জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা বা নিউমুর দ্বীপকে প্রভাবিত করছে?

Sourav Das

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো, জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা এবং নিউমুর দ্বীপকে প্রভাবিত করছে। এই প্রশ্নটি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায় “বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ” এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষত, বহির্জাত প্রক্রিয়া ও নদীর কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ বিভাগের অন্তর্গত এই প্রশ্নের উত্তর প্রস্তুত করে গেলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর অর্জন করা সম্ভব। আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানবো, জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে এই দ্বীপগুলির জীববৈচিত্র্য ও মানুষের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে।

Table of Contents

জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা বা নিউমুর দ্বীপকে প্রভাবিত করছে?

জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা বা নিউমুর দ্বীপকে প্রভাবিত করছে?

সুন্দরবন অঞ্চলটি হল গঙ্গা বদ্বীপের সক্রিয় অংশ। অসংখ্য দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনভূমি। যেহেতু এই অঞ্চলের দক্ষিণ সীমায় আছে বঙ্গোপসাগর, তাই বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়ন তথা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার দ্বীপগুলিতে তার অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।

১. জলতল বৃদ্ধি ও দ্বীপসমূহের অবলুপ্তি

জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে সরাসরি প্রভাবগুলির একটি হল সমুদ্রজলের উচ্চতা বৃদ্ধি। সুন্দরবন অঞ্চলের সমুদ্রজলের উচ্চতা বিগত কয়েক বছর ধরে গড়ে বার্ষিক প্রায় ৫ মিলিমিটার হারে বেড়ে চলেছে। এই জলস্তরের বৃদ্ধি ভূমিক্ষয় বাড়িয়ে দিয়েছে, যার ফলে লোহাচড়া, ঘোড়ামারা ও নিউমুর দ্বীপের মত দ্বীপগুলি ধীরে ধীরে জলের তলায় চলে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রভাবগুলি শুধু ভূগর্ভস্থ স্তরের ক্ষয় নয়, এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং জীববৈচিত্র্যের উপরও প্রভাব ফেলছে।

২. ক্লাইমেট রিফিউজি মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধি

দ্বীপগুলি জলমগ্ন হওয়ার কারণে এখানকার বহু অধিবাসী উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। যারা সুন্দরবনের অন্যান্য অংশে বা মূল ভূখণ্ডে সরে গেছে, তারা সেখানে নতুন করে জীবনযাত্রার সংগ্রাম শুরু করেছে। এই ধরনের ক্লাইমেট রিফিউজি মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে, যা সমাজ ও অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার সমাধান না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় সামাজিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।

৩. ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বৃদ্ধি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রজলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবন অঞ্চলে ঝড়ঝঞা ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা এবং তীব্রতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলি ম্যানগ্রোভ বনভূমি ও জনবসতি উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিপর্যয়ের মাত্রাও বাড়ছে, যার ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ ও অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

৪. ম্যানগ্রোভ বনভূমির ক্ষতি

ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন অঞ্চলের একটি মহামূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি শুধু জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নয়, বন্যা ও ঝড়ঝঞার হাত থেকে রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দ্বীপসমূহের অবলুপ্তি, ভূমিক্ষয় এবং ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ম্যানগ্রোভ বনভূমির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। এই বনভূমি হারালে সুন্দরবন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে এবং এর সাথে সাথে এখানকার জীববৈচিত্র্যও বিপন্ন হবে।

৫. সমুদ্রজলের লবণতা বৃদ্ধি

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে সমুদ্রজলের উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লবণতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই লবণাক্ত জল সুন্দরবন অঞ্চলের মিঠাজল প্রবাহ ও মাটির উর্বরতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যা এখানকার কৃষিকাজ ও মাছচাষের জন্য বিপজ্জনক। লবণাক্ত জল প্রবেশ করে কৃষিজমি চাষের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে এবং জলঘটিত রোগব্যাধির প্রকোপও বাড়ছে, যা এখানকার জীবনযাত্রার মানকে নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

৬. বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি

জলতলের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার জন্য জোয়ারের সময় নদীবাঁধ ভেঙে বন্যার প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বন্যার ফলে লবণাক্ত জল প্রবেশ করে বহু উর্বর কৃষিজমি চাষের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে এবং জলঘটিত রোগব্যাধির প্রকোপও বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে বন্যার কারণে জনজীবন অস্থির হয়ে পড়ে এবং সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

লোহাচড়া, ঘোড়ামারা ও নিউমুর দ্বীপের বর্তমান পরিস্থিতি

১. লোহাচড়া দ্বীপ

লোহাচড়া দ্বীপ, যা হুগলি নদীর মোহনায় অবস্থিত, ১৯৮০-এর দশকে সম্পূর্ণ জলের তলায় চলে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে যে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপটি আবার কিছুটা জেগে উঠেছে। কিন্তু এটি এখনও বাসযোগ্য নয় এবং এখানে আগের মত জনবসতি ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।

২. ঘোড়ামারা দ্বীপ

হুগলি নদীর মোহনায় সাগরদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত ঘোড়ামারা দ্বীপটি বর্তমানে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এই দ্বীপটির খাসিমারা, লক্ষ্মীনারায়ণপুর প্রভৃতি জনবহুল গ্রাম ইতিমধ্যেই জলমগ্ন হয়েছে। হাটখোলা, মন্দিরতলা, চুনপুরী প্রভৃতি গ্রামগুলিও আগামী দিনে জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই কারণে এখানকার অধিবাসীদের জীবিকা নির্বাহ ও বাসস্থান সংকটে পড়েছে।

৩. নিউমুর দ্বীপ

১৯৭০-এর দশকের প্রথম ভাগে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহনা থেকে ২ কিমি দূরে নিউমুর দ্বীপটি সমুদ্র থেকে জেগে উঠলেও ২০১০ সালের পর থেকে এই দ্বীপটির আর কোনো চিহ্ন পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এই দ্বীপটিও জলমগ্ন হয়ে গেছে। নিউমুর দ্বীপের এই বিপর্যয় থেকে আমরা বুঝতে পারি যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কতটা বিপজ্জনক হতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের দ্বীপগুলি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের দ্বীপগুলি ভূমিক্ষয়, জলস্তরের বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত জলের প্রবেশের ফলে ধীরে ধীরে জলমগ্ন হয়ে যাচ্ছে। এই কারণে বহু দ্বীপ ও গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন হয়েছে।

ক্লাইমেট রিফিউজি কী?

ক্লাইমেট রিফিউজি হলেন সেই মানুষ যারা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাদের বাসস্থান হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলে বহু মানুষ এই কারণে উদ্বাস্তু হয়ে মূল ভূখণ্ডে সরে গেছে।

ম্যানগ্রোভ বনভূমির ক্ষতির প্রভাব কী?

ম্যানগ্রোভ বনভূমির ক্ষতির ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে এবং বন্যা ও ঝড়ঝঞার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

সুন্দরবন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রজলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবন অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বেড়ে চলেছে।

সুন্দরবন অঞ্চলে জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব কী?

জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ভূমিক্ষয়, লবণাক্ত জলের প্রবেশ, বন্যার প্রকোপ এবং দ্বীপসমূহের অবলুপ্তির ঘটনা বেড়েছে।

লোহাচড়া দ্বীপ এখন কী অবস্থায় আছে?

লোহাচড়া দ্বীপ বর্তমানে সম্পূর্ণ জলের তলায় চলে গেছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে যে পলি সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দ্বীপটি আবার কিছুটা জেগে উঠেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলের উপর যে বিপর্যয় নেমে আসছে, তা সামগ্রিকভাবে এখানকার পরিবেশ, জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। লোহাচড়া, ঘোড়ামারা ও নিউমুর দ্বীপের বর্তমান পরিস্থিতি থেকে আমরা বুঝতে পারি যে এই সমস্যার সমাধান না করলে আগামী দিনে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য বিশ্বব্যাপী সচেতনতা ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer