কন্যাশ্রী প্রকল্প – প্রবন্ধ রচনা

Rahul

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করব। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় এই রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। একবার ভালোভাবে আয়ত্ত করলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি—যেকোনো ক্লাসের পরীক্ষাতেই তোমরা এই রচনার প্রশ্নের উত্তর সহজেই লিখতে পারবে।

কন্যাশ্রী প্রকল্প - প্রবন্ধ রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প – প্রবন্ধ রচনা

“আমরা তো জানি পৃথিবী রমণী আকাশ আদিম পুরুষ
তবে কেন তুমি আমার দুহাতে শেকল পরিয়ে রেখেছ?
হাজার বছর ধরে কেন তুমি সূর্য দেখতে দাওনি?”

– মল্লিকা সেনগুপ্ত

প্রেক্ষাপট –

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনার এক করুণ ইতিহাস। 2011 -র জনগণনায় দেখা গিয়েছে যে পশ্চিমবাংলায় বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীর মোট জনসংখ্যা 1 কোটি 73 লক্ষ। এর মধ্যে 48.11 শতাংশই হচ্ছে মেয়ে। কিন্তু এই যে বিপুল নারীশক্তি, তাদের জীবনবিকাশের পথ কিন্তু একেবারেই মসৃণ নয়। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং লিঙ্গগত বৈষম্যের শিকার হয়েই এদের বিরাট অংশকে জীবন কাটাতে হয়, অনেকেই হারিয়ে যায় সমাজের অন্ধকারে। 2007-2008 -এর সমীক্ষায় শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের নিরিখে ভারতের মধ্যে পশ্চিমবাংলার স্থান পঞ্চম। পরিসংখ্যান অনুসারে 18 বছরের কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে 54.7 শতাংশই দ্রুত বিবাহের শিকার। এই দ্রুতবিবাহের ফলে একদিকে যেমন এইসব মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনই তারা নানারকম অপুষ্টির শিকার হয়, যা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করে। সমাজের দুর্বল, পিছিয়ে পড়া এবং হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া এই মেয়েদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই 2013 খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয় – “To reduce dropout rate and prevent early marriage.

প্রকল্পের রূপরেখা –

নারী এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছিল যে, 13 থেকে 18 বছর বয়সি যে মেয়েদের পরিবারের বার্ষিক আয় 1 লক্ষ 20 হাজার টাকা বা তার কম, তারা বছরে 500 টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবে এবং 18 বছর অবধি পড়া চালিয়ে গেলে 18 বছর বয়সে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার এককালীন 25 হাজার টাকা প্রদান করবে। 2015 খ্রিস্টাব্দের রাজ্য বাজেটে এই বৃত্তির পরিমাণ 500 টাকা থেকে বাড়িয়ে 750 টাকা করা হয়েছে। 2018 খ্রিস্টাব্দে ‘কন্যাশ্রী’র পঞ্চম বার্ষিকীতে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে এই প্রকল্পের জন্য আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। অর্থাৎ সব কন্যাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা আজও যথেষ্ট, সেখানে মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষায় এই প্রকল্প যে যথেষ্ট কার্যকরী তা বলাই বাহুল্য। কন্যাশ্রীর উদ্দেশ্য হল কন্যাসন্তানকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রথাগত বা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করা, অন্তত 18 বছর বয়স পর্যন্ত তাদের বিবাহকে বিলম্বিত করা এবং তার আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা। সরকারি তথ্য অনুসারে প্রায় 56 লক্ষেরও বেশি মেয়ে ইতিমধ্যেই এর দ্বারা উপকৃত হয়েছে।

সম্মান ও স্বীকৃতি –

কন্যাশ্রী প্রকল্প দেশ এবং দেশের বাইরে একাধিক শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে। 2014 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কন্যাশ্রী পেয়েছে মন্থর অ্যাওয়ার্ড। 2014 -2015 -তে পেয়েছে ভারত সরকারের ই-গভর্ননেন্স অ্যাওয়ার্ড। 2014 -তে গার্ল সামিট-এ কন্যাশ্রী প্রকল্পকে বলা হয়েছে “best practice amongst several international initiatives for the girl child.” তবে কন্যাশ্রীর মুকুটে শ্রেষ্ঠ পালকটি সংযোজিত হয়েছে 2017 খ্রিস্টাব্দের 23 জুন। রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে জনপরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতিতে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেল কন্যাশ্রী প্রকল্প। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও একবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল বাংলার সাফল্য।

উপসংহার –

কিং উইলিয়াম আলেকজান্ডার হলে রাষ্ট্রসংঘের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন – “প্রতিটি কন্যাশ্রী মেয়ে আজ গর্ববোধ করছে।” কন্যাশ্রী আসলে বাংলার মেয়েদের কাছে গর্ব আর প্রত্যয়ের প্রতিশব্দ।


আজকের এই আর্টিকেলে আমরা ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে আলোচনা করেছি। মাধ্যমিক বা স্কুল পরীক্ষায় ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ রচনাটি প্রায়ই আসে এবং এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা।

আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি অচল পয়সার আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি প্রাচীন বটগাছের আত্মকথা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি মেলা দেখার অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – চলতড়িৎ – গাণিতিক উদাহরণ

বায়ুর সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির বর্ণনা দাও।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – আলো – আলোর প্রতিফলন ও দর্পণ

রৈখিক ভরবেগের সংরক্ষণ সূত্র থেকে নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র প্রমাণ করো।

প্রতিসরণ কোণ কাকে বলে? কাচফলকে প্রতিসরণের ফলে আলোকরশ্মির চ্যুতি হয় না কেন?