মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান – জীবনের প্রবহমানতা – জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর

Rahul

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘জনন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন, তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
জনন – রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
Contents Show

জনন কাকে বলে? জননের প্রয়োজনীয়তা বা জননের গুরুত্ব উল্লেখ করো।

জনন –

যে জৈবনিক পদ্ধতিতে জীব নিজ আকৃতি ও প্রকৃতিবিশিষ্ট এক বা একাধিক অপত্য জীব সৃষ্টির মাধ্যমে নিজের প্রজাতির অস্তিত্ব পৃথিবীতে বজায় রাখে, তাকে জনন বলে।

জননের প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব –

জীবজগতে জননের গুরুত্ব অপরিসীম। এগুলি নিম্নরূপ –

অস্তিত্ব রক্ষা করা –

জননের সাহায্যে জীব নতুন অপত্য সৃষ্টি করে। ফলে, তার নিজ প্রজাতির সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং প্রজাতির অস্তিত্ব বজায় থাকে।

বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতা অটুট রাখা –

জননের ফলে নতুন অপত্য জীব সৃষ্ট হয়। এর ফলে জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষা –

জীবের মৃত্যুর ফলে জীবের সংখ্যার হ্রাস ঘটে। জননের ফলে নতুন জীব সৃষ্টির মাধ্যমে মৃত্যুজনিত সংখ্যাহ্রাস পূরণ হয়। এর ফলে পৃথিবীতে জীবের ভারসাম্য তথা বাস্তুতান্ত্রিক সাম্য বজায় থাকে।

জীব অভিব্যক্তি –

যৌন জননের দ্বারা জীবদেহে মিউটেশন বা পরিব্যক্তি ঘটে। আবার, মিউটেশনের ফলে জীবদেহের মধ্যে নতুন নতুন বৈশিষ্ট্য বা ভেদ বা প্রকরণের উদ্ভব হয়। প্রকরণ জীবের অভিযোজন ও অভিব্যক্তিতে সহায়তা করে।

জননের প্রকারভেদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।

অথবা, বিভিন্ন প্রকার জনন পদ্ধতির নাম, সংজ্ঞা ও উদাহরণ লেখো।

জননের প্রকারভেদ –

জীবজগতে প্রধানত দুইপ্রকার জনন দেখা যায়, যথা – অযৌন জনন এবং যৌন জনন। এ ছাড়া উদ্ভিদজগতে বিশেষ ধরনের অযৌন জনন বা অঙ্গজ জনন দেখা যায়।

অযৌন জনন –

যে জনন প্রক্রিয়ায় জননকোশ বা গ্যামেট উৎপন্ন না হয়ে রেণুর সাহায্যে বা সরাসরি দেহকোশ বিভাজনের মাধ্যমে অপত্য জীবের সৃষ্টি হয়, তাকে অযৌন জনন বলে। এক্ষেত্রে একটিমাত্র জনিতৃ জীবের প্রয়োজন হয়। জনিতৃ জীবটির সমস্ত বৈশিষ্ট্য উৎপন্ন সকল অপত্যে সঞ্চারিত হয়। অপত্যগুলি জিনগতভাবে জনিতৃ জীবের সমপ্রকৃতির হয়। অপুষ্পক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অযৌন জননের একক হল হ্যাপ্লয়েড (n) রেণু। এই পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে বেশি সংখ্যক জীব সৃষ্টি হয়। যেমন – অ্যামিবা (Amoeba), ব্যাকটেরিয়া, মিউকর (Mucor) প্রভৃতির জনন পদ্ধতি।

অঙ্গজ বংশবিস্তার –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদদেহের যে কোনো অঙ্গ বা তার অংশবিশেষ জনিতৃ উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পুনরুৎপাদনের দ্বারা নতুন অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ বংশবিস্তার বলে। অঙ্গজ বংশবিস্তার দুইপ্রকার – প্রাকৃতিক অঙ্গজ বংশবিস্তার এবং কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার। উদ্ভিদ প্রাকৃতিক উপায়ে অনুকূল পরিবেশে মূল, কাণ্ড ও পাতার মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার শাখাকলম, জোড়কলম, অণুবিস্তারণের মাধ্যমে করা হয়ে থাকে।

যৌন জনন –

যে জনন পদ্ধতিতে দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেট বা জননকোশ মিলিত হয়ে অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে যৌন জনন বলে। এইপ্রকার জননে একই প্রজাতির দুটি জীবের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে দুটি ভিন্নধর্মী গ্যামেট বা জননকোশের মিলন হয়, অর্থাৎ পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলন ঘটে। পুংজনন মাতৃকোশ বা স্ত্রীজনন মাতৃকোশে মিয়োসিস পদ্ধতিতে হ্যাপ্লয়েড (n) পুং বা স্ত্রী জননকোশ তৈরি করে। যেমন – ব্যাং, মানুষ, সপুষ্পক উদ্ভিদ প্রভৃতির জনন পদ্ধতি।

অযৌন জননের সুবিধা ও অসুবিধা লেখো।

অযৌন জননের সুবিধা –

  1. অযৌন জনন পদ্ধতিতে কেবলমাত্র একটি জীব অংশগ্রহণ করে, ফলে সহজে জনন সম্ভব হয়।
  2. এই পদ্ধতিতে একসঙ্গে বহু অপত্য জীব সৃষ্ট হয়।
  3. অযৌন জননে কম শক্তি ব্যয়িত হয়।
  4. এই পদ্ধতি সরল, নিশ্চিত এবং এতে সময় কম লাগে।
  5. অপত্য জীবে বর্তমান কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে না। অপত্যগুলি তাদের পরিচিত পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারে।

অযৌন জননের অসুবিধা –

  1. অযৌন জননে প্রকরণের (variation) কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
  2. এই পদ্ধতিতে সৃষ্ট অপত্য জীবের মধ্যে অভিযোজন ক্ষমতা কমে আসে এবং ফলে অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে।
  3. এই জননে গ্যামেট বা জননকোশের প্রয়োজন হয় না, তাই গ্যামেট গঠনকালে মিয়োসিসের মাধ্যমে নতুন বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয় না।

জীবদেহে দেখা যায় এইরূপ অযৌন জনন পদ্ধতিগুলি উদাহরণসহ লেখো।

অথবা, উপযুক্ত উদাহরণসহ অযৌন জননের পাঁচটি পদ্ধতি বর্ণনা করো।

অংশ প্রশ্ন, চিহ্নিত চিত্রের সাহায্যে ঈস্ট ও হাইড্রার কোরকোদগম পদ্ধতি বর্ণনা করো।

অযৌন জনন পদ্ধতিসমূহ –

জীবদেহে যেসব অযৌন জনন পদ্ধতি দেখা যায়, সেগুলি হল –

বিভাজন –

অধিকাংশ এককোশী জীবে মাইটোসিস বা অ্যামাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতির দ্বারা দুই (দ্বিবিভাজন) বা দুইয়ের অধিক (বহুবিভাজন) নতুন অপত্য সৃষ্টি করার পদ্ধতিকে বিভাজন বলে। নীচে বিভাজন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • অ্যামিবা –
    • দ্বিবিভাজন – অনুকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবার) নিউক্লিয়াসটি অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্বিবিভাজিত হয়। এর সাইটোপ্লাজম বিভাজনরত নিউক্লিয়াসের লম্বতলে (90°) খাঁজ (furrow) সৃষ্টি করে বিভাজিত হয় ও দুটি অপত্য সৃষ্টি করে।
    • বহুবিভাজন – প্রতিকূল পরিবেশে Amoeba (অ্যামিবার) ক্ষণপদ বিনষ্ট হয় ও সিস্ট প্রাচীর (cyst wall) দ্বারা আবদ্ধ হয়। সিস্টের মধ্যে নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজমের বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য ক্ষুদ্র স্পোর তৈরি হয়। এইপ্রকার বহুবিভাজনকে স্পোরুলেশন বলে। পরিবেশ অনুকূল হলে সিস্ট প্রাচীর বিদীর্ণ করে স্পোরগুলি মুক্ত হয় ও নতুন Amoeba (অ্যামিবা) সৃষ্টি করে।
  • প্লাসমোডিয়াম – এক্ষেত্রে বহুবিভাজন দুটি দশায় ঘটে – সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট। সাইজন্ট এবং স্পোরন্ট দশায় স্ত্রী Anopheles (অ্যানোফিলিস) মশার পাকস্থলীতে যথাক্রমে সাইজোগনি ও স্পোরোগনি নামক বহুবিভাজন দ্বারা অসংখ্য অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) তৈরি হয়। সাইজোগনি এবং স্পোরোগনি দ্বারা সৃষ্ট অপত্য Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) দের যথাক্রমে মেরোজয়েট ও স্পোরোজয়েট বলে।

কোরকোদগম –

যে বিশেষ ধরনের অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবদেহের কোনো প্রবর্ধিত দেহাংশ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচ্যুত হয়ে অপত্য জীবদেহ সৃষ্টি করে তাকে কোরকোদগম বা বাডিং বলে। নীচে কোরকোদগম পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ঈস্ট –
    • ঈস্ট মাতৃকোশের অসমান বিভাজনের ফলে ক্ষুদ্র প্রবর্ধকের মতো কোরক সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে জনিতৃ নিউক্লিয়াস বিন্যস্ত থাকে। পরবর্তীকালে মাতৃদেহ থেকে কোরকটি বিচ্ছিন্ন হয় ও নতুন অপত্য ঈস্ট তৈরি করে। বিশেষ ক্ষেত্রে, টরুলা দশায় ঈস্টের কোরকটি টরুলেশন পদ্ধতিতে বার বার বিভাজিত হয়ে ছদ্ম মাইসেলিয়াম গঠন করে।
ঈস্ট -এর কোরকোদগম-
ঈস্ট -এর কোরকোদগম-

হাইড্রা –

Hydra (হাইড্রার) কোরক জনিতৃর দেহের বাইরে সৃষ্টি হয় (এক্সোজেনাস বাড)। প্রথমে প্রবর্ধকরূপে সৃষ্টি হওয়ার পর অপত্য Hydra (হাইড্রার) মুখছিদ্র, কর্ষিকা প্রভৃতির গঠন সম্পূর্ণ হয় এবং সেটি মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়।

হাইড্রা -এর কোরকোদগম-
হাইড্রা -এর কোরকোদগম-

খন্ডীভবন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের দেহ দুই বা ততোধিক খণ্ডে ভেঙে যায় ও প্রতিটি খণ্ড অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে খন্ডীভবন বলে। উদাহরণ – Spirogyra (স্পাইরোগাইরা) নামক শৈবালের সূত্রাকার দেহটি জলস্রোতের প্রভাবে বা আঘাতজনিত কারণে খণ্ডিত হয়ে যায়। প্রতিটি দেহাংশ মাইটোসিস কোশ বিভাজন পদ্ধতি দ্বারা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে নতুন অপত্য জীব সৃষ্টি করে।

স্পাইরোগাইরার খণ্ডীভবন-
স্পাইরোগাইরার খণ্ডীভবন-

পুনরুৎপাদন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে জনিতৃ জীবের সামান্য দেহাংশ সম্পূর্ণ নতুন জীব সৃষ্টি করে, তাকে পুনরুৎপাদন বলে। এইপ্রকার অযৌন জনন পদ্ধতিকে মরফাল্যাক্সিস বলে। (পক্ষান্তরে, দেহের সামান্য অংশ বিচ্ছিন্ন হলে সেই হারানো দেহাংশ পুনঃস্থাপনকে বলে এপিমরফোসিস)। উদাহরণ – Planaria (প্ল্যানেরিয়া) নামক চ্যাপটা কৃমির কোশদেহের যে কোনো অংশ বিচ্ছিন্ন হলে, প্রতিটি বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে নতুন অপত্যের সৃষ্টি হয়। Planaria (প্ল্যানেরিয়া) ছাড়া স্পঞ্জ, Hydra (হাইড্রা) -তেও পুনরুৎপাদন দেখা যায়।

প্ল্যানেরিয়ার পুনরুৎপাদন-
প্ল্যানেরিয়ার পুনরুৎপাদন-

রেণু উৎপাদন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে মস, ফার্ন ও ছত্রাকদেহে সৃষ্ট এককোশী রেণু জনিতৃ দেহ থেকে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন অপত্য সৃষ্টি করে, তাকে রেণু উৎপাদন বা স্পোরুলেশন বলে। নীচে রেণু উৎপাদন পদ্ধতির কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল।

  • ছত্রাক –
    • ছত্রাকে বিভিন্নরকম গঠনের এবং গমন ক্ষমতাযুক্ত বা গমন ক্ষমতাবিহীন রেণু দেখা যায়, যা উপযুক্ত পরিবেশে অঙ্কুরিত হয়ে অপত্য ছত্রাক গঠন করে। বিভিন্ন ধরনের রেণুগুলি হল – চলন ক্ষমতাযুক্ত জুস্পোর, চলন ক্ষমতাবিহীন অ্যাপ্লানোস্পোর, পুরু প্রাচীরযুক্ত ক্ল্যামাইডোস্পোর, অণুসূত্র খন্ডীভবনের দ্বারা সৃষ্ট ওইডিয়া ও কনিডিয়া, স্পোরানজিয়ামে উৎপন্ন স্পোরানজিওস্পোর।
  • মস ও ফার্ন –
    • মসের রেণুধর উদ্ভিদের রেণুধর কলা থেকে রেণুর সৃষ্টি হয়। ফার্নের রেণুধর উদ্ভিদের রেণুস্থলীতে সমআকৃতির রেণু বা বিষম আকৃতির রেণু উৎপন্ন হয়।
বিভিন্ন প্রকার রেণু-
বিভিন্ন প্রকার রেণু-

চিহ্নিত চিত্রের সাহায্যে অ্যামিবা ও প্লাসমোডিয়াম -এর বিভাজন পদ্ধতি বর্ণনা করো।

অ্যামিবার বিভাজন পদ্ধতি –

Amoeba (অ্যামিবা) একটি স্বাধীনজীবী আদ্যপ্রাণী, Amoeba (অ্যামিবার) নিউক্লিয়াসটি অ্যামাইটোসিস পদ্ধতিতে দ্বিবিভাজিত হয়। এইসময় সমগ্র কোশটি এবং নিউক্লিয়াস দুই-ই লম্বায় বেড়ে যায়। নিউক্লিয়াস লম্বায় বিবর্ধিত হয়ে ডাম্বেল -এর আকার ধারণ করে। এরপর কোশপর্দা ও নিউক্লিয়াসের মাঝ বরাবর খাঁজ (furrow) সৃষ্টির মাধ্যমে বিভাজনরত নিউক্লিয়াস এবং সাইটোপ্লাজম লম্বতলে (90°) বিভাজিত হয়ে দুই অপত্য কোশ তৈরি করে।

অ্যামিবার দ্বিবিভাজন-
অ্যামিবার দ্বিবিভাজন-

প্লাসমোডিয়াম -এর বিভাজন পদ্ধতি –

Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) একটি এককোশী পরজীবী। এটি মানবদেহে ম্যালেরিয়া রোগের জন্য দায়ী। এটি মানুষের যকৃতে সাইজোগোনি নামক বহুবিভাজন পদ্ধতি সম্পন্ন করে। বেশ কয়েকটি দশার মধ্যে দিয়ে নিজের জীবনচক্র অতিবাহিত করে। সাইজন্ট নামক দশায়, মাইটোসিসের ক্যারিও কাইনেসিস বিভাজন দ্বারা দুটি অপত্য নিউক্লিয়াস সৃষ্টি করে। এরপর কোশের মধ্যে একাধিকবার ক্যারিওকাইনেসিস ক্রিয়া সম্পন্ন করে অসংখ্য অপত্য নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। পরবর্তী পর্যায়ে সাইটোকাইনেসিস পদ্ধতি দ্বারা অসংখ্য মেরোজয়েট উৎপন্ন হয়। এইভাবে Plasmodium (প্লাসমোডিয়াম) -এ বহুবিভাজন পদ্ধতিটি সম্পন্ন হয়। এই মেরোজয়েটগুলি নতুন কোশকে আক্রমণ করে ও একই পদ্ধতিতে আরও বেশি সংখ্যক মেরোজয়েট উৎপন্ন করে। উসিস্ট বা স্পোরন্ট দশায় বহুবিভাজন ঘটলে তা থেকে স্পোরোজয়েট সৃষ্টি হয়। এই প্রক্রিয়াকে স্পোরোগোনি বলে।

প্লাসমোডিয়াম -এর বিভাজন পদ্ধতি--
প্লাসমোডিয়াম -এর বিভাজন পদ্ধতি–

অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন কাকে বলে? অঙ্গজ বংশবিস্তারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি উল্লেখ করো।

অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন –

যে অযৌন জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদেহের যে কোনো অঙ্গ বা তার অংশবিশেষ জনিতৃ উদ্ভিদদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোশ বিভাজন ও বৃদ্ধির দ্বারা নতুন অপত্যের সৃষ্টি করে, তাকে অঙ্গজ বংশবিস্তার বা অঙ্গজ জনন বলে।

অঙ্গজ বংশবিস্তারে সুবিধা –

  1. অঙ্গজ বংশবিস্তারে একই রকম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা সম্ভব হয়।
  2. এইপ্রকার বংশবিস্তারে একটি উদ্ভিদ থেকেই অনেক উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়।
  3. কম সময়ের মধ্যে অপত্য সৃষ্টি করা যায়।
  4. বছরের যে কোনো ঋতুতে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায়।
  5. অপত্যদেহে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য অপরিবর্তিত থাকে।

অঙ্গজ বংশবিস্তারের অসুবিধা –

  1. অঙ্গজ বংশবিস্তারে নতুন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উন্নত উদ্ভিদ পাওয়া যায় না।
  2. এইপ্রকার বংশবিস্তারে অভিব্যক্তি ঘটা সম্ভব নয়।
  3. অপত্য উদ্ভিদগুলির অভিযোজন ক্ষমতা কমে যায় বলে অবলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

উদ্ভিদের প্রাকৃতিক অঙ্গজ বংশবিস্তার বা প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন পদ্ধতি সম্পর্কে লেখো।

প্রাকৃতিক অঙ্গজ বংশবিস্তার বা প্রাকৃতিক অঙ্গজ জনন পদ্ধতি –

প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে অঙ্গজ জনন বিভিন্ন প্রকারের হয়। এগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

মূলের মাধ্যমে –

কিছুকিছু উদ্ভিদে, যেমন – মিষ্টি আলু বা রাঙা আলু, পটল প্রভৃতি উদ্ভিদের রসালো মূল থেকে অস্থানিক মুকুল জন্মায়। একে মূলজ মুকুল বলে। পরে এই মুকুলসহ মূল খণ্ড খণ্ড করে মাটিতে রোপণ করলে নতুন উদ্ভিদ জন্মায়।

গোল আলু ও রাঙা আলুর মূল
গোল আলু ও রাঙা আলুর মূল

কান্ডের মাধ্যমে –

পরিবর্তিত কান্ডের দ্বারা অঙ্গজ জনন দু-ভাবে সম্পন্ন হয়। এগুলি হল –

  • মৃদ্‌গত কাণ্ডের সাহায্যে – আদা, পেঁয়াজ, আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের কান্ড মাটির নীচে খাদ্য সঞ্চয় বা প্রতিকূল পরিবেশের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পরিবর্তিত হয়ে বিশেষ আকার ধারণ করে। একে মৃদ্‌গত কাণ্ড বলে। এই মৃদ্‌গত কাণ্ডের গা থেকে মুকুল উৎপন্ন হয় এবং উৎপন্ন মুকুল অঙ্গজ জননের মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়। বিভিন্ন প্রকারের মৃদ্‌গত কাণ্ড হল – আলুর স্ফীতকন্দ, আদার গ্রন্থিকাণ্ড, পেঁয়াজের কন্দ এবং ওলের গুঁড়িকন্দ।
  • অর্ধবায়বীয় কাণ্ডের সাহায্যে – কচুরিপানা উদ্ভিদের কাণ্ডে বায়ু ও জলের সংলগ্ন স্থান দিয়ে ছোটো অর্ধবায়বীয় কাণ্ড অনুভূমিকভাবে বিস্তৃত হয়। এইপ্রকার কাণ্ডকে খর্ব-ধাবক বলে। এই অংশ থেকে অস্থানিক মূল, কাণ্ড ও পাতা সৃষ্টি হয় ও পরে এই অংশে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
কচুরিপানার অর্ধবায়বীয় কাণ্ড ও পাথরকুচির অস্থানিক মুকুল
কচুরিপানার অর্ধবায়বীয় কাণ্ড ও পাথরকুচির অস্থানিক মুকুল

পাতার মাধ্যমে –

কিছুকিছু উদ্ভিদের ক্ষেত্রে, যেমন – পাথরকুচি, Begonia (বিগোনিয়া) প্রভৃতি উদ্ভিদের পাতার কিনারা থেকে অস্থানিক মুকুল জন্মায়। একে পত্রাশ্রয়ী মুকুল বলে। এই পত্রাশ্রয়ী মুকুলের নীচের দিক থেকে আবার প্রচুর অস্থানিক মূল বের হয়। পরে মূলসহ প্রতিটি পাতা বিচ্ছিন্ন হয়ে অনুকূল পরিবেশে নতুন উদ্ভিদের জন্ম দেয়।

কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার বলতে কী বোঝ লেখো। উদ্ভিদের কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তারের শাখাকলম, জোড়কলম ও মাইক্রোপোপাগেশন পদ্ধতিগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার –

হর্টিকালচার বা উদ্যানপালন বিদ্যায় ব্যবহৃত মানবসৃষ্ট অঙ্গজ বংশবিস্তারের পদ্ধতিসমূহকে কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার বা কৃত্রিম অঙ্গজ জনন বলে।

কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তারের পদ্ধতি –

উদ্ভিদের কৃত্রিম অঙ্গজ বংশবিস্তার বিভিন্ন পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। সেগুলি সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

কাটিং বা শাখাকলম দ্বারা –

যে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে উদ্ভিদের শাখা কেটে ভিজে মাটিতে. রোপণ করা হয়, প্রয়োজনমতো জল দিতে থাকলে পর্ব থেকে নতুন অস্থানিক মূল বের হয় এবং ক্রমশ ওই শাখা থেকেই একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিদের জন্ম হয়, তাকে কাটিং বা শাখাকলম বলে। গোলাপ, জবা, গাঁদা, সজনে ইত্যাদি উদ্ভিদে এইভাবে জনন সম্ভব।

কাটিং বা শাখাকলম
কাটিং বা শাখাকলম

গ্রাফটিং বা জোড়কলম দ্বারা –

যে কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতিতে দুটি ভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদকে বা উদ্ভিদের দুটি শাখাকে পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে কয়েক মাস রেখে দিলে সেই জোড়া অংশ মিশে যায় এবং নতুন ধরনের উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়, তাকে গ্রাফটিং বা জোড়কলম বলে। এই পদ্ধতিতে উন্নততর যে উদ্ভিদটিকে জোড়া লাগানো হয়, তাকে সিয়ন বলে এবং যার ওপর জোড়া লাগানো হয় তাকে স্টক বলে। সিয়ন সাধারণত স্টক অপেক্ষা উন্নতমানের হয়। সিয়ন ও স্টক -এর সংযোগস্থলটিকে মাটি দিয়ে আবৃত করে কাপড় বা খড়ের সাহায্যে বেঁধে দেওয়া হয়। উন্নতমানের উদ্ভিদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। আম, জাম, লেবু, কুল প্রভৃতি উদ্ভিদে এইভাবে জনন সম্ভব।

গ্রাফটিং বা জোড়কলম
গ্রাফটিং বা জোড়কলম

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ দ্বারা –

যে কৃত্রিম অঙ্গ জনন পদ্ধতিতে ল্যাবরেটরিতে কোশ, কলা বা অঙ্গ কর্ষণ মাধ্যমে পালন দ্বারা দ্রুত নতুন উদ্ভিদ তৈরি করা হয়, তাকে মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ বলে। এক্ষেত্রে উদ্ভিদের উপযুক্ত দেহাংশ বা এক্সপ্ল্যান্ট নির্বীজ করে পুষ্টি মাধ্যমে কর্ষণ করা হয়। এর ফলে নতুন চারাগাছ সৃষ্টি হয়। মূলত সজ্জা উদ্ভিদ (ornamental plant), যেমন – অর্কিড, কলাজাতীয় ফল উৎপাদক উদ্ভিদ, কফি, সেগুন প্রভৃতি অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন উদ্ভিদ প্রভৃতিতে অণুবিস্তারণ পদ্ধতির অধিক ব্যবহার হয়ে থাকে।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের নীতি কী? অযৌন ও যৌন জননের পার্থক্য লেখো।

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের নীতি –

উদ্ভিদকোশের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এইপ্রকার কোশ যে কোনো কলাকোশ থেকে কোশ বিভাজন দ্বারা সম্পূর্ণ উদ্ভিদ সৃষ্টি করতে পারে। একে কোশের টোটিপোটেন্সি ধর্ম বলে। ‘মাইক্রো’ শব্দের অর্থ হল ক্ষুদ্র। অর্থাৎ, উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড বা পাতার ছোটো টুকরো উপযুক্ত কর্ষণ মাধ্যম (culture medium) -এ রেখে বিভাজিত হতে দিলে, তা অপত্য উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।

অযৌন ও যৌন জননের পার্থক্য –

বিষয়অযৌন জননযৌন জনন
জনিতৃ জীবের সংখ্যাএকটি।একটি বা দুটি।
গ্যামেট উৎপাদনগ্যামেট সৃষ্টি হয় না। রেণু উৎপাদন বা দেহকোশ বিভাজিত হয়ে জনন হয়।দুইপ্রকার গ্যামেট উৎপন্ন হয় – স্ত্রীগ্যামেট (ডিম্বাণু) এবং পুংগ্যামেট (শুক্রাণু)।
বিভাজন পদ্ধতিমাইটোসিস, কিছুক্ষেত্রে অ্যামাইটোসিস।মিয়োসিস পদ্ধতির ওপর নির্ভরশীল।
অপত্য জনুর প্রকৃতিকোনো প্রকার প্রকরণ ঘটে না বলে তা জনিতৃ জনুর অনুরূপ হয়।প্রকরণ সৃষ্টি হয় বলে অপত্য জনুর মধ্যে যথেষ্ট বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

মাইক্রোপ্রোপাগেশন কীভাবে সম্পন্ন করা হয়? এর সুবিধা কী?

অথবা, মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে বর্ণনা দাও।

মাইক্রোপ্রোপাগেশন –

মাইক্রোপ্রোপাগেশন বা অণুবিস্তারণ পদ্ধতির ধারাবাহিক পর্যায়গুলি হল –

  1. এই পদ্ধতিতে প্রথমে উপযুক্ত এক্সপ্ল্যান্ট বা উদ্ভিদ দেহাংশ নির্বাচন করা হয়, যা পুরোপুরি প্রজাতিনির্ভর।
  2. নির্বাচিত এক্সপ্ল্যান্টটিকে প্রথমে 70% অ্যালকোহলে 1 মিনিট ধুয়ে, পরে 10% হাইপোক্লোরাইট দ্রবণে 15 মিনিট রেখে নির্বীজ বা স্টেরিলাইজ করা হয়। এরপর এক্সপ্ল্যান্টটিকে কর্ষণ মাধ্যমে স্থাপন করা হয়।
  3. এই কর্ষণ মাধ্যমে শক্তির উৎসরূপে সুক্রোজ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রকরূপে কৃত্রিম অক্সিন, সাইটোকাইনিন এবং বিভিন্ন পরিপোষক ব্যবহৃত হয়।
  4. প্রথমে উদ্ভিদ দেহাংশ থেকে একগুচ্ছ অবিভেদিত কোশ বা ক্যালাস সৃষ্টি হয়। এটি পরে বিভেদিত হয়ে বিভিন্ন কলা সৃষ্টির মাধ্যমে অসংখ্য এমব্রিঅয়েড (embrioid) গঠন করে। এমব্রিঅয়েড ক্রমে বিভেদিত হয়ে অপত্য উদ্ভিদ বা প্ল্যান্টলেট (plantlet) সৃষ্টি করে।
অণুবিস্তারণ পদ্ধতি-
অণুবিস্তারণ পদ্ধতি-

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের সুবিধা –

মাইক্রোপ্রোপাগেশনের সুবিধা গুলি হল –

  1. এই পদ্ধতিতে কম জায়গায় দ্রুত ও অধিক সংখ্যক চারা তৈরি করা যায়।
  2. এর দ্বারা রোগমুক্ত চারাগাছ তৈরি করা সম্ভব হয়।
  3. পছন্দমাফিক উদ্ভিদ ভ্যারাইটির উৎপাদন সম্ভব হয়। বন্ধ্যা উদ্ভিদের ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করা যায়।
  4. এই পদ্ধতির সাহায্যে বছরের যে কোনো সময়ে চারা উৎপন্ন করা যায়।
  5. এই পদ্ধতির সাহায্যে যৌন জননে অক্ষম উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বংশবিস্তার সম্ভব।

রেখাচিত্রের সাহায্যে ফার্ন -এর জনুক্রম প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো ও তার পর্যায় চিত্র আঁকো।

ফার্ন -এর জনুক্রম প্রক্রিয়া –

যৌন জননকারী জীবের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড (n) জনু এবং ডিপ্লয়েড (2n) জনুর চক্রাকার আবর্তনকে জনুক্রম বলা হয়। ফার্নের ক্ষেত্রে ডিপ্লয়েড (2n) রেণুধর জনু এবং হ্যাপ্লয়েড (n) লিঙ্গধর জনু চক্রাকারে আবর্তিত হয়। ফার্নের

ফার্নের জনুক্রম-
ফার্নের জনুক্রম-

যে উদ্ভিদদেহটির রেণু ধারণ করে, তাকে রেণুধর উদ্ভিদ বা স্পোরোফাইট বলে। এই দশাটিকে লিঙ্গধর জনু বলে। মিয়োসিস পদ্ধতিতে ফার্নের রেণুধর জনুর রেণুমাতৃকোশ থেকে হ্যাপ্লয়েড (n) রেণু উৎপন্ন হয়। এরপর এই রেণু, পরিবেশে মুক্ত হয়ে এবং অঙ্কুরিত হয়ে লিঙ্গধর উদ্ভিদ বা গ্যামেটোফাইট সৃষ্টি করে। গ্যামেটোফাইট দশাটিকে লিঙ্গধর জনু বলে। গ্যামোটোফাইটের অ্যানথেরিডিয়ামে উৎপন্ন শুক্রাণু (n), আর্কিগোনিয়ামে উৎপন্ন ডিম্বাণুকে (n) নিষিক্ত করে এবং ডিপ্লয়েড জাইগোট (2n) সৃষ্টি করে। সেই জাইগোট থেকে পুনরায় রেণুধর বা স্পোরোফাইট উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। এইভাবে পর্যায়ক্রমে রেণুধর ও লিঙ্গধর উদ্ভিদ জনুর আবর্তন দ্বারা ফার্নের জনুক্রম সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফার্নের জীবনচক্রে হ্যাপ্লয়েড জনু ও ডিপ্লয়েড জনু প্রায় সমান গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে এই ধরনের জনুক্রমকে ডিপ্লোবায়োন্টিক জনুক্রম বলা হয়।

অঙ্গজ বংশবিস্তার ও যৌন জননের পার্থক্য লেখো।

অঙ্গজ বংশবিস্তার ও যৌন জননের পার্থক্য –

বিষয়অঙ্গজ বংশবিস্তারযৌন জনন
সংঘটনস্থলসাধারণত উন্নত উদ্ভিদে ঘটে।উন্নত উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই ঘটে।
পদ্ধতিউদ্ভিদ দেহাংশ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির পদ্ধতি।দুটি জনিতৃ জীবের পুংগ্যামেট ও স্ত্রীগ্যামেটের মিলনে জাইগোট সৃষ্টির মাধ্যমে অপত্য সৃষ্টির পদ্ধতি।
নিষেক ও মিয়োসিসনিষেক ঘটে না এবং মিয়োসিসের কোনো ভূমিকা নেই।নিষেক ঘটে এবং মিয়োসিসের ভূমিকা আছে।
পদ্ধতির প্রকৃতিসরল, অনুন্নত বংশবিস্তার পদ্ধতি।জটিল ও উন্নত জনন পদ্ধতি।
অভিব্যক্তিতে ভূমিকাজৈব অভিব্যক্তির সহায়ক নয়।জৈব অভিব্যক্তির সহায়ক।
প্রয়োজনীয় অঙ্গদেহের যে কোনো অঙ্গ।দেহে উৎপন্ন নির্দিষ্ট জননাঙ্গ।

অঙ্গজ বংশবিস্তার ও অযৌন জননের পার্থক্য লেখো।

অঙ্গজ বংশবিস্তার ও অযৌন জননের পার্থক্য –

বিষয়অঙ্গজ বংশবিস্তারঅযৌন জনন
সংঘটনস্থলসাধারণত উন্নত উদ্ভিদে ঘটে।নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয়েই ঘটে।
পদ্ধতিউদ্ভিদ দেহাংশ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টির পদ্ধতি।উদ্ভিদের ক্ষেত্রে মূলত রেণু উৎপাদন এবং প্রাণীর ক্ষেত্রে বিভাজন, খন্ডীভবন প্রভৃতি পদ্ধতিতে ঘটে।
পদ্ধতির প্রকৃতিসরল অনুন্নত বংশবিস্তার পদ্ধতি।জটিল ও উন্নত জনন পদ্ধতি।
মিয়োসিসের ভূমিকাএক্ষেত্রে জননের আগে বা পরে কোনো মিয়োসিস কোশ বিভাজন ঘটে না।উদ্ভিদের ক্ষেত্রে রেণু উৎপাদনের আগে মিয়োসিস কোশ বিভাজন ঘটে।
জনুক্রমের উপস্থিতিঅনুপস্থিত।উপস্থিত বা অনুপস্থিত।
প্রয়োজনীয় অঙ্গদেহের যে কোনো অঙ্গ।দেহে উৎপন্ন নির্দিষ্ট জননাঙ্গ।

আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞানের দ্বিতীয় অধ্যায় “জীবনের প্রবহমানতা” অধ্যায়ের ‘জনন‘ বিভাগের রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বা আপনি যদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন তাহলে আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি যে এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া, আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জন যার এটি প্রয়োজন হবে তার সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.4-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.4

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান-কষে দেখি 26.3-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.3

রাশিবিজ্ঞান-গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান - কষে দেখি 26.2-মাধ্যমিক গণিত

মাধ্যমিক গণিত – রাশিবিজ্ঞান: গড়, মধ্যমা, ওজাইভ, সংখ্যাগুরুমান – কষে দেখি 26.2

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse (Marks 4)

Madhyamik History Suggestion 2026 – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (2 Marks)

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – বিবৃতি ও ব্যাখ্যা

Madhyamik History Suggestion 2026 Wbbse – স্তম্ভ মেলাও