নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে লিখো

Gopi

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে আলোচনা করবো নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে। এই প্রশ্নটি দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি মাধ্যমিক ভূগোলের প্রথম অধ্যায়, বহির্জাত প্রক্রিয়া ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে, বহির্জাত প্রক্রিয়া ও নদীর কাজ দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপ বিভাগের প্রশ্ন হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন ভূমিরূপ সম্পর্কে ভালোভাবে জানলে, পরীক্ষার সময় এই প্রশ্নটি সহজেই লিখে আসতে পারবেন।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ সম্পর্কে লিখো

নদী তার প্রবাহের ফলে ভূমির উপর বিভিন্ন ধরনের ক্ষয়কার্য করে। এই ক্ষয়কার্যের ফলে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। নদীর ক্ষয়কার্য প্রধানত তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায় –

  1. নিম্নক্ষয় (Erosion by Hydraulic Action) – নদীর তীব্র স্রোত পাথর, বালি, কাদা ইত্যাদি ক্ষয়িত পদার্থকে সাথে নিয়ে বহন করে। এই ক্ষয়িত পদার্থ নদীর তলদেশে আঘাত করে নদীর তলদেশকে নিচু করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে নিম্নক্ষয় বলে।
  2. পার্শ্বক্ষয় (Erosion by Lateral Action) – নদীর স্রোত তার দুই তীরকে ক্ষয় করে। এই ক্ষয়ের ফলে নদীর উপত্যকা প্রশস্ত হয়।
  3. ঘাতক্ষয় (Erosion by Abrasion) – নদীর বহনকৃত ক্ষয়িত পদার্থ নদীর তলদেশে বা পার্শ্বদেশের শিলাস্তরে আঘাত করে। এই আঘাতের ফলে শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।

নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  1. গিরিখাত (Canyon) – পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে নিম্নক্ষয়ের ফলে গভীর ও সংকীর্ণ উপত্যকা গঠিত হয়। এই উপত্যকাকে গিরিখাত বলে।
  2. খাদ (Gully) – পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে পার্শ্বক্ষয়ের ফলে গভীর ও দীর্ঘ খাদ গঠিত হয়।
  3. ফাটল (Fissure) – পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে পার্শ্বক্ষয়ের ফলে ছোট ছোট ফাটল গঠিত হয়।
  4. পটহোল (Sinkhole) – পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে পার্শ্বক্ষয়ের ফলে বর্গাকার বা বৃত্তাকার গর্ত গঠিত হয়। এই গর্তকে পটহোল বলে।
  5. জলপ্রপাত (Waterfall) – পার্বত্য অঞ্চলে নদীর উচ্চগতিতে নিম্নক্ষয়ের ফলে নদীর প্রবাহের পথে উঁচু প্রাচীরের সৃষ্টি হলে সেই প্রাচীর থেকে জলধারা ঝরে পড়লে তাকে জলপ্রপাত বলে।

গতিতে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

  1. বাঁধ (Dam) – নদীর মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয় এবং নদীর তলদেশে পলি জমা হয়।
  2. প্লাবনভূমি (Floodplain) – নদীর মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে নদীর বার্ষিক প্লাবনের ফলে নদীর দুই তীরবর্তী এলাকায় পলি জমে প্লাবনভূমি গঠিত হয়।
  3. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Oxbow Lake) – নদীর মধ্যগতি ও নিম্নগতিতে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে নদীর মধ্যভাগের অংশ থেকে পলি জমে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ গঠিত হয়।
  4. ত্রিকোণ পললভূমি (Delta) – নদীর নিম্নগতিতে সমুদ্রের মোহনায় নদীর বার্ষিক প্লাবনের ফলে ত্রিকোণ আকৃতির পললভূমি গঠিত হয়। এই পললভূমিকে ত্রিকোণ পললভূমি বা ডেল্টা বলে।

উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী তার গতিপথে তিনটি কাজ করে – ক্ষয়, বহন এবং সঞ্চয়। এগুলির মধ্যে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয় সেগুলি হল:

‘I’ আকৃতির উপত্যকা বা ক্যানিয়ন –

শুষ্ক ও প্রায় শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ‘I’ আকৃতির নদী উপত্যকার সৃষ্টি হয়। কারণ, বৃষ্টিপাতের স্বল্পতার জন্য নদী উপত্যকাগুলির পার্শ্বদেশের বিস্তার কম, কিন্তু ভূমির ঢাল বেশি হওয়ায় নদীগুলির নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এজন্য নদী উপত্যকা সংকীর্ণ ও গভীর হয়ে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো দেখতে হয়। গভীর ‘I’ আকৃতির উপত্যকাকে ক্যানিয়ন বলা হয়, যেমন – কলোরাডো নদীর গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন (গভীরতা প্রায় 1800 মি)।

'I' আকৃতির উপত্যকা

‘V’ আকৃতির উপত্যকা ও গিরিখাত –

আর্দ্র ও আর্দ্রপ্রায় অঞ্চলে নদীর ঊর্ধ্ব বা পার্বত্য প্রবাহে ভূমির ঢাল অধিক থাকায় নদীগুলি প্রবলভাবে নিম্নক্ষয় করে। এরূপ নিম্নক্ষয়ের কারণে নদী উপত্যকাগুলি যেমন একদিকে গভীর হয়ে ওঠে তেমনি আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ইত্যাদির প্রভাবে কিছু পরিমাণ পার্শ্বক্ষয়ও চলে। ফলে নদী উপত্যকা পূর্বাপেক্ষা চওড়া হয়ে ‘V’ আকৃতি ধারণ করে। অতিগভীর ‘V’ আকৃতির উপত্যকাকে বলা হয় গিরিখাত, যেমন – নেপালের কালী নদীর গিরিখাত।

V - আকৃতির উপত্যকা

জলপ্রপাত

নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর ওপর নীচে আড়াআড়িভাবে থাকলে প্রবল স্রোতে কঠিন ও কোমল শিলার সন্ধিস্থল উন্মুক্ত হয় এবং ওপরের কঠিন শিলাস্তর ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হলে নীচের কোমল শিলাস্তর বেরিয়ে আসে। কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয় পাওয়ার কারণে নদীস্রোত হঠাৎ খাড়া ঢাল সৃষ্টি করে প্রবল বেগে নীচে পড়ে। একে বলা হয় জলপ্রপাত। উদাহরণ – ভেনেজুয়েলার কারাও (Carrao) নদীর শাখাপথে সৃষ্ট আঞ্জেল প্রপাতটি পৃথিবীর উচ্চতম জলপ্রপাত।

অনুভূমিক শিলাস্তরে (কঠিন ও কোমল) জলপ্রপাত সৃষ্টি

পটহোল বা মন্ত্ৰকূপ

প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত বড়ো বড়ো পাথরের সঙ্গে নদীখাতের সংঘর্ষের (মূলত অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায়) ফলে অধিকাংশ উচ্চপ্রবাহযুক্ত নদীর বুকে মাঝে মাঝে যে গোলাকার গর্ত সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে বলা হয় পটহোল বা মন্থকূপ। উদাহরণ – দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লাইড নদীখাতে অনেকগুলি মন্থকূপের সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তা নদীর পার্বত্য প্রবাহেও মন্থকূপ দেখা যায়।

নদীর বুকে ছোটো ছোটো গর্ত বা 'পটহোল'

অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা

পার্বত্য অঞ্চলে অনেক সময় কঠিন শিলাগঠিত পাহাড় বা শৈলশিরাসমূহ নদীর গতিপথে এমনভাবে বাধার সৃষ্টি করে যে, সেই বাধা এড়াতে নদী শৈলশিরাগুলির পাদদেশ ক্ষয় করে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। তখন পরপর ওই শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন ওগুলি একত্রে সংবদ্ধ হয়ে আছে, একে বলা হয় অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা।

অন্তর্বদ্ধ শৈলশিরা

কর্তিত শৈলশিরা

পার্বত্য প্রবাহে নদী উপত্যকার দুই পাশের বহিঃপ্রসূত বা নদীর দিকে বেরিয়ে থাকা শৈলশিরাগুলি নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে ক্রমশ মসৃণ হয়ে যায়, এই ধরনের শৈলশিরাগুলিকে বলে কর্তিত শৈলশিরা। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে তিস্তা, তোর্সা, মহানন্দা প্রভৃতি নদীর গতিপথে এই ধরনের শৈলশিরা দেখা যায়।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer