দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী গল্পটিতে বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকের বাংলা সমাজের একটি অন্ধকার চিত্র ফুটে উঠেছে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো সব্যসাচী মল্লিক, যিনি একজন রাজনৈতিক কর্মী। তিনি ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং নির্যাতনের শিকার হন। গল্পের মাধ্যমে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয়দের উপর যে অত্যাচার চালানো হতো তার একটি নির্মম চিত্র তুলে ধরেছেন।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করিয়া দেখা গেল – পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে কে কী দেখল?

যার কথা বলা হয়েছে – উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।

যা দেখেছিল – পুলিশ স্টেশনে প্রবেশ করে অপূর্ব দেখল, হলঘরের মধ্যে জনা-ছয়েক বাঙালি নিজেদের জিনিসপত্র নিয়ে বসে আছে। তারা ছিল বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় কাজ করা মিস্ত্রি। সেখানের জলহাওয়া সহ্য না হওয়ায় রেঙ্গুনে চলে এসেছিল। অপূর্ব দেখল তাদের সঙ্গে থাকা টিনের তোরঙ্গ ও পুঁটলি খুলে তদন্ত করা হচ্ছে। পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে অন্য আরেকটি ঘরে একজনকে আটকে রাখা হয়েছে। আর উপস্থিত যাত্রীদের নাম, ঠিকানা ও তাদের বিবরণ নিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে।

লোকটি কাশিতে কাশিতে আসিল – লোকটি কে? তাকে দেখে অপূর্বর কী মনে হয়েছিল?

লোকটির পরিচয় – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশের আলোচ্য অংশে লোকটি নিজেকে গিরীশ মহাপাত্র বলে পরিচয় দিয়েছিল।

তাকে দেখে অপূর্বের ধারণা – লোকটি কাশতে কাশতে নিমাইবাবুর সামনে হাজির হয়েছিল। কাশির পরিশ্রমে সে এমনভাবে হাঁপাচ্ছিল যে তাকে দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল তার আয়ু বোধহয় আর বেশিদিন নেই। কিন্তু তার দৃষ্টি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো। এই দৃষ্টির গভীরে যে প্রাণশক্তি লুকোনো ছিল সেখানে মৃত্যুও যেন প্রবেশ করতে সাহস পায় না।

সাবধানে দূরে দাঁড়ানোই প্রয়োজন। – কোথা থেকে, কেন সাবধানে দূরে দাঁড়ানো প্রয়োজন?

আলোচ্য অংশে গিরীশ মহাপাত্রের দৃষ্টি থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। কৌতূহলী অপূর্ব সব্যসাচী সন্দেহে আটক করা গিরীশ মহাপাত্রকে লক্ষ করছিল। লোকটি একটুখানি কাশির পরিশ্রমেই হাঁপাচ্ছিল। অপূর্বর মনে হচ্ছিল একটা ক্ষয়রোগ দ্রুত তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে চলেছে। কিন্তু লোকটির চোখের দৃষ্টি ছিল অদ্ভুত। তার চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো রহস্যময়। বিচক্ষণ অপূর্ব বুঝেছিল, গভীর জলাশয়ে খেলা যেমন বিপজ্জনক, তেমনই গিরীশ মহাপাত্রের রহস্যময় দৃষ্টি থেকে দূরে দাঁড়ানোই শ্রেয়।

কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়া আছে। – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? কীজন্য সে আজও বেঁচে আছে?

