এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – সিরাজদ্দৌলা – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অংশ ‘সিরাজদ্দৌলা’ থেকে কিছু বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

Table of Contents

সিরাজদ্দৌলা – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর
সিরাজদ্দৌলা – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা! – কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজসভায় উপস্থিত ইংরেজদের প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

আলোচ্য কথাটি বলার কারণ – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাব সিরাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আলিনগরের সন্ধি’ অনুযায়ী, ইংরেজরা কোনোমতেই নবাবের বিরুদ্ধে কোনোরকম যুদ্ধযাত্রা বা যুদ্ধের আয়োজন করবে না। কিন্তু, সিরাজের হাতে কলকাতার অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের একটি পত্র এসে পৌঁছোয়। এই পত্রের মাধ্যমে সিরাজ জানতে পারেন যে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আরও সৈন্য ও নৌবহরের কথা ভাবছে। তিনি এও জানতে পারেন, বহুদিন আগে থেকেই স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধযাত্রার ছক কষেছিলেন এবং পরিকল্পনামাফিকই আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। সর্বোপরি, নবাবের রাজসভায় উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তাই ক্রুদ্ধ ও ক্ষুদ্ধ সিরাজ ওয়াটসকে প্রকাশ্য রাজসভায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

জান এর শাস্তি কী? – কে, কেন এ কথা বলেছেন?

বক্তা – নবাব সিরাজদ্দৌলা মন্তব্যটি করেছেন।

মন্তব্যের কারণ – অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কর্তৃক ওয়াটসকে লেখা একটি চিঠি কোনোভাবে নবাবের হাতে এলে তিনি বুঝতে পারেন, ওয়াটস বহুদিন ধরেই সিরাজবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার। লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের উদ্যোগে ইংরেজরা বাংলায় সিরাজের বিরুদ্ধে সৈন্যদল পাঠাতে চলেছে। এই যুদ্ধে ওয়াটস যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, তা-ও সিরাজ জানতে পারেন ওয়াটসের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে ওয়াটস সরাসরি অ্যাডমিরাল ওয়াটসনকে জানিয়েছেন, সিরাজের ওপরে ভরসা করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। ফলে ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর আক্রমণ করাই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া, সিরাজ ক্রমশ বুঝতে পেরেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর দরবারে জায়গা পেয়ে ওয়াটস তাঁর বিরুদ্ধে সভাসদদের উত্তেজিত করেছেন। ওয়াটসই কলকাতার ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছেন নবাবের আদেশ লঙ্ঘন করতে। তাই সিরাজ ওয়াটসকে এর যথোচিত শাস্তি দিতে চেয়ে প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। – কে, কেন এই মন্তব্য করেছেন? যাঁকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা তাঁর মধ্যে এই মন্তব্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

বক্তা – সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।

মন্তব্যের কারণ – ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করলে নবাবের সাহায্যের আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। সিরাজ ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও জানান যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাই তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও আর নতুন যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও তাদের সাহায্য করা অসম্ভব জানিয়ে সিরাজ মন্তব্যটি করেন।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া – উদ্ধৃত মন্তব্যটির উত্তরে মঁসিয়ে লা বলেছিলেন যে, সিরাজের সমস্যার কথা বুঝতে পেরেছেন এবং নবাবের জন্য তিনি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। একইসঙ্গে নিজেদের অবস্থাও তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। ভালোবাসার এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। একইসঙ্গে তিনি নবাবকে তাঁর ভাবী বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করে দেন। তিনি জানান, তাঁরা বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্তিমিত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, আর তাতেই নবাবের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে। — কার কথা বলা হয়েছে? কেন তাঁর কথা মনে থাকবে?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে নবাব সিরাজের দরবারে উপস্থিত ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-র কথা বলা হয়েছে।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কথা মনে থাকার কারণ – ফরাসিদের প্রতি নবাব সিরাজের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। মঁসিয়ে লা-র কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে সিরাজ তা স্বীকারও করেছেন। ফরাসিদের সঙ্গে বাংলা দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তিনি স্মরণ করেছেন। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, ফরাসিরা কখনোই নবাবের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করেননি। ইংরেজরা চন্দননগর দখল করে নেওয়ার পরে ফরাসিরা নবাবের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও অসহায় নবাব তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরজন্যে নবাবের মনে গ্লানি তৈরি হয়। মঁসিয়ে লা-র কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন। মঁসিয়ে লা-ও এই বন্ধুত্বের খাতিরেই এ-দেশ ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়া অনিবার্য জানিয়ে নবাবকে তাঁর বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দেন। সিরাজ এর মধ্যে মঁসিয়ে লা-র ‘অন্তরের প্রীতি’-র পরিচয় দেখতে পান। তাই চিরবিচ্ছেদের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও, ফরাসিদের প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে সিরাজ জানিয়েছেন যে, তাঁর কথা নবাবের চিরকাল মনে থাকবে।

I know we shall never meet – কে, কাকে এ কথা বলেছেন? এই বক্তব্যের পূর্বপ্রসঙ্গ কী ছিল?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার উদ্দেশে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন।

পূর্ব প্রসঙ্গ – ইংরেজরা বাংলায় ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন শুরু করলে ফরাসিদের পক্ষে তা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, এর আগে ফরাসিরা ইংরেজ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দুর্গনির্মাণের চেষ্টা করলে নবাবই তাতে আপত্তি জানান। নবাবের আদেশ ফরাসিরা শিরোধার্য করলেও ইংরেজরা তা মানেনি। তারা ফরাসিদের চন্দননগর কুঠি অধিকার করে নেয় এবং সমস্ত বাণিজ্যকুঠির অধিকার দাবি করে। বিপন্ন ফরাসিদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সামরিক সাহায্যের আশায় নবাবের কাছে আসেন। কিন্তু সিরাজের পক্ষে সেই মুহূর্তে এই প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, কলকাতা জয়ে এবং পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর লোকবল ও অর্থবল যথেষ্ট কমে যায়। ফলে নবাবের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ফরাসিদের বাংলা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই বিদায়গ্রহণের মুহূর্তে ব্যথিত মঁসিয়ে লা এ কথা বলেন।

এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো। – বক্তা কাকে, কেন দরবার ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নে উদ্ধৃত আদেশটি দিয়েছিলেন।

দরবার ত্যাগ করার আদেশ – একাধিক ঘটনায় ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা স্পষ্ট করে দেন সিরাজদ্দৌলা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রটিকে সামনে এনে তিনি দেখান যে, সেখানে কর্নেল ক্লাইভের কথামতো কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের কথা আছে। চিঠির শেষে লেখা ছিল- বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না। ওয়াটস এই চিঠির দায় নিতে অস্বীকার করলে নবাব ওয়াটসের লেখা চিঠিটিও বের করেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল যে, নবাবের ওপর নির্ভর করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। তাই, চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সিরাজ ওয়াটসের বিরুদ্ধে নবাবের সভাসদদের উত্তেজিত করার এবং কলকাতার ইংরেজ প্রশাসনকে নবাবের আদেশ লঙ্ঘনে প্ররোচিত করার অভিযোগও আনেন। আর এসবেরই শাস্তি হিসেবে নবাব সিরাজ ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।

তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত। – বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত?

লজ্জিত যাদের কাছে – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা – কে জানিয়েছেন যে তিনি ফরাসিদের কাছে লজ্জিত।

লজ্জার কারণ – মঁসিয়ে লা সিরাজের দরবারে এসেছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে চন্দননগর রক্ষার জন্য নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করতে। নবাব ফরাসিদের সঙ্গে বাংলার দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। নবাবের সঙ্গে তারা যে কখনও অসদ্ব্যবহার করেননি সে-কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেন। আলোচনায় সিরাজ তাঁকে জানান ইংরেজরা যে তাঁর সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেছে, ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে — তিনি এসব বিষয়ে অবহিত। কিন্তু কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর প্রচুর লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। তা ছাড়া নবাবের মন্ত্রীমণ্ডলও নতুন করে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নন। সেই কারণে ফরাসিদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি থাকলেও তাঁর পক্ষে যে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এই অক্ষমতার জন্য মঁসিয়ে লা-র কাছে নবাব সিরাজদ্দৌলা ক্ষমাপ্রার্থনা ও লজ্জা প্রকাশ করেছেন।

মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন। — কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটিতে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রের কথা বলা হয়েছে। ওয়াটসন সিরাজদ্দৌলার দরবারে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্রটি লিখেছিলেন।

পত্রের বিষয় – ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলা ওয়াটসনের পত্রটির কথা উত্থাপন করেন। তিনি মুনশিকে পত্রটি বের করতে বলেন এবং মুনশি পত্রটি ওয়াটসকে দেন। ওয়াটসকে দিয়ে প্রথমে পত্রটির শেষ অংশ পড়ান, তারপরে সভাসদদের বোঝানোর জন্য মুনশিকে তার তরজমা করতে বলেন। সেই অনুবাদের বক্তব্য হল— কর্নেল ক্লাইভের প্রত্যাশামতো সৈন্যদল শীঘ্রই কলকাতায় এসে পৌঁছোবে। তিনি অতি দ্রুত আর-একটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দেবেন যে, আরও সৈন্য এবং জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। সবশেষে প্রায় হুমকির সুরে ওয়াটসন বলেন যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাবেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যাবে না।

আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো – বক্তা কাদের কাছে কোন্ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।

অক্ষমতার প্রকাশ – ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করে নিলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। ফরাসিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা সিরাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন – তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ। আমার সঙ্গে কখনো তোমরা অসদ্ব্যবহার করনি। তিনি বলেন, ইউরোপে ইংরেজ আর ফরাসিদের লড়াইয়ের প্রভাবে – এখানেও ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করে ফরাসিদের কুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এরপর নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধিকে তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়ে বলেন যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও এই সময় নতুন কোনো যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় সহানুভূতি থাকলেও ফরাসিদের সাহায্য করা বা ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদ করা সম্ভব নয়।

আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা? – কারা কাকে কীভাবে হেয় করেছিল?

সিরাজকে হেয় করা – অশচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজ মীরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ প্রমুখ তাঁর সভাসদ এবং অভিজাতদের উদ্দেশে তাঁকে হেয় করার অভিযোগ করেছিলেন।

  • নবাব বিরোধিতা – বাংলার সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই নবাব সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান সিপাহসালার থেকে অভিজাত-সকলের বিরোধিতা উপলব্ধি করেছিলেন।
  • অভিজাতদের স্বার্থসিদ্ধি – নবাব যখন তাঁর সভার ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে বহিষ্কার করেন তখন রাজবল্লভ ইংরেজদের নবাববিরোধী ভূমিকার কথা জেনেও তাতে আপত্তি জানান। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। সিরাজ স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই অভিজাতরা তৎপর।
  • অভিমান প্রকাশ – এই ঘটনায় সিরাজের অভিমান তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়। অভিমান করেই নিজের অপরাধ তিনি স্বীকার করেছেন, সমস্ত অভিযোগ মাথা নীচু করে গ্রহণ করেছেন। তিনি কোনো কটূক্তির প্রতিবাদও করেননি।
  • হেয় করার চেষ্টা – অথচ এইসব অভিজাতরা সমস্ত দেশে তাঁর দুর্নাম রটিয়েছেন, কর্মচারীদের মনে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব এনে দিয়েছেন, আত্মীয়স্বজনের মন বিষিয়ে দিয়েছেন এবং এভাবে সবসময়ে সবক্ষেত্রে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলেছে বলে নবাব মনে করেছেন।

আমার উপদ্রব নয় শেঠজি, আমার সহিষ্ণুতাই আপনাদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে! – কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? সহিষ্ণুতা কার স্পর্ধা বাড়িয়েছে এবং কীভাবে?

প্রসঙ্গ – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নিজের দরবারে নবাব সিরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁর রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। সেখানে রাজা রাজবল্লভ স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে নবাব অপমান করে না তাড়ালেই পারতেন। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। পালটা হিসেবে সিরাজ তাঁদের বিরুদ্ধে স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ আনলে জগৎশেঠ বলেন যে, স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইলে বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন। সিরাজ এই মন্তব্যে দুঃসাহস দেখলে জগৎশেঠ বলেন – আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েছে। এর উত্তর দিতে গিয়েই সিরাজ প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।

সহিষ্ণুতা যার যেভাবে স্পর্ধা বাড়িয়েছিল – সিরাজের মতে তাঁর সহিষ্ণুতা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখের স্পর্ধা বাড়িয়েছে। এই সহিষ্ণুতাই তাদের নবাবের মুখের সামনে এভাবে কথা বলার সাহস জুগিয়েছে, ইংরেজদের হয়ে কথা বলার স্পর্ধা দিয়েছে। এমনকি নবাববিরোধী চক্রান্তে শামিল হতেও তাদের পিছপা করেনি।

আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না, এ কথা তাঁদের মনে রাখা উচিত। – কে এ কথা বলেছেন? তাদের এ কথা বলার কারণ কী?

বক্তা – প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতি মীরমদন।

এ কথা বলার কারণ – নবাব সিরাজদ্দৌলা বিশ্বাসভঙ্গের জন্য ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে তাঁর দরবার ত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সিরাজের যেসব উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারীদের সঙ্গে ইংরেজদের গোপন সমঝোতা হয়েছিল তারা এর বিরোধিতা করে। সিরাজের আচরণে জগৎশেঠ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, মীরজাফর সিরাজের বিরুদ্ধে ‘মানী-লোকের মানহানি’ করার অভিযোগ আনেন। এমনকি সিপাহসালার মীরজাফর জানিয়ে দেন যে, সিরাজ এভাবে চললে তাঁর হয়ে অস্ত্রধারণ করা মীরজাফরের পক্ষে সম্ভব হবে না। এই সমবেত আক্রমণের সময়ে সিরাজের পাশে দাঁড়ান তাঁর বিশ্বস্ত দুই সেনাপতি মীরমদন ও মোহনলাল। মীরমদন মীরজাফরের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো যুদ্ধে সক্রিয় না হওয়ার অভিযোগ আনেন। মীরজাফর অধস্তনের এই ঔদ্ধত্য মানতে না পারার কথা বললে মোহনলাল তাকে মনে করিয়ে দেন, নবাবের কাজের সমালোচনাও সব সময়ে শোভন নয়। এই প্রেক্ষাপটেই মীরমদন প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সভায় উপস্থিত সবাইকে নবাবের প্রতি দায়বদ্ধতা পালনের কথা মনে করিয়ে দেন।

শেঠজি, জাফর আলি খাঁ, আপনাদের শ্রদ্ধেয় বন্ধুর মুখের দিকে একবার চেয়ে দেখুন! – কেন সিরাজ এরকম মন্তব্য করেছেন?

  • শুরুর কথা – সিরাজদ্দৌলা এবং তাঁর বিরোধিতায় নিয়োজিত কিছু সভাসদের মধ্যে উত্তপ্ত কথাবার্তার একটি খণ্ড মুহূর্ত ধরা পড়ে এই উদ্ধৃতির মধ্যে।
  • বক্তব্য খণ্ডন – রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখ নবাবের বিরুদ্ধে উপদ্রব ও অনাচারের যে অভিযোগগুলি আনেন তাতে ক্রুদ্ধ, ব্যথিত এবং হতাশ সিরাজ একে একে প্রত্যেকের বক্তব্য খণ্ডনে উদ্যত হন।
  • হোসেনকুলীর প্রসঙ্গ – রাজবল্লভ, যাঁকে এখানে ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করা হয়েছে তিনি সিরাজের পাপকর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললে নবাব হোসেনকুলীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন। হোসেনকুলী, যিনি পাপপূর্ণ কাজে লিপ্ত ছিলেন, তিনি সিরাজের কথামতো ‘প্রাণ দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়ে’ যান।
  • উদ্দিষ্ট মন্তব্য – নবাব জানতে চান, রাজবল্লভও হোসেনের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চান কি না। এমন ক্রুদ্ধ, হুমকি-মেশানো জিজ্ঞাসায় ভীত, সংকোচিত ও অপমানিত রাজবল্লভ নিজের মাথা নীচু করেন। তখনই সিরাজ জগৎশেঠ, মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে রাজবল্লভের প্রতি তীব্র ব্যঙ্গ প্রকাশ করে মন্তব্যটি করেন।

গোলামহোসেন, মোহনলাল আর মীরমদন যখন রয়েচে, তখন আর ভাবনা কী? চলুন। – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কে? তিনি কাদের, কেন সঙ্গে নিয়ে চলে যেতে চান? 

বক্তা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা নবাব সিরাজের সিপাহসালার মীরজাফর।

বক্তার লক্ষ্য – বাংলার নবাবি রাজত্বের গৃহবিবাদের একটি স্পষ্ট মুহূর্ত ধরা পড়েছে নাট্যাংশের এই অংশে। সিরাজকে সমর্থন ও সহযোগিতা জুগিয়ে যেতে চান যাঁরা, সেই মোহনলাল, মীরমদন এবং গোলাম হোসেনদের পদ, তাঁদের ক্ষমতা এবং নবাবের বিচক্ষণতাকে মীরজাফর কটাক্ষ করেছেন। এই মন্তব্যে মীরজাফরের সিরাজের শিবির ত্যাগ করে বিরোধী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পক্ষে যোগদানের ইচ্ছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মীরমদন এবং অন্যরা মীরজাফরের নিষ্ক্রিয়তা, নবাবের সপক্ষে অস্ত্রধারণে অনীহার সমালোচনা করেন। এইসময় অনিবার্যভাবেই উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ ও পালটা দোষারোপ করতে থাকেন। তখন মীরমদন নবাবকে পূর্ণ সাহায্যদানের কথা ঘোষণা করলে ক্ষিপ্ত সিপাহসালার তাঁর অনুগামী-জগৎশেঠ, রায়বল্লভদের নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন।

বস্তুতপক্ষে মীরজাফরের এমন কটাক্ষ এবং অভিযোগ আসলে অজুহাত মাত্র। তাঁদের নবাবের সঙ্গত্যাগ গোপন চক্রান্তেরই অংশ ছিল।

আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন। – কে কার উদ্দেশে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এমন উত্তির কারণ কী?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – নবাব সিরাজদ্দৌলা মীরজাফরকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

আলোচ্য উক্তির কারণ – সিরাজ বুঝেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বহুদূর বিস্তৃত। ইংরেজদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রে যুক্ত হয়েছেন মীরজাফর, রাজবল্লভ-সহ তাঁর রাজসভার কিছু কর্মচারী। এই অবস্থায় বিবেচক নবাব বুঝেছিলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে হিতে বিপরীতই হবে। তার বদলে মীরজাফরকে বুঝিয়ে ঠিক পথে আনা গেলে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করা সহজ হবে। তাই মীরজাফর নবাবের উদ্দেশে যখন বলেছেন – নবাব কি প্রকাশ্য দরবারেই আমার বিচার করতে চান? তখন নবাব নিজে সংযত হয়ে বিচারের প্রসঙ্গটিকে দূরে রাখতে চেয়েছেন। তিনি মনে করেছেন, বাংলা যখন বিপন্ন, নবাবের সিংহাসন যখন টলমল করছে, তখন ক্রোধ সংবরণ করাই শ্রেয়। তাই সিরাজ আন্তরিক ভঙ্গিতে নিজের এবং বাংলার দুর্দশার কথা শুনিয়ে মীরজাফরের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।

আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন – কাদের কাছে বক্তা ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?

বক্তা ও উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের অন্যতম চরিত্র সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধপক্ষের মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখের কাছে ‘ভিক্ষা’ চেয়েছেন।

বক্তার প্রত্যাশিত আশ্বাস – কোম্পানির ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলা দখলের উদ্দেশ্যে বিস্তৃত হয়েছিল। নবাব সিরাজদ্দৌলা এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং বুঝেছিলেন তাঁরই অধীনস্থ ক্ষমতাদখলে উদ্‌গ্রীব কিছু কর্মচারী ও সভাসদ এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু নবাব মনেপ্রাণে চাইতেন বাংলার স্বাধীনতা যেন অটুট থাকে। আর সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মীরজাফর ও বাকি কিছু সভাসদ তাঁকে ত্যাগ করলে এই সংহতি বিনষ্ট হবে বলে সিরাজ মনে করেছিলেন। তাই সমস্ত বিচার বন্ধ রেখে, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে, সভায় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন সিরাজ। এজন্য তিনি নিজের সমস্ত দোষের জন্য ক্ষমা চান এবং মীরজাফর ও অন্যান্যদের রাজদরবার থেকে চলে না যেতে অনুরোধ করেন। তাঁদের কাছে প্রার্থনা জানান, বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না। তিনি তাঁদের মুখে তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার আশ্বাসটুকু শুনতে চান।

বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না। — কে, কাদের উদ্দেশে এ কথা বলেছেন? এই উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তার কোন্ মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে, লেখো। 

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলা সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলেছেন।

বক্তার মানসিকতা –

  • প্রাককথন – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশ তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। কলকাতা এবং কাশিমবাজারে তাঁদের দুর্গনির্মাণ অব্যাহত। এর মধ্যে সিরাজের বিরুদ্ধে স্বয়ং মীরজাফর ও ঘসেটি বেগম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।
  • সৌহার্দ্য স্থাপন – বিচক্ষণ সিরাজ বুঝেছেন, এই পরিস্থিতিতে নিজেকে সংযত রেখে সমস্ত মনোমালিন্য মিটিয়ে নিতে হবে। তাই মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের যাবতীয় অভিযোগ নিজে মাথা পেতে নিয়ে তিনি সৌহার্দ্য স্থাপনে প্রয়াসী হয়েছেন।
  • দেশপ্রেম – নিজের অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে মীরজাফরকে বাংলার ঘোর দুর্দিনে সঙ্গ ত্যাগ না করার আবেদন জানিয়েছেন। এই উক্তির মধ্যে সিরাজের বিনয়ী স্বভাবের পরিচয় পাওয়া গেলেও তার আড়ালে বড়ো হয়ে উঠেছে তাঁর দেশপ্রেমিক স্বভাব। শুধু বাংলার স্বাধীনতারক্ষার জন্য সিরাজ শত্রুর কাছেও মাথা নত করতে প্রস্তুত ছিলেন।

বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না। – কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন?

উদ্দিষ্ট জন – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা উল্লিখিত মন্তব্যটি সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে করেছেন।

দুর্দিনের পরিচয় – ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশই তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে কলকাতা জয় করতে পারলেও নবাবের প্রচুর লোকবল ও অর্থবল উভয় শক্তির ক্ষয় হয়েছে। এরপরে ইংরেজরা কাশিমবাজার অভিমুখে সৈন্য পাঠিয়েছে, নবাবের মিত্রপক্ষ ফরাসিদের কাছ থেকে চন্দননগরের দখল নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্রমাগত নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। ওয়াটসন এবং ওয়াটস্-এর যে দুটি চিঠি নবাব সর্বসমক্ষে আনেন, তাতে এই ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ ছিল। সভাসদ ও দেশীয় অভিজাতরা যে নবাব-বিরোধী ছিলেন এবং তাদের সঙ্গেও ইংরেজরা সমঝোতা করেছিল, সেকথা ওই চিঠিদুটিতে ছিল। এর সাথে উল্লেখ ছিল ঘসেটি বেগমের নবাব- বিরোধিতাও। এভাবে ভিতরে ও বাইরে নবাব বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই সংকটজনক পরিস্থিতিকেই নবাব ‘দুর্দিন’ বলেছেন। তবে একে সিরাজ ব্যক্তিগত দুর্দিন না বলে বাংলার দুর্দিন বলেছেন। কারণ, তাঁর পরাজয় বা বিপর্যয়ের অর্থ বাংলার স্বাধীনতার অবসান। মীরজাফর-সহ্ রাজবল্লভ, জগৎ শেঠদের কাছে তিনি এই আশঙ্কা থেকে তাঁর পাশে থাকার আবেদন রেখেছেন।

বাংলার মান সাহায্য করুন – সিরাজ কাদের কাছে এই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন? কেন তিনি এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন?

অথবা, বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন – সিরাজ কাদের কাছে কী সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন?

যাঁদের কাছে আবেদন – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা উক্ত সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখের কাছে।

সাহায্য প্রত্যাশী – মীরজাফর, জগৎশেঠরা ছিলেন নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরোধী। তাঁরা মনে করতেন যে, নবাব তাঁদের অপমান করেছেন। অন্যদিকে নবাব এইসব ক্ষমতাবানরা যে স্বার্থপর এবং তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত, তা বুঝতে পেরেছিলেন। নবাবের বিরুদ্ধে মীরজাফরকে লেখা ওয়াটসের চিঠিটাই ছিল তার প্রমাণ। নবাব সিরাজ এসত্ত্বেও দেশের জন্য সমস্ত পুরোনো বিবাদ ভুলে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল যে, দেশের দুর্দিনে ঐক্যবদ্ধ থাকাটাই বেশি জরুরি। – আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন। তাই বাংলার দুর্দিনে কেউ যেন তাঁকে ত্যাগ না করে তার জন্য সিরাজ কাতর অনুনয় করেন এবং বাংলার মর্যাদা ও স্বাধীনতারক্ষার জন্য শক্তি ও বুদ্ধি দিয়েও সকলকে তাঁর পাশে থাকতে বলেন। এমনকি যুদ্ধশেষে বিচারের মুখোমুখি তিনি নিজে দাঁড়াতে রাজি বলেও জানান। কিন্তু তার আগে সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই-ই তিনি প্রত্যাশা করেছেন।

বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয় – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি এই গুলবাগ বাংলা। – কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে?

হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা। – এই বক্তব্যের মাধ্যমে বক্তার দেশপ্রেমের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নাট্যাংশ অবলম্বনে লেখো।

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

বক্তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য –

  • উদারনৈতিক মানসিকতা – সিংহাসনে বসার পর থেকেই নবাবের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। রাজসভার মধ্যেই মীরজাফরের নেতৃত্বে বিত্ত ও ক্ষমতাবানদের আলাদা একটা দল গড়ে ওঠে। এসব জানতে পেরেই সিরাজ রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখকে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ না করতে আহ্বান জানান।
  • সম্প্রীতির বার্তাবাহক – আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম দুটি জাতির মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেছেন সিরাজ। তাঁর প্রজারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, তারই চেষ্টা করেছিলেন এই তরুণ নবাব।
  • অসাম্প্রদায়িকতা – সিরাজ বলেন বাংলা কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নয়। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাসভূমি গুলবাগ এই বাংলা। ইংরেজরা বিদেশি জাতি।
  • ঐক্যবোধ – তাই তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করতে চাওয়া মানে তা দেশদ্রোহ। নিজেরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে কোম্পানির কাছে বাংলা দখল করাটা সহজ হয়ে যাবে। সেই কারণেই ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সিরাজের উদারনৈতিক অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে।

তাঁর আদেশে হাসিমুখেই মৃত্যুকে বরণ করব। – এখানে কার আদেশের কথা বলা হয়েছে? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্রটির ওপর আলোকপাত করো।

যার আদেশের কথা বলা হয়েছে – বিশিষ্ট নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে মীরমদন সিপাহসালার মীরজাফরের আদেশকেই মান্য করার কথা বলেছেন।

বক্তার চরিত্র –

  • শুরুর কথা – পলাশির যুদ্ধে সিরাজের অন্যতম বিশ্বস্ত সেনাপতি ছিলেন মীরমদন।
  • সহমর্মিতাবোধ – বাংলার ঘোর দুর্দিনে সিরাজের পাশে থেকে তিনি সিপাহসালার মীরজাফরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। আমরা নবাবের নিমক বৃথাই খাই না-এ কথা বলে নবাবের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। নবাবের বেদনাবোধের সঙ্গে সহমর্মী হয়ে তিনি জীবনপণ লড়াইয়ের শপথ গ্রহণ করেছেন।
  • নবাব-অনুসারী – সিরাজ চেয়েছিলেন হিন্দু-মুসলমানের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলার স্বাধীনতা রক্ষিত হোক। মীরমদন নবাবের এই অভিপ্রায় আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করেছেন। তাই মীরজাফর যখন সর্বসময়ে সর্বক্ষেত্রে নবাবকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তখন যাবতীয় সন্দেহ সত্ত্বেও মীরমদন তাঁকে মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
  • আদর্শ সেনা – একজন আদর্শ সেনার শৃঙ্খলা থেকে তিনি মীরজাফরকে মেনে নিয়েছেন এবং তাঁর আদেশে মৃত্যুবরণ করতেও যে রাজি, তা জানিয়ে দিয়েছেন। আসলে মীরমদনের কাছে দেশ সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এই মন্তব্যেও তারই ইঙ্গিত রয়েছে।

সুতরাং আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না। — উদ্ধৃতিটির বক্তা কে? তাঁর এরূপ বিলাপের কারণ কী?

বক্তা – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং।

বক্তার বিলাপের কারণ – স্বাধীন নবাবি আমলের অস্তমিত পর্যায়ের খানিক আভাস নাট্যকার আলোচ্য নাট্যাংশে তুলে ধরেছেন। এই সময় একদিকে জগৎশেঠ, মীরজাফরের মতো সভাসদদের অসহযোগিতা, অন্যদিকে ঘসেটি বেগম ও অন্যদের ব্যক্তিগত স্তরে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার বাসনা সিরাজদ্দৌলাকে বিধ্বস্ত করেছিল। তবুও তিনি ঘরোয়া কোন্দল, রাজসভার বিবাদ উপেক্ষা করে একমাত্র শত্রু হিসেবে ব্রিটিশ কোম্পানিকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি পারস্পরিক দোষারোপের বদলে নিজেদের ভুল সংশোধনে মন দিতে বলেন; এর থেকে নবাব বাদ দেননি নিজেকেও। এমনকি ইংরেজের হাত থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করার পরে বিচারের মুখোমুখি হতেও তিনি রাজি হয়েছেন। তিনি নিজে আগে যা যা ভুল করেছেন তারজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছেন। তাঁর কাছে – হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা। তাই হিন্দু ও মুসলিম উভয়কেই ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন এবং স্বদেশের স্বার্থে বিনয়ের ভঙ্গিতে তিনি প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।

বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। – বক্তা কে? বক্তার এমন ধারণা হওয়ার কারণ কী?

বক্তা – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের উল্লিখিত অংশটির বক্তা নবাব সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং।

বক্তার এরূপ ধারণার কারণ – নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, যেমন – জগৎশেঠ, রাজা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখের সামনে আলোচ্য মন্তব্যটি করেন। নবাব কলকাতা দুর্গ পুনর্দখল করার পরে ইংরেজরা তাদের সৈন্যশক্তিকে আরও সংহত করে নেয়। তারা নবাবের অনুমতির তোয়াক্কা না করে চন্দননগর দখল করে নেয়। কাশিমবাজারের দিকে ইংরেজদের অভিযানের প্রস্তুতিও প্রায় শুরু হয়ে যায়। সবমিলিয়ে নবাবের দৃষ্টিতে বাংলার জন্য তা ছিল এক ‘দুর্দিন’। আর তার পাশাপাশি ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকেও নবাব প্রত্যক্ষ বিরোধিতা পাচ্ছিলেন। তাঁর সিপাহসালার মীরজাফর এমনও বলেছিলেন – আপনি যদি মানী-লোকের এইরূপ অপমান করেন, তা হলে আপনার স্বপক্ষে কখনো অস্ত্র ধারণ করব না। মীরজাফর, জগৎশেঠদের বাংলার দুর্দিনে এক হয়ে চলার কথা বললেও সে বিষয়ে সিরাজ নিজেই সংশয়ে ছিলেন। সবমিলিয়ে দেশের সামনে যে মহাবিপদ উপস্থিত হয়েছে সে বিষয়ে সিরাজ নিশ্চিত ছিলেন।

জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী। — কাদের উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য? এ কথা বলার কারণ কী?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামক নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজদরবারের বিশিষ্ট কর্মচারীদের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

মন্তব্যের কারণ – আলিবর্দির মৃত্যুর পর বাংলার মসনদে বসেন তাঁর দৌহিত্র সিরাজদ্দৌলা। সিংহাসনে বসার পরই নানা কারণে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সিরাজের বিরোধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ইংরেজরা বিনাশুল্কে ব্যাবসাবাণিজ্য শুরু করে। নবাবের আদেশ উপেক্ষা করে তারা কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করতে থাকে। সিরাজের সিংহাসন আরও কণ্টকিত হয়ে ওঠে নিজের মাসি ঘসেটি বেগম, প্রধান সেনাপতি মীরজাফর ও কিছু রাজকর্মচারীর ষড়যন্ত্রে। বাংলার এই ঘোর দুর্দিনে সিরাজ সকলকে উদ্দেশ্য করে বাংলাকে ইংরেজদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য কাতর আবেদন রাখেন। যেভাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতা বিস্তার করছে, তাতে জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী। — এই উক্তির মধ্যে সিরাজের গভীর বেদনা ধরা পড়েছে। বাংলার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকেই যন্ত্রণাকাতর, নবাব মন্তব্যটি করেছেন।

ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো! – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কাকে ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন? তাঁর এরূপ বিরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

অথবা, ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো! – বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায়?

যাঁকে সম্বোধন – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজকে ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন।

বিরূপ মন্তব্যের কারণ – ঘসেটি বেগম বা মেহেরুন্নিসা নবাব আলিবর্দি খাঁর বড়ো মেয়ে, সম্পর্কে সিরাজের মাসি। ঘসেটির বিয়ে হয় ঢাকার শাসনকর্তা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে। দত্তক পুত্র ইকরমের মৃত্যু হলে তার শোকে শাহমৎ জঙ্গও মারা যান। বিধবা ঘসেটি বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। এদিকে আলিবর্দি খাঁ সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার শাসনকর্তা মনোনীত করেন। এই ঘটনা ঘসেটি বেগমের ঈর্ষার কারণ হয়। তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের ছেলে শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। রাজবল্লভ এবং অন্যদেরও নিজের দলে টানেন। এসব জানতে পেরে ক্ষিপ্ত সিরাজ ঘসেটির মতিঝিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। অবশেষে তাঁকে নিজের রাজপ্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। সিরাজের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় শওকত জঙ্গ। এইসব ঘটনার ফলে ঘসেটি বেগম হয়ে ওঠেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তারই প্রকাশ ঘটেছে উল্লিখিত মন্তব্যে।

ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে সিরাজের পতন হবে, সুদিন নয়? – বক্তা কে? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।

বক্তা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে উল্লিখিত অংশটির বক্তা ঘসেটি বেগম।

বক্তার মনোভাব – নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার জন্য সিরাজ ঘসেটিকে তাঁর মতিঝিল প্রাসাদ থেকে মুরশিদাবাদে নিজের প্রাসাদে এনে বন্দি করে রাখেন। এরফলে সিরাজের প্রতি ঘসেটির বিদ্বেষ আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। শওকত জঙ্গের মৃত্যুও সিরাজের জন্যই হয়েছে, তাই নবাবের পতনই ঘসেটির একমাত্র বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়। মাসিকে তুমি গৃহ-হারা করেচ, মাসির সর্বস্ব লুটে নিয়েচ, মাসিকে দাসী করে রেখেচ। -সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই অভিযোগ তীব্রতর হয়। মতিঝিল অধিকার করা, তাঁর সঞ্চিত সম্পদ হস্তগত করা, তাঁর পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রাখা-এরকম অজস্র অভিযোগ সিরাজের বিরুদ্ধে করা হয়। আর এইসব কারণেই সিরাজের সর্বনাশ ঘসেটি বেগমের কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনী কাশিমবাজার কুঠির দিকে আসছে শুনে ঘসেটি আশা প্রকাশ করে যে তারা মুরশিদাবাদের দিকেও আসবে। আর সেটাই হবে তাঁর ‘সুদিন’। সিরাজের সিংহাসন যেদিন অন্য কেউ অধিকার করবে সেদিনই তাঁর প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে। এইভাবে ঘসেটির তীব্র সিরাজ-বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে।

আছে শুধু প্রতিহিংসা – মন্তব্যটি কার? কী কারণে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছেন?

অথবা, আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই-আছে শুধু প্রতিহিংসা। – কে কাকে এ কথা বলেছে? এই উক্তিতে বক্তার কোন্ মানসিকতা ধরা পড়েছে?

মন্তব্যটির বক্তা – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে প্রশ্নোদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন ঘসেটি বেগম।

বক্তার মানসিকতা – নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগম তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাশার কারণে বাংলার সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু আলিবর্দি মনোনীত সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব হলে ঘসেটি তা মেনে নিতে পারেননি। তিনি আলিবর্দির আর-এক দৌহিত্র শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলস্বরূপ ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ হয়ে ওঠে সিরাজবিরোধী চক্রান্তের কেন্দ্রস্থল। নবাব সিরাজ পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে মতিঝিল প্রাসাদের দখল নেন এবং ঘসেটিকে নিজের মুরশিদাবাদের প্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। ঘসেটি পরিণত হন সিরাজের প্রত্যক্ষ বিরোধীতে। ইংরেজদের কাশিমবাজারের দিকে আসার খবর পেয়ে তিনি প্রত্যাশা করেন মুরশিদাবাদেও তারা আসবে এবং বাংলার সুদিন ফিরবে – ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে, সিরাজের পতন হবে। সিরাজ তাঁকে গৃহহারা করেছে, তাঁর সর্বস্ব লুঠ করেছে, তাঁকে দাসী করে রেখেছে। তাঁর এই অভিযোগ অস্বীকার করতে চেয়ে সিরাজ বলেন যে রাজনীতির কারণে মতিঝিল প্রাসাদে তাঁকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ঘসেটি প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটি করেন।

বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে। – বেগম কে? আমার মতো বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তার কেঁদে কাটানোর কারণ কী?

বেগমের পরিচয় – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের উল্লিখিত অংশে ‘বেগম’ বলতে নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফা-র কথা বলা হয়েছে।

যার কথা বলা হয়েছে – ‘আমার মতো’ বলতে এখানে ঘসেটির কথা বলা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়ার কারণ – নবাব আলিবর্দি খাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা ঘসেটি বেগমের রাজনৈতিক উচ্চাশা ছিল যে, আলিবর্দির পরে তিনি বাংলার শাসনক্ষমতার অধিকারী হবেন। তাই সিরাজকে বাংলার শাসনকর্তা হিসেবে তিনি কখনোই মেনে নিতে পারেননি। পূর্ণিয়ার নবাব শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্ররোচিত করেন তিনি। যদিও নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁকে পরাজিত ও নিহত করেন। ঘসেটির মতিঝিল প্রাসাদ একসময় হয়ে ওঠে নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র। সিরাজ এসব বুঝতে পেরে ঘসেটিকে মতিঝিল থেকে উৎখাত করেন এবং মুরশিদাবাদে নিজের প্রাসাদে গৃহবন্দি করে রাখেন। তাঁর ওপর ঘটে-চলা ঘটনার প্রতিকার করার মতো কোনো ক্ষমতা তাঁর না থাকায় নিজের কান্নাতেই ঘসেটি সান্ত্বনা পেতেন। তবে এই কান্নাই সিরাজ ও লুৎফার প্রতি প্রতিহিংসা হয়ে আত্মপ্রকাশ করে।

মনে হয়, ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ – সঞ্চালনে ভূমিকম্প। – কে, কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছে? তার সম্পর্কে বক্তার এরূপ মন্তব্যের কারণ কী?

বক্তা এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে, নবাব সিরাজদ্দৌলার পত্নী লুৎফাউন্নিসা ঘসেটি বেগম সম্পর্কে এ কথা বলেছেন।

এরূপ মন্তব্যের কারণ – ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সিরাজ যখন বিচলিত, সেই সময় নবাবের মাসি ঘসেটি রাজদরবারে প্রবেশ করেন। তারপর একের পর এক তীব্র বাক্যবাণে তিনি সিরাজকে জর্জরিত করতে থাকেন। ঘসেটির প্রতিটি বাক্যই বিষ-মাখানো তিরের মতো যেমন সিরাজের হৃদয়ে বিঁধে যায়, তেমনই সেখানে উপস্থিত সিরাজের পত্নী লুৎফার অন্তরকেও ক্ষতবিক্ষত করে। তিনি বুঝতে পারেন ঘসেটি সাক্ষাৎ প্রতিহিংসার প্রতিমূর্তি, যিনি লুৎফার স্বামী সিরাজেরও শওকত জঙ্গের মতোই নির্মম পরিণতি চান। ঘসেটি বলেন, চোখের জলে নবাব পথ দেখতে পাবেন না। বেগমকে আজীবন আমারই মতো কেঁদে কাটাতে হবে। লুৎফা উপলব্ধি করেন ঘসেটির সর্বাঙ্গে অতৃপ্তির জ্বালা, নিশ্বাসে বিষ, দৃষ্টিতে আগুন আর অঙ্গসঞ্চালনে ভূমিকম্পের অনুরণন। ঘসেটিকে সহ্য করতে না পেরে লুৎফাউন্নিসা তাঁকে অবিলম্বে মতিঝিলে পাঠিয়ে দিতে বলেছেন। উক্তিটির মধ্যে ঘসেটি সম্পর্কে লুৎফার ভীতি এবং আশঙ্কাই প্রকাশ পেয়েছে।

তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষ্ণা। – কার বুকে, কেন রক্তের তৃষা বলে বক্তা মনে করেছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতার পরিচয় দাও।

প্রেক্ষাপট – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজ পলাশির প্রান্তরের রক্তপিপাসাকে দেখেছেন। তাঁর ভাবনায় পলাশি নামের একটি তাৎপর্য ধরা পড়েছে। সিরাজ আশঙ্কার সঙ্গে বলেছেন যে, একসময় হয়তো লাখে লাখে পলাশ ফুল ফুটে প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, সেই কারণেই স্থানটির নাম হয় পলাশি। আর আজ সেই প্রান্তর যেন ব্রিটিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার মানুষের বুকের রক্তপানের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।

এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতা – ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হন সিরাজদ্দৌলা। একদিকে সেনাপতি মীরজাফর ও অন্য অভিজাতরা অন্যদিকে সিরাজের নিজের মাসি ঘসেটি বেগম সিরাজের পতনের জন্য চক্রান্তে লিপ্ত। বিচক্ষণ সিরাজ বুঝতে পেরেছেন এর ফলস্বরূপ ইংরেজ কোম্পানি আরও মরিয়া হয়ে উঠবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। তাই পলাশির যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনে তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। কারণ এই যুদ্ধে জয়লাভের কোনো আশা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর মনে হয়েছে, একসময় পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকা পলাশি যেন রক্তের তৃষ্ণায় আকুল হয়ে আছে।

জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি – বক্তা কে? উক্তিটির মধ্য দিয়ে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

বক্তা – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন স্বয়ং নবাব সিরাজদৌল্লা।

বক্তার চরিত্র – কখনোই কোনো যুদ্ধের আগাম পরিণাম জানানো যায় না। পলাশির যুদ্ধের মতো যুদ্ধের ক্ষেত্রে তো নয়-ই। কারণ এই যুদ্ধে লিপ্ত ছিল একাধিক পক্ষ এবং প্রত্যেকেরই উদ্দেশ্য আলাদা আলাদা রকমের। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি, পারিবারিক প্রতিহিংসা, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের বাসনা ইত্যাদি নানাবিধ জটিলতা এরসঙ্গে মিশে ছিল। তাই লড়াইটা যে নিছক সিরাজ বনাম কোম্পানি ছিল না- সেটা নবাব নিজেও বুঝেছিলেন। তাঁর সপক্ষে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েও মীরজাফর, রাজবল্লভ যে চূড়ান্ত যুদ্ধে তাঁর পাশে নাও থাকতে পারেন-এই সত্যটি বুঝতে সিরাজের কোনো অসুবিধেই হয়নি। এই যুদ্ধ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, যার ঘটনাস্থল পলাশি। চূড়ান্ত ক্ষয় ও বিনষ্টের ছবিটি আগাম দেখতে পেয়ে তাই সংবেদনশীল নবাবের হৃদয় হাহাকার করে উঠেছে, যার প্রকাশ ঘটেছে প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যের মাধ্যমে।


আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অংশ ‘সিরাজদ্দৌলা’ থেকে বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারী হয়েছে। যদি আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া, নিচে আমাদের পোস্টটি শেয়ার করে আপনার প্রিয়জনদের সাহায্য করতে পারেন যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন