আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে হিমবাহ বলতে কী বোঝ? এই প্রশ্ন দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, হিমবাহ বলতে কী বোঝ? প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।
হিমবাহ হল পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নেমে আসা বরফের নদী। আকাশ থেকে পতিত তুষার হিমরেখার উপরে জমা হয়। ক্রমবর্ধমান তুষারের চাপে নীচের তুষার স্তর জমাট বেঁধে কঠিন বরফে পরিণত হয়। যখন বরফের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, তখন তা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ এবং উপরে অবস্থিত বরফের চাপে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নামতে থাকে। এই ধীর গতিতে গড়িয়ে আসা বরফের নদীই হিমবাহ।
হিমবাহ নামার সময় নীচের দিকে প্রচণ্ড চাপ ও ঘর্ষণের ফলে হিমবাহের তলদেশে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তলদেশের বরফ গলে গিয়ে অবতরণ-পথকে পিচ্ছিল করে দেয়। ফলে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হিমবাহ নেমে আসা আরও সহজ হয়ে যায়।
হিমবাহ বিভিন্ন আকারের হতে পারে। কিছু হিমবাহ কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ, আবার কিছু হিমবাহ কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ হতে পারে। হিমবাহ বিভিন্ন গতিতেও নড়তে পারে। কিছু হিমবাহ প্রতি বছর কয়েক মিটার নড়ে, আবার কিছু হিমবাহ প্রতি বছর কয়েকশ মিটার নড়ে।
হিমবাহ পৃথিবীর ভূ-দৃশ্যের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। হিমবাহ পাহাড় কেটে নতুন উপত্যকা তৈরি করে। হিমবাহ গলার ফলে তৈরি হয় নদী। হিমবাহের মাধ্যমে পাহাড় থেকে বিভিন্ন আকারের পাথর নীচে নেমে আসে। হিমবাহের গলার ফলে তৈরি জল নদীতে পরিণত হয়ে সমতলে বন্যা সৃষ্টি করে।
হিমবাহ পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হিমবাহ পৃথিবীর জলের একটি বৃহৎ ভাণ্ডার। হিমবাহ গলে জল সমুদ্রে চলে যায়, ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
হিমবাহ বলতে কী বোঝ?
আকাশ থেকে যে তুষারপাত হয়, সেই তুষার প্রকৃতিতে খুবই নরম। কিন্তু হিমরেখার ঊর্ধ্বে ক্রমশ জমা হওয়া তুষারের সম্মিলিত চাপে নীচের তুষার স্তর জমাটবেঁধে কঠিন বরফে পরিণত হয়। বরফের পরিমাণ যখন অনেক বেড়ে যায়, তখন তা ওপরের বরফের চাপে এবং পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে। খুব ধীরে ধীরে গড়িয়ে আসা সেই বরফের নদীকেই বলা হয় হিমবাহ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হিমবাহ যখন নামতে থাকে তখন নীচের দিকে প্রচণ্ড চাপ ও ঘর্ষণের জন্য হিমবাহের তলদেশে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায়। এর ফলে তলদেশের বরফ গলে গিয়ে অবতরণ-পথকে পিচ্ছিল করে দেয়। তখন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কঠিন বরফযুক্ত হিমবাহের নীচের দিকে নেমে আসা কিছুটা সহজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন – ব্রহ্মপুত্র নদীতে অসংখ্য দ্বীপ বা চড়ার সৃষ্টি হয়েছে কেন?
হিমবাহ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর
হিমবাহ কয় প্রকার ও কি কি?
হিমবাহ ৬ প্রকারের:
১. আল্পাইন হিমবাহ: পাহাড়ের নীচে উপত্যকায় বরফের নদী। ২. মহাদেশীয় হিমবাহ: স্থলভাগকে ঢেকে দেওয়া বিশাল বরফের চাদর (যেমন গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকা)। ৩. পর্বত হিমবাহ: পাহাড়ের উপরে জমা বরফ যা উপত্যকায় নেমে আসে (আল্পাইন হিমবাহের চেয়ে ছোট)। ৪. পাইডমন্ট হিমবাহ: পাহাড়ের পাদদেশে প্রসারিত বরফের আঙুল বা লোব (মহাদেশীয় হিমবাহের মতো)। ৫. আইস ক্যাপ: গম্বুজ বা মালভূমির আকারে এলাকা জুড়ে বরফের স্তর। ৬. রক গ্লেশিয়ার: ধীর গতিতে চলমান বরফ ও পাথরের তৈরি বরফের ভর (ঐতিহ্যবাহী হিমবাহের চেয়ে ভিন্ন)।
উপত্যকা হিমবাহ কাকে বলে?
উপত্যকা হিমবাহ হল এক ধরনের হিমবাহ যা পর্বতমালার উপত্যকা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এগুলি তখন তৈরি হয় যখন দীর্ঘ সময় ধরে তুষারপাত বরফের স্তর তৈরি করে, যা অবশেষে তার নিজের ওজনের কারণে পাহাড়ের নিচে নেমে যেতে শুরু করে।
হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ কে কি বলে?
হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদকে হিমবাহ হ্রদ বলে।
মহাদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে?
মহাদেশীয় হিমবাহ হল বিশাল বরফের চাদর যা স্থলভাগের বিস্তৃত অংশ ঢেকে দেয়। এগুলি পাহাড়ে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সমতল ভূমি ও মালভূমিতেও বিস্তৃত হতে পারে।
হিমবাহ বাহিত ক্ষয়জাত পদার্থ কি বলে?
হিমবাহ বাহিত ক্ষয়জাত পদার্থকে হিমবাহী বহন বলে। হিমবাহ যখন প্রবাহিত হয়, তখন এটি তার পথে নুড়ি, বালি, কাদামাটি এবং শিলা সহ বিভিন্ন আকারের খনিজ পদার্থ বহন করে। এই পদার্থগুলিকে হিমবাহী বহন বলা হয়।
হিমানী সম্প্রপাত কি?
হিমানী সম্প্রপাত হলো বরফ ও তুষারের বিশাল ভর যা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে দ্রুতগতিতে নেমে আসে। এটি তুষারপাত, বরফ গলার ফলে সৃষ্ট পানি, ভূমিকম্প, ঝড়, তীব্র বৃষ্টিপাত, বরফ ভাঙা ইত্যাদি কারণে হতে পারে। হিমানী সম্প্রপাত খুবই বিপজ্জনক এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে।
ভারতের বৃহত্তম হিমবাহের নাম কি?
ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ হল সিয়াচেন হিমবাহ। এটি কাশ্মীরের কারাকোরাম পর্বতমালার পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত।
সিয়াচেন হিমবাহ ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩.৫ কিলোমিটার প্রশস্ত। এটি ৫,৭৫৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং এর বরফের স্তরের পুরুত্ব ১,১০০ মিটার পর্যন্ত।
আজকের আলোচনায় আমরা হিমবাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেছি। হিমবাহ কী, কীভাবে তৈরি হয়, কত প্রকার হিমবাহ আছে, হিমবাহের প্রভাব কী, ইত্যাদি বিষয় আমরা আলোচনা করেছি।
এই বিষয়টি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই আলোচনার মাধ্যমে আপনারা হিমবাহ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করেছেন।
আশা করি এই আলোচনা আপনাদের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।