এল-নিনো কী? এল-নিনোর প্রভাব

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “এল-নিনো কী? সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “এল-নিনো কী? সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

এল-নিনো কী সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো
এল-নিনো কী সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো

এল-নিনো কী? সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো।

এল-নিনো ও পৃথিবীব্যাপী তার প্রভাব –

স্পেনীয় শব্দ El-NINO -র প্রকৃত অর্থ শিশুখ্রিস্ট (Child Christ)। এল-নিনো হল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি উপকূলে সাধারণত খ্রিস্টমাসের সময় দেখা অস্থির, অনির্দিষ্ট এবং উষ্ণ সমুদ্রস্রোত।

পৃথিবীর ওপর প্রভাব –

  • বিজ্ঞানীদের অনুমান, যে বছর এল-নিনো প্রবাহিত হয় সে বছর দক্ষিণ এশিয়াতে পূবালি জেটবায়ু দুভাগ হয়ে পড়ায় প্রত্যায়নকারী মৌসুমি বায়ু কিছুটা দুর্বল হয়ে ভারতবর্ষে দেরিতে প্রবেশ করে ফলে বৃষ্টিপাত কম হয়ে খরা সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি 2009 খ্রিস্টাব্দে El-Nino -এর প্রভাবে ভারতের 250টি জেলায় খরার সৃষ্টি হয়েছে।
  • প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলীয় দেশগুলিতে (অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস) খরার প্রকোপ বাড়ে।
  • উত্তর আমেরিকার পশ্চিম উপকূলের মধ্যভাগ ও মেক্সিকো উপসাগরে বর্ষণ ও বায়বীয় গোলযোগ বৃদ্ধি পায়।
  • সর্বোপরি এল-নিনোর প্রভাবে বিশ্ব উষ্ণায়নে মেরুদেশীয় হিমবাহের গলন ঘটে সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং সামুদ্রিক দ্বীপের নীচু উপকূলভাগ নোনা জলে নিমজ্জিত হয়।

ভারতের ওপর প্রভাব –

  • ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর দেশ হিসেবে ভারতে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বৃষ্টিপাত ঘটে এল-নিনোর প্রভাবে সেই বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা যায়।
  • এল-নিনোর প্রভাবে সমুদ্রজলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমি বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ হ্রাস পায়।
  • এল-নিনোর কারণে জলভাগের উষ্ণতা অনেক বেড়ে যাওয়ায় নিম্নচাপ ও প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।
  • এল-নিনোর প্রভাবে বেশ কয়েক বছর আগে আরবসাগরে এক ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় যার ফলে সেই বছর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি নিম্নচাপের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যায়। সুতরাং বলা যায়, সমগ্র পৃথিবী তথা ভারতের জলবায়ুর ছন্দপতনে এল-নিনো বিশেষভাবে দায়ী।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

এল-নিনো কী?

এল-নিনো (El Nino) হল প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য ও পূর্ব অংশে সমুদ্রপৃষ্ঠের অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধির একটি জলবায়ুগত ঘটনা। এটি সাধারণত 2-7 বছরের ব্যবধানে ঘটে এবং বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

এল-নিনো নামের অর্থ কী?

“এল-নিনো” একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ “শিশু খ্রিস্ট” (Child Christ)। এটি এমন নাম পেয়েছে কারণ এই জলবায়ুগত ঘটনাটি সাধারণত খ্রিস্টমাসের সময়কালে দেখা যায়।

এল-নিনো কীভাবে সৃষ্টি হয়?

সাধারণত, প্যাসিফিক মহাসাগরে বাণিজ্য বায়ু (Trade Winds) পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়, যা ঠান্ডা পানিকে উপরে নিয়ে আসে। কিন্তু এল-নিনো অবস্থায় এই বায়ু দুর্বল হয়ে যায়, ফলে সমুদ্রের উষ্ণ জল পূর্ব দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং বায়ুমণ্ডলে পরিবর্তন ঘটায়।

এল-নিনোর বৈশ্বিক প্রভাব কী?

1. দক্ষিণ এশিয়ায় (ভারত, বাংলাদেশ) – মৌসুমি বায়ু দুর্বল হয়, বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং খরা দেখা দেয়।
2. অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় – শুষ্ক আবহাওয়া ও খরা বৃদ্ধি পায়।
3. উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায় – ভারী বৃষ্টিপাত ও বন্যা হতে পারে।
4. বৈশ্বিক উষ্ণায়ন – সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ায় হিমবাহ গলে এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পায়।

ভারতে এল-নিনোর প্রভাব কী?

1. মৌসুমি বৃষ্টিপাত হ্রাস – এল-নিনো বছরে ভারতের বর্ষাকাল দেরিতে শুরু হয় এবং কম বৃষ্টিপাত হয় (যেমন – 2009 ও 2014 সালে খরা)।
2. কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতি – ধান, গম, তুলার মতো ফসলের উৎপাদন কমে যায়।
3. ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা – সমুদ্রের উষ্ণতা বাড়ায় বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়তে পারে।

এল-নিনো কি জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত?

হ্যাঁ, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এল-নিনোর ঘটনাগুলো আরও ঘনঘন ও তীব্র হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, ভবিষ্যতে এর প্রভাব আরও খারাপ হতে পারে।

এল-নিনো কি ভারতের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে?

হ্যাঁ, কৃষি, জলের সহজলভ্যতা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন (জলবিদ্যুৎ নির্ভর) এল-নিনো দ্বারা প্রভাবিত হয়, যা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সাম্প্রতিক সময়ে কোন বছরগুলোতে এল-নিনোর প্রভাব দেখা গেছে?

1. 1997-98 (শক্তিশালী এল-নিনো)।
2. 2009-10 (ভারতে খরা)।
3. 2015-16 (বৈশ্বিক উষ্ণ রেকর্ড)।
4. 2023-24 (বর্তমানেও প্রভাব রয়েছে)।

এল-নিনো থেকে রক্ষা পেতে কী করা যায়?

1. জল সংরক্ষণ (বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, সেচ ব্যবস্থা উন্নত করা)।
2. খরা-সহিষ্ণু ফসল চাষ করা।
3. আবহাওয়া পূর্বাভাস মনিটরিং করে প্রস্তুতি নেওয়া।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “এল-নিনো কী? সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “এল-নিনো কী? সমগ্র পৃথিবীতে এবং ভারতে এর প্রভাব উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – বায়ুমণ্ডলের তাপ, উষ্ণতা ও বিশ্ব উষ্ণায়ন” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো

সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসর বলতে কী বোঝো? সক্রিয় সেনসর ও নিষ্ক্রিয় সেনসরের মধ্যে পার্থক্য

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ বলতে কী বোঝো

জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহ কী? জিওস্টেশনারি ও সান-সিনক্রোনাস উপগ্রহের মধ্যে পার্থক্য

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র বলতে কী বোঝো

ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্র কী? ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্র ও উপগ্রহ চিত্রের পার্থক্য

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