কন্যাশ্রী প্রকল্প – প্রবন্ধ রচনা

আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কে। প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষায় বা স্কুলের পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। কন্যাশ্রী প্রকল্প প্রবন্ধ রচনা একটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এই রচনাটি আপনি যদি একবার মুখস্ত করতে পারেন, তাহলে ক্লাস ৬ থেকে ১২ পর্যন্ত যেকোনো পরীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

কন্যাশ্রী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি উদ্যোগ যা রাজ্যের মেয়েদের শিক্ষাগত ও সামাজিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী মেয়েরা যারা স্কুলে ভর্তি এবং বিবাহিত নয় তারা আর্থিক সহায়তা পায়। এই সহায়তা তাদের শিক্ষাগত খরচ বহন করতে এবং তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে।

কন্যাশ্রী প্রকল্প – প্রবন্ধ রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প - প্রবন্ধ রচনা

“আমরা তো জানি পৃথিবী রমণী আকাশ আদিম পুরুষ
তবে কেন তুমি আমার দুহাতে শেকল পরিয়ে রেখেছ?
হাজার বছর ধরে কেন তুমি সূর্য দেখতে দাওনি?”

– মল্লিকা সেনগুপ্ত

প্রেক্ষাপট –

কন্যাশ্রী প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে রয়েছে সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনার এক করুণ ইতিহাস। ২০১১-র জনগণনায় দেখা গিয়েছে যে পশ্চিমবাংলায় বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর-কিশোরীর মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭৩ লক্ষ। এর মধ্যে ৪৮.১১ শতাংশই হচ্ছে মেয়ে। কিন্তু এই যে বিপুল নারীশক্তি, তাদের জীবনবিকাশের পথ কিন্তু একেবারেই মসৃণ নয়। দারিদ্র্য, অশিক্ষা, কুসংস্কার এবং লিঙ্গগত বৈষম্যের শিকার হয়েই এদের বিরাট অংশকে জীবন কাটাতে হয়, অনেকেই হারিয়ে যায় সমাজের অন্ধকারে। ২০০৭-০৮-এর সমীক্ষায় শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ের নিরিখে ভারতের মধ্যে পশ্চিমবাংলার স্থান পঞ্চম। পরিসংখ্যান অনুসারে ১৮ বছরের কম বয়সি মেয়েদের মধ্যে ৫৪.৭ শতাংশই দ্রুত বিবাহের শিকার। এই দ্রুতবিবাহের ফলে একদিকে যেমন এইসব মেয়েরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনই তারা নানারকম অপুষ্টির শিকার হয়, যা পরবর্তী প্রজন্মকেও প্রভাবিত করে। সমাজের দুর্বল, পিছিয়ে পড়া এবং হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া এই মেয়েদের আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার চালু করে কন্যাশ্রী প্রকল্প, যার ঘোষিত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয় – “To reduce dropout rate and prevent early marriage.

প্রকল্পের রূপরেখা –

নারী এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছিল যে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সি যে মেয়েদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার কম, তারা বছরে ৫০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য পাবে এবং ১৮ বছর অবধি পড়া চালিয়ে গেলে ১৮ বছর বয়সে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার এককালীন ২৫ হাজার টাকা প্রদান করবে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের রাজ্য বাজেটে এই বৃত্তির পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা করা হয়েছে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে ‘কন্যাশ্রী’র পঞ্চম বার্ষিকীতে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে এই প্রকল্পের জন্য আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা থাকবে না। অর্থাৎ সব কন্যাই কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবে। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা আজও যথেষ্ট, সেখানে মেয়েদের সামাজিক সুরক্ষায় এই প্রকল্প যে যথেষ্ট কার্যকরী তা বলাই বাহুল্য। কন্যাশ্রীর উদ্দেশ্য হল কন্যাসন্তানকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রথাগত বা কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করা, অন্তত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের বিবাহকে বিলম্বিত করা এবং তার আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক মর্যাদাবোধ জাগিয়ে তোলা। সরকারি তথ্য অনুসারে প্রায় ৫৬ লক্ষেরও বেশি মেয়ে ইতিমধ্যেই এর দ্বারা উপকৃত হয়েছে।

সম্মান ও স্বীকৃতি –

কন্যাশ্রী প্রকল্প দেশ এবং দেশের বাইরে একাধিক শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছে। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ এশিয়া এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নের জন্য কন্যাশ্রী পেয়েছে মন্থর অ্যাওয়ার্ড। ২০১৪-১৫-তে পেয়েছে ভারত সরকারের ই-গভর্ননেন্স অ্যাওয়ার্ড। ২০১৪-তে গার্ল সামিট-এ কন্যাশ্রী প্রকল্পকে বলা হয়েছে “best practice amongst several international initiatives for the girl child.” তবে কন্যাশ্রীর মুকুটে শ্রেষ্ঠ পালকটি সংযোজিত হয়েছে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন। রাষ্ট্রসংঘের মঞ্চে জনপরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বীকৃতিতে শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার পেল কন্যাশ্রী প্রকল্প। আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও একবার উজ্জ্বল হয়ে উঠল বাংলার সাফল্য।

উপসংহার –

কিং উইলিয়াম আলেকজান্ডার হলে রাষ্ট্রসংঘের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে পুরস্কার গ্রহণের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন – “প্রতিটি কন্যাশ্রী মেয়ে আজ গর্ববোধ করছে।” কন্যাশ্রী আসলে বাংলার মেয়েদের কাছে গর্ব আর প্রত্যয়ের প্রতিশব্দ।

পরিশেষে বলা যায়, কন্যাশ্রী প্রকল্প কেবলমাত্র একটি সরকারি উদ্যোগ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক বিপ্লব। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের সামাজিক মর্যাদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কন্যাশ্রী প্রাপ্ত মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে আজ দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করছে।

তবে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা সমাধান করা প্রয়োজন। যেমন, কিছু পরিবার এখনও মেয়েদের শিক্ষার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে। আবার, কিছু গ্রামাঞ্চলে এখনও পর্যাপ্ত স্কুল ও কলেজ নেই।

সরকারের উচিত এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধানের জন্য আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমাজের সকল স্তরের মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং মেয়েদের শিক্ষার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

সর্বোপরি, কন্যাশ্রী প্রকল্প একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা বাংলার মেয়েদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।

Share via:

মন্তব্য করুন