দশম শ্রেণি – বাংলা – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান (প্রবন্ধ) রাজশেখর বসু

Gopi

এই পাঠ্যপুস্তকটি পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক স্তরের বাংলা ভাষার পাঠ্যক্রমের অংশ। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিষ্য রাজশেখর বসু রচিত। পাঠ্যপুস্তকটিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়কে বাংলা ভাষায় সহজবোধ্যভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

পাঠ্যপুস্তকটিতে মোট ষোলটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে বিজ্ঞানের সংজ্ঞা, ইতিহাস এবং বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ে শক্তি, শক্তির রূপান্তর এবং শক্তির সঞ্চয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্থ অধ্যায়ে বল, গতি এবং ভারসাম্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম অধ্যায়ে তাপ এবং তাপগতিবিদ্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ষষ্ঠ অধ্যায়ে শব্দ এবং শব্দতরঙ্গ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সপ্তম অধ্যায়ে আলো এবং আলোর প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অষ্টম অধ্যায়ে তড়িৎ এবং চুম্বকত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। নবম অধ্যায়ে রাসায়নিক পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দশম অধ্যায়ে জীববিজ্ঞানের মূলনীতিগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। একাদশ অধ্যায়ে উদ্ভিদবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বাদশ অধ্যায়ে প্রাণীবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। ত্রয়োদশ অধ্যায়ে মানবদেহের গঠন এবং কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চতুর্দশ অধ্যায়ে জীবজগতের বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চদশ অধ্যায়ে পরিবেশ ও পরিবেশগত সমস্যাগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এবং ষোড়শ অধ্যায়ে বিজ্ঞানের প্রয়োগগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এই পাঠ্যপুস্তকটি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা দেওয়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী করে তোলার এবং তাদেরকে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তাভাবনা করার দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করার জন্যও ডিজাইন করা হয়েছে।

দশম শ্রেণি – বাংলা – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান

লেখক পরিচিতি

ভূমিকা – সাহিত্যিক রাজশেখর বসু ‘পরশুরামু’ ছদ্মনামেই বেশি পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাস্যরসিক গল্পকার, পরিভাষা ও অভিধান রচয়িতা, রসায়নবিদ এবং অনুবাদক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন রাজশেখর বসু।

জন্ম ও শৈশব – ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৬ মার্চ বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ের কাছে বামুনপাড়া গ্রামে মামার বাড়িতে রাজশেখর বসুর জন্ম হয়। পণ্ডিত চন্দ্রশেখর বসু এবং লক্ষ্মীমণি দেবীর দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলেবেলার অনেকটা সময়ই দ্বারভাঙ্গায় কাটে। মুঙ্গের, খড়গপুর এবং বাংলা দেশের বাইরে ঘুরে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে।

শিক্ষাজীবন – ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দ্বারভাঙ্গার রাজ স্কুলে পড়াশোনা করে এনট্রান্স পাস করেন। ১৮৯৫-১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পাটনা কলেজে পড়েন। ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানে অনার্স-সহ বিএ পাস করেন। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে রসায়নে এমএ পরীক্ষা দেন এবং প্রথম স্থান অধিকার করেন।

কর্মজীবন – বিজ্ঞানচর্চার প্রতি ভালোবাসা থেকেই রাজশেখর বসু ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রফুল্লচন্দ্র সেন প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। খুব অল্প মাইনেতে কাজ শুরু করলেও ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে নিজের দক্ষতায় তিনি কোম্পানির পরিচালক হয়ে ওঠেন। একদিকে গবেষণার কাজ, অন্যদিকে ব্যাবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ডিরেক্টর রূপে এই কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত থাকেন।

সাহিত্যজীবন – ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাজশেখর বসুর লেখালিখির শুরু। ১৯২২-এ পরশুরাম ছদ্মনামে ‘শ্রীশ্রীসিদ্ধেশ্বরী লিমিটেড’ নামে এক ব্যঙ্গ রচনা প্রকাশ হওয়ার পরই তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে- লঘুগুরু বিচিন্তা, ভারতের খনিজ, কুটির শিল্প প্রভৃতি প্রবন্ধগ্রন্থ, কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মিকী রামায়ণ ব্যাসের মহাভারত, গীতা প্রভৃতির অনুবাদ এবং চলন্তিকা নামক অভিধান। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থ হল— গড্ডলিকা কজ্জনী হনুমানের স্বপ্ন ধুস্তরী মায়া প্রভৃতি।

সাহিত্যরীতি – গল্প বলার ঢংয়ে কাহিনিকে ফুটিয়ে তোলা, চরিত্রের নিপুণ বিবরণে তাকে জীবন্ত করে তোলা তাঁর পরিচিত সাহিত্যরীতি। উদ্ভট ঘটনা এবং কল্পনা শক্তির মিশেলে তাঁর সৃষ্ট সাহিত্য হয়ে উঠেছে অনন্য। বুদ্ধিদীপ্ত হাস্যরসের সাহায্যে ব্যঙ্গ-কৌতুক রচনায় তাঁর দক্ষতা লক্ষণীয়।

সম্মাননা – রাজশেখর বসু ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানান সংস্কার সমিতি ও ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিভাষা সংস্কারের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিলিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকার রাজশেখর বসুকে পদ্মভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত করেন।

জীবনাবসান – ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশেখর বসু পরলোকগমন করেন।

উৎস

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধটি ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত বিচিন্তা গ্রন্থের অন্তর্গত।

বিষয়সংক্ষেপ

বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান পড়েন, আলোচ্য প্রবন্ধে রাজশেখর বসু তাঁদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন, তাঁরা রয়েছেন প্রথম শ্রেণিতে। অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়েরা এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক মানুষেরা এই শ্রেণিতে পড়েন। দ্বিতীয় শ্রেণিতে আছেন সেইসব মানুষেরা যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় সামান্য হলেও বিজ্ঞান পড়েছেন।

প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সঙ্গে বিজ্ঞানের বিশেষ পরিচয় নেই, যদিও কয়েকটি সাধারণ পারিভাষিক শব্দ ও মোটাদাগের বৈজ্ঞানিক তথ্য তাঁদের জানা থাকতে পারে। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি তথ্য সম্পর্কে তাঁরা ওয়াকিবহাল নন। তাঁরা যখন বাংলা ভাষায় লেখা কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা পড়েন, তখন বৈজ্ঞানিক বিষয়টি শিখে নিলেই তাদের চলে, ভাষা সেখানে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণিতে যাঁরা আছেন, অর্থাৎ যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতেই বিজ্ঞান পড়েছেন তাঁদের ক্ষেত্রে বাংলায় লেখা কোনো বাক্য সহজ মনে হয় না, অর্থও পরিষ্কার হয় না। এর কারণ হল ইংরেজি ভাষার প্রতি পক্ষপাত। এই শ্রেণির পাঠকদের যেহেতু ভাষাই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় এবং সেই সমস্যা এড়িয়ে বিষয়টি জানতে হয়, তাই এই পাঠকদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান পড়তে হলে অন্য পাঠকদের তুলনায় বেশি প্রচেষ্টা করতে হয়।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় কয়েকটি বাধার কথা প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন। প্রথম বাধা হল পরিভাষার সমস্যা। বাংলায় পারিভাষিক শব্দের অভাব দূর করতে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ উদ্যোগ নিয়েছিল। সেখানে পন্ডিত লেখকরা নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করেছেন। কিন্তু তাঁরা একসাথে কাজ না করায় নতুন রচিত পরিভাষায় সংগতি থাকেনি। এরপরে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক, ভাষাতত্ত্ববিদ, সংস্কৃতজ্ঞ ও কয়েকজন লেখককে নিয়ে পরিভাষা রচনার একটি প্রচেষ্টা চালায় এবং সেটি অনেক বেশি সফল হয়। লেখকের মতে বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো বাংলা শব্দ না পাওয়া গেলে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে ব্যবহার করা যায়। যেমন, অক্সিজেন, প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন ইত্যাদি।

পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় অত্যন্ত কম। ফলে বাংলায় পপুলার সায়েন্স লেখা সহজ কাজ নয়। তবে প্রাবন্ধিক মনে করেন, এদেশে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

বিজ্ঞান আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় রচনাপদ্ধতি অনেক লেখকই আয়ত্ত করতে পারেননি। অনেকক্ষেত্রে তাঁদের ভাষা আড়ষ্ট ও ইংরেজি শব্দের আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে দাঁড়ায়। ইংরেজি শব্দের অর্থের ব্যাপ্তির সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা প্রতিশব্দ ব্যবহার করতে গিয়ে তাঁরা অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করেন। ইংরেজিতে কোনো বাক্য ভেবে নিয়ে তা বাংলায় প্রকাশ করতে গিয়ে রচনার ভাষা উৎকট হয়ে পড়ে। When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction -এই বাক্যের বাংলা অনুবাদ যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। -এইরকম না করে ‘নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না’ লিখলে বিষয়টি অনেক বেশি স্পষ্ট হয়।

আবার অনেকে মনে করেন যে পারিভাষিক শব্দ একেবারে বাদ দিয়ে দিলে বিষয়টি বেশি সহজ হয়। কিন্তু সবসময় তা ঘটে না। যেমন, ‘আলোকতরঙ্গ’-এর বদলে ‘আলোর নাচন’ বা ‘কাঁপন’ লিখলে তা বৈজ্ঞানিকভাবে যথাযথ হয় না। বাক্যের অর্থও স্পষ্ট হয় না। এ-প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক শব্দের ‘ত্রিবিধ’ (তিনপ্রকার) শক্তির কথা বলেছেন। তিনি অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা-এই তিনপ্রকার শক্তির মধ্যে বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে ‘অভিধা’-র ব্যবহারই যথাযথ বলে মনে করেছেন। প্রবন্ধের শেষে রাজশেখর বসু বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের আর-একটি দোষের কথা বলেছেন। অল্পবিদ্যার ওপর নির্ভর করে বিজ্ঞান রচনার ফলে অনেক ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তথ্যের ভুল থেকে যায়। তাই সম্পাদকের উচিত কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে তা যাচাই করিয়ে নেওয়া।

নামকরণ

যে-কোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমেই পাঠক বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে। লেখকের চিন্তাধারার আভাসও পাওয়া যায় নামকরণ থেকেই। যে-কোনো রচনারই নামকরণ বিভিন্ন দিক থেকে হতে পারে। কখনও তা হয় চরিত্রধর্মী, আবার কখনও বিষয়মুখী। ব্যঞ্জনাধর্মী নামকরণও অনেক সাহিত্যিকের প্রথম পছন্দ। প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে অনেকগুলি সমস্যার কথা বলেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই তিনি পাঠকদের অবস্থান স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। পাঠকদের মধ্যে ইংরেজি-না-জানা অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে এবং অল্পশিক্ষিত বয়স্ক লোক। যেমন একদিকে আছেন, তেমনই অন্যদিকে আছেন ইংরেজি-জানা ও ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়া অল্প কিছু পাঠক। প্রথম শ্রেণিতে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা বিজ্ঞান সেভাবে পড়েননি, তবে কোনো ভাষার প্রতি পক্ষপাত তাঁদের নেই। কিন্তু দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠকদের ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা রয়েছে। তাই ইংরেজি প্রবন্ধ পড়ায় অভ্যস্ত সেইসব মানুষের কাছে বাংলায় রচিত বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের অর্থ স্পষ্ট হয় না।

পাঠকদের এই অবস্থান নির্দিষ্ট করার পর বাংলায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে যে যে সমস্যা আছে তার আলোচনা শুরু করেন তিনি। প্রথমেই আসে পারিভাষিক শব্দের অভাবের কথা। এই সমস্যার সমাধানে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগী হয়। তবুও বহু ইংরেজি শব্দকে এখনও আমাদের বাংলা বানানে লিখতে হয়। এ-দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অত্যন্ত কম, সেই কারণে এখানে ইউরোপ বা আমেরিকার মতো পপুলার সায়েন্স রচনা করা কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবার প্রথমে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসারের প্রয়োজন। অনুবাদের ক্ষেত্রে আক্ষরিক অনুবাদ ও আড়ষ্টতা থেকে দূরে থাকা, সহজ ও স্পষ্ট বাংলায় লেখা, অলংকার, উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োক্তি বাদ দিয়ে শব্দের মূল অর্থকে সামনে রাখা-এগুলি বিজ্ঞানের প্রসারে প্রয়োজন। এ ছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে বৈজ্ঞানিক তথ্য যথাযথভাবে না জেনে যেন প্রবন্ধ রচনা করা না হয়। তাতে রচনার মধ্যে তথ্যের ভুল থাকার সম্ভাবনা রয়ে যায়।

রাজশেখর বসুর এই প্রবন্ধের লক্ষ্যই হল বাংলায় বিজ্ঞান রচনাকে আরও সহজ এবং জনপ্রিয় করে তোলার জন্য যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করা প্রবন্ধের বিভিন্ন উদাহরণ সহযোগে সেই সমস্যাগুলি তিনি আলোচনা করেছেন এবং তার সমাধানের পথ দেখিয়েছেন। এই প্রবন্ধের নামকরণ থেকে স্পষ্টই তাঁর বক্তব্য বিষয়টি আন্দাজ করা যায়। এবং এই কারণেই তাঁর দেওয়া নামটি সার্থক হয়েছে, বলা চলে।

দশম শ্রেণির বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তকটি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। এই পাঠ্যপুস্তকটি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং তাদের বিজ্ঞানের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে। পাঠ্যপুস্তকটিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মৌলিক ধারণাগুলি সহজ ও সরল ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকটিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র, নীতি ও আইনগুলির ব্যবহারিক প্রয়োগের উদাহরণগুলিও দেওয়া হয়েছে।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer