এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলতে কী বোঝো? দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলতে কী বোঝো?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু – দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চ চাপ বলয় থেকে আগত দক্ষিণ-পূর্ব অয়ন বায়ু নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে এশিয়ার নিম্ন চাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। নিরক্ষ রেখা অতিক্রম করে ফেরেলের সূত্র অনুসারে বেঁকে ঐ বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুতে পরিনত হয়। এই বায়ুকে উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি বায়ু বা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলা হয়।
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু – উত্তর গোলার্ধে যখন শীতকাল তখন দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্য এশিয়ার স্থলভাগ অত্যন্ত শীতল হয়ে পড়ে কিন্তু নিকটবর্তী সমুদ্র উষ্ণ থাকে। তখন স্থলভাগের উপরের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল বায়ু মহাসাগরের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এ বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে আসে বলে একে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলা হয়।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য লেখো।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য –
বিষয় | দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু | উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু |
সংজ্ঞা | ভারতীয় ভূখণ্ডে গ্রীষ্মকালে যে বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় তাকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে। | শীতকালে ভারতে যে শীতল ও শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলে। |
প্রবাহের দিক | এই বায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। | এই বায়ু উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়। |
বায়ুর প্রকৃতি | জলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। | স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু শুষ্ক ও শীতল প্রকৃতির। |
শ্রেণিবিভাগ | দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখা। – [1] আরবসাগরীয় শাখা [2] বঙ্গোপসাগরীয় শাখা। | উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর কোনো শাখা নেই। |
প্রবাহের সময় | মূলত মে-জুন-জুলাই মাসে প্রবাহিত হয়। | ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে প্রবাহিত হয়। |
বৃষ্টিপাত | এই বায়ুর প্রভাবে পূর্ব ভারতের গারো, খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ে এবং আরবসাগরের উপকূল অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয়। | বঙ্গেপসাগরের ওপর দিয়ে গিয়ে শুধুমাত্র তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। |
ফসল উৎপাদন | খারিফ শস্যের চাষ এই বায়ুর ওপর নির্ভর করে। | রবিশস্যের চাষ এই বায়ুর ওপর নির্ভর করে। |
আবহাওয়ার প্রভাব | এই বায়ু দ্বারা উষ্ণ ও আর্দ্র বৃষ্টিযুক্ত মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করে। | এই বায়ুর ফলে শুষ্ক, শীতল মনোরম আরামদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করে। |
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কী?
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু হল গ্রীষ্মকালে ভারতে প্রবাহিত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু। এটি দক্ষিণ গোলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে এবং ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু কী?
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু হল শীতকালে প্রবাহিত শুষ্ক ও শীতল বায়ু। এটি মধ্য এশিয়ার উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে। এই বায়ু সাধারণত শুষ্ক প্রকৃতির, তবে বঙ্গোপসাগর থেকে কিছু আর্দ্রতা গ্রহণ করলে তামিলনাড়ুতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দুটি শাখা কী কী?
1. আরব সাগরীয় শাখা – পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
2. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা – পূর্ব ভারতের গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে ভারী বৃষ্টিপাত ঘটায়।
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু শুষ্ক হলেও তামিলনাড়ুতে বৃষ্টিপাত ঘটায় কেন?
উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করার সময় কিছু আর্দ্রতা শোষণ করে। পরে এটি তামিলনাড়ুর পূর্বঘাট পর্বতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
মৌসুমি বায়ুর পরিবর্তন কীভাবে ভারতের কৃষিকে প্রভাবিত করে?
1. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু – খরিফ শস্য (ধান, পাট, আখ) চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করে।
2. উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু – রবি শস্য (গম, সরষে, ডাল) চাষের জন্য উপযুক্ত শীতল ও শুষ্ক আবহাওয়া তৈরি করে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে কোন অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়?
মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জি (মেঘালয়) অঞ্চলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়।
মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাবর্তনের সময় কী?
1. আগমন – জুন মাসের শুরুতে কেরালা উপকূলে।
2. প্রত্যাবর্তন – সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বলতে কী বোঝো? দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জলবায়ু” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন