আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “শব্দের কয়েকটি ধর্ম” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর
শব্দের প্রতিফলন কাকে বলে?
শব্দের প্রতিফলন (Reflection of sound) – শব্দ যখন এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমের বিভেদতলে আপতিত হয়, তখন আপতিত শব্দের কিছু অংশ বিভেদতল থেকে দিক পরিবর্তন করে আবার প্রথম মাধ্যমে ফিরে আসে। এই ঘটনাকে শব্দের প্রতিফলন বলে।
শব্দের প্রতিফলনের উদাহরণ – উঁচু বাড়ির দেয়াল, পাহাড়, গাছের সারি, উঁচু পাড় শব্দের প্রতিফলক হিসেবে কাজ করে।
শব্দের প্রতিফলনের সূত্রগুলি লেখো।
শব্দের প্রতিফলনের সূত্র দুটি হল –
- আপতিত শব্দতরঙ্গ, প্রতিফলিত শব্দতরঙ্গ এবং আপতন বিন্দুতে প্রতিফলক তলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব একই সমতলে থাকে।
- আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ পরস্পর সমান হয়।
একটি পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করো শব্দের প্রতিফলন ধর্ম বর্তমান।
শব্দের প্রতিফলনের পরীক্ষা –
উপকরণ –
- একটি কাঠের টেবিল,
- ড্রয়িং বোর্ড,
- দুটি সমান ব্যাসের (প্রায় 3 সেমি) এবং সমান দৈর্ঘ্যের (প্রায় 50 সেমি) ফাঁপা নল,
- একটি ঘড়ি।
পরীক্ষা পদ্ধতি –
একটি কাঠের ড্রয়িং বোর্ড DD’ -কে উল্লম্বভাবে একটি টেবিলের উপর রাখা হল। এটিই শব্দের প্রতিফলক তল হিসেবে কাজ করে। এবার DD’ -এর সামনে দুটি সমান ব্যাসের (প্রায় 3 সেমি) এবং সমান দৈর্ঘ্যের (প্রায় 50 সেমি) ফাঁপা নল (পাইপ) T1 ও T2 -কে টেবিলের উপর অনুভূমিকভাবে এমন করে রাখা হয়, যাতে নল দুটির অক্ষ কার্ডবোর্ডের O বিন্দুতে মিলিত হয়। কিন্তু নল দুটি DD’ -কে স্পর্শ করবে না। এখন T1 নলের মুখে একটি ছোটো ঘড়ি রেখে T2 নলটিকে এমনভাবে রাখা হয় যাতে T2 নলের মুখে কান পাতলে ঘড়ির টিকটিক শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়।

পর্যবেক্ষণ –
O বিন্দুতে প্রতিফলক তলের ওপর অঙ্কিত অভিলম্ব ON হলে ∠AON এবং ∠BON চাঁদার সাহায্যে মেপে দেখা যায় ∠AON = ∠BON হয়েছে। অর্থাৎ, শব্দতরঙ্গের আপতন কোণ ও প্রতিফলন কোণ সমান হয়েছে। আবার আপতিত শব্দতরঙ্গ AO, প্রতিফলিত শব্দতরঙ্গ BO এবং আপতন বিন্দু O -তে অঙ্কিত অভিলম্ব ON একই টেবিলের তলে অবস্থিত।
সিদ্ধান্ত –
সুতরাং, এই পরীক্ষার সাহায্যে শব্দের প্রতিফলন এবং শব্দের প্রতিফলনের সূত্র দুটি প্রমাণিত হয়।
শব্দের প্রতিফলনের কয়েকটি ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।
শব্দের প্রতিফলনের ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি হল –
মেগাফোন (Megaphone) এবং বাল্ব হর্ন (Bulb Horn) –
মেগাফোন এবং বাল্ব হর্ন হল ফানেল আকৃতির একটি নল বিশেষ, যা শব্দকে কোনো নির্দিষ্ট দিকে বিশেষত সামনের দিকে চালনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এজন্য নলটির সরু মুখে কথা বলা হয় বা বাল্বের সাহায্যে শব্দ করা হয়।

এই শব্দ নলটির মধ্যে বারবার প্রতিফলিত হয়ে চওড়া মুখ দিয়ে নির্গত হওয়ার সময় শব্দটির তীব্রতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে, শব্দটি অনেক জোরে শোনা যায়। ছোটোখাটো মিটিং, মিছিল, মেলা প্রাঙ্গণ, বাজার প্রভৃতিতে কোনো কিছু ঘোষণা করার সময় সাধারণত মেগাফোন ব্যবহার করা হয়। আবার সাইকেল, রিকশা, বাস প্রভৃতিতে লোকজনকে সতর্ক করার জন্য বাল্ব হর্ন ব্যবহৃত হয়।

স্টেথোস্কোপ (Stethoscope) –
চিকিৎসাক্ষেত্রে রোগীর হৃৎস্পন্দনের শব্দ শোনার জন্য সাধারণত ডাক্তাররা এই যন্ত্র ব্যবহার করেন। এই যন্ত্রের তিনটি অংশ –
- ইয়ার পিস্ (Ear piece) – এটি হল লম্বা ধাতব নল, যা ডাক্তাররা তাঁদের কানে প্রবেশ করান। এটি সংখ্যায় দুটি হয়।
- চেস্ট পিস্ (Chest piece) – এটি হল পাতলা পর্দায় ঢাকা একটি গোল ধাতব চাকতি বিশেষ। হৃৎস্পন্দন মাপার সময় এটি রোগীর বুকে রাখা হয়।
- রবারের নল (Rubber tube) – এটি ইয়ার পিস্ ও চেস্ট পিস্কে যুক্ত করে। চেস্ট পিসের গোল চাকতিটি রোগীর বুকে চেপে ধরলে রোগীর হৃৎস্পন্দনের কম্পন প্রথমে চেস্ট পিসের পাতলা পর্দা দ্বারা বিবর্ধিত হয় এবং রবারের নলে বারবার প্রতিফলিত হয়ে ডাক্তারের কানে পর্দা পৌঁছোয়। ফলে, হৃৎস্পন্দনের ক্ষীণ শব্দ ডাক্তারের কানে অনেক জোরে শোনা যায়।

সাউন্ড বোর্ড (Sound board) –
বড়ো বড়ো হলঘরে বা সিনেমাহলে বা প্রেক্ষাগৃহে অনেক দূর থেকেও যাতে শব্দ শোনা যায় তার জন্য অবতল আকৃতির যে বোর্ড ব্যবহার করা হয়, তাকেই সাউন্ড বোর্ড বলে। উৎস থেকে নির্গত শব্দ সাউন্ড বোর্ডে প্রতিফলিত হয়ে প্রতিটি দর্শকের বা শ্রোতার কানে পৌঁছোয়। ফলে, অনেক দূর থেকেও স্পষ্ট শব্দ শোনা যায়।

অবতল প্রতিফলক –
দূর থেকে আসা ক্ষীণ শব্দ শোনার জন্য আমরা অনেকসময় হাতের তালুকে বাঁকিয়ে কানের পিছনে ধরি। কারণ – হাতের তালু এখানে অবতল প্রতিফলকের কাজ করে। ফলে, শব্দ প্রতিফলিত হয় এবং ক্ষীণ শব্দও অনেক জোরে শোনা যায়।

প্রতিধ্বনি কাকে বলে?
প্রতিধ্বনি (Echo) – কোনো উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ দূরের কোনো প্রতিফলকে প্রতিফলিত হয়ে মূল শব্দ থেকে পৃথকভাবে শ্রোতার কানে পৌঁছে যদি মূল শব্দের অবিকল পুনরাবৃত্তি ঘটায়, তবে প্রতিফলিত শব্দটিকে মূল শব্দের প্রতিধ্বনি বলে।
শব্দের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হওয়ার শর্তগুলি লেখো।
শব্দের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হওয়ার শর্তগুলি হল –
- ক্ষণস্থায়ী শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য শব্দের উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব 16.6 মিটার হতে হবে।
- প্রতিফলকের আকার অনেক বড়ো হতে হবে। যেমন – পাহাড়, বড়ো দেয়াল, বড়ো গাছ ইত্যাদি।
- শব্দের তীব্রতা যথেষ্ট বেশি হতে হবে, যাতে প্রতিধ্বনির আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যায়।
ক্ষণস্থায়ী শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব কত হবে তা নির্ণয় করো।
ক্ষণস্থায়ী শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব –
কোনো ক্ষণস্থায়ী শব্দ (যেমন – পটকা ফাটার শব্দ, হাততালির শব্দ) আমাদের কানে এসে পৌঁছোলে ওই শব্দ থেমে যাওয়ার পরও সেই শব্দের অনুভূতি আমাদের মস্তিষ্কে \(\frac1{10}\) সেকেন্ড পর্যন্ত থেকে যায়। একে শব্দ নির্বন্ধ (Persistence of hearing) বলে। এ কারণেই প্রতিফলিত শব্দ মূল শব্দ থেকে কমপক্ষে \(\frac1{10}\) সেকেন্ড পর শ্রোতার কানে এসে পৌঁছোলে তবেই শ্রোতা ওই শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পাবে। বায়ুতে শব্দের বেগ \(33.2\) মি/সে, ফলে শব্দ \(\frac1{10}\) সেকেন্ডে \(33.2\) মিটার দূরত্ব অতিক্রম করবে। প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শব্দকে উৎস থেকে প্রতিফলকে পৌঁছে আবার ওই পথ অতিক্রম করে উৎসের কাছে ফিরে আসতে হয়। সুতরাং, উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব হবে \(\frac{33.2}2\) মি = \(16.6\) মি।

একমাত্রিক বোধগম্য শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব কত হবে তা নির্ণয় করো।
একমাত্রিক বোধগম্য শব্দের প্রতিধ্বনির ক্ষেত্রে উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব –
মানুষ সেকেন্ডে \(5\)টির বেশি পদাংশ উচ্চারণ করতে পারে না। অর্থাৎ, একমাত্রিক শব্দ উচ্চারণ করতে আমাদের \(\frac15\) সেকেন্ড সময় লাগে। তাই মানুষের কানও সেকেন্ডে \(5\)টির বেশি শব্দ পৃথকভাবে শুনতে পায় না। সুতরাং, কোনো ব্যক্তি যদি একটি একমাত্রিক শব্দ উচ্চারণ করে তবে প্রতিফলিত শব্দটি অন্তত \(\frac15\) সেকেন্ড পরে তার কানে পৌঁছোলে সে ওই শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পায়।
শব্দের বেগ \(332\) মি/সে ধরলে \(\frac15\) সেকেন্ডে শব্দ যায় = \(332\times\frac15\) মি = \(66.4\) মি। সুতরাং, শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব হবে = \(\frac{66.4}2\) মি = \(33.2\) মি।
দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক বোধগম্য শব্দের প্রতিধ্বনির ক্ষেত্রে উৎস ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব কত হবে?
দ্বিমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে এই ন্যূনতম দূরত্ব হবে 2 × 33.2 = 66.4 মি এবং ত্রিমাত্রিক শব্দের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দূরত্ব হবে 3 × 33.2 = 99.6 মি।
প্রতিধ্বনির ব্যাবহারিক প্রয়োগ উল্লেখ করো।
প্রতিধ্বনির ব্যবহার –
শব্দের প্রতিধ্বনিকে কাজে লাগিয়ে –
- বিমানের উচ্চতা নির্ণয় করা যায়,
- সমুদ্রের গভীরতা মাপা যায়,
- বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ণয় করা যায়।
প্রতিধ্বনির সাহায্যে কীভাবে বিমানের উচ্চতা নির্ণয় করা যায়?
প্রতিধ্বনির সাহায্যে বিমানের উচ্চতা নির্ণয় –
ধরি, একটি বিমান \(AB\) রেখা বরাবর ভূমির সমান্তরালে \(u\) বেগে গতিশীল। বিমানটি যখন \(A\) বিন্দুতে তখন বিমান থেকে একটি তীব্র শব্দ করা হল। \(t\) সেকেন্ড পর বিমানটি \(B\) বিন্দুতে পৌঁছোলে ওই শব্দের প্রতিধ্বনি শোনা গেল।

∴ \(AC=\frac12\;AB=\frac12\;ut\)
বায়ুতে শব্দের বেগ \(v\) হলে, \(AD=DB=\frac12\;vt\)। শব্দ \(A\) থেকে উৎপন্ন হয়ে \(D\) বিন্দুতে প্রতিফলিত হয়ে \(B\) -তে পৌঁছায়। এখানে ভূমি থেকে বিমানের উচ্চতা \(CD\)।
চিত্রানুসারে, \(AC^2+CD^2=AD^2\)
বা, \(CD=\sqrt{AD^2-AC^2}\)
বা, \(CD=\sqrt{\left(\frac12\;mt\right)^2-\left(\frac12\;ut\right)^2}\)
বা, \(CD=\frac12\;t\sqrt{v^2-u^2}\)
অতএব, বিমানের বেগ \(\left(u\right)\), শব্দের বেগ \(\left(v\right)\) এবং মূলশব্দ ও প্রতিধ্বনির মধ্যে সময় \(\left(t\right)\) জানা থাকলে উপরের সমীকরণের সাহায্যে বিমানের উচ্চতা নির্ণয় করা যায়।
প্রতিধ্বনির সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা কীভাবে নির্ণয় করবে?
প্রতিধ্বনির সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা নির্ণয় – সমুদ্রে ভাসমান কোনো জাহাজ থেকে সমুদ্রের জলে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওই শব্দ সমুদ্রের তলদেশে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে। জাহাজের নীচে লাগানো হাইড্রোফোন যন্ত্রের সাহায্যে মূল শব্দ ও প্রতিফলিত শব্দের মধ্যে সময়ের ব্যবধান মাপা হয়।

ধরি, জলে শব্দের বেগ = \(v_1\), হাইড্রোফোন সাপেক্ষে সমুদ্রতলের গভীরতা = \(RO=d\), সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে জাহাজের তলদেশে থাকা হাইড্রোফোনের গভীরতা = \(H\), মূলধ্বনি ও প্রতিধ্বনির হাইড্রোফোনে পৌঁছানোর সময় যথাক্রমে \(t_1\), ও \(t_2\)।
চিত্রানুসারে,
\(PQ=vt_1,\;PR=\frac12PQ=\frac{vt_1}2\) এবং \(PO=\frac{vt_2}2\)
\(RO=\sqrt{PO^2-PR^2}\\\)বা, \(RO=\sqrt{\left(\frac{vt_2}2\right)^2-\left(\frac{vt_1}2\right)^2}\)
বা, \(RO=\frac v2\sqrt{\left(t_2\right)^2-\left(t_1\right)^2}\)
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সমুদ্রের গভীরতা = \(H+\frac v2\sqrt{t_2^2-t_1^2}\)
প্রতিধ্বনির সাহায্যে বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ণয় করবে কীভাবে?
প্রতিধ্বনির সাহায্যে বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ণয় –
ধরি, কোনো এক পর্যবেক্ষক থেকে \(d\) দূরত্বে একটি উঁচু দেয়াল আছে। এবার পর্যবেক্ষক বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে স্টপওয়াচ চালু করলেন এবং ওই শব্দের প্রতিধ্বনি শোনামাত্র স্টপওয়াচ বন্ধ করলেন। এই সময়ের ব্যবধান \(t\)। এই সময়ে শব্দ দেয়ালে প্রতিফলিত হয়ে পর্যবেক্ষকের কাছে ফিরে আসে অর্থাৎ, \(2d\) দূরত্ব অতিক্রম করে। সুতরাং, বায়ুতে শব্দের বেগ \(\left(v\right)=\frac{2d}t\)। \(d\) ও \(t\) -এর মান জানা থাকলে এই সমীকরণ থেকে বায়ুতে শব্দের বেগ নির্ণয় করা হয়।
শব্দের অনুরণন কাকে বলে?
অনুরণন (Reverberation) – বড়ো খালি হলঘরে বা বজ্রপাতে উৎপন্ন শব্দ ঘরের দেয়াল, ছাদ, মেঝে, মেঘের স্তর ইত্যাদি থেকে বারবার প্রতিফলিত হয়। ফলে, মূল শব্দ থেমে যাওয়ার পরেও একটি গাম্ভীর্যপূর্ণ গমগম শব্দ শোনা যায়, যা বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলতে থাকে। একে শব্দের অনুরণন বলে।
অনুরণন বন্ধ করতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়?
মৃদু অনুরণন গান বা বাদ্যযন্ত্রের শব্দে একটি মধুরতা আনে। কিন্তু অনুরণন বেশি হলে উৎস থেকে নির্গত শব্দটি আর ভালোভাবে বোঝা যায় না। ফলে তা বিরক্তির উদ্রেক করে। অনুরণন বন্ধ করতে বা অনুরণন প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে উল্লিখিত ব্যবস্থাগুলি নেওয়া যেতে পারে –
- ঘরের দেয়াল ও ছাদে শব্দশোষক পদার্থ লাগালে অনুরণন কম হয়।
- ঘরের মেঝেতে কার্পেট পাতা থাকলে তা শব্দ শোষণ করে ফলে অনুরণন কম হয়।
- ঘরের দরজা, জানালায় ভারী কাপড়ের পর্দা ঝোলালেও শব্দ শোষিত হয়।
- ঘরের মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের দেহ এবং পোশাকও কিছুটা শব্দ শোষণ করে, ফলে ঘরে অনেক লোকজন থাকলে অনুরণন কম হয়।
শ্রাব্যতার সীমা বা শ্রবণসীমা বলতে কী বোঝায়? শ্রাব্যতার ভিত্তিতে শব্দের শ্রেণিবিভাগ কয় প্রকার ও কী কী?
শ্রাব্যতার সীমা (Threshold of hearing) –
স্বনকের কম্পাঙ্ক 20 থেকে 20,000 Hz -এর মধ্যে অবস্থান করলে যে শব্দ সৃষ্টি হয়, কেবল সেই শব্দই মানুষের কানে শ্রবণ অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, 20-20,000 Hz পাল্লাকে শ্রুতিবোধ্যতার পাল্লা (Range of audibility) এবং ওই পাল্লার সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ কম্পাঙ্ককে শ্রাব্যতার সীমা বা শ্রবণসীমা বলে।
শ্রাব্যতার ভিত্তিতে শব্দের শ্রেণিবিভাগ তিনপ্রকার –
- শব্দেতর শব্দ,
- শ্রুতিবোধ্য শব্দ এবং
- শব্দোত্তর শব্দ।
শব্দেতর শব্দ (Infrasonic sound) –
উৎসের কম্পাঙ্ক 20 Hz অপেক্ষা কম হলে, সেই উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দকে শব্দেতর শব্দ বলে। এই শব্দ আমাদের কানে শ্রবণ অনুভূতি উৎপাদন করে না।
শব্দেতর শব্দের উদাহরণ – মানুষের হৃৎপিন্ডের শব্দ, দেয়াল ঘড়ির পেন্ডুলামের শব্দ ইত্যাদি। গন্ডার, হাতি, তিমি মাছ প্রভৃতি প্রাণীরা শব্দেতর শব্দ সৃষ্টি করেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
শ্রুতিবোধ্য বা শ্রুতিগোচর শব্দ (Audible sound) –
উৎসের কম্পাঙ্ক 20 থেকে 20,000 Hz -এর মধ্যে হলে, সেই উৎস নিঃসৃত শব্দ আমরা শুনতে পাই। এই শব্দকে শ্রুতিবোধ্য বা শ্রুতিগোচর শব্দ বলে।
শ্রুতিবোধ্য বা শ্রুতিগোচর শব্দের উদাহরণ – মানুষের কথার, ট্রেন চলার, হাততালির শব্দ ইত্যাদি।
শব্দোত্তর শব্দ (Ultrasonic sound) –
উৎসের কম্পাঙ্ক 20,000 Hz অপেক্ষা বেশি হলে সেই উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ আমরা শুনতে পাই না। এই শব্দকে শব্দোত্তর শব্দ বলা হয়।
শব্দোত্তর শব্দের উদাহরণ – ডলফিন, মথ, বাদুড় প্রভৃতি প্রাণীরা শব্দোত্তর শব্দ সৃষ্টি করতে পারে, আবার শুনতেও পায়। কুকুর 25,000 Hz পর্যন্ত শব্দ শুনতে পায়। এইসব প্রাণীরা শব্দোত্তর শব্দের মাধ্যমেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
মানুষের শ্রাব্যতার গড় সীমা 20 Hz – 20 kHz হওয়ার কারণে বয়স্কদের তুলনায় শিশুরা কীভাবে বেশি কম্পাঙ্কযুক্ত শব্দ শুনতে সক্ষম হয়?
মানুষের ক্ষেত্রে শ্রাব্যতার গড় সীমা 20 Hz – 20 kHz হওয়ায় বয়স্ক মানুষেরা 15 kHz অপেক্ষা বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পান না। অন্যদিকে শিশুরা 5 বছর বয়স পর্যন্ত প্রায় 25 kHz কম্পাঙ্কযুক্ত শব্দও শুনতে সক্ষম হয়।
শব্দোত্তর শব্দের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী? এর বিভিন্ন ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি লেখো।
শব্দোত্তর শব্দের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –
- শব্দোত্তর তরঙ্গের কম্পাঙ্ক যথেষ্ট বেশি হওয়ায় এটি অত্যন্ত উচ্চমানের শক্তি বহন করে থাকে।
- শব্দোত্তর তরঙ্গ সুনির্দিষ্ট সরলরৈখিক পথ বরাবর গতিশীল হয়ে থাকে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হওয়ার জন্য এই তরঙ্গ তার গতিপথে থাকা বাধা বা প্রতিবন্ধকের ধার ঘেঁষে সহজে বেঁকে যেতে পারে না।
উচ্চ কম্পাঙ্কের জন্য শব্দোত্তর শব্দের উচ্চ ভেদনক্ষমতা আছে। তাই শিল্প, চিকিৎসাপ্রযুক্তি ইত্যাদি বিবিধ ক্ষেত্রে শব্দোত্তর শব্দের প্রয়োগ আছে। যেমন –
শিল্পক্ষেত্রে –
- রত্ন, লেন্স বা অন্যান্য আলোকীয় উপকরণ, ঘড়ির সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন, মেশিন প্রভৃতি যেসব জটিল যন্ত্রের ভিতরে অনেক সময় নোংরা, ময়লা, ধুলোবালি ইত্যাদি জমে যায় যা সহজে পরিষ্কার করা যায় না, সেই সব জিনিস পরিষ্কার করতে 20 kHz – 40 kHz পাল্লার শব্দোত্তর শব্দ ব্যবহার করা হয়।
- বড়ো বড়ো বাড়ি, ব্রিজ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি তৈরি করার সময় যে বড়ো বড়ো ধাতব ব্লক বা দণ্ড ব্যবহার করা হয় তাতে যদি কোনো চিড় থাকে তবে নির্মাণটি মজবুত হয় না। তাই ধাতব ব্লক বা দণ্ডে কোনো চিড় আছে কি না তা দেখার জন্য ব্লকটির মধ্যে দিয়ে শব্দোত্তর শব্দ পাঠানো হয়। যদি শব্দোত্তর শব্দ কোথাও প্রতিফলিত না হয়ে সোজাসুজি বেরিয়ে যায় তবে বলা যায়, ধাতব ব্লকটিতে কোনো ত্রুটি নেই। যদি শব্দোত্তর শব্দ প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসে তবে বলা যায়, ধাতব ব্লকটিতে চিড় বা ছিদ্র আছে।
- কাচ বা ওই জাতীয় পদার্থে ছিদ্র করা বা তাদের বিশেষ আকৃতিতে কাটার কাজে শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসাক্ষেত্রে –
- শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি তোলা যায়। একে বলে আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography)। ছবি থেকে বলা যায় ওই অঙ্গে কোনো ত্রুটি আছে কি না। পিত্তথলিতে পাথর (Gall bladder stone), বৃক্কে পাথর (Kidney stone), টিউমার প্রভৃতি রোগ নির্ণয়ে আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
- শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে হৃৎপিণ্ডের ছবি তোলাকে বলা হয় ইকোকার্ডিওগ্রাফি (Echo cardiography)। এক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের ছবি দেখে হৃৎপিণ্ডের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ইকোকার্ডিওগ্রাফি ব্যবহৃত হয়।
- গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের ছবি তোলার জন্য শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ভ্রূণের বৃদ্ধি, বিকাশ প্রভৃতি দেখার জন্য এটি একটি বহুল প্রচলিত পদ্ধতি।
- অনেক সময় শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ দিয়ে কিডনিতে বা বৃক্কে জমে থাকা পাথরে আঘাত করলে তা ছোটো ছোটো টুকরোয় ভেঙে যায় এবং মুত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ, বৃক্কে পাথর – এই রোগের চিকিৎসায় শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা যায়।
প্রযুক্তিবিদ্যায় –
- SONAR – Sound Navigation and Ranging অর্থাৎ, SONAR হল এমন একটি যন্ত্র যা সমুদ্রের গভীরতা, ডুবন্ত জাহাজের ধ্বংসাবশেষ -এর অবস্থান, সাবমেরিন, সমুদ্রের নীচে মাছের ঝাঁকের উপস্থিতি ইত্যাদি নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়। এই যন্ত্রে শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা হয়।
- RADAR – Radio Detection and Ranging বা RADAR হল এমন একটি যন্ত্র, যা বিমানে ব্যবহার করা হয়, আকাশপথে কোনো বাধা আছে কিনা জানার জন্য। এই যন্ত্রেও শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। রাত্রে ও খারাপ আবহাওয়াতেও RADAR ব্যবহৃত হয়, জলপথ ও আকাশপথে যথাক্রমে জাহাজ ও বিমান চালনার জন্য।
বিবিধ ব্যবহার –
- মাটির নীচে কোনো ধাতুর আকরিক বা তৈলখনির অস্তিত্ব নির্ণয়ে।
- অন্ধ ব্যক্তিদের জন্য আলট্রাসনিক চশমা তৈরিতে শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহৃত হয়।
কিছু প্রাণী, যেমন – বিড়াল, ইঁদুর ইত্যাদি ভূমিকম্পের ঠিক আগে কেন অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ছোটাছুটি করে? এর পেছনে কি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে?
কিছু প্রাণী, যেমন – বিড়াল, ইঁদুর ইত্যাদি ভূমিকম্পের ঠিক আগে অত্যন্ত বিচলিত হয়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করে। এর কারণ ভূমিকম্পে মূল অভিঘাত তরঙ্গ (Shock wave) সৃষ্টি হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে নিম্নকম্পাঙ্কযুক্ত শব্দেতর শব্দ উৎপন্ন হয়, যা এই প্রাণীরা অনুভব করতে সক্ষম।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও তার ব্যবহার সম্বন্ধে লেখো।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultra-sonography) – ক্ষণস্থায়ী শব্দোত্তর তরঙ্গ বা আলট্রাসাউন্ডের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন – জরায়ু, পিত্তথলি, যকৃৎ ইত্যাদির ছবি তোলার পদ্ধতিকে বলা হয় আল্ট্রাসনোগ্রাফি। সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রটিকে বলা হয় আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যানার (Ultrasound scanner) এবং প্রাপ্ত ছবিটিকে বলা হয়ে থাকে আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান।

আল্ট্রাসনোগ্রাফির ব্যবহার – আলট্রাসনিক ট্রান্সডিউসার (Ultrasonic tranceducer) নামক একটি যন্ত্রকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে ব্যবহার করা হয়। শরীরের যে অংশ ‘স্ক্যান’ করা প্রয়োজন, সেই অংশের ত্বকে তরল বা জেল জাতীয় পদার্থ লাগিয়ে তার উপর দিয়ে হাতে ব্যবহারযোগ্য একটি ট্রান্সডিউসার পরীক্ষাধীন অংশটিতে ত্বকের সঙ্গে সংযোগ রেখে চালনা করা হয়। শরীরের ওই নিরীক্ষণীয় অংশের বিভিন্ন স্থান থেকে শব্দতরঙ্গ বিভিন্ন হারে প্রতিফলিত ও বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। তাই, প্রতিফলিত তরঙ্গগুলিকে একটি কম্পিউটারে পরিচালিত করে অংশটির ছবি তোলা এবং কম্পিউটারের পর্দা বা মনিটরে তা দেখাও সম্ভব হয়। ফোটোগ্রাফিক ফিল্মে ছবিটির আলোকচিত্রও গ্রহণ করা যায়।

শরীরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গের অসুস্থতার ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও অভ্যন্তরীণ গঠন, অঙ্গগুলির বিবর্তনের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও সেই সম্পর্কিত গবেষণায় চিকিৎসা সম্বন্ধীয় চিত্রগ্রহণের কাজে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বর্তমানে নিরাপদ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। গর্ভাবস্থায় মাতৃজঠরে শিশু ভ্রূণের বেড়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণের কাজে, এ ছাড়া ভ্রূণে কোনো অস্বাভাবিকত্ব দেখা দিয়েছে কিনা তা শনাক্ত করতেও আল্ট্রাসনোগ্রাফিকে অত্যন্ত সফলভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
আল্ট্রাসাউন্ডকে গর্ভস্থ ভ্রূণ নিরীক্ষণ এবং টিউমার বা সিস্ট পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে X-রশ্মির তুলনায় অধিক নিরাপদ এবং কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয় কেন?
আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার সময় ত্বকে জেল বা তরল লাগানো হয় যাতে বায়ু, শব্দ সঞ্চালন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত না করতে পারে। শিশুভ্রূণের ক্রমবিকাশ নিরীক্ষণের কাজে X-রশ্মির ব্যবহারের তুলনায় আলট্রাসাউন্ড ব্যবহার অধিক নিরাপদ হয়। কারণ – X-রশ্মি দ্বারা গর্ভস্থ ভ্রূণের দেহকোশগুলির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। টিউমার বা সিস্ট পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও X-রশ্মির তুলনায় আলট্রাসাউন্ড ব্যবহারে অপেক্ষাকৃত বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
ট্রান্সডিউসার কী এবং চিকিৎসাবিদ্যায় শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহারের আধুনিক উদাহরণ হিসেবে CUSA যন্ত্রের ব্যবহার কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
ট্রান্সডিউসার হল বিশেষ ধরনের যন্ত্র, যা ইনপুট সংকেতকে আউটপুট সংকেতে রূপান্তরিত করে। ইনপুট ও আউটপুট শক্তির প্রকৃতি সমজাতীয় বা ভিন্নজাতীয় দুই-ই হতে পারে। যেমন – ইলেক্ট্রোঅ্যাকাউস্টিক ট্রান্সডিউসারে শব্দশক্তি বিদ্যুৎ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। আলট্রাসনিক ট্রান্সডিউসার ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ শক্তি, যান্ত্রিকশক্তি বা উদ্স্থৈতিক শক্তি আলট্রাসনিক শক্তি অর্থাৎ, শব্দোত্তর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে থাকে।
চিকিৎসাবিদ্যায় শব্দোত্তর তরঙ্গের ব্যবহারের একটি আধুনিকতম দৃষ্টান্ত হল CUSA (Cavitron Ultrasonic Surgical Aspirator)। স্নায়ুশল্য চিকিৎসকেরা মস্তিষ্কের টিউমার অপারেশনের সময় পারিপার্শ্বিক সুস্থ কলাকোশের ক্ষতি না করে শুধুমাত্র মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলি ছেদ করার কাজে এটি ব্যবহার করেন।
সোনার কী? এর কার্যনীতি ব্যাখ্যা করো।
SONAR (Sound Navigation and Ranging অথবা, Sonographic Navigation and Ranging) হল শব্দোত্তর তরঙ্গের সাহায্যে জলতলের গভীরে অনুসন্ধান ও দূরত্ব নির্ণয়ের পদ্ধতি। সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনে ব্যবহৃত যন্ত্র ব্যবস্থাটিকেও অনেকসময় একই নামে (Sonar – Sound Navigated Accoustic Receiver) চিহ্নিত করা হয়।
সোনার কার্যনীতি –
সোনার (SONAR) ব্যবস্থা বা যন্ত্রের দুটি অংশ থাকে –
- ট্রান্সমিটার (যা শব্দোত্তর তরঙ্গ উৎপাদন করে),
- একটি গ্রাহক ও রেকর্ডিং যন্ত্র (যা প্রতিফলিত শব্দোত্তর তরঙ্গকে গ্রহণ করে)।
জাহাজের তলদেশে একটি নির্দিষ্ট অংশে ট্রান্সমিটারটি বসানো থাকে, যা প্রায় 50 kHz কম্পাঙ্কসম্পন্ন শব্দোত্তর তরঙ্গের ঝলক (Ultrasonic sound pulse) জলের নীচে সমস্ত অভিমুখে প্রেরণ করে। এই তরঙ্গঝলক জলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র বা নদীর তলদেশ বা জলের গভীরে থাকা লক্ষ্যবস্তু (ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষ, মাছের ঝাঁক, হিমশৈলের চূড়া ইত্যাদি) পর্যন্ত পৌঁছোয় এবং তাদের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসার সময় গ্রাহক যন্ত্র মারফত প্রতিধ্বনি রূপে শনাক্ত হয়। স্বয়ংক্রিয় শব্দগ্রাহক ব্যবস্থা, প্রতিধ্বনি শোনার সময় পরিমাপ করে। এই সময়কাল (t) এবং জলে শব্দের বেগ (vw) ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা বা লক্ষ্যবস্তুর অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
SONAR যন্ত্র কীভাবে কাজ করে এবং বর্তমানে দূরত্ব নির্ণয় ও নিমজ্জিত বস্তু শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে এর ব্যবহারে কম্পিউটার কীভাবে সহায়তা করে?
বর্তমানে দূরত্বের গণনাসম্পর্কিত কাজকর্ম SONAR -এর সঙ্গে যুক্ত একটি কম্পিউটারের সাহায্যে করা হয়। SONAR যন্ত্রটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয় যাতে নিমজ্জিত লক্ষ্যবস্তু বা প্রতিবন্ধকের (যেমন – শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ, হিমশৈলের গঠন) নিখুঁত অবয়ব চিত্রের মাধ্যমে কম্পিউটারের মনিটর বা পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হয়। ব্যবহৃত তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য যথেষ্ট কম হওয়ায় সমুদ্রের তলদেশের নিখুঁত চিত্রগ্রহণও সম্ভব হয়ে থাকে।
সোনারের ব্যবহার লেখো।
সোনারের ব্যবহার গুলি হল –
- মাছধরার নৌকা বা ট্রলারের সঙ্গে সংযুক্ত সোনারের সাহায্যে জলের গভীরে মাছের ঝাঁকের উপস্থিতির হদিশ পাওয়া যায় এবং তাদের শিকার করা সহজ হয়।
- সমুদ্রের তলদেশে ডুবোজাহাজের ধ্বংসাবশেষ সন্ধানে ব্যবহৃত হয়।
- সমুদ্রের তলদেশের গঠন জানার কাজে।
- সমুদ্রের গভীরে থাকা ডুবোপাহাড় বা হিমশৈলের (icebergs) চূড়ার অবস্থান চিহ্নিতকরণের কাজে ‘সোনার’ ব্যবহৃত হয়।
সমুদ্রের তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান – ক্ষেত্রতে শব্দোত্তর শব্দ কীভাবে কাজ করে ব্যাখ্যা করো।
সমুদ্রের তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান – সমুদ্রের তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করার জন্য প্রথমে অন্য একটি জাহাজের SONAR যন্ত্র থেকে শব্দোত্তর শব্দ সমুদ্রের জলে পাঠানো হয়। এই শব্দের প্রতিধ্বনি যখন SONAR -এর গ্রাহক যন্ত্রে ফিরে আসে তখন কম্পিউটারের সাহায্যে প্রতিধ্বনিত শব্দতরঙ্গ থেকে ডুবন্ত বস্তুর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। এই প্রতিকৃতি দেখে বলা যায় সেটি কোনো জাহাজের ধ্বংসাবশেষ কিনা। এভাবেই শব্দোত্তর শব্দ ব্যবহার করে সমুদ্রের তলায় জাহাজের ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধান করা হয়।
মাছের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ – ক্ষেত্রতে শব্দোত্তর শব্দ কীভাবে কাজ করে ব্যাখ্যা করো।
মাছের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ – সমুদ্রের তলায় মাছের ঝাঁকের উপস্থিতি জানার জন্য ও মাছের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য মাছ ধরার ট্রলার ও জাহাজে SONAR যন্ত্রে শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রেও SONAR থেকে শব্দতরঙ্গ সমুদ্রের জলে পাঠানো হয় এবং শব্দের প্রতিধ্বনি SONAR -এর গ্রাহকযন্ত্রে ফিরে এলে কম্পিউটারের সাহায্যে তার প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়। এ থেকে মাছের ঝাঁকের উপস্থিতি ও মাছের গতিবিধি জানা যায়। ফলে মাছ ধরতে বা তাদের বিষয়ে জানতে সুবিধা হয়।
বাদুড়ের শিকার কৌশল – ক্ষেত্রতে শব্দোত্তর শব্দ কীভাবে কাজ করে ব্যাখ্যা করো।
বাদুড়ের শিকার কৌশল – তিমি, বাদুড়, ডলফিন প্রভৃতি প্রাণীরা তাদের গতিপথ নির্ধারণের জন্য এবং তাদের খাদ্য বা শিকার অনুসন্ধানের জন্য শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে। এই শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে এভাবে কোনো বস্তুর অবস্থান জানার পদ্ধতিকে বলে ইকোলোকেশন বা প্রতিধ্বনি সন্ধান। শিকার ধরার ক্ষেত্রে বাদুড় এই ইকোলোকেশনের নীতিকে ব্যবহার করে। গতিপথে অবস্থিত কোনো পতঙ্গের যা বাদুড়ের খাদ্য, দেহে আপতিত শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রতিধ্বনি বাদুড়ের কাছে দেরিতে পৌঁছোলে বাদুড় সিদ্ধান্তে আসে যে, শিকার বা লক্ষ্যবস্তু অপেক্ষাকৃত বেশি দূরত্বে অবস্থান করছে। অন্যদিকে, প্রতিধ্বনি দ্রুত শুনতে পাওয়ার ঘটনা ইঙ্গিত করে যে শিকারের অবস্থান কাছাকাছি।

প্রতিধ্বনির প্রাবল্য বাদুড়কে লক্ষ্যবস্তুর আকারের ধারণা দেয়। লক্ষ্যবস্তু যত বড়ো হয় প্রতিধ্বনির প্রাবল্যও তত বেশি হয়। বাদুড় প্রতিধ্বনিকে সযত্নে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে শিকার তার দিকে আসছে না, তা থেকে দূরে চলে যাচ্ছে সেটিও নির্ণয় করতে সক্ষম হয়ে থাকে। এভাবে শিকারের অবস্থান ও গতিবিধির ধারাবাহিক তথ্য বিশ্লেষণের দ্বারা চূড়ান্ত অবস্থায় বাদুড় একসময়ে তার শিকারকে কবলে আনতে সমর্থ হয়।
জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার ওপর ক্রিয়া – ক্ষেত্রতে শব্দোত্তর শব্দ কীভাবে কাজ করে ব্যাখ্যা করো।
জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার ওপর ক্রিয়া – খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের সময় কোনো খাদ্যে জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব জানার জন্য শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গের সাহায্যে কিছু কিছু রোগের জীবাণু শনাক্তকরণ ও নষ্ট করা যায়। তাই কিছু কিছু রোগের চিকিৎসাতেও এর ব্যবহার আছে। অতি উচ্চচাপে (1000 lb-wt/in2) রাখা তরলের মধ্য দিয়ে সঞ্চালিত শব্দোত্তর তরঙ্গের প্রভাবে তরলের বেগ ও চাপের মানের যে ব্যাপক স্থানীয় পরিবর্তন ঘটে, তার ফলেই জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পানীয় জল, দুধ ইত্যাদি জীবাণুমুক্ত করার কাজে পদ্ধতিটির ব্যাপক ব্যবহার আছে।
ইকোলোকেশন পদ্ধতির সাহায্যে প্রাণীরা কীভাবে নিজেদের সুরক্ষা এবং শিকার করার কাজ সম্পন্ন করে? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
বিশেষ প্রজাতির কিছু মথ বাদুড়ের দ্বারা প্রেরিত এই ‘শব্দোত্তর চিৎকার’ শুনতে পায়, ফলে কাছাকাছি অঞ্চলে বাদুড়ের উপস্থিতি তারা সহজেই শনাক্ত করতে পারে এবং সেই অনুযায়ী নিরাপদ দূরত্বে উড়ে গিয়ে তারা আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয়। বাদুড় ছাড়াও ডলফিন, পরপয়েজ (শূকরের মতো দীর্ঘ কিন্তু গোলকাকৃতি নাকবিশিষ্ট স্তন্যপায়ী জীব) জলের নীচে চলাচল ও শিকার করার কাজে ইকোলোকেশন পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে।
বোধমূলক প্রশ্নোত্তর
শব্দের প্রতিফলনের জন্য প্রতিফলকের আকার বড়ো হওয়া প্রয়োজন কেন?
যে-কোনো তরঙ্গের প্রতিফলনের জন্য প্রতিফলকের আকার তার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তুলনায় অনেকগুণ বড়ো হওয়া প্রয়োজন। শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত বড়ো (cm বা m ক্রমের) হয় বলে এর প্রতিফলন ঘটাতে বিস্তৃত প্রতিফলক বা প্রতিবন্ধক যেমন – বড়ো বাড়ি, পাহাড়, বড়ো দেওয়াল ইত্যাদি প্রয়োজন।
একই প্রতিফলকের ক্ষেত্রে আলো প্রতিফলিত হলেও শব্দ প্রতিফলিত না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
একই কারণে তুলনামূলকভাবে ক্ষুদ্র প্রতিফলক যেমন – ছোটো আয়না থেকে শব্দ প্রতিফলিত হতে না পারলেও আলোর প্রতিফলন সম্ভব, কারণ আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক কম (দৃশ্যমান আলোকরশ্মির ক্ষেত্রে 4000 Å – 7000 Å হয়)।
একটি লম্বা লোহার পাইপের একমুখে শব্দ করলে অপর প্রান্তে দুবার শব্দ শোনা যায় কেন?
লম্বা লোহার পাইপের মুখে শব্দ করলে শব্দ দুভাবে পাইপের অপরপ্রান্তে পৌঁছোয় –
- লোহার মধ্যে দিয়ে ও
- পাইপের ভেতরে থাকা বাতাসের মধ্যে দিয়ে।
কিন্তু লোহার মধ্যে দিয়ে শব্দের বেগ বায়ুতে শব্দের বেগের প্রায় 15 গুণ বেশি। এই কারণে লোহার পাইপের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত শব্দটি বায়ুর মধ্যে দিয়ে আসা শব্দের অনেক আগে পাইপের অপর প্রান্তে পৌঁছোয়। তাই, পাইপের একপ্রান্তে শব্দ করলে অপর প্রান্তে দুবার শব্দ শোনা যায়।

প্রেক্ষাগৃহের ছাদ অনেক সময় আর্চের মতো বাঁকানো থাকে কেন?
আর্চের মতো বাঁকানো ছাদ অবতল প্রতিফলকের তুল্য আচরণ করে। ওই প্রতিফলকের ফোকাসে (প্রতিফলক তল সাপেক্ষে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত একটি স্থির বিন্দুতে) বসে বক্তা কথা বললে, সেই শব্দ প্রেক্ষাগৃহের ছাদে প্রতিফলিত হয়ে প্রেক্ষাগৃহের যে-কোনো স্থানে অবস্থানরত শ্রোতার কাছে সহজে পৌঁছোয়। ফলে, বক্তার আওয়াজ সহজেই ও স্পষ্ট শোনা যায়।
একই কারণে উন্মুক্তস্থানে গানবাজনার আসর বসলে মাথার ওপর চাঁদোয়া টাঙিয়ে দেওয়া হয়।
অ্যামপ্লিফায়ার আবিষ্কারের পূর্বে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণে ব্যবহৃত বিশেষ গঠনটি কী এবং বর্তমানে এর ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
অ্যামপ্লিফায়ার আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্বে প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণের সময় এই বিশেষ গঠনটির ব্যাপক প্রচলন ছিল। বর্তমানে অবশ্য এটি আর সেভাবে ব্যবহৃত হয় না।
আধুনিক সিনেমাহলের দেয়ালে নরম প্যাড লাগানো থাকে কেন?
আধুনিক সিনেমাহলের দেয়ালে নরম প্যাড লাগানো থাকে, কারণ – নরম প্যাডে শব্দের প্রতিফলন ব্যাহত হয়। তাই অনুরণন সৃষ্টি হতে পারে না। একারণে, শব্দ স্পষ্টভাবে শ্রোতার কানে পৌঁছোয়।
শীতকাল ও গ্রীষ্মকাল কোন্ সময় প্রতিধ্বনি তাড়াতাড়ি শোনা যাবে? কেন?
শীতকালে উষ্ণতা কম থাকায় বায়ুতে শব্দের বেগ কম থাকে। তাই, শীতকালে প্রতিধ্বনি শুনতে দেরি হবে। আবার গ্রীষ্মকালে উষ্ণতা বেশি থাকায় বায়ুতে শব্দের বেগ বেশি থাকে। তাই, গ্রীষ্মকালে প্রতিধ্বনি তাড়াতাড়ি শোনা যাবে।
সাধারণ মাপের ঘরে কথা বললে প্রতিধ্বনি শোনা যায় না কেন?
একমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের দূরত্ব কমপক্ষে 33.2 মিটার হতে হবে। কিন্তু, সাধারণ মাপের ঘরে দুটি দেয়ালের মধ্যে দূরত্ব 33.2 মিটারের অনেক কম থাকে। তাই, প্রতিধ্বনি শোনা যায় না।
কোন্ ক্ষেত্রে প্রতিধ্বনির সাহায্যে উড়োজাহাজের উচ্চতা নির্ণয় করা যাবে না?
উড়োজাহাজের গতিবেগ যদি বায়ুতে শব্দের বেগ অপেক্ষা বেশি হয়, তবে প্রতিধ্বনির সাহায্যে উড়োজাহাজটির উচ্চতা নির্ণয় করা যায় না। যে কারণে সুপারসনিক বিমানের উচ্চতা প্রতিধ্বনির সাহায্যে নির্ণয় করা যায় না।
তোমাকে চোখ বন্ধ করে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হল। তুমি কীভাবে বুঝবে ঘরটি খালি না আসবাবপত্রে ভরতি – ব্যাখ্যা করো।
আমি ঘরের মধ্যে একটি শব্দ করলে যদি তার অনুরণন হয় তবে বোঝা যাবে ঘরটি খালি। যদি অনুরণন না হয় তবে বোঝা যাবে ঘরটি আসবাবপত্রে ভরতি। কারণ – আসবাবপত্র শব্দ শোষণ করে, তাই আসবাবপত্রযুক্ত ঘরে অনুরণন হয় না।
মেঘ গর্জনের পর অনেক সময় গমগম শব্দ শোনা যায় কেন?
মেঘ গর্জনের পর অনেক সময় একটানা গমগম শব্দ শোনা যায়। কারণ – মেঘ গর্জনের মূল শব্দ বিভিন্ন স্তরের মেঘ থেকে প্রতিফলিত হয়ে বহু প্রতিধ্বনি অর্থাৎ, অনুরণনের সৃষ্টি করে। শব্দের বারবার প্রতিফলনের জন্যই মেঘের গমগম শব্দ একটানা অনেকক্ষণ ধরে শোনা যায়।
তিনটি কম্পনশীল বস্তু থেকে তিনপ্রকার শব্দতরঙ্গ x, y, z নির্গত হচ্ছে। x, y মানুষের শ্রবণযোগ্য নয়। z মানুষের শ্রবণযোগ্য। x-কে বৃক্কের পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহার করা হয়। x, y, z কী জাতীয় শব্দ?
x-কে বৃক্কের পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহার করা হয় এবং এটি মানুষের শ্রবণযোগ্য নয়।
∴ এটি শব্দোত্তর শব্দ।
y – মানুষের শ্রবণযোগ্য নয়।
∴ এটি শব্দেতর শব্দ।
z – মানুষের শ্রবণযোগ্য।
∴ এটি শ্রুতিগোচর শব্দ।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কুকুর রাখা হয় কেন?
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কুকুর রাখা হয়, কারণ – কুকুর শব্দোত্তর শব্দ শুনতে পায় এবং এদের ঘ্রাণশক্তি খুব বেশি। এর ফলে গন্ধ শুঁকে কুকুর কোনো কিছু শনাক্ত করতে পারে এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারে। শব্দোত্তর শব্দ শুনতে পায় বলে এরা এমন অনেক কিছু শুনতে পায় যা মানুষ পায় না।
ময়লা পরিষ্কার করার কাজে শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহার করা হয় কেন?
যে শব্দের কম্পন প্রতি সেকেন্ডে 20-20,000 বারের মধ্যে সেই শব্দই আমরা শুনতে পাই। মশা ওড়ার কম্পন এই সীমার মধ্যে থাকে বলে মশা উড়লে শব্দ শোনা যায়। কিন্তু পাখি ওড়ার শব্দের কম্পন সেকেন্ডে 20 বারের কম। তাই পাখি ওড়ার শব্দ শোনা যায় না।
মশা উড়লে শব্দ শোনা যায়, কিন্তু পাখি উড়লে শব্দ শোনা যায় না কেন?
রত্ন, লেন্স, ঘড়ির সূক্ষ্ম যন্ত্রাংশ, শিল্পে ব্যবহৃত জটিল মেশিন ইত্যাদির ভিতরে অনেক সময় এমন জায়গায় ময়লা জমে যায় যে তা সহজে পরিষ্কার করা যায় না। তাই, পরিষ্কার করতে প্রথমে ময়লাযুক্ত এই সব জিনিসকে সাবান দ্রবণে ডোবানো হয়। তারপর সাবান দ্রবণের মধ্যে 20 kHz – 40 kHz পাল্লার শব্দোত্তর তরঙ্গ পাঠানো হয়। শব্দোত্তর তরঙ্গের উচ্চ কম্পাঙ্কের দরুন সাবান দ্রবণ তীব্রভাবে আন্দোলিত হয়। এর ফলে ওই দ্রবণে নিমজ্জিত বস্তুগুলির গায়ে আটকে থাকা ধুলোবালি, গ্রিজ ইত্যাদি ময়লার কণাগুলিও তীব্রভাবে কম্পিত হতে থাকে এবং সেগুলি একসময় ওইসব বস্তুর গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দ্রবণে এসে মেশে। এইভাবে শব্দোত্তর তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে ওইসব বস্তুকে সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার করা সম্ভবপর হয়।
SONAR ও RADAR -এ সাধারণ শ্রুতিগোচর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার না করে শব্দোত্তর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করা হয় কেন?
SONAR ও RADAR -এ শব্দোত্তর তরঙ্গ ব্যবহারের কারণ – দুটি কারণে সোনার ব্যবস্থায় শ্রুতিগোচর শব্দতরঙ্গ ব্যবহার না করে আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে –
- নিম্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত হওয়ার ফলে সাধারণ শব্দের তুলনায় শব্দোত্তর তরঙ্গ জলের অনেক গভীরে প্রবেশ করতে পারে, যা শ্রুতিগোচর শব্দতরঙ্গ পারে না।
- জাহাজের ইঞ্জিনের শব্দ বা অন্যান্য কোলাহল ও অপস্বর (noise) -এর উপস্থিতিতেও এই জাতীয় তরঙ্গকে আলাদা করা সুবিধাজনক হয়। কারণ – শব্দোত্তর কম্পাঙ্ক শ্রুতিসীমার বাইরে থাকায় তা মানুষ শুনতে পায় না।
পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর
শব্দের প্রতিফলন (Reflection of sound) ও আলোর প্রতিফলন (Reflection of light) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
শব্দের প্রতিফলন (Reflection of sound) ও আলোর প্রতিফলন (Reflection of light) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | শব্দের প্রতিফলন (Reflection of sound) | আলোর প্রতিফলন (Reflection of light) |
প্রতিফলকের আকার | প্রতিফলক আকৃতিতে বড়ো হওয়া প্রয়োজন। | ক্ষুদ্র প্রতিফলকেও আলোর প্রতিফলন সম্ভব। |
প্রতিরূপ সৃষ্টি | প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়। | প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। |
প্রতিরূপের প্রকারভেদ | প্রতিধ্বনির কোনো প্রকারভেদ নেই। | প্রতিবিম্ব দুপ্রকার হয়, যথা – সদ্বিম্ব ও অসদ্বিম্ব। |
প্রতিফলকের প্রকৃতি | অমসৃণ প্রতিফলকের দ্বারাও শব্দের প্রতিফলন সম্ভব। | আলোর নিয়মিত প্রতিফলনের ক্ষেত্রে প্রতিফলককে অবশ্যই মসৃণ হওয়া প্রয়োজন। অমসৃণ প্রতিফলকে আলোর বিক্ষিপ্ত প্রতিফলন হয়। |
শর্ত | বিশেষ শর্তে শব্দের প্রতিফলনে প্রতিধ্বনি সৃষ্টি হয়। | প্রতিফলক থেকে যে-কোনো দূরত্বে বস্তু থাকলেই প্রতিবিম্ব গঠিত হয়। |
আলট্রাসনিক (Ultrasonic) তরঙ্গ ও সুপারসনিক (Supersonic) তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
আলট্রাসনিক (Ultrasonic) তরঙ্গ ও সুপারসনিক (Supersonic) তরঙ্গের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | আলট্রাসনিক তরঙ্গ (Ultrasonic wave) | সুপারসনিক তরঙ্গ (Supersonic wave) |
প্রকৃতি | আলট্রাসনিক হল সেই শাখা যেখানে 20 kHz অপেক্ষা বেশি কম্পাঙ্কের তরঙ্গের ধর্ম ও ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করা হয়। | সুপারসনিক শব্দটি শব্দ অপেক্ষা বেশি বেগে গতিশীল বস্তুর গতির বর্ণনায় ব্যবহৃত হয়। |
গতিবেগ | আলট্রাসনিক তরঙ্গের বেগ শব্দের বেগের সঙ্গে সমান। | সুপারসনিক বস্তু বা প্রবাহী, শব্দ অপেক্ষা বেশি বেগে গতিশীল হয়। |
উৎপাদন | চাপ-বিদ্যুৎ অনুনাদক (Piezo electric oscillator) ব্যবস্থার দ্বারা এ জাতীয় তরঙ্গ উৎপন্ন করা হয়। | কোনো বিমান শব্দের বেগ অপেক্ষা বেশি বেগসহ গতিশীল হলে বিমানের পিছনে যে উচ্চচাপ যুক্ত ফানেল সদৃশ অভিঘাত তরঙ্গসমন্বিত অঞ্চল সৃষ্টি হয়, তা সুপারসনিক কম্পন সৃষ্টি করে। |
ব্যবহার | চিকিৎসাক্ষেত্রে জীবাণুনাশক হিসেবে পরিষ্কার করার কাজে, দূরত্ব অনুসন্ধানের প্রয়োজনে আলট্রাসনিক তরঙ্গের ব্যাপক ব্যবহার আছে। | সুপারসনিক কম্পনের ব্যবহার সীমিত। বিমানের বেগ শব্দ অপেক্ষা বেশি না কম তা চিহ্নিত করতে একে ব্যবহার করা হয়। |
গাণিতিক প্রশ্নাবলি
প্রয়োজনীয় সূত্রাবলি
শব্দের দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব (s) = বেগ (v) × সময় (t)
n পদাংশযুক্ত বোধগম্য শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার ন্যূনতম দূরত্ব (d) = n × 33.2 m
উড়োজাহাজের উচ্চতা \(\left(h\right)=\frac t2\sqrt{V^2-v^2}\) [V – শব্দের বেগ, v – উড়োজাহাজের বেগ, t – প্রতিধ্বনি শোনার সময়।]
সমুদ্রের গভীরতা \(\left(D\right)=\frac12vt\)
কামানের ঝলক দেখার 6 sec পর তোপধ্বনি শোনা গেল। শব্দের বেগ 340 m/s হলে কামান থেকে শ্রোতার দূরত্ব কত?
কামান থেকে শ্রোতার দূরত্ব = 6 sec -এ শব্দ কর্তৃক অতিক্রান্ত দূরত্ব (s)।
আমরা জানি,
s = vt
বা, s = 340 × 6
বা, s = 2040 m
∴ কামান থেকে শ্রোতার দূরত্ব 2040 m।
একটি পাহাড়ের সামনে একজন লোক বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়ে 3 sec পর গুলির শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে পেল। বায়ুতে শব্দের বেগ 332 m/s হলে পাহাড় থেকে লোকটির দূরত্ব কত?
বায়ুতে শব্দের বেগ \(\left(v\right)=332\;m/s\), সময় \(\left(t\right)=3\;sec\)
ধরি, পাহাড় থেকে লোকটির দূরত্ব = \(2s=v\times t\)
∴ \(s\;meter\)
বা, \(s=\frac{v\times t}2\)
বা, \(s=\frac{332\times3}2\)
∴ \(s=498\;m\)
∴ পাহাড় থেকে লোকটির দূরত্ব \(498\;m\)।
একটি বড়ো দেয়াল থেকে কিছু দূরে শব্দ করলে \(\frac12\;sec \) পরে তার প্রতিধ্বনি শোনা যায়। উৎস থেকে দেয়ালের দূরত্ব কত? শব্দের বেগ \(332\;m/s\)।
ধরি, শব্দ উৎস থেকে দেয়ালের দূরত্ব = \(s\;meter\)। শব্দের বেগ \(\left(t\right)=3\;sec \), সময় \(\left(t\right)=\frac12\;sec\)।
শর্তানুযায়ী, \( 2\times s=v\times t\)
বা, \(s=\frac{v\times t}2 \)
বা, \( s=\frac{330\times1}{2\times2}\)
বা, \(s=82.5\;m \)
∴ উৎস থেকে দেয়ালের দূরত্ব \(82.5\;m \)।
নির্দিষ্ট সময়ে সাইরেনের শব্দ শুনে একজন তার ঘড়ি মেলালো। বায়ুতে শব্দের বেগ 350 m/s ও সাইরেনের দূরত্ব 1.4 km হলে লোকটির ঘড়ি কতটা স্লো যাবে?
সাইরেনের শব্দ লোকটির কাছে পৌঁছোতে যতটা সময় লাগে ঘড়ি ততটা স্লো যাবে।
সাইরেন থেকে লোকটির দূরত্ব \( \left(s\right)=1.4\;m=1400\;m\)
এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে \(\left(t\right)=\frac sv \)
বা, \(t=\frac{1400}{350}\)
বা, \(t=4 \)
∴ লোকটির ঘড়ি \(4\;sec \) স্লো যাবে।
একটি জাহাজের শব্দসন্ধানী যন্ত্র তার চারপাশে 3 km ব্যাসার্ধের মধ্যে সাবমেরিনের অস্তিত্ব নির্ণয়ের জন্য শব্দোত্তর তরঙ্গের ঝলক সংকেত (Pulse) পাঠায়। প্রতি মিনিটে এরূপ কতগুলি ঝলক পাঠানো প্রয়োজন? [জলে শব্দের বেগ 1500 m/s]
জাহাজকে কেন্দ্র করে 3 km ব্যাসার্ধের বৃত্তের পরিধির উপর সাবমেরিনের অবস্থানের জন্য শব্দসন্ধানী যন্ত্র থেকে পাঠানো একটি ঝলক সংকেতের সাবমেরিনে প্রতিফলিত হয়ে আবার শব্দসন্ধানী যন্ত্রে ফিরে আসতে প্রয়োজনীয় সময় –
\(t=\frac sv\\ \)বা, \(t=\frac{2\times3\times10^3}{1500}\;sec \)
বা, \(t=4\;sec\)
∴ প্রতিফলিত ঝলক সংকেতকে স্পষ্ট ধরতে হলে শব্দসন্ধানী যন্ত্র থেকে পাঠানো পরপর দুটি শব্দ সংকেতের মধ্যে সময় ব্যবধান হওয়া উচিত \(4\;sec\)।
∴ প্রতি মিনিটে পাঠানো ঝলকের সংখ্যা = \(\frac{60}4=15 \)।
একটি পাহাড়ের সামনে থেকে 850 m দূরত্বে দাঁড়িয়ে একজন লোক বন্দুক থেকে গুলি ছুড়ে 5 sec পর তার প্রতিধ্বনি শুনতে পেল। বায়ুতে শব্দের বেগ কত?
প্রশ্নানুযায়ী, \(5\;sec \) সময়ে শব্দ পাহাড়ে প্রতিফলিত হয়ে আবার ব্যক্তির কাছে ফিরে আসে। অর্থাৎ, ওই সময়ে শব্দ \(2\times850\;m \) বা \(1700\;m \) পথ অতিক্রম করে।
বায়ুতে শব্দের বেগ \(\left(v\right)=\frac{1700}5 \)
বা, \(v=340\;m/s \)
∴ বায়ুতে শব্দের বেগ \(340\;m/s \)।
দুটি পাহাড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি একটি শব্দ করার 4 sec পর একটি এবং 6 sec পর আর একটি প্রতিধ্বনি শুনতে পেল। শব্দের বেগ 340 m/s হলে পাহাড় দুটির মধ্যে দূরত্ব কত? কখন তৃতীয় প্রতিধ্বনি শোনা যাবে?
ধরি, ব্যক্তি থেকে নিকটবর্তী পাহাড়ের দূরত্ব \(x\;meter\) এবং দূরবর্তী পাহাড়ের দূরত্ব \(y\;meter\)।
সুতরাং, \(6\;sec\) -এ শব্দ যায় \(2x\;meter\) এবং \(6\;sec\) -এ শব্দ যায় \(2y\;meter\)
∴ \(2x=4\times340\)
বা, \(x=\frac{4\times340}2\)
বা, \(x=680\;m\)
এবং \(2y=6\times340\)
বা, \(y=\frac{6\times340}2\)
বা, \(x=1020\;m\)
পাহাড় দুটির মধ্যবর্তী দূরত্ব = \(\left(x+y\right)\;m\)
= \(\left(680+1020\right)\;m\)
= \(1700\;m\)
দ্বিতীয় প্রতিধ্বনি শোনার আরও \(4\;sec\) পরে অর্থাৎ, বন্দুক ছোড়ার মুহূর্ত থেকে \(\left(6+4\right)=10\;sec\) পর তৃতীয় প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যাবে।
Newton শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের ন্যূনতম দূরত্ব কত হবে? বায়ুতে শব্দের বেগ 332 m/s।
Newton শব্দটিতে দুটি পদাংশ আছে (New – ton)।
∴ শব্দটি দ্বিমাত্রিক শব্দ।
আমরা জানি, একমাত্রিক শব্দের প্রতিধ্বনি শোনার জন্য শব্দ ও প্রতিধ্বনির মধ্যে ন্যূনতম সময়ের ব্যবধান = \(\frac15\;s\)।
∴ দ্বিমাত্রিক শব্দের জন্য সময়ের ব্যবধান = \(2\times\frac15=\frac25\;s\)
∴ শব্দ \( 1\;s\) -এ যায় \(332\;m \)
\( \frac25\;s\) -এ যায় = \(332\times\frac25\;m=132.8\;m \)
শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব = \(\frac{132.8}2\;m=66.4\;m\)।
Chemistry শব্দের প্রতিধ্বনি শুনতে হলে শ্রোতা ও প্রতিফলকের ন্যূনতম দূরত্ব কত হবে?
CHEMISTRY শব্দটি ত্রিমাত্রিক (কে-মিস্-ট্রি)। একমাত্রিক শব্দ উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় = \(\frac15\;s\)
∴ ত্রিমাত্রিক শব্দ উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় সময় = \(\frac35\;s\)
বায়ুতে শব্দের বেগ = \(332\;m\cdot s^{-1}\)
CHEMISTRY শব্দটি উচ্চারণের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ে শব্দ দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব = \(332\times\frac35\)
= \(66.4\times3\)
= \(199.2\;m\)
শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব \(x\;meter\) হয়,
\(2x=199.2\;m\\\)বা, \(x=\frac{199.2}2\;m=99.6\;m\)
∴ শ্রোতা ও প্রতিফলকের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব \(99.6\;m\)।
কোনো বিমানচালক 200 km/h বেগে অনুভূমিকভাবে যেতে যেতে বন্দুক থেকে গুলি ছুঁড়লেন। 5 s পর ওই বিমানচালক ওই গুলি ছোঁড়ার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলেন। বায়ুতে শব্দের বেগ 320 m/s হলে, বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে কত উচ্চতায় উড়ছিল?
বিমানের বেগ \(\left(v\right)=200\;km/h=\frac{200\times1000}{3600}=55.56\;m/s\)
শব্দের বেগ \(\left(V\right)=320\;m/s\), সময় \(\left(t\right)=5\;s\)l
বিমানের উচ্চতা, \(h=\frac t2\sqrt{V^2-v^2}\)
বা, \(h=\frac52\times\sqrt{320^2-55.56^2}\)
বা, \(h=2.5\times\sqrt{99313.09}\)
বা, \(h=787.85\)
বা, \(h\approx788\)
∴ বিমানটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় \(788\;m\) উচ্চতায় উড়ছিল।
সমুদ্রে ভাসমান একটি জাহাজ থেকে একটি শব্দ উৎপন্ন করলে ওই শব্দ সমুদ্রের তলদেশ থেকে 8 sec পর প্রতিধ্বনিরূপে ওই জাহাজে ফিরে আসে। জলে শব্দের বেগ 1450 m/s হলে ওই স্থানে সমুদ্রের গভীরতা কত?
\(8\;sec\) সেকেন্ড, \(v=1450\;m/s\)।
∴ সংশ্লিষ্ট স্থানে সমুদ্রের গভীরতা \(d\) হলে যাতায়াতে শব্দতরঙ্গ দ্বারা অতিক্রান্ত দূরত্ব, \(2d=vt\)
বা, \(d=\frac{vt}2\)
বা, \(d=\frac{1450\times8}2\)
বা, \(d=5800\)
∴ জলে শব্দের বেগ 1450 m/s হলে ওই স্থানে সমুদ্রের গভীরতা \(5800\;m\)।
Class 9 Physical Science – Notes for All Chapters
Chapter Name | Tropics |
---|---|
পরিমাপ | পরিমাপ ও একক বিভিন্ন মাপের একক মাত্রা পরিমাপ |
বল ও গতি | স্থিতি ও গতি গতির সমীকরণ নিউটনের প্রথম গতিসূত্র নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র বিভিন্ন ধরণের বল রৈখিক ভরবেগ রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষণ |
পদার্থ : গঠন ও ধর্ম | তরল ও বায়ুর চাপ আর্কিমিডিসের নীতি পৃষ্ঠটান সান্দ্রতা বার্নোলির নীতি স্থিতিস্থাপকতা |
পদার্থ : পরমাণুর গঠন ও পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ | পরমাণুর গঠন মোলের ধারণা দ্রবণ অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ মিশ্রণের উপাদানের পৃথকীকরণ জল |
শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা | শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা |
তাপ | ক্যালোরিমিতি কার্য ও তাপের তুল্যতা লীনতাপ সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ |
শব্দ | শব্দের উৎস : কম্পন শব্দের বিস্তার : তরঙ্গ শব্দের কয়েকটি ধর্ম শব্দের বৈশিষ্ট্য মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল শব্দদূষণ |
আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের সপ্তম অধ্যায় “শব্দ” এর “শব্দের কয়েকটি ধর্ম” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।
আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।
ধন্যবাদ সবাইকে।
মন্তব্য করুন