বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে রাজশেখর বসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তিনি মনে করেন, বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার চারপাশের জগতকে বুঝতে পারে এবং সে জগতকে উন্নত করতে পারে।
তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। — কাদের কথা বলা হয়েছে? দুই শ্রেণির পরিচয় দাও।
উদ্দিষ্ট পাঠকশ্রেণি – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধের আলোচ্য অংশে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠকদের কথা বলা হয়েছে। প্রাবন্ধিক বাংলা ভাষার বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন।
দুই শ্রেণির পাঠকদের পরিচয় – পাঠকদের যে দুটি শ্রেণির কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন তাদের প্রথমটি হল যারা ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে। দ্বিতীয়টি হল যারা ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পড়েছে।
- প্রথম শ্রেণি – প্রথম শ্রেণির পাঠকদের বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনো পূর্বপরিচয় নেই। কিছু সাধারণ ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ তাদের জানা থাকতে পারে কিংবা কিছু মোটাদাগের বৈজ্ঞানিক তথ্যও তাদের অভিজ্ঞতায় থাকতে পারে। কিন্তু কোনো সুশৃঙ্খল আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্যই তাদের জানা থাকে না। প্রথম শ্রেণির পাঠকের ক্ষেত্রে সুবিধা হল বিষয়টি বুঝতে পারলেই তারা বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষা করে নিতে পারে, ভাষা সেখানে বাধা হয় না।
- দ্বিতীয় শ্রেণি – কিন্তু সমস্যা হয় যাদের ইংরেজি শিক্ষা হয়েছে তাদের নিয়ে। এই শ্রেণির পাঠকদের বাংলায় বিজ্ঞান শিখতে গেলে তাদের ইংরেজিতে বিজ্ঞান পড়ার ও বোঝার অভ্যাস ত্যাগ করতে হয়। ইংরেজির প্রতি যে আনুগত্য তাও ত্যাগ করতে হয়। এই কারণে তাদের পাঠ বা শিক্ষা কষ্টকর হয়ে ওঠে।
যে লোক আজন্ম ইজার পরেছে তার পক্ষে হঠাৎ ধুতি পরা অভ্যাস করা একটু শক্ত। – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ অবলম্বনে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
- উৎস ও প্রসঙ্গ – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার অন্যতম পাঠক মনে করেছেন ইংরেজি জানা এবং ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান পড়তে অভ্যস্ত মানুষদের। তাঁদের বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে সমস্যার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
- তাৎপর্য – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার পাঠকদের প্রাবন্ধিক দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। সেই দুটি শ্রেণির মধ্যে প্রথম শ্রেণির পাঠকেরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ নন এবং বিজ্ঞানের সঙ্গেও তাঁদের যোগাযোগ অতি সামান্য। কয়েকটি পারিভাষিক শব্দ অথবা বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান ছাড়া তাঁদের আর কিছুই জানা নেই। এঁদের ক্ষেত্রে বাংলায় বিজ্ঞান শেখার বিষয়টি কোনো সমস্যার নয়। কিন্তু সমস্যাটা হল তাঁদের নিয়ে যাঁরা ইংরেজি ভাষায় দক্ষ এবং তাতেই শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। বাংলায় কিছু শেখার সময় এঁদের ইংরেজিতে শেখা জ্ঞান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এই ‘পূর্ব সংস্কার দমন করে’ তাঁদের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের পাঠ নিতে হয়, যা তাঁদের পক্ষে শ্রম ও সমস্যার বিষয়। এই কাজটা আজন্ম ইজার পরা লোকের হঠাৎ ধুতি পরতে বাধ্য হওয়ার মতো। অত্যন্ত মনোযোগ আর আগ্রহের সঙ্গে মাতৃভাষা শিক্ষা করলে তবেই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।
প্রীতির সহিত মাতৃভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে হয়। – কোন্ শ্রেণির পাঠক সম্পর্কে লেখকের এই মন্তব্য? তাঁর এই মন্তব্যের কারণ কী?
