আজকের আলোচনার বিষয় হল “পুরোনো বাড়ির আত্মকথা” – প্রবন্ধ রচনা। এই রচনাটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং বিভিন্ন স্কুল পরীক্ষায় বারবার দেখা যায়। এই প্রবন্ধ রচনাটি কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং বারবার পরীক্ষায় আসার কারণে, এটি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হতে পারে। এই ব্লগ পোস্টে, আমরা “পুরোনো বাড়ির আত্মকথা” প্রবন্ধ রচনা লেখার জন্য একটি ধাপে ধাপে নির্দেশিকা প্রদান করবো যাতে তুমি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারো।
একটি পুরোনো বাড়ির আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা –
স্মৃতির পথের ধুলোবালি সরালে জীবনের কত না জলছবি ভেসে ওঠে। হাসি-কান্না, সাফল্য-ব্যর্থতার যে জীবন তাতে মানুষেরই একচ্ছত্র দাবি আছে তা নয়, এই পৃথিবীর জড় ও প্রাণময়-সবাই তো আসলে স্মৃতিধর। পলেস্তারা খসা এক পুরোনো বাড়ি হিসেবে এরকম অনেক স্মৃতিই আমি বয়ে নিয়ে চলেছি।
আমার কথা –
গ্রাম-সৈদপুর, পোস্ট-টাকি, জেলা-উত্তর ২৪ পরগনা-এই আমার ঠিকানা। গত শতকের শুরুর দিকে আমার জন্ম। আমার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সতীনাথ বসু নামে এক ভদ্রলোক। খুবই ধনী গৃহস্থ ছিলেন তিনি। সামনে একটা পুকুর। প্রায় পাঁচ-ছ কাঠা জায়গার উপরে আমার জন্ম হয়। বড়ো বড়ো খিলান, বার্মা টিকের দরজা জানালা, দেয়ালে বাহারি নকশা-রাজকীয় চেহারা ছিল আমার। মোট আটখানা ঘর, দুটো তলা ছিল। আম-কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা এক মনোরম উপস্থিতি ছিল আমার।
সেদিন গেছে চলে –
এ-বাড়ির লোকেরা কোনোদিনই জমিনির্ভর ছিল না। ফলে উঠোনে গোলাভরা ধান দেখার সুযোগ আমার হয়নি। সকলেই নানা উচ্চপদে চাকরি করায় নানা ধরনের মানুষের আগমন এখানে ঘটেছে। সতীনাথ বসুর ছেলে কুমারনাথ বসুর সময়ে আমার খ্যাতি-বৈভব অনেক বেড়ে যায়। বাইরের ঘরে বৈঠকখানা, পাশের ঘরে লাইব্রেরি, তার ঝুল-বারান্দায় লিলি ফুল—বনেদি হয়ে উঠি আমি ভিতরেও। এ-বাড়িরই একটি মেয়ে নীলিমা মাত্র ছ-বছর বয়সে রেডিয়োতে গান গেয়েছিল। তখন সাহেবদের আমল। কত রেকর্ড বেরল, পুরস্কার পেতে শুরু করল। কিন্তু মাত্র ষোলো বছরে হঠাৎই সে মারা গেল। ক-দিন বাড়িটা যেন শ্মশান হয়ে গেল। মানুষগুলোর মতোই আমিও যে কত কেঁদেছি! মহালয়ার দিন তোমরা স্তোত্রপাঠ শোন যার গলায়, সেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এখানে এসেছিলেন। এসেছিলেন রেডিয়ো স্টেশনের ডিরেক্টর স্টেপলটন সাহেব। স্বাধীনতার সময় আমার উঠোনেই গ্রামের লোক জড়ো হয়েছিল। ঢাক, কাঁসি বাজিয়ে সবাই মিছিল করেছিল। কী আনন্দ সকলের! আর ভিড় হয়েছিল কুমারবাবু মারা গেলে। হিন্দু-মুসলমান সব মানুষ জড়ো হয়েছিল। দেশভাগের পরে মুসলমানরা যখন এদেশ ছাড়ছে, গ্রামের মুসলমানদের নদীর জলে নেমে তিনিই তো ফেরত এনেছিলেন, তাদের সাহস দিয়েছিলেন। এ নিয়ে বড়ো গর্ব আছে আমার। গ্রামের সকলেই আমাকে তাই একটু অন্য চোখে দেখে। জমিদারদের ওই পেল্লায় বাড়িগুলোর মধ্যেও আমার একটু আলাদা জায়গা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে যখন উদবাস্তুরা এল, তাদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিল আমার উঠোনে, বারান্দার কোণে। মা-ঠাকরুন তাদের দেখাশোনা করতেন। এ বাড়ির মানুষগুলোর জন্য সত্যিই আমার গর্ব হত।
আমার বর্তমান –
যে গ্রামে আমার অবস্থান সেখানে এখন শুধুই শূন্যতা। পুরোনো বনেদি মানুষরা সকলেই কলকাতা বা অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কুমার বসুর পরিবারও প্রায় তা-ই। ছোটো ছেলে আমাকে ভালোবেসে আজও আছেন। কিন্তু তারপর? এরমধ্যে আমার রূপবদল হয়েছে। কড়ি-বরগার বদলে ঢালাই ছাদ হয়েছে। মেরামত, রংও হয়েছে কিছু কিছু। কিন্তু থাকবে কে? জমিদারদের ভাঙা বাড়িগুলো দেখি আর মনে হয় এটাই হয়তো আমারও ভবিষ্যৎ।
উপসংহার –
সব অনিশ্চয়তাকে নিয়ে তবু আমি টিকে আছি। আজও সামনের পুকুরে মাছেরা খেলা করে। উঠোনে হাসনুহানা গন্ধ ছড়ায়, আমগাছের শাখায় বাতাসের কাঁপন লাগে। আর আমি মনে মনে ভাবি, যদি আর-একবার আগের মতো।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা একটি পুরোনো বাড়ির আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই ধরণের প্রবন্ধ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় বেশ দেখা যায়।