একটি নির্জন দুপুর – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি নির্জন দুপুর’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

একটি নির্জন দুপুর – প্রবন্ধ রচনা

একটি নির্জন দুপুর - প্রবন্ধ রচনা

“যখন একটু বড়ো হইয়াছি এবং চাকরদের শাসন কিঞ্চিৎ
শিথিল হইয়াছে তখন এক-একদিন মধ্যাহ্নে সেই ছাদে
আসিয়া উপস্থিত হইতাম।”

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

দিন-রাত্রির বিবর্তনের সুরে বাঁধা আমাদের জীবন। বিভিন্ন সময় তৈরি করে দেয় এক নিজস্ব মেজাজ যা প্রভাবিত করে মানুষের জীবনের ছন্দস্পন্দকে। তারই মধ্যে আবার তৈরি হয় কিছু বিশেষ মুহূর্ত, যা সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকে। খর-মধ্যাহ্নের এমনই এক স্মৃতি ঘিরে আছে আমাকেও।

সকাল গড়িয়ে দুপুর –

তারিখটা ছিল 30 মে, 2017 শুক্রবার। সবে কয়েকদিন হয়েছে গরমের ছুটি শুরু হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কাজের দিন, তাই বাবা-মা দুজনেই অফিসে। বাড়িতে আমি একা। যে শিবানী মাসি আমাকে দেখাশোনা করে সে-ও গেছে তার দেশের বাড়িতে। আমি একা। ঠাকুরদার তৈরি আমাদের বেশ পুরোনো দোতলা বাড়িতে আমার সঙ্গে আর কেউ নেই-এই ভাবনা আমার মনে একইসাথে বেশ ভয় এবং রোমাঞ্চ জাগিয়ে তুলল। মা-কে ফোন করলাম, একবার ভাবলাম পাশের বাড়িতে পাপানের সঙ্গে খেলি কিন্তু ঘরে তালা দিতে হবে বলে সাহস করলাম না। টিভিতে ইউরো কাপের একটা খেলা দেখাচ্ছিল। কিছুক্ষণ দেখলাম। মন বসল না। মা বলে গেছেন পড়াশোনা করতে। সে তোমা এলেও করতে হবে। অতএব বই বন্ধ।

নিস্তদ্ধ দুপুরে একা আমি –

গিয়ে বসলাম দোতলার জানলার কাছে। উঠোনের কৃষ্ণচুড়াটায় ফুল এসেছে। লাল হয়ে আছে গাছটা। তপ্ত গ্রীষ্ম যেন গাছে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সামনের রাস্তা দিয়ে একজন মানুষ চলেছেন ঝুড়ি মাথায়। সব্জি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। এবার বাড়ি ফিরছেন। কোথায় বাড়ি আমি জানি না, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো উনি বাড়ি ফিরে যাবেন। ওঁরও ছেলের হয়তো গরমের ছুটি চলছে। সেই ছেলেটি বাবা-মা-র সঙ্গেই দুপুরে খেতে বসবে। কিন্তু আমি একা। আমার তখনই মনে হল উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই কৃষ্ণচূড়া, বাঁদিকে পাঁচিলের কোনায় ওই নারকেল গাছ, ওই যে টেলিফোনের তারে বসে থাকা বিষণ্ণ কাক-ওরাও তো একা। চারপাশের প্রকৃতি আমাকে আরও ভাবুক করে তুলল। রাস্তাঘাটে লোকজন খুবই কম চলাচল করছে। এরই মধ্যে একজন বৃদ্ধাকে দেখলাম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাইছেন, খুব কষ্ট হল আমার। মুহূর্তে আমার মনে হল মা টিফিনের জন্য কিছু কেক, মিষ্টি রেখে গেছেন। আমি নীচে নেমে গেলাম। দরজা খোলা বারণ। তাই জানলা দিয়ে বৃদ্ধাকে ডাকলাম। ওকে কেক, মিষ্টিগুলো দিলাম। উনি হাত তুলে প্রণাম করলেন। এতক্ষণের বিষণ্ণতার মধ্যে হঠাৎই যেন একটু আনন্দ খুঁজে পেলাম। এই বৃদ্ধা-যাঁকে আমি হয়তো আর কোনোদিনও দেখব না, তিনি এই নির্জন দুপুরে জড়িয়ে গেলেন আমার মনের সঙ্গে। এই তো আমার দেশ। কত মানুষের না খেতে পাওয়া, বিষণ্ণতার কাহিনি লেখা আছে এর বুকে। এই বিষন্ন দুপুরের মতোই তাদের জীবন।

শেষ বিকেলে –

কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার। অজস্র ভাবনার পথ ধরে চলতে চলতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মা ফিরে এসেছেন। সূর্যও এখন অনেক ম্লান। নির্জন রাস্তায় আবার দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষজন। এভাবেই দুপুর গিয়ে সন্ধ্যা নামে। অপেক্ষা থাকে নতুন সকালের। তারই মধ্যে সেদিনের নির্জন দুপুরের মতো কিছু মুহূর্ত নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় নিজেকেই। যেখানে দীর্ঘতর হয় জীবনের আলো-ছায়া-যার কিছুটা জানা, কিছু অজানা।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘একটি নির্জন দুপুর’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘একটি নির্জন দুপুর’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্রতিসরণ কোণ কাকে বলে? কাচফলকে প্রতিসরণের ফলে আলোকরশ্মির চ্যুতি হয় না কেন?

একটি প্রিজমের i-δ লেখচিত্র আঁকো, যেখানে i হল আপতন কোণ ও δ হল চ্যুতিকোণ।

উত্তল লেন্স এবং অবতল লেন্স কয়প্রকার ও কী কী?

আলোকের বিক্ষেপণ কাকে বলে? র‍্যালের বিক্ষেপণ সূত্রটি লেখো।

রেখাচিত্রের সাহায্যে লেন্স দ্বারা প্রতিবিম্ব গঠনের নিয়মাবলি গুলি লেখো।