দশম শ্রেণি – বাংলা – আফ্রিকা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi

আফ্রিকা কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা রচিত একটি মানবতাবাদী কবিতা। এই কবিতায় কবি আফ্রিকার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং বর্তমান অবস্থার উপর আলোকপাত করেছেন।

দশম শ্রেণি – বাংলা – আফ্রিকা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

আফ্রিকা কবিতা অবলম্বনে আফ্রিকার মানুষদের ওপরে ঔপনিবেশিক প্রভুদের অত্যাচারের বর্ণনা দাও। সেই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদ কীভাবে উচ্চারিত হয়েছে লেখো।

ঔপনিবেশিক প্রভুদের অত্যাচার – রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি আফ্রিকার ওপরে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির অত্যাচারের এক মানবিক দলিল। আদিমতার অন্ধকারে ঢাকা আফ্রিকা একসময় ছিল সভ্যসমাজের কাছে ভয়ংকর। কিন্তু কালক্রমে আফ্রিকার প্রতি অবহেলা দূর হয়ে গিয়ে তার মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের দিকটি চোখ পড়ে সভ্য দুনিয়ার। আর তখনই নখদাঁত বিস্তার করা হিংস্রতার শিকার হতে হয় আফ্রিকাকে। প্রথমপর্বে গর্বিত ইউরোপীয় দেশগুলি আফ্রিকাকে বেছে নিয়েছিল ক্রীতদাস সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে – এল মানুষ-ধরার দল/ গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে। তারপরে আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ আকৃষ্ট করল তাদের – সভ্যের বর্বর লোভ/নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা। আর এভাবেই লাঞ্ছিত হল মানবতা। আফ্রিকার মাটি পঙ্কিল হল মানুষের রক্ত আর চোখের জলে। অত্যাচার চিরস্থায়ী ক্ষতচিহ্ন তৈরি করে দিল আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।

অত্যাচারের বিরুদ্ধে কবির প্রতিবাদ – কবি রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকার ওপরে অত্যাচারের কাহিনিকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অপমানিত আফ্রিকার প্রতি নিজের সহানুভূতি জানিয়েছেন। ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার ওপর অবিচারকে স্পষ্টতর করে তুলতেই কবি বিপরীতে তুলে ধরেছেন সমুদ্রপারের দেশগুলির নিশ্চিন্ত শান্ত দিন কাটানোর কথা। এখানেই না-থেমে কবি ‘দিনের অন্তিমকাল’ ঘোষণার মুহূর্তে সভ্যতায় সংকটের মুখোমুখি হয়ে যুগান্তের কবিকে বলেছেন ক্ষমাপ্রার্থনা করার জন্য। হিংস্র প্রলাপের মধ্যে এই ক্ষমাপ্রার্থনাকেই রবীন্দ্রনাথ ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’ বলেছেন।

আফ্রিকা কবিতার মূল বক্তব্য সংক্ষেপে আলোচনা করো।

রবীন্দ্রনাথের ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি উপেক্ষার অন্ধকারে ডুবে থাকা এক মহাদেশের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য। সৃষ্টির শুরু থেকেই আফ্রিকা ঘন অরণ্যে ভরা এমন এক দেশ, যেখানে সূর্যের আলোও ঠিকমতো প্রবেশ করে না। কিন্তু সেই ভয়ংকরতাই হয়েছে আফ্রিকার রক্ষাকবচ। ‘বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়’ আফ্রিকা নিজেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে নিয়েছে। অন্যদিকে, দুর্গম এবং দুর্বোধ্য আফ্রিকাকে উপেক্ষা করেছে উন্নত বিশ্ব। তার পরিচয় থেকে গিয়েছে অন্ধকার মহাদেশ হিসেবেই। ধীরে ধীরে আফ্রিকার সঙ্গে বাইরের জগতের যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। এসেছে ‘মানুষ-ধরার দল’। তৈরি হয়েছে দাসব্যবস্থা, যা কিনা অরণ্যের আদিমতার থেকেও আদিম এক অধ্যায়। তারপরে ইউরোপের উন্নত দেশগুলি উপনিবেশ স্থাপন করেছে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে। ‘সভ্যের বর্বর লোভ’ আফ্রিকায় তৈরি করেছে নির্লজ্জ অমানবিকতার আর-এক ইতিহাস। রক্ত আর চোখের জলে ভিজে গেছে আফ্রিকার মাটি। অথচ অন্য প্রান্তে উন্নত দেশগুলিতে তখনও একইভাবে অব্যাহত ঈশ্বরের আরাধনা কিংবা কবির সংগীত।

দিনের অন্তিমকাল ঘোষণার সময় যখন উপস্থিত, তখন কবি ‘যুগান্তের কবি’-কে উদ্দেশ্য করে ‘মানহারা মানবী’ আফ্রিকার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে বলেছেন। মানুষের যাবতীয় শুভবোধকে এই ক্ষমার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে চেয়েছেন কবি। সাম্রাজ্যবাদের ‘হিংস্র প্রলাপ’-এর মধ্যে এই হবে ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’। এভাবেই বিশ্বমানব-মৈত্রীর মধ্য দিয়ে আফ্রিকার এক নব উত্থানকে কল্পনা করেছেন কবি রবীন্দ্রনাথ।

আফ্রিকা কবিতা অবলম্বনে উপেক্ষিত ও অত্যাচারিত আফ্রিকার বর্ণনা দাও। রবীন্দ্রনাথ কীভাবে মানহারা আফ্রিকার পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন লেখো।

উপেক্ষিত ও অত্যাচারিত আফ্রিকা – ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে রচিত ‘আফ্রিকা’ কবিতায় ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের বর্বরতা এবং পাশবিক লোভ-লালসাকে কবি তুলে ধরেছেন।
প্রাকৃতিক বাধাকে উপেক্ষা করেও আদিম আফ্রিকা ছিল নিজের মহিমায় উজ্জ্বল, কিন্তু একসময় সে দেশে এল ক্ষমতালোভী ঔপনিবেশিক শক্তি। কবির ভাষায় –

এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে,
নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে।

এই হিংস্র দানবশক্তির কাছে হেরে গেল আফ্রিকার কালোমানুষ। নিজের দেশেই পরবাসী হয়ে পড়ল তারা। বর্ণের অহংকারে, সভ্যের মুখোশ পরে ঔপনিবেশিক প্রভুরা সমগ্র আফ্রিকাবাসীকে পরিণত করল ক্রীতদাসে। মাটিতে ঝরে পড়ল তাদের রক্ত ও অশ্রু। সেই রক্ত আর চোখের জল মিশে আফ্রিকার ধুলো হল পঙ্কিল। দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায় সেই বীভৎস কাদার পিন্ড চিরচিহ্ন দিয়ে গেল মানহারা আফ্রিকার অপমানিত ইতিহাসে।

মানহারা আফ্রিকার পাশে রবীন্দ্রনাথ – উপেক্ষিত, লাঞ্ছিত আফ্রিকার পাশে দাঁড়াতে কবির জাগ্রত বিবেক গর্জে উঠেছে কবিতার শেষ স্তবকে। যুগান্তের কবিকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেন- দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে;/বলো ‘ক্ষমা করো’ – আসলে ক্ষমাপ্রার্থী কবির বিবেক। বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের হয়ে সংবেদনশীল কবি নতজানু হয়েছেন মানহারা আফ্রিকার কাছে। ক্ষমাপ্রার্থনার মধ্য দিয়ে সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণীকে প্রতিষ্ঠা দিতে চান তিনি।

আফ্রিকা কবিতাটির নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে লেখো।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যের নামকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। নামের মধ্য দিয়ে বিষয়ের ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলা তাঁর অন্যতম প্রিয় বিষয়।
আফ্রিকা তাঁর পত্রপুট কাব্যগ্রন্থের স্মরণীয় এক কবিতা। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইটালির সাম্রাজ্যবাদী শাসক মুসোলিনি ইথিওপিয়া আক্রমণ করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ হিসেবে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রচিত হয়। কবিতার প্রথম অংশে আফ্রিকার উৎপত্তির ইতিহাসটি বর্ণিত হয়েছে। প্রতিকূল ভৌগোলিক পরিবেশে প্রকৃতির ভয়ংকর রূপকে আপন করে আফ্রিকা নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। সমস্ত বাধাকে জয় করে আফ্রিকা নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখল। সভ্য মানুষের কাছে চিরকাল তার মানবরূপ অপরিচিত ছিল। তারপর ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের থাবা পড়ল স্বাধীন আফ্রিকার ওপর। ক্রীতদাসে পরিণত হল হাজার হাজার আফ্রিকাবাসী। লোহার হাতকড়ি পরিয়ে তাদের নিয়ে যাওয়া হল অন্যদেশে ঔপনিবেশিক প্রভুদের দাস হিসেবে। সভ্যতার ‘নির্লজ্জ অমানুষতা’ প্রকাশিত হল নিষ্ঠুরভাবে। মানবতার এই চরম অপমানে শেষপর্যন্ত কবি অপমানিত আফ্রিকার পাশে দাঁড়িয়ে যুগান্তের কবিকে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। সমগ্র কবিতায় সমকালীন বিশ্বরাজনীতির পটভূমিতে আফ্রিকার লাঞ্ছিত, রক্তাক্ত রূপটিই ফুটে উঠেছে। এই বিচারে কবিতাটির নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক হয়েও ব্যঞ্জনাধর্মী।

আফ্রিকা কবিতাটির পটভূমি আলোচনা করো। এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথের কবিমানসের পরিচয় দাও।

পটভূমি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মনোভাবের অন্যতম সৃষ্টি ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি কবিতাটি রচনা করেন। বিশ্ব ইতিহাসে এই সালটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্ব। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে মুসোলিনির ইথিওপিয়া আক্রমণকে রবীন্দ্রনাথ ভালো চোখে দেখেননি। আফ্রিকার কালোমানুষদের প্রতি শ্বেতাঙ্গ ঔপনিবেশিকদের দানবীয় অত্যাচার রবীন্দ্রনাথ মেনে নিতে পারেননি। নিরপরাধ, নিরীহ আফ্রিকার আদিম মানুষদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের বর্বর অত্যাচার কবিচিত্তে যে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে তারই প্রকাশ ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি।

কবিমানসের পরিচয় – ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রকাশ। ভৌগোলিক বাধাকে জয় করে আফ্রিকা নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে স্বাধীন এক ভূখণ্ড ছিল। কিন্তু ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এই অরণ্যঘেরা ভূখণ্ডের দখল নিতে মরিয়া হয়ে উঠল। সাম্রাজ্যবাদীরা আফ্রিকার কালোমানুষদের পরিণত করল ক্রীতদাসে। তাদের ‘নির্লজ্জ অমানুষতা’ আর ‘বর্বর লোভ’ আফ্রিকাকে ক্ষতবিক্ষত করল। কবির চেতনায় আফ্রিকার মানুষের সেই আর্তনাদ ‘ভাষাহীন ক্রন্দন’ রূপে কবিতায় ফুটে ওঠে। উপেক্ষার কলুষিত চাহনিতে লাঞ্ছিত আফ্রিকাকে কবি দেখলেন ‘মানহারা মানবী’ রূপে। যুগান্তের কবিকে জানালেন আহবান, ক্ষমা চাইতে বললেন আফ্রিকার কাছে। আফ্রিকার প্রতি কবির দরদ ও ভালোবাসা তাঁর বিশ্বমানবতাবাদের কাব্যিক প্রকাশ।

আফ্রিকা কবিতাটি একটি মানবতাবাদী কবিতা। এই কবিতায় কবি আফ্রিকার মানুষের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তিনি আফ্রিকার মানুষের মুক্তি ও উন্নয়নের জন্য আশাবাদী।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer