আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
চিত্রসহ মানবকর্ণের বিভিন্ন অংশের গঠন বর্ণনা করো।
কান হল মানুষের অন্যতম ইন্দ্রিয়, যার সাহায্যে মানুষ শুনতে পায়। বাইরে থেকে কানের গঠন নিম্নরূপ –

বহিঃকর্ণ (Outer ear) – কর্ণছত্র বা পিনা (Pinna) থেকে কর্ণপর্দা (Ear drum) পর্যন্ত অংশটি হল বহিঃকর্ণ। কর্ণছত্র হল তরুণাস্থি নির্মিত পেশিবহুল অংশ, যা আমরা বাইরে থেকে দেখতে পাই। এটি সাধারণত 2-3 cm লম্বা হয় এবং কর্ণকুহরের (Ear canal) মাধ্যমে কর্ণপর্দার সঙ্গে যুক্ত থাকে। বাইরে থেকে আসা শব্দ কর্ণছত্র দ্বারা গৃহীত হয় এবং বায়ুপূর্ণ কর্ণকুহরের মধ্যে দিয়ে বিস্তারিত হয়ে কর্ণপর্দায় পৌঁছায়। কর্ণপর্দা হল একটি পাতলা, পেশিময় স্থিতিস্থাপক, বৃত্তাকার পর্দা, যা বাইরে থেকে আসা শব্দের কম্পাঙ্কে কম্পিত হয় ও শব্দকে মধ্যকর্ণে পৌঁছে দেয়।
মধ্যকর্ণ (Middle ear) – কর্ণপর্দার ভিতরের অংশ থেকে মধ্যকর্ণ শুরু হয়। এখানে তিনটি অস্থি থাকে। যথা – মেলিয়াস (হাতুড়ি), ইনকাস (নেহাই), স্টেপিস (রেকাব)। অস্থিগুলির নামকরণ তাদের আকৃতি অনুসারে করা হয়। স্টেপিস অস্থিটি অন্তঃকর্ণের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কর্ণপর্দার কম্পন এই অস্থিগুলির মধ্যেও সঞ্চারিত হয় এবং অস্থিগুলিও কাঁপতে থাকে। এই অস্থিগুলি বাইরে থেকে আসা শব্দতরঙ্গের বিবর্ধন বা প্রাবল্যের বৃদ্ধি ঘটায় এবং তাকে অন্তঃকর্ণে প্রেরণ করে। মধ্যকর্ণের নীচের অংশ থেকে ইউস্টেচিয়ান (Eustachian) নালি বেরিয়ে গলবিলে পৌঁছায়। এই নালির সাহায্যেই বায়ুপূর্ণ মধ্যকর্ণের বায়ুচাপ বাইরের বায়ুচাপের সমান থাকে।
অন্তঃকর্ণ (Inner ear) – অন্তঃকর্ণে একটি কুণ্ডলীকৃত প্যাঁচানো অংশ থাকে, যার নাম কক্সিয়া (Cochlea)। কক্লিয়ার এক প্রান্ত একটি স্থিতিস্থাপক পর্দার সঙ্গে যুক্ত, যা আবার মধ্যকর্ণের সঙ্গে যুক্ত থাকে। কক্লিয়া তরল দ্বারা পূর্ণ থাকে এবং এই তরলের মধ্যে অসংখ্য সরু চুলের মতো স্নায়ুতন্তু থাকে। মধ্যকর্ণের অস্থিগুলির কম্পনের প্রভাবে কক্লিয়া মধ্যস্থ তরল কম্পিত হলে স্নায়ুতন্তুগুলি সেই কম্পনকে তড়িৎ সংকেতে (Electric Signal) পরিণত করে ও অডিটরি স্নায়ুর (Auditory Nerve) মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। তখন আমরা শব্দটি শুনতে পাই ও বুঝতে পারি।
মানবকর্ণের বিভিন্ন অংশ, তাদের অবস্থান ও কাজ ছকের সাহায্যে লেখো।
মানবকর্ণের বিভিন্ন অংশ, তাদের অবস্থান ও কাজ গুলি হল –
কর্ণের অংশ | অবস্থান | কাজ |
কর্ণছত্র বা পিনা | মস্তকের দুপাশে। | শব্দতরঙ্গ সংগ্রহ ও কর্ণকুহরে প্রেরণ। |
বহিঃকর্ণ নালি | কর্ণছত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত ও কর্ণপটহ পর্যন্ত বিস্তৃত। | শব্দতরঙ্গ বহন করা যাতে কর্ণপটহে আঘাত করে। |
কর্ণপটহ | কর্ণকুহরের শেষপ্রান্তে অবস্থিত। | শব্দতরঙ্গকে মধ্যকর্ণ অংশে প্রেরণ করে। |
কর্ণঅস্থি – মেলিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস | মধ্যকর্ণে অবস্থিত। | 1. কর্ণপটহে উৎপন্ন কম্পনজনিত বল বৃদ্ধি করে। 2. শব্দতরঙ্গকে অন্তঃকর্ণে প্রেরণ করে। |
ইউস্টেচিয়ান নালি | মধ্যকর্ণ ও গলবিলের সংযোগস্থলে। | মধ্যকর্ণ ও গলবিলে বায়ুচাপের সমতা রক্ষা। |
কক্লিয়া | অন্তঃকর্ণে অবস্থিত প্যাঁচালো অস্থিময় নালিকা। | শ্রবণ অনুভূতি গ্রহণ ও মস্তিষ্কে প্রেরণ। শ্রবণে সহায়তা করা। |
অর্ধবৃত্তাকার নালি | অন্তঃকর্ণে অবস্থিত। | প্রাণীদেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ। |
কর্টির অঙ্গ | কক্লিয়ার ব্যাসিলাস পর্দা। | শব্দগ্রাহক হিসেবে কাজ করে শব্দতরঙ্গকে স্নায়বিক আবেগে রূপান্তর। |
অটোলিথ | অন্তঃকর্ণ | দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ। |
ভেস্টিবিউলার যন্ত্র | অন্তঃকর্ণ | দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ। |
কানের বিভিন্ন অংশের মধ্যে দিয়ে শব্দ কীভাবে বিস্তারলাভ করে?
কানের মধ্যে দিয়ে শব্দ বিস্তারের কৌশল – বহিরাগত শব্দতরঙ্গ কর্ণছত্র দ্বারা সংগৃহীত হয়ে বহিঃকর্ণনালি পথ বরাবর সঞ্চালিত হয়ে কর্ণপটহে আপতিত হয়। ঘনীভবন কর্ণপটহে ধাক্কা দিলে কর্ণপটহের বাইরের অংশে চাপ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে কর্ণপটহ ভিতরের দিকে সরে যায়। তনুভবনের ক্ষেত্রে চাপ কমে এবং কর্ণপটহ আবার তার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। সুতরাং, শব্দতরঙ্গ কর্ণপটহে আঘাত করলে সেটি অতি দ্রুত ভিতরে ও বাইরে কম্পিত হতে থাকে।
কম্পনশীল কর্ণপটহ মেলিয়াস অস্থিতে কম্পন সৃষ্টি করে, যা পরপর ইনকাস ও স্টেপিস অস্থি দ্বারা সঞ্চালিত হয়ে অন্তঃকর্ণের স্থিতিস্থাপক পর্দায় এসে পৌঁছায় এবং কক্লিয়া মধ্যস্থ তরলকে আন্দোলিত করে। মধ্যকর্ণে অবস্থিত এই তিনটি অস্থি একত্রে একটি লিভার ব্যবস্থা গঠন করে, যা কর্ণপটহের কম্পনকে প্রায় 20 গুণেরও বেশি শক্তিশালী করে অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করায়। এই বিবর্ধন অপরিহার্য হয়ে থাকে, কারণ – কক্লিয়া মধ্যস্থ সব স্নায়ুকোশগুলি কক্লিয়ার তরলের (এন্ডোলিম্ফের) জোরালো কম্পনেই কেবল সাড়া দিতে সক্ষম।
কর্ণপটহের পর্যাবৃত্ত কম্পন পেরিলিম্ফ তরলের মধ্য দিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতরঙ্গ পাঠাতে থাকে, যা ব্যাসিলাস পর্দাকে ওপর-নীচ অভিমুখে কম্পিত করে। এই কম্পনজনিত গতি কর্টির অঙ্গে উপস্থিত সরু কেশসদৃশ কোশগুলিকে (Hair cells) উদ্দীপিত করে এবং উদ্দীপিত কোশগুলি আগত শ্রবণ সংকেতকে স্নায়বিক আবেগে (তড়িৎ সংকেত) রূপান্তরিত করে। শ্রবণ স্নায়ু (Auditory nerve) এই তড়িৎ সংকেতকে বহন করে মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। মস্তিষ্ক সংকেতগুলির পাঠোদ্ধার (Decode) করে, তাদের নির্দিষ্ট শব্দের রূপ দেয় এবং শ্রবণের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
কানের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার ছকের সাহায্যে লেখো।
শব্দ | কম্পনশীল বস্তু থেকে নির্গত শব্দ। |
বহিঃকর্ণ | কর্ণছত্র এই শব্দকে গ্রহণ করে এবং কর্ণকুহরের বায়ু ঘনীভবন ও তনুভবনের মাধ্যমে এই শব্দতরঙ্গকে কর্ণপর্দায় সঞ্চারিত করে। ফলে কর্ণপর্দাও কাঁপতে থাকে। |
মধ্যকর্ণ | কর্ণপর্দার কম্পন এরপর মধ্যকর্ণের অস্থি তিনটিতে (মেলিয়াস, ইনকাস, স্টেপিস) সঞ্চারিত হয়। ফলে, অস্থিগুলিও কাঁপতে থাকে এবং শব্দতরঙ্গের বিবর্ধন বা বৃদ্ধি ঘটায়। এই শব্দ এরপর অন্তঃকর্ণে প্রবেশ করে। |
অন্তঃকর্ণ | মধ্যকর্ণের অস্থিগুলির কম্পন অন্তঃকর্ণের কক্লিয়ায় সঞ্চারিত হলে, কক্লিয়া মধ্যস্থ তরলও কাঁপতে থাকে এবং এই অংশের স্নায়ুতন্তুগুলি সেই কম্পনকে তড়িৎ সংকেতে পরিণত করে অডিটরি স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে প্রেরণ করে। |
অনুভূতি | মস্তিষ্কের নানাবিধ কার্যকারিতার ফলে শব্দটি আমরা শুনতে পাই ও বুঝতে পারি। |
কর্ণের মধ্য দিয়ে শব্দে গতিপথের শব্দচিত্র তৈরি করো।
শব্দতরঙ্গ (কম্পনরত বস্তু দ্বারা সৃষ্ট) → কর্ণনালি → কর্ণপটহ → শ্রবণ অস্থিসমূহ → অন্তঃকর্ণে অবস্থিত স্থিতিস্থাপক পর্দা → কক্লিয়ার পেরিলিম্ফ → কর্টির অঙ্গ → শ্রবণ স্নায়ু → মস্তিষ্ক
কীভাবে আমাদের ভোকাল কর্ডে বিভিন্ন ধরনের শব্দ উৎপন্ন হয়? কোন্ পেশি স্বরতন্ত্রীদ্বয়ের স্থিতিস্থাপকতা নিয়ন্ত্রণ করে?
ফুসফুস থেকে আসা বায়ুপ্রবাহ বায়ুচাপ সৃষ্টি করে স্বরতন্ত্রী দুটিকে কম্পিত করে। বায়ুচাপের পার্থক্যে স্বরতন্ত্রীদ্বয়ের টানেরও পার্থক্য হয়। তখন উৎপন্ন শব্দ বিভিন্ন রকম হয়। এভাবেই আমাদের ভোকাল কর্ডে বিভিন্ন ধরনের শব্দ উৎপন্ন হয়।
থাইরোঅ্যারিটেনোয়েড পেশি (Thyroarytenoid muscle) স্বরতন্ত্রীদ্বয়ের স্থিতিস্থাপকতা নিয়ন্ত্রণ করে।
Class 9 Physical Science – Notes for All Chapters
Chapter Name | Tropics |
---|---|
পরিমাপ | পরিমাপ ও একক বিভিন্ন মাপের একক মাত্রা পরিমাপ |
বল ও গতি | স্থিতি ও গতি গতির সমীকরণ নিউটনের প্রথম গতিসূত্র নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র বিভিন্ন ধরণের বল রৈখিক ভরবেগ রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষণ |
পদার্থ : গঠন ও ধর্ম | তরল ও বায়ুর চাপ আর্কিমিডিসের নীতি পৃষ্ঠটান সান্দ্রতা বার্নোলির নীতি স্থিতিস্থাপকতা |
পদার্থ : পরমাণুর গঠন ও পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ | পরমাণুর গঠন মোলের ধারণা দ্রবণ অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ মিশ্রণের উপাদানের পৃথকীকরণ জল |
শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা | শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা |
তাপ | ক্যালোরিমিতি কার্য ও তাপের তুল্যতা লীনতাপ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ |
শব্দ | শব্দের উৎস : কম্পন শব্দের বিস্তার : তরঙ্গ শব্দের কয়েকটি ধর্ম শব্দের বৈশিষ্ট্য মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল শব্দদূষণ |
আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
ধন্যবাদ সবাইকে।
মন্তব্য করুন