মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।

Rahul

এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করব। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোল পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়।

মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে - ব্যাখ্যা করো।
মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।

মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।

অথবা, জোয়ারভাটার ফলাফল লেখো।

অথবা, জোয়ারভাটার গুরুত্ব বা প্রভাব আলোচনা করো।

অথবা, জোয়ারভাটার পাঁচটি প্রভাব আলোচনা করো।

মানবজীবনে জোয়ারভাটার প্রভাব –

জোয়ারভাটা মানবজীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। এগুলি হল –

অনুকূল বা ইতিবাচক প্রভাব –

  • জাহাজ চলাচল – জোয়ারের সময় নদীর জলের পরিমাণ ও উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে জাহাজ ও নৌকা চলাচলের সুবিধা হয়। জোয়ারের সময় জাহাজ নদী বন্দরে সহজেই আসতে পারে এবং ভাটার সময় বন্দর থেকে সমুদ্রে ফিরে যেতে পারে। উদাহরণ – জোয়ারের সময় কলকাতা বন্দরে জাহাজ আসে এবং ভাটার টানে ফিরে যায়।
  • দূষণমুক্ত পরিবেশ – ভাটার টানে নদীর আবর্জনা সমুদ্রে চলে যায়। ফলে নদীর জল স্বচ্ছ থাকে এবং নদী তীরবর্তী অংশ দূষণমুক্ত হয়।
  • নাব্যতা বৃদ্ধি – ভাটার টানে নদী মোহানা পলি মুক্ত হয় ফলে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা বজায় থাকে। নদীখাত গভীর থাকায় নৌ চলাচলে সুবিধা হয়। যেমন – সুন্দরবনের খাঁড়িগুলি জোয়ারের সময় নৌচলাচল যোগ্য হয়।
  • মৎস্য শিকার – জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে চলে আসে। ফলে মৎস্যজীবীদের সুবিধা হয়।
  • বিদ্যুৎ উৎপাদন – জোয়ারভাটা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। ভারতের কাম্বে, খাম্বাত উপসাগরে এবং সুন্দরবন অঞ্চলের দুর্গাদোয়ানী খাঁড়িতে জোয়ারভাটা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
  • বরফমুক্ততা – শীতপ্রধান অঞ্চলে জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জল নদীতে প্রবেশ করায় নদী মোহানা ও বন্দর বরফমুক্ত থাকে। অর্থাৎ শীতকালেও বন্দরগুলি সক্রিয় থাকে।

প্রতিকূল বা নেতিবাচক প্রভাব –

  • নদীর জলে লবণতা বৃদ্ধি – জোয়ারের লবণাক্ত জলের দ্বারা নদীর মিষ্টিজল লবণাক্ত হয়ে পড়ে। ফলে এই জলসেচের জল পানের ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
  • ক্ষয়ক্ষতি – জোয়ারের প্রবল জলস্রোতে কখনো-কখনো লঞ্চ বা নৌকাডুবি হয় তখন লঞ্চ বা নৌকার ক্ষতিসহ প্রাণহানি ঘটে। প্রবল জলোচ্ছ্বাসে কৃষিজমি ও বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।
  • পলিসঞ্চয় – অনেক সময় নদী মোহানার পলিরাশি জোয়ারের তীব্রতায় নদীর অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে সঞ্চিত হয়ে নদীর গভীরতা ও নাব্যতা হ্রাস পায়।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

মানবজীবনে জোয়ারভাটার ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী কী?

1. জাহাজ চলাচলে সুবিধা – জোয়ারের সময় নদীর জলস্তর বাড়ে, ফলে জাহাজ ও নৌকা বন্দরে সহজে প্রবেশ করতে পারে।
2. দূষণমুক্ত পরিবেশ – ভাটার টানে নদীর ময়লা-আবর্জনা সমুদ্রে চলে যায়, ফলে জল পরিষ্কার থাকে।
3. নাব্যতা বৃদ্ধি – ভাটার টানে নদীখাতের পলি অপসারিত হয়, নদী গভীর থাকে এবং নৌপরিবহন সহজ হয়।
4. মৎস্য শিকার – জোয়ারের সময় সমুদ্রের মাছ নদীতে প্রবেশ করে, যা মৎস্যজীবীদের জন্য উপকারী।
5. বিদ্যুৎ উৎপাদন – জোয়ারভাটার শক্তি কাজে লাগিয়ে টাইডাল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করা হয় (যেমন — গুজরাটের কাম্বে উপসাগর)।

জোয়ারভাটার নেতিবাচক প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।

1. নদীর জলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি – জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত জল নদীতে মিশে সেচ ও পানীয় জলের সমস্যা সৃষ্টি করে।
2. ক্ষয়ক্ষতি – প্রবল জোয়ারের সময় নৌকা বা লঞ্চ ডুবে যেতে পারে, প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে।
3. পলিসঞ্চয় – জোয়ারের তীব্রতা নদীর মোহনায় পলি জমা করে নাব্যতা হ্রাস করতে পারে।
4. বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস – ঘূর্ণিঝড়ের সময় জোয়ারের সংমিশ্রণে উপকূলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হয়।

জোয়ারভাটা কীভাবে নদীর নাব্যতা বজায় রাখে?

ভাটার টানের ফলে নদীর তলদেশের পলি সমুদ্রের দিকে চলে যায়, ফলে নদীখাত গভীর থাকে এবং জাহাজ চলাচলের সুবিধা হয়।

জোয়ারভাটা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কীভাবে সম্ভব?

জোয়ারভাটার সময় সমুদ্রের জলস্তর ওঠানামার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টাইডাল এনার্জি প্ল্যান্ট তৈরি করা হয়। জলস্তরের পার্থক্যকে টারবাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা হয়। উদাহরণ — ভারতের গুজরাটের কাম্বে উপসাগর এবং পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে এই ধরনের প্রকল্প রয়েছে।

জোয়ারভাটা কৃষিকাজকে কীভাবে প্রভাবিত করে?

1. ইতিবাচক – কিছু অঞ্চলে জোয়ারের জল কৃষিজমিতে পৌঁছে মাটি উর্বর করে।
2. নেতিবাচক – জোয়ারের লবণাক্ত জল নদীতে মিশে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট করতে পারে এবং সেচের জলের অভাব দেখা দেয়।

শীতপ্রধান অঞ্চলে জোয়ারভাটার কী ভূমিকা আছে?

শীতকালে জোয়ারের লবণাক্ত জল নদীতে প্রবেশ করে নদীর জমাট বাঁধা রোধ করে, ফলে বন্দরগুলি সারা বছর সক্রিয় থাকে।

জোয়ারভাটার ফলে কীভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়?

ভাটার টানের সময় নদীর ময়লা, প্লাস্টিক বর্জ্য ও অন্যান্য দূষক সমুদ্রের দিকে চলে যায়, ফলে নদীর জল স্বচ্ছ থাকে।


এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভূগোলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন “মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।” নিয়ে আলোচনা করেছি। এই “মানবজীবনকে জোয়ারভাটা প্রভাবিত করে – ব্যাখ্যা করো।” প্রশ্নটি মাধ্যমিক ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় “বারিমণ্ডল – সমুদ্রস্রোত ও জোয়ারভাটা” -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নটি মাধ্যমিক পরীক্ষায় এবং চাকরির পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকলে, আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাছাড়া, নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Please Share This Article

Related Posts

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

ভাঙ্গর ও খাদার-

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

কচ্ছের রান এর ভূমিরূপ কেমন-

কচ্ছের রান কোন্ রাজ্যে অবস্থিত এবং এর ভূমিরূপ কেমন?

About The Author

Rahul

Tags

মন্তব্য করুন

SolutionWbbse

"SolutionWbbse" শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনলাইন অধ্যয়ন প্ল্যাটফর্ম। এখানে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গাইডলাইন, এবং বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনার সাহায্য প্রদান করা হয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে সকল বিষয়ের শিক্ষণীয় উপকরণ সহজেই সকল শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়া।

Editor Picks

উত্তর ভারতের নদনদীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তিকরণের ক্ষেত্রে ভারত সরকার কী ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল?

ভারত বিভাজনের অনিবার্যতার কারণ বিশ্লেষণ করো।

ভাঙ্গর ও খাদার বলতে কি বোঝো? ভাঙ্গর ও খাদারের মধ্যে পার্থক্য

দেশীয় রাজ্যগুলি সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব আলোচনা করো।