এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি -এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি -এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর ও পূর্ব ভারতের গাঙ্গেয় সমভূমি মূলত মধ্য ও নিম্নগঙ্গা সমভূমি সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। এই সমভূমি অঞ্চলে রয়েছে অধিক জনবহুল ও জনঘনত্বযুক্ত তিনটি রাজ্য, যথা – উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব অধিক হওয়ার কারণগুলি হল –
- সমতল ভূভাগ – মধ্য ও নিম্নগঙ্গা অববাহিকাতে বিস্তীর্ণ সমতল ক্ষেত্র রয়েছে, যা কৃষি, শিল্প, পরিবহণ, জনবসতি স্থাপন প্রভৃতি কার্যকলাপের জন্য অনুকূল।
- উর্বর মৃত্তিকা ও কৃষিব্যবস্থা – গঙ্গা অববাহিকার বিস্তীর্ণ সমভূমিতে অতি উর্বর পলিমাটি, জলসেচের সুবিধা, ঋতুগত অনুকূল জলবায়ু প্রভৃতির কারণে এখানকার কৃষি ব্যাপক উন্নত। এই অঞ্চলে প্রায় সমস্ত ধরনের ফসল উৎপাদিত হয়।
- স্বচ্ছ জলের প্রাচুর্য – প্রধান নদী গঙ্গার সঙ্গে মিলিত হয়েছে অসংখ্য শাখানদী ও উপনদী। এই সমস্ত নদীগুলির জল সেচের কাজে, শিল্পে ও পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- শিল্পের প্রসার – কৃষিজ, খনিজ দ্রব্য প্রাপ্তির সুবিধা, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ প্রাপ্তির সহজলভ্যতা, শিল্পের প্রসারে উপযুক্ত সমভূমি প্রভৃতি কারণে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য শিল্প ও শিল্পাঞ্চল। চিনি, পাট, লৌহ-ইস্পাত শিল্পের জন্য এই অঞ্চলটি ভারত বিখ্যাত।
- দ্রুত নগরায়ণ জনঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য অনেকাংশে দায়ী।
- এ ছাড়া প্রচুর মানুষের গোষ্ঠীবদ্ধ বসতি প্রভৃতির সম্মিলিত কারণে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
গাঙ্গেয় সমভূমি বলতে কী বোঝায়?
গাঙ্গেয় সমভূমি হলো গঙ্গা নদী ও তার শাখা-প্রশাখা দ্বারা গঠিত একটি বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমি অঞ্চল, যা উত্তর ও পূর্ব ভারত (উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ) এবং বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার প্রধান ভৌগোলিক কারণ কী?
গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব বেশি হওয়ার প্রধান ভৌগোলিক কারণগুলি হলো –
1. উর্বর পলিমাটি – গঙ্গা ও তার উপনদীগুলি পলি সঞ্চয় করে উর্বর কৃষিজমি সৃষ্টি করেছে।
2. জলসেচের সুবিধা – নদীগুলির জল কৃষি ও শিল্পের জন্য সহজলভ্য।
3. সমতল ভূমি – কৃষি, শিল্প ও বসবাসের জন্য আদর্শ।
4. নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু – কৃষি ও জনবসতির জন্য অনুকূল।
5. পরিবহন ও বাণিজ্যের সুবিধা – নদীপথ ও সড়কপথের উন্নয়ন জনবসতি বৃদ্ধি করেছে।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে কৃষি উন্নত কেন?
গাঙ্গেয় সমভূমিতে কৃষি উন্নত হওয়ার কারণগুলি হলো –
1. গঙ্গা অববাহিকায় পলিমাটি অত্যন্ত উর্বর।
2. পর্যাপ্ত জলসেচের সুবিধা (নদী, খাল, নলকূপ)।
3. অনুকূল জলবায়ু (বর্ষাকাল ও শীতকালে ফসল চাষ)।
4. ধান, গম, আখ, পাট ইত্যাদি ফসলের ব্যাপক চাষ হয়।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে শিল্পের বিকাশ ঘটেছে কীভাবে?
গাঙ্গেয় সমভূমিতে শিল্পের বিকাশ ঘটার কারণগুলি হলো –
1. কাঁচামালের প্রাচুর্য (ধান, পাট, আখ)।
2. নদী ও রেলপথের মাধ্যমে পরিবহন সুবিধা।
3. শ্রমিকের সহজলভ্যতা (ঘনবসতির কারণে)।
4. কলকাতা, কানপুর, বারাণসী, পাটনা ইত্যাদি শহরে বড় শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠেছে।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে নগরায়ণের প্রভাব কী?
গাঙ্গেয় সমভূমিতে নগরায়ণের প্রভাবগুলি হলো –
1. কলকাতা, পাটনা, লখনউ, কানপুরের মতো বড় শহরগুলি শিল্প, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের কেন্দ্র।
2. গ্রামীণ জনসংখ্যা কাজের সন্ধানে শহরমুখী হয়, ফলে শহরগুলির জনঘনত্ব বাড়ে।
গাঙ্গেয় সমভূমিতে পরিবেশগত সমস্যা কী?
গাঙ্গেয় সমভূমিতে পরিবেশগত সমস্যাগুলি হলো –
1. অত্যধিক জনঘনত্বের কারণে দূষণ (বায়ু, জল, মাটি)।
2. নদীগুলিতে শিল্পবর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশনের চাপ।
3. কৃষিজমি কমে যাওয়া ও ভূমিক্ষয়।
গাঙ্গেয় সমভূমির গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি কী কী?
গাঙ্গেয় সমভূমির গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলি হলো -গঙ্গা, যমুনা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কোশি, হুগলি, দামোদর প্রভৃতি।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “গাঙ্গেয় সমভূমিতে জনঘনত্ব অত্যন্ত বেশি -এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের জনসংখ্যা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন