মাধ্যমিক ইতিহাস – বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ইতিহাস বইয়ের সপ্তম অধ্যায়, “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সংক্ষিপ্ত বিবেচনা আপনাদের প্রস্তুতি আরও ভালো করতে সাহায্য করবে।

মাধ্যমিক ইতিহাস - বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ - বিষয়সংক্ষেপ
Contents Show

বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি –

বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি –

  • বড়োলাট লর্ড কার্জন -এর আমল।
  • বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব ঘোষণা – 19 জুলাই, 1905 খ্রিস্টাব্দ।
  • বঙ্গভঙ্গ কার্যকর – 16 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ।
  • বঙ্গভঙ্গ রদ – 1911 খ্রিস্টাব্দ।

অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি –

  • বড়োলাট লর্ড চেমসফোর্ডের আমল।
  • আন্দোলনের সূচনা – 1920 খ্রিস্টাব্দ।
  • আন্দোলনের অবসান – 25 ফেব্রুয়ারি, 1922 খ্রিস্টাব্দ।

আইন অমান্য আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি –

  • বড়োলাট লর্ড আরউইনের আমল।
  • আন্দোলনের সূচনা – 6 এপ্রিল, 1930 খ্রিস্টাব্দ।
  • আন্দোলনের অবসান – 8 মে, 1934 খ্রিস্টাব্দ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি –

  • বড়োলাট লর্ড লিনলিথগোর আমল।
  • আন্দোলনের সূচনা – 9 আগস্ট, 1942 খ্রিস্টাব্দ।
  • আন্দোলনের অবসান – 1943 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীশক্তি –

আন্দোলনসময়কালঅংশগ্রহণকারী নারী
বঙ্গভঙ্গবিরোধী1905-1911 খ্রিস্টাব্দননীবালা দেবী, কুমুদিনী বসু।
অহিংস-অসহযোগ1920-1922 খ্রিস্টাব্দসরলা দেবী, সুশীলা নায়ার, অমৃত কাউর, সুচেতা কৃপালিনি, অরুণা আসফ আলি, সরোজিনী নাইডু।
আইন অমান্য1930-1934 খ্রিস্টাব্দবিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত, কমলা নেহরু।
ভারত ছাড়ো1942-1944 খ্রিস্টাব্দকস্তুরবা গান্ধি, ঊষা মেহতা, অরুণা আসফ আলি।

ভারতের কয়েকজন স্মরণীয় বীরাঙ্গনা –

ভিকাজী কামা –

  • ভিকাজী কামার জন্ম – 1861 খ্রিস্টাব্দ।
  • ভিকাজী কামার মৃত্যু – 1936 খ্রিস্টাব্দ।
  • ভিকাজী কামার কীর্তি
    • বিখ্যাত মহিলা বিপ্লবী। প্যারিসে ফ্রি ইন্ডিয়া সোসাইটি (1906 খ্রিস্টাব্দ) নামে একটি বিপ্লবী সমিতি গঠন করেন।
    • 1907 খ্রিস্টাব্দে স্টুটগার্টে সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসের অধিবেশনে যোগ দেন ও ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন।
    • তিনি ভারতীয় বিপ্লববাদের জননী নামে পরিচিত।

কস্তুরবা গান্ধি –

  • কস্তুরবা গান্ধির জন্ম – 1869 খ্রিস্টাব্দ।
  • কস্তুরবা গান্ধির মৃত্যু – 1944 খ্রিস্টাব্দ।
  • কস্তুরবা গান্ধির কীর্তি –
    • মহাত্মা গান্ধির স্ত্রী।
    • গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আদর্শের একনিষ্ঠ পুজারি। গান্ধিজির সঙ্গে একযোগে বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
    • ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জেলবন্দি হয়ে অবশেষে জেলের মধ্যেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

মাতঙ্গিনী হাজরা –

  • মাতঙ্গিনী হাজরার জন্ম – 1870 খ্রিস্টাব্দ।
  • মাতঙ্গিনী হাজরার মৃত্যু – 1942 খ্রিস্টাব্দ।
  • মাতঙ্গিনী হাজরার কীর্তি – 73 বছরের এই বৃদ্ধা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীন ভারতের পতাকা নিয়ে মিছিল করে তমলুক থানা ও কোর্ট দখল করতে গিয়ে তিনি ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। তাঁর এই আত্মবলিদানের জন্যই তিনি স্মরণীয়।

সরোজিনী নাইডু –

  • সরোজিনী নাইডুর জন্ম – 1879 খ্রিস্টাব্দ।
  • সরোজিনী নাইডুর মৃত্যু – 1949 খ্রিস্টাব্দ।
  • সরোজিনী নাইডুর কীর্তি –
    • প্রথম ভারতীয় মহিলা যিনি কংগ্রেস সভাপতি হন।
    • এই প্রখ্যাত মহিলা কবি গান্ধিজির সঙ্গে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে (1931 খ্রিস্টাব্দ) যোগদান করতে লন্ডনে গিয়েছিলেন।
    • তিনি ভারতের বুলবুল অভিধায় ভূষিত হয়েছিলেন।

কমলা নেহরু –

  • কমলা নেহরুর জন্ম – 1899 খ্রিস্টাব্দ।
  • কমলা নেহরুর মৃত্যু – 1936 খ্রিস্টাব্দ।
  • কমলা নেহরুর কীর্তি –
    • জওহরলাল নেহরুর স্ত্রী।
    • ইউনাইটেড প্রভিন্সে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) ব্রিটিশ সরকারকে কোনো কর না দেওয়ার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেন।
    • আইন অমান্য আন্দোলনে খাদিবস্ত্র পরে মহিলাদের সংগঠিত করে পিকেটিং (অবস্থান বিক্ষোভ) করেন।

লীলা নাগ/লীলা রায় –

  • লীলা নাগ/লীলা রায়ের জন্ম – 1900 খ্রিস্টাব্দ।
  • লীলা নাগ/লীলা রায়ের মৃত্যু – 1970 খ্রিস্টাব্দ।
  • লীলা নাগ/লীলা রায়ের কীর্তি –
    • লীলা নাগ বিপ্লবী সংস্থা দীপালি সংঘ 1923 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন।
    • তাঁর বাবার নাম গিরিশচন্দ্র নাগ। তিনি 1939 খ্রিস্টাব্দের 23 মে বিপ্লবী অনিল রায়কে বিয়ে করেন। বিয়ের পর সামাজিক প্রথা অনুসারে লীলা নাগের নাম হয় লীলা রায়।

বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিত –

  • বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের জন্ম – 1900 খ্রিস্টাব্দ।
  • বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের মৃত্যু – 1990 খ্রিস্টাব্দ।
  • বিজয়লক্ষ্মী পণ্ডিতের কীর্তি – ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ দ্বারা প্রভাবিত এই মহিলা আইন অমান্য আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

অরুণা আসফ আলি

  • অরুণা আসফ আলির জন্ম – 1909 খ্রিস্টাব্দ।
  • অরুণা আসফ আলির মৃত্যু – 1996 খ্রিস্টাব্দ।
  • অরুণা আসফ আলির কীর্তি – 
    • কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির অন্যতম সদস্যা।
    • ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
    • মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ভারতীয় রাষ্ট্রদূত।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার –

  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জন্ম – 1911 খ্রিস্টাব্দ।
  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মৃত্যু – 1932 খ্রিস্টাব্দ।
  • প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের কীর্তি –
    • বাংলার মহিলা বিপ্লবী, যুগান্তর দল ও চট্টগ্রাম রিপাবলিকান আর্মির সদস্যা।
    • এদের আদি পদবি ছিল দাশগুপ্ত। নবাবি আমলে পাওয়া উপাধি ছিল ওয়াহেদেদার, যার থেকে ‘ওয়াদ্দেদার’ কথাটি এসেছে।
    • 1932 খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। একজন সাহেবকে হত্যা ও 13 জনকে আহত করে প্রীতিলতা পুলিশের কাছে ধরা না দিয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড (KCN) খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

কল্পনা দত্ত –

  • কল্পনা দত্তের জন্ম – 1913 খ্রিস্টাব্দ।
  • কল্পনা দত্তের মৃত্যু – 1995 খ্রিস্টাব্দ।
  • কল্পনা দত্তের কীর্তি –
    • বাংলার মহিলা বিপ্লবী।
    • মাস্টারদা সূর্য সেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির অন্যতম সদস্যা।
    • চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে জড়িত থাকায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।
    • তাঁর ছদ্মনাম ছিল ‘ফুনতার’।

শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথন/লক্ষ্মী সেহগল –

  • শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথন/লক্ষ্মী সেহগলের জন্ম – 1914 খ্রিস্টাব্দ।
  • শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথন/লক্ষ্মী সেহগলের মৃত্যু – 2012 খ্রিস্টাব্দ।
  • শ্রীমতি লক্ষ্মী স্বামীনাথন/লক্ষ্মী সেহগলের কীর্তি –
    • বাবার নাম এস স্বামীনাথন।
    • 1947 খ্রিস্টাব্দে তিনি কর্নেল প্রেম সেহগলকে বিয়ে করেন। তাঁর নাম হয় লক্ষ্মী সেহগল।
    • তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশের প্রায় 1500 নারীকে সংগঠিত করেছিলেন।
    • তাঁর নেতৃত্বে 1945 খ্রিস্টাব্দে ইম্ফল অভিযানে রানি ঝাঁসি বাহিনী সরাসরি যুদ্ধে নামে।
    • ভারতীয় নারীদের আত্মমর্যাদা ও স্বাবলম্বনের ধারণা প্রতিষ্ঠার পথে এই বাহিনী প্রেরণা জুগিয়েছিল।

উষা মেহতা –

  • উষা মেহতার জন্ম – 1920 খ্রিস্টাব্দ।
  • উষা মেহতার মৃত্যু – 2000 খ্রিস্টাব্দ।
  • উষা মেহতার কীর্তি –
    • সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ‘সাইমন গো ব্যাক’ (Simon, Go Back) স্লোগানের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেন।
    • ভারত ছাড়ো আন্দোলনে জোরালো পদক্ষেপ নেন।

ভারতে ছাত্র আন্দোলন –

ভারতে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস প্রায় 150 বছরেরও বেশি পুরোনো। 1848 খ্রিস্টাব্দে দাদাভাই নৌরজি। দ্য স্টুডেন্টস সায়েন্টিফিক অ্যান্ড হিস্টোরিক সোসাইটি (The Student’s Scientific and Historic Society) নামক একটি সংগঠনের। প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনাই ছিল এই সংগঠনের উদ্দেশ্য। বলা যেতে পারে, এই সময় থেকেই ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ। হতে শুরু করেছিল।

1912 খ্রিস্টাব্দে আহমেদাবাদে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স (All India Students Conference) -এর দ্বিতীয় সম্মেলনে ছাত্রদের উদ্দেশ্য ছিল – ‘Charka Swaraj first and education after.’

ছাত্র আন্দোলনকে দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত বিভিন্ন সার্কুলার ও তার সময়কাল –

  • কার্লাইল সার্কুলার – 12 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ।
  • লিয়ন সার্কুলার – 16 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ।
  • পেডলার সার্কুলার – 21 অক্টোবর, 1905 খ্রিস্টাব্দ।

সুভাষচন্দ্ৰ বসু ও INA –

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু একটি স্মরণীয় নাম। তিনি আই সি এস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সরকারি চাকরি ত্যাগ করে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। 1941 খ্রিস্টাব্দে তিনি গোপনে দেশত্যাগ করে। রাশিয়া ও জার্মানির সাহায্য লাভের চেষ্টা করেন। পরে তিনি জাপানে আসেন ও রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে গঠিত আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব। গ্রহণ করেন।

সুভাষচন্দ্র বসু জাপান সরকারের সহায়তায় সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। আজাদ হিন্দ সরকার ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আজাদ হিন্দ বাহিনীর রণধ্বনি ছিল- ‘জয় হিন্দ, দিল্লি চলো’। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সরকারের পরাজয়ের ফলে আজাদ হিন্দ বাহিনীও আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

রানি বঝাঁসি বাহিনী –

সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন। তাই আজাদ হিন্দ বাহিনীর একটি বাহিনীর নাম রেখেছিলেন রানি ঝাঁসি বাহিনী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অংশ থেকে প্রায় 1500 নারী ঝাঁসি বাহিনীতে যোগদান করে। 1946 খ্রিস্টাব্দের ইম্ফল অভিযানে এই বাহিনী সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ভারতীয় নারীদের আত্মমর্যাদা প্রদান ও নিজ শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার ক্ষেত্রে রানি ঝাঁসি বাহিনী ছিল অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত। আজাদ হিন্দ বাহিনীর ঝাঁসির রানি বিগ্রেডের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রীমতী লক্ষ্মী স্বামীনাথন।

আজাদ হিন্দ বাহিনী

রশিদ আলি দিবস –

রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর ক্যাপটেন। ব্রিটিশ সরকারের সামরিক আদালতের বিচারে তাঁর 7 বছর কারাদণ্ড হয়। এর প্রতিবাদে 1946 খ্রিস্টাব্দের 11-13 ফেব্রুয়ারি কলকাতায় গণ আন্দোলন হয়। এর মধ্যে 12 ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালিত হয়।

বিশ শতকের ভারতে দলিত আন্দোলন –

বর্ণবিভক্ত ভারতীয় হিন্দু সমাজের নিম্ন সম্প্রদায়ভুক্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী দলিত নামে পরিচিত। তারা বিভিন্নভাবে শোষিত ও নিপীড়িত হত। দলিতরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আন্দোলনে শামিল হয়েছে।

দলিত সমাজ

গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক –

দলিত সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের বিষয়ে গান্ধিজি ও ডঃ বি আর আম্বেদকরের মধ্যে বিতর্ক হয়। ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (বি আর আম্বেদকর) ছিলেন দলিতদের নেতা। ব্রিটিশ সরকার ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘোষণা করে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিলে গান্ধিজি এই নীতির বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত 1932 খ্রিস্টাব্দে দলিত নেতা আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে হিন্দুদের যৌথ নির্বাচন স্বীকার করা হয়।

দলিত শ্রেণির উন্নয়নের উপায় নিয়ে গান্ধিজি ও ডঃ বি আর আম্বেদকর -এর মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্যগুলি হল –

গান্ধিজির মতআম্বেদকরের মত
দলিত সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবর্তে সামাজিক উন্নয়নের দিকেই গান্ধিজি বেশি গুরুত্ব আরোপ করেন।আম্বেদকর দলিত শ্রেণির অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে বেশি গুরুত্ব দেন। তিনি মনে করতেন অর্থনৈতিকভাবে উন্নত না হলে দলিতদের সামাজিক মানোন্নয়ন সম্ভবপর হবে না।
স্বশাসিত এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম গঠনই ছিল গান্ধিজির রাষ্ট্রদর্শনের মূল কথা।অপরদিকে আম্বেদকর আধুনিক শিল্পনির্ভর শহরকেন্দ্রিক জীবনধারায় বিশ্বাসী ছিলেন।

নমঃশূদ্র আন্দোলন –

বাংলার দলিত আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম হল নমঃশূদ্র আন্দোলন। তারা শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনে শামিল হয়।

দলিত সম্প্রদায়ের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব –

  • বি আর আম্বেদকর – অর্থনীতিবিদ ও ভারতীয় সংবিধানের রূপকার।
  • কে আর নারায়ণন – ভারতের দশম রাষ্ট্রপতি।
  • বাবু জগজ্জীবন রাম – ভারতের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী।
  • কে জি বালাকৃষ্ণান – ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি।
  • মায়াবতী – উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
  • দামোদারম সঞ্জীভায়া – ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দলিত সভাপতি।
  • শিবু সোরেন – ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
  • রামবিলাস পাসওয়ান – লোকজনশক্তি পার্টির সভাপতি।
  • মীরা কুমার – ভারতের প্রথম মহিলা স্পিকার।
  • এ পি অনিল কুমার – কেরলের পর্যটন এবং অনগ্রসর জাতি উন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী।

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক (দশম শ্রেণীর) ইতিহাস বইয়ের সপ্তম অধ্যায়, “বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ” এর “বিষয়সংক্ষেপ” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু অধ্যয়নের সময় অধ্যায়টির কাঠামো ও প্রধান বিষয়াবলি বুঝতে সাহায্য করবে, যা আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের পরীক্ষার প্রস্তুতিতে কিছুটা হলেও সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন, মতামত বা সহায়তার প্রয়োজন হয়, নিচে মন্তব্য করে জানাতে পারেন কিংবা টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন—আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত।

Please Share This Article

Related Posts

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্র দুটি লেখো।

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

প্রতিসরাঙ্ক কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নির্ভর করে?

কাচের স্ল্যাবের মধ্য দিয়ে আলোর প্রতিসরণের ক্ষেত্রে দেখাও যে আপতিত ও নির্গত আলোকরশ্মি পরস্পরের সমান্তরাল। অথবা, দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

দেখাও যে, সমান কাচফলকের মধ্য দিয়ে আলোকরশ্মির শুধুমাত্র পার্শ্বসরণ ঘটে।

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

তোমার জীবনের একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

একটি গ্রামের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

অরণ্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা – প্রবন্ধ রচনা

র‍্যাগিং ও ছাত্রসমাজ – প্রবন্ধ রচনা

আলোর প্রতিসরণ কাকে বলে? প্রতিসরণের সূত্রসমূহ