- উদ্দিষ্ট শ্রেণির পাঠক – রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় বাংলা বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার সেই পাঠকদের কথা বলেছেন, যাঁরা ইংরেজি ভাষা জানেন।
- প্রাবন্ধিকের উদ্দিষ্ট মন্তব্যের কারণ – প্রাবন্ধিকের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলা ভাষায় রচিত বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধের পাঠক দুই শ্রেণির। প্রথম শ্রেণিতে আছে ইংরেজি না জানা বা অল্প জানা পাঠকরা। এঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে কোনো পূর্ব পরিচয় নেই। এই শ্রেণির পাঠকদের ক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সমস্যা তৈরি করলেও ভাষা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কারণ তাঁরা বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ। বিষয়টিকে কেবল যথাযথভাবে বুঝে নিলেই হয়। কিন্তু যেসব পাঠক ইংরেজি জানে এবং ইংরেজি ভাষায় কমবেশি বিজ্ঞান পড়েছে তাদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা অন্যরকম। সে যখন কোনো বৈজ্ঞানিক রচনা পড়ে তখন তাকে পূর্ব সংস্কার অর্থাৎ ইংরাজির প্রতি পক্ষপাত বর্জন করতে হয়। আগে তাকে বাংলা ভাষাকে আন্তরিকভাবে আয়ত্ত করতে হয়। প্রাবন্ধিক উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন যে, ব্রহ্মমোহন মল্লিকের যে বাংলা জ্যামিতি ছেলেবেলায় তাঁর বুঝতে অসুবিধা হয়নি সেটিই যারা ইংরেজিতে জিওমেট্রি পড়েছে তাদের কাছে বোধগম্য হয় না। এই ভাষাগত সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে যাওয়াই সবথেকে কঠিন কাজ।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শীর্ষক প্রবন্ধটিতে পরিভাষা রচনা প্রসঙ্গে লেখক যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তা আলোচনা করো।
অথবা, পরিভাষা রচনা একজনের কাজ নয়। – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ নামক রচনায় পরিভাষা বিষয়ে প্রাবন্ধিকের যে মতামত উল্লিখিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় লেখো।
অথবা, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে ‘পরিভাষা সমস্যা’ বিষয়ে লেখক যে আলোচনা করেছেন তা সংক্ষেপে লেখো।
- কথামুখ – রাজশেখর বসু ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ নামক প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে যেসব বাধার কথা বলেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল পারিভাষিক শব্দের অভাব।
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদকৃত পরিভাষা – একবার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী লেখক নানা বিষয়ে পরিভাষা রচনা করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু তাঁরা কাজটি একসাথে বসে করেননি, ফলে নতুন রচিত পরিভাষাগুলির মধ্যে সমতা ছিল না। একই বিষয়ের অনেকগুলি করে পরিভাষা তৈরি হয়েছিল।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কৃত পরিভাষা – ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মানুষদের একত্রিত করে পরিভাষা সংকলন তৈরি করতে পেরেছিল। এই সংকলনটি অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও যথাযথ। তবে সংকলনটি আরও বিস্তৃত হওয়া প্রয়োজন বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন।
- ইংরেজি শব্দকেই বাংলা বানানে রূপদান – যতদিন উপযুক্ত বাংলা পরিভাষা তৈরি না হচ্ছে ততদিন ইংরেজি শব্দকেই বাংলা বানানে লিখে চালানো ভালো হবে বলে লেখক মনে করেছেন।
- নিজস্ব রচনাপদ্ধতি অনুসরণ – পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা সম্ভব নয়, আবার পরিভাষা তৈরির সময় বিজ্ঞান আলোচনার যে নিজস্ব রচনাপদ্ধতি রয়েছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
- নতুন পরিভাষা তৈরি – কিন্তু সবার আগে প্রয়োজন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাগুলির থেকে সাহায্য নিয়ে সকলে মিলে নতুন পরিভাষা গড়ে তোলা।
পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান বিশদে লেখো।
- বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের অবদান – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে একটি বড়ো সমস্যা হল পারিভাষিক শব্দের ঘাটতি। যথাযথ পরিভাষা না থাকায় বাংলা ভাষায় লেখা বিজ্ঞানের প্রবন্ধ সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন লেখক নানা বিষয়ের পরিভাষা রচনা করতে উদ্যোগী হন। পরিভাষা রচনা একজনের কাজ নয়, সকলে মিলে না করলে এই কাজে নানা ত্রুটি দেখা দেয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগের এটিই ছিল অন্যতম ভুল। তার ফলে সংকলিত পরিভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়নি। একই ইংরেজি শব্দের বিভিন্ন বাংলা প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে।
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান – এরপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যে পরিভাষা সমিতি গঠন করেছিলেন, তাতে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, ভাষাতত্ত্বজ্ঞ, সংস্কৃতের অধ্যাপক এবং কয়েকজন লেখক একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। এর ফলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের চেয়ে অনেক বেশি সফল হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকলন খুব বড়ো নয়। আরও শব্দ বা পরিভাষার অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজন ছিল। তবে প্রয়োজনমতো বাংলা পরিভাষা পাওয়া না গেলেও বৈজ্ঞানিক রচনা লেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ইংরেজি শব্দই বাংলা বানানে লেখা ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়-নিযুক্ত সমিতি অনেক ইংরেজি শব্দের ব্যবহারই বজায় রেখেছেন। যেমন, অক্সিজেন, প্যারাডাইক্লোরোবেনজিন, ফার্ন, আরথ্রোপোডা ইনসেক্টা ইত্যাদি।
পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য। – লেখকের এমন মন্তব্যের কারণ কী?
- কথামুখ – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান যারা পড়েন, তাঁদের স্বরূপ নির্ণয় করতে গিয়ে লেখক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের পাঠকদের দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। প্রথম শ্রেণি, যাঁরা ইংরেজি জানেন না বা খুব অল্প জানেন এবং দ্বিতীয় শ্রেণি যাঁরা ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজি ভাষায় কিছু বিজ্ঞান বিষয়ক বইও পড়েছেন। তিনি বলেছেন, পাশ্চাত্যের মানুষের তুলনায় এদেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য।
- বোধগম্যতা – বিজ্ঞানের প্রাথমিক বিষয়গুলির সঙ্গে পরিচয় না থাকলে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ বোঝা সম্ভব নয়। ইউরোপ-আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা খুব সহজ, কারণ সাধারণ মানুষ অনায়াসে তা বোঝে। কিন্তু আমাদের দেশের সামাজিক পরিস্থিতি এতটা সহজ নয়। এখানে বয়স্কদের জন্য যা লেখা হয়, তা-ও প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকে না লিখলে তাঁদের বোঝাবার মতো সহজ হয় না।
- জনপ্রিয়তা – বাংলা ভাষায় যাঁরা বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করেন, তাঁদের জনপ্রিয়তা পেতে গেলে এই বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে। বিজ্ঞানশিক্ষার বিস্তার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে গিয়ে প্রাবন্ধিক এই কথাগুলো বলেছেন।
- ইতিকথা – মনে রাখা দরকার যে, বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার যথাযথ না হলে বিজ্ঞান বিষয়ক সাহিত্যের বিকাশ ঘটাও সম্ভব নয়।
বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ কী? বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ লেখার জন্য কীরূপ রচনাপদ্ধতি আবশ্যক বলেছেন লেখক?
বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ-এর পরিচয় – প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে আমরা ‘বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ’ শব্দ দুটি পেয়েছি। বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধ বা গ্রন্থকে বলা হয় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ।
আবশ্যক রচনাপদ্ধতি –
- বৈজ্ঞানিক জ্ঞান – ‘বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার ক্ষেত্রে সবার প্রথমে দেশের পাঠকদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কতদূর সে সম্পর্কে জানতে হতে হবে।
- আক্ষরিক অনুবাদ –আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই ইংরেজি ভাষা এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। তাই প্রবন্ধ লেখার ভাষা যাতে ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না হয়, সেই খেয়াল রাখতে হবে
- আলাদা আলাদা শব্দ প্রয়োগ – বাংলায় বিভিন্ন অর্থের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ প্রয়োগ করে লেখাকে জনসাধারণের কাছে সহজ করে তুলতে হবে। প্রয়োজনে বাংলা শব্দের বদলে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা উচিত।
- বাংলা ভাষার প্রকৃতি বজায় – লেখার সময় লেখক যদি ইংরেজিতে ভেবে তা বাংলায় হুবহু অনুবাদের চেষ্টা করেন, তবে তা হবে বাংলা ভাষার প্রকৃতিবিরুদ্ধ। তাই বাংলা ভাষার প্রকৃতি বজায় রেখে বাক্য তৈরি করতে হবে।
- লেখনী শৈলী – প্রাবন্ধিক বলেছেন, বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার ক্ষেত্রে লেখকদের লেখা হবে অলংকারবর্জিত, স্পষ্ট এবং সরল।
- তথ্যপরিবেশন – বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করার সময়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবেশন করতে হবে। লেখার ভাষা হবে ঝরঝরে, অর্থ হবে সহজ।
- লেখকের স্পষ্ট ধারণা – বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ রচনার সময় পাঠকদের মানসিকতা, জ্ঞান এবং বিজ্ঞান সম্পর্কে লেখকের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে। – কোন্ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিকের এই মন্তব্য? কীভাবে বৈজ্ঞানিক রচনা সুসাধ্য হবে বলে তিনি মনে করেন?
প্রসঙ্গ – রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় কীভাবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার অসুবিধা দূর হতে পারে তার আলোচনা প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন।
বৈজ্ঞানিক রচনা সুসাধ্য হওয়ার পদ্ধতি –
- কথামুখ – এদেশে বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার নানারকম বাধা আছে। যেমন যথেষ্ট পরিমাণ পরিভাষা না থাকা। আরেকটি সমস্যার জায়গা হল যে পাশ্চাত্য দেশের তুলনায় এদেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অতি নগণ্য।
- পরিচিতি – প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় না থাকলে যে-কোনো বৈজ্ঞানিক রচনাই বোঝা কঠিন হয়ে ওঠে। ইউরোপ-আমেরিকায় পপুলার সায়েন্স লেখা সুসাধ্য, যেখানে সকলেই তা বোঝে। কিন্তু আমাদের দেশে তা লিখতে গেলে প্রাথমিক বিজ্ঞানের মতো গোড়া থেকেই লিখতে হবে।
- সচেতনতা – বিজ্ঞান বিষয়ক লেখাকে জনপ্রিয় করতে গেলে এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না করে সঠিক এক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
- প্রকৃতি – বাংলা ভাষার প্রকৃতিকে বুঝতে হবে, একই সঙ্গে পাঠকের প্রকৃতিকেও বুঝতে হবে।
- শেষের কথা – লেখক আশা করেছেন, কালক্রমে এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার ঘটলে সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনাও সুসাধ্য হবে।
এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। — কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক যে নিদর্শনগুলি তুলে ধরেছেন তা লেখো।
দোষের পরিচয় – বিজ্ঞান আলোচনার সঠিক রচনাপদ্ধতি আয়ত্ত না করতে পারার জন্য রচনার ভাষা অনেকক্ষেত্রেই কঠিন এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ হয়ে পড়ে। এই দোষের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
প্রাবন্ধিক প্রদত্ত নিদর্শনসমূহ –
- কথামুখ – বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে যথাযথ হতে হলে সঠিক রচনাপদ্ধতি আয়ত্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
- শব্দ প্রয়োগ – অনেকেই মনে করেন যে ইংরেজিতে এক-একটি শব্দ যেরকম বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, বাংলা প্রতিশব্দের ক্ষেত্রেও তা-ই হওয়া উচিত। এজন্য তাঁরা অনেকসময় অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করে থাকেন। লেখক এরকম কয়েকটি শব্দের উদাহরণও দিয়েছেন। যেমন – ইংরেজি sensitive শব্দটি নানা অর্থে চলে, যেমন – sensitive person, sensitive wound, sensitive plant, sensitive balance, sensitive photographic paper ইত্যাদি।
- অর্থভেদে শব্দপ্রয়োগ – কিন্তু প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে, বাংলায় অর্থভেদে বিভিন্ন শব্দই প্রয়োগ করা উচিত। যেমন – অভিমানী, ব্যথাপ্রবণ, উত্তেজী, সুবেদী, সুগ্রাহী ইত্যাদি। Sensitized paper-এর অনুবাদ স্পর্শকাতর কাগজ করলে তা অত্যন্ত উৎকট হবে, কিন্তু সেটাও কেউ কেউ লিখে থাকেন। অথচ এর বদলে সুগ্রাহী কাগজ লিখলে ঠিক হয়।
- উৎকট রচনা – অনেক লেখক তাঁদের বক্তব্য ইংরেজিতে ভাবেন এবং যথাযথ বাংলা অনুবাদে তা প্রকাশ করার চেষ্টা করেন। এতে রচনা আরও উৎকট হয়ে যায়। The atomic engine has not even reached the blue print stage. -এর বাংলা যদি করা হয় পরমাণু এঞ্জিন নীল চিত্রের অবস্থাতেও পৌঁছায়নি -এই অনুবাদ বাংলা ভাষার প্রকৃতির সঙ্গে মিলবে না, অথচ পরমাণু এঞ্জিনের নকশা এখনও পর্যন্ত প্রস্তুত হয়নি। —এই অনুবাদে বাক্যের অর্থ অনেক সরল হয়ে যায়।
- বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি বজায় – When sulphur burns in air the nitrogen does not take part in the reaction – যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না। এরকম ইংরেজি থেকে বাংলায় হুবহু নকল না করে নাইট্রোজেনের কোনো পরিবর্তন হয় না লিখলে বাক্যটিতে বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি বজায় থাকে এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্যও হয়।
তাতে পাঠকের অসুবিধে হয়। — কীসে পাঠকের অসুবিধা হয়? অসুবিধা দূর করার জন্য কী কী করা প্রয়োজন?
