মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন – অভিব্যাক্তি – বিবর্তন ও পার্থক্য – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায়ের আলোচ্য বিষয় হলো অভিব্যক্তি ও অভিযোজন। এই অধ্যায়ের অধীনে জীবের বৈশিষ্ট্য প্রকাশের প্রক্রিয়া, অভিব্যক্তির মতবাদ, অভিযোজনের ধারণা, বিভিন্ন ধরনের অভিযোজন, অভিযোজনের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

Table of Contents

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান - অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন - অভিব্যাক্তি - বিবর্তন ও পার্থক্য

অভিব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ রেখাচিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাও।

অভিব্যক্তির গুরুত্ব মানুষের মন্দল সম্পর্কে প্রতিফলনের স্রোত, এটি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনে অপরিহার্য ও দরকারি।

অভিব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ

সভ্যতার সৃষ্টিকাল থেকেই পৃথিবীর উৎপত্তি ও প্রাণের উৎপত্তি অত্যন্ত রহস্যময় ও জটিল প্রক্রিয়া। বিভিন্ন বিজ্ঞানী বিভিন্ন সময়ে এই রহস্য উম্মোচনের চেষ্টা করেন। এইসব বিজ্ঞানীদের মতবাদ ও ধারণা থেকে পৃথিবী ও প্রাণের উৎপত্তি ও জীবের অভিব্যক্তি সম্পর্কিত কিছু তথ্য জানা সম্ভব। অভিব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ নীচে বর্ণনা করা হল।

  • পৃথিবীর সৃষ্টি – পৃথিবী সৌরজগতের অংশ। নীহারিকার অপেক্ষাকৃত শীতল পরিধি বরাবর অংশ থেকে এই গ্রহের সৃষ্টি হয়। আনুমানিক 450-500 কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।
  • জীবনের উৎপত্তি – আদি পৃথিবীতে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাণের উৎপত্তি হয়। বিজ্ঞানী ওপারিন এবং হ্যালডেন সমুদ্রে প্রথম প্রাণের রাসায়নিক উৎপত্তি সম্পর্কিত বিশদ ধারণা দিয়েছিলেন।
  • এককোশী জীবের উৎপত্তি – প্রাণের উৎপত্তি পর ধীরে ধীরে বিভিন্ন এককোশী জীবের আবির্ভাব ঘটে।
  • সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব – এককোশী জীবগুলির মধ্যে কিছু সালোকসংশ্লেষকারী এককোশী ব্যাকটেরিয়া আবির্ভাব ঘটে। এরা সালোকসংশ্লেষের মাধ্যমে পরিবেশে অক্সিজেন ত্যাগ করে। এর ফলে পরিবেশে মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটে।
  • বিভিন্ন বহুকোশী জীবের উৎপত্তি – এককোশী জীব থেকে বিবর্তনের ধারায় বহুকোশী জীবের উৎপত্তি ঘটে। এরা অপেক্ষাকৃত জটিল ও উন্নত।
  • মাছের মতো মেরুদণ্ডী প্রাণী ও কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণীর উৎপত্তি – এরপর বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন অমেরুদণ্ডী ও প্রথম মেরুদণ্ডী প্রাণী মাছের আবির্ভাব ঘটে।
  • ডাঙার উদ্ভিদের বিবর্তন – প্রথম প্রাণের উদ্ভব জলে হলেও ধীরে ধীরে স্থলেও এদের বিস্তার ঘটতে থাকে। অর্থাৎ, ডাঙায় নতুন উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে। স্থলে বসবাসের জন্য এবং স্থলজ পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে ডাঙার উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটে এবং জটিল ও উন্নত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের আবির্ভাব হয়।
অভিব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ রেখাচিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাও।
  • চারপেয়ে মেরুদণ্ডীর ডাঙায় ওঠা ও উন্নত জীব সৃষ্টি : এরপর জলজ জীবন ত্যাগ করে বিভিন্ন প্রাণীর ডাঙায় বসবাস শুরু করতে শুরু করে। প্রধানত চারপেয়ে প্রাণী ডাঙায় ওঠে, যেমন — ব্যাঙ জাতীয় প্রাণীরা জল ও স্থল উভয় পরিবেশেই বাস করতে শুরু করে। এরপর বিবর্তনের ধারায় স্থলজ জীবের উন্নতির সাথে বিভিন্ন উন্নততর জীবের উদ্ভব হয়।

জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

জীবনের সৃষ্টি এবং অবনতি সাধারণত অণুর সমন্বয়ের ফলে হয়, যা বায়ু, জল এবং পৃথিবীর প্রাকৃতিক উপাদানগুলির ব্যবহারের সাথে সংযোগিত হয়।

জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি

  • প্রথম পর্যায়ে সরল জৈবযৌগের উৎপত্তি – অতিবেগুনি রশ্মি, বজ্রপাত, তাপপ্রবাহ প্রভৃতির উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রকার হাইড্রোকার্বন সৃষ্টি হয়। যেমন—অ্যাসিটিলিন, মিথেন, ইথিলিন ইত্যাদি। এগুলি আবার উত্তপ্ত জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন হাইড্রক্সি যৌগ উৎপন্ন করে। যেমন —অ্যাসিটালডিহাইড।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ে জটিল জৈবযৌগের উৎপত্তি – সরল জৈব যৌগগুলি বিক্রিয়ার দ্বারা কার্বোহাইড্রেট (যেমন — গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ), ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল (যেমন — ইথাইল অ্যালকোহল), অ্যামিনো অ্যাসিড (যেমন — গ্লাইসিন) সৃষ্টি হয়। এগুলি পরবর্তীকালে আরও বৃহৎ ও জটিল জৈব যৌগ প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি গঠন করে, যা সমুদ্রের উত্তপ্ত জলের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। একে ‘হট ডাইলিউট স্যুপ’ বলে।
  • কোয়াসারভেটের উৎপত্তি – উৎপন্ন বৃহৎ ও জটিল যৌগগুলি পরস্পর মিলিত হয়ে একটি দ্বিস্তরীয় পর্দাবেষ্টিত, গোলাকার, বিভাজনে সক্ষম কোলয়েড কণার উৎপত্তি ঘটায়, যাকে কোয়াসারভেট বলে। এদের মধ্যে প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, শর্করা প্রভৃতি প্রাণ সৃষ্টির উপকরণ ছিল, যা থেকে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি ঘটে। আবার, বিজ্ঞানী সিডনি ফক্সের মতে প্রাচীন পৃথিবীতে সমুদ্রের জলে প্রোটিন থেকে মাইক্রোস্ফিয়ার গঠিত হয় এবং এখান থেকেই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল।
  • প্রোটোসেলের উৎপত্তি – কোয়াসারভেটগুলি পরবর্তীকালে খাদ্য সংগ্রহের জন্য নিউক্লিক অ্যাসিড, প্রোটিন ইত্যাদি শোষণ করে আকারে ও আয়তনে বড়ো হয়ে বৃহৎ কোশের মতো গঠন সৃষ্টি করে, যা প্রোটোসেল নামে পরিচিত। এরাই রাসায়নিক সংশ্লেষের মাধ্যমে উৎপন্ন পৃথিবীর আদিমতম জীব। এদের জেনেটিক বস্তু ছিল RNA প্রকৃতির। এই প্রোটোসেলগুলি রাসায়নিক পরভোজী প্রকৃতির ছিল। এদের থেকে পরবর্তীকালে রাসায়নিক স্বভোজী এবং আরও পরে সালোকসংশ্লেষকারী জীবের উৎপত্তি ঘটে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব ঘটে ও পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ হয়।

ডারউইনিজম – এর সপক্ষে কয়েকটি প্রমাণ দাও। বায়োজেনি বা প্রাণের জৈবিক বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

এটি প্রামাণিক বিজ্ঞানিক পদ্ধতি যা অবিচ্ছিন্নভাবে দলিল এবং পরীক্ষামূলক তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তগুলি পরীক্ষা করে।

ডারউইনিজম – এর সপক্ষে প্রমাণ

ডারউইনিজম-এর সপক্ষে কয়েকটি উদাহরণ হল —

  • পাতা পোকা, কাঠি পোকা, এরা আত্মরক্ষার জন্য পাতা ও কাঠি আকৃতির হয়। ফলে গাছপালার সঙ্গে মিশে যায় ও শত্রুর হাত থেকে রক্ষা পায়। অর্থাৎ এই দেহাকৃতির জন্যই এরা টিকে থাকে ও প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়।
  • পতঙ্গের চোষকটি এমন দৈর্ঘ্যের হয়, যাতে তা ফুলের মধুথলি অবধি পৌঁছাতে পারে। অর্থাৎ, চোষকের এই দৈর্ঘ্যের জন্যই তারা প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়।

বায়োজেনি বা প্রাণের জৈবিক বিবর্তন

প্রায় 3.7 বিলিয়ন বছর আগে আদিকোশের উৎপত্তি ও জীবনের অভিব্যক্তির ঘটনাকে বায়োজেনি বলে। এর প্রধান ঘটনাগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

বায়োজেনি বা প্রাণের জৈবিক বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
  • প্রোটোসেলের উৎপত্তি – রাসায়নিক সংশ্লেষের মাধ্যমে সৃষ্ট কোয়াসারভেটগুলির মধ্যে নিউক্লিক অ্যাসিডের অনুপ্রবেশ ঘটে আদিকোশ বা প্রোটোসেল সৃষ্টি হয়। এরাই পৃথিবীর প্রথম সজীব বস্তু।
  • স্বভোজীতার উদ্ভব – প্রথম আবির্ভূত প্রোটোসেল বা আদিকোশগুলি পুষ্টিগতভাবে রাসায়নিক পরভোজী ছিল। পরে এদের থেকেই রাসায়নিক স্বভোজী ও আরও পরে সালোকসংশ্লেষকারী স্বভোজী জীবের উদ্ভব ঘটে। এর ফলে বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেনের আবির্ভাব হয়।
  • ইউক্যারিওটিক কোশের আবির্ভাব – প্রায় 1.5 বিলিয়ন বছর আগে স্থলভাগে মুক্ত অক্সিজেনে শ্বসনক্ষম ইউক্যারিওটিক কোশের আবির্ভাব ঘটে।

সমসংস্থ অঙ্গ ও সমবৃত্তীয় অঙ্গ এবং উভচরের হৃৎপিন্ড ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিণ্ড – পার্থক্য লেখো।

সমসংস্থ অঙ্গ ও সমবৃত্তীয় অঙ্গের পার্থক্য

বিষয়সমসংস্থ অঙ্গসমবৃত্তীয় অঙ্গ
1. গঠনঅঙ্গগুলির অভ্যন্তরীণ গঠনগত মিল থাকে।অভ্যন্তরীণ গঠন ভিন্ন হয়।
2. উৎপত্তিঅঙ্গগুলির উৎপত্তিগত মিল থাকে।অঙ্গের উৎপত্তি ভিন্ন হয়।
3. কার্যকারিতাপরিবেশের উপযোগিতার ওপর ভিত্তি করে অঙ্গগুলির কার্যকারিতা বিভিন্ন।একই পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার কারণে অঙ্গগুলির কার্যকারিতা একই প্রকারের হয়।
4. বিবর্তনের প্রকৃতিঅপসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণ—বাদুড়ের ডানা, তিমির ফ্লিপার, মানুষের অগ্রপদ।অভিসারী বিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণ — পতঙ্গ ও পাখির ডানা।

উভচরের হৃৎপিন্ড ও স্তন্যপায়ীর হৃৎপিন্ড পার্থক্য

বিষয়উভচরের হূৎপিণ্ডস্তন্যপায়ীর হূৎপিণ্ড
1. গঠনউভচর প্রাণীর হৃৎপিণ্ড তিন প্রকোষ্ঠ-যুক্ত-দুটি অলিন্দ ও একটি নিলয়।স্তন্যপায়ী বা পাখির হৃৎপিণ্ডে চারটি প্রকোষ্ঠ — দুটি অলিন্দ ও দুটি নিলয়।
2. O2 যুক্ত ও CO2 যুক্ত রক্তের মিশ্ৰণ নিলয়ে O2 যুক্ত CO2 যুক্ত রক্ত মিশ্রিত হয়।O2 , যুক্ত ও CO2 , যুক্ত রক্ত কখনোই মিশ্রিত হয় না।
3. আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠসাইনাস ভেনোসাস (অলিন্দের আগে) এবং কোনাস আর্টারিওসাস (নিলয়ের পরে) নামক আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠ রয়েছে।আনুষঙ্গিক প্রকোষ্ঠ থাকে না।

ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ এবং জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্ম – পার্থক্য লেখো।

ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদের পার্থক্য

বিষয়ল্যামার্কবাদডারউইনবাদ
1. জীবনসংগ্রামল্যামার্ক জীবনসংগ্রামের কোনো উল্লেখ করেননি। তাঁর মতে, অভ্যন্তরীন চাহিদাই কোনো অঙ্গের বৃদ্ধি বা ক্ষয়ের কারণ।ডারউইন তিন প্রকার জীবনসংগ্রামের কথা বলেন। যথা — অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম, আন্তঃ- প্রজাতি সংগ্রাম ও পরিবেশের সাথে সংগ্রাম।
2. পরিবেশের প্রভাবপরিবেশের পরিবর্তনের কারণেই জীবের স্বভাবগত ও দৈহিক পরিবর্তন হয়।পরিবেশের সাপেক্ষে অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরাই জীবনসংগ্রামে জয়ী হয়।
3. অঙ্গের ব্যবহার ও অব্যবহারক্রমাগত ব্যবহারের ফলে অঙ্গ সুগঠিত হয় এবং অব্যবহারের ফলে দুর্বল ও নিষ্ক্রিয়  হয়ে যায়।ডারউইন এই সম্পর্কে কোনো উল্লেখ করেননি।
4. বৈশিষ্ট্যের সঞ্চারণজীবনকালে অর্জিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত যোগ্যতম জীবের বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়।

জীবাশ্ম ও জীবন্ত জীবাশ্মের পার্থক্য

বিষয়জীবাশ্মজীবন্ত জীবাশ্ম
1. বর্তমান অবস্থাপ্রস্তরীভূত।সজীব।
2. জীবজগতে অবস্থানঅবলুপ্ত।প্রাচীন বৈশিষ্ট্যসমূহ অপরিবর্তিতভাবে ধারণ করে আজও জীবিত।
3. প্রাপ্তিস্থানসাধারণত পাললিক শিলাস্তরে পাওয়া যায়।জীবগুলির স্বাভাবিক বিস্তারস্থানে পাওয়া যায়।
4. উদাহরণআরকিওপটেরিক্স।প্রাণী—লিমিউলাস। উদ্ভিদ—গিংকগো বাইলোবা

জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্রুণতত্ত্বগত প্রমাণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।

জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্ৰূণতত্ত্বগত প্রমাণ নিম্নে আলোচনা করা হল।

জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্ৰূণতত্ত্বগত প্রমাণ

মৎস, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী এবং স্তন্যপায়ী প্রভৃতি শ্রেণির প্রাণীর ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং ক্রমিক পর্যায় পর্যবেক্ষণ করলে প্রথম দিকে তাদের মধ্যে বহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়, যার থেকে প্রমাণিত হয় যে এরা একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। যেমন —

  • এগুলির প্রত্যেকটির জাইগোট একটি মাত্র কোশ দিয়ে গঠিত।
  • জাইগোট মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় বিভাজিত হয়ে বহুকোশী ব্লাস্টুলা গঠন করে।
  • পরবর্তী পর্যায়ে ব্লাস্টুলা থেকে গ্যাস্ট্রুলার আবির্ভাব ঘটে।
  • এদের প্রত্যেকের দেহ তিনটি স্তরবিশিষ্ট। মৎস্য, উভচর, পক্ষী ও স্তন্যপায়ী শ্রেণির ভ্রূণের বিকাশ বিশ্লেষণ করলে মূলত, দুটি বিষয়ের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই সাদৃশ্যগুলি হল —
জৈব বিবর্তনের সপক্ষে ভ্রুণতত্ত্বগত প্রমাণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
  • গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ ও অন্তঃস্থ যুগ্ম ফুলকাথলি – প্রতিটি শ্রেণির ভ্রূণের প্রাথমিক পর্যায়ে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ দেখা যায়। মাথার নীচে পার্শ্বীয়ভাবে এই খাঁজ উপস্থিত থাকে। প্রকৃতপক্ষে, ভ্রূণে গলবিলের ভিতরের দিকে অন্তস্ত্বক স্ফীত হয়ে যুগ্ম ফুলকাথলি গঠন করে, যার ফলে বাইরের দিকে বহিস্থ ফুলকা খাঁজ তৈরি হয়। এদের একত্রে গলবিলীয় যন্ত্র বলা হয়। এর থেকে পরবর্তীকালে মাছের দেহে ফুলকা তৈরি হয়। স্থলজ প্রাণীর দেহে ফুলকার প্রয়োজন থাকে না, তাই এদের দেহে ওই অংশ পরিবর্তিত হয়ে প্যারাথাইরয়েড, থাইমাস ও থাইরয়েড গ্রন্থি গঠিত হয়।
  • ল্যাজ-সদৃশ গঠন ও মায়োটম পেশি – প্রত্যেক মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রুণে প্রাথমিক অবস্থায় ল্যাজ-সদৃশ গঠন ও তাতে মায়োটম পেশির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এর বিন্যাসে যে সাদৃশ্য দেখা যায় তা এই প্রাণীগুলির মধ্যে অভিব্যক্তিগত সম্পর্ক প্রমাণ করে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান বিষয়ের অভিব্যাক্তি ও অভিযোজন সম্পর্কিত এই লেখার সমাপ্তিতে আমরা দেখে এসেছি যে অভিব্যাক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ ধারণা। এটি বস্তুস্থাপন ও যৌক্তিকতা দুটি পার্থক্যপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। অভিব্যক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের ভাবনা এবং আদর্শগুলি ব্যক্ত করতে পারি। এছাড়াও পর্যটন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সমাজসেবা ইত্যাদির মাধ্যমে অভিব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার উপায় হিসাবে ব্যবহার করা যায়। আরও পর্যটন, পরিবেশ সংরক্ষণ, সমাজসেবা ইত্যাদির মাধ্যমে অভিব্যক্তি বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার উপায় হিসাবে ব্যবহার করা যায়।

অভিব্যক্তি হল জীবের বৈশিষ্ট্যগুলির প্রকাশ। অভিব্যক্তির মাধ্যমে জীব পরিবেশের সাথে অভিযোজন, বংশগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং বৈচিত্র্য সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের মন্দল সম্পর্কে প্রতিফলনের স্রোত হল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

Share via:

মন্তব্য করুন