দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

Gopi

পথের দাবী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি বিখ্যাত গল্প। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৮ সালের বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পত্রিকায়। গল্পটিতে, আমরা দেখি কিভাবে এক সাধারণ গ্রাম্য যুবক, সব্যসাচী মল্লিক, অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তার গন্তব্যে পৌঁছায়।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল – ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ কী? এরপরে পুলিশ স্টেশনে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।

পলিটিক্যাল সাসপেক্ট কথাটির অর্থ – ‘পলিটিক্যাল সাসপেক্ট’ কথাটির অর্থ রাজনৈতিকভাবে সন্দেহভাজন।

পরিস্থিতির বর্ণনা –

  • পুলিশ স্টেশনে হাজির করা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে পুলিশ স্টেশনে পুলিশের বড়োকর্তার সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল।
  • চেহারার বিবরণ – তাকে দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু যেন আর বেশিদিন নেই। তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গিয়েছিল। অল্প কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপাতে শুরু করেছিল। পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হলে সে নিজের নাম গিরীশ মহাপাত্র বলেছিল। সে তেলের খনিতে কাজ করত বলে জানায়। বর্মা থেকে সে রেঙ্গুনে এসেছিল।
  • সাজসরঞ্জাম – তার ট্যাঁক থেকে একটা টাকা, লোহার কম্পাস, মাপ করার জন্য কাঠের ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই আর-একটা গাঁজার কলকে বার করা হয়।
  • নিমাইবাবুর প্রশ্ন – পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু তাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, সে গাঁজা খায় কি না। তার উত্তরে গিরীশ মহাপাত্র বলে, গাঁজার কলকেটা সে রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছে। কারোর যদি কাজে লাগে সে দিয়ে দেবে।
  • পরিণতি – গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তা শুনে, তার সাজপোশাক, আচার-ব্যবহার দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে, এই গিরীশ মহাপাত্র কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, খানিকক্ষণ তার সঙ্গে তামাশা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

কাকাবাবু এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি। – বক্তা কে? তার সম্পর্কে এ কথা কেন বলা হয়েছে?

বক্তা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা অপূর্ব।

এ কথা বলার কারণ –

  • আটক করা ব্যক্তি – রেঙ্গুন পুলিশ স্টেশনে বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানার কয়েকজন মিস্ত্রিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। তাদের মধ্যে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে একটি লোককে রেখে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
  • চেহারার বিবরণ – তিরিশ-বত্রিশ বছর বয়সি লোকটি কাশতে কাশতে আসে। কিন্তু লোকটি ছিল ভীষণ রোগা। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠছিল। দেখে মনে হচ্ছিল, সংসারে তার মেয়াদ বোধহয় আর বেশি নেই। কোনো দুরারোগ্য অসুখ তার শরীরে যেন বাসা বেঁধেছে।
  • বেশভূষা – এ ছাড়াও তার পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল অদ্ভুত ধরনের। গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি, তার বুক- পকেট থেকে একটা রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে বিলিতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা, হাঁটুর ওপরে লাল ফিতা বাঁধা।
  • অপূর্বর মানসিকতা – হয়তো সব্যসাচী বলে সন্দেহ হলেও অপূর্ব মন থেকে চাইছিল ওই লোকটি যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়ে।
  • শেষের কথা – এই কারণেই অপূর্ব নিমাইবাবুকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।

বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় গছে। — বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার পরিচয় দাও।

অথবা, বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে। – বাবুটি কে? তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।

বাবুটির পরিচয় – এখানে বাবুটি বলতে শরৎচন্দ্রের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের অন্যতম চরিত্র গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় – গিরীশ মহাপাত্রের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি নয়। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে থানায় ধরে আনা হয়। রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যাওয়া লোকটি কাশতে কাশতে ভিতরে প্রবেশ করে। কাশির দমক দেখে মনে হয়েছিল তার আয়ু আর বেশিদিন নেই। মাথার সামনে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের কাছে চুল প্রায় ছিল না। আর চুল থেকে বেরোচ্ছিল লেবুর তেলের উগ্র গন্ধ। এর সঙ্গে মানানসই ছিল তার পোশাকও। গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। তার বুকপকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে সবুজ রঙের ফুলমোজা যেটা হাঁটুর ওপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা। পায়ে ছিল বার্নিশ করা পাম্পশু, যার তলাটা আগাগোড়া লোহার নাল বাঁধানো। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া একগাছি বেতের ছড়ি।

মহা হুঁশিয়ার পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি। – পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলা হয়েছে কেন? পুলিশ সম্পর্কে বক্তার এমন উক্তির পিছনে তার কোন্ মানসিকতা সক্রিয় লেখো।

পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার কারণ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে গিরীশ মহাপাত্র নামে এক ব্যক্তিকে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ভেবে পুলিশ নানাভাবে জিজ্ঞাসা ও তল্লাশি চালায়। শেষপর্যন্ত তার চেহারা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও কথাবার্তায় বিভ্রান্ত হয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বাংলা দেশের অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার নিমাইবাবুও ব্যর্থ হন সব্যসাচীকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু অপূর্ব বুঝেছিল গিরীশ মহাপাত্রই ছদ্মবেশী সব্যসাচী। এই কারণেই সে পুলিশের দলকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলেছে।

বক্তার মানসিকতা – পুলিশের দল সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের পিছনে তার সুপ্ত দেশপ্রেম সক্রিয় ছিল। কেন-না, সে মনেপ্রাণে চাইছিল সব্যসাচী যেন ধরা না পড়েন। তার এমনও বিশ্বাস ছিল যে, সব্যসাচী এত সাধারণ রাজবিদ্রোহী নন। তাঁর ছদ্মবেশ, এতই অকৃত্রিম ছিল যে, বোঝাই মুশকিল হত তিনি কোন্ দেশের মানুষ। দশ-বারোটা ভাষায় তিনি অনর্গল কথা বলতে পারতেন। সুতরাং তাঁকে ধরা সহজ কাজ নয়। অপূর্ব নিজেই বিস্মিত হয়েছিল সব্যসাচীর পোশাক ও চেহারা দেখে। পুলিশকে ‘নির্বোধ আহম্মক’ বলার মধ্য দিয়ে অপূর্ব একদিকে যেমন পুলিশের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করেছে, অন্যদিকে তেমনই পরোক্ষে সব্যসাচীর দক্ষতা আর কৌশলকে নীরবে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

পৃথিবীর যে-কোনো দেশে, যে-কোনো যুগে যে-কেউ জন্মভূমিকে তার স্বাধীন করবার চেষ্টা করেচে, তাকে আপনার নয় বলবার সাধ্য আর যার থাক, আমার নেই। – এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্বই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্ব বাংলা দেশের ছেলে।
  • স্বদেশি ভাবধারা – সে স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস করত। তাই সব্যসাচীর মতো দেশভক্তরা তার কাছে পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। শুধু দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে এঁরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। জীবনমৃত্যু এঁদের কাছে পায়ের ভৃত্য। দেশের মুক্তিপথের অগ্রদূত এই বীর নায়কদের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের ছিল দমনমূলক মনোভাব। যে-কোনো উপায়ে এঁদের গ্রেফতার করাই ছিল ব্রিটিশ পুলিশের লক্ষ্য। সেই উদ্দেশ্যেই পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রেঙ্গুনে এসেছেন। তাঁরই শিকার হলেন সব্যসাচী মল্লিক। অপূর্ব নিমাইবাবুকে কাকা বলে ডাকে। কিন্তু নিমাইবাবুর কার্যকলাপকে অপূর্ব সমর্থন করে না।
  • স্বদেশপ্রেম – স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেফতার করা মানেই দেশদ্রোহ করা। অপূর্ব চায় না যে, সব্যসাচী মল্লিক গ্রেফতার হোক। এই মনোভাব অপূর্বর দেশপ্রেমকেই তুলে ধরে। নিমাইবাবু তাঁর কর্তব্য পালন করতে এলেও অপূর্বর কাছে কর্তব্যের চেয়ে স্বদেশ বড়ো। পরের দাসত্ব করে আপন জন্মভূমির স্বাধীনতা অর্জনে বাধাদানকে অপূর্ব সমর্থন করতে পারে না। তাই যত বিপদই আসুক, অপূর্ব সব্যসাচীকে একান্ত নিজের জন বলে স্বীকার করতে পিছপা হয় না।
  • শেষের কথা – আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে অপূর্বর এই স্বদেশপ্রেমই বড়ো হয়ে উঠেছে।

তিনি ঢের বেশি আমার আপনার – অপূর্ব কেন এ কথা বলেছিল?

  • প্রেক্ষাপট – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পথের দাবী উপন্যাসটি মূলত স্বদেশি আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা হয়েছিল।
  • দেশপ্রাণ – পরাধীন ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার জন্য, ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য অনেকেই লড়াই করছিলেন, সব্যসাচী তাঁদেরই একজন। দেশের জন্য নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন। ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে দেখা যায় সব্যসাচী গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশ ধারণ করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।
  • স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাস – সব্যসাচী এমন ছদ্মবেশ ধারণ করতেন যাতে পুলিশ তাঁকে ধরতে না পারে। স্বদেশি ভাবধারায় বিশ্বাসী অপূর্ব সব্যসাচীকে মনেপ্রাণে সমর্থন করত। অপূর্ব জানত যে দেশকে সব্যসাচী ভালোবাসেন, সেই দেশকে স্বাধীন করার জন্যই তিনি লড়াই করছেন।
  • সব্যসাচীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা – পুলিশরা সব্যসাচীকে ধরার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল। দেশের টাকায় দেশের লোক দিয়েই শিকারের মতো তারা সব্যসাচীকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। আবার পুলিশকর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়, অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত। অপূর্ব এই কারণে নিজেও যথেষ্ট লজ্জিত ছিল। তাই সে বলেছে, দেশকে তথা দেশবাসীকে এই লজ্জা, অপমান, লাঞ্ছনা থেকে যে মুক্তি দিতে চায় সেই সব্যসাচী অপূর্বর কাছে আত্মীয় পুলিশকর্তার থেকেও অনেক বেশি আপনার এবং নিকটজন।

আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না, রামদাস। – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

প্রসঙ্গ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশ থেকে উদ্ধৃতিটি গৃহীত। বাংলা দেশের ছেলে অপূর্ব রেঙ্গুনে থাকার সময় ফিরিঙ্গি ও অন্যদের দ্বারা অত্যাচারিত ও অপমানিত হয়েছিল। সেই লাঞ্ছনার কথা বলতে গিয়েই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ – সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের বাঙালি সন্তান অপূর্ব চাকরির সূত্রে রেঙ্গুনে এসেছিল। কিন্তু রেল স্টেশনে একদিন বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেয়। স্টেশনে থাকা কোনো ভারতীয়ই এই ঘটনার প্রতিবাদ করেনি; বরং অপূর্বর হাড়-পাঁজরা খুব একটা ভাঙেনি জেনে তারা খুশি হয়েছে। এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে স্টেশনমাস্টার তাকে ভারতীয় বলে কুকুরের মতো বের করে দিয়েছিল। বিনা দোষে এই অত্যাচার সহ্য করায় এক না-বলা কষ্ট তার বুকের মধ্যে গুমরে ওঠে। তাই রামদাসের কাছে সে বলেছে, তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না তলওয়ারকর। অপূর্ব শিক্ষিত, সভ্য, বিচক্ষণ যুবক। শাসকের এই অকারণ অত্যাচারকে সে সমর্থন করতে পারে না। ইংরেজদের এই বর্বরের মতো আচরণ সমস্ত স্তরের দেশবাসীকেই সহ্য করতে হচ্ছে বুঝে অপূর্ব যন্ত্রণা অনুভব করেছে। আলোচ্য উক্তিটি তার সেই বেদনাকেই প্রকাশ করেছে।

বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না, হে তলওয়ারকর! তা-ছাড়া এত বড়ো বন্ধু! – মেয়েটির সম্পর্কে অপূর্বর এই মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব এই মন্তব্যটি করেছে। অপূর্বর বাড়ির ওপরের তলায় যে ক্রিশ্চান মেয়েটি থাকত তার সম্বন্ধে এই কথাটি বলা হয়েছে।
  • দায়িত্ববোধ – অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে একদিন চুরি হয়ে গিয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্যই টাকাকড়ি ছাড়া বাকি সমস্ত কিছু চুরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল। ক্রিশ্চান মেয়েটি নিজে চোরকে তাড়িয়ে অপূর্বর ঘর তালাবন্ধ করে দেয়। অপূর্ব না-ফেরা পর্যন্ত সে অপেক্ষা করে। অপূর্ব ফেরার পর সে নিজে চাবি দিয়ে সেই ঘর খুলে যা কিছু ছড়ানো জিনিসপত্র ছিল সেগুলো সব নিজের হাতে গুছিয়ে দেয়। যা চুরি গেছে আর যা যা চুরি যায়নি তার একটা নিখুঁত হিসাব সে বানিয়েছিল। সেই হিসেব দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল, একজন পাস করা অ্যাকাউন্ট্যান্টের পক্ষেও এমনটা সম্ভব নয়।
  • প্রকৃত বন্ধুভাবাপন্ন – অন্যের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তা এই মেয়েটিকে না দেখলে অপূর্ব বুঝতেও পারত না। সব কিছু দেখে অপূর্বর তাকে একজন প্রকৃত বন্ধু বলেই মনে হয়েছিল।
  • বুদ্ধিমত্তা – মেয়েটির প্রখর বুদ্ধি আর সবদিকে অদ্ভুত তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে অপূর্ব আশ্চর্য হয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।

আমার মা, আমার ভাই-বোনকে যারা এই-সব সহস্র কোটি অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায় তাদের আপনার বলে ডাকবার যে দুঃখই থাক আমি আজ থেকে মাথায় তুলে নিলাম। – কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? এর মধ্যে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?

উৎস ও প্রসঙ্গ – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশ থেকে উদ্ধৃত এই উক্তিটি করেছিল অপূর্ব। ফিরিঙ্গিদের হাতে একদিন অপূর্ব নিজে কীভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েছিল সেই যন্ত্রণার কথা বর্মা অফিসের সহকর্মী রামদাস তলওয়ারকরের কাছে বলতে গিয়ে সে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।

বক্তার মানসিকতা – অপূর্বকে বিনা দোষেই ফিরিঙ্গি যুবকেরা লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে কেবল ‘দেশি লোক’ এই অজুহাতে কুকুরের মতো দূর করে দিয়েছিল। এ অপমান পরাধীন দেশে প্রতিদিনই ঘটছে। অপূর্ব এই ঘটনায় খুব কষ্ট পায়; তার খুব রাগও হয়। সেই সঙ্গে সে স্থির সিদ্ধান্তে আসে যে, দেশের মা-ভাই-বোনকে যারা সমস্ত অত্যাচার থেকে উদ্ধার করতে চায়, তারাই তার সত্যকার আপনার লোক। আর সেই মানুষগুলোকে কাছের মানুষ হিসেবে গ্রহণ করার সমস্ত দুঃখই সে মাথা পেতে নিতে চায়।

এ কথায় অপূর্বর দেশপ্রেমিক সত্তাটি যেমন প্রকাশ পেয়েছে, তেমনই সাহস এবং সহমর্মিতার প্রকাশ ঘটেছে। সে কেবল নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত নয়। বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার এক প্রবল ইচ্ছে ধরা পড়েছে তার কথায়। পাশাপাশি এক অনিশ্চিত জীবনকে গ্রহণ করার কঠিন প্রতিজ্ঞাও অপূর্বর কথায় ফুটে উঠেছে।

আমাদের তিনি আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষী, কিন্তু তাই বলে আমার দেশের চেয়ে তো তিনি আপনার নন। – কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? এই উক্তির আলোকে বক্তার মনোভাবটি ব্যক্ত করো।

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – অপূর্ব নিমাইবাবু সম্পর্কে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।

বক্তার মনোভাব – নিমাইবাবুর সঙ্গে অপূর্ব পুলিশ স্টেশনে গেলে সেখানে তার সঙ্গে পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ওরফে গিরীশ মহাপাত্রের দেখা হয়। সেখানে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্র এবং তার সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র তদন্ত করতে গেলে এক হাস্যকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। তলওয়ারকরের সঙ্গে এই নিয়ে কথোপকথন প্রসঙ্গে অপূর্বর মনোভাবের কয়েকটি দিক ধরা পড়েছে –

  • দেশপ্রেমিক – অপূর্ব সাধারণ চাকুরিজীবী হলেও পরাধীন দেশকে বিদেশি শাসনমুক্ত দেখতে চায়। দেশের কল্যাণের জন্যই আন্তরিকভাবে সে চায়, সব্যসাচী মল্লিক যেন পুলিশের হাতে ধরা না পড়েন। নিমাইবাবু অপূর্বর বাবার বন্ধু, পরম আত্মীয়। কিন্তু তিনি সুদূর বাংলা দেশ থেকে বর্মায় এসেছেন যে সব্যসাচী মল্লিককে হাজতে পুরতে, তিনি আসলে দেশপ্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা। তাই নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী মল্লিকই অপূর্বর আত্মার আত্মীয়।
  • স্পষ্টবক্তা – রামদাস অফিসের সহকর্মীমাত্র হলেও তার কাছে অপূর্ব নিজের আত্মীয় সম্পর্কে যে ভাবনা মেলে ধরেছে-তাতে সহজেই অপূর্বকে স্পষ্টবক্তা বলা যায়।
  • আবেগপ্রবণ – এ কথাও ঠিক, অপূর্ব আবেগপ্রবণ। তাই রামদাস যখন নিমাইবাবুর কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য অপূর্বর প্রতি দিকনির্দেশ করেন, তখনই অপূর্ব জোর করে অনেকটা আবেগের বশে, প্রশ্নে উল্লিখিত কথাগুলো বলেছিল।

ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রাকালে অপূর্বর কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বর্ণনা করো।

  • শুরুর কথা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশে অপূর্ব রেঙ্গুন থেকে ভামো নগরের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল।
  • নিয়মমাফিক কাজ – অপূর্ব প্রথম শ্রেণির যাত্রী ছিল। সন্ধ্যা হলে সে প্রতিদিন নিয়ম করে যা করে, সেই সবই করেছিল।
  • ভ্রান্ত ধারণা – রাতের খাওয়ার পর অপূর্ব যখন শুতে যায় তখন সে ভেবেছিল প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় নিশ্চিন্ত মনে বাকি রাস্তাটা যেতে পারবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারে এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
  • অপূর্বর বিরক্তি – সেই রাতে পুলিশের লোক এসে বার-তিনেক তার ঘুম ভাঙিয়ে নাম, ঠিকানা লিখে নিয়ে যায়। অবশেষে অপূর্ব বিরক্ত হয়।
  • সাব-ইনস্পেকটরের সঙ্গে বচসা – অপূর্ব উক্ত ঘটনার প্রতিবাদ করলে বর্মা সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে তাকে বলে যে, সে ইউরোপিয়ান নয়, তাই এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এই কথা শুনে অপূর্ব তাকে বলে যে, সে প্রথম শ্রেণির যাত্রী। তাই কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে না। তার কথায় ওই সাব-ইনস্পেকটর হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিল, এইসব নিয়ম শুধু রেলওয়ে কর্মচারীদের জন্য। তাই পুলিশ যদি ইচ্ছে করে তাহলে তাকে ট্রেন থেকে নামিয়েও দিতে পারে, তার প্রতিবাদ করার কোনো অধিকার নেই।
  • ইতিকথা – এভাবে এভাবে পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজদের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার আর-একটি ঘটনা অপূর্বর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়।

কিন্তু ইহা যে কত বড়ো ভ্রম তা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল। – ‘সে’ কে? উদ্ধৃত অংশটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

সে – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পাংশের উল্লিখিত অংশে ‘সে’ বলতে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গ – অফিসের গোলমাল থামানোর জন্য বড়ো সাহেব অপূর্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন রেঙ্গুন থেকে ভামোর অফিসে যাওয়ার জন্য। এই ট্রেন যাত্রায় অপূর্বর যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা তার ভাবনায় ছিল না। সেখানে সে যে বিরক্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় তার উল্লেখ করতে গিয়েই সে মন্তব্যটি করেছে।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ – অপূর্ব ছিল ট্রেনের প্রথম শ্রেণির যাত্রী। তার কামরায় অন্য কোনো লোক ছিল না। সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হলে অপূর্ব ঈশ্বর উপাসনা শেষ করে। তারপর সে রাতের খাওয়াদাওয়া সেরে হাত-মুখ ধুয়ে সুস্থমনে শয্যাগ্রহণ করে। অপূর্ব আশা করেছিল যে প্রথম শ্রেণির যাত্রী হওয়ায় সকাল পর্যন্ত কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কিন্তু পুলিশের লোকরা রাত্রে বার-তিনেক ঘুম ভাঙিয়ে তার নাম-ঠিকানা লিখে নেয়। এইভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানোয় অপূর্ব প্রতিবাদ করে। তখন সাব- ইনস্পেকটরের কাছে শুনতে হয় আবার অপূর্ব যখন নিজেকে প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে এবং তাই তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো যায় না বলে মন্তব্য করে তখন পুলিশ অফিসারটি তাকে বলেন যে ইচ্ছা করলে সে তাকে নামিয়েও দিতে পারে। ভারতীয়দের অপমানের আরও একটা দৃষ্টান্ত অপূর্বর অভিজ্ঞতায় যুক্ত হয়।

পথের দাবী একটি অসাধারণ গল্প। এটি একটি আদর্শ গল্প, যেটি আমাদেরকে অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। গল্পটি মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer