নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – তাপ – সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প – প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ট অধ্যায় “তাপ” এর “সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত” থেকে সহজ ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর শেয়ার করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট থেকে বার্ষিক পরীক্ষা এর জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি চাকরি বা বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পরীক্ষাতেও কাজে লাগবে। এই অধ্যায় থেকে স্কুল পরীক্ষা থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই প্রশ্ন আসে, তাই এই প্রশ্নোত্তরগুলো সবাইকে সাহায্য করবে। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারেন। পড়ার শেষে এই অধ্যায়ের মুখ্য বিষয়গুলো আপনার আয়ত্তে চলে আসবে এবং যেকোনো পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে লিখতে পারবেন।

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - তাপ - সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প - প্রশ্ন ও উত্তর

জ্ঞানমূলক প্রশ্নোত্তর

Contents Show

গ্যাস ও বাষ্প বলতে কী বোঝায়?

গ্যাস (Gas) ও বাষ্প (Vapour) –

কোনো বায়বীয় পদার্থের উষ্ণতা সংকট উষ্ণতার উপরে থাকলে তাকে বলা হয় গ্যাস। সংকট উষ্ণতার নীচে থাকলে তাকে বলা হয় বাষ্প। যেমন – কার্বন ডাইঅক্সাইডের সংকট উষ্ণতা 31°C। সুতরাং, 31°C উষ্ণতার ওপরে তাকে গ্যাস ও ওই উষ্ণতার নীচে তাকে বাষ্প বলা হয়।

সংকট উষ্ণতা (Critical temperature) কাকে বলে এবং সংকট উষ্ণতার মান কীভাবে নির্ধারণ করে কোনো বায়বীয় পদার্থকে বাষ্প না গ্যাস বলা হবে?

সাধারণ অর্থে কোনো তরলকে উত্তপ্ত করে যে বায়বীয় পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে বাষ্প বা গ্যাস বলা হলেও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে এদের ধারণা সম্পূর্ণ আলাদা। চাপ প্রয়োগের দ্বারা বিভিন্ন বায়বীয় পদার্থকে তরলে রূপান্তরিত করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞানী অ্যান্ড্রিউ ও অ্যামাগট (Andrew and Amagotte) CO2 -সহ বিভিন্ন গ্যাসের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রভাব সংক্রান্ত বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন এবং সিদ্ধান্তে আসেন যে, কোনো বায়বীয় পদার্থকে শুধুমাত্র চাপ প্রয়োগে তরলে রূপান্তরিত করতে হলে তার উষ্ণতা একটি নির্দিষ্ট মানের নীচে রাখা প্রয়োজন। উষ্ণতার এই বিশেষ মানকে সংকট উষ্ণতা (Critical temperature) (tc) বলা হয়। সুতরাং, সংকট উষ্ণতার মানই নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো বায়বীয় পদার্থকে বাষ্প না গ্যাসীয় পদার্থ বলা উচিত তা নির্ধারণ করে।

হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ইত্যাদি গ্যাসের সংকট উষ্ণতার মান ঘরের উষ্ণতা অপেক্ষা অনেক কম হওয়ায় এদের স্থায়ী গ্যাস (Perma-nent gas) বলে। অন্যদিকে, জলীয়বাষ্পের সংকট উষ্ণতা 361°C। তাই সাধারণ উষ্ণতায় চাপ প্রয়োগ করে সহজেই তাকে তরলে পরিণত করা যায়।

সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

সম্পৃক্ত বাষ্প (Saturated vapour) –

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো আবদ্ধ স্থানে সর্বাধিক যে পরিমাণ বাষ্প থাকতে পারে তাকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলা হয়।

সম্পৃক্ত বাষ্পের উদাহরণ – আবদ্ধ পাত্রে কিছু পরিমাণ জল রেখে দিলে কিছুক্ষণ পরে ওই জল ঘরের উষ্ণতাতেই বাষ্পীভূত হতে শুরু করে এবং পাত্রটি ক্রমশ জলীয়বাষ্প দ্বারা পূর্ণ হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাত্রের মধ্যে জলের উপরিতলে যতটুকু ফাঁকা জায়গা আছে তা জলীয়বাষ্প দ্বারা পূর্ণ হয়। অর্থাৎ, ওই অংশে ঘরের উষ্ণতায় যতটুকু জলীয়বাষ্প থাকতে পারে সেই পরিমাণ জলীয়বাষ্পই থাকে। এই বাষ্পকে তখন বলা হয় সম্পৃক্ত বাষ্প।

অসম্পৃক্ত বাষ্প (Unsaturated vapour) –

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো আবদ্ধ স্থানে সর্বাধিক যে পরিমাণ বাষ্প থাকতে পারে তার চেয়ে কম পরিমাণ বাষ্পের উপস্থিতিতে ওই স্থান বাষ্প দ্বারা অসম্পৃক্ত হয় এবং ওই বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলা হয়।

অসম্পৃক্ত বাষ্পের উদাহরণ – যে-কোনো উপযুক্ত স্থানের বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের পরিমাণ সাধারণভাবে তার সর্বোচ্চ বাষ্পধারণ ক্ষমতা অপেক্ষা কম হয়ে থাকে। সুতরাং এটি, অসম্পৃক্ত বাষ্পের উদাহরণ।

বাষ্পচাপ ও সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা করো।

বাষ্পচাপ (Vapour pressure) –

কোনো তরলকে বদ্ধপাত্রে রেখে বাষ্পীভূত হতে দিলে দেখা যায় ওই স্থান ক্রমশ সংশ্লিষ্ট তরলের বাষ্প দ্বারা পূর্ণ হচ্ছে। গ্যাসের ন্যায় বাষ্পের অণুগুলিও আবদ্ধ স্থানে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে গতিশীল হয়ে নিজেদের মধ্যে এবং পাত্রের দেয়ালের সঙ্গে সংঘাত ঘটায়। এই অবস্থায় বাষ্প অণুগুলির ভরবেগের পরিবর্তন হয় এবং তার ফলে পাত্রের দেয়ালের প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ওই বাষ্প যে বল প্রয়োগ করে, তাকেই বাষ্পচাপ বলে।

সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ (Saturated vapour pressure) –

কোনো আবদ্ধ স্থান তাতে, উপস্থিত বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হলে ওই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট বাষ্পের দ্বারা প্রযুক্ত চাপকেই সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বলে। সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপকে অনেকসময় জলীয় টান (Aqueous tension) বলা হয়।

স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্কের সংজ্ঞা দাও। 

তরলের স্ফুটনাঙ্কে সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়। সুতরাং, বলা যায় যে উষ্ণতায় তরলের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের সমান হয়, তাকেই ওই তরলের স্বাভাবিক স্ফুটনাঙ্ক বলে।

শিশিরাঙ্কের সংজ্ঞা দাও। 

শিশিরাঙ্ক (Dew point) –

বায়ুমণ্ডলীয় উষ্ণতা হ্রাস পেলে একটি নির্দিষ্ট স্থানে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতাও কমতে থাকে এবং ওই নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। এই বিশেষ উষ্ণতাটিকেই শিশিরাঙ্ক বলে।

আর্দ্রতা কাকে বলে? এর প্রকারভেদগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

আর্দ্রতা (Humidity) –

কোনো নির্দিষ্ট স্থানে নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ নির্দেশক ভৌতরাশিকে বলা হয় আর্দ্রতা।

সাধারণ বিবেচনায় আর্দ্রতাকে একপ্রকার স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ন্ত্রক অনুভূতি হিসেবে ভাবা হলেও দুটি পৃথক রাশির সাহায্যে একে পরিমাণগতভাবে বর্ণনা করা যায়। এই দুটি হল –

  • পরম আর্দ্রতা ও
  • আপেক্ষিক আর্দ্রতা।

পরম আর্দ্রতা (Absolute humidity) –

কোনো স্থানে একক আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভরকেই ওই স্থানের পরম আর্দ্রতা বলা হয়। গ্রাম/ঘনমিটার এককে একে প্রকাশ করা হয়। রাশিটির ব্যাবহারিক উপযোগিতা খুব বেশি নেই।

আপেক্ষিক আর্দ্রতা (Relative humidity) –

কোনো নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর এবং ওই উষ্ণতায় ওই আয়তনের বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের ভর, এই দুইয়ের অনুপাতকে বলা হয় আপেক্ষিক আর্দ্রতা। t°C উষ্ণতার নির্দিষ্ট পরিমাণে বায়ুকে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভর m, ওই উষ্ণতায় সমপরিমাণ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন তার ভর M হলে, আপেক্ষিক আর্দ্রতা = \(\frac mM\times100\%\)

দুটি সমজাতীয় রাশির অনুপাত হওয়ায় এটি একটি মাত্রাহীন রাশি। বায়ুর সম্পৃক্ততার মাত্রা যেহেতু বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর ও উষ্ণতা এই দুইয়ের ওপর নির্ভর করে, তাই আপেক্ষিক আর্দ্রতার ধারণা এই প্রসঙ্গে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ হয়।

শিশিরাঙ্কে সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ ও বায়ুর উষ্ণতায় সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপের অনুপাত হিসেবে আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে কীভাবে বর্ণনা করা যায়?

