দশম শ্রেণি – বাংলা – সিরাজদ্দৌলা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

Gopi

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজউদ্দৌলা নাটকটি বাংলা সাহিত্যের একটি অমর কীর্তি। এই নাটকটিতে উনিশ শতকের প্রথমার্ধের বাংলার ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন একজন দূরদর্শী ও প্রগতিশীল শাসক। তিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের ষড়যন্ত্রের ফলে তিনি পরাজিত ও নিহত হন।

দশম শ্রেণি – বাংলা – সিরাজদ্দৌলা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

  • কথামুখ – ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজের চরিত্রে একাধিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন-
  • জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমী – নবাব সিরাজ বাংলার স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলার দুর্দিনে তাঁর চরমতম শত্রু মীরজাফর প্রমুখের প্রতি তিনি একত্রে থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।
  • অসাম্প্রদায়িক – সিরাজের দেশাত্মবোধ ছিল অসাম্প্রদায়িক। বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানদের নয়, মিলিত হিন্দু-মুসলমানদের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা। এই অসাম্প্রদায়িকতা ছিল তাঁর দেশপ্রেমের স্বরূপ।
  • জাতীয়তাবাদী – সিরাজদ্দৌলা বাংলার মানমর্যাদা রক্ষার একজন অতন্দ্র সৈনিক। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত জাতীয়তাবোধই সিরাজকে ইতিহাসের নায়ক করেছে।
  • উদার ও আদর্শবাদী – সিরাজের চরিত্রের মধ্যে উদারতা ও আদর্শের এক অদ্ভুত সমন্বয় ছিল। মাতৃভূমির স্বাধীনতারক্ষার জন্য ব্যক্তিগত শত্রুতাকে তিনি ভুলে যেতে পেরেছিলেন। এমনকি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পরে নিজে বিচারের মুখোমুখি হতে বা সিংহাসন ছেড়ে দিতেও তিনি রাজি ছিলেন।
  • যন্ত্রণাদীর্ণ ও হতাশাগ্রস্ত – আদর্শের আড়ালে অবশ্য আর-এক সিরাজকে পাওয়া যায়, যিনি সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত। সিরাজ বেগম লুৎফাকে বলেছেন- মানুষের এমনি নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েছি যে, কোনো মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না, ভালোও বাসতে পারি না। আদর্শের বলিষ্ঠতা আর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার দ্বন্দ্বে হতাশায় এভাবেই দীর্ণ হয়েছেন সিরাজদ্দৌলা।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে মীরজাফরের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তাঁর ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামক নাট্যদৃশ্যে ইতিহাসকে অনুসরণ করেই মীরজাফরের স্বার্থপর চরিত্রটি তুলে ধরেছেন।
  • অসহিষ্ণু ও উগ্র – সিরাজ দরবারকক্ষে হোসেনকুলী খাঁর প্রাণদানের প্রসঙ্গ তুললে মীরজাফর মুখ খুলেছেন। নবাবের বিশ্বস্ত কর্মচারী মীরমদন তাঁকে নবাবের প্রতি বিশ্বস্ততার কথা মনে করালে, তিনি তাঁর পক্ষের সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এই আচরণের মধ্যে মীরজাফর চরিত্রের অসহিষ্ণুতা এবং উগ্রতা ধরা পড়েছে।
  • আত্মকেন্দ্রিক ও অহংকারী – মোহনলালকে মীরজাফর বলেছেন – নীচপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়। এই উক্তিতে নিজের পদমর্যাদা নিয়ে মীরজাফরের অহংকার প্রকাশিত হয়েছে।
  • ষড়যন্ত্রকারী – বাংলার ঘোর সংকটের সময়ে মীরজাফর নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ওয়াটস তাঁকে যে পত্র লিখেছেন, তার প্রসঙ্গ যখন নবাব তোলেন, তখন মীরজাফরকে লজ্জিত হতে দেখা যায় না। এ থেকে বোঝা যায় মীরজাফরই নবাবের বিরুদ্ধে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী এবং বিরূপ মনোভাবাপন্ন।
  • ইতিকথা – নাট্যকার এখানে মীরজাফর চরিত্রটিকে প্রচলিত ইতিহাসের ধারা মেনেই জীবন্ত করে তুলেছেন।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে ঘসেটি বেগমের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – সিরাজদ্দৌলা নাটকে ঘসেটি বেগম চরিত্র অনেকটাই ইতিহাসের যথাযথ রূপায়ণ।
  • ষড়যন্ত্রকারী – ঘসেটি বেগম সিরাজের মাসি। তিনি চেয়েছিলেন পিতা আলিবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী বাংলার মসনদে বসুন। কিন্তু তাঁর। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হলে সিরাজের সিংহাসনলাভ নিশ্চিত হয়ে ওঠে। নিজের মনোবাসনা পূর্ণ না হওয়ায় ঘসেটি সিরাজের প্রতি ঈর্ষা থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
  • প্রতিহিংসাপরায়ণা – ঘসেটি বেগমের প্রথম সংলাপ- ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো! সন্তানসম সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই উক্তি কখনোই যথাযথ বলে মনে হয় না। ঘসেটির উক্তিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা স্পষ্ট- আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই-আছে শুধু প্রতিহিংসা। নিরীহ বেগম লুৎফাকেও দুর্বিনীত ঘসেটি অকারণে শ্লেষপূর্ণ বাক্য শুনিয়েছেন।
  • ইতিকথা – তাঁর সম্পর্কে লুৎফার মূল্যায়ন- ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প! -বুঝিয়ে দেয় নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে ঘসেটি সার্থক।

সিরাজদ্দৌলা নাটকে সংলাপসৃষ্টিতে নাট্যকারের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

  • ভূমিকা – অ্যারিস্টটল নাটকের যে ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন তার মধ্যে চতুর্থ উপাদান হল সংলাপ। নাট্যকাহিনির সার্থক রূপায়ণে সংলাপের বিশেষ ভূমিকা আছে।
  • সংলাপ রচনার যথার্থতা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কালজয়ী নাটক সিরাজদ্দৌলা-র এই পাঠ্যাংশে সংকলিত অংশে সিরাজ ও ওয়াটসের সংলাপ দিয়ে নাট্যদৃশ্যের সূচনা হয়েছে। ওয়াটস ইংরেজ চরিত্র। তাই তাঁর সংলাপ ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়েছে। তিনি যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অন্বয়গত দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত। এই ত্রুটিযুক্ত ভাষা এক জন ইংরেজ চরিত্রের পক্ষে সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলা যায়। অন্যদিকে মঁসিয়ে লা পুরোপুরিই ইংরেজিতে কথা বলেছেন। নাহলে তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা হারাত। নাট্যদৃশ্যে সিরাজের সংলাপগুলি সম্রাটসুলভ গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। আবার মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের সাথে কথোপকথনে সিরাজ চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ ধরা পড়েছে। অপ্রধান চরিত্রগুলিও উপযুক্ত সংলাপের গুণে স্বমহিমায় ফুটে উঠেছে। বলা যায়, ঐতিহাসিক নাটকের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে নাট্যকার সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ শিল্পকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের মূল নাটকটির নাম সিরাজদ্দৌলা। তাঁর দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটিও ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামে সংকলিত। বিশেষ দৃশ্যের এরূপ নামকরণ সার্থক হয়েছে কি না বিচার করো।

  • ভূমিকা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটি পাঠ্যাংশে সংকলিত হয়েছে। সংকলকগণ মূল নাটকের শিরোনামটিই এখানে বজায় রেখেছেন। দৃশ্যটির ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে নামকরণটিকে অপরিবর্তিত রাখার যৌক্তিকতা ও সার্থকতা বোঝা যাবে।
  • নামকরণের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা – নাট্যদৃশ্যটিতে উপস্থাপনার মূল বিষয় হল নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে সংগঠিত ষড়যন্ত্র এবং তারজন্য নবাবের মানসিক উদ্বেগ। বাইরে ইংরেজ আর ঘরে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর এবং নিজের মাসি ঘসেটি বেগমের যৌথ ষড়যন্ত্র সিরাজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নিজের যাবতীয় অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে বাংলাকে রক্ষার জন্য কর্মচারীদের কাছে তিনি নতজানু হয়েছেন। মাত্র পনেরো মাসের রাজত্বকালে দরবারি ষড়যন্ত্রে, মানুষের নির্মমতায়, আপনজনদের প্রতিহিংসায় সিরাজ মর্মপীড়া অনুভব করেছেন। নাট্যদৃশ্যের উপসংহারে তার উক্তির মধ্যে ধরা পড়েছে অন্তহীন ব্যর্থতা – পলাশি! লাখে লাখে পলাশ-ফুলের অগ্নি-বরণে কোনোদিন হয়তো পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা। সিরাজের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, দেশপ্রেম নাট্যাংশটির মুখ্য অবলম্বন বলেই ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামকরণটিই যথাযথ বলে মনে হয়েছে।

সিরাজউদ্দৌলা নাটকটি বাংলা সাহিত্যের একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক। নাটকটি বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অমূল্য সম্পদ। নাটকটি পড়লে আমরা সিরাজউদ্দৌলার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারি। নাটকটি পড়ে আমরা দেশপ্রেম, স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব বুঝতে পারি।

JOIN US ON WHATSAPP

JOIN US ON TELEGRAM

Please Share This Article

About The Author

Related Posts

মাধ্যমিক - ভূগোল - বারিমন্ডল - জোয়ার ভাটা - রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

মাধ্যমিক – ভূগোল – বারিমন্ডল – জোয়ার ভাটা – রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – About Author and Story

The Passing Away of Bapu

Class 10 English – The Passing Away of Bapu – Question and Answer

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

Trending Now

Class 9 – English – A Day in The Zoo – Question and Answer

Class 9 – English Reference – Tom Loses a Tooth – Question and Answer

Class 9 – English Reference – The North Ship – Question and Answer

Class 9 – English – His First Flight – Question and Answer

Class 9 – English – A Shipwrecked Sailor – Question and Answer