একটি শহরের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

নমস্কার বন্ধুরা! আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো “একটি শহরের আত্মকথা” – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই ধরণের প্রশ্ন দেখা যায়। এই প্রবন্ধটি শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয়, বরং তোমরা একবার যদি মুখস্থ করে ফেলো, তাহলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবে।

একটি শহরের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি শহরের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

এই শহর জানে আমার গোপন সবকিছু,
পালাতে চাই যত সে আসে আমার পিছু পিছু।

– কবির সুমন

ভূমিকা –

আমি কলকাতা, আলো-অন্ধকারে ভরা ইতিহাসের এক দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আমার টিকে থাকা। জন্ম-মৃত্যু, সৃষ্টি-ধ্বংসের বহু ঘটনা, বহু বিপন্নতা এবং বিস্ময় ঘিরে আছে আমাকে। আর এসব নিয়েই বাঙালির জাতিসত্তার সঙ্গে শতকের পর শতক জুড়ে আমার জড়িয়ে থাকা। বাকি ভারতের কাছে আমার উপস্থিতি স্বাতন্ত্র্যের এবং স্বীকৃতির।

ইতিহাসের পথ বেয়ে –

পন্ডিতেরা বলতেন ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দে জব চার্নক নামে এক সাহেব সুতানুটি, গোবিন্দপুর আর কলকাতা এই তিনটি গ্রাম নিয়ে আমার পত্তন করেছিলেন। ১৯৯০-এ ধুমধাম করে আমার তিনশো বছরের জন্মদিন পালনও হয়েছিল। কিন্তু এ নিয়ে মতপার্থক্য হওয়ায় ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে হাইকোর্ট আমার অবস্থান ১৬৯০-এর আগেও ছিল বলে মত দেয়। তবে আমার পত্তন নিয়ে পণ্ডিতের মধ্যে তর্কাতর্কি যা থাকে থাক, আমি আছি আমার মতোই। আমার নাম নিয়েও তো কত বিতর্ক আছে। সুনীতিবাবু বলেছিলেন কলিচুনের কেন্দ্র হিসেবে আমার নাম কলকাতা। অন্য মতে আমার বুকে ছিল কালীক্ষেত্র, তাই নাম কলিকাতা। আবার কেউ বলেন কিলকিলা বা সমতলভূমি বলেই আমি কলিকাতা। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে রাজ্য সরকার আমার নাম কলিকাতা থেকে বদলে কলকাতা করেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আমিই ছিলাম ভারতের রাজধানী। এখনও পূর্ব ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী আমাকেই বলা হয়।

আমার বর্তমান –

একদা হুগলি নদীর পূর্ব ধার ধরেই আমার অবস্থান ছিল। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা এবং সময়ের চাহিদা আমার আয়তনকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। উত্তরে বারাসত থেকে দক্ষিণে বারুইপুর আমার সীমানা। আমার অধীনে আছে একটি কর্পোরেশন এবং আটত্রিশটি পুরসভা। প্রায় দেড় কোটি মানুষকে জায়গা দিয়েছি আমি। কাজের প্রয়োজনে এর কয়েকগুণ মানুষ রোজ আসেন আমার কাছে।

আমারে তুমি অশেষ করেছ –

কত গৌরবের সাক্ষী আমি। রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ বসু-কত ইতিহাস সৃষ্টি করা মানুষের স্মৃতিকে ধরে আছি আমি। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফোর্ট উইলিয়াম, জাদুঘর, জ্ঞানচর্চার স্মারক একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, কত না স্থাপত্য ও দর্শনীয় জিনিস আমার মুকুটে রয়েছে উজ্জ্বল রত্নের মতো। রয়েছে ১৯১১-তে গোরাদের হারিয়ে মোহনবাগানের শিল্ড জয়, বিনয়-বাদল-দীনেশের অলিন্দ অভিযানের স্মৃতিও। এসব নিয়েই ছিলাম, আছি, থাকব। সকলে বলে আমি নাকি ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানীও বটে। রবীন্দ্রসদন, অ্যাকাডেমি, নন্দন, আরও কত মঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ জুড়ে কত না নাটক, সিনেমা। গিরিশ ঘোষ, শিশির ভাদুড়ি থেকে উৎপল দত্ত, সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় কত স্বনামধন্য মানুষের পদধূলি মিশে আছে আমার শরীরে। আজও ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ছবি দেখার জন্য আমার বুকে রাত জাগে মানুষ। বইমেলায় লক্ষ লক্ষ লোকের জমায়েত হয়। এসবই আমার গর্ব, আমার অহংকার।

শেষের কথা –

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানি বোমা আমাকে কাবু করতে পারেনি। আমি দেখেছি তেরোশো পঞ্চাশের মন্বন্তরে গ্রাম থেকে আসা অসংখ্য মানুষের মৃত্যু। স্বাধীনতার ও দেশভাগের সময়েও রক্তাক্ত হয়েছে আমার শরীর। তবু উঠে দাঁড়িয়েছি আমি। অনেক সমস্যাকে নিয়ে আমার টিকে থাকা। বর্ষায় জল জমে, রাস্তায় তৈরি হয় যানজটের সমস্যা। ক্রমে গাড়িঘোড়া আর কলকারখানা কালো ধোঁয়ায় আর দূষণে ঢেকে যাচ্ছে আমার আকাশ। তবু আমি আছি, আমার আবেগ স্বপ্নময়তা আর উজ্জ্বল ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে।

আরও পড়ুন – সাহিত্যপাঠের প্রয়োজনীয়তা – প্রবন্ধ রচনা

আজকের এই ব্লগ পোস্টে, আমরা “একটি শহরের আত্মকথা” প্রবন্ধ রচনা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই ধরণের প্রবন্ধ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। “একটি শহরের আত্মকথা” রচনা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি এবং লেখার দক্ষতা প্রদর্শন করার সুযোগ করে দেয়।

Please Share This Article

Related Posts

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় প্রবন্ধ রচনা।

ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায় – প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - প্রবন্ধ রচনা

মানব কল্যাণে বিজ্ঞান – প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা

পরিবেশ রক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে কৃষক সমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল?

কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল সম্পর্কে টীকা লেখো।

সারা ভারত কিষান সভা কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

‘একা’ আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।