আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য কী? এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য কী? প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।
গিরিখাত
পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চগতিতে প্রবাহিত নদীর ক্ষয়কাজের ফলে যেসব অনন্য ভূমিরূপ তৈরি হয়, তার মধ্যে গিরিখাত অন্যতম। আর্দ্র ও আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নদীর উচ্চ প্রবাহের ফলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে, যার ফলে নদীর স্রোত প্রচন্ড বেগ ধারণ করে। এই প্রবল স্রোত বড় বড় শিলাখন্ড, নুড়ি, পাথর বহন করে নামতে থাকে এবং শিলাখন্ডের আঘাতে নদী প্রবল নিম্নক্ষয় করে।
এই নিম্নক্ষয়ের ফলে নদী উপত্যকা খুব গভীর ও সংকীর্ণ হয়ে ওঠে। আবহাওয়ার প্রভাবে এবং পুঞ্জিতক্ষয়ের মাধ্যমে কিছু পরিমাণ পার্শ্বক্ষয়ও ঘটে। এর ফলে নদী উপত্যকা চওড়া হয়ে ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো আকৃতি ধারণ করে। অতি গভীর ও সংকীর্ণ এমন নদী উপত্যকাকেই গিরিখাত বলা হয়। গিরিখাত যতটা গভীর, ততটা চওড়া নয়। কখনো কখনো এই গিরিখাতগুলির তলদেশের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী পর্বতের চূড়ার মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
উদাহরণ:
- হিমালয়ের পার্বত্য গতিপথে শতদ্রু, সিন্ধু, তিস্তা প্রভৃতি নদীর গভীর নদী উপত্যকা বা গিরিখাত দেখতে পাওয়া যায়।
- সিন্ধু নদের অরুণ গিরিখাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
- দক্ষিণ পেরুর কল্কা নদীর গিরিখাতটি বিশ্বের গভীরতম গিরিখাতগুলির অন্যতম, যার গভীরতা প্রায় ৪,৩৭৫ মিটার।
- নেপালের কালিগণ্ডক নদীর গিরিখাতটি পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর গিরিখাত, এর গভীরতা ৫,৫৭১ মিটার।
ক্যানিয়ন
ক্যানিয়ন, বা ‘I’ আকৃতির উপত্যকা, শুষ্ক অঞ্চলে নদীর দীর্ঘস্থায়ী গতিপথের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ। এই অঞ্চলে কম বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর দুই পাশের ভাঙন কম হয়, ফলে নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে গভীর, সংকীর্ণ উপত্যকা তৈরি হয় যা ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়। এর উদাহরণ বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত ক্যানিয়ন, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ৪৪৬ কিমি দীর্ঘ এবং ১৮৫৭ মিটার গভীর গ্রান্ড ক্যানিয়ন।
গিরিখাত ও ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য কী?
গিরিখাত ও ক্যানিয়ন দুটোই প্রকৃতির অসাধারণ সৃষ্টি, যা তাদের অপরিসীম গভীরতা ও সংকীর্ণতার জন্য বিখ্যাত। উভয়ই নদীর দীর্ঘদিনের ক্ষয়কার্যের ফসল হলেও, তাদের মধ্যে কিছু স্পষ্ট পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায়।
বিষয় | গিরিখাত | ক্যানিয়ন |
আকৃতি | গিরিখাত খুব গভীর ও সংকীর্ণ (ইংরেজি অক্ষর ‘V’আকৃতির) হয়। | ক্যানিয়ন অত্যন্ত সুগভীর এবং খুব বেশি সংকীর্ণ (ইংরেজি ‘।’ আকৃতির) হয়। |
সৃষ্টিস্থল | এর সৃষ্টি হয় নদীর উচ্চগতিতে বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে। | এর সৃষ্টি হয় বৃষ্টিহীন শুষ্ক বা মরুপ্রায় উচ্চভূমি অঞ্চলে। |
আকৃতিগত তারতম্যের কারণ | গিরিখাতে নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি হলেও বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে সৃষ্ট হয় বলে নদীর দুই পাড়ের ক্ষয়ও কিছু কিছু চলতে থাকে এবং কিছু উপনদী এসেও নদীখাতে মিলিত হয়। এজন্য নদীখাত ‘V’ আকৃতির হয়। উদাহরণ — ইয়াংসি কিয়াং নদীর ইচাং গিরিখাত। | ক্যানিয়ন সৃষ্টি হয় সেইসব নদীতে যেগুলির উৎপত্তি প্রধানত তুষারগলা জলে এবং প্রবাহিত হয় শুষ্ক বা মরুপ্রায় অঞ্চলের ওপর দিয়ে। সুতরাং, এখানে নদীতে উপনদী এসে মিলিত হয় না বলেই নদীখাত। আকৃতির হয়। উদাহরণ — কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন। |
আরও পড়ুন – মরুভূমিতে বালুকাকণা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
এই আর্টিকেলে আমরা গিরিখাত এবং ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্যগুলি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছি। আশা করি, এই তথ্যগুলি আপনাকে দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে। মনে রাখবেন, এই দুটি ভূ-আকৃতির মধ্যে পার্থক্যগুলি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি প্রায়শই পরীক্ষায় জিজ্ঞাসা করা হয়।