উদ্দিষ্ট জন – সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

আজও বেঁচে থাকার কারণ – অত্যন্ত রুগ্‌ণ চেহারা হওয়া সত্ত্বেও গিরীশ মহাপাত্রের দুটি চোখের অদ্ভুত দৃষ্টি অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল। গভীর জলাশয়ের মতো সেই দুটি চোখের দৃষ্টিতে এক অজানা রহস্যময়তার ছাপ ছিল। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে। মৃত্যু সেখানে পৌঁছাতে পারে না। সেইজন্যই সে আজও বেঁচে আছে।

অপূর্ব তাহার পরিচ্ছেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল। – কার কথা বলা হয়েছে? তার পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে গিরীশ মহাপাত্রের কথা বলা হয়েছে।

পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা – গিরীশ মহাপাত্রের গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি। তার বুক-পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি। পায়ে ছিল সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। আর হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি।

বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে – কে কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ উক্তির কারণ কী?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের শখ সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

উক্তির কারণ – গিরীশ মহাপাত্রের মাথার সামনে দিকে বড়ো বড়ো চুল ছিল কিন্তু ঘাড় ও কানের চুল ছিলে একেবারে ছোটো করে ছাঁটা। তার গায়ে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার-পাঞ্জাবি। তার বুক- পকেট থেকে বাঘ-আঁকা একটি রুমালের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছিল। তার পরনে ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, পায়ে সবুজ রঙের ফুল মোজা এবং বার্নিশ করা পাম্পশু। গিরীশ মহাপাত্রের হাতে ছিল হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি। রোগা, ক্ষীণদেহী মানুষটার এই পোশাকের বাহার দেখেই নিমাইবাবু আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

কেবল আশ্চর্য সেই রোগা মুখের, অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টি – কার চোখের কথা বলা হয়েছে? সেই চোখের বর্ণনা দাও।

উদ্দিষ্ট জন – এখানে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে।

চোখের বর্ণনা – গিরীশ মহাপাত্রের রুগ্‌ণ এবং ক্ষয়ে যাওয়া চেহারার মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় ছিল তার চোখ দুটো। সে চোখের আয়তন, দীপ্তি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা অর্থহীন। গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটো ছিল অত্যন্ত গভীর জলাশয়ের মতো। সেই চোখ দুটো থেকে দূরে দাঁড়ানোটাই শ্রেয়। আর এই চোখের অতলেই তার প্রাণশক্তিটুকু লুকানো ছিল, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।

কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি – বক্তা কে? কী কারণে তিনি এ কথা বলেছিলেন?

বক্তা – উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা নিমাইবাবু।

এ কথা বলার কারণ – গিরীশ মহাপাত্রের কাছে গাঁজার কলকে পেয়ে যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে সে গাঁজা খায় কি না, তার উত্তরে গিরীশ বলেছিল সে নিজে খায় না। গাঁজার কলকেটি সে পথে কুড়িয়ে পেয়েছে এবং যদি কখনও কারোর কাজে লাগে ভেবে সেটিকে কাছে রেখেছে। তার এই অদ্ভুত পরোপকারের ইচ্ছের জন্য নিমাইবাবু তাকে ‘সদাশয় ব্যক্তি’ বলেছিলেন।

যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচরের কথাটা একবার ভেবে দেখুন। – কে, কাকে খুঁজছিলেন? তাঁর কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে কেন?

যিনি যাঁকে খুঁজছিলেন – বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী মল্লিককে খুঁজছিলেন।

কালচারের কথা ভেবে দেখতে বলার কারণ – গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা ছিল খুবই হাস্যকর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সংসারে তাঁর মেয়াদ আর বেশি দিন নেই। একজন ডাক্তারি পড়া উচ্চশিক্ষিত রাজবিদ্রোহী কখনও এ রকম ক্ষীণদেহী এবং রোগগ্রস্ত হতে পারেন না। তাঁর পোশাকের মধ্যেও থাকবে রুচির ছাপ। এই প্রসঙ্গেই গিরীশ মহাপাত্র ও সব্যসাচী মল্লিকের কালচারের পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

কিন্তু এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়োবাবু। — কাকে ‘জানোয়ার’ বলা হয়েছে? তাকে জানোয়ার বলার কারণ কী?

যাঁকে বলা হয়েছে – এখানে সব্যসাচী সন্দেহে ধৃত গিরীশ মহাপাত্রকে ‘জানোয়ার’ বলা হয়েছে।

জানোয়ার বলার কারণ – গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষা ও চেহারাটা ছিল বেশ হাস্যকর। তার মাথার সামনের দিকে ছিল বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকে চুল নেই বললেই চলে। সামান্য চুলেও সে এত লেবুর তেল মেখেছিল যে তার গন্ধে থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। এই অবাঞ্ছিত লোকটি কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না ভেবেই বিব্রত জগদীশবাবু তাকে ‘জানোয়ার’ বলেছিলেন।

পথের দাবী রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

পথের দাবী রচনায় গিরীশ মহাপাত্রের চেহারার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা হল, তার ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। একটু কাশির পরিশ্রমেই সে হাঁপিয়ে উঠেছে। তার শীর্ণ দেহ দেখে মনে হচ্ছে সে যেন কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত। তার মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল, কিন্তু ঘাড় ও কানের দিকের চুল অত্যন্ত ছোটো করে ছাঁটা। মাথায় চেরা সিঁথি, অতিরিক্ত লেবুর তেলে চুলগুলি সিক্ত হয়ে গেছে। কিন্তু তার চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো। তার অতল দৃষ্টির গভীরে যেন ক্ষীণ প্রাণশক্তিটুকুই লুকানো আছে।

তুমি এখন যেতে পারো মহাপাত্র। – বক্তা কে? মহাপাত্রকে যেতে বলা হয়েছে কেন?

বক্তা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু।

মহাপাত্রকে যেতে বলার কারণ – রাজবিদ্রোহী সব্যসাচী সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে থানায় আটক করা হয়েছিল। তার কাছে থাকা বাক্স-তোরঙ্গ এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পরীক্ষা করে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচীর কালচারের সঙ্গে গিরীশ মহাপাত্রের চেহারা ও বেশভূষার কোনো মিল ছিল না। সেই কারণে নিমাইবাবু তাকে চলে যেতে বলেছিলেন।

পুলিশের দলকে আজকের মতো নির্বোধ আহম্মক হতে বোধ করি কেউ কখনো দেখেনি। — কে, কেন এ কথা বলেছিল?

বক্তা – অপূর্ব রামদাসকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।

এ কথা বলার কারণ – পুলিশের দল পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্র বলে একজনকে আটক করেছিল। সেই ছিল আসল সব্যসাচী কিন্তু অদ্ভুত ছদ্মবেশে এবং আচরণে সে খুব সহজেই পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছিল এবং চলে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিল। গিরীশ মহাপাত্র সেজে সব্যসাচী পুলিশকে বোকা বানানোয় পুলিশের দলকে অপূর্বর নির্বোধ ও আহাম্মক মনে হয়েছিল।

চিন্তিত মুখে জিজ্ঞাসা করিল। — কে কী কারণে চিন্তিত ছিল?

উদ্দিষ্ট জন – উল্লিখিত অংশে রামদাস তলওয়ারকরের চিন্তার কথা বলা হয়েছে।

চিন্তিত হওয়ার কারণ – অপূর্ব পুলিশ স্টেশন থেকে নিজের বাড়ি ফেরার পর তার মাথায় ঘুরছিল পুলিশ স্টেশনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা। পলিটিকাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে ঘিরে গড়ে ওঠা পুরো হাস্যকর ঘটনাটাই অপূর্ব দেখেছিল। বাড়ি ফিরে সেই অপরিচিত রাজবিদ্রোহীর কথাই সে ভাবছিল। সংসার থেকে খানিকক্ষণের জন্য যেন সে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল। অপূর্বকে এইরকম অন্যমনস্ক দেখে তলওয়ারকর ভেবেছিল অপূর্বর বাড়ির কেউ বোধহয় অসুস্থ, তাই তলওয়ারকর চিন্তিত হয়ে পড়েছিল।

