এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?
উনিশ শতকের বাংলার অবক্ষয়িত সমাজের এক জীবন্ত পটচিত্র ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’।
- লেখক – সাহিত্যসেবী কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতোম’ ছদ্মনামের আড়ালে এই প্রহসনটি রচনা করেন।
- প্রকাশ – 1861 খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির প্রথমভাগ ও 1863 খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির দ্বিতীয়ভাগ এবং সর্বোপরি 1868 খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’।

সমাজ চিত্র –
হুতোম প্যাঁচার নকশা উনিশ শতকের প্রথমার্ধে কলকাতার বাবু-কালচার এবং বাংলার অবক্ষয়িত সমাজ জীবনের এক অসাধারণ ও জীবন্ত দলিল। গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে ফুটে উঠেছে সমকালীন কলকাতার সমাজ জীবনের দুর্নীতি, কপটতা ও ভণ্ডামির বিরুদ্ধে শাণিত ব্যঙ্গ বিদ্রূপ। বাবু সমাজের গণিকাবিলাস, ভ্রুণ হত্যা, বিবিধ মাদক দ্রব্যের ব্যাপক আয়োজনকে ব্যাঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গীতে তুলে ধরা হয়েছে। দুর্গাপুজা, বারোয়ারি পূজা, চরক, রথ, স্নান যাত্রা প্রভৃতির নামে হিন্দু সমাজের ভণ্ডামি ও ভাঁড়ামির সমালোচনা করা. হয়েছে। যেখানেই তিনি ভণ্ডামি দেখেছেন, সেখানেই তীব্র বিদ্রুপ-বাণ বর্ষণ করেছেন। সমাজচেতনা, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের কষাঘাত, হাস্যরস-সবমিলিয়ে এটি বাংলা সাহিত্যের একটি অসামান্য গ্রন্থ। তাঁর আর এক বড়ো কৃতিত্ব হল, এই প্রথম সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলাকে সংস্কৃত শব্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাকে কথ্য ভাষায় হাজির করেছেন। ‘হুতোম’ -এর চলিত ভাষা ব্যবহারের নৈপুণ্য পাঠককে মুগ্ধ করে।
মন্তব্য –
লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ -কে কালোত্তীর্ণ করেছে। ভাষা-ভঙ্গি ও রঙ্গ মিলিয়ে গ্রন্থটি হয়ে উঠেছে ‘সরস, মিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী’।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি কে লিখেছেন?
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি লিখেছেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। তিনি ‘হুতোম’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে এই গ্রন্থটি রচনা করেন।
হুতোম প্যাঁচার নকশা কখন প্রকাশিত হয়?
গ্রন্থটির প্রথমভাগ প্রকাশিত হয় 1861 খ্রিস্টাব্দে, দ্বিতীয়ভাগ 1863 খ্রিস্টাব্দে এবং সম্পূর্ণ গ্রন্থরূপে প্রকাশিত হয় 1868 খ্রিস্টাব্দে।
হুতোম প্যাঁচার নকশায় কী ধরনের সমাজ চিত্র ফুটে উঠেছে?
এই গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার অবক্ষয়িত সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে। কলকাতার বাবু-কালচার, দুর্নীতি, ভণ্ডামি, কপটতা, গণিকাবিলাস, মাদকদ্রব্যের ব্যবহার, হিন্দু সমাজের ভণ্ডামি প্রভৃতি বিষয়গুলি ব্যঙ্গাত্মক ও তির্যক ভঙ্গীতে উপস্থাপিত হয়েছে।
হুতোম প্যাঁচার নকশায় কোন কোন সামাজিক অনুষ্ঠানের সমালোচনা করা হয়েছে?
গ্রন্থটিতে দুর্গাপূজা, বারোয়ারি পূজা, চরক, রথযাত্রা, স্নানযাত্রা প্রভৃতি সামাজিক অনুষ্ঠানের নামে হিন্দু সমাজের ভণ্ডামি ও ভাঁড়ামির সমালোচনা করা হয়েছে।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটির ভাষা কেমন?
এই গ্রন্থে লেখক সংস্কৃত ঘেঁষা বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত শব্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে কথ্য ভাষায় উপস্থাপন করেছেন। গ্রন্থটির ভাষা সরস, মিষ্ট ও হৃদয়গ্রাহী।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটির বিশেষত্ব কী?
এই গ্রন্থের বিশেষত্ব হল এর ব্যঙ্গাত্মক ও বিদ্রুপাত্মক ভাষা, সমাজচেতনা এবং হাস্যরস। এটি উনিশ শতকের বাংলার সমাজ জীবনের একটি জীবন্ত দলিল।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এই গ্রন্থটি উনিশ শতকের বাংলার সমাজের অবক্ষয়, ভণ্ডামি ও কপটতার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে। লেখকের রসবোধ, সাহিত্যগুণ এবং সমাজ সচেতনতাবোধ গ্রন্থটিকে কালোত্তীর্ণ করে তুলেছে।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে কী অবদান রেখেছে?
এই গ্রন্থটি বাংলা সাহিত্যে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে। এটি বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত শব্দের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে কথ্য ভাষায় প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি পাঠকদের কাছে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে?
গ্রন্থটির সরস ও মিষ্ট ভাষা, ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গি এবং সমাজচেতনা পাঠকদের মুগ্ধ করে। এটি পাঠকদের হাস্যরস ও চিন্তার খোরাক যুগিয়ে থাকে।
হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থটি কি শুধুমাত্র ব্যঙ্গাত্মক?
না, গ্রন্থটি শুধুমাত্র ব্যঙ্গাত্মক নয়, এটি সমাজের গভীর সমস্যাগুলিকে তুলে ধরে এবং সমাজ সচেতনতাবোধকে জাগ্রত করে।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “হুতোম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজ চিত্র পাওয়া যায়?” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় “সংস্কার – বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।