শিশিরাঙ্কে সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ ও বায়ুর উষ্ণতায় সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ-এই দুটি রাশির অনুপাত হিসাবেও আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে বর্ণনা করা যায়।

দৈনন্দিন জীবনে আপেক্ষিক আর্দ্রতার ধারণার গুরুত্ব কী?

দৈনন্দিন জীবনে আপেক্ষিক আর্দ্রতার গুরুত্ব –

বিভিন্ন ব্যাবহারিক প্রয়োজনে আপেক্ষিক আর্দ্রতার মানের ধারণা আবশ্যক হয়। যেমন –

  • আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান বাড়লে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বাড়ে।
  • বিশেষ কিছু রোগের জীবাণু আর্দ্র আবহাওয়ায় দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটায়।
  • বয়নশিল্পে (পাট, কার্পাস ইত্যাদি তন্তুর উৎপাদনে) আর্দ্র আবহাওয়া সহায়ক, অন্যদিকে ইলেকট্রনিকস শিল্পে শুষ্ক আবহাওয়া প্রয়োজন হয়।
  • দীর্ঘদিনের জন্য খাদ্যশস্য, কাগজ ইত্যাদি মজুত রাখতে গুদামঘরের আবহাওয়া শুষ্ক রাখা প্রয়োজন হয়।
  • বিমানচালকেরা নিরাপত্তার কারণে অতিরিক্ত আর্দ্র অঞ্চল এড়িয়ে চলেন।

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের সাহায্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প ব্যাখ্যা করো।

চাপ-আয়তন লেখচিত্র (P-V graph) –

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের DC অংশ দ্বারা চাপ অসম্পৃক্ত বাষ্প বোঝানো হয়েছে। এই অংশে আয়তন (V) কমলে চাপ (P) বাড়ে। অর্থাৎ, অসম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র \(\left(P\propto\frac1V\right)\) মেনে চলে। C বিন্দুতে বাষ্পটি সম্পৃক্ত হয় এবং এরপর আয়তন কমলেও চাপ অপরিবর্তিত থাকে। লেখচিত্রের CB অংশ সম্পৃক্ত বাষ্পকে সূচিত করে, যা আয়তন অক্ষের সমান্তরাল। B বিন্দুতে সমস্ত বাষ্পই ঘনীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয়। যেহেতু চাপ বাড়ালে তরলের আয়তন অপরিবর্তিত থাকে তাই এই লেখচিত্রের BA অংশ চাপ অক্ষের সমান্তরাল হয়। লেখচিত্র থেকে বোঝা যায় সম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র মেনে চলে না।

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের সাহায্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প ব্যাখ্যা করো।

উষ্ণতার সঙ্গে জলের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপের পরিবর্তন একটি লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।

উষ্ণতার সঙ্গে জলের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপের পরিবর্তন পাশের লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যা থেকে বোঝা যায় যে পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করে) পুরোপুরি শূন্য হয় না। উষ্ণতা বাড়ালে সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ প্রথমে ধীরে ধীরে ও পরে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং 100°C উষ্ণতায় জলের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ 0.76 মি পারদস্তম্ভের চাপের সমান হয়।

উষ্ণতার সঙ্গে জলের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপের পরিবর্তন একটি লেখচিত্রের মাধ্যমে দেখাও।

প্রাকৃতিক ঘনীভবনের বিভিন্ন দৃষ্টান্তগুলি উল্লেখ করো। নীচের উল্লিখিত ঘটানাগুলির সৃষ্টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও – শিশির, কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টি।

উপযুক্ত শর্তে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয়বাষ্প প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ঘনীভূত হয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার সৃষ্টি করে। যেমন – শিশির, কুয়াশা, মেঘ ও বৃষ্টি ইত্যাদি। এদেরই সাধারণভাবে প্রাকৃতিক ঘনীভবন বলে।

শিশির (Dew) –

দিনেরবেলায় সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ এবং ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বস্তুগুলি উত্তপ্ত হয়। ফলে, সংলগ্ন বায়ুস্তরও উত্তপ্ত হয়। উষ্ণতা বেশি থাকায় দিনেরবেলা বায়ু তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দিয়ে সম্পৃক্ত হতে পারে না। কিন্তু রাত্রে ভূপৃষ্ঠ ও ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকা বস্তুগুলি তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়। বিকিরণ ক্ষমতা বেশি হলে বস্তুগুলির শীতল হতে সময়ও কম লাগে। এর ফলে সমস্ত বস্তু সংলগ্ন বায়ুস্তরের উষ্ণতা হ্রাস পায় এবং একসময় শিশিরাঙ্কে পৌঁছোয়। এই অবস্থায় বায়ুস্তর তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। উষ্ণতা আরও কমলে কিছু পরিমাণ জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ওই বস্তুগুলির গায়ে ছোটো ছোটো জলবিন্দু আকারে সঞ্চিত হয়। এই জলবিন্দুগুলিকে শিশির (Dew) বলা হয়।

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের সাহায্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প ব্যাখ্যা করো।

কুয়াশা (Fog) –

বায়ুপ্রবাহের অনুপস্থিতিতে কোনো কারণে ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি অনেকখানি জায়গা জুড়ে বাতাসের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কে পৌঁছোলে বায়ু তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়। উষ্ণতা আরও হ্রাস পেলে ওই সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের কিছু অংশ ঘনীভূত হয়ে ছোটো ছোটো জলকণার আকৃতি ধারণ করে এবং বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ভাসতে থাকে। একেই কুয়াশা বলে। ঘন কুয়াশাকে সাধারণত কুহেলিকা (Fog) এবং হালকা কুয়াশাকে মিস্ট (Mist) বলা হয়।

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের সাহায্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প ব্যাখ্যা করো।

মেঘ (Cloud) –

বায়ুর উচ্চস্তরে জলীয়বাষ্পের বৃহৎ পরিমাণে ঘনীভবনের ফলে মেঘ সৃষ্টি হয়। জলীয়বাষ্পপূর্ণ হালকা বায়ু উপরে উঠলে ওই স্থানে বাতাসের চাপ কম থাকায় ওই বায়ু আয়তনে প্রসারিত হয়, ফলে বায়ুর উষ্ণতা কমে যায়। উষ্ণতা শিশিরাঙ্ক অপেক্ষা কম হলে জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র জলবিন্দুর আকারে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার গায়ে জমে এবং অভিকর্ষের বিরুদ্ধে ভাসতে থাকে। একেই মেঘ বলা হয়। সুতরাং, মেঘ ও কুয়াশার ভিতরে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কুয়াশা বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ও মেঘ (Cloud) উচ্চস্তরে সৃষ্টি হয়।

চাপ-আয়তন লেখচিত্রের সাহায্যে সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প ব্যাখ্যা করো।

মেঘ সৃষ্টিকারী এই জলকণাগুলি ভাসমান অবস্থায় পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আকারে বড়ো ও ভারী হয়, এবং একসময় অভিকর্ষের টানে নীচে পড়ে। একেই বৃষ্টি (Rain) বলা হয়।

ধোঁয়াশা কাকে বলে?

শহর ও শিল্পাঞ্চলে বাতাসে অতিরিক্ত পরিমাণে উপস্থিত সূক্ষ্ম কার্বন, সিসা ইত্যাদি কঠিন পদার্থের কণা, ধূলিকণা, কয়লার গুঁড়ো ইত্যাদিকে আশ্রয় করে ঘনীভূত জলীয়বাষ্প সূক্ষ্ম জলকণার আকারে ভাসে এবং ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে অনেকসময় ঘন কালো জলীয়বাষ্পের আবরণ তৈরি করে। একে বলা হয় ধোঁয়াশা (Smoke + fog → Smog)। শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন 1905 খ্রিস্টাব্দে ড. হেনরি অ্যান্টনিও দ্য ভয়েক্স।

ভালো শিশির জমার শর্তগুলি সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

ভালো শিশির জমার শর্তগুলি হল –

মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশ –

আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে, ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ সহজে মহাশূন্যে চলে যায়। ফলে, বায়ুমণ্ডল দ্রুত ঠান্ডা হয়ে ওর মধ্যে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয় এবং উষ্ণতা ক্রমশ কমে শিশিরাঙ্কের নীচে পৌঁছোয়। এজন্য ভালো শিশির জমার জন্য অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়।

বায়ুর উচ্চ আর্দ্রতা –

বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হলে, উষ্ণতার সামান্য হ্রাসে বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে যায়। ফলে শিশির জমতে সুবিধা হয়।

স্থির বায়ু – 

বায়ুপ্রবাহ না হলে শীতল বস্তু সংলগ্ন বায়ুস্তর দীর্ঘ সময় ধরে ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ পায়। ফলে, ওই বায়ুস্তরের উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই, বায়ু স্থির থাকলে শিশির জমা সহজ হয়।

তাপের উত্তম বিকিরক অথচ কুপরিবাহী বস্তুর উপস্থিতি –

তাপের উত্তম বিকিরক বস্তু তাপ বিকিরণ করে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয় এবং তাপের কুপরিবাহী হওয়ায় ভূপৃষ্ঠ থেকে পরিবহণ পদ্ধতিতে বেশি তাপ ওই বস্তু গ্রহণ করতে পারে না। ফলে, বস্তুটির উষ্ণতা দ্রুত কমে যায়। তাই, এরূপ বস্তুর সংস্পর্শে বায়ু তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয় এবং বস্তুর উপর দ্রুত শিশির জমে।

ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বস্তুর উপস্থিতি –

কোনো বস্তু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকলে, ওই বস্তুতে সহজে শিশির জমে। কারণ – বস্তু ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকলে নীচের দিকের অপেক্ষাকৃত ভারী ও ঠান্ডা বায়ু বেশিক্ষণ বস্তুটির সংস্পর্শে থাকার সুযোগ পায়, ফলে বস্তু সংলগ্ন বায়ুস্তরের উষ্ণতা সহজেই শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে যায় এবং তাই ভালো শিশির জমে।

বোধমূলক প্রশ্নোত্তর

শীতকালের ভোরে পুকুরের জলের উপর কুয়াশা দেখা যায় কেন?

কোনো কোনো দিন শীতের ভোরে পুকুরের জলের উপরে থাকা বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। জলের উপরিতল সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে ওই বায়ু ওতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়।

এই সম্পৃক্ত বাষ্পের কিছু অংশ বায়ুতে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণাগুলিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র জলবিন্দুরূপে বাতাসে ভাসে। এই ভাসমান জলবিন্দুগুলিই পুকুরের জলতলের উপরে কুয়াশা সৃষ্টি করে।

কী অবস্থায় কোনো ঘরের উষ্ণতা ও শিশিরাঙ্ক সমান হবে? ওই অবস্থায় আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান কী হবে?

কোনো ঘরে আবদ্ধ বায়ু যদি তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা ঠিক সম্পৃক্ত হয়, সেই বিশেষ অবস্থা বা শর্তে ওই ঘরের উষ্ণতা ও শিশিরাঙ্কের মান সমান হবে।

ওই অবস্থায় আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান হবে 100%।

খোলা পাত্রে রাখা জলের ওপর ঢাকা দিয়ে দেওয়া হল। ঢাকা দেওয়ার আগে ও পরে জলের ওপর বাষ্পের প্রকৃতির পার্থক্য কী দেখা যায়?

ঢাকা দেওয়ার পূর্বে জলপূর্ণ পাত্রের উপরিঅংশ মুক্ত থাকায় ওই অংশের আয়তন অনির্দিষ্ট, ফলে ওই অংশের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণও অনির্দিষ্ট ও পরিবর্তনীয়। তাই ওই অংশের বায়ু বাষ্পের দ্বারা অসম্পৃক্ত।

কিন্তু, ঢাকা দেওয়ার ফলে পাত্রের মধ্যে জলতল ও ঢাকনার মধ্যবর্তী অংশে থাকা বায়ুর আয়তন নির্দিষ্ট হয়। ফলে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই অংশের বায়ু, জলতল থেকে বাষ্পায়নের ফলে উদ্ভূত জলীয় বাষ্পের দ্বারা বায়ুর উষ্ণতায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়তে পারে। এই অবস্থায় জলের ওপরে থাকা বাষ্পের প্রকৃতি সম্পৃক্ত হয়।

কোনো একদিনের আপেক্ষিক আর্দ্রতা 80% বলতে কী বোঝায়?

কোনো একদিনের আপেক্ষিক আর্দ্রতা 80% বলতে বোঝায় যে, ওই দিনের বায়ুর উষ্ণতায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রয়োজন তার শতকরা 80 ভাগ ওই বায়ুতে উপস্থিত আছে।

আবদ্ধ ঘরে জল ছেটানো হয় – এই পরিস্থিতিগুলিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও শিশিরাঙ্কের কী পরিবর্তন হবে?

আবদ্ধ ঘরে জল ছেটালে ঘরের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বাড়ে, কিন্তু ঘরের উষ্ণতা একই থাকে বলে ওই উষ্ণতায় ঘরের বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের ভর অপরিবর্তিত থাকে। ফলে, আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান বেড়ে যায়।

এক্ষেত্রে, বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় বায়ু সামান্য ঠান্ডা হলেই তাতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে অর্থাৎ, শিশিরাঙ্কের মান বাড়ে।

জলীয়বাষ্পের পরিমাণ স্থির রেখে কোনো ঘরের বায়ুর উষ্ণতা বাড়ানো হয় – এই পরিস্থিতিগুলিতে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও শিশিরাঙ্কের কী পরিবর্তন হবে?

উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণ স্থির রেখে উষ্ণতা বাড়ালে আপেক্ষিক আর্দ্রতা কমে, কারণ – অধিক উষ্ণতায় বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে বেশি পরিমাণ জলীয়বাষ্প প্রয়োজন হয়। ঘরের শিশিরাঙ্ক অপরিবর্তিত থাকে।

আপেক্ষিক আর্দ্রতার মানের ভিত্তিতে আমাদের শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য বা অস্বস্তির অনুভূতি কীভাবে নির্ণয় করা হয়?

বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্প দ্বারা সংশ্লিষ্ট বায়ু প্রায় সম্পৃক্ত অথবা সম্পৃক্ত অবস্থার কাছাকাছি থাকলে আমাদের দেহ থেকে বাষ্পায়নের হার কমে যায়। ফলে, দেহের ঘাম শুকাতে দেরি হয় এবং আমরা অস্বস্তি বোধ করি। অন্যদিকে, জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম থাকলে দেহের ঘাম দ্রুত শুকায় এবং বাষ্পায়নের জন্য প্রয়োজনীয় লীনতাপ দেহ থেকে শোষিত হয় বলে দেহের উষ্ণতা কমে এবং আরামদায়ক অনুভূতি হয়। সুতরাং, আমাদের শারীরিক স্বাচ্ছন্দ্য বা অস্বস্তির অনুভব প্রত্যক্ষভাবে আপেক্ষিক আর্দ্রতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। বিপরীতক্রমে, আপেক্ষিক আর্দ্রতা অত্যন্ত কম হলেও তা অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, দেহ থেকে জলীয়বাষ্প দ্রুত হারে বাষ্পায়িত হয়। দেখা যায় যে, আপেক্ষিক আর্দ্রতার মান 50% – 60% -এর মধ্যে থাকলে আমরা সবথেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি।

শীতকালে ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগানো হয় কেন?

শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকে। জলীয়বাষ্পের ঘাটতি পূরণ করার জন্য বায়ুমণ্ডল আমাদের দেহের উন্মুক্ত মাংসল অংশ, যেমন – ঠোঁট, চামড়া ইত্যাদি থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে। ফলে, ওই অংশগুলির আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঠোঁট, চামড়া ইত্যাদি শুষ্ক ও খসখসে হয়ে পড়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা ফেটে যায়।

গ্লিসারিন অনুদ্‌বায়ী তরল বলে ফাটা ঠোঁট বা চামড়ায় লাগালে তা বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শোষণ করে এবং ঠোঁট থেকে জলীয়বাষ্পের বাষ্পায়নে বাধা দেয়। ফলে, ঠোঁট ও চামড়ার আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং সেগুলির খসখসে হয়ে যাওয়া বা ফেটে যাওয়া বন্ধ হয়।

দিল্লি অপেক্ষা পুরীতে একই উষ্ণতায় কষ্ট বেশি হয় কেন?

পুরী সমুদ্রের কাছাকাছি অবস্থিত বলে পুরীর বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি। তাই ঘাম বাষ্পীভূত হতে সময় লাগে। সুতরাং, পুরীর আবহাওয়া অস্বস্তিকর। কিন্তু দিল্লি সমুদ্র থেকে অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় দিল্লির বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কম। তাই সহজেই ঘাম বাষ্পীভূত হয় ও দিল্লির আবহাওয়া আরামদায়ক মনে হয়।

শীতকালে বায়ুর উষ্ণতা বর্ষাকালের চেয়ে কম থাকলেও শীতকালেই ভিজে জামাকাপড় দ্রুত শুকোয় কেন?

শীতকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ যথেষ্ট কম থাকায় আপেক্ষিক আর্দ্রতাও কম হয়। তাই ভিজে জামাকাপড় থেকে জল দ্রুত বাষ্পায়িত হয়। অন্যদিকে, বর্ষাকালে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের প্রাচুর্য বেশি থাকায় আপেক্ষিক আর্দ্রতাও যথেষ্ট বেশি হয়। ফলে, ভিজে জামাকাপড় থেকে জলের বাষ্পায়নের হার হ্রাস পায়। তাই, বর্ষাকালের তুলনায় শীতকালে ভিজে জামাকাপড় দ্রুত শুকায়।

ঘাস ও গাছের পাতার মধ্যে কোথায় শিশির পড়ার সম্ভাবনা বেশি এবং কেন?

গাছের পাতা ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উপরে অবস্থান করায় এর সংস্পর্শে থাকা বাতাস ঠান্ডা ও ভারী হয়ে নীচে নেমে আসে এবং সংলগ্ন অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উষ্ণ বাতাস ওই শূন্যস্থান পূরণ করে। ফলে, গাছের পাতার কাছে থাকা বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে সহজে নামতে পারে না।

কিন্তু ঘাস ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকায় ঠান্ডা ও ভারী বায়ু এর সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকে। ভূমিসংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতা সহজেই শিশিরাঙ্কের নীচে নামে এবং শিশির পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই, ঘাসের ওপর শিশির জমার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায় কেন?

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। ফলে, ভূত্বকসংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতাও বাড়ে। বর্ধিত উষ্ণতায় বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে, জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বায়ু পুনরায় অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে, উত্তপ্ত বায়ু থেকে লীনতাপ সংগ্রহ করে কুয়াশা হিসেবে ভাসমান জলবিন্দুগুলি আবার বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। তাই, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা মিলিয়ে যায়।

শহরাঞ্চলে প্রায়ই কুয়াশা হয় কেন?

শহরাঞ্চলের বাতাসে প্রচুর সূক্ষ্ম ধূলিকণা থাকে। এগুলির ওপর জলীয়বাষ্প সহজেই জমে কুয়াশা তৈরি করে। তাই গ্রামাঞ্চল অপেক্ষা শহরাঞ্চলে প্রায়ই কুয়াশা দেখা যায়।

সন্ধেবেলা শিশির না পড়ে ভোরের দিকে শিশির পড়ে কেন?

সারাদিন ধরে সূর্য থেকে তাপ পেয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত হয় এবং সূর্যাস্তের পর থেকে তা ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে শুরু করে।

সংগত কারণেই সন্ধ্যার সময় অর্থাৎ, রাত্রির প্রথম প্রহরে তাপ বিকিরণের দ্বারা ভূপৃষ্ঠ ও তার সংলগ্ন বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নামতে পারে না, ফলে শিশিরও পড়ে না। যথেষ্ট সময় অতিবাহিত হলে ভোরের দিকে উষ্ণতা শিশিরাঙ্কে পৌঁছোয় ও শিশির পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর

গ্যাস (Gas) ও বাষ্প (Vapour) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

গ্যাস (Gas) ও বাষ্প (Vapour) -এর মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়গ্যাস (Gas)বাষ্প (Vapour)
সংজ্ঞাকোনো বায়বীয় পদার্থের উষ্ণতা তার সংকট উষ্ণতার থেকে বেশি হলে সেই বায়বীয় পদার্থকে গ্যাস বলা হয়।কোনো বায়বীয় পদার্থের উষ্ণতা তার সংকট উষ্ণতার থেকে কম হলে সেই বায়বীয় পদার্থকে বাষ্প বলা হয়।
তরল অবস্থাগ্যাস অতি নিম্ন উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে। যেমন – অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন এই দুটি গ্যাস যথাক্রমে -183°C এবং -252°C উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে।বাষ্প সাধারণ উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে। যেমন – জলীয়বাষ্প, অ্যালকোহলের বাষ্প সাধারণ উষ্ণতায় তরল অবস্থায় থাকে।
চাপের প্রভাবগ্যাসকে সাধারণ উষ্ণতায় চাপ প্রয়োগ করলে তরলে পরিণত হয় না।বাষ্পকে সাধারণ উষ্ণতায় কেবল চাপ প্রয়োগ করে সহজে তরলে পরিণত করা যায়।

সম্পৃক্ত বাষ্প ও অসম্পৃক্ত বাষ্পের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

সম্পৃক্ত বাষ্প ও অসম্পৃক্ত বাষ্পের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –

বিষয়সম্পৃক্ত বাষ্প (Saturated vapour)অসম্পৃক্ত বাষ্প (Unsaturated vapour)
সংজ্ঞাকোনো আবদ্ধ স্থানে যে সর্বাধিক পরিমাণ বাষ্প উপস্থিত থাকতে পারে, তাকে সম্পৃক্ত বাষ্প বলে।কোনো আবদ্ধ স্থানে তার সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা অপেক্ষা কম পরিমাণে উপস্থিত বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে।
বাষ্পচাপকোনো আবদ্ধ স্থানে বাষ্প যে সর্বাধিক চাপ প্রয়োগ করতে পারে সম্পৃক্ত বাষ্পচাপের মান তার সমান হয়।অসম্পৃক্ত বাষ্পের দেওয়া চাপের মান সর্বদা সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ অপেক্ষা কম হয়।
তরলের সংস্পর্শে সাম্যসম্পৃক্ত বাষ্প তরলের সংস্পর্শে সাম্যাবস্থায় থাকতে পারে।অসম্পৃক্ত বাষ্প তরলের সংস্পর্শে সাম্যে থাকতে পারে না।
উষ্ণতার প্রভাবউষ্ণতা কমিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পৃক্ত বাষ্পের একাংশ ঘনীভূত হয়ে তরলে পরিণত হয়। উষ্ণতা বাড়ালে সম্পৃক্ত বাষ্প অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে।উষ্ণতা কমিয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অসম্পৃক্ত বাষ্পকে সম্পৃক্ত অবস্থায় আনা যায়। উষ্ণতা বাড়ালে তা আরও অসম্পৃক্ত হয়।
গ্যাস সূত্রগুলির মান্যতাসম্পৃক্ত বাষ্প গ্যাস সূত্রগুলি মান্য করে না।অসম্পৃক্ত বাষ্প গ্যাস সূত্রগুলি মেনে চলে।

গাণিতিক প্রশ্ন

প্রয়োজনীয় সূত্র

নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর = \(m\), ওই উষ্ণতায় ওই পরিমাণ সম্পৃক্ত বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভর \(M\) হলে, আপেক্ষিক আর্দ্রতা = \(\frac mM\times100\%\)।

\(100\) ঘনমিটার কোনো বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ \(60\) গ্রাম। ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত করার জন্য আরো \(20\) গ্রাম জলীয়বাষ্প প্রয়োজন। ওই বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণ নির্ণয় করো।

নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে (এক্ষেত্রে 100 ঘনমিটার) উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর \(m=60\;g\)

ওই আয়তনের সম্পৃক্ত বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের ভর \(\left(M\right)=\left(60+20\right)\;g=80\;g\)

∴ আপেক্ষিক আর্দ্রতা = \(\frac mM\times100\%\)

= \(\frac{60}{80}\times100\%\)

= \(75\%\)

∴ ওই বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতার শতকরা পরিমাণ \(75\) ভাগ।


Class 9 Physical Science – Notes for All Chapters

Chapter NameTropics
পরিমাপ পরিমাপ ও একক
বিভিন্ন মাপের একক
মাত্রা
পরিমাপ
বল ও গতিস্থিতি ও গতি
গতির সমীকরণ
নিউটনের প্রথম গতিসূত্র
নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র
নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র
বিভিন্ন ধরণের বল
রৈখিক ভরবেগ
রৈখিক ভরবেগ সংরক্ষণ
পদার্থ : গঠন ও ধর্মতরল ও বায়ুর চাপ
আর্কিমিডিসের নীতি
পৃষ্ঠটান
সান্দ্রতা
বার্নোলির নীতি
স্থিতিস্থাপকতা
পদার্থ : পরমাণুর গঠন ও পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহপরমাণুর গঠন
মোলের ধারণা
দ্রবণ
অ্যাসিড, ক্ষার, লবণ
মিশ্রণের উপাদানের পৃথকীকরণ
জল
শক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতাশক্তির ক্রিয়া , কার্য, ক্ষমতা
তাপক্যালোরিমিতি
কার্য ও তাপের তুল্যতা
লীনতাপ
সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বাষ্প
জলের ব্যতিক্রান্ত প্রসারণ
শব্দশব্দের উৎস : কম্পন
শব্দের বিস্তার : তরঙ্গ
শব্দের কয়েকটি ধর্ম
শব্দের বৈশিষ্ট্য
মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল
শব্দদূষণ

আজকের আর্টিকেলে আমরা নবম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ট অধ্যায় “তাপ” এর “সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত” থেকে পরীক্ষায় আসা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা, এমনকি চাকরি বা যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যও উপযোগী। কারণ, এই অধ্যায়ের প্রশ্ন প্রায়ই বিভিন্ন পরীক্ষায় কমন আসে।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সাহায্যের প্রয়োজন হয়, নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Please Share This Article

Related Job Posts

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - শব্দ - শব্দদূষণ - প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – শব্দ – শব্দদূষণ – প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - শব্দ - মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল - প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – শব্দ – মানুষের কান ও শব্দ শোনার কৌশল – প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী - ভৌতবিজ্ঞান - শব্দ - শব্দের বৈশিষ্ট্য - প্রশ্ন ও উত্তর

নবম শ্রেণী – ভৌতবিজ্ঞান – শব্দ – শব্দের বৈশিষ্ট্য – প্রশ্ন ও উত্তর

About The Author

Gopi

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানীয় বায়ুর পরিচয় দাও।

আকস্মিক বায়ু বা অনিয়মিত বায়ুপ্রবাহ কাকে বলে? আকস্মিক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

সাময়িক বায়ু কাকে বলে? সাময়িক বায়ুর শ্রেণিবিভাগ

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় ও মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় সৃষ্টির কারণ লেখো।

পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলির সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক আলোচনা করো।