কাল তাহার ঘরে চুরি হইয়া গেছে। – অপূর্বর ঘরে চুরি হওয়ার ঘটনাটি বর্ণনা করো।

অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরি হয়ে যায়। টাকাকড়ি কিছুই বাঁচানো যায়নি। কিন্তু একই বাড়িতে থাকা ক্রিশ্চান মেয়েটির জন্য টাকাকড়ি ছাড়া বাকি যেসমস্ত জিনিসপত্র ছিল সেইসব বাঁচানো গেছিল। না-হলে সমস্ত কিছুই চুরি যেতে পারত। সেই ক্রিশ্চান মেয়েটি চোর তাড়িয়ে নিজে হাতে ছড়ানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দেয় এবং চুরি হওয়া ও রক্ষা পাওয়া জিনিসের একটা ফর্দও তৈরি করে দেয়।

বাস্তবিক, এমন তৎপর, এতবড়ো কার্যকুশলা মেয়ে আর যে কেহ আছে মনে হয় না। — কোন্ মেয়েটি? তার সম্পর্কে এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

মেয়েটির পরিচয় – যে ক্রিশ্চান মেয়েটি চুরি হওয়ার সময়ে অপূর্বকে সাহায্য করেছিল তার কথা বলা হয়েছে।

এরূপ মন্তব্যের কারণ – অপূর্বর অনুপস্থিতিতে তার ঘরে চুরির সময় ওপর তলার ক্রিশ্চান মেয়েটি চোর তাড়িয়ে নিজের তালা দিয়ে ঘর বন্ধ করে রেখেছিল। অপূর্ব ফিরে এলে সে ঘরের তালা খুলে দিয়েছিল এবং ঘরের ছড়ানো জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়েছিল। কী আছে আর কী গেছে, তার নিখুঁত হিসেবও সে অপূর্বকে দিয়েছিল। বিদেশিনি মেয়েটির এই সহানুভূতি এবং কার্যকুশলতা অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল বলেই সে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছে।

তারপর সকালে গেলাম পুলিশে খবর দিতে। – বক্তা কে? কোন্ খবরের কথা বলা হয়েছে?

বক্তা – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটির বক্তা অপূর্ব।

খবরের বিবরণ – রেঙ্গুনে অপূর্বর অনুপস্থিতির সময় তার বাড়িতে চুরি হয়ে যায়। বাড়ির ওপরতলায় থাকা ক্রিশ্চান মেয়েটির সহযোগিতায় অপূর্বর টাকা পয়সা ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র অবশ্য রক্ষা পায়। সন্দেহ করা হয় ফয়ায় বর্মা নাচ দেখতে যাওয়া তেওয়ারিকে। চুরি না করলেও এবিষয়ে সে সাহায্য করেছে বলে অপূর্ব অনুমান করে। এই চুরির খবর দেওয়ার জন্যই অপূর্ব থানায় গিয়েছিল।

গভর্নমেন্টের কত টাকাই না এরা বুনো হাঁসের পিছনে ছুটোছুটি করে অপব্যয় করলে! – এরা কারা? বুনো হাঁসের পিছনে ছোটার কথা বলা হয়েছে কেন বুঝিয়ে দাও।

এদের পরিচয় – প্রশ্নে উল্লিখিত অংশে রেঙ্গুনে বিপ্লবীদের ধরার কাজে নিয়োজিত পুলিশের দলের কথা বলা হয়েছে।

বুনো হাঁসের পিছনে ছুটতে বলার কারণ – বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে ধরতে গিয়ে ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রকে নিমাইবাবু এবং পুলিশের দল চিনতে পারেনি। গিরীশ মহাপাত্র তার অদ্ভুত পোশাক এবং আচরণে সবাইকে বিভ্রান্ত করলেও অপূর্ব অনুমান করে নিয়েছিল যে সেই সব্যসাচী। ‘বুনো হাঁস’ অর্থাৎ বিপ্লবীদের পিছনে যে অনুসন্ধানের নামে সরকারি টাকার আসলে অপব্যয়ই হচ্ছে এ কথাই অপূর্ব বোঝাতে চেয়েছে।

যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার – কে, কেন এ কথা বলেছিল?

বক্তা – উদ্ধৃতাংশটির বক্তা অপূর্ব।

এ কথা বলার কারণ – পুলিশের কর্তা নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়। অপূর্ব তাঁকে কাকা বলে ডাকত আর এটাও জানত যে তিনি তার শুভাকাঙ্ক্ষী। অপরদিকে অপূর্বর মনের অনেকখানি জুড়ে রয়েছেন বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। তাকেই ধরার জন্য পুলিশের বড়ো কর্তা চেষ্টা করছিলেন। আসলে সব্যসাচীর দেশের প্রতি ভালোবাসা, দেশের জন্য স্বার্থত্যাগ অপূর্বকে মুগ্ধ করেছিল। তাই এইরকম মহাপ্রাণ ব্যক্তিকে নিজের আত্মীয়ের থেকেও তার অনেক বেশি কাছের মনে হয়েছে।

অপূর্ব তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া অর্থ বুঝিল – অপূর্ব কার মুখের দিকে চেয়ে কী অর্থ বুঝল?

অপূর্ব যার মুখের দিকে তাকিয়েছিল – আলোচ্য অংশে অপূর্ব রামদাসের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।

অপূর্ব-র উপলব্ধি – বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু সব্যসাচীকে ধরবেন বলে সুদূর রেঙ্গুনে এসেছেন। বাঙালি হয়েও নিমাইবাবুরা ব্রিটিশের দাসত্ব করেছেন—এটাতেই অপূর্বর আপত্তি ছিল। অপূর্বর এই কথা শুনে রামদাস ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কারণ ইংরেজ পুলিশ সম্পর্কে অপূর্বর এরূপ মন্তব্য করা রামদাসের উচিত বলে মনে হয়নি। তাই সে একটু গম্ভীর হয়ে বসেছিল। অপূর্ব রামদাসের মুখ দেখে সেটাই বুঝেছিল।

তা ছাড়া আমার বড়ো লজ্জা এই যে এদের যিনি কর্তা তিনি আমার আত্মীয়, আমার পিতার বন্ধু। – কে, বক্তার পিতার বন্ধু? তাঁকে নিয়ে বক্তার লজ্জার কারণ কী?

বক্তার পিতার বন্ধু – বাঙালি পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু হলেন বক্তা অপূর্বর পিতার বন্ধু।

বক্তার লজ্জার কারণ – নিমাইবাবু বাঙালি। ইংরেজদের অধীনে তিনি চাকরি করেন। বাঙালি এবং একইসঙ্গে একজন ভারতবাসী হয়েও তিনি স্বদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামী সব্যসাচীকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়েছেন। নিমাইবাবুর এই কার্যকলাপ অপূর্ব মেনে নিতে পারেনি। নিজের দেশের মুক্তি সংগ্রামীকে গ্রেফতার করার তৎপরতা দেখে অপূর্ব বিশেষভাবে কষ্ট পেয়েছে। এই কারণেই সে নিমাইবাবুকে নিয়ে নিজের লজ্জা প্রকাশ করেছে।

তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না। — লাঞ্ছনার ঘটনাটি কে কাকে বলেছিল? কোন্ লাঞ্ছনার কথা এখানে বলা হয়েছে?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – উদ্ধৃত লাঞ্ছনার ঘটনাটি অপূর্ব রামদাস তলওয়ারকরকে বলেছিল।

লাঞ্ছনার ঘটনাটি ব্যাখ্যা – শুধু দেশি লোক বলে অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেল কেবল ভারতীয় বলে স্টেশনমাস্টার তার নিজের দেশের রেলস্টেশন থেকেই তাকে অপমান করে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়। ইংরেজের কাছে নিজের দেশে এইভাবেই লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল অপূর্বকে।

মনে হলে দুঃখে লজ্জায় ঘৃণায় নিজেই যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়ে যাই। – বক্তা কে? এ কথা বলার কারণ কী?

বক্তা – আলোচ্য উক্তিটির বক্তা অপূর্ব।

এ কথা বলার কারণ – একদিন কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে মিলে অপূর্বকে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দেয় আর অপূর্ব তার প্রতিবাদ করতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার অপূর্বকে অপমানকরে তাড়িয়ে দেয়। এই চরম অপমান হিন্দুস্থানের লোকদের গায়ে লাগেনি। লাথির চোটে যে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি সেটা শুনেই তারা খুশি হয়েছিল। কিন্তু অপূর্বর অপমান, দেশের অপমান, তাদের গায়েই লাগেনি বলে অপূর্ব এ কথা বলেছিল।

এই সুখবরে তারা বেশ খুশি হয়ে গেল। – সুখবরটি কী? তাদের প্রতি বক্তার মনোভাব ব্যক্ত করো।

সুখবর – অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মারা সত্ত্বেও যে তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি এটাই ছিল সুখবর।

বক্তার মনোভাব – অপূর্ব যখন ফিরিঙ্গি ছেলেদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল, তখন সেখানে ভারতীয়রা উপস্থিত থাকলেও কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। উপরন্তু লাথির চোটে তার হাড়-পাঁজরা ভেঙে যায়নি-এটাই ছিল উপস্থিত ভারতীয়দের কাছে খুশির ব্যাপার। দেশাত্মবোধ এবং আত্মমর্যাদাহীন নির্বোধ এই ভারতীয়দের প্রতি অপূর্বর ঘৃণা ও রাগ প্রকাশ পেয়েছে উক্তিটির মধ্য দিয়ে।

কৈ, এ ঘটনা তো আমাকে বলেন নি? – কে, কাকে এ কথা বলেছে? কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – রামদাস তলওয়ারকর অপূর্বকে এ কথা বলেছে।

উদ্দিষ্ট ঘটনা – অপূর্বকে বিনা দোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। এই অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার শুধু ভারতীয় বলে অপূর্বকে রেলওয়ে স্টেশন থেকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছিল। এই তীব্র অপমান থেকেই অপূর্বর সিদ্ধান্ত যে যারাই দেশের মানুষকে অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে চায় যত দুঃখই থাক তাদেরকে সে আপন করে নেবে। এখানে এই ঘটনার কথাই বলা হয়েছে।

আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারে দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না – বক্তা কাকে এ কথা বলেছিলেন? কোন্ অবিচারের দণ্ডভোগ তাঁকে ব্যথিত করেছিল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বক্তা অপূর্ব উদ্ধৃত কথাটি রামদাসকে বলেছিল।

অবিচারের দণ্ডভোগ – বিনা অপরাধে অপূর্বকে কতগুলো ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে বার করে দিয়েছিল। অপূর্ব অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলেও কোনো ফল হয়নি। দেশি লোক হওয়ায় সাহেব স্টেশনমাস্টার তাঁর কোনো কথা না শুনেই তাঁকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়। বিনা কারণে শুধু ভারতীয় হওয়ার জন্য এই লাঞ্ছনা অপূর্বর মনের মধ্যে তীব্র যন্ত্রণার জন্ম দেয়। এই অবিচারের দণ্ডভোগ অপূর্বকে কষ্ট দিয়েছিল।

বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন। – বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?

বক্তা – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পথের দাবী’ রচনাংশে উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা অপূর্ব।

বক্তার বাবার দেওয়া চাকরি – অপূর্ব জানিয়েছিল যে, পুলিশ অফিসার নিমাইবাবু তার আত্মীয় এবং তার বাবার বন্ধু। তিনিই নিমাইবাবুকে পুলিশের চাকরি করে দিয়েছিলেন।

নানা কারণে রেঙ্গুনে তাহার আর একমুহূর্ত মন টিকিতেছিল না। – এখানে কার কথা বলা হয়েছে? তার মন না টেকার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট জন – উদ্ধৃত অংশে অপূর্বর কথা বলা হয়েছে।

মন না টেকার কারণ – অপূর্ব বোথা কোম্পানির চাকরি নিয়ে রেঙ্গুনে এসেছিল। সেখানে নানা নির্যাতন অপূর্বকে সহ্য করতে হয়েছিল। একবার স্টেশনে বিনা দোষে ফিরিঙ্গি ছেলেরা তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। প্রতিবাদ জানাতে গেলে সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে কুকুরের মতো স্টেশন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ভারতীয়রাও কোনো প্রতিবাদ করেনি। এইসব ঘটনার জন্যই রেঙ্গুনে অপূর্বর মন টিকছিল না।

অতএব যাওয়াই স্থির হইল – কোথায়, কী কারণে যাওয়াই স্থির হল?

উদ্দিষ্ট স্থান – অপূর্বর অফিসের প্রয়োজনে তার ভামো যাওয়া স্থির হয়েছিল।

সেখানে যাওয়ার কারণ – অফিসের বড়োসাহেব অপূর্বকে বলেছিলেন যে, ভামোর অফিসে কোনো শৃঙ্খলা নেই। এ ছাড়া ম্যান্ডালে, শোএবো, মিকথিলা অফিসেও গণ্ডগোল হয়েছে। তাই অপূর্ব যেন সব অফিসগুলো একবার গিয়ে দেখে আসে, কারণ বড়োসাহেবের অবর্তমানে তাকেই সব দায়িত্ব নিতে হবে। নানা কারণে রেঙ্গুনে অপূর্বর মন টিকছিল না। তাই সে নিজেও চাইছিল রেঙ্গুনের বাইরে যেতে। বড়োসাহেবের নির্দেশে তাই অপূর্ব ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করল।

অপূর্ব হঠাৎ চকিত হইয়া বলিয়া উঠিল, — কখন কী দেখে অপূর্ব চমকে উঠেছিল?

অপূর্ব তার অফিসের বড়ো সাহেবের নির্দেশে ভামোর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। স্টেশনে যখন ট্রেন ছাড়তে কিছুক্ষণ দেরি ছিল, সেই সময় সে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখতে পায়। পুলিশ স্টেশনে দেখা বিচিত্র পোশাক- পরিচ্ছদ ও চালচলনের গিরীশ মহাপাত্রকে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে সেখানে দেখতে পায় অপূর্ব। তাই সে বিস্মিত ও চমকিত হয়।

আপাতত ভামো যাচ্ছি। তুমি কোথায়? – কে, কাকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে? উত্তরে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী জানিয়েছিল?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে এ কথা জিজ্ঞাসা করেছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য – অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সে কোথায় যাচ্ছে। উত্তরে গিরীশ জানিয়েছিল, এনাঞ্জাং থেকে তার দুজন বন্ধুর আসার কথা ছিল বলেই সে ওই সময়ে স্টেশনে উপস্থিত হয়েছে। এর পর সে জানায়, পুলিশ স্টেশনে তাকে অহেতুক হয়রান করা হয়েছে। সে ধর্মভীরু মানুষ বলে গাঁজা খায় না, জোচ্চুরিও করে না। সে আরও বলে যে, কপালের লেখা খেউ খণ্ডাতে পারে না।

তুমি তো ইউরোপিয়ান নও – এ কথা কে, কী কারণে বলেছিল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – এ কথা সাব-ইনস্পেকটর অপূর্বকে বলেছিল।

এ কথা বলার কারণ – অপূর্ব ট্রেনে করে ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। প্রথম শ্রেণির টিকিট কেটে সে ভেবেছিল নিশ্চিন্তমনে যাত্রা করতে পারবে, কোনো কিছুতে ব্যাঘাত ঘটবে না। কিন্তু তা হয়নি। পুলিশের লোক এসে বার-তিনেক তার ঘুম ভাঙিয়েছিল, নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে গিয়েছিল। এইভাবে বারবার পুলিশের লোক এসে তাকে বিরক্ত করায়, সে যখন প্রতিবাদ করে তখন বর্মার সাব-ইনস্পেকটর কটুকণ্ঠে তাকে বলে, সে ইউরোপিয়ান নয়।

কোন এক অদৃষ্ট অপরিজ্ঞাত রাজবিদ্রোহীর চিন্তাতেই ধ্যানস্থ হইয়া রহিল। — কে ধ্যানস্থ হয়েছিল? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির এরুপ ধ্যানস্থ হওয়ার কারণ কী?

ধ্যানস্থ ব্যক্তি – উল্লিখিত অংশে অপূর্বর ধ্যানস্থ হয়ে থাকার কথা বলা হয়েছে।

ধ্যানস্থ হওয়ার কারণ – স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি অপূর্বর মনের গভীরে লুকানো ছিল অগাধ শ্রদ্ধা ও ভক্তি। পুলিশ স্টেশনে গিরীশ মহাপাত্রকে দেখার পরে স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামী সব্যসাচীর কাল্পনিক মূর্তি মনের ক্যানভাসে এঁকে নিয়ে সে তাঁর চিন্তাতেই মগ্ন হয়ে পড়ে। শুধু দেশের জন্য সংসার-পরিজন, ব্যক্তিসুখ ত্যাগ করে এই মহান বিপ্লবী এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেই বিপ্লবীর চিন্তায় মগ্ন হয়েই অপূর্ব ধ্যানস্থ হয়ে পড়ে।

সেদিন কেবল তামাশা দেখতেই গিয়েছিলাম। — কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? বক্তা কী তামাশা দেখেছিল?

উদ্দিষ্ট দিন – অপূর্ব যেদিন তার ঘরে চুরির সংবাদ পুলিশকে জানাতে গিয়েছিল, সেই দিনের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

তামাশার বর্ণনা – সব্যসাচী সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে পুলিশ স্টেশনে আটক করা হয়েছিল। তার টিনের তোরঙ্গ এবং কাছে থাকা জিনিসপত্র পরীক্ষা করে পুলিশের বড়োকর্তা নিমাইবাবু তেমন কিছুই খুঁজে পাননি। বরং তার চেহারা এবং পোশাক নিয়ে থানার মধ্যে একটা হাসির পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। নিমাইবাবুদের তল্লাশির ধরন এবং গিরীশ মহাপাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনাকেই অপূর্ব তামাশা বলেছে।

কিন্তু এই হাসিতে তলওয়ারকর যোগ দিল না। — কোন্ হাসি? তাতে তলওয়ারকরের যোগ না দেওয়ার কারণ কী?

হাসির কথা – রাজবিদ্রোহী সব্যসাচীর পিছনে নিমাইবাবু সদলবলে এদেশ-ওদেশ করে বেড়াচ্ছিলেন। এঁদের ব্যর্থ তৎপরতার জন্য অপূর্ব হেসেছিল।

তলওয়ারকরের যোগ না দেওয়ার কারণ – তলওয়ারকর বিচক্ষণ ব্যক্তি। অপূর্বর সুপ্ত দেশপ্রেম মাঝে মাঝেই প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু চারিদিকে ব্রিটিশ পুলিশ ওঁত পেতে ছিল। এখানে ভারতপ্রেম দেখানো মানেই রাজদ্রোহের অপরাধে অপরাধী হওয়া। আর তেমনটি হলে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া নিশ্চিত। এই কারণেই নিজেকে এবং অপূর্বকে নিরাপদে রাখতেই তলওয়ারকর হাসিতে যোগ দেয়নি।

পথের দাবী গল্পটি ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতীয়দের উপর যে অত্যাচার চালানো হতো তার একটি নির্মম চিত্র তুলে ধরেছে। গল্পের মাধ্যমে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ব্রিটিশ শাসনবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরেছেন। তিনি দেশপ্রেমের মহিমা ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বার্তা দিয়েছেন।

Rate this post


Join WhatsApp Channel For Free Study Meterial Join Now
Join Telegram Channel Free Study Meterial Join Now

মন্তব্য করুন