একটি নির্জন দুপুর – প্রবন্ধ রচনা

Gopi

আজকের আলোচনার বিষয় হল “নির্জন দুপুর”। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় একটি নিয়মিত প্রশ্ন। তাই এই বিষয়ে রচনা রচনার দক্ষতা অর্জন বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এই প্রবন্ধে আমরা একটি নির্জন দুপুরের বর্ণনা দেব। দুপুরের রোদের তীব্রতা, প্রকৃতির নিস্তব্ধতা, পাখিদের কলতান, গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা – এই সবকিছুই লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে হবে। ভাষা সাবলীল ও সহজবোধ্য হতে হবে। বর্ণনায় আবেগ ও কল্পনাশক্তির ব্যবহার করলে রচনা আরও আকর্ষণীয় হবে।

এই রচনাটি মুখস্ত করে রাখলে ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় “নির্জন দুপুর” বিষয়ের উপর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

একটি নির্জন দুপুর – প্রবন্ধ রচনা

একটি নির্জন দুপুর - প্রবন্ধ রচনা

“যখন একটু বড়ো হইয়াছি এবং চাকরদের শাসন কিঞ্চিৎ
শিথিল হইয়াছে তখন এক-একদিন মধ্যাহ্নে সেই ছাদে
আসিয়া উপস্থিত হইতাম।”

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা –

দিন-রাত্রির বিবর্তনের সুরে বাঁধা আমাদের জীবন। বিভিন্ন সময় তৈরি করে দেয় এক নিজস্ব মেজাজ যা প্রভাবিত করে মানুষের জীবনের ছন্দস্পন্দকে। তারই মধ্যে আবার তৈরি হয় কিছু বিশেষ মুহূর্ত, যা সারাজীবনের স্মৃতি হয়ে থাকে। খর-মধ্যাহ্নের এমনই এক স্মৃতি ঘিরে আছে আমাকেও।

সকাল গড়িয়ে দুপুর –

তারিখটা ছিল ৩০ মে, ২০১৭ শুক্রবার। সবে কয়েকদিন হয়েছে গরমের ছুটি শুরু হয়েছে। সপ্তাহের শেষ কাজের দিন, তাই বাবা-মা দুজনেই অফিসে। বাড়িতে আমি একা। যে শিবানী মাসি আমাকে দেখাশোনা করে সে-ও গেছে তার দেশের বাড়িতে। আমি একা। ঠাকুরদার তৈরি আমাদের বেশ পুরোনো দোতলা বাড়িতে আমার সঙ্গে আর কেউ নেই-এই ভাবনা আমার মনে একইসাথে বেশ ভয় এবং রোমাঞ্চ জাগিয়ে তুলল। মা-কে ফোন করলাম, একবার ভাবলাম পাশের বাড়িতে পাপানের সঙ্গে খেলি কিন্তু ঘরে তালা দিতে হবে বলে সাহস করলাম না। টিভিতে ইউরো কাপের একটা খেলা দেখাচ্ছিল। কিছুক্ষণ দেখলাম। মন বসল না। মা বলে গেছেন পড়াশোনা করতে। সে তোমা এলেও করতে হবে। অতএব বই বন্ধ।

নিস্তদ্ধ দুপুরে একা আমি –

গিয়ে বসলাম দোতলার জানলার কাছে। উঠোনের কৃষ্ণচুড়াটায় ফুল এসেছে। লাল হয়ে আছে গাছটা। তপ্ত গ্রীষ্ম যেন গাছে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। সামনের রাস্তা দিয়ে একজন মানুষ চলেছেন ঝুড়ি মাথায়। সব্জি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন। এবার বাড়ি ফিরছেন। কোথায় বাড়ি আমি জানি না, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে হয়তো উনি বাড়ি ফিরে যাবেন। ওঁরও ছেলের হয়তো গরমের ছুটি চলছে। সেই ছেলেটি বাবা-মা-র সঙ্গেই দুপুরে খেতে বসবে। কিন্তু আমি একা। আমার তখনই মনে হল উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই কৃষ্ণচূড়া, বাঁদিকে পাঁচিলের কোনায় ওই নারকেল গাছ, ওই যে টেলিফোনের তারে বসে থাকা বিষণ্ণ কাক-ওরাও তো একা। চারপাশের প্রকৃতি আমাকে আরও ভাবুক করে তুলল। রাস্তাঘাটে লোকজন খুবই কম চলাচল করছে। এরই মধ্যে একজন বৃদ্ধাকে দেখলাম বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সাহায্য চাইছেন, খুব কষ্ট হল আমার। মুহূর্তে আমার মনে হল মা টিফিনের জন্য কিছু কেক, মিষ্টি রেখে গেছেন। আমি নীচে নেমে গেলাম। দরজা খোলা বারণ। তাই জানলা দিয়ে বৃদ্ধাকে ডাকলাম। ওকে কেক, মিষ্টিগুলো দিলাম। উনি হাত তুলে প্রণাম করলেন। এতক্ষণের বিষণ্ণতার মধ্যে হঠাৎই যেন একটু আনন্দ খুঁজে পেলাম। এই বৃদ্ধা-যাঁকে আমি হয়তো আর কোনোদিনও দেখব না, তিনি এই নির্জন দুপুরে জড়িয়ে গেলেন আমার মনের সঙ্গে। এই তো আমার দেশ। কত মানুষের না খেতে পাওয়া, বিষণ্ণতার কাহিনি লেখা আছে এর বুকে। এই বিষন্ন দুপুরের মতোই তাদের জীবন।

শেষ বিকেলে –

কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙে আমার। অজস্র ভাবনার পথ ধরে চলতে চলতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। মা ফিরে এসেছেন। সূর্যও এখন অনেক ম্লান। নির্জন রাস্তায় আবার দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষজন। এভাবেই দুপুর গিয়ে সন্ধ্যা নামে। অপেক্ষা থাকে নতুন সকালের। তারই মধ্যে সেদিনের নির্জন দুপুরের মতো কিছু মুহূর্ত নিজের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় নিজেকেই। যেখানে দীর্ঘতর হয় জীবনের আলো-ছায়া-যার কিছুটা জানা, কিছু অজানা।

এই আলোচনায় আমরা দেখেছি যে, নির্জন দুপুর কেবল একটি সময়কাল নয়, বরং এক অদৃশ্য রহস্যের আধার। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা, গ্রাম্য পরিবেশের মনোরম দৃশ্য, এবং একাকীত্বের অনুভূতি মিলে এক অপার্থিব পরিবেশ তৈরি করে যা আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়। এই দুপুরের নির্জনতা আমাদের অন্তর্মুখী করে তোলে, নিজের সাথে একা থাকার সুযোগ করে দেয়, এবং আত্ম-অনুসন্ধানের পথ দেখায়।

শুধু প্রকৃতিই নয়, মানুষের জীবনেও নির্জন দুপুরের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যস্ততাপূর্ণ জীবনের মাঝে এই দুপুরের বিরতি আমাদেরকে थोड़ा সময় রিল্যাক্স করার, নিজেদেরকে নতুন করে চিন্তা করার, এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করার সুযোগ করে দেয়।

তাই, নির্জন দুপুর কেবল একটি সময়কাল নয়, বরং জীবনের এক অপরিহার্য অংশ। এই দুপুরের রহস্য আমাদেরকে জীবনের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং আমাদেরকে আরও ভালো মানুষ হতে অনুপ্রাণিত করে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

এলআইসি

এলআইসি (LIC) কি? এলআইসি এর ইতিহাস

Padmashri Award 2010 Winner List

পদ্মশ্রী পুরস্কার ২০১০ – Padmashri Award 2010 Winner List

সাম্প্রতিক জলসংকট - প্রবন্ধ রচনা

সাম্প্রতিক জলসংকট – প্রবন্ধ রচনা

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer