ফরাজি আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ফরাজি আন্দোলন – টীকা লেখো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “ফরাজি আন্দোলন – টীকা লেখো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ফরাজি আন্দোলন - টীকা লেখো।

ফরাজি আন্দোলন – টীকা লেখো।

এদেশে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক অসন্তোষের ফলে শুরু হয় ফরাজি আন্দোলন, যা ক্রমশ রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে।

ফরাজি আন্দোলনের উদ্ভব –

ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ্, পূর্ববঙ্গের ফরিদপুরে। ‘ফরাজি’ শব্দের অর্থ হল – ‘ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য’ বা ইসলাম ধর্মের আদর্শে বিশ্বাস। হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ্ ‘ফরাজি’ নামে ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করে দরিদ্র মুসলমান কৃষক ও কারিগরদের ঐক্যবদ্ধ করেন।

ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ –

আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ ছিল, ইংরেজ অধিকৃত ‘দার-উল-হারব’ (শত্রুর দেশ) ভারতবর্ষকে ‘দার-উল-ইসলাম’ (ইসলামের দেশ) -এ পরিণত করা।

ফরাজি আন্দোলনে মহম্মদ মুসিন -এর ভূমিকা –

শরিয়ৎ উল্লাহের মৃত্যুর পর আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তার পুত্র মহম্মদ মুসিন, দুদু মিঞা নামেই যিনি ইতিহাসে সমধিক পরিচিত। তিনি ছিলেন সুসংগঠক ও রাজনৈতিক চেতনার অধিকারী। তিনি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলে, অত্যাচারী জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি গ্রাম্য বিবাদে ইংরেজদের আদালতে না গিয়ে সালিশির ব্যবস্থা করেন এবং জমিদারদের করধার্য করার অধিকার অস্বীকার করেন।

ফরাজি আন্দোলনের বিস্তার –

মহম্মদ মুসিন -এর নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন ধীরে ধীরে ফরিদপুর, ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

ফরাজি আন্দোলনের অবসান –

ক্রমে আন্দোলনের ব্রিটিশ বিরোধী চরিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠলে সরকার মহম্মদ মুসিনকে কারারুদ্ধ করে। 1862 খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ মুসিন -এর মৃত্যুর পর ফরাজি আন্দোলন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাঁর পুত্র নোয়ামিঞা -র নেতৃত্বে তা শুধুমাত্র ধর্মীয় বিষয়েই সীমাবদ্ধ থাকে।

ফরাজি আন্দোলনে গুরুত্ব –

ফরাজি আন্দোলনে ধর্মীয় ভাব যুক্ত থাকলেও এটি মূলত ছিল বাংলার একটি কৃষক বিদ্রোহ। জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে নিপীড়িত কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে ফরাজিরা তাদের মধ্যে এক সংগ্রামী চেতনার জাগরণ ঘটান।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ফরাজি আন্দোলন কী?

ফরাজি আন্দোলন ছিল 19শ শতকে বাংলার নিপীড়িত মুসলিম কৃষক ও কারিগরদের ব্রিটিশ শাসন, জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে একটি ধর্মীয়-সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগ্রাম।

ফরাজি শব্দের অর্থ কী?

ফরাজি শব্দের অর্থ “ইসলামের বাধ্যতামূলক কর্তব্য”। এটি ইসলামের আদর্শভিত্তিক একটি ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়।

ফরাজি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে?

এই আন্দোলনের সূচনা করেন হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ্, যিনি ফরিদপুরের (বর্তমান বাংলাদেশ) একজন ইসলামী পণ্ডিত ছিলেন।

ফরাজি আন্দোলনের মূল লক্ষ্য কী ছিল?

প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষকে “দার-উল-হারব” (শত্রুর দেশ) থেকে “দার-উল-ইসলাম” (ইসলামের দেশ)-এ পরিণত করা। পরে এটি ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনে রূপ নেয়।

দুদু মিঞা কে ছিলেন?

দুদু মিঞা (মহম্মদ মুসিন) ছিলেন হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ্-এর পুত্র। তিনি ফরাজি আন্দোলনকে একটি সুসংগঠিত রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত করেন এবং জমিদার ও নীলকরদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন।

ফরাজি আন্দোলনের বিস্তার কোথায় হয়েছিল?

এটি মূলত ফরিদপুর, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

ফরাজি আন্দোলন কীভাবে শেষ হয়?

1862 সালে দুদু মিঞার মৃত্যুর পর আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁর পুত্র নোয়ামিঞার নেতৃত্বে এটি শুধুমাত্র ধর্মীয় আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকে।

ফরাজি আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী?

ফরাজি আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্বগুলি হল –
1. এটি বাংলার প্রথম সংগঠিত কৃষক বিদ্রোহগুলির মধ্যে একটি।
2. ব্রিটিশ ও জমিদারদের শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে।
3. পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রেরণা যুগিয়েছিল।

ফরাজি আন্দোলন কি শুধু ধর্মীয় ছিল?

না, প্রাথমিকভাবে ধর্মীয় হলেও এটি দ্রুত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়, বিশেষত নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগ্রাম হিসেবে।

দুদু মিঞা কী কী সংস্কার করেছিলেন?

1. ইংরেজ আদালতের পরিবর্তে গ্রাম্য সালিশি ব্যবস্থা চালু করেন।
2. জমিদারদের কর আদায়ের অধিকার অস্বীকার করেন।
3. নীলকর ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংঘবদ্ধ করেন।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ফরাজি আন্দোলন – টীকা লেখো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ফরাজি আন্দোলন – টীকা লেখো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্র দুটি লেখো।

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

কাচের স্ল্যাবের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে আপতিত ও নির্গত আলোকরশ্মি পরস্পরের সমান্তরাল। অথবা, দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?