মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – অভিব্যক্তি – বিষয়সংক্ষেপ

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘অভিব্যক্তি‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘অভিব্যক্তির ধারণা, জীবনের উৎপত্তি, অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি‘ -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – অভিব্যক্তি ও অভিযোজন – অভিব্যক্তি – বিষয়সংক্ষেপ
অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি – বিষয়সংক্ষেপ

অভিব্যক্তির ধারণা, জীবনের উৎপত্তি, অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি

বিষয়সংক্ষেপ

  • ‘অভিব্যক্তি’ শব্দটির অর্থ হল দীর্ঘ সময় ধরে জীবদের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের ফলেই সরল জীব থেকে জটিল জীব তথা নতুন প্রজাতির উৎপত্তি ঘটে।
  • জীবনের উৎপত্তি নিয়ে নানা মতবাদ রয়েছে। এগুলির মধ্যে বিজ্ঞানী হ্যালডেন ও ওপারিন জীবনের উৎপত্তি-সংক্রান্ত যে ধারণা দেন তা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের মতে জীবনের উৎপত্তি কতকগুলি নির্দিষ্ট ধাপে সম্পন্ন হয়।
  • প্রায় 4.6 বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর উৎপত্তি হয়, তখন পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় 5000-6000°C। পরিবেশ ছিল বিজারক প্রকৃতির।
  • পরবর্তী ধাপে নানা অজৈব উপাদান থেকে জৈব রাসায়নিক উপাদান সৃষ্টি হয়। একে বলে কেমোজেনি। হ্যালডেন ও ওপারিন বলেন প্রাচীন পৃথিবীর তপ্ত সমুদ্র বা হট ডাইলিউট স্যুপ -এ প্রাণের উৎপত্তি ঘটে। ‘কোয়াসারভেট’ নামক কোলয়েড কণা এই তপ্ত সমুদ্রে সৃষ্টি হলে তা থেকে প্রাণের উৎপত্তি ঘটে।
  • বিজ্ঞানী সিডনি ফক্সের মতে মাইক্রোস্ফিয়ার নামক গঠন থেকে প্রাণের উৎপত্তি ঘটে।
  • প্রায় 3.7 বিলিয়ন বছর আগে তপ্ত সমুদ্রে প্রথম এককোশী প্রোটোসেল তৈরি হয়।
  • মিলার ও উরে পরীক্ষাগারে মিথেন, অ্যামোনিয়া ও হাইড্রোজেন গ্যাস 2 : 2 : 1 আয়তন অনুপাতে মিশিয়ে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে তড়িৎ ক্ষেপন করেন। ফলে নানা রকমের অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি হয়। এই পরীক্ষা হ্যালডেন-ওপারিন তত্ত্বকে সমর্থন করে।
  • জীবন অভিব্যক্তির মূল ঘটনাবলি হল – পৃথিবী সৃষ্টি → জীবনের উৎপত্তি এককোশী জীবের উৎপত্তি → সালোকসংশ্লেষকারী ব্যাকটেরিয়ার উৎপত্তি-বহুকোশী জীবের উৎপত্তি-মাছের মতো মেরুদণ্ডী প্রাণীর উৎপত্তি → ডাঙায় উদ্ভিদের বিবর্তন → চারপেয়ে মেরুদন্ডী ডাঙায় প্রাণীর আবির্ভাব।

জৈব অভিব্যক্তির মতবাদঅভিব্যক্তির মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ

বিষয়সংক্ষেপ

  • বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও দার্শনিক জৈব অভিব্যক্তি কীভাবে ঘটে তার নানা ব্যাখ্যা দেন। এর মধ্যে ল্যামার্কবাদ ও ডারউইনবাদ উল্লেখযোগ্য।
  • ল্যামার্ক 1809 সালে ‘ফিলোজফি জুলজিক’ (Philosophie Zoogloique) নামক বইয়ের নতুন জীবের সৃষ্টি সংক্রান্ত মতবাদ প্রকাশ করেন।
  • ল্যামার্কবাদের মূল প্রতিপাদ্যগুলি হল –
    • অভ্যন্তরীণ শক্তির প্রভাবে জীবের আকার ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
    • জীবদেহে কোনো অঙ্গের চাহিদা থাকলে তা সৃষ্টি হয়।
    • কোনো অঙ্গ ব্যবহার করলে তা সুগঠিত হয় আর অব্যবহারে তা ক্রমশ ক্ষয় পেয়ে বিলুপ্ত হয়।
    • এইভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ হয়।
    • এই অর্জিত বৈশিষ্ট্য পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়ে ক্রমশ নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে।
  • বিজ্ঞানী ওয়াইসম্যান কয়েক জনু ধরে সাদা ইঁদুরের ল্যাজ কেটে দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরবর্তী জনুর ইঁদুরের পুনরায় ল্যাজ সৃষ্টি হয়। এটি ল্যামার্কের অর্জিত বৈশিষ্ট্য বংশানুসরণ সূত্রকে খণ্ডন করে।
  • চার্লস রবার্ট ডারউইন এইচ এম এস বিগল নামক জাহাজে নানা দেশ ও দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণ করেন ও অভিব্যক্তি-সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন। তাঁর রচিত ‘অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন’ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection) নামক বই 1859 সালে প্রকাশিত হয়।
  • ডারউইন -এর তত্ত্বের মূল প্রতিপাদ্যগুলি হল –
    • অত্যধিক মাত্রায় বংশবৃদ্ধি, অর্থাৎ জীবেরা প্রজনন দ্বারা অসংখ্য অপত্য সৃষ্টি করে।
    • সীমিত খাদ্য ও বাসস্থান, পৃথিবীতে খাদ্য ও বাসভূমি সীমিত থাকে।
    • এর ফলে জীবদের মধ্যে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম দেখা যায়। এই সংগ্রাম অন্তঃপ্রজাতি, আন্তঃপ্রজাতি বা পরিবেশগত হতে পারে।
    • জীবদের মধ্যে বৈশিষ্ট্যের ভেদ বা প্রকরণ দেখা যায়।
    • অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবগুলির প্রাকৃতিক নির্বাচন হয়, অর্থাৎ তারা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। এই ঘটনাকে বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসার ‘যোগ্যতমের উদ্বর্তন’ বলে অভিহিত করেন।
    • এই অনুকূল ভেদযুক্ত, প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত জীবগুলি কালক্রমে নতুন জীবপ্রজাতি সৃষ্টি করে।
  • ডারউইন তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন – ভেদ সৃষ্টির কারণ তিনি ব্যাখ্যা করতে পারেননি।

অভিব্যক্তির মতবাদের সপক্ষে প্রমাণ

বিষয়সংক্ষেপ

  • অভিব্যক্তি যে ঘটে, তার সপক্ষে নানা প্রমাণ ছড়িয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হল জীবাশ্ম। বিভিন্ন সময়কালে একই জীবের নানা জীবাশ্ম থেকে আমরা সেই জীবটির ক্রমিক পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারি।
  • ঘোড়ার ক্রমিক জীবাশ্মগুলি হল ইওহিপ্পাস বা হাইর‍্যাকোথেরিয়াম (ঊষাকালের ঘোড়া) → মেসোহিপ্পাস (অন্তবর্তী ঘোড়া) → মেরিচিপ্পাস (রোমন্থক ঘোড়া) → প্লিওহিপ্পাস ইকুয়াস বা আধুনিক ঘোড়া। দীর্ঘ সময়কালে ঘোড়ার উচ্চতা ও আকারের ক্রমবৃদ্ধি, তৃতীয় আঙুলের বৃদ্ধি ও ক্ষুরে পরিবর্তন প্রভৃতি লক্ষণীয়।
  • যেসব অঙ্গের উৎপত্তি এক, কিন্তু কাজ ভিন্ন তাদের সমসংস্থ অঙ্গ বা হোমোলোগাস অঙ্গ বলে। যেমন – তিমির ফ্লিপার, মানুষের হাত, বাদুড়ের ডানা। এগুলি অপসারী অভিব্যক্তি, অর্থাৎ ভিন্ন পরিবেশে ছড়িয়ে গিয়ে অভিযোজিত হওয়াকে সূচিত করে।
  • যেসব অঙ্গের উৎপত্তি আলাদা, কিন্তু কাজ এক, তাদের সমবৃত্তীয় অঙ্গ বা অ্যানালোগাস অঙ্গ বলে। যেমন – পাখির ডানা ও পতঙ্গের ডানা। এরা অভিসারী অভিব্যক্তি, অর্থাৎ একই পরিবেশে থাকার জন্য অভিযোজনকে সূচিত করে।
  • কিছু অঙ্গ পূর্বপুরুষে সক্রিয় থাকলেও বর্তমানে ক্ষয়প্রাপ্ত অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এদের লুপ্তপ্রায় বা নিষ্ক্রিয় অঙ্গ বলে। যেমন – মানুষের অ্যাপেনডিক্স, কক্সিস ইত্যাদি।
  • মেরুদণ্ডী প্রাণীদের হৃৎপিন্ডের গঠন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, অভিব্যক্তির পথে বিভিন্ন শ্রেণিতে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠ সংখ্যা বেড়ে তা ক্রমশ জটিল হয়েছে। এটিও অভিব্যক্তি নির্দেশ করে।
  • বিভিন্ন মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রুণ পর্যালোচনা করলে তাদের সবার ভ্রুণে গলবিলীয় বহিস্থ ফুলকা খাঁজ ও যুগ্ম ফুলকাথলি এবং মায়োটোম পেশি লক্ষ করা যায়, অর্থাৎ প্রাণীগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে ধারণা করা যায়।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় “অভিব্যক্তি ও অভিযোজন” অধ্যায়ের ‘অভিব্যক্তি‘ বিভাগের উপ-অধ্যায় ‘অভিব্যক্তির ধারণা, জীবনের উৎপত্তি, অভিব্যক্তির মুখ্য ঘটনাবলি‘ -এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শুষ্ক করতে গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসকে শনাক্ত করবে কীভাবে?

দেখাও যে H₂S গ্যাস অম্লধর্মী। অথবা, দেখাও যে H₂S দ্বি ক্ষারীয় অ্যাসিড?

হাইড্রোজেন সালফাইড শুষ্ক করতে কেন গাঢ় H₂SO₄ বা অনার্দ্র CaCl₂ ব্যবহার করা হয় না?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে গাঢ় HNO₃ ব্যবহার করা হয় না কেন?

হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রস্তুতিতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয় না কেন?