এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি –
অবস্থান – উত্তর ভারতের সুবিশাল সমভূমি ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির মাঝখানে এই ভূপ্রাকৃতিক বিভাগটি অবস্থিত। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও ওড়িশার কিছু কিছু অংশ নিয়ে এই ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলটি গঠিত।
উৎপত্তি – এই অংশটি প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশ বিশেষ। আর্কিয়ান যুগের অতিপ্রাচীন নিস ও শিস্ট জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত। এটি একটি প্রাচীন শিল্ড অঞ্চল। সমগ্র ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলটিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- মধ্যভারতের উচ্চভূমি।
- পূর্বভারতের উচ্চভূমি।
মধ্যভারতের উচ্চভূমি –
অবস্থান – পূর্বে রেওয়া মালভূমি, পশ্চিমে আরাবল্লি পর্বত এবং দক্ষিণে নর্মদা নদী উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভূপ্রকৃতি – ভূপ্রকৃতিগত পার্থক্য অনুসারে সমগ্র ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চলটিকে আটটি ভাগে ভাগ করা যায় –
- আরাবল্লি পর্বত – প্যালিওজোয়িক যুগের এই প্রাচীনতম ভঙ্গিল পর্বতটি বর্তমানে ক্ষয়জাত পর্বতে পরিণত হয়েছে। এর গড় উচ্চতা 600-900 মিটার। লুনি এবং বানস্ নদী আরাবল্লিকে ব্যবচ্ছিন্ন করেছে। মাউন্ট আবুর গুরুশিখর (1722 মিটার) এখানকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ।
- পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমি – আরাবল্লি পর্বতের পূর্বদিকে এই উচ্চভূমি অবস্থিত। তরঙ্গায়িত এই মালভূমিকে মারওয়ার উচ্চভূমি বলে।
- মধ্যভারতের মালভূমি – কাদাপাথর ও বেলেপাথর দ্বারা গঠিত এই অঞ্চলটি দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্বে ঢালু এবং গড় উচ্চতা 250-500 মিটার।
- বুন্দেলখণ্ড উচ্চভূমি – গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত অঞ্চলটির ভূমিরূপ গোলাকৃতি এবং দক্ষিণ থেকে উত্তরে (300-100 মিটার) ঢালু।
- মালব মালভূমি – আরাবল্লি ও বিন্ধ্য পর্বতের মাঝে অবস্থিত এই মালভূমি লাভা দ্বারা গঠিত। এই অঞ্চলের ভূমিভাগ চ্যাপটা প্রকৃতির।
- রেওয়া মালভূমি – বুন্দেলখণ্ড মালভূমি ও শোন নদীর মাঝে অবস্থিত এই মালভূমিটি পশ্চিম থেকে পূর্বে ধাপে ধাপে নেমে এসেছে। দক্ষিণের বৃহৎ খাড়া ঢালটি কাইমুর পাহাড় নামে পরিচিত।
- বিন্ধ্যপর্বত – নর্মদার উত্তরাংশে অবস্থিত বিন্ধ্য পর্বতের গড় উচ্চতা 300 মিটারের মধ্যে। এর পশ্চিমাংশ লাভা দ্বারা গঠিত এবং পূর্বাংশ কাদাপাথর, বেলেপাথর, মার্বেল কোয়ার্টজাইট শিলা দ্বারা গঠিত।
- নর্মদা উপত্যকা – বিন্ধ্য পর্বত ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যবর্তী নর্মদা উপত্যকা একটি গ্রস্ত উপত্যকা, এর মধ্য দিয়ে নর্মদা নদী পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি –
অবস্থান – পূর্বে ছোটোনাগপুর মালভূমি থেকে পশ্চিমে বাঘেলখণ্ড মালভূমি এবং দক্ষিণে দণ্ডকারণ্য পর্যন্ত এই উচ্চভূমিটি বিস্তৃত।
ভূপ্রকৃতি – ভূ-প্রাকৃতিক পার্থক্য অনুসারে এই অঞ্চলটিকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা –
- বাঘেলখণ্ড উচ্চভূমি – শোন নদীর দক্ষিণাংশের এই উচ্চভূমিটি পাললিক ও গ্রানাইট শিলা দ্বারা গঠিত। এই অংশের গড় উচ্চতা 400-600 মিটার।
- ছত্তিশগড় উচ্চভূমি – ওড়িশা ও ছত্তিশগড় রাজ্যে অবস্থিত এই মালভূমিটি মহানদী অববাহিকা নামে পরিচিত। এর গড় উচ্চতা 250-300 মিটার। এই অঞ্চলটি চুনাপাথর ও কাদাপাথর দ্বারা গঠিত।
- দণ্ডকারণ্য মালভূমি – ছত্তিশগড়ের দক্ষিণদিকে এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অবস্থিত। এখানকার গড়জাত পার্বত্য অঞ্চলে কেওনঝাড়, বোনাই, সিমলিপাল পাহাড় অবস্থিত।
- ছোটোনাগপুর মালভূমি – বাঘেলখণ্ড উচ্চভূমির পূর্বদিকে মূলত ঝাড়খণ্ড রাজ্য অবস্থিত। এই ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিটি প্রধানত গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর
মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর ভারতের সমভূমি ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যবর্তী অঞ্চলে এই উচ্চভূমি অবস্থিত। এটি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও ওড়িশার কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত।
মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল?
এটি প্রাচীন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের অংশবিশেষ এবং আর্কিয়ান যুগের নিস ও শিস্ট জাতীয় শিলা দ্বারা গঠিত। এটি একটি প্রাচীন শিল্ড অঞ্চল।
মধ্য ভারতের উচ্চভূমিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
মধ্য ভারতের উচ্চভূমিকে আটটি ভাগে ভাগ করা যায় –
1. আরাবল্লি পর্বত।
2. পূর্ব রাজস্থান উচ্চভূমি।
3. মধ্যভারতের মালভূমি।
4. বুন্দেলখণ্ড উচ্চভূমি।
5. মালব মালভূমি।
6. রেওয়া মালভূমি।
7. বিন্ধ্য পর্বত।
8. নর্মদা উপত্যকা।
আরাবল্লি পর্বতের বৈশিষ্ট্য কী?
1. এটি প্যালিওজোয়িক যুগের প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বত।
2. বর্তমানে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে।
3. গড় উচ্চতা 600-900 মিটার।
4. সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গুরুশিখর (1722 মিটার) মাউন্ট আবুতে অবস্থিত।
নর্মদা উপত্যকার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য কী?
1. এটি একটি গ্রস্ত উপত্যকা (rift valley)।
2. বিন্ধ্য ও সাতপুরা পর্বতের মধ্যে অবস্থিত।
3. নর্মদা নদী এখানে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়েছে।
পূর্ব ভারতের উচ্চভূমিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায়?
চারটি ভাগে –
1. বাঘেলখণ্ড উচ্চভূমি।
2. ছত্তিশগড় উচ্চভূমি (মহানদী অববাহিকা)।
3. দণ্ডকারণ্য মালভূমি।
4. ছোটোনাগপুর মালভূমি।
ছোটোনাগপুর মালভূমির বৈশিষ্ট্য কী?
1. এটি গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।
2. ঝাড়খণ্ড রাজ্যের প্রধান অংশ জুড়ে বিস্তৃত।
3. এটি একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি (dissected plateau)।
4. এখানে পারস্নাথ পাহাড়, রাঁচি মালভূমি ইত্যাদি রয়েছে।
দণ্ডকারণ্য মালভূমির প্রধান পাহাড়গুলি কী কী?
1. কেওনঝাড় পাহাড়।
2. বোনাই পাহাড়।
3. সিমলিপাল পাহাড়।
বিন্ধ্য পর্বতের গঠন কেমন?
1. গড় উচ্চতা 300 মিটার।
2. পশ্চিমাংশ লাভা দ্বারা গঠিত।
3. পূর্বাংশ কাদাপাথর, বেলেপাথর, মার্বেল ইত্যাদি দ্বারা গঠিত।
এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন — “মধ্য ও পূর্ব ভারতের উচ্চভূমির ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।” — নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের পঞ্চম অধ্যায় “ভারতের প্রাকৃতিক পরিবেশ” -এর “ভারতের ভূপ্রকৃতি” অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় এই প্রশ্নটি প্রায়ই আসে, তাই এটি শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন