শব্দের তরঙ্গরূপ নীচে দেখানো হল। তরঙ্গরূপের পার্থক্যের জন্য বাঁশির শব্দ ও ভায়োলিনের শব্দ চেনা যায়। অর্থাৎ, তাদের গুণ বা জাতি আলাদা।

অনুনাদ কাকে বলে?
স্বাভাবিক কম্পন নির্বাহকারী কোনো বস্তুর ওপর বাইরে থেকে পর্যাবৃত্ত বল (নির্দিষ্ট সময়ে পুনরাবৃত্তিমূলক বল) প্রযুক্ত হলে বস্তুর স্বাভাবিক কম্পন অবদমিত হয় ও বস্তুটি প্রযুক্ত পর্যাবৃত্ত বলের কম্পাঙ্কে কম্পিত হতে থাকে। এই পর্যাবৃত্ত বলের কম্পাঙ্ক বস্তুটির স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের সমান হলে বস্তুটি তৎক্ষণাৎ প্রবলভাবে আন্দোলিত হতে শুরু করে ফলে তার বিস্তার বেশ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় এবং ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু অত্যন্ত জোরালো প্রাবল্যের শব্দ শোনা যায়। এই ঘটনাকে অনুনাদ বলে।
সংগীতে শব্দের তীক্ষ্ণতা কীভাবে পরিবর্তন করা হয় এবং এটি কম্পাঙ্কের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
প্রাবল্যের মতো তীক্ষ্ণতাও একটি ব্যক্তিনির্ভর ধর্ম এবং অনুভূতি মাত্র। তাই তীক্ষ্ণতাও সরাসরি পরিমাপযোগ্য নয়, তবে কম্পাঙ্কের সঙ্গে এর সমানুপাতিক সম্পর্ক থাকায় তীক্ষ্ণতাকে কম্পাঙ্কের সাহায্যে গাণিতিকভাবে বর্ণনা করা যায়। তারের বাদ্যযন্ত্রে (সেতার, সরোদ, গিটার) তারের কম্পনশীল অংশের দৈর্ঘ্য ও তারের টান পরিবর্তন করে নলাকার বাদ্যযন্ত্রে (বাঁশি, ক্ল্যারিওনটে, সানাই ইত্যাদি) প্রয়োজনমতো ছিদ্রগুলি চেপে কম্পনশীল বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে, সংগীতশিল্পী বা যন্ত্রশিল্পীরা শব্দের তীক্ষ্ণতা পরিবর্তন করেন। উদারার সুর (lower octave) অপেক্ষা মুদারার সুরের (mid octave) এবং মুদারা অপেক্ষা তারার সুরের (higher octave) কম্পাঙ্ক বেশি হওয়ায় তীক্ষ্ণতাও বৃদ্ধি পায়।
সুরযুক্ত ও সুরবর্জিত শব্দের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে বিজ্ঞানসম্মত শ্রেণিবিভাগ সম্ভব নয় কেন? উপযুক্ত উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
কম্পনের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ থাকলেও ‘সুরযুক্ত’ ও ‘সুরবর্জিত’ শব্দের এই দুই প্রকারভেদের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অনুভূতিরও যথেষ্ট ভূমিকা বর্তমান। যেহেতু অনুভূতি কোনো পরিমাপযোগ্য বিষয় নয় এবং অবস্থা ও ব্যক্তিভেদে একই শব্দ শ্রুতিমধুর বা বিরক্তিকর হতে পারে যেমন – হাটের কোলাহল, পাখিদের কিচিরমিচির সুরবর্জিত হওয়া সত্ত্বেও দূর থেকে শুনলে তা শ্রুতিকটু লাগে না। তাই সুরযুক্ত ও সুরবর্জিত শব্দের মধ্যে সঠিক সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। অনুভূতি নির্ভর হওয়ায় একে বিজ্ঞানসম্মত শ্রেণিবিভাগ বলা যায় না।
সুরশলাকার কম্পাঙ্ক 512 Hz বলতে কী বোঝায়?
একটি সুরশলাকার কম্পাঙ্ক 512 Hz বলতে বোঝায় যে, সুরশলাকাটিকে আঘাত করলে তার বাহুগুলি সেকেন্ডে 512 বার কম্পিত হয়।
প্রাবল্য ও তীব্রতার মধ্যে সম্পর্ক লেখো।
প্রাবল্য ও তীব্রতার সম্পর্ক – শব্দের প্রাবল্য তার তীব্রতা দ্বারাই নির্ধারিত হয়। তীব্রতা যত বাড়ে অর্থাৎ, শব্দতরঙ্গ যত বেশি হারে শব্দশক্তি আমাদের কানে পৌঁছে দেয়, শব্দের প্রাবল্য তত বেশি হয়। প্রাবল্য যে যে বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে, প্রকৃতপক্ষে তীব্রতার গাণিতিক রাশিমালায় সেই রাশিগুলিই একই ঘাতসহ উপস্থিত থাকে। তাই তীব্রতা কারণ হলে প্রাবল্য হয় তার ফল।
কম্পাঙ্কের পার্থক্য খুব বেশি হলে একই তীব্রতার বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দ শ্রোতার কাছে ভিন্ন ভিন্ন প্রাবল্যের বোধ তৈরি করে। সুতরাং, শব্দের প্রাবল্য কম্পাঙ্কের ওপরও নির্ভর করতে পারে। কিন্তু তীব্রতা একটি কম্পাঙ্ক নিরপেক্ষ রাশি। অতএব, তীব্রতা ও প্রাবল্য পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হলেও অভিন্ন নয়। তীব্রতা একটি পরিমেয় রাশি কিন্তু, প্রাবল্য একটি অনুভূতি।
SI -তে তীব্রতার একক কী? তীব্রতার মাত্রীয় সংকেত নির্ণয় করো।
SI -তে তীব্রতার একক ডেসিবেল (dB)। অনেকসময় W/m2 এককটিও ধরা হয়।
= \(\frac{\left[ML^2T^{-3}\right]}{\left[L^2\right]}\)
= \(\left[MT^{-3}\right]\)
∴ তীব্রতার মাত্রীয় সংকেত \(\left[MT^{-3}\right]\)
প্রাত্যহিক জীবনের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে শব্দের গুণ বা জাতি ব্যাখ্যা করো।
প্রাত্যহিক জীবনে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র থেকে উৎপন্ন একই প্রাবল্য ও তীক্ষ্ণতাবিশিষ্ট শব্দকে আমরা চিনতে পারি তাদের গুণ বা জাতি আলাদা হবার জন্যই। যেমন – একটি সুর হারমোনিয়াম, গিটার, বাঁশি, ভায়োলিন, তানপুরা, পিয়ানো প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে বাজানো হলে তাদের প্রত্যেকের শব্দ আমরা আলাদা করে চিনতে পারি। বিভিন্ন গায়ক, গায়িকারা একই গান গাইলেও তাঁদের গলার আওয়াজ আমরা চিনতে পারি, এমনকি অনেক সময় শুধু শুনে আমরা তাঁদের শনাক্ত করি। দৈনন্দিন জীবনেও বাবা, মা, শিক্ষক, শিক্ষিকা, ভাই, বোন, বন্ধু প্রমুখের গলার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারি কোনটি কার আওয়াজ। এই সবই সম্ভব হয় শব্দের গুণ বা জাতি এই বৈশিষ্ট্যের জন্য।
বোধমূলক প্রশ্নোত্তর
শব্দের কম্পাঙ্ক ও তীক্ষ্ণতার মধ্যে কোনটি ভৌতরাশি ও কেন?
কম্পাঙ্ক ভৌতরাশি, কারণ – কম্পাঙ্ক পরিমাপ করা যায়। কিন্তু তীক্ষ্ণতা পরিমাপ করা যায় না, কেবলমাত্র অনুভব দ্বারা বুঝতে হয় তাই এটি ভৌতরাশি নয়।
বাঘের গর্জন বেশি তীক্ষ্ণ না মশার গুনগুন বেশি তীক্ষ্ণ?
বাঘের গর্জনের কম্পাঙ্ক কম, কিন্তু মশার গুনগুন শব্দের কম্পাঙ্ক বেশি। আমরা জানি, তীক্ষ্ণতা কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক, তাই বাঘের গর্জনের তুলনায় মশার গুনগুন বেশি তীক্ষ্ণ।
পুরুষের গলার স্বরের চেয়ে শিশু এবং মেয়েদের গলার স্বর তীক্ষ্ণ কেন?
পুরুষের গলার স্বরতন্ত্রী পর্দা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে দৃঢ় হয়ে যায়। নমনীয়তা কম থাকায় স্বরতন্ত্রীর কম্পনের কম্পাঙ্ক শিশু বা প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার স্বরযন্ত্র থেকে সৃষ্ট শব্দের কম্পাঙ্ক অপেক্ষা কম হয়। তাছাড়াও শিশু বা মহিলাদের স্বরতন্ত্রীর দৈর্ঘ্য পুরুষের স্বরতন্ত্রীর দৈর্ঘ্য (20 mm) অপেক্ষা প্রায় 5 mm কম থাকে। কম্পাঙ্ক স্বরতন্ত্রীর দৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক হওয়ায়, শিশু ও মহিলাদের গলার স্বরের কম্পাঙ্ক অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। তীক্ষ্ণতা যেহেতু কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক, তাই স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের গলার স্বরের তুলনায় শিশু বা মহিলাদের গলার স্বর বেশি তীক্ষ্ণ হয়।
কলের নীচে একটি খালি কলসি রেখে জল ভরতি করতে থাকলে বোঝা যায় উৎপন্ন শব্দ ক্রমশ চড়া হয়, কেন?
কলের নীচে একটি খালি কলসি রেখে জল ভরতি করতে থাকলে কলসির ভিতরে বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য ক্রমাগত কমতে থাকে। ফলে, বায়ুস্তম্ভের কম্পনে উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্কও তত বাড়তে থাকে। তাই উৎপন্ন শব্দ ক্রমশ চড়া হয়, অর্থাৎ, তার তীক্ষ্ণতা বেড়ে যায়।
একটি ছোটো হোমিওপ্যাথিক শিশি এবং একটি খালি টেস্টটিউবের মুখে ফুঁ দিলে যে শব্দ উৎপন্ন হয়, তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকে কেন?
হোমিওপ্যাথিক শিশির দৈর্ঘ্য টেস্টটিউবের তুলনায় কম বলে, তাতে আবদ্ধ বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য কম থাকে। যেহেতু বায়ুস্তম্ভের কম্পনে উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্ক কম্পমান বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক, সেই কারণে বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য বেশি হলে, ওই বায়ুস্তম্ভের কম্পনে উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্ক কম হয়, ফলে তীক্ষ্ণতাও কম হয়। অন্যদিকে বায়ুস্তম্ভের দৈর্ঘ্য কম হলে, উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্ক বেশি হয়, ফলে শব্দের তীক্ষ্ণতাও বেশি হয়। তাই, শিশি ও টেস্টটিউবের মুখে ফুঁ দিলে শিশি থেকে উৎপন্ন শব্দের কম্পাঙ্ক তথা তীক্ষ্ণতা টেস্টটিউবের শব্দের তুলনায় বেশি হয়।
সেতার, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র থেকে নির্গত শব্দ সুর না স্বর?
সেতার, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র থেকে উৎপন্ন শব্দে একাধিক কম্পাঙ্কবিশিষ্ট শব্দ থাকে। তাই এটি স্বর।
সব সমমেলই উপসুর, কিন্তু সব উপসুর সমমেল নয় – ব্যাখ্যা করো।
কোনো স্বরে উপস্থিত সুরগুলির মধ্যে ন্যূনতম কম্পাঙ্কযুক্ত সুরটিকে মূলসুর এবং অন্যান্য সুরগুলিকে উপসুর বলা হয়। উপসুরগুলির মধ্যে যেগুলির কম্পাঙ্ক মূলসুরের পূর্ণসংখ্যার সরল গুণিতক, সেগুলিই সমমেল বলে পরিচিত। সুতরাং, সমমেল মাত্রই উপসুর। কিন্তু যে উপসুরগুলির কম্পাঙ্ক মূলসুরের সরল গুণিতক নয়, তাদের সমমেল বলা যায় না। অর্থাৎ, সমমেল মাত্রই উপসুর হলেও, সব উপসুর সমমেল নয়।
সুরশলাকার চেয়ে সেতারের শব্দ বেশি শ্রুতিমধুর হয় কেন?
সুরশলাকা থেকে একটি কম্পাঙ্কের সুরযুক্ত শব্দ অর্থাৎ, একটি মাত্র সুর উৎপন্ন হয়। কিন্তু সেতারের শব্দে মূলসুর ছাড়াও অনেকগুলি সমমেল উপস্থিত থাকে। তাই, সুরশালাকার চেয়ে সেতারের শব্দ বেশি শ্রুতিমধুর হয়।
সেতারে একটি ফাঁপা বাক্স লাগানো থাকে কেন?
সেতারে তারগুলি একটি ফাঁপা কাঠের বাক্সের উপর টানটান করে আটকানো থাকে। ফাঁপা বাক্সের খোলাটি বায়ুপূর্ণ থাকে। যখন তারকে কম্পিত করে শব্দ উৎপন্ন করা হয়, তখন তারের কম্পন খোলের ভিতরের বায়ুতে সঞ্চালিত হওয়ায় ওই বায়ু পরবশ কম্পনে কম্পিত হয়, ফলে জোরালো শব্দ উৎপন্ন হয়।
যখন তারের কম্পাঙ্ক খোলের ভিতর বায়ুর স্বাভাবিক কম্পাঙ্কের সমান হয়, তখন পরবশ কম্পনের ফলে অনুনাদ সৃষ্টি হয় এবং সেতার থেকে উৎপন্ন শব্দ আরও জোরালোভাবে শোনা যায়। অর্থাৎ, সেতারে উৎপন্ন শব্দকে জোরালো করার উদ্দেশ্যেই, সেতারে একটি ফাঁপা কাঠের বাক্স থাকে। সরোদ, গিটার, তানপুরা ইত্যাদি যন্ত্রেও প্রাবল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে একই ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। একই কারণে, সুরশলাকার হাতলের সঙ্গেও একটি ফাঁপা বাক্স লাগানো থাকে।
বাদ্যযন্ত্রে মূল তারের সঙ্গে একাধিক তার বাঁধা থাকে কেন?
তারের বাদ্যযন্ত্রে মূল তারের সঙ্গে কয়েকটি বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তার নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে বাঁধা থাকে। বাদ্যযন্ত্র বাজানোর সময় মূল তারের কম্পাঙ্কের সঙ্গে ওই সমস্ত তারের কম্পনের কম্পাঙ্ক মিলে গেলে অনুনাদ সৃষ্টি হয়, ফলে শব্দের প্রাবল্য বাড়ে। উপসুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নিঃসৃত শব্দের জাতি উৎকৃষ্ট হয়। ফলে, বাদ্যযন্ত্র থেকে সৃষ্ট শব্দের মাধুর্য বাড়ে।
করাত দিয়ে কাঠ চেরাই করার সময় শব্দের পরিবর্তন হয়ে থাকে কেন?
