বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে রাজশেখর বসু বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞান হলো মানব সভ্যতার উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। বিজ্ঞানের মাধ্যমেই আমরা প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করতে পারি এবং আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর ও সুখী করে তুলতে পারি।
রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম কী?
রাজশেখর বসুর ছদ্মনাম হল পরশুরাম।
রাজশেখর বসু রচিত দুটি গ্রন্থের নাম লেখো।
রাজশেখর বসু রচিত দুটি গ্রন্থের নাম হল গড্ডলিকা, হনুমানের স্বপ্ন।
রাজশেখর বসু রচিত বাংলা অভিধানের নাম কী?
রাজশেখর বসু রচিত বাংলা অভিধানের নাম চলন্তিকা।
তোমার পাঠ্য ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধটি কোন্ গ্রন্থ থেকে গৃহীত?
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধটি রাজশেখর বসু রচিত বিচিন্তা গ্রন্থ থেকে গৃহীত।
তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে – ‘তাদের’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
আলোচ্য অংশে ‘তাদের’ বলতে বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থের পাঠকদের বোঝানো হয়েছে।
যাদের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা গ্রন্থ বা প্রবন্ধ লেখা হয় তাদের মোটামুটি দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। – শ্রেণি দুটি কী কী?
আলোচ্য প্রবন্ধে উল্লিখিত দুই শ্রেণির মধ্যে প্রথম শ্রেণি হল যারা ইংরেজি জানে না বা অতি অল্প জানে এবং দ্বিতীয় শ্রেণি হল যারা ইংরেজি জানে।
প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সম্পর্কে প্রাবন্ধিক কী বলেছেন?
প্রথম শ্রেণির পাঠকদের সম্পর্কে প্রাবন্ধিক বলেছেন যে, গুটিকয়েক ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ ছাড়া তাদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় নেই।
গুটিকতক ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হয়তো তারা শিখেছে। – শব্দগুলি কী?
প্রবন্ধে উল্লিখিত ‘গুটিকতক’ ইংরেজি পারিভাষিক শব্দ হল টাইফয়েড, আয়োডিন মোটর, ক্রোটন, জেব্রা।
অনেক রকম স্থূল তথ্যও তাদের জানা থাকতে পারে – কীরকম স্থূল তথ্যের কথা প্রাবন্ধিক বলেছেন?
জল এবং কপূর উবে যায়, লাউ-কুমড়ো জাতীয় গাছে দু-রকম ফুল হয়-এরকম স্থূল তথ্যের কথা প্রাবন্ধিক আলোচ্য প্রবন্ধে বলেছেন।
এই শ্রেণির পাঠক ইংরেজি ভাষার প্রভাব থেকে মুক্ত। – ‘এই শ্রেণির’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
আধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য সম্পর্কে যাঁরা বিশেষ জানেন না, যাঁদের বিজ্ঞানের সঙ্গে পূর্বপরিচয় নেই, এই অংশে তাঁদেরই কথা বুঝিয়েছেন প্রাবন্ধিক।
ছেলেবেলায় রাজশেখর বসু কার লেখা জ্যামিতি বই পড়তেন?
ছেলেবেলায় প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু ব্রহ্মমোহন মল্লিকের লেখা বাংলা জ্যামিতি বই পড়তেন।
এর মানে বুঝতে বাধা হয়নি। – ‘এর’ মানে’ বলতে কী?
ব্রহ্মমোহন মল্লিকের রচিত জ্যামিতি বইতে লেখা এক নির্দিষ্ট সীমাবিশিষ্ট সরলরেখার উপর এক সমবাহু ত্রিভুজ চিত্রাঙ্কনের কথা বুঝতে প্রাবন্ধিকের অসুবিধা হয়নি।
তাদের কাছে উক্ত প্রতিজ্ঞাবাক্যটি সুশ্রাব্য ঠেকবে না। — ‘তাদের’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে?
যারা ইংরেজি ভাষায় জ্যামিতি বা জিয়োমেট্রি পড়েছে তাদের কাছে ব্রহ্মমোহন মল্লিকের বইয়ের ভাষা সহজ মনে হবে না।
যে লোক আজন্ম ইজার পড়েছে – ‘আজন্ম’, ‘ইজার’ এই শব্দ দুটির অর্থ লেখো।
আজন্ম কথার অর্থ হল জন্মাবধি বা জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত এবং ‘ইজার’ কথার অর্থ হল পাজামা বা প্যান্টালুন।
বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বিজ্ঞান সংক্রান্ত প্রবন্ধ বা রচনাকে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক যখন মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ পড়ে তখন তার কোন্ চেষ্টা আবশ্যক?
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠক যখন মাতৃভাষায় বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ পড়ে তখন তাকে ইংরেজির প্রতি অতিরিক্ত পক্ষপাত ত্যাগ করে ভালোবেসে মাতৃভাষার পদ্ধতি আয়ত্ত করার চেষ্টা করতে হয়।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি বাধা কী যা প্রাবন্ধিক উল্লেখ করেছেন?
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটি বড়ো বাধা হল বাংলায় পারিভাষিক শব্দের সংখ্যার ঘাটতি।
তার ফলে সংকলিত পরিভাষার সাম্য হয়নি – ‘তার ফলে’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিদ্যোৎসাহী লেখকেরা একত্রিত হয়ে কাজ না করার ফলে একই ইংরেজি শব্দের বিভিন্ন প্রতিশব্দ রচিত হয়েছে। এর ফলে নতুন রচিত পরিভাষার মধ্যে সামঞ্জস্য রক্ষা করা যায়নি।
পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে কাদের উদযোগে ত্রুটি ছিল বলে প্রাবন্ধিক মন্তব্য করেছেন?
পরিভাষা রচনার ক্ষেত্রে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বিদ্যোৎসাহী লেখকদের উদযোগে ত্রুটি ছিল বলে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু মন্তব্য করেছেন।
তার ফলে তাঁদের চেষ্টা অধিকতর সফল হয়েছে। – ‘তার ফলে’ কথাটি প্রাবন্ধিক কেন ব্যবহার করেছেন?
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতির হয়ে বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যাপক এবং লেখকরা মিলিতভাবে কাজ করেছিলেন বলে, তাঁদের পরিভাষা নির্মাণের চেষ্টা অনেক বেশি সফল হয়েছিল। একযোগে কাজ করার প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক ‘তার ফলে’ কথাটি ব্যবহার করেছেন।
পরিভাষা সংকলনে কাদের চেষ্টা অধিকতর সফল হয়েছে বলেছেন প্রাবন্ধিক?
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত পরিভাষা সমিতির পরিভাষা তৈরির চেষ্টা অনেক বেশি সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কবে পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিলেন?
১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিভাষা সমিতি নিযুক্ত করেছিলেন।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতির বিশেষত্ব কী?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার অধ্যাপক, ভাষাতত্ত্বজ্ঞ, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত এবং লেখকেরা একযোগে কাজ করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি কী বিধান দিয়েছে?
অথবা, বিশ্ববিদ্যলয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি নবাগত রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নাম সম্বন্ধে কী বিধান দিয়েছিলেন?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতি এই বিধান দিয়েছিল যে, নতুন কোনো রাসায়নিক বস্তুর ইংরেজি নামই বাংলায় ব্যবহার করা যাবে।
উপযুক্ত পরিভাষা না পাওয়া পর্যন্ত প্রাবন্ধিক কী পরামর্শ দিয়েছেন?
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে উপযুক্ত পরিভাষা না পাওয়া পর্যন্ত প্রাবন্ধিক বাংলা বানানে ইংরেজি শব্দই ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
আমাদের সরকার ক্রমে ক্রমে রাজকার্যে দেশি পরিভাষা চালাচ্ছেন। — তাতে অনেকে মুশকিলে পড়েছেন কেন?
রাজশেখর বসুর মতে, সরকার থেকে উদ্যোগ নিয়ে দেশি পরিভাষা প্রচলন করায় অনেকে মুশকিলে পড়েছেন। কারণ তাঁরা ইংরেজিতে অভ্যস্ত বলে পরিভাষাগুলি তাঁদের নতুন করে শিখতে হচ্ছে।
বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন। – এ কথা কেন বলা হয়েছে?
প্রাবন্ধিকের মতে, এদেশের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান কম। প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় না থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ বোঝা কঠিন।
কোন্ দেশে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ লেখা সহজ এবং কেন?
ইউরোপ, আমেরিকার মতো পাশ্চাত্য দেশে বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভ লেখা সহজ কারণ সেইসব দেশে বিজ্ঞানশিক্ষার প্রসার ঘটেছে। তাই সাধারণ মানুষ তা সহজেই বুঝতে পারে।
তাঁরা এ-বিষয়ে অবহিত না হলে তাঁদের লেখা জনপ্রিয় হবে না। – এরূপ বলার তাৎপর্য কী?
আমাদের দেশের জনসাধারণের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান নগণ্য, প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গেও তাদের যোগ নেই-এই কথাটা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের বুঝতে হবে।
কালক্রমে এ দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার বিস্তার হলে এই অসুবিধা দূর হবে – কোন অসুবিধার কথা বলা হয়েছে?
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে প্রাথমিক বিজ্ঞানের সঙ্গে সামান্যমাত্র পরিচয় না থাকা সাধারণ মানুষের জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ বোঝার অসুবিধার কথা বলা হয়েছে।
তখন বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা সুসাধ্য হবে। — কখন সুসাধ্য হবে?
এদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার হলে জনসাধারণ বিজ্ঞানের বিষয়ে বেশি জানবে, তাহলেই বৈজ্ঞানিক সাহিত্য লেখা ও বোঝা সহজ হবে।
এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না। – ‘এই দোষ’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?
ভাষার আড়ষ্টতা এবং ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ করার ত্রুটি দূর করতে না পারলে বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।
এজন্য অনেক সময় তাঁরা অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করেন। – কেন তাঁরা এরুপ করেন?
ইংরেজি শব্দের মতো বাংলা শব্দেও অর্থব্যাপ্তি আনার চেষ্টায় লেখকরা অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগ করে ফেলেন।
কীসের অনুবাদকে লেখক উৎকট বলেছেন এবং কী লিখলে ঠিক হয় বলেছেন?
লেখকের মতে, Sensitized Paper-এর অনুবাদ ‘স্পর্শকাতর কাগজ’ লিখলে অর্থের দিক থেকে উৎকট হয়; বরং ‘সুগ্রাহী কাগজ’ লিখলে ঠিক হয়।
Sensitized paper-এর ঠিক অনুবাদ কী?
Sensitized paper-এর সঠিক অনুবাদ হওয়া উচিত সুগ্রাহী কাগজ।
এতে রচনা উৎকট হয়। — কী কারণে রচনা উৎকট হয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনা করার সময় তা ইংরেজিতে ভেবে নিয়ে হুবহু বাংলায় অনুবাদ করার চেষ্টা করলে রচনা উৎকট হয়।
এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ। — কীরকম বর্ণনা প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক এই উক্তি করেছেন?
The atomic engine has not even reached the blue print stage -এর বাংলা পরমাণু এঞ্জিন নীল চিত্রের অবস্থাতেও পৌছায়নি -এই জাতীয় লেখা প্রকৃতিবিরুদ্ধ।
এ রকম বর্ণনা বাংলা ভাষায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ।- কীরকম লিখলে ভালো হয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
প্রাবন্ধিকের মতে The atomic engine has not even reached the blue print stage – এর বাংলা পরমাণু এঞ্জিনের নকশা পর্যন্ত এখনও প্রস্তুত হয়নি লিখলে ভালো হয়।
কী প্রসঙ্গে লেখক ‘মাছিমারা নকল’ কথাটি বলেছেন?
When sulpher burns in air the nirtrogen does not take part in the reaction -এর বাংলা যখন গন্ধক হাওয়ায় পোড়ে তখন নাইট্রোজেন প্রতিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না -প্রাবন্ধিক এ-জাতীয় আক্ষরিক অনুবাদকে ‘মাছিমারা নকল’ বলেছেন।
এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়। — কোন্ ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয় বলেছেন প্রাবন্ধিক?
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে সমস্ত পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে বক্তব্য প্রকাশ করলে রচনা সহজ হয়, এই ধারণা পুরোপুরি ঠিক নয়।
স্থানবিশেষে পারিভাষিক শব্দ যে বাদ দেওয়া চলে তোমার পাঠ্য ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ থেকে তার একটা উদাহরণ দাও।
অমেরুদণ্ডী শব্দটির বদলে যেসব প্রাণীর শিরদাঁড়া নেই-এরকম লিখে স্থানবিশেষে পারিভাষিক শব্দ বাদ দেওয়া চলে।
পরিভাষার উদ্দেশ্য কী বলেছেন লেখক?
অথবা, পরিভাষার উদ্দেশ্য কী?
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসুর মতে, পরিভাষার উদ্দেশ্য ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করা এবং তার অর্থ সুনির্দিষ্ট করা।
শব্দ সম্পর্কে আলংকারিকরা যে ত্রিবিধ বলেছেন তা কী কী?
অথবা, আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন – কোন্ ‘ত্রিবিধ কথা’-র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন?
অথবা, আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন – শব্দের ‘ত্রিবিধ কথা’ কী?
রাজশেখর বসু রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে শব্দ সম্পর্কে আলংকারিকরা অভিধা, লক্ষণা, ব্যঞ্জনা-এই তিনটি বৃত্তির উল্লেখ করেছেন।
সাধারণদের জন্য লিখিত বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভে পারিভাষিক শব্দের কীরূপ ব্যবহারের পরামর্শ প্রাবন্ধিক দিয়েছেন?
প্রাবন্ধিকের মতে, সাধারণদের জন্য লিখিত বৈজ্ঞানিক সন্দর্ভে অল্প পরিচিত পারিভাষিক শব্দ প্রথমবার ব্যবহার হলে তার ব্যাখ্যা দেওয়া উচিত। পরে শুধু পারিভাষিক শব্দটির ব্যবহারই যথেষ্ট।
অভিধা কী? একটি উদাহরণ দাও।
শব্দের মুখ্য অর্থ প্রকাশিত হয় যে বৃত্তির দ্বারা, তার নাম অভিধা। যেমন- পাঁকে জন্মে যা, তা ‘পঙ্কজ’ হলেও শব্দটির অভিধা ‘পদ্মা’ অর্থেই সীমাবদ্ধ।
লক্ষণা কী? একটি উদাহরণ দাও।
যখন কোনো শব্দের মুখ্য অর্থের থেকেও গৌণ অর্থ বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, তখন তা হয় লক্ষণা। যেমন- এই রিকশা, এদিকে এসো – এখানে রিকশা নয়, রিকশাওয়ালাই লক্ষণার্থে ফুটে উঠেছে।
ব্যঞ্জনা কী? একটি উদাহরণ দাও।
যে প্রবণতার কারণে শব্দ নতুন অর্থের ইঙ্গিত তৈরি করে, তাকে বলা হয় ব্যঞ্জনা। যেমন, ‘অরণ্যে রোদন’-যার আক্ষরিক অর্থ অন্য কিছু হলেও ব্যঞ্জনা অনুযায়ী অর্থ হল নিষ্ফল খেদ।
একটি দোষ প্রায় নজরে পড়ে। – কোন্ দোষের কথা বলা হয়েছে?
বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে লেখকরা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলিতে যেসব ভুল তথ্য দেন এখানে সেই ‘দোষ’-এর কথা বলা হয়েছে।
অলংকারের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সাহিত্য ও সাধারণ সাহিত্যে কী পার্থক্য রয়েছে?
বৈজ্ঞানিক সাহিত্য অলংকারহীন, সহজ, স্পষ্ট হওয়া উচিত। সাধারণ সাহিত্যের ভাষা, উপমা, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অলংকারে পূর্ণ কাব্যিক হতে পারে।
কোন্ উক্তিকে লেখক কাব্যের উপযুক্ত, ভূগোলের উপযুক্ত নয় বলেছেন?
হিমালয় যেন পৃথিবীর মানদণ্ড-কালিদাসের এই উক্তিকে প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু বলেছেন কাব্যের উপযুক্ত, ভূগোলের উপযুক্ত নয়।
বৈজ্ঞানিক সাহিত্যে যত কম থাকে তত ভালো। – কী কম থাকার কথা বলা হয়েছে?
লক্ষণা বা ব্যঞ্জনা এবং উৎপ্রেক্ষা, অতিশয়োক্তি ইত্যাদি অলংকার বৈজ্ঞানিক রচনায় যথাসম্ভব কম থাকা ভালো।
এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত। – কোন্ কথা মনে রাখা উচিত?
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের ভাষা অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক-এই কথাটি সমস্ত বাংলা ভাষায় বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচয়িতাদের মনে রাখা উচিত।
এই রকম ভুল লেখা সাধারণ পাঠকের পক্ষে অনিষ্টকর। – কোন ভুলের কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক?
অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর এ বিষয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। কিন্তু ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর-এই ধরনের ভুল লেখার কথা বলেছেন প্রাবন্ধিক।
অল্পবিদ্যা ভংয়করী প্রবাদটিকে একটি বাক্যে প্রয়োগ করো।
হাতুড়ে ডাক্তাররা যেভাবে সামান্য জ্ঞান নিয়ে মানুষজনের চিকিৎসা করে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে, কথায় বলে না, অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী।
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী কোন্ বিষয় সম্পর্কে এই অভিমত দেওয়া হয়েছে?
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রচনা করতে গিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া প্রসঙ্গে এই অভিমত দেওয়া হয়েছে।
কিছুদিন আগে একটি পত্রিকায় দেখেছি – কিছুদিন আগে পত্রিকায় প্রাবন্ধিক কী দেখেছেন?
প্রাবন্ধিক রাজশেখর বসু একটি পত্রিকায় লেখা দেখেছিলেন – অক্সিজেন বা হাইড্রোজেন স্বাস্থ্যকর বলে বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। তারা জীবনে বেঁচে থাকার পক্ষে অপরিহার্য অঙ্গ মাত্র। তবে ওজন গ্যাস স্বাস্থ্যকর।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা আমাদের জাতীয় উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞানের অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পাব এবং আমাদের জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারব।