আজকে আমরা এই আর্টিকেল এ তোমার একটি নদীর আত্মকথা রচনা নিয়ে আলোচনা করবো, রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় বা স্কুলের পরীক্ষায় দেখা যাই, তোমার একটি নদীর আত্মকথা রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা এই রচনা প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যাই, এই রচনাটি তোমরা একবার মুখস্ত করলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবে।
একটি নদীর আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা – “জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোথা থেকে এসেছো নদী?’ নদী সেই পুরাতন স্বরে উত্তর করল, মহাদেবের জটা থেকে।”
– আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। তাহলে কি সত্যিই নদীর বাকশক্তি আছে? এই প্রশ্ন সবার মনে আসতে পারে। নদী হলো চিরকলবাষিনী, কুলু কুলু রবে, তারা সৃষ্টির গান শোনায়। গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপত্তি হয়ে হিমালয়ের বুক চিরে নেমে এসেছে যে উদ্দাম জলধারা, পাহাড়-বন ডিঙিয়ে শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে আঙুলীন হয়ে নীল জলরাশির বুকে, সেই জলধারা হলো আমি—আমি গঙ্গা নদী।
জন্মবৃত্তান্ত: পুরাণ অনুসারে, ঋষি কপিলার তীব্র ধ্যানে রাজা সাগরের ষাট হাজার পুত্র বিঘ্ন ঘটায়। বিরক্ত হয়ে ঋষি কপিলা রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকান এবং তাদের ছাই করে ফেলে পার্থিব জগতে পাঠিয়ে দেন। এই পুত্রদের এক বংশধর ছিলেন রাজা ভগীরথ। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের পুনরুদ্ধার করতে কঠোর তপস্যা করেন এবং অবশেষে স্বর্গ থেকে আমার (গঙ্গার) বংশধরের পুরস্কার পান। যেহেতু আমার উত্তাল শক্তি পৃথিবীকেও ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে, তাই ভগীরথ শিবকে কৈলাস পর্বতে তাঁর জটার মধ্যে আমাকে গ্রহণ করতে রাজী করান। আমি অবতরণ করে হিমালয়ে আসি এবং ভগীরথের নেতৃত্বে হরিদ্বারের সমতল ভূমি পেরিয়ে প্রথমে প্রয়াগে যমুনার সঙ্গম, তারপর বারাণসীতে এবং অবশেষে সমুদ্রের সঙ্গে মিলিত হই। আমি সাগরের পুত্রদের রক্ষা করি এবং ভগীরথের সম্মানে আমার উৎস স্রোতের নাম “ভাগীরথী” হয়।
উৎপত্তি ও গতিপথ: ভারতের দীর্ঘতম ও শ্রেষ্ঠ নদী হলাম আমি। আমার মোট দৈর্ঘ্য 2510 কিলোমিটার। আমি উত্তরাখন্ডের উত্তর কাশী (কাশী) জেলার গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপত্তি লাভ করি। গঙ্গোত্রী থেকে হরিদ্বার পর্যন্ত 320 কিলোমিটার আমার পার্বত্য বা উচ্চগতির পথ। এরপর, হরিদ্বার থেকে আমি সমভূমি অতিক্রম করে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের মধ্যে মধ্যগতির পথে প্রবাহিত হই। সবশেষে, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কাছে আমি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভাগীরথী ও পদ্মা নামে প্রবাহিত হয়ে সুন্দরবন অঞ্চলে পৌঁছে বদ্বীপের দিকে আমার নিম্নগতি অব্যাহত রাখি, যেখানে আমি বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশে যাই।
আমার আশীর্বাদ: আমি এমন একজন, যার কোনো বিশ্রাম নেই, যার চলা কোনো মৃত্যুর সম্মুখীন নয়। আমি অবিনশ্বর, অবিরাম বয়ে চলা। কখনও আমার প্রবাহ দ্রুত, কখনও ধীর, কখনও সংকীর্ণ, কখনও প্রশস্ত। চলার পথে বড় শিলা থেকে ছোট নুড়ি, কাঁকড়া বাঁধা সৃষ্টি করলেও কখনো থেমে থাকিনি। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে আমি আমার পথ তৈরি করে নিয়ে বয়ে চলি।
মানুষ অনেক উপায়ে আমার সাথে সংযুক্ত, যার মধ্যে প্রথম এবং প্রধান হচ্ছে পানীয় জল, যা আমি দিয়েছি। দান ছাড়া মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের অসংখ্য কাজ সম্পন্ন করে জল দ্বারা। আমি পরিবেশে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখি, এবং আমার চলার পথে বিশাল অববাহিকায় পলি সঞ্চয়ের ফলে পৃথিবী অত্যন্ত উর্বর হয়ে ওঠে, যা শস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তাই আমার উভয় তীরে বহু জনপদ গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শহরগুলি হল হরিদ্বার, কানপুর, এলাহাবাদ, বারাণসী, পাটনা, ভাগলপুর ইত্যাদি। মূলত আমাকে কেন্দ্র করেই শিল্প, কৃষি, ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। আমার তীরে শত শত শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে, যেখান থেকে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছে। অনেক মানুষ আমার জলে বসবাসকারী মাছ ধরে তা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছে। তাই আমি নিজেকে বারবার আশীর্বাদধন্য মনে করি।
বিজ্ঞানের কাছে বশ্যতা: বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমার প্রবাহিত জলকে আটকে রাখা হচ্ছে, আবার প্রয়োজনে তা ছাড়া হচ্ছে ধাঁধার মাধ্যমে। ফারাক্কা বাঁধ এমন একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এভাবেই উৎপন্ন হচ্ছে জলবিদ্যুৎ, এবং বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে নির্মিত হচ্ছে জলযান, যা বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানির কাজ অনেক সহজ করেছে। এই প্রযুক্তি মানুষের যাতায়াতের সুবিধাও বৃদ্ধি করেছে।
আমার দুঃখ: পুরাণে বলা হয়েছে, স্রোতধারায় তোমরা পুণ্যস্নান করো, কারণ আমি পাপবিনাশিনী, কলুষতামাশিনী। অথচ তোমরাই এই পুণ্যক্ষেত্রকে কলুষিত করে ফেলো। গবাদী পশুর মৃতদেহ ভাসিয়ে দিচ্ছ, ঘরের নোংরা আবর্জনা ফেলছো, কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ আমার স্রোতধারায় এসে মিশছে, শহর-নগর থেকে পয়ঃপ্রণালী বাহিত দূষিত জল আমার পবিত্র জলে এসে মিশছে। জলযানগুলি থেকে নিঃসৃত পেট্রোল ও ডিজেল আমার জলে মিশে জলকে দূষিত করছে, যার ফলে জলে থাকা উদ্ভিদ ও প্রাণীরা বিষক্রিয়াজনিত কারণে মারা যাচ্ছে। এর ফলে জলজ প্রাণীর বিনাশ ঘটছে এবং জলদূষণের ভয়াবহ কুপ্রভাব উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষ সকলের ওপর পড়ছে, কিন্তু তোমরা এ ব্যাপারে এখনও সচেতন নয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জলদূষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন হুঁশিয়ারি এবং তার প্রতিকার পরিকল্পনা করে চলেছেন, কিন্তু সম্পূর্ণরূপে দূষণমুক্ত গঙ্গা করা সম্ভব হয়নি। লেখক কবীর হুমায়ূন তাঁর রচিত “নদীর আত্মকথা” কবিতায় লিখেছেন:
“জঞ্জালেরই বিশাল ধারা আমার বুকে
দাও গড়িয়ে তোমার সকল বর্জ্যটুকু
ভাবছো না তো আমার জীবন চলছে সদা তোমার জীবন তরে।”
উপসংহার:
আমি হলাম ভারতবাসীর সেই পবিত্র নদী, যাকে ‘দেবী’ বলে শ্রদ্ধা করা হয়। আমার প্রবাহিত জলধারা সকলের কাছে পবিত্র। আমার মধ্যে এমন ক্ষমতা রয়েছে, যা অপবিত্রকে পবিত্র করে, পতিতকে উদ্ধার করে। আমার জলে স্নান করা পুণ্য বলে বিবেচিত হয়। বহু মনীষী ও কবি আমাকে কন্দনা করে কবিতা এবং স্তোত্র রচনা করেছেন। হরিদ্বার, বেনারস, হৃষিকেশের মতো স্থানে আমার নিত্য আরতি হয়। এই দেশের মানুষ আমাকে তাদের পরম পরিত্রাতা হিসেবে মনে করে। এজন্য এই সভ্যতার রক্ষায় আমার বেঁচে থাকা অত্যন্ত আবশ্যক। আমার অপমৃত্যু ঘটলে, এই মহান সভ্যতারও অপমৃত্যু ঘটবে। তাহলে, মানুষের কাছে আমার কাতর আবেদন— আমরা যেন মূল্যবোধহীন না হয়ে পড়ি। পরিবর্তে, আমরা যেন গতিশীল হই, সহানুভূতিশীল হই, মুক্ত প্রাণচঞ্চল হই। কবির ভাষায়:
“আমি যদি প্রাণ খুলে গাই,
কলকলা সুর স্নিগ্ধ বায়ুর হৃদয় ভরা গান,
হাসবে তুমি উল্লাসে, আর বাঁচবে ওরে
শ্যামল ছায়ায়, অনন্তকাল সুঙ্গী অফুরান।”
এই রচনাটি মুখস্ত করে লেখলে ৬ষ্ঠ থেকে ১২ষ্ঠ শ্রেণীর যেকোনো পরীক্ষায় জলসংকট প্রবন্ধ রচনায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।
আরো পড়ুন,
এই আর্টিকেল এ তোমার একটি নদীর আত্মকথা রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি , এই রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় বা স্কুলের পরীক্ষায় দেখা যাই, তোমার একটি নদীর আত্মকথা রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা এই রচনা প্রায়ই পরীক্ষায় দেখা যাই, এই রচনাটি তোমরা একবার মুখস্ত করলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবে।