ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু কী? ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

Souvick

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু কী? ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু কী?

ক্ষারধাতু – লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs) এবং ফ্রান্সিয়াম (Fr) এই ধাতুগুলি তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মকধর্মী এবং এদের অক্সাইড তীব্র ক্ষারীয়। এদের মধ্যে ফ্রান্সিয়াম তেজস্ক্রিয় এবং স্বল্পস্থায়ী। তাই এই ধাতুগুলিকে ক্ষারধাতু বলে।

ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু – বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেশিয়াম (Mg), ক্যালশিয়াম (Ca), স্ট্রনশিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba), রেডিয়াম (Ra) এই ধাতুগুলির পরমাণুর সর্ববহিস্থ কক্ষে 2টি ইলেকট্রন আছে। এই ধাতুগুলি তড়িৎ-ধনাত্মক ধর্মী ও এদের অক্সাইড ক্ষারীয়। এদের মধ্যে রেডিয়াম তেজস্ক্রিয়। এই ধাতুগুলিকে ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু বলা হয়।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য –

ক্ষার ধাতুক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু
এদের যোজ্যতা কক্ষে 1টি ইলেকট্রন বর্তমান।এদের যোজ্যতা কক্ষে 2টি ইলেকট্রন বর্তমান।
এই মৌলগুলির আকার বড়ো এবং বেশি ধাতব প্রকৃতির।এই মৌলগুলির আকার তুলনামূলকভাবে ছোটো এবং কম ধাতব প্রকৃতির।
এদের অক্সাইডগুলির সাধারণ সংকেত P2O এবং ক্লোরাইডগুলির সাধারণ সংকেত PCl।এদের অক্সাইডগুলির সাধারণ সংকেত QO এবং ক্লোরাইডগুলির সাধারণ সংকেত QCl2

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু কাদের বলে?

ক্ষার ধাতু – পর্যায় সারণির প্রথম গ্রুপের (IA) মৌলসমূহ, যথা – লিথিয়াম (Li), সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K), রুবিডিয়াম (Rb), সিজিয়াম (Cs) এবং ফ্রান্সিয়াম (Fr)। এদের অক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে তীব্র ক্ষারকীয় দ্রবণ তৈরি করে, তাই এদের ক্ষার ধাতু বলে।
ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু – পর্যায় সারণির দ্বিতীয় গ্রুপের (IIA) মৌলসমূহ, যথা – বেরিলিয়াম (Be), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), ক্যালসিয়াম (Ca), স্ট্রনশিয়াম (Sr), বেরিয়াম (Ba) এবং রেডিয়াম (Ra)। এদের অক্সাইডগুলোও ক্ষারকীয় প্রকৃতির এবং প্রাকৃতিকভাবে মৃত্তিকায় (মাটিতে) খনিজ হিসেবে পাওয়া যায়, তাই এদের ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু বলে।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে কোন কোন মৌলগুলো তেজস্ক্রিয়?

ক্ষার ধাতুগুলোর মধ্যে ফ্রান্সিয়াম (Fr) একটি তেজস্ক্রিয় ও স্বল্পস্থায়ী মৌল।
ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুগুলোর মধ্যে রেডিয়াম (Ra) একটি তেজস্ক্রিয় মৌল।

‘ক্ষার’ ধাতু কেন বলা হয়?

এই ধাতুগুলোর অক্সাইড ও হাইড্রোক্সাইড জলে দ্রবীভূত হয়ে শক্তিশালী ক্ষারক তৈরি করে (যেমন – NaOH, KOH), যা লিটমাসকে নীল করে। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই এদের ক্ষার ধাতু বলা হয়েছে।

ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু বলতে কী বোঝায়?

“ক্ষারীয়” শব্দটি এসেছে এদের অক্সাইডের ক্ষারকীয় প্রকৃতি থেকে।
“মৃত্তিকা” শব্দটি এসেছে এই কারণে যে এই ধাতুগুলোর যৌগ (যেমন – অক্সাইড, কার্বোনেট) প্রাচীনকাল থেকেই প্রকৃতিতে মাটিতে খনিজ আকারে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল –
1. যোজ্যতা ইলেকট্রনের সংখ্যা – ক্ষার ধাতুগুলোর যোজ্যতা কক্ষে (বহিঃস্থ কক্ষে) 1টি ইলেকট্রন থাকে, যেখানে ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুগুলোর যোজ্যতা কক্ষে 2টি ইলেকট্রন থাকে।
2. ধাতব প্রকৃতি – ক্ষার ধাতুগুলোর আকার তুলনামূলকভাবে বড় হওয়ায় এদের ধাতব বৈশিষ্ট্য বেশি। ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুগুলোর আকার ছোট হওয়ায় এদের ধাতব বৈশিষ্ট্য তুলনামূলকভাবে কম।
3. যৌগের সংকেত – ক্ষার ধাতুগুলোর অক্সাইডের সাধারণ সংকেত M₂O (যেমন – Na₂O) এবং ক্লোরাইডের সাধারণ সংকেত MCl (যেমন – KCl)। ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুগুলোর অক্সাইডের সাধারণ সংকেত MO (যেমন – CaO) এবং ক্লোরাইডের সাধারণ সংকেত MCl₂ (যেমন – MgCl₂)।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতু কী? ক্ষার ধাতু ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা ধাতুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় “পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ” -এর “পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততা” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটে তা ক্যাথোড ও অ্যানোডে বিক্রিয়াসমূহ লেখো।

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে তা ব্যাখ্যা করো। অথবা, কপার তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেটের (CuSO₄) জলীয় দ্রবণের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো এবং অ্যানোডে কী বিক্রিয়া হয় লেখো।

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

About The Author

Souvick

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

প্লাটিনাম তড়িদ্দ্বারে কপার সালফেটের দ্রবণ তড়িৎবিশ্লেষণ করলে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী বিক্রিয়া ঘটে?

কপার তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের তড়িৎবিশ্লেষণ করলে কী ঘটনা ঘটবে?

গলিত খাদ্য লবণের তড়িৎবিশ্লেষণে ক্যাথোড ও অ্যানোডে কী কী উৎপন্ন হয় তা ব্যাখ্যা করো।

Pt ক্যাথোড ও গ্রাফাইট অ্যানোডে গলিত AlCl₃-এর তড়িদ্বিশ্লেষণে কী ঘটে? ক্যাথোড ও অ্যানোডের বিক্রিয়া লেখো।

তড়িৎবিশ্লেষণের আয়নীয় উদাহরণসহ ব্যাখ্যা দাও।