আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা আলোচনা করবো “সাহিত্যপাঠের প্রয়োজনীয়তা” – প্রবন্ধ রচনা নিয়ে। মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা এবং স্কুল পরীক্ষায় প্রায়শই এই প্রশ্নটি দেখা যায়। প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনাশৈলী এবং প্রায়শই পরীক্ষায় এর উপর প্রশ্ন আসে। এই প্রবন্ধটি মুখস্ত করে রাখলে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন।

সাহিত্যপাঠের প্রয়োজনীয়তা – প্রবন্ধ রচনা
“ভুলে যেয়োনাকো তুমি আমাদের উঠানের কাছে
– শক্তি চট্টোপাধ্যায়
অনন্ত কুয়ার জলে চাঁদ পড়ে আছে।”
ভূমিকা –
আত্মব্যাপ্তির জন্য সাহিত্য। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ভাবকে নিজের করিয়া সকলের করা, ইহা সাহিত্য। সাহিত্য জীবনের ছবি আঁকে। জীবন বিচিত্র, তার গতিপথ আরও বিচিত্র। বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় বলেন – জীবনের ক্ষুদ্রতাকে অতিক্রম করে বিরাটের ক্রমাগত আত্ম-প্রতিষ্ঠার বাসনাই লেখকের প্রেরণা। যুগ যুগ ধরে নানা দেশে নানা ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টির কাজে নিমগ্ন আর পাঠকেরা তার স্বাদ পেতে উদ্গ্রীব।
আনন্দপ্রাপ্তি –
সাহিত্যপাঠের মধ্যে আছে আনন্দ, ভালো লাগার মধ্যে দিয়ে বিশুদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া। এ আনন্দ সত্য শিব সুন্দরের মধ্যে নিহিত। প্রাণ ভরে উপভোগ করার প্রেরণা যোগায় সাহিত্য। এ ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ স্রষ্টা ও পাঠক উভয়েই অংশীদার। সাহিত্য বলতে কবিতা, ছোটোগল্প, উপন্যাস, নাটক প্রভৃতি বোঝায়। সাহিত্যের এই বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে অবিমিশ্র আনন্দের স্বাদ পেয়ে থাকেন সাহিত্যস্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টি পাঠককে কৃতার্থ করে।
দর্শন –
এক ইংরেজ কবি বলেছেন-সাহিত্য জীবনের দর্পণ। জীবনের মধ্যেই সমাজের অধিষ্ঠান। জীবনের যেমন অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ আছে, সমাজে সাহিত্যেও তেমনই রূপ বদলায়। সাহিত্যপাঠে আমাদের অভিজ্ঞতার পরিধি আরও বেড়ে যায়। আমরা সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে মুক্ত হয়ে এক বৃহৎ জগতে গিয়ে পৌঁছোই। জীবন সম্পর্কে সত্য ও সুন্দরের ধারণা তৈরি করে দেয় সাহিত্যই।
সাহিত্য থেকে শিক্ষা –
সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে আমরা অশেষ শিক্ষা লাভ করি। শুধু নীতিকথা ও উপদেশ নয়, উৎকৃষ্ট সাহিত্য আমাদের জীবনকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলে। জীবনের সংগতি আর অসংগতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা যায়। হয়তো আমরা আনন্দের জন্য সাহিত্য পাঠ করি, শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে নয়। কিন্তু পরিণামে শিক্ষালাভ ঘটে। আমাদের সুকুমার বৃত্তিগুলির বিকাশ ঘটে সাহিত্যপাঠের মাধ্যমে। আমাদের বোধ আরও গভীরতা লাভ করে। পরিমার্জিত হয় রুচি। মন আরও সংবেদনশীল হয়। আমাদের ভাষাজ্ঞানের উন্নতি হয়।
নিঃসঙ্গতার অবলম্বন –
সাহিত্যপাঠ আমাদের বন্ধুত্বের প্রয়োজন মেটায়, আমাদের নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। সাহিত্যপাঠের ফলে সহজেই আমরা বহুবিচিত্র চরিত্র, অনুভূতি, কান্না-হাসির সঙ্গলাভ করি, দেশ-কালের সীমা ছাড়িয়ে বৃহৎ জগতের সন্ধান পাই।
জাতীয় ঐক্য তথা বিশ্বমানবিকতা –
সাহিত্যপাঠে সংকীর্ণতা থাকে না, মন ক্রমশ প্রশস্ত হয়। মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ থাকে না, বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জেগে ওঠে। উদার মানবিকতাবোধ জাগ্রত হয়। সাম্প্রদায়িকতা থাকে না। জাতি-ধর্ম-ভাষার পার্থক্য ক্রমশ কমিয়ে এনে, জাতীয় ঐক্য গঠনে সাহায্য করে। এক অখণ্ড মানবসমাজের প্রাণস্পন্দনকে খুঁজে পাওয়া যায় যথার্থ সাহিত্যপাঠে।
উপসংহার –
সংক্ষেপে বলা যেতে পারে, সাহিত্য আনন্দ ও শিক্ষার মূল উৎস। সাহিত্যপাঠের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা তা বলে শেষ করা যাবে না। পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সঙ্গে সংযোগ রেখে, শুভ চিন্তার প্রসারের জন্য সাহিত্যপাঠ ছাড়া আর অন্য কোনো বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন – জনজীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা – প্রবন্ধ রচনা
এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা সাহিত্যপাঠের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছি। সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে আমরা কেবল জ্ঞান অর্জন করি না, বরং ভাষাগত দক্ষতা, বিশ্লেষণী দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে পারি। প্রবন্ধ রচনা এই দক্ষতাগুলির সমন্বিত প্রয়োগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিয়মিত সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে আমরা প্রবন্ধ রচনার জন্য প্রয়োজনীয় ভাব ও ভাষা সংগ্রহ করতে পারি। উপরন্তু, সাহিত্যকর্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা প্রবন্ধ রচনার কাঠামো ও ধারণা লাভ করতে পারি।
শুধুমাত্র মুখস্থ করার চেয়ে নিয়মিত অনুশীলন ও সাহিত্যকর্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিয়মিত সাহিত্য পাঠ ও অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা যেকোনো পরীক্ষায় প্রবন্ধ রচনায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারি।