আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

বংশগতি ও প্রকরণ, বংশগতি সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ শব্দের ব্যাখ্যা
বংশগতি কাকে বলে বুঝিয়ে দাও।
যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার চারিত্রিক গুণাবলি বংশপরম্পরায় সন্তানসন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয়, তাকে বংশগতি বলে। বংশগতির মাধ্যমে কোনো জীব তার মতোই জীব সৃষ্টি করে। যেমন – আম গাছ থেকে আম গাছ, ছাগল থেকে ছাগল, মানুষ থেকে মানুষ জন্মায়।
হ্যাপ্লয়েড ও ডিপ্লয়েড সেট কাকে বলে?
হ্যাপ্লয়েড সেট –
জননকোশের জেনেটিক বস্তুতে ওই জীবের সমস্ত অ্যালিল একক মাত্রায় থাকলে তাকে হ্যাপ্লয়েড সেট বলে। হ্যাপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল এবং X বা Y ক্রোমোজোমের অ্যালিল একক মাত্রায় থাকে।
ডিপ্লেয়েড সেট –
দেহকোশের জেনেটিক বস্তুতে দুটি হোমোলোগাস ক্রোমোজোমের দ্বিগুণ মাত্রায় সমস্ত অ্যালিল থাকে। একে ডিপ্লয়েড সেট বলে। ডিপ্লয়েড সেটে অটোজোমাল অ্যালিল দ্বিগুণ মাত্রায় থাকে, সঙ্গে দ্বিগুণ মাত্রায় X ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল অথবা X ও Y ক্রোমোজোমীয় অ্যালিল উভয়েই একক মাত্রায় থাকে।
জিনোম কাকে বলে?
ডিপ্লয়েড ক্রোমোজোমসম্পন্ন (2n) জীবের প্রতিটি হ্যাপ্লয়েড (n) ক্রোমোজোম সেটে বিন্যস্ত জিনগুলিকে একত্রে জিনোম বলে। অর্থাৎ, জননকোশের বা গ্যামেটের হ্যাপ্লয়েড ক্রোমোজোমের সমস্ত জিনকে একত্রে জিনোম বলে। এগুলি গ্যামেটের মাধ্যমে জনিতৃ জীব থেকে অপত্যের দেহে সঞ্চারিত হয়।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশন –
ক্রোমোজোম বা জিনের সংখ্যা ও গঠনের পরিবর্তনের ফলে জীবের চরিত্রের পরিবর্তনকে পরিব্যক্তি বা মিউটেশন বলে।
পরিব্যক্তি বা মিউটেশনের উদাহরণ –
থ্যালাসেমিয়া, বর্ণান্ধতা, হিমোফিলিয়া প্রভৃতি রোগ পরিব্যক্তির ফলে সৃষ্টি হয়।
মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
মানুষের কয়েকটি প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য হল –
প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
বাদামি চোখ | নীল চোখ |
গাঢ় কালো চুল | হালকা কালো চুল |
কোঁকড়ানো চুল | সোজা চুল |

কোনো জীবের বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ বলতে কী বোঝ?
কোনো জীবের বাহ্যিক বিশেষত্ব বা গুণকে বলে বৈশিষ্ট্য বা প্রলক্ষণ। প্রতিটি বৈশিষ্ট্য একটি অ্যালিল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। যেমন – মটর গাছের লম্বা হওয়াটি একটি বৈশিষ্ট্য। একইভাবে মটরের বীজপত্রের সবুজ বর্ণ, ফুলের বেগুনি বর্ণ প্রভৃতি হল পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য।
কোনো জীবের চরিত্র বলতে কী বোঝ?
কোনো জীবের চরিত্র বলতে বোঝায় জিন নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে। যেমন – মটর গাছের উচ্চতা হল একটি চরিত্র। এই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বৈশিষ্ট্য হল লম্বা ও বেঁটে। একইভাবে বীজপত্রের রং চরিত্রটির অন্তর্গত দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য হল হলদে ও সবুজ।
অ্যালিল বা অ্যালিলোমর্ফ কী?
সমসংস্থ ক্রোমোজোমের একই লোকাসে অবস্থিত কোনো নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী একটি জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপকে অ্যালিল বা অ্যালিলোমর্ফ বলা হয়। এককথায়, অ্যালিল হল একই জিনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যেমন – লম্বা ও খর্বাকার; সাদা ও কালো ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য নির্ধারক জিন জোড়ার একটি জিন অপরটির অ্যালিল।

মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন কাকে বলে?
কোনো প্রজাতির একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে মনোহাইব্রিড ক্রস বা একসংকর জনন বলে। যেমন – মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে এই দুই বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ঘটা সংকরায়ণ হল একসংকর জননের উদাহরণ।
ডাইহাইব্রিড ক্রস বা দ্বিসংকর জনন কাকে বলে?
কোনো প্রজাতির দুই জোড়া বিপরীতধর্মী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুটি জীবের মধ্যে জনন সম্পাদিত হলে, তাকে ডাইহাইব্রিড ক্রস বা দ্বিসংকর জনন বলে। যেমন – হলদে বীজপত্র এবং গোলাকার বীজসম্পন্ন মটর গাছের সঙ্গে সবুজ বীজপত্র এবং কুঞ্চিত বীজসম্পন্ন মটর গাছের সংকরায়ণ হল দ্বিসংকর জননের উদাহরণ।

হোমোজাইগাস জীব কাকে বলে?
কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একইরকম হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হোমোজাইগাস জীব বা সমসংকর জীব বলে। যেমন – বিশুদ্ধ লম্বা (TT) বা বিশুদ্ধ বেঁটে (tt) বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী অ্যালিল দুটি একই প্রকৃতির। তাই বিশুদ্ধ লম্বা বা বিশুদ্ধ বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীব হল হোমোজাইগাস।
হেটেরোজাইগাস জীব কাকে বলে?
কোনো জীবের দুটি সমসংস্থ ক্রোমোজোমে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের অ্যালিল দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হলে, ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের সাপেক্ষে সেই জীবকে হেটেরোজাইগাস জীব বা বিষমসংকর জীব বলে। যেমন – সংকর লম্বা (Tt) মটর উদ্ভিদ হেটেরোজাইগাস প্রকৃতির। কারণ, এক্ষেত্রে একই লোকাসে দুটি ভিন্ন অ্যালিল থাকে।
সংকরায়ণ কাকে বলে?
কোনো চরিত্রের সাপেক্ষে বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত একই প্রজাতির দুটি জীবের মধ্যে যৌন জননকে সংকরায়ণ বলে। যেমন – বিশুদ্ধ লম্বা ও বিশুদ্ধ বেঁটে মটর গাছের মিলনে সংকর লম্বা মটর গাছ সৃষ্টি করার পদ্ধতি।
বিশুদ্ধ জীব বলতে কী বোঝ?
কোনো জীব যদি বংশানুক্রমে কোনো বৈশিষ্ট্য হুবহু একইরকমভাবে বজায় রাখে, তখন সেই বৈশিষ্ট্যের জন্য জীবটিকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলা হয়। যেমন – একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনুর লম্বা (TT) ও বেঁটে (tt) মটর গাছ বিশুদ্ধ উদ্ভিদ।
সংকর জীব বলতে কী বোঝ?
দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের যৌন জনন বা পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলা হয়। যেমন – বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলযুক্ত (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত (vv) মটর গাছের সংকরায়ণের ফলে সৃষ্ট বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ হল সংকর উদ্ভিদ।
জনিতৃ জনু বলতে কী বোঝ?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় শুরুতে যে দুটি জীব নিয়ে প্রজনন করানো হয়, তাদের জনিতৃ জনু বা P জনু (P = parental) বলা হয়। যেমন – একটি একসংকর জনন পরীক্ষায় জনিতৃ জনু হল বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট মটর গাছ (vv)।
প্রথম অপত্য জনু বলতে কী বোঝ?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন নতুন জীবগুলিকে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনু (F1 = first filial) বলা হয়। যেমন – বিশুদ্ধ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (VV) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলবিশিষ্ট (vv) জনিতৃ জনু থেকে উৎপন্ন সংকর বেগুনি ফুলবিশিষ্ট (Vv) সমস্ত মটর গাছই হল প্রথম অপত্য জনু।
দ্বিতীয় অপত্য জনু কাকে বলে?
সংকরায়ণ পরীক্ষায় প্রথম অপত্য জনুর প্রজনন (স্বপরাগযোগ বা ইতর পরাগযোগ বা নিষেক) -এর ফলে সৃষ্ট নতুন জীবগুলিকে দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনু (F2 = second filial) বলে। উদাহরণ – বিশুদ্ধ বেগুনি (VV) ফুলযুক্ত এবং বিশুদ্ধ সাদা (vv) ফুলযুক্ত জনিতৃ জনুর সংকরায়ণের ফলে প্রাপ্ত F1 জনুর সংকর বেগুনি ফুলযুক্ত (Vv) মটর গাছগুলির স্বপরাগযোগ ঘটানো হয়। এর ফলে উৎপন্ন বেগুনি এবং সাদা ফুলযুক্ত গাছগুলিই হল F2 জনু।
প্রকট বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
প্রকট বৈশিষ্ট্য –
একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়, তাকে প্রকট বৈশিষ্ট্য বলে।
প্রকট বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ –
বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের পরনিষেক ঘটালে F1 জনুতে সৃষ্ট সকল গাছ বেগুনি ফুলবিশিষ্ট হয়, অর্থাৎ বেগুনি ফুল হওয়ার বৈশিষ্ট্যটি হল প্রকট বৈশিষ্ট্য।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য –
একই চরিত্রের অন্তর্গত দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যের জীবের মিলন ঘটালে প্রথম অপত্য বংশে (F1 জনুতে) যে বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত না হয়ে সুপ্ত থাকে ও পরে দ্বিতীয় অপত্য বংশে (F2 জনুতে) প্রকাশ পায়, তাকে প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বলে।
প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ –
বিশুদ্ধ বেগুনি ও বিশুদ্ধ সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের ফুলের ইতর পরাগযোগ ঘটালে প্রথম অপত্য জনু বা F1 জনুতে সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদ পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় অপত্য জনু বা F2 জনুতে যদিও তা আবার প্রকাশ পায়। এই সাদা ফুল বৈশিষ্ট্যটি হল প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য।
ফিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
ফিনোটাইপ –
কোনো জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বাহ্যিক প্রকাশকে ফিনোটাইপ বলে
ফিনোটাইপের উদাহরণ –
মটর গাছের দৈর্ঘ্য চরিত্রটির বাহ্যিক প্রকাশ বা ফিনোটাইপ হল লম্বা ও বেঁটে।
জিনোটাইপ কী? উদাহরণ দাও।
জিনোটাইপ –
কোনো জীবের একটি চরিত্রের জিনগত গঠনকে অ্যালিল সমন্বয় দ্বারা প্রকাশ করলে, তাকে জিনোটাইপ বলে।
জিনোটাইপের উদাহরণ –
মটর গাছের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ লম্বা গাছের জিনগত গঠন বা জিনোটাইপ হল TT এবং বিশুদ্ধ খর্ব গাছের জিনোটাইপ হল tt।
ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপের মধ্যে সম্পর্ক কী?
জীবের জিন নিয়ন্ত্রিত কোনো চরিত্রের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য হল ফিনোটাইপ। জিনের অ্যালিলের দ্বারা এই বাহ্যিক প্রকাশ নিয়ন্ত্রিত হয়। যে অ্যালিল সমন্বয় এই ফিনোটাইপ বা বাহ্যিক প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে জিনোটাইপ বলে।
একজন বিশুদ্ধ রোলিং জিভযুক্ত পুরুষ ও স্বাভাবিক জিভযুক্ত মহিলার বিবাহে অপত্যদের জিভের প্রকৃতি কী হবে?
রোলিং জিভ একটি প্রকট অটোজোমাল অ্যালিল (R) পক্ষান্তরে স্বাভাবিক জিভ একটি প্রচ্ছন্ন অটোজোমাল অ্যালিল (r)। সুতরাং, প্রশ্নানুযায়ী ক্রসটি হবে নিম্নরূপ।

অর্থাৎ, সমস্ত পুত্র ও কন্যাসন্তান হেটেরোজাইগাস রোলিং জিভযুক্ত হবে।
রোলার জিভযুক্ত জীবের সংখ্যা স্বাভাবিক জিভযুক্ত মানুষের চেয়ে বেশি কেন?
রোলার জিভ সৃষ্টিকারী প্রকরণটির জন্য দায়ী অ্যালিলটি স্বাভাবিক (বা নন্-রোলার) জিভ সৃষ্টিকারী প্রকরণের জন্য দায়ী অ্যালিলের ওপর প্রকট। তাই হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস উভয় অবস্থায় রোলার জিভের অ্যালিলটি প্রকাশিত হবে। আবার স্বাভাবিক জিভের প্রচ্ছন্ন অ্যালিলটি কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থাতেই প্রকাশিত হয় বলে রোলার জিভযুক্ত মানুষের সংখ্যা বেশি হয়।
হোমোজাইগাস অবস্থা ও হেটেরোজাইগাস অবস্থার পার্থক্য লেখো।
হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস অবস্থার মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | হোমোজাইগাস অবস্থা | হেটেরোজাইগাস অবস্থা |
নির্দিষ্ট লোকাসে থাকা জিনের প্রকৃতি | উভয়েই প্রকট অথবা উভয়েই প্রচ্ছন্ন। | দুটি অ্যালিলের একটি প্রকট ও অপরটি প্রচ্ছন্ন প্রকৃতির। |
ফিনোটাইপ শনাক্তকরণ যোগ্যতা | কেবলমাত্র প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে শনাক্তকরণযোগ্য। | কখনোই শনাক্তকরণযোগ্য নয়। |
উৎপন্ন গ্যামেটের প্রকারভেদ | কেবলমাত্র একপ্রকার। | একাধিক প্রকারের। |
বিশুদ্ধ জীব ও সংকর জীবের পার্থক্য লেখো।
বিশুদ্ধ জীব ও সংকর জীবের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | বিশুদ্ধ জীব | সংকর জীব |
সংজ্ঞা | কোনো জীব যদি বংশানুক্রমে কোনো বৈশিষ্ট্য হুবহু একইরকম বজায় রাখে, তখন সেই বৈশিষ্ট্যের জন্য জীবটিকে বিশুদ্ধ বা খাঁটি জীব বলে। | দুটি বিশুদ্ধ বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবের যৌন জনন বা পরনিষেকের ফলে উৎপন্ন জীবটিকে সংকর জীব বলে। |
জিনের প্রকৃতি | একজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোমে কোনো জিনের লোকাসে একইপ্রকার দুটি অ্যালিল থাকে। | একজোড়া সমসংস্থ ক্রোমোজোমে কোনো জিনের লোকাসে থাকা দুটি অ্যালিল বিপরীতধর্মী হয়। |
প্রকাশ | বিশুদ্ধ জীবে চারিত্রিক (প্রকট বা প্রচ্ছন্ন) বৈশিষ্ট্যটি ফিনোটাইপে সর্বদা প্রকাশিত হয়। | সংকর জীবে প্রকট বৈশিষ্ট্যটিই ফিনোটাইপে প্রকাশিত হয়, প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশিত হয় না। |
গ্যামেট উৎপাদন | বিশুদ্ধ জীবে একরকমের গ্যামেট (যেমন – T অথবা t প্রকৃতির) উৎপন্ন হয়। | সংকর জীবে একটি চরিত্রের জন্য দুই রকমের গ্যামেট (যেমন – T এবং t প্রকৃতির) উৎপন্ন হয়। |
প্রকট বৈশিষ্ট্য ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | প্রকট বৈশিষ্ট্য | প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য |
F1 জনুতে প্রকাশ | প্রকাশিত হয়। | সুপ্ত থাকে। |
জিনগত প্রকাশ | হোমোজাইগাস ও হেটেরোজাইগাস উভয় অবস্থাতেই প্রকাশিত হয়। | কেবলমাত্র হোমোজাইগাস অবস্থায় প্রকাশিত হয়। |
বিশুদ্ধ-সংকর শনাক্তকরণ | বিশুদ্ধ কিংবা সংকর কিনা, তা শনাক্তকরণ সম্ভব নয়। | প্রকাশিত হলে তা সর্বদাই বিশুদ্ধ, অর্থাৎ শনাক্তকরণযোগ্য। |
জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | জিনোটাইপ | ফিনোটাইপ |
প্রকৃতি | জীবের জিনগত অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য। | জীবের বাহ্যিক প্রকাশিত বৈশিষ্ট্য। |
নির্ণয়ের পদ্ধতি | সংকরায়ণ পরীক্ষা দ্বারা নির্ণয় করা যায়। | খালি চোখে দেখে নির্ণয় করা যায়। |
পারস্পরিক সম্পর্ক | জিনোটাইপ এক হলে ফিনোটাইপও একই হতে বাধ্য। | ফিনোটাইপ এক হলে জিনোটাইপ এক নাও হতে পারে। |
বিশুদ্ধ ও সংকর বৈশিষ্ট্যের পৃথককরণ | জিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায়। | ফিনোটাইপ দেখে উভয় বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিভেদ করা যায় না। |
মটর গাছের ওপর মেন্ডেলের কাজ, মেন্ডেলের সাফল্যের কারণ, মেন্ডেলের নির্বাচিত মটর গাছের বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য, মেন্ডেলের পরীক্ষা, সূত্র এবং সূত্রের বিচ্যুতি
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলিতে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণ উল্লেখ করো। (1) বীজের আকৃতি, (2) ফুলের অবস্থান, (3) বীজপত্রের বর্ণ, (4) কাণ্ডের দৈর্ঘ্য।
অনুরূপ প্রশ্ন, মটর গাছের ক্ষেত্রে পৃথকীভবন সূত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য তোমাকে বৈশিষ্ট্য নির্বাচন করতে বলা হল। এরকম বিপরীতগুণসহ দুটি বৈশিষ্ট্যের নাম লেখো।
মটর গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণ –
মটর গাছের বৈশিষ্ট্য | প্রকট গুণ | প্রচ্ছন্ন গুণ |
বীজের আকৃতি | গোল | কুঞ্চিত |
ফুলের অবস্থান | কাক্ষিক | শীর্ষস্থ |
বীজপত্রের বর্ণ | হলদে | সবুজ |
কান্ডের দৈর্ঘ্য | লম্বা | বেঁটে |
রেসিপ্রোকাল ক্রস কাকে বলে?
মেন্ডেল তাঁর পরীক্ষায় দুটি মটর গাছের ইতর পরাগযোগের সময় একটি মটর গাছের ফুলের (ধরা যাক, সাদা) পুংকেশর অপসারণ করে অন্য মটর গাছের ফুলের (বেগুনি) পুংকেশর তাতে স্থাপন করেন। একইভাবে দ্বিতীয় মটর গাছটির (বেগুনি ফুল) পুংকেশর অপসারণ করে প্রথম মটর গাছটির (সাদা ফুল) পুংকেশর তাতে স্থাপন করেন। এই পারস্পরিক ইতর পরাগযোগকে রেসিপ্রোকাল ক্রস বলে।
সংকরায়ণের পরীক্ষায় কীভাবে প্রকট গুণ প্রকাশিত হয় তা উদাহরণের সাহায্যে লেখো।
মেন্ডেলের এক সংকর জননের পরীক্ষা থেকে দ্যাখানো হল কীভাবে প্রকট গুণ প্রকাশিত হয়।

সংকরায়ণে F₁ জনুর উদ্ভিদে T ও t উভয় অ্যালিল উপস্থিত থাকলেও, T, t -র ওপর প্রকট হওয়ায় F₁ জনুর সকল উদ্ভিদ লম্বা হয় অর্থাৎ, F₁ জনুতে শুধু প্রকট গুণ প্রকাশিত হয়। এটি মেন্ডেলের প্রকটতার সূত্রকে সমর্থন করে।
মেন্ডেল তাঁর একসংকর জনন পরীক্ষায় F₁ জনুতে সকল উদ্ভিদ লম্বা হওয়ার ঘটনাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?
একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে মেন্ডেল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জীবের মিলনের ফলে প্রথম অপত্য জনুতে (F₁ জনুতে) প্রকট বৈশিষ্ট্যটি প্রাধান্য লাভ করে এবং কেবল সেই বৈশিষ্ট্যটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, মটর গাছের লম্বা হওয়ার বৈশিষ্ট্যটিরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অর্থাৎ, এটি প্রকট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। অপরদিকে, বেঁটে বৈশিষ্ট্যটির কোনো প্রকার বহিঃপ্রকাশ এখানে নেই। সুতরাং, বেঁটে গাছ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এই সিদ্ধান্তটিকেই প্রকটতার সূত্র (law of dominance) বলে।
বেঁটে মটর গাছগুলি সবসময় খাঁটি – উক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
মটর গাছের বেঁটে বৈশিষ্ট্যের অ্যালিলটি একটি প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (t)। তাই ওই অ্যালিলটি একজোড়ারূপে অর্থাৎ হোমোজাইগাস (tt) অবস্থায় থাকলে তবেই বেঁটে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ হতে পারে। অর্থাৎ, বেঁটে মটর গাছ সর্বদাই খাঁটি।
একটি দীর্ঘ ও একটি খর্ব মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ দ্বারা মেন্ডেল কী সূত্রে উপনীত হন?
একটি দীর্ঘ ও একটি খর্ব মটর গাছের মধ্যে সংকরায়ণ প্রকৃতপক্ষে একসংকর জনন পরীক্ষা, যার দ্বারা মেন্ডেল পৃথকীভবন সূত্র -তে উপনীত হন। এই সূত্রানুসারে পিতামাতার জনন-মাতৃকোশে অবস্থিত বিপরীতধর্মী গুণাবলি প্রথম অপত্য জনুতে (F₁) সঞ্চারিত হলেও তাদের মধ্যে কোনো মিশ্রণ ঘটে না। এরপর অপত্য জনু যখন গ্যামেট উৎপাদন করে তখন এই বিপরীতধর্মী গুণাবলি পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটিই মেন্ডেলের প্রথম সূত্র।
মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম সূত্রটি কী?
অথবা, মেন্ডেলের পৃথকীভবনের সূত্রটি বিবৃত করো।
কোনো জীবের নির্দিষ্ট একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্যে সঞ্চারিত হলেও তারা পরস্পর মিশে যায় না বরং অপত্যের গ্যামেট তৈরির সময়ে তারা পরস্পর থেকে পৃথক হয়ে যায়। এটিই মেন্ডেলের বংশগতির প্রথম সূত্র বা পৃথকীভবন সূত্র হিসেবে পরিচিত।
বিশুদ্ধ সবুজ (GG) বর্ণের ফলযুক্ত মটর গাছের সঙ্গে বিশুদ্ধ হলদে (gg) ফলযুক্ত মটর গাছের সংকরায়ণ করা হল। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলি নির্ণয় করো (G প্রকট, g প্রচ্ছন্ন)। (1) হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন উদ্ভিদ, (2) F₁ জনুর ফিনোটাইপ, (3) F₁ জনুর উৎপাদিত গ্যামেট, (4) হেটেরোজাইগাস জীব।
- হোমোজাইগাস প্রচ্ছন্ন উদ্ভিদ – বিশুদ্ধ হলদে ফলযুক্ত উদ্ভিদ (gg)।
- F₁ জনুর ফিনোটাইপ – সবুজ বর্ণের ফল (F₁ জনুর অপত্য হবে হেটেরোজাইগাস এবং জিনোটাইপ হবে Gg)।
- F₁ জনুর গ্যামেট – হেটেরোজাইগাস অপত্যগুলি থেকে G এবং g প্রকৃতির গ্যামেট উৎপন্ন হবে।
- হেটেরোজাইগাস – প্রকট (G) ও প্রচ্ছন্ন (g) উভয় জিন থাকায় জিনোটাইপ হবে Gg এবং ফিনোটাইপ হবে সবুজ বর্ণের ফল।
বংশগতির পরীক্ষায় জনিতৃ জনুতে কালো লোম ও সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগের মধ্যে মিলনে F₁ জনুতে কী প্রকার গিনিপিগ উৎপন্ন হবে?
বংশগতির পরীক্ষায় জনিতৃ জনুতে কালো লোম ও সাদা লোমযুক্ত গিনিপিগ নিয়ে পরীক্ষা করলে F₁ জনুতে সকল অপত্যই কালো লোমযুক্ত হয়। লোমের কালো রঙের নিয়ন্ত্রক জিনটি লোমের সাদা রং নিয়ন্ত্রক জিনকে F₁ জনুতে প্রভাবিত করে ও সুপ্ত রাখে, তাকে প্রকাশিত হতে দেয় না।

মেন্ডেলের একসংকর জননে 3 : 1 অনুপাত বলতে কী বোঝো?
মেন্ডেল তাঁর একসংকর জনন পরীক্ষায় একটি বিশুদ্ধ লম্বা ও একটি বিশুদ্ধ বেঁটে মটরগাছের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটান। F₂ জনুতে প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে সকল অপত্যের তিন ভাগ লম্বা বৈশিষ্ট্যযুক্ত ও এক ভাগ বেঁটে বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, অপত্যগুলির মধ্যে এই দুই ফিনোটাইপের অনুপাত হয়, লম্বা : বেঁটে = 3 : 1। সুতরাং 3 : 1 বলতে একসংকর জনন পরীক্ষায় F₂ জনুতে প্রাপ্ত অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত বোঝানো হয়।
পৃথকীভবন সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করো।
পৃথকীভবন সূত্রের সীমাবদ্ধতাটি হল –
- একটি বৈশিষ্ট্য যখন একাধিক জিন জোড়া নিয়ন্ত্রণ করে তখন পৃথকীভবন ঘটলেও একসংকর জননের সূত্রের অনুপাত অনুযায়ী তা নাও হতে পারে।
- অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে পৃথকীভবন ঘটলেও জিনের চরিত্র মেন্ডেলের চরিত্র থেকে আলাদা হওয়ায় একসংকর জননের অনুপাতে অপত্য পাওয়া যায় না।
চেকার বোর্ড বলতে কী বোঝ? এর অপর নাম কী?
চেকার বোর্ড –
যে-কোনো ধরনের ক্রস লিখে প্রকাশ করার সবচেয়ে প্রচলিত, সুবিধাজনক, বিজ্ঞানসম্মত ও নিয়মনিষ্ঠ পদ্ধতিকে চেকার বোর্ড বলা হয়।
চেকার বোর্ডের অপর নাম –
বিজ্ঞানী রেজিনাল্ড ক্রামডাল পানেট এই পদ্ধতিটি প্রবর্তন করেন বলে একে পানেট স্কোয়ার বা পানেট বর্গ-ও বলা হয়। এক্ষেত্রে, একটি বক্সের মাধ্যমে সমস্ত ধরনের গ্যামেটের সকলপ্রকার সমন্বয় প্রকাশ করা যায়।
ব্যাক ক্রস (back cross) কী?
প্রথম অপত্য জনুর (F₁ জনু) সংকর জীবের সঙ্গে যে-কোনো জনিতৃ জীবের (P জনু) সংকরায়ণ ঘটানোর পরীক্ষাকে ব্যাক ক্রস বলে। যেমন – সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ লম্বা বা বিশুদ্ধ বেঁটে মটর উদ্ভিদের সংকরায়ণ (Tt × TT বা Tt × tt)।
টেস্ট ক্রস (test cross) কী? এর প্রয়োজনীয়তা কী?
টেস্ট ক্রস –
প্রথম অপত্য জনুর (F₁ জনু) সংকর জীবের সঙ্গে বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন জিনোটাইপযুক্ত জনিতৃ জীবের (P জনু) সংকরায়ণ ঘটানোর পরীক্ষাকে টেস্ট ক্রস বলে। যেমন – মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষায় F₁ -এ প্রাপ্ত সংকর লম্বা মটর উদ্ভিদের সঙ্গে বিশুদ্ধ বেঁটে মটর উদ্ভিদের সংকরায়ণ (Tt × tt)।
টেস্ট ক্রস -এর প্রয়োজনীয়তা –
কোনো বিশেষ অপত্য জীবের জিনোটাইপ নির্ণয় করার উদ্দেশ্যে এই টেস্ট ক্রস করা হয়ে থাকে।
টেস্ট ক্রস একপ্রকার ব্যাক ক্রস – ব্যাখ্যা করো।
প্রথম অপত্য জনুর জীবের সঙ্গে যে-কোনো একটি জনিতৃ জীবের ক্রস করানো হলে, তাকে ব্যাক ক্রস বলে। যেমন – মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার ক্ষেত্রে সংকর লম্বা গাছের সাথে বিশুদ্ধ লম্বা অথবা বিশুদ্ধ বেঁটে গাছের সংকরায়ণ (Tt × TT বা Tt × tt)। ব্যাক ক্রসে যখন প্রচ্ছন্ন জীব ব্যবহৃত হয় কেবল তখন সেই ক্রসকে বলে টেস্ট ক্রস। এক্ষেত্রে সংকর লম্বা গাছের সাথে বিশুদ্ধ বেঁটে গাছের সংকরায়ণ (Tt × tt) ঘটে। তাই বলা যায় যে, টেস্ট ক্রস প্রকৃতপক্ষে হল একপ্রকার ব্যাক ক্রস।
দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় F₁ জনুতে উৎপন্ন সংকর উদ্ভিদ YyRr থেকে সকল সম্ভাব্য গ্যামেটগুলি কী কী হতে পারে?
YyRr জিনোটাইপবিশিষ্ট একটি গোল-হলদে বীজের মটর গাছ থেকে F₁ জনুতে মিয়োসিস কোশ বিভাজনের ফলে YR, yR, Yr, yr -এই চার প্রকারের গ্যামেট উৎপন্ন হতে পারে।
মটর গাছের বীজের বর্ণ ও বীজের আকার -এই বৈশিষ্ট্য দুটি নিয়ে মেন্ডেল দ্বিসংকর জননের পরীক্ষা করেছিলেন। এই পরীক্ষায় F₂ জনুতে যে কটি হলদে ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়, তাদের জিনোটাইপগুলি লেখো।
হলদে ও গোলাকার বীজের জিনোটাইপগুলি হল –
- YYRR।
- YyRr।
- YyRR।
- YyRr।
মটর গাছের ওপর কান্ডের দৈর্ঘ্য ও বীজের আকার এই বৈশিষ্ট্য নিয়ে সম্পাদিত দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F₂ জনুতে নয়টি দীর্ঘ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছ উৎপন্ন হয়। এদের কী কী জিনোটাইপ থাকতে পারে?
মটর গাছের কান্ডের দৈর্ঘ্য লম্বা (T) বৈশিষ্ট্যটি প্রকট ও বেঁটে (t) বৈশিষ্ট্যটি প্রচ্ছন্ন। অপরদিকে বীজের গোল আকৃতি (R) প্রকট ও কুঞ্চিত আকৃতি (r) প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য। তাই F₂ জনুতে উৎপন্ন নয়টি দীর্ঘ ও গোলাকার বীজযুক্ত মটর গাছের জিনোটাইপ হতে পারে – TTRR, TTRr, TtRR, TtRr।
F₁ জনুতে উৎপন্ন একটি গোল-হলদে মটর বীজযুক্ত গাছের জিনোটাইপ কী কী হতে পারে?
ধরা যাক, গোল প্রকট বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল R, কুঞ্চিত প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল r। মটর বীজটির হলদে (প্রকট) বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল Y, মটর বীজটির সবুজ (প্রচ্ছন্ন) বৈশিষ্ট্যের অ্যালিল হল y। সুতরাং, F₁ জনুতে উৎপন্ন গোল, হলদে মটর বীজযুক্ত গাছটির জিনোটাইপ হতে পারে YYRR, YyRR, YYRr ও YyRr।
দ্বিসংকর পরীক্ষার F₂ জনুতে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণাবলির বিভিন্ন সমন্বয়ের ঘটনাকে মেন্ডেল কীভাবে ব্যাখ্যা করেন?
দ্বিসংকর পরীক্ষার F₂ জনুতে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের (যেমন – বীজের আকার ও বীজপত্রের রং) প্রকট ও প্রচ্ছন্ন গুণাবলি সম্ভাব্য সকল সমন্বয়ে বিন্যস্ত হয়। সেখানে কেবলমাত্র প্রকটতার সূত্র মেনে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জিনগুলি কোনোক্ষেত্রেই অপর জিন দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। মেন্ডেল একে স্বাধীন বিন্যাস সূত্র (law of independent assortment) -রূপে ব্যাখ্যা করেন।
মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্রটি কী?
অথবা, মেন্ডেলের স্বাধীন বিন্যাস সূত্রটি বিবৃত করো।
অথবা, মেন্ডেলের স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্রটি বিবৃত করো।
দুই বা তার বেশি বিপরীতধর্মী যুগ্ম বৈশিষ্ট্যের উপাদানগুলি জনিতৃ থেকে অপত্য জনুতে সঞ্চারিত হলেও তারা মিশ্রিত হয় না বরং অপত্যের জননকোশ তৈরির সময়ে এরা পরস্পর থেকে পৃথক হয় এবং সম্ভাব্য সকলপ্রকার সমন্বয়ে স্বাধীনভাবে জননকোশে সঞ্চারিত হয়। এটিই মেন্ডেলের বংশগতির দ্বিতীয় সূত্র বা স্বাধীন বিন্যাস সূত্র বা স্বাধীন সঞ্চারণ সূত্র।
স্বাধীন বিন্যাসের সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি চিহ্নিত করো।
স্বাধীন বিন্যাসের সূত্রের সীমাবদ্ধতাগুলি হল –
- একই ক্রোমোজোমের জিনগুলির অনেকসময় একই সঙ্গে গ্যামেট তথা অপত্যে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। একে লিংকেজ বলে। এক্ষেত্রে দুটি জিনের অ্যালিল জোড়া মেন্ডেলীয় অনুপাতে অর্থাৎ, স্বাধীনভাবে সঞ্চারিত হতে পারে না।
- গ্যামেট গঠনের সময় সমসংস্থ ক্রোমোজোমগুলি ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে একই গ্যামেটে চলে যেতে পারে। একে নন-ডিসজাংশন বলে। এক্ষেত্রে স্বাধীন সঞ্চারণ দ্বারা ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।
মেন্ডেলের বংশগতি পরীক্ষায় প্রাপ্ত 1 : 2 : 1 এবং 9 : 3 : 3 : 1 -এই দুটি অনুপাত দ্বারা কী বোঝানো হয়?
মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষার F₂ জনুতে প্রাপ্ত অপত্যের জিনোটাইপিক অনুপাত হল 1 : 2 : 1, বিশুদ্ধ প্রকট ও বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট দুই জনিতৃ মটরগাছের মধ্যে সংকরায়ণে প্রাপ্ত F₁ জনুর সংকর মটর গাছগুলির স্বপরাগযোগে F₂ জনু সৃষ্টি করা হয়। এই F₂ জনুতে প্রাপ্ত বিশুদ্ধ প্রকট, সংকর প্রকট এবং বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যযুক্ত গাছগুলির অনুপাত হবে 1 : 2 : 1।
একইভাবে মেন্ডেলের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় প্রাপ্ত অপত্যগুলির ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে 9 : 3 : 3 : 1।
গিনিপিগের দ্বিসংকর জননের পরীক্ষায় F₂ জনুতে কত প্রকার ও কী কী ফিনোটাইপ পাওয়া যায়?
বিশুদ্ধ কালো ও খর্ব লোমযুক্ত এবং বিশুদ্ধ সাদা ও দীর্ঘ লোমযুক্ত গিনিপিগের দ্বিসংকর জনন পরীক্ষায় F₂ জনুতে চারটি ফিনোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলি হল – কালো ও খর্ব লোমযুক্ত, কালো ও দীর্ঘ লোমযুক্ত, সাদা ও খর্ব লোমযুক্ত এবং সাদা ও দীর্ঘ লোমযুক্ত।
YyRr এবং yyrr -এর মধ্যে সংকরায়ণের ফলে উৎপন্ন অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত কী হবে?
YyRr এবং yyrr এর সংকরায়ণটি নীচে দেখানো হল।

সংকরায়ণে উৎপন্ন জনুর চার প্রকার অপত্যের ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে – হলদে-গোল : হলদে-কুঞ্চিত : সবুজ-গোল : সবুজ-কুঞ্চিত = 1 : 1 : 1 : 1।
সাদা ও বেগুনি মটর ফুল নিয়ে একসংকর ক্রস করতে গিয়ে মেন্ডেল F₂ জনুতে 120টি সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছ পেলেন। (1) এই ক্ষেত্রে F₂ জনুতে তাঁর কতগুলি বেগুনি ফুলযুক্ত মটর গাছ পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল? (2) এর মধ্যে কতগুলি হেটেরোজাইগাস বেগুনি ফুলযুক্ত গাছহওয়ার সম্ভাবনা ছিল?
- আমরা জানি যে বেগুনি মটর ফুল (VV) বৈশিষ্ট্যটি সাদা মটর ফুল (vv) বৈশিষ্ট্যের ওপর প্রকট। মেন্ডেলের একসংকর জনন পরীক্ষা থেকে আমরা জানি যে বেগুনি ও সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছের F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত 3 : 1। প্রশ্নানুযায়ী, সাদা ফুলযুক্ত মটর গাছ সংখ্যা x হলে, x = 120। সুতরাং, বেগুনি ফুলযুক্ত মাটর গাছ সংখ্যা হবে 3x = 3 × 120 = 360টি।
- আমরা জানি, একসংকর জননের জিনোটাইপিক অনুপাত VV : Vv : vv = 1 : 2 : 1। সুতরাং, হেটেরোজাইগাস বেগুনি ফুলযুক্ত (Vv) মটর গাছের সংখ্যা হবে 2x = 240।
প্রাণীর এবং উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার একটি উদাহরণ দাও।
প্রাণীর ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণটি হল – একটি বিশুদ্ধ কালো (হোমোজাইগাস) আন্দুলেশিয়ান মুরগির সঙ্গে একটি বিশুদ্ধ সাদা (হোমোজাইগাস) মোরগের সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুর (F₁ জনুর) মুরগিগুলি সব ধূসর-নীল রঙের হয়।
উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ প্রকটতার উদাহরণটি হল – একটি সন্ধ্যামালতীর লাল ও সাদা ফুলযুক্ত উদ্ভিদের মধ্যে সংকরায়ণ ঘটানো হলে প্রথম অপত্য জনুতে লাল ও সাদা ফুলের বদলে গোলাপি ফুলযুক্ত উদ্ভিদ তৈরি হয়।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে এক সংকরায়ণ পরীক্ষায় F₂ -জনুতে ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপের অনুপাত কী হবে?
অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে এক সংকরায়ণ পরীক্ষায় F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত হবে – লাল : গোলাপি : সাদা = 1 : 2 : 1 [সন্ধ্যামালতীর ক্ষেত্রে]।
অসম্পূর্ণ প্রকটতার ক্ষেত্রে এক সংকরায়ণ পরীক্ষায় F₂ জনুতে জিনোটোইপিক অনুপাতটি হবে – বিশুদ্ধ লাল (RR) : সংকর গোলাপি (Rr) : বিশুদ্ধ সাদা (rr) = 1 : 2 : 1 [সন্ধ্যামালতী ফুলের ক্ষেত্রে যেখানে লাল প্রকট বৈশিষ্ট্য (R) এবং সাদা প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (r)]।
মিউল্যাটো (mulatto) কী?
বিশুদ্ধ শ্বেতকায় এবং বিশুদ্ধ অশ্বেতকায় স্ত্রী ও পুরুষের মধ্যে যৌন জননের ফলে সৃষ্ট সাদা ও কালোর মাঝামাঝি বর্ণের সন্তানদের বলে মিউল্যাটো।

একসংকর জনন ও দ্বিসংকর জননের পার্থক্য লেখো।
একসংকর জনন ও দ্বিসংকর জননের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | একসংকর জনন | দ্বিসংকর জনন |
বিবেচ্য বিপরীত বৈশিষ্ট্য | একটি চরিত্রের অন্তর্গত একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য। | দুইটি চরিত্রের অন্তর্গত দুই জোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্য। |
পরীক্ষালব্ধ সূত্র | পৃথকীভবন সূত্র। | স্বাধীন বিন্যাস সূত্র। |
F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক অনুপাত | 3 : 1 | 9 : 3 : 3 : 1 |
F₂ জনুতে জিনোটাইপিক অনুপাত | 1 : 2 : 1 | 1 : 2 : 2 : 4 : 1 : 2 : 1 : 2 : 1 |
সম্পূর্ণ প্রকটতা ও অসম্পূর্ণ প্রকটতার পার্থক্য লেখো।
সম্পূর্ণ প্রকটতা ও অসম্পূর্ণ প্রকটতার মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | সম্পূর্ণ প্রকটতা | অসম্পূর্ণ প্রকটতা |
বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ | প্রথম অপত্য জনুর সংকর জীবে শুধু প্রকট বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায়। | প্রথম অপত্য জনুর সংকর জীবে প্রকট ও প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্যের মধ্যবর্তী নতুন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। |
ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপ অনুপাত | সর্বদাই আলাদা। ফিনোটাইপের দুটি 3 : 1 এবং জিনোটাইপের তিনটি 1 : 2 : 1 অনুপাত হয়ে থাকে। | ফিনোটাইপ ও জিনোটাইপের অনুপাত সর্বদা একই অর্থাৎ 1 : 2 : 1 হয়ে থাকে। |
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ
XX ও XY পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের পদ্ধতিকে XX ও XY পদ্ধতি বলে। কোনো ভ্রুণে দুটি X ক্রোমোজোম থাকলে (XX) সেটি কন্যারূপে এবং একটি X ও একটি Y ক্রোমোজোম থাকলে (XY) সেটি পুত্ররূপে বিকশিত হয়। এক্ষেত্রে দেহের অটোজোমগুলির কোনো ভূমিকা থাকে না।
22A + Y শুক্রাণুকে অ্যান্ড্রোস্পার্ম ও 22A + X শুক্রাণুকে গাইনোস্পার্ম বলে কেন?
22A + Y শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে ভ্রুণটি পুরুষরূপে বিকশিত হয় (andro = পুরুষ)। পক্ষান্তরে 22A + X শুক্রাণুটি ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলিত হলে ভ্রূণটি মহিলারূপে বিকশিত হয় (gyno = মহিলা)। সেইজন্য 22A + Y কে অ্যান্ড্রোস্পার্ম ও 22A + X কে গাইনোস্পার্ম বলে।
X ক্রোমোজোম বহনকারী একটি শুক্রাণু যদি একটি ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে তাহলে নিষেকের ফলে উৎপন্ন ভ্রুণাণুটি কোন্ লিঙ্গের হবে?
X ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করলে উৎপন্ন ভ্রুণাণুটি স্ত্রীলিঙ্গের হবে। এক্ষেত্রে ভ্রুণাণুতে উপস্থিত যৌন ক্রোমোজোম দুটি হবে XX।
মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে পিতার ভূমিকা কীরূপ?
পিতার শুক্রাণুতে X অথবা Y যে-কোনো একটি ক্রোমোজোম থাকে। পিতার X ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু নিষেকে অংশ নিলে সন্তান স্ত্রীলিঙ্গযুক্ত হয়। অপরদিকে পিতার Y ক্রোমোজোমযুক্ত শুক্রাণু নিষেকে অংশ নিলে সন্তান পুংলিঙ্গযুক্ত হয়। এক্ষেত্রে মাতার ডিম্বাণু সর্বদাই X ক্রোমোজোমযুক্ত বলে সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণে তাঁর ক্রোমোজোমগত ভূমিকা নিষ্ক্রিয় হয়।
অনেক পরিবারে কন্যা সন্তান জন্মের জন্য মাতাকে দায়ী করা হয়। এই ধারণাটি যথার্থ নয় তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও।
অথবা, মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পিতা ও মাতার ভূমিকা কীরূপ?
মানব সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে মাতার ক্রোমোজোমগত ভূমিকা পরোক্ষ হয়ে থাকে। কারণ মাতা কেবলমাত্র একপ্রকার গ্যামেট (X ক্রোমোজোমযুক্ত) উৎপাদন করতে পারেন। পিতার কোশে দু-প্রকার যৌন ক্রোমোজোম উপস্থিত এবং তিনি দুই প্রকার গ্যামেট (X অথবা Y ক্রোমোজোমযুক্ত) উৎপাদনে সক্ষম। অর্থাৎ, X অথবা Y ক্রোমোজোম দানের মাধ্যমে লিঙ্গ নির্ধারণে পিতার ক্রোমোজোমগত ভূমিকাই প্রধান।
মানুষের দেহকোশে 23 জোড়া হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বা 46টি ক্রোমোজোম থাকে। এর মধ্যে 2টি ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণ করে বলে তাদের যৌন ক্রোমোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম বা অ্যালোজোম বলা হয়। অন্যান্য ক্রোমোজোমগুলি বিভিন্ন দেহজ বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে বলে তাদের অটোজোম বলে। স্ত্রীদেহে যৌন ক্রোমোজোম দুটি অঙ্গসংস্থানগতভাবে একই প্রকারের হয়, এদেরকে X ক্রোমোজোম বলা হয়। কিন্তু পুরুষদের যৌন ক্রোমোজোম দুটি ভিন্ন প্রকৃতির হয়। এদের একটিকে X ক্রোমোজোম, অপরটিকে Y ক্রোমোজোম বলা হয়। স্ত্রীদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস – 44A + XX এবং পুরুষদেহের ক্রোমোজোম বিন্যাস – 44A + XY। পুরুষের দেহে শুক্রাশয় থেকে উৎপন্ন শুক্রাণুগুলি দুই প্রকারের – 22A + Y (অ্যান্ড্রোস্পার্ম) এবং 22A + X (গাইনোস্পার্ম)। কিন্তু স্ত্রীদেহের ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন ডিম্বাণু একপ্রকারের – 22A + X। এই কারণে পুরুষকে হেটেরোগ্যামেটিক এবং স্ত্রীকে হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়। ডিম্বাণু যদি অ্যান্ড্রোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রুণ পুরুষরূপে (44A + XY) বিকাশ লাভ করে। অপরপক্ষে কোনো ডিম্বাণু যদি গাইনোস্পার্ম দ্বারা নিষিক্ত হয় তাহলে সেই ভ্রুণ স্ত্রী-রূপে (44A + XX) বিকাশ লাভ করে।
লিঙ্গ সংযোজিত জিন কাকে বলে?
জীবের যৌন ক্রোমোজোমে অবস্থিত দেহজ বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী জিন যা গ্যামেটের মাধ্যমে এক জনু থেকে পরবর্তী জনুতে সঞ্চারিত হয়, তাদের লিঙ্গ সংযোজিত জিন বলে। এগুলি দুই প্রকারের হয়। X ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনগুলিকে বলে X সংযোজিত জিন এবং Y ক্রোমোজোমে অবস্থিত জিনসমূহকে বলে Y সংযোজিত বা হোলানড্রিক জিন।
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে Y ক্রোমোজোমের ভূমিকা কী?
কোনো ভ্রুণে সেক্স ক্রোমোজোম রূপে Y ক্রোমোজোম থাকলে (44A + XY) সেটি পুরুষরূপে বিকশিত হয়। Y ক্রোমোজোম না থাকলে, অর্থাৎ দুটি X ক্রোমোজোম থাকলে ভ্রুণটি (44A + XX) কন্যারূপে বিকশিত হয়। অর্থাৎ, শুক্রাণুতে সেক্স ক্রোমোজোম রূপে ক্রোমোজোম থাকলে তার দ্বারা নিষিক্ত ডিম্বাণু পুরুষরূপে বিকশিত হয়। সুতরাং, মানুষের ক্ষেত্রে Y ক্রোমোজোম (তথা শুক্রাণু/পুরুষ) লিঙ্গ নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা নেয়।
TDF জিন কী?
পুরুষের দেহে Y ক্রোমোজোমে অবস্থিত টেস্টিস ডিটারমাইনিং ফ্যাক্টর (TDF) নামক জিন ভ্রুণকে পুত্রসন্তান রূপে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। অর্থাৎ, পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারণে এই জিন গুরুত্বপূর্ণ। এর অপর নাম SRY (সেক্স ডিটারমাইনিং রিজিয়ন Y) জিন।
মহিলাদের কেন হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়?
মহিলাদের জিনোটাইপ XX বলে কেবলমাত্র একপ্রকার গ্যামেট বা ডিম্বাণু (X ক্রোমোজোম বহনকারী) উৎপন্ন হতে পারে। এই কারণে মহিলাদের হোমোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়।
পুরুষদের কেন হেটেরোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়?
পুরুষের জিনোটাইপ XY বলে তাদের দেহে দুই প্রকার গ্যামেট বা শুক্রাণু তৈরি হয়। যেমন – X ও Y ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু। এই কারণে পুরুষদের হেটেরোগ্যামেটিক লিঙ্গ বলা হয়।
অটোজোম ও অ্যালোজোমের পার্থক্য লেখো।
অথবা, দেহ ক্রোমোজোম ও সেক্সক্রোমোজোমের পার্থক্য লেখো।
অথবা, নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মানুষের অটোজোম ও সেক্স ক্রোমোজোমের পার্থক্য লেখো। (1) প্রকৃতি, (2) সংখ্যা।
অটোজোম ও অ্যালোজোমের পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | অটোজোম বা দেহ ক্রোমোজোম | অ্যালোজোম বা সেক্স ক্রোমোজোম |
কার্যগত | দেহের সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। | সাধারণভাবে লিঙ্গ নির্ধারণে অংশ নেয়। |
সংখ্যা | 22 জোড়া। | একজোড়া। |
ক্রোমোজোমের প্রকৃতি | সবগুলির হোমোলোগাস ক্রোমোজোম জোড়া থাকে। | এরা মহিলাদের ক্ষেত্রে হোমোলোগাস (XX)। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে তা হোমোলোগাস নয় (XY)। |
আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় “বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ” অধ্যায়ের ‘বংশগতি‘ বিভাগের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন