আজকে আমরা এই আর্টিকেলে কারক ও অকারক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব।বাংলা ব্যাকরণে, কারক হলো ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত শব্দের কাজ বা ভূমিকা। অন্যদিকে, অকারক হলো ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কহীন শব্দ। কারক ও অকারকের মধ্যে পার্থক্য বোঝা বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারক ও অকারক সম্পর্ক মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এই কারক ও অকারক সম্পর্ক গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করে গেলে, তোমরা অবশই মাধ্যমিক পরীক্ষায় কারক ও অকারক সম্পর্ক লিখে আস্তে পারবে।
কারক ও অকারক
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সর্বত্রই মেয়েদের উন্নতির জন্য নিজ উদ্যোগে স্বল্প সঞ্চয় থেকেই অকাতরে অর্থ দান করতেন।
এখানে ‘দান করতেন’ পদটি সমাপিকা ক্রিয়া। এই ক্রিয়াপদটি ধরে প্রশ্ন করলে বাক্যের অন্যান্য পদগুলির সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ণয় করা সম্ভব। এই প্রশ্নগুলি পরপর সাজানো যাক –
প্রশ্ন | উত্তর | কারকের নাম |
কে দান করতেন? | ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর | ক্রিয়াপদের সঙ্গে এর কর্তা সম্পর্ক। |
কী দান করতেন? | অর্থ | ক্রিয়াপদের সঙ্গে এর কর্ম সম্পর্ক। |
কীসের দ্বারা দান করতেন? | নিজ উদ্যোগে | ক্রিয়াপদের সঙ্গে এর করণ সম্পর্ক। |
কীসের নিমিত্ত দান করতেন? | মেয়েদের উন্নতির জন্য | ক্রিয়াপদের সঙ্গে এর নিমিত্ত সম্পর্ক। |
কোথা থেকে দান করতেন? | স্বল্প সঞ্চয় থেকে | ক্রিয়াপদের সঙ্গে অপাদান সম্পর্ক। |
কোথায় দান করতেন? | সর্বত্রই | ক্রিয়াপদের সঙ্গে এর অধিকরণ সম্পর্ক। |
সুতরাং, দেখা গেল, বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে ওই বাক্যের নামপদ অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদগুলির সম্পর্ককেই কারক সম্পর্ক বলা হয়। এই সম্পর্কের ভিত্তিতে কারক হল – কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান এবং অধিকরণ।
এ ছাড়া, রয়েছে কিছু অকারক সম্পর্ক। যেমন, যদি আগের বাক্য থেকে প্রশ্ন করি, কাদের উন্নতির জন্য? তাহলে উত্তর পাব, ‘মেয়েদের’। এর সঙ্গে ‘দান করতেন’ ক্রিয়াটির সম্পর্ক নেই। যখন বাক্যের মধ্যে এমন পদ পাওয়া যায় যার সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ক নেই কিন্তু অন্য কোনো নামপদের সম্পর্ক আছে তাকে বলে অকারক-সম্পর্ক। বাংলায় এরকম দুটি অকারক সম্পর্ক আছে-সম্বন্ধ ও সম্বোধন।
বিভক্তি
একটি বাক্যের মধ্যে থাকে এক বা একাধিক শব্দ। কিন্তু শব্দগুলি সরাসরি বাক্যে ব্যবহৃত হয় না, শব্দের সঙ্গে এমন কিছু অংশ যুক্ত হয়, যার ফলে সে বাক্যে স্থানলাভের যোগ্য হয়ে ওঠে।
যদি লিখি – বসন্তকাল নানা রঙ ফুল ফোটে। তাহলে শব্দগুলো পাশাপাশি বসলেও একে বাক্য বলা যায় না। কারণ এই শব্দগুলি থেকে পরিষ্কার কোনো অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু যদি লিখি – বসন্তকালে নানা রঙের ফুল ফোটে, তাহলে একে আমরা বাক্য বলতে পারি, কারণ এই বাক্যের মাধ্যমে বক্তার মনের ভাব পরিষ্কার করে ফুটে উঠেছে। এখন আমরা লক্ষ করি যে, কীভাবে শব্দগুলি বাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার যোগ্য হল –
বসন্তকাল (+এ) নানা রং (+এর) ফুল ফোট্ (+এ)
দেখা যাচ্ছে, ‘বসন্তকাল’-এর সঙ্গে ‘এ’, ‘রং’-এর সঙ্গে ‘এর’ এবং ‘ফোট্’ এর সঙ্গে ‘এ’ যুক্ত হল। এর ফলেই বাক্যটির অর্থ তৈরি হল। এই ‘এ’, ‘এর’ ইত্যাদিকে বলে বিভক্তি। শব্দের সঙ্গে বা ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হলে তখন তা বাক্যে ব্যবহারের যোগ্য হয়ে ওঠে। বিভক্তিযুক্ত শব্দকে তখন বলা হয় ‘পদ’।
এভাবে যাবে ー
শব্দের সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলে শব্দবিভক্তি। শব্দবিভক্তি শব্দকে নামপদ-এ পরিণত করে। যেমন –
এখানে ‘ভূত’, ‘ভয়’ এবং অন্ধকার’ শব্দের সঙ্গে যথাক্রমে ‘এর’, ‘এ’ ও ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। এই বিভক্তিগুলিকে বলা হয় শব্দবিভক্তি এবং ‘ভূতের’, ‘ভয়ে’, ‘অন্ধকারে’- এগুলি হল নামপদ।
ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তি যুক্ত হয় তাকে বলে ধাতুবিভক্তি। যেমন – ‘কর্’ একটি ধাতু। এই ক্রিয়ার রূপটি কাল ও পুরুষভেদে পালটে যায়। যেমন – আমি করি, সে করে, তুমি করিবে ইত্যাদি। এক্ষেত্রে,
- করি = কর্ + ই বিভক্তি
- করে = কর্ + এ বিভক্তি
- করিবে = কর্ + ইবে বিভক্তি
কর্ ধাতুর সঙ্গে যে যে বিভক্তি যুক্ত হল, তাদের বলে ধাতুবিভক্তি। ধাতুবিভক্তি ক্রিয়াপদ তৈরি করে।
এই অধ্যায়ে বিভক্তি বলতে আমরা শব্দবিভক্তিকেই বুঝব।
বাংলা ভাষায় বিভক্তিচিহ্নগুলি হল – এ, কে, য়, তে (বা এতে), র (বা এর), রে (কবিতায় ব্যবহৃত হয়) ইত্যাদি। এ ছাড়া আছে শূন্য বিভক্তি।
আকাশে আজ তারার মেলা।
- আকাশে = আকাশ + এ বিভক্তি
- তারার = তারা + র বিভক্তি
মাকে কলকাতায় যেতে হবে।
- মাকে = মা + কে বিভক্তি
- কলকাতায় = কলকাতা + য় বিভক্তি
ওপরের উদাহরণে দেখা যাচ্ছে শব্দের সঙ্গে যুক্ত বিভক্তিচিহ্নটি স্পষ্ট। কিন্তু ‘বাবা অফিসে গেছেন’ – এই বাক্যে ‘বাবা’ শব্দটির সঙ্গে স্পষ্টত কোনো বিভক্তি চিহ্ন না থাকলেও, এই শব্দটিকে বিভত্তিহীনও বলা যাবে না। ‘বাবা’ শব্দটির সঙ্গে ‘অ’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে শব্দটিকে পদে পরিণত করেছে। এই অপ্রকাশিত বিভক্তিটিকে বলা হয় শূন্য বিভক্তি।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে শব্দবিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে, কিন্তু নিজে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে এবং মূল শব্দটির কোনো পরিবর্তন ঘটায় না, তাকে শূন্য বিভক্তি বলে। যেমন – এবার পুজোয় রাজস্থান যার।
রাজস্থান = রাজস্থান + অ (শূন্য বিভক্তি)
অনুসর্গ
কারকের চিহ্ন হিসেবে শুধু শব্দবিভক্তি যথেষ্ট নয়। শব্দবিভক্তি ছাড়াও কিছু শব্দ বিভক্তির কাজ করে। এরাও বিভক্তির মতো পদের পরে বসে, তবে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে। এদের বলে অনুসর্গ। যেমন – গাছ থেকে আম পাড়ো। এখানে ‘গাছ থেকে’ অংশটিতে ‘থেকে’ শব্দটি বিভক্তির কাজ করছে। অর্থাৎ, ‘থেকে’ হল অনুসর্গ।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে অবস্থান করে শব্দবিভক্তির কাজ করে তাদের অনুসর্গ (বা পরসর্গ) বলে।
বাংলায় প্রচলিত কয়েকটি অনুসর্গ – অপেক্ষা, চেয়ে (চাহিয়া), হতে (হইতে), থেকে (থাকিয়া), কর্তৃক, দিয়া (দিয়ে), দ্বারা, উপরে, কাছে, নিকট, পাশে, ভিতরে, মধ্যে, মাঝে, ছাড়া, বিনা, ব্যতীত, জন্য, কারণ, নিমিত্ত, হেতু, পানে, মতো, মতন, সঙ্গে, সাথে।
নির্দেশক
কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে বিশেষ অর্থে বোঝানোর জন্য এবং বস্তু বা ব্যক্তির সংখ্যা বোঝানোর জন্য কয়েকটি চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায়। এই চিহ্নগুলিকে নির্দেশক বলা হয়। যেমন –
লোকটি কাল আমার কাছে এসেছিল।
এখানে ‘লোক’ পদের সঙ্গে ‘টি’ নির্দেশক যুক্ত হয়ে তাকে বিশিষ্টতা দান করেছে। আবার একই সঙ্গে ‘লোকটি’ বলতে একজন লোকের কথা বলা হয়েছে। ‘টি’, ‘টা’, ‘খানা’, ‘খানি’, ‘গুলি’, ‘দের’, ‘দিগের’ ইত্যাদি হল বচন নির্দেশক চিহ্ন।
নির্দেশকও বিভক্তির মতো শব্দের শেষে বসে এবং শব্দটির সঙ্গে জুড়ে যায়। শব্দের সঙ্গে নির্দেশক যোগ হওয়ার পরও বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হতে পারে। যেমন – ছেলেগুলোকে, লোকটির ইত্যাদি।
একবচন বোঝানোর জন্য ‘টি’, ‘টা’, ‘খানা’ ইত্যাদি এবং বহুবচন বোঝানোর জন্য ‘রা’, ‘এরা’, ‘গুলি’, ‘গুলো’, ‘দের’, ‘এদের’ ইত্যাদি বচন নির্দেশক চিহ্ন যোগ করা হয়। বহুবচন বোঝাতে ‘সকল’, ‘সব’, ‘বৃন্দ’, ‘সমূহ’ প্রভৃতি নির্দেশক ব্যবহার করা হয়। এই নির্দেশকগুলিকে বিভক্তি বা অনুসর্গ কোনোটাই বলা যায় না। অথচ বিভক্তি এবং অনুসর্গ প্রত্যেকটির সঙ্গেই নির্দেশকগুলির কিছু মিল ও কিছু পার্থক্য আছে।
বিভক্তি এবং নির্দেশক – শব্দবিভক্তির মতো নির্দেশকও পদের শেষে যুক্ত হয়, শব্দ বা পদের পরে আলাদা করে সাধারণত বসে না। কিন্তু বিভক্তিচিহ্ন যেমন পদের কারক ও বচন দুই-ই নির্দেশ করে, নির্দেশকগুলি তা করে না। এগুলি শুধু বচনকেই নির্দেশ করে। শব্দবিভক্তি কখনও শব্দের আগে বসে না। কিন্তু নির্দেশকগুলি কখনো-কখনো স্বতন্ত্রভাবে শব্দের আগেও বসতে পারে। অনেক সময় নির্দেশকের শেষে বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয়। এই ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রটিতে নির্দেশক স্বতন্ত্রভাবে শব্দের প্রথমে বসেছে। যেমন –
ঝাঁকের কই = [ঝাঁক + এর (নির্দেশক + বিভক্তি)] কই (শব্দ)
অনুসর্গ ও নিদের্শক –
- মিল – অনুসর্গ কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে পদের আগে আলাদাভাবে বসে। যেমন – বিনে স্বদেশী ভাষা পুরে কি আশা? নির্দেশকও বিভক্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দের আগে বসতে পারে।
- অমিল – অনুসর্গ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পৃথকভাবে শব্দের পরে বসে। নির্দেশক কখনোই শব্দের পরে পৃথকভাবে বসে না। শব্দের শেষে যুক্ত হয়। অনুসর্গের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে অন্য কোনো বিভক্তিচিহ্ন যোগ করা হয়। প্রয়োজন অনুসারে অনুসর্গের আগের পদটিতে বিভক্তিচিহ্ন যোগ করা হয়। যেমন – ক্লাবের ছেলেগুলোকে দিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করাও।
[ছেলে+গুলো (বচনসূচক নির্দেশক) + কে (কারকবাচক বিভক্তি)] দিয়ে (অনুসর্গ)
কারকের শ্রেণিবিভাগ
আমরা আগেই জেনেছি, কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান আর অধিকরণ – বাংলা ভাষায় এই ছয় ধরনের কারক দেখতে পাওয়া যায়।
কর্তৃকারক
- আজ ছোটোমামা এসেছেন।
- রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়।
- তুমি কি এখনই যাবে?
উপরের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে যদি ক্রিয়াকে ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করি, অর্থাৎ ‘কাজটি কে করছে’ খুঁজি, তাহলে যে উত্তর পাওয়া যাবে, তা হল বাক্যের কর্তা। বাক্যের কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ককে আমরা বলি কর্তৃকারক। অর্থাৎ উপরের বাক্যগুলিতে কর্তৃকারক হল যথাক্রমে ‘ছোটোমামা’, ‘রাজায় রাজায়’ এবং ‘তুমি’।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে বিশেষ্য বা সর্বনাম বা বিশেষ্যস্থানীয় পদ বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াসম্পাদকের ভূমিকা নেয়, সেই পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের সম্পর্ককে কর্তৃকারক বলা হয়।
সহজ কথায়, বাক্যের কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্কের নাম কর্তৃকারক।
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ
কর্তৃকারকের প্রকার | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ | বিভক্তি |
প্রযোজক কর্তা | কর্তা নিজে কাজ না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিলে তা হবে প্রযোজক কর্তা। | রাখাল গোরু চরায়। | শূন্য বিভক্তি |
প্রযোজ্য কর্তা | যাকে দিয়ে প্রযোজক কর্তা কাজটি করিয়ে নেয় সেটি হল প্রযোজ্য কর্তা। | রাখাল গোরু চরায়। | শূন্য বিভক্তি |
সমধাতুজ কর্তা | ক্রিয়াটি যে ধাতুনিষ্পন্ন, কর্তাও যদি সেই একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয় তখন তাকে বলে সমধাতুজ কর্তা। | লেখক বই লেখেন। ক্রিয়া ‘লেখেন’ ও কর্তা ‘লেখক’ একই ধাতু ‘লিখ্’ থেকে উৎপন্ন। | শূন্য বিভক্তি |
ব্যতিহার কর্তা | কোনো ক্রিয়ার দুই কর্তার মধ্যে যদি পারস্পরিক বিনিময় বোঝায়, তখন তাদেরকে ব্যতিহার কর্তা বলে। | কবিতে কবিতে যুদ্ধ হচ্ছে। | ‘তে’ বিভক্তি |
সহযোগী কর্তা | বাক্যে দুই বা ততোধিক কর্তার মধ্যে সহযোগিতা থাকলে তাকে সহযোগী কর্তা বলে। | তুমি আমি মিলে পৌঁছে যাব। | শূন্য বিভক্তি |
বাক্যাংশ কর্তা | সমাপিকা ক্রিয়াবিহীন কোনো বাক্যাংশ ক্রিয়া সম্পাদন করলে তাকে বাক্যাংশ কর্তা বলে। | তোমার এই চলে যাওয়াটা ভালো দেখায়নি। | – |
উপবাক্যীয় কর্তা | কোনো বাক্যের অন্তর্গত উপবাক্য কর্তা হিসেবে ক্রিয়া সম্পাদন করলে তা হবে উপবাক্যীয় কর্তা। | সে আসবে না এটা হয় না। | – |
নিরপেক্ষ কর্তা | বাক্যের মধ্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার আলাদা কর্তা থাকলে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে। | তুমি মাতৃহীন হইলে আমি তোমায় প্রতিপালন করিয়াছিলাম। | শূন্য বিভক্তি |
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা | কর্তার অনুপস্থিতিতে যদি কর্ম কর্তার মতো আচরণ করে এবং ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে তবে তা হয় কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা। | শাঁখ বাজে। | শূন্য বিভক্তি |
অনুক্ত কর্তা | কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে কর্তা প্রধানরূপে উক্ত হয় না। সেজন্যই একে অনুক্ত কর্তা বলে। | তোমার দ্বারা এ কাজ হবে না। | ‘র’ বিভক্তি |
উপকরণ কর্তা/ সাধন কর্তা | উপকরণকে কর্তা হিসেবে ব্যবহার করলে তাকে উপকরণ কর্তা বা সাধন কর্তা বলে। | ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে। | শূন্য বিভক্তি |
করণকারক
নীচের বাক্যগুলি ও বাক্যের মধ্যে নীচে দাগ দেওয়া পদগুলি লক্ষ করো –
- পাতাগুলি আঠা দিয়ে আটকানো।
- আনন্দে সে লাফিয়ে উঠল।
- বাসে করে এতটা পথ এলাম।
এই তিনটি বাক্যের ক্রিয়াকে যদি প্রশ্ন করা হয় ‘কী দিয়ে’ ‘কীসে’ বা ‘কী করে’, তাহলে উত্তর হিসেবে নিম্নরেখ পদগুলি পাওয়া যাবে। এইভাবে কোনো কিছুর দ্বারা, কর্তৃক বা সাহায্য নিয়ে যদি কাজটি করা হয়, তবে ক্রিয়ার সঙ্গে এই সাহায্যকারী পদের সম্পর্ককে করণকারক বলে। ব্যাকরণের ভাষায়, কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়াসম্পাদন করে বা ক্রিয়ানিষ্পত্তির ব্যাপারে যা প্রধান সহায়, তাকে করণকারক বলে। সাধারণত করণকারক বোঝাতে ‘এ’, ‘তে’, ‘য়’, ‘এতে’ প্রভৃতি বিভক্তি এবং ‘দিয়ে’, ‘দিয়া’, ‘দ্বারা’, কর্তৃক’, ‘করে’ ইত্যাদি অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়।
করণকারকের প্রকারভেদ
প্রকার | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ | বিভক্তি |
যন্ত্রাত্মক করণ | ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনো বস্তু, যন্ত্র প্রভৃতি যখন ক্রিয়াসম্পাদনের উপায় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। | ছুরি দিয়ে সবজিগুলো কেটে ফেলো। | ‘দিয়ে’ অনুসর্গ |
উপায়াত্মক করণ | যে উপায়ের মাধ্যমে ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। | মোহনবাগান শুধু বুদ্ধি দিয়ে ফুটবলটা খেলল। | ‘দিয়ে’ অনুসর্গ |
হেত্বর্থক করণ | হেতু বা কারণ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। | ভয়ে তারা পালাল। | ‘এ’ বিভক্তি |
কালাত্মক করণ | কাল বা সময় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। | চব্বিশ ঘণ্টায় একদিন। | ‘য়’ বিভক্তি |
সমধাতুজ করণ | বাক্যের ক্রিয়া ও করণ যখন একই ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয়। | টেবিলটা ঝাড়ন দিয়ে ঝেড়ে দাও। | ‘দিয়ে’ অনুসর্গ |
লক্ষণাত্মক করণ | কোনো লক্ষণ বা চিহ্ন বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। | ‘গোঁফ দিয়ে যায় চেনা’। | ‘দিয়ে’ অনুসর্গ |
করণের বীপ্সা | একই শব্দের পুনরাবৃত্তি বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। | হাতে হাতে কাজগুলো করে নিই। | ‘এ’ বিভক্তি |
নিমিত্তকারক
নীচের বাক্যগুলিতে ক্রিয়া ও নিম্নরেখ পদের সম্পর্কটি খেয়াল করো।
- অজয় বন্যাত্রাণে অনেক টাকা দিয়েছে।
- তোমার জন্যে আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি।
- মুখ্যমন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন।
উপরের বাক্যগুলির ক্রিয়াকে যদি প্রশ্ন করি, ‘কীসের নিমিত্ত’, ‘কার জন্য’ ও ‘কার উদ্দেশে’, তাহলে উত্তর পাব যথাক্রমে ‘বন্যাত্রাণে’, ‘তোমার জন্য’ এবং ‘ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে’। অর্থাৎ এই বাক্যগুলিতে নিষ্পন্ন ক্রিয়ার নিমিত্ত, জন্য, উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ ইত্যাদি হয়ে উঠেছে ক্রিয়ার ভাব। ক্রিয়ার সঙ্গে এই পদগুলির সম্পর্কের নাম নিমিত্তকারক।
ব্যাকরণের ভাষায়, ক্রিয়া সম্পর্কে ‘কাকে’, ‘কেন’, ‘কী জন্য’ বা ‘কীসের নিমিত্ত’ বা ‘কার উদ্দেশে’ প্রশ্ন করলে উত্তরে যে পদ পাওয়া যায় তা-ই নিমিত্তকারক। যেমন –
- তৃষ্নার্তকে জল দাও।
- বন্যাতে সব ভেসে গেছে।
- ক্ষুদিরাম দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন।
- রামবাবু দোকানে গেছেন। (কোনো কিছু কেনার উদ্দেশ্যে দোকানে যাওয়া বোঝাচ্ছে।)
বাংলায় ‘জন্য’ অর্থে নিমিত্ত হলেও কাউকে স্বার্থশূন্যভাবে কিছু দেওয়া হচ্ছে বোঝাতে সংস্কৃতে যে সম্প্রদানকারক আছে, বাংলা নিমিত্ত কারকের সঙ্গে তার পার্থক্য আছে। যেহেতু সম্প্রদান হয় গৌণ কর্মপদে, বাংলায় এগুলি তাই কর্মকারক। যেমন – অন্নহীনে অন্ন দাও। এখানে ‘অন্নহীনে’ গৌণকর্ম।
অপাদানকারক
বাক্যের মধ্যে অনেক সময়ে কোনো কোনো শব্দের মাধ্যমে কোনো কিছু উৎপন্ন, পতিত, জাত ইত্যাদি বোঝায়। অর্থাৎ কী থেকে উৎপত্তি বা পতন বা জন্ম, তা বোঝায়। যেমন –
- লোভ থেকে পাপ জন্মায়।
- তার চোখ দিয়ে জল পড়ছে।
- গাছ থেকে ফল পেড়ে আনা হল।
এই তিনটি বাক্যের নিম্নরেখ পদগুলি খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, ক্রিয়াকে যদি ‘কোথা থেকে’ প্রশ্ন করা হয়, তাহলে পাব-‘কোথা থেকে’ ফল পেড়ে আনা হল? ‘গাছ থেকে।’ তেমনই ‘কোথা থেকে’ পাপ জন্মায়? ‘লোভ থেকে।’ তার ‘কোথা থেকে’ জল পড়ছে? ‘চোখ দিয়ে’। অর্থাৎ ফল, পাপ বা জল পড়ার একটা উৎসস্থল এই বাক্যগুলিতে আছে। ক্রিয়ার সঙ্গে এই উৎস বা উৎপত্তিস্থলবোধক পদের সম্পর্ককেই অপাদানকারক বলে।
ব্যাকরণের ভাষায়, যা থেকে কোনো কিছু উৎপন্ন, পতিত, চলিত, গৃহীত, রক্ষিত, মুক্ত, বিরত ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অপাদানকারক বলে।
অপাদানকারকের প্রকারভেদ
প্রকার | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ | বিভক্তি |
স্থানবাচক অপাদান | কোনো স্থান বা আধার থেকে বিচ্যুতি বা প্রাপ্তি বোঝায়। | তিনি পকেট থেকে টাকাটা বের করলেন। | ‘থেকে’ অনুসর্গ |
অবস্থানবাচক অপাদান | কোনো অবস্থান থেকে ক্রিয়ানিষ্পত্তি হয়। | আমি ছাদ থেকে ঘটনাটা দেখলাম। | ‘থেকে’ অনুসর্গ |
কালবাচক অপাদান | কোনো নির্দিষ্ট সময় বা কাল বোঝায়। | আমি কাল থেকে দিল্লিতে আছি। | ‘থেকে’ অনুসর্গ |
দূরত্ববাচক অপাদান | দুই বা ততোধিক নির্দিষ্ট স্থানের দূরত্ব বোঝায়। | আমার বাড়ি থেকে স্কুল দু-মাইল। | ‘থেকে’ অনুসর্গ |
তুলনাবাচক অপাদান | দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর তুলনা বোঝায়। | এই জীবনের চেয়ে মৃত্যু ভালো। নাইমামার চেয়ে কানামামা ভালো। | ‘চেয়ে’ অনুসর্গ |
অসমাপিকা ক্রিয়ারূপী অপাদান | অসমাপিকা ক্রিয়া অপাদানের মতো আচরণ করে। | সত্য কথা বলতে (বলা থেকে) ভয় পাই না। | ‘তে’ বিভক্তি |
অধিকরণকারক
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াসম্পাদনকে ঘিরে অর্থাৎ, কীভাবে ক্রিয়াটি করা হচ্ছে তার ভিত্তিতে কিছু পদকে আশ্রয় করে ক্রিয়াটির স্থান, সময়, বিষয় বা ভাব ফুটে ওঠে। যেমন –
- শরৎকালে বেড়াতে যাব।
- দুঃখে সে ভেঙে পড়েছে।
- আমার বন্ধু এখন দক্ষিণ ভারতে থাকে।
ওপরের দাগ দেওয়া পদগুলি ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অর্থাৎ বেড়াতে যাওয়ার, থাকার, ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে যথাক্রমে সময়, স্থান বা ভাব বোঝাচ্ছে। ক্রিয়ার সঙ্গে যে-সব পদের এ ধরনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়, তাকে অধিকরণকারক বলে।
ব্যাকরণের ভাষায়, যে স্থানে, সময়ে, বিষয়ে বা ভাবে কোনো ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়, ক্রিয়ার সেই আধারকে অধিকরণকারক বলে।
অধিকরণকারকের প্রকারভেদ
স্থানাধিকরণ – ক্রিয়া যে স্থানে সম্পন্ন হয়, তাকে স্থানাধিকরণ বলা হয়। স্থানাধিকরণ চার প্রকার।
- স্থানসূচক অধিকরণ – সাধারণভাবে কর্তা যে স্থানে ক্রিয়াটি সম্পাদনা করে, তাকেই স্থানসূচক অধিকরণ বলে। যেমন – আগামী গ্রীষ্মে দার্জিলিং যাব।
- ব্যাপ্তিসূচক অধিকরণ – কোনো বিশেষ অংশে নয়, সর্বত্রই রয়েছে, এমন বোঝালে, তাকে ব্যাপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ বা অভিব্যাপক স্থানাধিকরণ বলে। যেমন – লালমোহনবাবুর নাম বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।
- একদেশসূচক অধিকরণ – সর্বত্র বিস্তার লাভ করেনি, কোনো একটি বিশেষ জায়গায় বা অংশে অবস্থিত-এমন বোঝালে, তাকে একদেশসূচক স্থানাধিকরণ বা ঐকদেশিক স্থানাধিকরণ বলে। যেমন – ‘নীল আকাশে কে ভাসালে সাদা মেঘের ভেলা’।
- সামীপ্যসূচক অধিকরণ – সমীপে অর্থাৎ কাছে অবস্থিত এমন বোঝালে, তাকে সামীপ্যসূচক স্থানাধিকরণ বলে। যেমন – গঙ্গাসাগরে মেলা হয়। (সাগরের মধ্যে নয়, তীরে)।
কালাধিকরণ – যে সময়ে ক্রিয়াটি সম্পাদিত হয়, তাকে কালাধিকরণ বলে। কালাধিকরণ দুই প্রকার।
- নির্দিষ্ট সময়বাচক বা ক্ষণমূলক – নির্দিষ্ট বা অল্প সময়ের মধ্যে ক্রিয়াকে সম্পন্ন করতে হলে, তাকে নির্দিষ্ট সময়বাচক বা ক্ষণমূলক কালাধিকরণ বলে। যেমন – বিকেল চারটেয় আমাদের ট্রেন।
- ব্যাপ্তিসূচক বা ব্যাপ্ত সময়মূলক – ক্রিয়া সম্পাদনা করার সময় যদি দীর্ঘকালব্যাপী হয়, তবে তাকে ব্যাপ্তিসূচক বা ব্যাপ্ত সময়মূলক কালাধিকরণ বলে। যেমন – শীতকালে গাছের পাতা পড়ে যায়।
বিষয়াধিকরণ – যে বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, তাকে বিষয়াধিকরণ বলে। বিষয়াধিকরণ দুই প্রকার।
- সাধারণ বিষয়াধিকরণ – যে-কোনো পার্থিব বিষয়ে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হলে তাকে সাধারণ বিষয়াধিকরণ বলে। যেমন – 1. আমি অঙ্কে খুব কাঁচা। 2. তরুণ যুবক কাব্যে কালিদাস, ব্যাকরণে পাণিনি।
- ভাবাধিকরণ – বিষয়াধিকরণের বিষয় যদি পার্থিব না হয়ে কোনো একটি মনোভাবকে নির্দেশ করে, তাহলে তাকে ভাবাধিকরণ বলে। যেমন – 1. আনন্দে সে পাগল হয়ে গেছে। 2. লোকে শোকে দুঃখে কাঁদে।
অকারক সম্পর্ক – সম্বন্ধপদ, সম্বোধন পদ, অকারক বিভক্তি
যদি ক্রিয়াপদের সঙ্গে বাক্যের কোনো পদের সম্পর্ক না থাকে, তবে সেই পদ কখনোই কারক সম্পর্কে যুক্ত হয় না। এইরকম সম্পর্ককে বলে অকারক সম্পর্ক। যেমন ধরা যাক,
মিত্তিরদের আমবাগানে বোল ধরেছে।
এখানে, ক্রিয়াপদ হল ‘ধরেছে’। এখন, যদি আমি ‘মিত্তিরদের’ পদটির দিকে তাকাই, তবে দেখব, এই বাক্যের ক্রিয়াপদকে কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন করলে ‘মিত্তিরদের’ পদটিকে উত্তর হিসেবে পাওয়া যাবে না। একমাত্র যদি আমি ‘আমবাগানে’ পদটিকে ধরে প্রশ্ন করি, তবেই উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন | উত্তর |
কাদের আমবাগানে? | মিত্তিরদের |
অর্থাৎ, ‘মিত্তিরদের’ পদটির সঙ্গে ক্রিয়াপদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে, অন্য পদের সঙ্গে এর সম্পর্ক বা সম্বন্ধ আছে। এইরকম সম্পর্কগুলিকে বলে অকারক সম্পর্ক।
সুতরাং, বাক্যের যেসব পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের কোনো সম্পর্ক থাকে না, সেই পদগুলি ক্রিয়ার সঙ্গে কারক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। অথচ, তার সঙ্গে বাক্যের অন্য কোনো পদের সম্পর্ক থাকতে পারে। এই সম্পর্কগুলিকেই বলে অকারক সম্পর্ক।
অকারক সম্পর্ক তিন প্রকার –
- সম্বন্ধপদের ক্ষেত্রে,
- সম্বোধন পদের ক্ষেত্রে, ও
- অকারকে বিভক্তির ক্ষেত্রে।
সম্বন্দ্বপদ
কোনো বস্তু বা ব্যক্তির ওপর অন্য কোনো বস্তু বা ব্যক্তির অধিকার থাকলে তাকে সম্বন্ধপদ বলে। সম্বন্ধপদে সাধারণত ‘র’ এবং ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয়। সচরাচর স্বরাস্ত শব্দে ‘র’ এবং ব্যঞ্জনান্ত শব্দে ‘এর’ বিভক্তিচিহ্ন যোগ করা হয়। যেমন – রাজার, রামের। সম্বন্ধপদের সঙ্গে ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ কোনো সম্পর্ক হয় না, তাই একে কারক বলা যায় না। সম্বন্ধপদ হল একটি নামপদের সঙ্গে আর একটি নামপদের বিশেষ সম্বন্ধ।
সম্বন্দ্বপদের শ্রেণিবিভাগ
প্রকার | বৈশিষ্ট্য | উদাহরণ | বিভক্তি |
সামান্য সম্বন্ধ বা সাধারণ সম্বন্ধ | এখানে সাধারণ সম্বন্ধ স্থাপিত হয়। | আমার ভাই, রমার বাবা, খাঁচার পাখি, গঙ্গার তীর ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি |
অধিকার সম্বন্ধ | এখানে কোনো বস্তু বা সম্পত্তির উপর অধিকার স্থাপিত হয়। | রাজার বাড়ি, যক্ষের ধন ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
অঙ্গ বা অংশ সম্বন্ধ | দেহের কোনো অঙ্গ বা অংশ বোঝায়। | বাঘের ছাল, হাতির দাঁত ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি |
উপাদান সম্বন্ধ | একমাত্র বা প্রধান উপাদান বোঝায়। | সোনার আংটি, পশমের শাল ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
জন্য-জনক সম্বন্ধ | জন্মদাতা জনক এবং জন্মলাভ করা জন্যের পারস্পরিক সম্বন্ধটি জন্য-জনক সম্বন্ধ। | পিতার পুত্র, সমুদ্রের ঢেউ ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
কার্য-কারণ সম্বন্ধ | কার্য ও ফলাফলের মধ্যে যখন সম্বন্ধ স্থাপিত হয়। | রোদের তাপ, সূর্যের আলো, বিদ্যুতের আলো ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
অভেদ সম্বন্ধ | যখন দুটি পদ একই বস্তু বা বিষয় বোঝায়, তখন তাদের মধ্যে অভেদ সম্বন্ধ স্থাপিত হয়। তখনই সেটি অভেদ সম্বন্ধ পদ হচ্ছে। | চাঁদের হাট, অশিক্ষার অভিশাপ ‘ ইত্যাদি। | এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি |
কারক সম্বন্ধ | ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে তৈরি হওয়া কৃদন্ত শব্দজাত পদগুলিকে গৌণক্রিয়া বলে। এর সঙ্গে কর্তা, কর্ম, করণ-ইত্যাদির সম্বন্ধকে বলে কারক সম্বন্ধ। | নীচের কর্তৃ থেকে অধিকরণ পর্যন্ত প্রতিটিই কারক সম্বন্দ্ব। | – |
কর্তৃ | বাক্যে যে পদটি কর্তৃকারক বোঝাচ্ছে তার সঙ্গে সম্পর্ক হলে তাকে বলে কর্তৃ সম্বন্ধ। | মায়ের স্নেহ, পাখির ডাক, শিক্ষকের উপদেশ ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
কর্ম | বাক্যে যে পদটি কর্মকারক বোঝাচ্ছে তার সঙ্গে সম্পর্ক হলে সেটি কর্ম সম্বন্ধ। | গাছের যত্ন, চোরের শাস্তি, ঢাকের বাজনা ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
করণ | বাক্যে যে পদটি করণকারক বোঝাচ্ছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলে তাকে বলে করণ সম্বন্দ্ব। | তুলির টান, হাতের কাজ, তাসের খেলা ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
নিমিত্ত | নিমিত্তকারকের সঙ্গে যখন সম্পর্ক হয় তখন সেটি নিমিত্ত সম্বন্ধ। | খেলার মাঠ, পড়ার বই ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি |
অপাদান | বাক্যে যে পদ অপাদান বোঝাচ্ছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক হলে সেটি অপাদান সম্বন্ধ। | ঘরের বাইরে, বাঘের ভয়, সুখের কথা ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
অধিকরণ | বাক্যে যে পদটি অধিকরণকারক বোঝাচ্ছে, তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলে সেটি অধিকরণ সম্বন্ধ। | বনের হরিণ, গ্রামের লোক, রাতের বাজার ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
বিশেষণ সম্বন্ধ | বাক্যে যে পদটি বিশেষণ পদ তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলে সেটি বিশেষণ সম্বন্ধ। | সন্দেহের বিষয়, আনন্দের কথা, বিলাসের জীবন ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
তারতম্যবাচক সম্বন্ধ | যখন তুলনা বোঝায় সেই সময় সম্বন্ধ পদ ব্যবহৃত হলে সেটি তারতম্যবাচক সম্বন্ধ। | আমার চেয়ে, তার অপেক্ষা ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি |
অব্যয় যোগে | সম্বন্ধ বোঝাতে অব্যয়ের ব্যবহার ঘটলে তা হয় অব্যয় যোগে সম্বন্ধ পদ। | মতের বিপক্ষে, শত্রুর সঙ্গে ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি |
আধার-আধেয় সম্বন্ধ | কোনো আধারের সঙ্গে তার আধেয়র সম্পর্ককে বলে আধার-আধেয় সম্বন্ধ। | নদীর জল, চোখের মণি ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
আধেয়-আধার সম্বন্ধ | কোনো আধেয়র সঙ্গে তার আধারের সম্পর্ককে বলে আধেয়-আধার সম্বন্ধ। | জলের কলসি, তেলের টিন, ‘ফলের ঝুড়ি ইত্যাদি। | এর’ বিভত্তি |
ব্যাপ্তি সম্বন্ধ | কোনো সময়ের বিস্তার এবং যে কারণে সেই সময়ের ব্যাপ্তি প্রয়োজন, তাদের সম্পর্ককে বলে ব্যাপ্তি সম্বন্ধ। | দুদিনের পথ, একমাসের মেলা, তিন ঘণ্টার পরীক্ষা ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি |
ক্রম সম্বন্ধ | কোনো কিছুর ক্রমাঙ্ক এবং সেই ক্রমাঙ্কিত বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ককে বলে ক্রম সম্বন্ধ। | চারের পাতা, দোতলার বারান্দা, ছয়দিনের দিন ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভত্তি, ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
যোগ্যতা সম্বন্ধ | যোগ্যতার ভিত্তিতে দুটি বস্তু বা বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ককে বলে যোগ্যতা সম্বন্ধ। | বাপের বেটা, সেপাইয়ের ঘোড়া, ‘ মনের মানুষ ইত্যাদি। | এর’ বিভক্তি |
অবলম্বন সম্বন্ধ | যাকে অবলম্বন করা হয় এবং যে অবলম্বন করে, তাদের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ককে বলে অবলম্বন সম্বন্ধ। | অন্ধের যষ্টি, ভবনদীর মাঝি, দীনের শরণ ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি, ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি |
ব্যাবসা সম্বন্ধ | ব্যবসায়ী এবং তার ব্যাবসার বস্তুর মধ্যে তৈরি সম্পর্ককে বলে ব্যাবসা সম্বন্ধ। | আদার ব্যাপারী, সোনার বেনে, লোহার কারবারি ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি |
অসম্ভব সম্বন্ধ | যে দুটি বিষয় বা বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হতেই পারে না, তাদের মধ্যে সম্পর্ককে বলে অসম্ভব সম্বন্ধ। | ঘোড়ার ডিম, ডুমুরের ফুল, সোনার পাথরবাটি ইত্যাদি। | ‘র’ বিভক্তি, ‘এর’ বিভক্তি ‘র’ বিভক্তি |
নির্ধারণ সম্বন্ধ | কোনো সমষ্টি এবং সেই সমষ্টির মতামত নির্ধারণের ক্ষমতা যাঁর হাতে থাকে, তাদের মধ্যে সম্পর্ককে বলে নির্ধারণ সম্বন্ধ। | গাঁয়ের মোড়ল, পালের গোদা, নাটের গুরু, দলের পাণ্ডা ইত্যাদি। | ‘এর’ বিভক্তি |
সম্বোধন পদ
যে পদের দ্বারা কাউকে ডাকা হয়, বা কাউকে উদ্দেশ্য করে কোনো কিছু বলা হয়, সেই পদকে বলা হয় সম্বোধন পদ। বাক্যের মধ্যে সম্বোধন পদেও ক্রিয়াপদের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় না, তৈরি হয় অকারক সম্পর্ক। যেমন –
- ওরে, এবার উঠে পড়।
- আমারে ফিরায়ে লহো, অয়ি বসুন্ধরে।
- হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে।
প্রথম বাক্যটিতে ‘ওরে’ পদটির সঙ্গে ক্রিয়াপদ ‘পড়’-এর কোনোরকম সংযোগ-সম্পর্ক নেই। এখানে ‘ওরে’ বলে ডাক এই ক্রিয়াপদের (‘পড়া’ কাজটির) যে কর্তা, তাকে দেওয়া হচ্ছে বা সম্বোধন করা হচ্ছে। ফলে এটি একটি অকারক সম্পর্ক।
অকারকে বিভক্তি
যদিও, মূলত সম্বন্ধ এবং সম্বোধন পদকেই অকারক বলে অভিহিত করা হয়, তবুও বাক্যে অনেক সময় এমন অনেক বিশেষ্য অথবা বিশেষ্যস্থানীয় পদ থাকে, যেগুলির সঙ্গেও ক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে, এই সম্পর্কগুলিকেও অকারক সম্পর্ক বলা যায়। উল্লেখ্য, এই অকারকগুলিও বিভত্তিচিহ্ন যুক্ত হয়। যেমন –
বাক্য | অ-কারক পদ | বিভক্তি |
ধর্মে আমি মুসলমান। | ধর্মে | ‘এ’ |
রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়। | রাজায় | ‘য়’ |
আস্তে কথা বলো। | আস্তে | শূন্য |
দশচক্রে ভগবান ভূত। | দশচক্রে | ‘এ’ |
ধনের চেয়ে প্রাণ বড়ো। | ধনের | ‘এর’ |
বিভক্তি ও অনুসর্গ অনুযায়ী কারকের শ্রেণিবিভাগ
বাংলা কারক ভাগ করা যায় বিভক্তির চিহ্ন অনুসারে। আবার সংস্কৃতে যেমন বিভক্তি দিয়েই কারক চিহ্নিত করা যেত, বাংলায় তা সবসময় হয় না। বাংলায় বিভক্তি ছাড়াও এমন কিছু আলাদা শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা বিভক্তির মতো পদের ভাঙা অংশ নয়। এগুলিকে অনুসর্গ বলে। যেমন – ‘থেকে’, ‘কাছে’, ‘জন্য’ ইত্যাদি। এই বিভক্তি ও অনুসর্গের ব্যবহারের দিক থেকে আমরা কারককে তিনভাগে ভাগ করতে পারি –
শুধু বিভক্তি যোগে বা বিভক্তি-প্রধান কারক
শুধু বিভক্তি যোগ করে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের নিদর্শন পাওয়া যায় কর্মকারক আর অধিকরণকারকে। ‘আমি স্বরূপকে বইটা দিয়েছি’। – এই বাক্যে দুটি কর্ম আছে। ‘বইটা’ হল মুখ্যকর্ম, যেখানে বিভক্তিচিহ্নের প্রয়োজন পড়েনি, শুধু ‘টা’ নিদের্শক রয়েছে। গৌণকর্ম হল ‘স্বরূপকে’, যেখানে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। আবার মুখ্যকর্ম অর্থে যদি কোনো ব্যক্তি বা প্রাণীকে বোঝানো হয়, তাহলেও ‘কে’, বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন – আপনারা স্যারকে নিয়ে মঞ্চে আসুন। এই অর্থে কর্মকারককে বিভক্তি-প্রধান কারক বলা যায়।
বিভক্তি-প্রধান আর-একটি কারক হল অধিকরণকারক। এই কারকে স্থান ও কালবাচক শব্দের সঙ্গে ‘এ’, ‘য়’, ‘তে’ বিভক্তিচিহ্ন যোগ হয়। যেমন –
‘এ’ বিভক্তি যোগে | ঘরে বাইরে অশান্তি চলছে। |
‘তে’ বিভক্তি যোগে | নদীতে মাছ ধরতে যাব। |
‘য়’ বিভক্তি যোগে | কলকাতায় এখন থাকি না। |
শুধু অনুসর্গ যোগে বা অনুসর্গ-প্রধান কারক
শুধু অনুসর্গ যোগে কারক বাংলায় একটি অপ্রধান কারক। অপাদান কারকে ‘হতে’, ‘চেয়ে’, ‘থেকে’ ইত্যাদি অনুসর্গ যুক্ত হয়। যেমন –
‘চেয়ে’ অনুসর্গ যোগে | এমন অপমানের চেয়ে মৃত্যু ভালো। |
‘থেকে’ অনুসর্গ যোগে | সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। |
‘হতে’ অনুসর্গ যোগে | লোভ হতে পাপের জন্ম। |
এ ছাড়াও, করণকারকের একটি বিশেষ রূপের ক্ষেত্রে অনুসর্গ যুক্ত হয়। যেমন – হাত দিয়ে নারকেলটা ছাড়ালাম।
বিভক্তি ও অনুসর্গ উভয় যোগে কারক
করণকারকের প্রধান রূপগুলির ক্ষেত্রে ও নিমিত্তকারকের ক্ষেত্রে বিভক্তি ও অনুসর্গের যুগপৎ প্রয়োগ দেখা যায়।
করণকারকের ক্ষেত্রে – বাংলায়, করণকারকের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে আমরা দেখি, কোনো না কোনো ভাবে পদের সঙ্গে বিভক্তিচিহ্ন এবং অনুসর্গ উভয়ই যুক্ত হচ্ছে। বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয় পদের সঙ্গে একেবারে জুড়ে। তাতে, বহুক্ষেত্রেই, পদের নিজস্ব চেহারা যায় বদলে। কিন্তু, অনুসর্গ যুক্ত হয় পদের থেকে আলাদা হয়ে। অর্থাৎ, অনুসর্গের উপস্থিতি স্বাধীন। কিন্তু অনুসর্গ এবং বিভক্তিচিহ্ন এই ক্ষেত্রে একই সঙ্গে মূল কারকটিকে নির্দেশিত করে। যেমন –
গেলাসে করে জল দাও।
এখানে ‘গেলাস’-এর সঙ্গে ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হওয়ার পরেও ‘করে’ অনুসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে। একইভাবে,
এই লোকটাকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না।
নিমিত্তকারকের ক্ষেত্রে – নিমিত্তকারকের ক্ষেত্রেও বাংলায় বিভক্তিচিহ্ন এবং অনুসর্গের উভয়ত ব্যবহার একটি অত্যন্ত সাধারণ ঘটনা। মূল পদের সঙ্গে এখানেও বিভক্তিচিহ্ন যুক্ত হয়ে পদটিকে বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত করে তুলতে সহায়তা করে। অনুসর্গ পদের পরে, পদের থেকে আলাদা হয়ে বসে পদটির অর্থ সুসম্পন্ন করে। বিভক্তি এবং অনুসর্গের এই মিলিত ব্যবহারই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাক্যে নিমিত্তকারককে চিহ্নিত করে। যেমন –
এই বইটা সুমিতার জন্য এনেছি।
এই বাক্যে ‘সুমিতা’র সঙ্গে ‘র’ বিভক্তি যুক্ত হওয়ার পরেও ‘জন্য’ অনুসর্গটি ব্যবহৃত হয়েছে। একইভাবে,
বন্ধুর কারণে ওকে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।
অপাদানকারকের ক্ষেত্রে – অপাদানকারককে চেনা যায় বিভক্তিচিহ্ন এবং অনুসর্গ ব্যবহারের মাধ্যমে। ক্রিয়ার সঙ্গে অপাদান সম্পর্কে সম্পর্কিত পদটির সাথে যুক্ত হয় বিভক্তিচিহ্ন। ফলে তা বাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে। পদের থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রেখে বসছে আরও একটি অনুসর্গ, যার মাধ্যমে পদটির কারক চিহ্নিত করা যাচ্ছে। যেমন –
গাছের থেকে ফুল ছিঁড়ো না।
এই বাক্যে মূল শব্দ ছিল ‘গাছ’। শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হল ‘এর’ বিভক্তি। ফলে, এটি হয়ে উঠল পদ এবং এর চেহারা দাঁড়াল – ‘গাছের’। এরপর, এই পদটির সঙ্গে যুক্ত হল অনুসর্গ – ‘থেকে’। ‘এর’ বিভক্তি এবং ‘থেকে’ অনুসর্গ মিলে ‘গাছের’ পদটির কারক বোঝাচ্ছে-অপাদান। এইরকম আরও একটি উদাহরণ হল –
ঘর থেকে বেরিয়ো না।
বাংলায় বিভিন্ন কারকের বিভিন্ন বিভক্তি
কর্তৃকারক
শূন্য বিভক্তি | রামবাবু কথাটা বললেন। |
‘এ’ বিভক্তি | পাগলে কিনা বলে! |
‘তে’ বিভক্তি | মাছিতে রোগ ছড়ায়। |
‘কে’ বিভক্তি | সব কাজই নিলয়কে করতে হয়। |
কর্মকারক
শূন্য বিভক্তি | কবি কবিতা লেখেন। |
‘কে’ বিভক্তি | গরিবকে অবজ্ঞা কোরো না। |
‘এরে’ বিভক্তি | সত্যেরে লও সহজে। |
‘এ’ বিভক্তি | পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে। |
করণকারক
শূন্য বিভক্তি | কৃষকেরা লাঙল চষছে। |
‘এ’ বিভক্তি | স্রোতে নৌকা ভেসে যায়। |
‘তে’ বিভক্তি | কাঁচিতে ভালো করে কাটা যাবে। |
‘দ্বারা’, ‘দিয়া’, ‘কর্তৃক’ অনুসর্গ | ছাগল দিয়ে ধান বোনা হয় না। |
নিমিত্তকারক
‘এ’ বিভক্তি | মহারাজা শিকারে গেলেন। |
‘কে’ বিভক্তি | অন্নহীনকে অন্ন দাও। |
‘জন্য’, ‘নিমিত্ত’, ‘উদ্দেশ্য’, ‘তরে’ ইত্যাদি অনুসর্গ | নিজের জন্য অন্যের ক্ষতি কোরো না। |
অপাদানকারক
শূন্য বিভক্তি | ছেলেটি স্কুল পালিয়েছে। |
‘এ’ বিভক্তি | ‘বিপদে মোরে রক্ষা করো/এ নহে মোর প্রার্থনা।’ |
‘তে’ বিভক্তি | সরষেতে তেল হয়। |
‘থেকে’, ‘হতে’ ইত্যাদি অনুসর্গ যোগে | বাবা সবে অফিস থেকে ফিরেছেন। |
অধিকরণকারক
শূন্য বিভক্তি | আমি সবে বাড়ি ফিরেছি। |
‘এ’ বিভক্তি | এই শহরে অনেক বিখ্যাত মানুষ জন্মেছেন। |
‘তে’ বিভক্তি | পড়াশোনাতে ছেলেটির জবাব নেই। |
সম্বন্ধপদ
‘র’ বিভক্তি | প্রকৃতি বাংলার সম্পদ। |
‘এর’ বিভক্তি ‘ | ‘আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।’ |
এক নজরে
- বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্যান্য পদের সম্পর্ককেই কারক বলে।
- বিভক্তির কোনো স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র অস্তিত্ব থাকতে পারে না। কারণ, আপাতভাবে এগুলি একেবারেই অর্থহীন। শব্দ যখন বাক্যে প্রযুক্ত হয়ে পদ হয়ে ওঠে, তখন এই পদগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের চিহ্নই হল বিভক্তি।
- কারক ছয় প্রকার – কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান, অধিকরণ।
- যে নিজে ক্রিয়াসম্পাদন করে, তাকে বলে কর্তৃকারক।
- যাকে উদ্দেশ্য করে কর্তা তার ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে বলে কর্মকারক।
- কর্তা যার সাহায্যে ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণকারক বলে।
- যার জন্য কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে নিমিত্তকারক বলে।
- যা থেকে কোনো কিছুর পৃথক হওয়া বোঝায়, তাকে অপাদান কারক বলে।
- যে স্থানে, কালে, বা বিষয়ে ক্রিয়াটি সম্পাদিত হয়, তাকে বলে অধিকরণকারক।
- সংস্কৃত ভাষার ব্যাকরণে যেভাবে সম্প্রদানকারকের উল্লেখ রয়েছে, বাংলায় তা নেই। তার কারণ, ‘যাকে’ দেওয়া হচ্ছে, তাকে স্বার্থশূন্যভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না তা বোঝার জন্য বাংলা ভাষায় কোনো আলাদা বিভক্তিচিহ্ন ব্যবহৃত হয় না। তাই তাকে কর্মকারক-এর মধ্যেই বিবেচনা করা হয়।
- বাংলায় জন্য অর্থে ‘নিমিত্ত’ হয়।
- কোনো নামপদের সম্পর্ক যদি ক্রিয়ার সঙ্গে না থাকে, বরং অন্য কোনো নামপদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, তখন তাকে সম্বন্ধপদ বলে। এটি কারকের অন্তর্ভুক্ত নয়।
- অকারক সম্পর্ক তিন রকম – সম্বন্ধপদ, সম্বোধন পদ ও অকারক বিভক্তি।
- বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও অসমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে সম্পর্ককেও কারক বলে।
- অনুসর্গকে কর্মপ্রবচনীয়-ও বলা হয়। অনুসর্গ মূল শব্দের সঙ্গে কখনোই যুক্ত অবস্থায় বসে না, আলাদা বসে। তা ছাড়া অনুসর্গের স্বাধীন অর্থ রয়েছে।
- শুধু স্থান বোঝালেই যে অধিকরণকারক হয়, তা নয়। কাল বোঝাতেও অধিকরণকারক হয়।
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর
একটি বাক্য লেখো যেখানে কারকের বিভক্তি হিসেবে শুধু শূন্য বিভক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।
আমি বাড়ি যাইনি। – এই বাক্যটিতে ‘আমি’ একটি কর্তৃকারক বাচক পদ এবং ‘বাড়ি’ হল অধিকরণকারক বাচক পদ। দুটি পদেই শূন্য বিভক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।
তির্যক বিভক্তি কাকে বলে?
যে বিভক্তিচিহ্ন একাধিক কারকে ব্যবহৃত হয়, তাকে তির্যক বিভক্তি বলে। যথা-এ।
বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে কী কী সাদৃশ্য রয়েছে?
বিভক্তি ও অনুসর্গের মধ্যে মিল –
বিভক্তি ও নির্দেশকের মধ্যে পার্থক্য কী?
বিভক্তি ও নির্দেশকের পার্থক্য –
একটি কর্তৃকারকের উদাহরণ দাও যেখানে কর্তাটি হল কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা।
বাঁধ ভেঙেছে। – এই বাক্যের নিম্নরেখ পদটি কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তার একটি উদাহরণ।
সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ক্রিয়াটি যে ধাতুনিষ্পন্ন, কর্তাও যদি সেই একই ধাতু থেকে উৎপন্ন হয়, তখন তাকে সমধাতুজ কর্তা বলে। উদাহরণ – কুকাজের ফল ফলেছে।
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা ও কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্মের একটি করে উদাহরণ দাও।
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্তা – আলোগুলো জ্বলে উঠল।
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম – সেদিনের প্রকৃতি বড়ো অদ্ভুত দেখাল।
করণকারকের বীপ্সার দুটি উদাহরণ দাও।
করণ কারকের বীপ্সার দুটি উদাহরণ হল – পায়ে পায়ে ফুটবল এগিয়ে চলল। ছবিতে ছবিতে সারা দেয়াল ভরে গেল।
নিমিত্তকারক ও সম্প্রদানকারকের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?
নিমিত্তকারক ও সম্প্রদানকারকের পার্থক্য –
অকারক সম্পর্ক বলতে কী বোঝ?
ক্রিয়াপদের সঙ্গে বাক্যের যে পদের কোনো সম্পর্ক থাকে না সেই পদ কখনোই কারক সম্পর্কে যুক্ত হয় না। এইরকম সম্পর্ককে বলে অকারক সম্পর্ক। যেমন – সম্বন্ধপদ, সম্বোধন পদ।
কারক কাকে বলে?
বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে ওই বাক্যের নামপদ অর্থাৎ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদগুলির সম্পর্ককেই কারক সম্পর্ক বলা হয়।
বিভক্তি কাকে বলে?
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দের শেষে যুক্ত হয়ে পদ গঠন করে বা শব্দকে বাক্যে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলে তাকে বিভক্তি বলা হয়।
বিভক্তি ও অনুসর্গের একটি পার্থক্য লেখো।
বিভক্তির নিজস্ব কোনো অর্থ নেই, কিন্তু অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।
নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে?
বাক্যের মধ্যে সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়ার আলাদা কর্তা থাকলে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে।
উদাহরণ দাও – আধার-আধেয় সম্বন্ধ।
ফলের ঝুড়ি নিয়ে লোকটি আমাদের বাড়িতে এল।
নির্দেশক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো বন্ধু বা ব্যক্তিকে বিশেষ অর্থে বোঝানোর জন্য এবং বস্তু বা ব্যক্তির সংখ্যা বোঝানোর জন্য কয়েকটি চিহ্নের ব্যবহার দেখা যায়। এই চিহ্নগুলিকে নির্দেশক বলে।
উদাহরণ – লোকটি কাল আমার কাছে এসেছিল। এখানে ‘টি’ হল নির্দেশক।
অকারক পদ কাকে বলে? বাংলা ভাষায় অকারক পদগুলির উল্লেখ করো।
বাক্যের যেসব পদের সঙ্গে ক্রিয়াপদের কোনো সম্পর্ক থাকে না, সেই পদগুলি ক্রিয়ার সঙ্গে কারক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। অথচ, তার সঙ্গে বাক্যের অন্য কোনো পদের সম্পর্ক থাকতে পারে। এই পদগুলিকেই বলে অকারক পদ।
অকারক পদ দু-প্রকার। – 1. সম্বন্ধপদ 2. সম্বোধন পদ।
উদ্দেশ্য কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো কোনো ক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি কর্ম ছাড়াও আর-একটি পরিপূরক কর্মের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক বিভক্তিযুক্ত কর্মটিকে বলে উদ্দেশ্য কর্ম। যেমন – রবি মাস্টারমশাইকে দেবতা মনে করে।
সে অঙ্কে কাঁচা। – রেখাঙ্কিত পদটির কারক-বিভক্তি নির্ণয় করো।
অধিকরণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।
অক্ষুণ্ণ কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কর্তৃবাচ্যের দুটি কর্ম থাকলে তারা যখন কর্মবাচ্যে অপরিবর্তিত থাকে তখন তাকে অক্ষুণ্ণ কর্ম বলে। যেমন – রাম শ্যামকে বইটা দিল > রামের দ্বারা শ্যামকে বইটা প্রদত্ত হল।
শব্দের পূর্বে বসেছে এমন একটি নির্দেশকের উদাহরণ দাও। (বাক্যে প্রয়োগ করে)
একখানা মেঘ ভেসে এল আকাশে।
উপবাক্যীয় কর্তার সংজ্ঞা-সহ উদাহরণ দাও।
কোনো বাক্যের অন্তর্গত উপবাক্য, কর্তা হিসেবে ক্রিয়া সম্পাদন করলে তা যথাক্রমে হবে বাক্যাংশ কর্তা ও উপবাক্যীয় কর্তা। উদাহরণ – সে আসবে না এটা হয় না।
অস্ত্র রাখো – নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।
কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি।
শূন্য বিভক্তি কাকে বলে?
যেসকল বিভক্তি শব্দের পরে বসে তাদের নামপদে পরিণত করে এবং অপ্রকাশিত থাকে তাদের বলে ‘শূন্য বিভক্তি’।
সমধাতুজ কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ক্রিয়ার যে ধাতুমূল সেখান থেকেই যদি কর্ম উৎপন্ন হয়, তাকে সমধাতুজ কর্ম বলে। যেমন – ছেলেটা কী খেলাই না খেলল!
কর্মকারকে শূন্য বিভক্তির উদাহরণ দাও।
কবি কবিতা লেখেন।
সম্বন্ধপদকে অকারক বলা হয় কেন?
সম্বন্ধপদের সঙ্গে যেহেতু ক্রিয়ার কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে না, তাই একে অকারক বলা হয়।
শব্দ বিভক্তির একটি উদাহরণ দাও।
সকলে বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেল। – এখানে ‘এ’ শব্দ বিভক্তি।
প্রযোজ্য কর্তা কাকে বলে?
যে কর্তা অন্যের উদ্যোগে বা পরিচালনায় কাজ করে তাকে প্রযোজ্য কর্তা বলে।
নিম্নরেখ শব্দটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো – কহ দাসে লঙ্কার কুশল।
কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি।
সম্বন্ধপদ কাকে বলে?
বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কহীন যে পদ পরবর্তী নামপদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তাকে সম্বন্ধ পদ বলে।
বিভক্তি ও অনুসর্গের একটি পার্থক্য লেখো।
বিভক্তি একটি চিহ্ন, তাই এর নিজস্ব অর্থ নেই; অন্যদিকে অনুসর্গ একটি শব্দ, তাই এর নিজস্ব অর্থ আছে।
মন্দিরে বাজছিল পূজার ঘণ্টা’ – নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।
অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
নীচে প্রদত্ত বাক্যগুলির নিম্নরেখ অংশটি কোন্ কারক, কোন্ বিভক্তি এবং অনুসর্গ তা উল্লেখ করো।
প্রশ্ন | উত্তর |
সে কথা বলবে না এটা হবে না। | কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
এতগুলো ভুল আমি সহ্য করব না। | কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
ও যে অসৎ তা মুখের আদল দিয়ে বোঝা যায়। | করণকারক, ‘দিয়ে’ অনুসর্গ। |
কেঁদে মরি আঁখিজলে। | করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি |
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে। | কর্মকারক, ‘রে’ বিভক্তি কর্তৃকারক, শূন্য বিভক্তি সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
আজকের কাগজটা পড়েছ? | সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
ঘৃণায় তাঁকে উপেক্ষা করছি। | করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি। কর্মকারক, ‘কে’ বিভক্তি। |
তোমার আসা ভালো হয়নি। | সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। |
তাহার আভাস পাইতাম কিন্তু নাগাল পাইতাম না। | কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
কোথা হইতে আসিয়াছ, নদী? | অপাদানকারক, ‘হইতে’ অনুসর্গ। সম্বোধন পদ, শূন্য বিভক্তি। |
আস্তে কথা বলো। | কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
আনন্দে সে পাগল হয়ে গেছে। | করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
অবিচলিত নয়নে কিয়ৎক্ষণ তাহার মুখনিরীক্ষণ করিল। | করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ভালো হয়নি। | কর্মকারক, শূন্য বিভক্তি। |
সবই গেছে ঋণে। | নিমিত্তকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
বছর বছর হিমালয়ে যাই। | অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
বিপদে মোরে রক্ষা করো। | অপাদানকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
টাকার গরম দেখাবেন না। | সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। |
এর বেশি কিছু বলতে তিনি বিরত থাকলেন। | অপাদানকারক, ‘র’ বিভক্তি। |
জটায় চিনি সন্ন্যাসী। | করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি। |
চতুর্দিক কুজ্ঝটিকায় ব্যপ্ত হয়েছে। | করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি। |
গৌরবির ভেতরটা ভয়ে শুকিয়ে গেল। | অপাদানকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
যশি জীবনে কখনও কারো কাছে দয়া পায়নি। | অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
হেমলক গাছের জঙ্গল দাবানল ও প্রস্তরবর্ষণে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেল। | করণকারক, শূন্য বিভক্তি। করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
তাঁবুর বাইরে রাত্রির ঘুটঘুটে অন্ধকার। | সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি। |
তখন জগৎটা এবং জীবনটা রহস্যে পরিপূর্ণ। | করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
অঘ্রানের সকালে জলের ওপর ঠান্ডা সর ভাঙেনি। | অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি। |
আহারে আমাদের শৌখিনতার গন্ধও ছিল না। | সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি। |
ভাবছে তারা সুন্দরেরই জয়ধ্বনি করছে জোরে। | কর্তৃকারক, শূন্য বিভত্তি। |
ভাঙনদেব আজ ভাঙের নেশায় কোথায় আছে চক্ষু বুজে। | কর্তৃকারক, শূন্য বিভত্তি। করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি। |
আজকের আলোচনায় আমরা কারক ও অকারক সম্পর্কে জেনেছি। বাংলা ব্যাকরণে, ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত শব্দের কাজ বা ভূমিকাকেই বলা হয় কারক। অন্যদিকে, ক্রিয়ার সাথে সম্পর্কহীন শব্দগুলোকেই বলা হয় অকারক।
কারক ও অকারকের মধ্যে পার্থক্য বোঝা বাংলা ভাষা সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যও কারক ও অকারক সম্পর্ক জানাটা অত্যন্ত জরুরি।
কারক ও অকারক সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় কারক ও অকারক সম্পর্ক লিখে পূর্ণ নম্বর পাওয়া সম্ভব।