আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে দেখবো যে মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ কি? মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ মধ্যে পার্থক্য দশম শ্রেণীর পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ কি? মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ মধ্যে পার্থক্য প্রশ্নটি আপনি পরীক্ষার জন্য তৈরী করে গেলে আপনি লিখে আস্তে পারবেন।
মোনাডনক
ভূমির বিবর্তনের শেষ পর্যায়ে, যখন নদী বিভাজিকাগুলির উচ্চতা কমে যায়, তখন বিস্তৃত এলাকা জুড়ে একটি উত্তল, চালমুক্ত নিম্ন সমতল তৈরি হয়। এই সমতল ভূমিকে সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।
এই সমপ্রায় ভূমির উপরে, অপেক্ষাকৃত কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত এবং কম ক্ষয়প্রাপ্ত টিবির মতো আকৃতির পাহাড়গুলিকে মোনাডনক বলা হয়।
উদাহরণ: ছোটনাগপুর মালভূমির পরেশনাথ, পাঞ্চেৎ প্রভৃতি পাহাড়।
মোনাডনকের বৈশিষ্ট্য:
- মূলত নদীর ক্ষয় প্রক্রিয়ার ফলে অবশিষ্ট পাহাড় হিসেবে মোনাডনকের সৃষ্টি হয়।
- সমপ্রায় ভূমির মাঝে, ক্ষয়চক্রের শেষ পর্যায়ে এগুলি তৈরি হয়।
- আর্দ্র কান্তীয়, উপক্রান্তীয়, এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলেও মোনাডনক গড়ে ওঠে।
- জলধারা এদের সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- মোনাডনক গম্বুজ বা শঙ্কু আকৃতির হয়, তবে ইনসেলবার্জের তুলনায় এদের উচ্চতা কম থাকে।
ইনসেলবার্গ
মরুভূমির প্রখর রোদে পোড়া সমতল ভূমিতে হঠাৎ করে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একাকী পাহাড় বা টিলা। কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত এই ভূমিরূপগুলোকে বলা হয় ইনসেলবার্জ। দীর্ঘদিন ধরে বায়ু ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে মরুর বুকে তৈরি হয় এই বিস্ময়কর সৃষ্টি।
ইনসেলবার্জের বৈশিষ্ট্য:
- শুষ্ক জলবায়ু: ইনসেলবার্জ মূলত শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় জলবায়ুতে দেখা যায়।
- কঠিন শিলা: গ্রানাইট, নিস জাতীয় আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দ্বারা গঠিত হয় ইনসেলবার্জ।
- বায়ু দ্বারা গঠিত: বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে ইনসেলবার্জের চারপাশের নরম শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ফলে কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত পাহাড়গুলো উঁচু হয়ে দাঁড়ায়।
- উচ্চতা: ইনসেলবার্জের উচ্চতা ৩০ থেকে ৩০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- টর্স: দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ইনসেলবার্জ ছোট ছোট টিলার আকারে পরিণত হয়, যাদের বলা হয় টর্স।
- আকৃতি: ইনসেলবার্জ সাধারণত শঙ্কুর আকৃতির হয়। ক্ষয়প্রাপ্তির ফলে শিরোদেশ গোলাকার এবং পার্শ্বদেশ খাড়াই হয়ে থাকে।
- মোনাডনকের তুলনায়: ইনসেলবার্জের উচ্চতা মোনাডনকের তুলনায় বেশি হয়।
উদাহরণ: দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি মরুভূমি ও অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে ইনসেলবার্জের বিশাল সমাবেশ দেখা যায়।
মরুভূমির একাকী প্রহরী হিসেবে পরিচিত ইনসেলবার্জ মরুর রুক্ষ পরিবেশে টিকে থাকার এক জীবন্ত প্রতীক। প্রকৃতির অদম্য শক্তির সামনে মানুষের ক্ষণস্থায়িত্বের অনুভূতি জাগিয়ে তোলে এই বিস্ময়কর ভূমিরূপ।
মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ মধ্যে পার্থক্য
মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ-এর পার্থক্যগুলি হল –
বিষয় | মোনাডনক | ইনসেলবার্গ |
ধারণা | সমপ্রায় ভূমিতে কঠিন শিলাগঠিত অনুচ্চ টিলা বা পাহাড় হল মোনাডনক। | পেডিপ্লেনের মধ্যে কঠিন শিলা গঠিত অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্গ বলে। |
সৃষ্টি | এটি নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত হয়। | এটি বায়ু ও জলধারার কার্যের জন্য গঠিত হয়। |
আকৃতি | এটা দেখতে অনেকটা ওলটানো গামলার মতো। | এটি তীব্র ঢালযুক্ত ঢিপি। |
অবস্থান | এটি আর্দ্র জলবায়ুতে দেখা যায়। | এটি শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চলে দেখা যায়। |
আরও পড়ুন – বার্খান ও সিফ বালিয়াড়ি কি? বারখান ও সিফ বালিয়াড়ির মধ্যে পার্থক্য
মোনাডনক ও ইনসেলবার্গ দশম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ধারণাগুলি সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারা পরীক্ষায় ভালো করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেলটি আপনাকে মোনাডনক এবং ইনসেলবার্গ সম্পর্কে একটি ভালো ধারণা দিয়েছে বলে আমরা আশা করি। আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করতে দ্বিধা করবেন না।