কাঠ চেরাই করার সময় ছুতোর যখন করাতটিকে নিজের দিকে টানে তখন তার গতি কম থাকে, ফলে কাঠ ও করাতের ব্লেডের ঘর্ষণে সৃষ্ট শব্দের কম্পাঙ্ক হ্রাস পায় এবং উৎপন্ন শব্দ মোটা হয়। করাতটি ছুতোর নিজের অবস্থান থেকে দূরে ঠেলা দিলে গতি বৃদ্ধি পায়, ফলে শব্দের তীক্ষ্ণতা বাড়ে এবং শব্দও সরু হয়। সুতরাং, কাঠ চেরাই করার সময় তীক্ষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধিজনিত কারণে সৃষ্ট শব্দের তারতম্য ঘটে।
পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর
সুর (Tone) ও স্বর (Note) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
সুর (Tone) ও স্বর (Note) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সুর (Tone) | স্বর (Note) |
সংজ্ঞা | একটিমাত্র নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কবিশিষ্ট অর্থাৎ, একমাত্রিক শব্দকে সুর বলা হয়। | একাধিক ভিন্ন ভিন্ন সুরের সমন্বয়ে সৃষ্ট শব্দকে স্বর বলা হয়। |
উৎস | স্বনকের সরল দোলকম্পনে সুর সৃষ্টি হয়। | স্বনকের জটিল পর্যাবৃত্ত কম্পনের ফলে স্বর উৎপন্ন হয়। |
আলোর সঙ্গে তুলনা | সুরকে একবর্ণী আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। | স্বর যৌগিক বা বহুবর্ণী আলোর সঙ্গে তুলনীয়। |
সুরযুক্ত শব্দ ও সুরবর্জিত শব্দের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
সুরযুক্ত শব্দ ও সুরবর্জিত শব্দের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সুরযুক্ত শব্দ (Musical sound) | সুরবর্জিত শব্দ (Noise) |
কানে ও মনে প্রতিক্রিয়া | এটি মানুষের কানে ও মনে সুখশ্রাব্যতার অনুভূতি উৎপাদন করে। | সুরবর্জিত শব্দ শ্রুতিকটু এবং শ্রবণে কর্ণপীড়া ও মানসিক অস্থিরতার উদ্ভব হয়। |
উৎস | স্বনকের নিয়মিত ও পর্যাবৃত্ত কম্পনে সৃষ্টি হয়। | স্বনকের অনিয়মিত ও অপর্যাবৃত্ত কম্পনের ফলে সুরবর্জিত শব্দ উৎপন্ন হয়ে থাকে। |
বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন | প্রাবল্য ও তীক্ষ্ণতার হঠাৎ কোনো পরিবর্তন হয় না। | প্রাবল্য ও তীক্ষ্ণতা হঠাৎ পরিবর্তিত হয়। |
জাতির অস্তিত্ব | সুরযুক্ত শব্দের নিজস্ব জাতি বর্তমান। | সুরবর্জিত শব্দের নিজস্ব জাতি থাকে না। |
তরঙ্গরূপ | তরঙ্গরূপের আকৃতি সুষম ও পর্যাবৃত্ত (সাইনবক্সীয়) প্রকৃতির হয়। | তরঙ্গরূপের আকৃতি অপ্রতিসম, অপর্যাবৃত্ত চরিত্রের হয়ে থাকে। |
তীব্রতা (Intensity) ও প্রাবল্য (Loudness) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
তীব্রতা (Intensity) ও প্রাবল্য (Loudness) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | তীব্রতা (Intensity) | প্রাবল্য (Loudness) |
সংজ্ঞা | শব্দ বিস্তারের অভিমুখের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত প্রতি একক ক্ষেত্রফলের মধ্য দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রবাহিত শব্দশক্তির পরিমাণই হল তীব্রতা। | যে বৈশিষ্ট্যের সাহায্যে ক্ষীণ ও জোরালো শব্দের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা যায়, তাকে শব্দের প্রাবল্য বলে। |
পরিমাপ | তীব্রতা একটি পরিমাপযোগ্য বিষয় অর্থাৎ, ভৌত রাশি। | প্রাবল্য একটি অনুভূতি, তাই এর পরম পরিমাপ সম্ভব নয়। |
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা | তীব্রতা আদৌ ইন্দ্রিয় নির্ভর কোনো রাশি নয়। | প্রাবল্য শ্রবণেন্দ্রিয়ের বিশেষ অনুভূতি। |
কম্পাঙ্ক নির্ভরতা | দুটি শব্দের কম্পাঙ্কের পার্থক্য খুব বেশি হলেও তাদের তীব্রতা সমান হতে পারে। | কম্পাঙ্কের পার্থক্য যথেষ্ট বেশি হলে একই তীব্রতার বিভিন্ন কম্পাঙ্কের শব্দ শ্রোতার কাছে ভিন্ন প্রাবল্যবিশিষ্ট মনে হতে পারে। |
একক | তীব্রতা স্তরের একক হল ডেসিবেল ও বেল। | প্রাবল্য স্তরের একক হল ফন, সোন ইত্যাদি। |
কম্পাঙ্ক (Frequency) ও তীক্ষ্ণতা (Pitch) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
কম্পাঙ্ক (Frequency) ও তীক্ষ্ণতা (Pitch) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | কম্পাঙ্ক (Frequency) | তীক্ষ্ণতা (Pitch) |
সংজ্ঞা | স্বনকের দ্বারা এক সেকেন্ডে যতগুলি পূর্ণ কম্পন সম্পন্ন হয়, তাকে কম্পাঙ্ক বলে। | তীক্ষ্ণতা হল সুরযুক্ত শব্দের সেই বৈশিষ্ট্য, যার সাহায্যে খাদের ও চড়ার সুরের পার্থক্য করা যায়। |
ইন্দ্রিয় নির্ভরতা | শব্দের কম্পাঙ্ক ইন্দ্রিয়নির্ভর কোনো রাশি নয়। | তীক্ষ্ণতা শ্রবণেন্দ্রিয়তে একটি বিশেষ অনুভূতি সৃষ্টি করে। |
পরিমাপ ও একক | কম্পাঙ্ক একটি ভৌতরাশি অর্থাৎ, পরিমাপযোগ্য। এর SI একক হার্জ। | তীক্ষ্ণতা হল অনুভূতি, তাই একে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে এককের কোনো অস্তিত্ব নেই। |
তীব্রতা ও স্থায়িত্ব নির্ভরতা | শব্দের তীব্রতা, স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়ের ওপর কম্পাঙ্ক নির্ভর করে না। | তীব্রতা, স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয়ের ওপর তীক্ষ্ণতা নির্ভর করে। |
আলোর সঙ্গে তুলনা | শব্দের কম্পাঙ্ক ও আলোর কম্পাঙ্ক সমার্থক। | শব্দের তীক্ষ্ণতাকে আলোর বর্ণের সঙ্গে তুলনা করা যায়। |
Class 9 Physical Science – Notes for All Chapters
Chapter Name | Tropics |
---|---|
পরিমাপ | পরিমাপ ও একক বিভিন্ন মাপের একক মাত্রা পরিমাপ |
বল ও গতি | স্থিতি ও গতি গতির সমীকরণ নিউটনের প্রথম গতিসূত্র নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র বিভিন্ন ধরণের বল রৈখিক ভরবেগ রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষণ |
পদার্থ : গঠন ও ধর্ম | তরল ও বায়ুর চাপ আর্কিমিডিসের নীতি পৃষ্ঠটান সান্দ্রতা বার্নোলির নীতি স্থিতিস্থাপকতা |
পদার্থ : পরমাণুর গঠন ও পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ | পরমাণুর গঠন মোলের ধারণা দ্রবণ অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ মিশ্রণের উপাদানের পৃথকীকরণ জল |
শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা | শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা |
তাপ | ক্যালোরিমিতি কার্য ও তাপের তুল্যতা লীনতাপ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ |
শব্দ | শব্দের উৎস : কম্পন শব্দের বিস্তার : তরঙ্গ শব্দের কয়েকটি ধর্ম শব্দের বৈশিষ্ট্য মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল শব্দদূষণ |
আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “শব্দের বৈশিষ্ট্য” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
ধন্যবাদ সবাইকে।
মন্তব্য করুন