অসুবিধার বিষয় – রাজশেখর বসু তাঁর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় উল্লেখ করেছেন যে যদি বারবার কোনো বিষয়ের বর্ণনা দিতে হয় তবে অকারণে একই কথার পুনরাবৃত্তি ঘটে এবং তাতেই পাঠকের অসুবিধা হয়।
অসুবিধা দূর করার উপায় –
- পরিভাষার ব্যবহার – পারিভাষিক শব্দ বাদ দিলে ভাষা সবসময়ে সুন্দর হয় না। পরিভাষার উদ্দেশ্য হল ভাষাকে সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট করা। পরিভাষা না থাকলে বিষয়ের বর্ণনা অতিরিক্ত বড়ো হবে। তখন পাঠকের পক্ষে বিষয়ের অর্থ ও তাৎপর্য বুঝতে অসুবিধা হবে।
- পারিভাষিক শব্দের ব্যাখ্যা – অল্পশিক্ষিত বা বিজ্ঞান পড়েননি ‘এরকম পাঠকের পক্ষে প্রথমেই পরিভাষাকে বুঝতে পারা অসুবিধাজনক হতে পারে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে অল্প পরিচিত পারিভাষিক শব্দগুলির প্রথম প্রয়োগের সময়ে তার ব্যাখ্যা দেওয়া আবশ্যক। পরে তাহলে শুধু বাংলা পারিভাষিক শব্দটি দিলেই চলবে।
- অলংকারহীন সরল ও স্পষ্ট ভাষা – দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার ভাষা যতদূর সম্ভব অলংকারহীন হওয়া উচিত। লেখার ভাষা হবে অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট।
- সঠিক তথ্য – এ ছাড়া রচনাকারদের সঠিক তথ্য-সহ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করা উচিত। ভুল তথ্য সাধারণ পাঠকের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই লেখকদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন। – এগুলি কী কী? উদাহরণ-সহ এই ত্রিবিধ শক্তি বুঝিয়ে দাও।
শব্দের ত্রিবিধ শক্তি – শব্দের ত্রিবিধ শক্তি বলতে – অভিধা, লক্ষণা এবং ব্যঞ্জনাকে বোঝানো হয়েছে।
ত্রিবিধ শক্তির ব্যাখ্যা – উল্লিখিত শব্দের ত্রিবিধ শক্তির ব্যাখ্যা উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হল –
- অভিধা – প্রাবন্ধিক এবং আলংকারিকদের মতে, শব্দবৃত্তির প্রথমটি হল অভিধা। শব্দের মুখ্য অর্থ প্রকাশিত হয় যে বৃত্তির দ্বারা, তাকে বলা হয় অভিধা। এই বৃত্তিতে শব্দটি বাচক। শব্দের অর্থটি বাচ্য বা অভিধেয়। যেমন- ‘পঙ্কজ’ শব্দে পদ্ম অর্থটাই মুখ্য (পাঁকে জন্মে যা, তা ‘পঙ্কজ’ হলেও শব্দটির অভিধা ‘পদ্ম’ অর্থেই সীমাবদ্ধ)।
- লক্ষণা – শব্দবৃত্তির দ্বিতীয় ভাগ হল লক্ষণা। কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের থেকেও গৌণ অর্থ যখন প্রধান হয়ে ওঠে, তখন তা হয় লক্ষণা। যেমন- এই রিকশা, এদিকে এসো -এই বাক্যে রিকশা শব্দটির মধ্য দিয়ে রিকশাওয়ালাকেই বোঝানো হয়েছে। এখানে মুখ্য অর্থ ‘যান’-এর থেকে গৌণ অর্থ ‘মানুষ’ প্রধান হয়ে উঠেছে।
- ব্যঞ্জনা – শব্দবৃত্তির তৃতীয় ভাগ হল ব্যঞ্জনা। অভিধা এবং লক্ষণা দ্বারা শব্দার্থ যখন ব্যাখ্যা করা যায় না, এবং শব্দ যখন নতুন অর্থের প্রকাশ ঘটিয়ে থাকে তখন তাকে বলা হয় ব্যঞ্জনা। যেমন- সোনার হাতের সোনার কাঁকন কে কার অলংকার? এই বাক্যে সোনা – ধাতু (অভিধা)। সোনার হাত এবং সোনার কাঁকন – রং (লক্ষণা)। কে কার অলংকার-হাতের অলংকার হয়ে সোনা হাতকে অলংকৃত করেছে। স্বর্ণকারের কারুকার্য ঈশ্বরের সৃষ্ট হাতের অলংকার। আবার ফরসা হাতের সৌন্দর্য সোনার রঙে ঔজ্জ্বল্য এনেছে। সোনা শব্দের প্রয়োগ এখানে ব্যঞ্জনা এনেছে।
কিন্তু বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে যত কম থাকে ততই ভালো। – কী কম থাকার কথা বলা হয়েছে? সেগুলি কম থাকার সুবিধা কী?
কম থাকার বিষয় – রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। আলংকারিকরা শব্দের তিনরকম শক্তির কথা বলেছেন। এগুলি হল- অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা। বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে এইগুলি যথাসম্ভব কম ব্যবহার করার কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক।
কম থাকার সুবিধা –
- অভিধা-লক্ষণা-ব্যঞ্জনা-র ব্যবহার – যে শক্তির দ্বারা শব্দ স্পষ্টভাবে তার মূল অর্থটিকে তুলে ধরে, তার নাম অভিধা শক্তি। এই শক্তির দ্বারা যে অর্থ প্রকাশিত হয় তার নাম অভিধেয় অর্থ বা বাচ্যার্থ। যে শক্তির দ্বারা বাচ্যার্থের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রকৃত অর্থের ধারণা জন্মায় তার নাম লক্ষণা। অভিধা বা লক্ষণা ছাড়া শব্দে যদি অতিরিক্ত একটি নতুন অর্থের প্রকাশ ঘটে, তবে তাকে বলে ব্যঞ্জনা। এই ব্যঞ্জনা হল শব্দের অন্য-এক অর্থ। যেমন – ‘অর্ধচন্দ্র’ বলতে অর্ধেক চাঁদকে না বুঝিয়ে গলাধাক্কা বোঝায়। এগুলির ব্যবহার সাহিত্যে চলতে পারে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক রচনায় অলংকার সম্পূর্ণ বর্জনীয়।
- বোধগম্যতা – কিছু উপমার হয়তো প্রয়োজন হতে পারে, রূপকের প্রয়োগও স্থানবিশেষে চলতে পারে, কিন্তু অলংকার একেবারেই বর্জন করা উচিত। কেন-না, সাহিত্যে ভাবপ্রকাশের সুযোগ থাকলেও বিজ্ঞান হল জ্ঞানের কথা। জ্ঞানের কথাকে সহজ, সরল ও স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করতে হয়। না হলে সেটি বুঝতে অসুবিধা হয়।
এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত। – বক্তা কে? লেখকের কী মনে রাখা উচিত?
বক্তা – ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনায় উল্লিখিত মন্তব্যটির বক্তা প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু স্বয়ং।
লেখকদের মনে রাখার বিষয় –
- প্রবন্ধের ভাষা – প্রাবন্ধিকের মত অনুসারে, যে-কোনো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের ভাষা অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন-এ কথা সকল লেখকের মনে রাখা উচিত। আমাদের মতো দেশে মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অত্যন্ত সামান্য। তাই তাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা লিখতে গেলে প্রাথমিক বিজ্ঞানের একেবারে গোড়া থেকে সহজ ভাষায় লিখে যেতে হবে।
- যথাযথ রচনাপদ্ধতি অনুসরণ – এমন এক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যা ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ হবে না। ইংরেজিতে ভেবে নিয়ে বাংলায় অনুবাদ করার যে প্রচলিত অভ্যাস অনেকের মধ্যে আছে, তা বিষয়কে আরও কঠিন করে তোলে।
- পরিভাষার ব্যবহার – অনেকে মনে করেন, রচনাকে সহজ করার জন্য পারিভাষিক শব্দ বাদ দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। পরিভাষা ছাড়া কখনো-কখনো সঠিক ভাব প্রকাশ করা সম্ভব হয় না।
- অলংকারহীন শব্দপ্রয়োগ – বৈজ্ঞানিক সাহিত্যের ভাষাকে সরল করার জন্য ব্যঞ্জনা, উৎপ্রেক্ষা ইত্যাদি আলংকারিক শব্দের প্রয়োগ যতটা সম্ভব ত্যাগ করাই ভালো। সাহিত্য বা অন্য বিষয়ের ভাষার সঙ্গে বিজ্ঞানের ভাষার স্পষ্ট পার্থক্য আছে।
- উপসংহার – এইসব কথা মনে রেখেই বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাকর্মে লেখকদের উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন।
বাংলা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধাদিতে আর একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে। – কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে? এই দোষ মুক্তির উপায় কী?
দোষের পরিচয় – রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ রচনার উল্লিখিত অংশে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে অল্পবিদ্যার ফলে হওয়া ভুল ত্রুটির কথা বলেছেন।
দোষ মুক্তির উপায় –
- সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা – বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক রচনার ক্ষেত্রে পাঠকের মতোই লেখককেও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে।
- সঠিক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ ও স্বচ্ছ জ্ঞান – আবার সঠিক রচনাপদ্ধতি অনুসরণ করা, ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ না করা ইত্যাদির প্রতি যেমন লক্ষ রাখা দরকার, ঠিক সেরকমই বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ জ্ঞান থাকারও প্রয়োজন। কিন্তু বহু লেখকই বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না নিয়েই লিখতে যান। বিভিন্ন সাময়িক পত্রে এরকম কিছু নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছিল – অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজন গ্যাস স্বাস্থ্যকর। এরকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের জন্য ক্ষতিকর। এই সমস্যামুক্তির জন্য পত্রিকার সম্পাদককেই দায়িত্বশীল হতে হবে।
- অভিজ্ঞ ব্যক্তির দ্বারা রচনা যাচাই – অবিখ্যাত লেখকের বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে সেটি যাচাই করে নিতে হবে। তবেই এই দোষ থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।
- শেষের কথা – লেখকের যথাযথ শিক্ষা এবং সম্পাদকের সচেতনতাই বিজ্ঞান বিষয়ক রচনাকে সার্থক করে তুলতে পারে।
এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর। – কী ধরনের ভুল লেখার কথা বলা হয়েছে? তা সাধারণ পাঠকের কাছে অনিষ্টকর কেন?
ভুল লেখার উল্লেখ – প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি রাজশেখর বসুর ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে উল্লিখিত হয়েছে। প্রাবন্ধিক একবার এক পত্রিকায় দেখেছিলেন – অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর। এই ধরনের ভুল লেখার কথাই এখানে বলা হয়েছে। আমাদের মতো দেশে যেখানে জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান প্রায় নেই সেখানে এই জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য আরও ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে।
অনিষ্টকর হওয়ার কারণ –
- ভুল বার্তা প্রেরণ – বিজ্ঞান সম্পূর্ণভাবে সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত। বিজ্ঞান বিষয়ক রচনায় বৈজ্ঞানিক সত্যকে হুবহু রক্ষা করতে হয়। তা না হলে সাধারণ পাঠকের কাছে ভুল বার্তা যায়।
- জীবনযাপনের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব – এই জাতীয় বিভ্রান্তিকর তথ্য যে শুধু জ্ঞান বা শিক্ষার ক্ষেত্রে ভ্রান্তি সৃষ্টি করে, তা-ই নয়, ব্যক্তির জীবনযাপনের ক্ষেত্রেও তা ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে। তাতে সমূহ বিপদ।
- প্রাবন্ধিকের অভিমত – তাই প্রাবন্ধিক বলতে চেয়েছেন, বৈজ্ঞানিক রচনা পত্রিকায় প্রকাশের আগে তা কোনো অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সম্পাদককে অনেক সচেতন থাকতে হবে। তাহলে পাঠকের অনিষ্টের আর সম্ভাবনা থাকবে না।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের জন্য আমাদের সকলের একসাথে কাজ করা উচিত। আমরা ভালো মানের বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ তৈরি করতে পারি। আমরা দক্ষ বিজ্ঞান শিক্ষক তৈরি করতে পারি। আমরা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচার-প্রসার করতে পারি।