ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

Rohit Mondal

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

ঘনীভবন কাকে বলে -
ঘনীভবন কাকে বলে –

ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ঘনীভবন –

জলীয়বাষ্পের তরলে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া হল ঘনীভবন। আর্দ্র বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে অর্থাৎ সম্পৃক্ত বায়ু আরও শীতল হলে বায়ুর মধ্যে উপস্থিত অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে অতিক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়। একেই ঘনীভবন বলা হয়।

ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপ –

ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট আর্দ্র জলকণা বিভিন্ন রূপে দেখা যায়। যেমন – ঊর্ধ্বাকাশে মেঘ, ভূপৃষ্ঠস্থ শিশির, কুয়াশা, ধোঁয়াশা প্রভৃতি। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর উষ্ণতা প্রভৃতির ওপর ঘনীভবন নির্ভরশীল। ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হল –

শিশির –

শীতের রাতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর শীতল হয়ে পড়ে। ফলে শীতল বায়ু বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে না পারায় অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় এবং গাছের পাতায়, ঘাসের ওপর জলবিন্দু আকারে জমা হয়। একে শিশির বলে।

কুয়াশা –

স্বাভাবিক নিয়মে দিনের তুলনায় রাতে বায়ুর উষ্ণতা কমে যায়। ফলে কোনো কোনো সময় ভোরের দিকে বাতাসের জলীয়বাষ্প শীতল ও ঘনীভূত হয়ে ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী বায়ুস্তরে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণার আকারে বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে। একে কুয়াশা বলে। এর ফলে নিম্ন বায়ুমণ্ডল অস্বচ্ছ হয় ও দৃশ্যমানতা হ্রাস পায়। শীতে ভূপৃষ্ঠের নিকটে ও জলাশয়ের ওপরে জলীয়বাষ্পের মাত্রা বেশি থাকায় ওই সময় কুয়াশা বেশি দেখা যায়, তবে সকালবেলা সূর্যোদয়ের পর বায়ুর তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাসমান জলকণাগুলি পুনরায় বাষ্পে পরিণত হয়ে ওপরে উঠে যায়।

ধোঁয়াশা –

ভোরবেলা জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা সৃষ্টি করে। শিল্প কারখানাযুক্ত অঞ্চলে কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া বা শহরাঞ্চলে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বাতাসে উপস্থিত থাকে। কুয়াশা বাতাসে উপস্থিত ধোঁয়াকে (জলাকর্ষী কণা) আশ্রয় করে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলে ভেসে বেড়ায় এবং যে অর্ধস্বচ্ছ ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি করে, তাকে ধোঁয়াশা বলে। এর ফলে মানবদেহে নাক ও গলা জ্বালা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

মেঘ –

জলীয়বাষ্পের ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট ভূপৃষ্ঠ থেকে যথেষ্ট উপরে (বিভিন্ন উচ্চতায়) অবস্থিত বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ভাসমান ও দৃশ্যমান অতিসূক্ষ্ম জলকণা বা তুষারকণাকে মেঘ বলে। ভূপৃষ্ঠস্থ জলাশয়ের জল বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায়। ঊর্ধ্বাকাশে শীতল ও সম্পৃক্ত হয়ে অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করে মেঘরূপে ভেসে বেড়ায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ঘনীভবন কাকে বলে?

জলীয় বাষ্পের তরলে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে নেমে গেলে বা সম্পৃক্ত বায়ু আরও শীতল হলে, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয়।

ঘনীভবনের প্রধান শর্ত কী?

1. বায়ু সম্পৃক্ত (আর্দ্রতা 100%) হতে হবে।
2. বায়ুর তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কের নিচে নামতে হবে।
3. ঘনীভবনের জন্য নিউক্লিয়াস (ধূলিকণা, ধোঁয়া, লবণকণা ইত্যাদি) প্রয়োজন।

ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপ কী কী?

ঘনীভবনের ফলে সৃষ্ট প্রধান রূপগুলি হলো —
1. শিশির (Dew)।
2. কুয়াশা (Fog)।
3. ধোঁয়াশা (Smog)।
4. মেঘ (Cloud)।

শিশির কীভাবে সৃষ্টি হয়?

রাতে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হলে, সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। ফলে বায়ুর অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে গাছের পাতা, ঘাস ইত্যাদির ওপর জলবিন্দু রূপে জমা হয়, একে শিশির বলে।

মেঘ কীভাবে সৃষ্টি হয়?

জলীয় বাষ্প ঊর্ধ্বাকাশে উঠে শীতল ও সম্পৃক্ত হলে, ধূলিকণাকে কেন্দ্র করে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র জলকণা বা তুষারকণায় পরিণত হয়। এগুলি একত্রিত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে।

ঘনীভবন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

1. বৃষ্টিপাতের জন্য মেঘ সৃষ্টি করে।
2. ভূপৃষ্ঠে জল সরবরাহে (শিশির) সাহায্য করে।
3. আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

কুয়াশা সাধারণত কখন দেখা যায়?

শীতকালে ভোরবেলা, যখন ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি বায়ুস্তর দ্রুত শীতল হয় এবং জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা সৃষ্টি করে।

ধোঁয়াশা মানব স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি করে?

ধোঁয়াশায় সালফার ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাস থাকায় এটি শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ, চোখে জ্বালা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করে।

মেঘ কত প্রকার ও কী কী?

মেঘ প্রধানত তিন প্রকার—
1. সিরাস (উচ্চস্তরের পাতলা মেঘ)।
2. কিউমুলাস (গুচ্ছাকার মেঘ)।
3. স্ট্র্যাটাস (স্তরীভূত মেঘ)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “ঘনীভবন কাকে বলে? ঘনীভবনের বিভিন্ন রূপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের দ্বিতীয় অধ্যায় “বায়ুমণ্ডল – আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো -

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

About The Author

Rohit Mondal

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

সিঙ্গাপুরের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে জলবায়ু ও গোলার্ধ শনাক্ত করো।

বাংলায় ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কীরূপ অবদান ছিল?

তুন্দ্রা জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করো।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর অবস্থান ও বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ুর অবস্থান ও প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী তা আলোচনা করো।