কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল – কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো। কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাস পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই “কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো। কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।“ প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ“ -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো। কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো।

ভূমিকা –

ঔপনিবেশিক আমলে সংঘটিত উপজাতী বিদ্রোহ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল কোল বিদ্রোহ। বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আদিবাসী কোলদের বসবাস ছিল। অত্যাচারিত কোলরা 1831-1832 খ্রিঃ শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে, যা কোল বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের কারণ-

  • ইজারাদারদের শোষণ – ব্রিটিশ কোম্পানি কর্তৃক নিযুক্ত নতুন ইজারাদারা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লোভে হত দরিদ্র কোলদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে শুরু করে।
  • মহাজনদের অত্যাচার – ব্যবসায়ী সুদখোর মহাজনরা অনেক ক্ষেত্রেই কোলদের ঠোঁড়িয়ে তাদের জমি থেকে উৎখাত করতো।
  • আফিম চাষ – কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক শাসকরা জোর করে তাদের আফিম চাষ করতে বাধ্য করতো। যা তারা মেনে নিতে পারেনি।
  • নির্যাতন – কোলদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালাতো। কোল নারীদের মর্যদা নষ্ট করা হতো এবং নানা অজুহাতে কোল পুরুষদের বন্দি করে রাখা হয়। এছাড়া রাস্তা তৈরিতে কোলদের বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা হত।

বিদ্রোহের সূচনা ও বিস্তার –

অবশেষে কোলরা 1831 খ্রিঃ বিদ্রোহ ঘোষণা করে। যা দ্রুত সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ, পালামৌ প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। বিদ্রোহী নেতার ছিলেন বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, বিন্দিরাই, মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।

ফলাফল –

লর্ড বেন্টিঙ্ক -এর নির্দেশে উইলকিনসন, কোল বিদ্রোহীদের নিষ্ঠুর হাতে দমন করে। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

  • পৃথক ভূখণ্ড সংরক্ষণ – কোল বিদ্রোহের পর কোলদের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে একটি আলাদা অঞ্চল 1834 খ্রিস্টাব্দে গঠন করা হয় এবং ঘোষণা করা হয়, ওই স্থানে ব্রিটিশ আইন কার্যকারী করা হবে না।
  • মহাজনদের বিতরণ – অসৎ ব্যবসায়ী, সুদখোর মহাজনদের ব্রিটিশ সরকার কোল অধ্যুষিত এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছিল।
  • জমির সংরক্ষণ – ভবিষ্যতে জমিদাররা যাতে অন্য কোন উপজাতির কৃষকদের জমি দখল করতে না পারে তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
  • প্রধানদের জমি ফেরত – কোল উপজাতির গ্রাম প্রধানদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া জমি ব্রিটিশরা শেষ পর্যন্ত ফেরত দিতে বাধ্য হয়।

কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • কোলরা ছিল আদিবাসী-উপজাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তাদের কাছে বহিরাগত ‘দিকু’ ও ইংরেজদের অত্যাচার থেকে মুক্তি ছিল স্বাধীনতার শামিল;
  • ছোটোনাগপুর অঞ্চলে অরণ্যের অধিকার রক্ষার প্রশ্নে কোলরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল;
  • বিদ্রোহী কোলরা নাকাড়া বাজিয়ে বা যুদ্ধের তির বিলি করে নিজেদের মধ্যে সাংকেতিক পদ্ধতিতে খবর আদান-প্রদান করত।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

কোল বিদ্রোহ কী?

কোল বিদ্রোহ (1831-1832) ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ছোটোনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসী কোল সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্রোহ। এটি মূলত শোষণ, জমি দখল ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল।

কোল বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

কোল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হল –
1. ইজারাদারদের শোষণ – ব্রিটিশদের নিযুক্ত ইজারাদাররা অতিরিক্ত কর আদায় করে কোলদের সর্বস্ব কেড়ে নিত।
2. মহাজনদের অত্যাচার – সুদখোর মহাজনরা কোলদের জমি দখল করত ও তাদের ঋণের জালে ফাঁসাত।
3. জোরপূর্বক আফিম চাষ – ব্রিটিশরা কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আফিম চাষে বাধ্য করত।
4. নারী নির্যাতন ও বেগার শ্রম – কোল নারীদের ওপর অত্যাচার ও পুরুষদের বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করা হত।

কোল বিদ্রোহের নেতৃত্ব কারা দিয়েছিলেন?

বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, বিন্দিরাই, মানকি ও সুই মুন্ডা প্রমুখ নেতারা এই বিদ্রোহকে সংগঠিত করেছিলেন।

কোল বিদ্রোহের ফলাফল কী ছিল?

কোল বিদ্রোহের ফলাফলগুলি হল –
1. দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি গঠন (1834) – কোলদের জন্য আলাদা অঞ্চল তৈরি করা হয় যেখানে ব্রিটিশ আইন প্রযোজ্য ছিল না।
2. মহাজনদের বিতাড়ন – শোষক মহাজনদের কোল অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
3. জমি ফেরত – কোল প্রধানদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
4. জমি সংরক্ষণ – উপজাতীয়দের জমি রক্ষার জন্য নতুন নিয়ম চালু করা হয়।

কোল বিদ্রোহ কি সফল হয়েছিল?

বিদ্রোহটি ব্রিটিশরা দমন করলেও এর প্রভাবে কোলদের জন্য পৃথক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গঠন করা হয় এবং তাদের অধিকারভাবে রক্ষা করা হয়।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো। কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “কোল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো। কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ইতিহাসের তৃতীয় অধ্যায় “প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ – বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্র দুটি লেখো।

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

কাচের স্ল্যাবের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে আপতিত ও নির্গত আলোকরশ্মি পরস্পরের সমান্তরাল। অথবা, দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?